বাবা-মা এবং নিকটজনদের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে উইল-ওসীয়ত করে যাবে — আল-বাক্বারাহ ১৮০-১৮২

  • সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় গলা টিপে মা-কে খুন। [দৈনিক জনকণ্ঠ, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫]
  • সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে ছেলে-কে তার মা দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা [ইনকিলাব ১ জুন, ২০১৫]
  • ভাইয়ের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বাবাকে খুন। [দৈনিক পূর্বকোণ, জুলাই ১৪, ২০১৫]
  • সম্পত্তি লোভী দুই পুত্রের হাতে পিতা খুন। [ভোরের বার্তা জুলাই ১২, ২০১৪]
  • হবিগঞ্জে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাইদের হাতে এক ভাই খুন [যুগান্তর ০১ এপ্রিল, ২০১৫]
  • স্ত্রীর হাতে খুন তাবলিগ জামাতের নেতা ইব্রাহীম। [নয়া দিগন্ত ২০ মে ২০১৫]
  • সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজ স্ত্রী জবাই করে হত্যা করেছে স্বামীকে। [সংবাদ ২০ মে ২০১৫]

—সম্পত্তি নিয়ে মানব সভ্যতার সূচনা থেকে নানা ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে। আজকের আধুনিক যুগেও বর্বরতা একটুও কমেনি। ধনী, গরিব, উন্নত, অনুন্নত, মুসলিম প্রধান, অমুসলিম প্রধান সব দেশেই সম্পত্তি নিয়ে ভয়ঙ্কর সব পাশবিক ঘটনা ঘটে।[৩২৪] একারণে কুর’আনে আল্লাহ تعالى আমাদের কঠিনভাবে সম্পত্তির সঠিক ভাগবাটোয়ারা করে দিতে বলেছেন। বিশেষ করে উত্তরাধিকারদের সঠিকভাবে ওসীয়ত বা উইল করে যাওয়া মুসলিমদের জন্য ফরজ।[১২][৮] দুঃখজনকভাবে মুসলিমরা যতখানি নামাজ, রোজার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়, কুর’আনে অন্যান্য ফরজ নির্দেশগুলোর ব্যাপারে ততখানিই উদাসীন থাকে। যার ফলাফল হয় ভয়াবহ, আর দোষ হয় মুসলিম সমাজের, সর্বোপরি ইসলামের।

2_180-182_title2_1802_1812_182

তোমাদের উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যে, তোমাদের কেউ যখন মৃত্যুশয্যায় পৌঁছে যায়, তখন যদি যথেষ্ট সম্পত্তি রেখে যায়, তাহলে বাবা-মা এবং নিকটজনদের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে উইল/ওসীয়ত করে যাবে। যারা আল্লাহর প্রতি সাবধান—মুত্তাক্বি, তাদের জন্য তা বাধ্যতামূলক।[১৮০] কেউ যদি উইল/ওসীয়ত শোনার পরেও তাতে পরিবর্তন করে, তাহলে তার উপর সমস্ত গুনাহ হবে। সাবধান! আল্লাহ অবশ্যই সব শোনেন, সব জানেন।[১৮১] কিন্তু কেউ ওসীয়তকারীদের বা সাক্ষীদের থেকে পক্ষপাতিত্ব বা অন্যায়ের আশংকা করে যদি তা তাদের মধ্যে সংশোধন করে দেয়, তাহলে তার কোনোই গুনাহ হবে না। অবশ্যই আল্লাহ অনেক ক্ষমা করেন, তিনি নিরন্তর দয়ালু।[১৮২] [আল-বাক্বারাহ ১৮০-১৮২]

আজকাল আধুনিক মুসলিমদের মধ্যে ইসলামের উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে একধরনের বিতৃষ্ণা কাজ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে অমুসলিমদের নানা ধরনের অপপ্রচারের কারণে তারা বিভ্রান্ত হয়ে মনে করেন যে, ইসলামের উত্তরাধিকার আইন আজকের যুগের জন্য অচল। যেমন, একটি বহুল আলোচিত ব্যাপার হচ্ছে মেয়েদেরকে ছেলেদের অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়া নিয়ে বিতর্ক। এই বলে অভিযোগ করা হয় যে, ইসলাম মেয়েদেরকে ছোট করে দেখে, ছেলেদের থেকে অর্ধেক সম্পত্তি দেয়। দুজন মেয়ের সাক্ষীকে একজন ছেলের সাক্ষীর সমান মনে করে। ইসলাম মেয়েদেরকে সমান অধিকার দেয় না, সমান সম্পত্তি দেয় না ইত্যাদি।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

মুমিনরা, তোমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে অন্যায়ভাবে হত্যার বিরুদ্ধে অনুরূপ প্রতিশোধ নিতে —আল-বাক্বারাহ ১৭৮-১৭৯

গত কয়েক শতকে কিছু মনীষী যেমন গান্ধী, টলস্টয় এসে অপরাধীদেরকে করুণা দেখানো এবং হত্যাকারীদেরকে সোজা ফাঁসি না দিয়ে তাদেরকে সংশোধন করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অনেক ‘মহৎ উদ্যোগ’ নিয়ে গেছেন।[৭] তাদের অধ্যবসায়ের ফলাফল: আজকে পশ্চিমা দেশগুলোতে এমন জটিল সব আইন তৈরি হয়েছে যে, হত্যাকারীরা আজকাল হত্যা করে ফাঁসি পাওয়ার পরিবর্তে আইনের জটিল গলিঘুপছি দিয়ে বেরিয়ে এসে হয় মানসিক রোগী উপাধি পেয়ে অত্যাধুনিক ফাইভ-স্টার হোটেলের মতো হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা পাচ্ছে, না হয় থ্রি-স্টার হোটেলের মতো কারাগারে তিনবেলা খাবার, নিজের ব্যক্তিগত কক্ষ, সকালে-বিকালে খেলাধুলার ব্যবস্থা পাচ্ছে। এইসব কয়েদী, যাদের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার কথা, ফাঁসি না পেয়ে জনগণের কোটি কোটি টাকার ট্যাক্সের টাকায় নিশ্চিন্ত জীবন পার করছে। এদের চাকরি-ব্যবসা করতে হয় না, পরিবার চালাতে হয় না, সমাজের কোনো কল্যাণে অবদান রাখতে হয় না।

মানুষকে আইন বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হলে আইন প্রণেতাদের উর্বর মস্তিস্ক থেকে কী বের হয়, তার চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে আমেরিকার আইন। আজকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ২০ লক্ষ কয়েদী নিয়ে কী করবেন তা বুঝতে পারছেন না। লক্ষ লক্ষ কয়েদী পালার বিশাল খরচ জোগান দিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।[৩২০] এমনকি বিল ক্লিনটন সবার সামনে স্বীকার করছেন এত বিপুল পরিমাণের কয়েদী জেলে রাখার জন্য তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।[৩২১]

অথচ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এমন এক আইন দিয়েছেন, যার বাস্তবায়ন হলে, কেউ মানুষকে হত্যা করার আগে হাজার বার ভেবে দেখবে এবং হত্যাকারীদের পুষতে গিয়ে দেশের জনগণকে কোটি টাকার ট্যাক্স গুনতে হবে না, দেশের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি নষ্ট হবে না, নিহতের পরিবার সুষ্ঠু বিচার পাবে—

2_178_title

2_178মুমিনরা, তোমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে অন্যায়ভাবে হত্যার বিরুদ্ধে অনুরূপ প্রতিশোধ নিতে— স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে নিহতের নিকটজন যদি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়, তাহলে ন্যায্য বিনিময় নির্ধারণ করবে এবং হত্যাকারী তা সবচেয়ে ভালোভাবে পরিশোধ করবে। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে করুণা করেছেন। কিন্তু এরপরেও কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তাকে প্রচণ্ড কষ্টের শাস্তি দেওয়া হবে। [আল-বাক্বারাহ ১৭৮]

কুর’আনের বিধান অনুসারে হত্যাকারীকে আইনের সহায়তায় ঠিক সেভাবেই হত্যা করা হবে, যেভাবে সে হত্যা করেছে। তা না হলে কোনো শাশুড়ি তার বউয়ের গায়ে তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে মারবে, আর সেই শাশুড়িকে এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে শক দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে, কম কষ্টে মারা হবে। কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে এসিড মেরে ঝলসে মারবে, আর সেই স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে সরকারের টাকায় জেলে পোষা হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের ক্যাডার রাস্তায় কাউকে অনেকক্ষণ ধরে কুপিয়ে মারলে, তাকে ত্রিশ সেকেন্ডের ফাঁসি দিয়ে পার করে দেওয়া হবে। কেউ প্লেন থেকে বোমা মেরে নিরপরাধ মানুষকে ছিন্নভিন্ন করে মেরে ফেললে, তাকে একটা ফাঁসি দিয়ে দ্রুত মেরে ফেলা হবে। —এগুলো কোনো ন্যায়বিচার হলো না। ন্যায়বিচার যখন প্রতিষ্ঠিত হয় না, তখন কেউ হত্যার চিন্তা করার আগে হাজার বার ভেবে দেখে না যে, সে যেভাবে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে, ঠিক সেই অবস্থায় যখন তাকেও মারা হবে, তখন তার কষ্টটা কতখানি হবে। যার ফলে এরপরে সে যখন হাতে তেলের ক্যান, ছুরি, বন্দুক, বা প্লেনের কন্ট্রোল নেয়, তখন তার আত্মা শুকিয়ে যায় না।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এরাই সত্যিকারের তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছে —আল-বাক্বারাহ ১৭৭

আমাদের সমাজে কিছু মুসলিম আছেন যাদেরকে বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত ধার্মিক মনে হয়। এরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দিয়েছেন। মসজিদে তাদেরকে নিয়মিত দেখা যায়। কিন্তু গরিব আত্মীয়রা তাদের কাছে বার বার সাহায্য চেয়ে “আগামী রমজান আসুক” শুনে ফিরে যায়। এলাকার এতিমখানায় কোনোদিন তাদের দান করতে দেখা যায় না। মসজিদে দান বাক্স তাদের কাছে আসতে শুরু করলে হঠাৎ করে তারা চোখ বন্ধ করে গভীর জিকিরে মগ্ন হয়ে যান, বাক্সটা তাদের সামনে দিয়ে চলে যায়। এরা ব্যবসায় কাস্টমারকে অভিনব পদ্ধতিতে বেশি দামে কম মাল দেওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত পারদর্শী। কর্মীদেরকে কত উপায়ে কম বেতন, কম বোনাস দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে তাদের অসামান্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। তারপর যখন তাদের কোনো বড় ধরনের বিপদ হয়, তখন তাদের প্রলাপ শুরু হয়— “হায় আল্লাহ تعالى! আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রমজানে রোজা রাখি, যাকাত দেই। আমি আপনার কত খাস বান্দা। তারপরেও আমার কেন বিপদ হয়?”

এধরনের মানুষদের জন্য আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি চিন্তার বিষয়, কারণ আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বলছেন যে, আমরা যদি শুধু নামাজ পড়ি, কিন্তু অন্য কোনো ভালো কাজ না করি, তাহলে তাতে কোনো পুণ্য নেই—

2_177_title

2_177 (1)পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফেরালেই সেটা ধার্মিকের মতো কাজ হয়ে গেল না। বরং সত্যিকারের ধার্মিকতা হচ্ছে: যারা আল্লাহর تعالى প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং বিচারের দিন, ফেরেশতাগন, সব কিতাব এবং নবীদের প্রতি বিশ্বাস রাখে। যারা নিজেদের সম্পদকে ভালোবাসার পরেও তা দান করে নিকটজনকে, এতিম, মিসকিনকে, বিপদে পড়া ভ্রমণকারীদেরকে, যারা সাহায্য চায় তাদেরকে এবং দাস-যুদ্ধবন্দিদের মুক্ত করার জন্য দান করে। যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, কথা দিয়ে কথা রাখে; দুর্দশা-দারিদ্রতা, অসুস্থতা-কষ্ট এবং ভীষণ কঠিন সময়েও ধৈর্যধারণকারী। —এরাই নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে, আর এরাই সত্যিকারের তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছে। [আল-বাক্বারাহ ১৭৭]

এখানে পূর্ব-পশ্চিম দিকে মুখ করা বলতে কিবলা পরিবর্তের পরে মক্কার দিকে, আর কিবলা পরিবর্তনের আগে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ পড়া বোঝানো হয়েছে।[১২]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

কিয়ামতের দিন আল্লাহ ওদের সাথে কথা বলবেন না — আল-বাক্বারাহ ১৭৪-১৭৬

গত কয়েক শতকে উপমহাদেশের মানুষদেরকে কৌশলে কুরআন থেকে দূরে রেখে কয়েকটা প্রজন্ম তৈরী করা হয়েছে, যারা কুরআন সম্পর্কে নুন্যতম জ্ঞানও রাখে না। এরা জানে না কুরআনে পরিষ্কারভাবে কী হালাল, কী  হারাম বলা আছে, তাওহীদের শিক্ষা কী? তারা শুধু পড়েছে কিছু গৎবাঁধা বই, যেই বইগুলোর অনেকগুলোতেই নানা ধরনের জাল হাদিস, বিদআতের ছড়াছড়ি।[১১] এভাবে একটি পুরো জাতিকে কুরআনে নিরক্ষর করে রেখে গেছে কিছু ইসলামী নামধারি দল এবং কথিত আলেম নিজেদের ইচ্ছামত ধর্ম ব্যবসা করার জন্য। এদের পরিণাম ভয়ঙ্কর—

2_174_title

2_174আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন সেটা যারা গোপন রাখে, আর দুনিয়ায় সামান্য লাভের বিনিময়ে তা বেচে দেয়, ওরা নিজেদের পেটে জাহান্নামের আগুন ছাড়া আর কিছু ভরে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ ওদের সাথে কথা বলবেন না, ওদেরকে পবিত্রও করবেন না। ওদের জন্য রয়েছে প্রচণ্ড কষ্টের শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ ১৭৪]

আজকাল অনেক ‘আধুনিক মুসলিম’ কু’রআনের আয়াতগুলোর পরিষ্কার বাণীকে ধামাচাপা দিয়ে, অনেকসময় বিশেষভাবে অনুবাদ করে, ইসলামকে একটি ‘সহজ জীবন ব্যবস্থা’ হিসেবে মানুষের কাছে প্রচার করার চেষ্টা করছেন। তারা দেখছেন যে, পাশ্চাত্যের ‘উন্নত’ জাতিগুলো ধর্ম থেকে দূরে সরে গিয়ে কত আনন্দের জীবন যাপন করছে, জীবনে কত স্বাধীনতা উপভোগ করছে: প্রতিদিন রংবেরঙের মদ পান করছে, বিশাল সব আভিজাত্যের হোটেলে গিয়ে জুয়া খেলছে, সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছে; ইচ্ছামত সুন্দর কাপড় পড়ছে, বন্ধু বান্ধব নিয়ে নাচগান করছে—জীবনে কতই না ফুর্তি ওদের।

ওদের এত সুখ, এত আনন্দ দেখে তারা ভিতরে ভিতরে ঈর্ষায় জ্বলে যাচ্ছে। কেন তারা ওদের মতো ফুর্তি করতে পারবে না? কেন তাদেরকে এতটা নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হবে?— এটা তারা কোনোভাবেই নিজেদেরকে বোঝাতে না পেরে, চেষ্টা করছে কোনোভাবে যদি ইসলামকে একটি ‘আধুনিক’, ‘সহজ’ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মানুষের কাছে প্রচার করা যায়। তখন তারা পশ্চিমাদের মতো ফুর্তি করতে পারবে, আবার মুসলিমদের কাছ থেকে একদম দূরেও সরে যেতে হবে না, সমাজে অপরাধীর মতো লুকিয়ে চলতে হবে না। ‘মুহাম্মাদ’ ‘আব্দুল্লাহ’ নাম নিয়ে একদিকে তারা সপ্তাহে একদিন জুম্মার নামায পড়তে যেতে পারবে, অন্যদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে মেয়েদের সাথে নাচতে পারবে, রবিবারে পার্টিতে বন্ধুদের সাথে একটু রঙিন পানিও টানতে পারবে। এভাবে তারা ‘আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন সেটা গোপন রাখে, আর দুনিয়ায় সামান্য লাভের বিনিময়ে তা বেচে দেয়,’—কু’রআনের শিক্ষার পরিপন্থী একটি জীবন যাত্রাকে নিজেদের ফুর্তির জন্য মুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্য করানোর চেষ্টা করছে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

শুধুমাত্র এগুলোই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন — আল-বাক্বারাহ ১৭৩

আমরা যারা মুসলিম প্রধান দেশে থাকি, তারা সাধারণত এই ধরনের আয়াত পড়লে চোখ বুলিয়ে পার হয়ে যাই, কারণ মুসলিম প্রধান দেশে কি আর এসব সমস্যা থাকে নাকি? এগুলো হচ্ছে ‘কুফফার’দের দেশে থাকার সমস্যা। দেখা যাক আসলেই তাই কিনা—2_173_title

2_173মরা প্রাণী, রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা — শুধুমাত্র এগুলোই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু কেউ যদি বাধ্য হয় এগুলো খেতে এবং তার ভেতরে খাওয়ার কোনো আকাঙ্খা না থাকে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খায়, তাহলে তার কোনো পাপ হবে না। আল্লাহ অবশ্যই অনেক ক্ষমা করেন, তিনি নিরন্তর দয়ালু। [আল-বাক্বারাহ ১৭৩]

মরা প্রাণী

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে প্রথমেই ٱلْمَيْتَةَ আল-মাইতাহ হারাম করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে নিজে থেকে মরে যাওয়া, বা কোনো প্রাণীর আক্রমণে মরে পড়ে থাকা প্রাণীর মৃত দেহাবশেষ। লক্ষ্য করুন তিনি تعالى কিন্তু বলেননি যে, মৃত প্রাণীর ‘মাংস খাওয়া’ হারাম, বরং তিনি تعالى বলেছেন ‘মরা জিনিস হারাম’। মৃত জীব খাওয়া, কেনা, বেচা সবকিছুই হারাম। এগুলো থেকে কোনো ধরনের লাভ করাও হারাম। এমনকি নিজেদের পালিত পশুকে মোটা তাজা করার জন্য মৃত কিছু খাওয়ানোও নিষিদ্ধ। তবে ব্যবহারের জিনিস তৈরিতে মৃত প্রাণীর হাড় এবং চুল ব্যবহার করা বৈধ। একইসাথে ট্যানারিতে প্রক্রিয়া করা মৃত প্রাণীর চামড়া ব্যবহার করা বৈধ। তবে মৃত প্রাণীর চর্বি নিষিদ্ধ।[৪] বিভিন্ন তাফসিরে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

খবরের কাগজে আমরা কয়েক বছর থেকেই দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে নানা জেলায়, যেমন: ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, ইত্যাদি জায়গায় দেদারসে মরা গরু, মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে। সরাসরি বিক্রি ছাড়াও শহরের হোটেলগুলোতে নিয়মিত সরবরাহ হচ্ছে মরা গরু, মুরগি। প্রশাসন নিরব। পূর্বাঞ্চলের অ্যানথ্রাক্স সংক্রমিত এলাকাগুলোতে অ্যানথ্রাক্সে মরা গরুর মাংস পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে! এছাড়াও কসাইখানাগুলো অত্যন্ত নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, নোংরা মাটিতে মাংস রেখে বিক্রি হচ্ছে, যা আর হালালের শর্তগুলো পূরণ করে না। এমনকি রাজধানীর হোটেলগুলোতে বাথরুমে, ড্রেনের পাশে মাংস কাটাকাটি, রান্না হচ্ছে। আরও ভয়ঙ্কর খবর হলো ২০১৫ রমযানে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গরু, ছাগলের মাংসের পাশাপাশি শুকরের মাংস রাখা অবস্থায় ধরা পড়েছে। [সুত্রঃ প্রথম আলো, ইনকিলাব, আমার দেশ, জনকণ্ঠ, কালের কণ্ঠ][৩১৩]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করো —আল-বাক্বারাহ ১৭২

সুরা আল-বাক্বারাহতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে তৃতীয় বারের মতো ভালো এবং পবিত্র খাবার খাওয়ার নির্দেশ দিলেন—2_172_title

2_172তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, ভালো এবং পবিত্রগুলো গ্রহণ করো, যা আমি তোমাদেরকে সংস্থান হিসেবে দিয়েছি। আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করো। [আল-বাক্বারাহ ১৭২]

এর আগে ৫৭তম এবং ১৬৮তম আয়াতেও তিনি আমাদেরকে বলেছেন হালাল এবং তাইয়িব (ভালো এবং পবিত্র) খাবার খেতে। একই সুরায় তিন তিনবার আমাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া থেকে সহজেই বোঝা যায়, ভালো এবং পবিত্র খাবার খাওয়াটা আল্লাহর تعالى কাছে কত গুরুত্ব রাখে। কুর’আনে কোনো কিছু তিনি একবার আদেশ করলেই যথেষ্ট। যেমন তিনি কুর’আনে মাত্র একবার আদেশ করেছেন রোজা রাখতে। মুসলিমদের মধ্যে রোজা রাখতে আগ্রহের কোনো কমতি নেই। যেই বান্দা বছরে কোনো দিন নামাজ পড়ে না, সেও রমজানে ৩০ দিন রোজা রাখে। অথচ কুর’আনে কমপক্ষে তিনবার ভালো, এবং পবিত্র খাবার খেতে বলার পরেও অনেক মুসলিমই সেই নির্দেশ প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে যায়। আল্লাহ تعالى জানেন কোন ব্যাপারগুলোতে আমরা সাবধান হবো না। সেই ব্যাপারগুলো একারণেই তিনি বার বার মনে করিয়ে দেন।

যেমন: আল্লাহ تعالى আমাদেরকে প্রকৃতিতে হাজার রকমের পানীয় দিয়েছেন—ডাবের পানি, তালের রস, আখের রস; আপেল-কমলা-আঙ্গুরসহ শত ফলের জুস; গ্রিন-টি, হারবাল-টিসহ শত ধরণের স্বাদের চা, কফি—কিন্তু তারপরেও ক্ষতিকর সফট ড্রিঙ্কস, ফ্রুটজুস, বিয়ার, হুইস্কি পান করার জন্য আমাদের অন্তর খাঁ খাঁ করতে থাকে। প্রকৃতিতে কয়েক হাজার রকমের স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু পানীয় পেয়েও আমাদের মন ভরে না। প্রকৃতিতে পাওয়া স্বাস্থ্যকর ফলগুলোকে বিকৃত করে, গাঁজিয়ে, বেশি করে চিনি এবং কেমিক্যাল দিয়ে বিষাক্ত কক্টেইল বানিয়ে, তারপর রঙ মিশিয়ে রঙ্গিন করে পান করে আমাদের মন ভরাতে হয়।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

না, না, আমাদের বাপ-দাদাদের যা করতে দেখেছি, আমরাও তা-ই করবো — আল-বাক্বারাহ ১৭০-১৭১

2_170_title

2_170যখন তাদেরকে বলা হয়, “আল্লাহ تعالى যা পাঠিয়েছেন, তা অনুসরণ করো।” তারা বলে, “না, না, আমাদের বাপ-দাদাদের যা করতে দেখেছি, আমরাও তা-ই করবো।” কী! যেখানে কিনা ওদের বাপ-দাদারা বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করতো না এবং তারা সঠিক পথ পাওয়ারও চেষ্টা করেনি? [আল-বাক্বারাহ ১৭০]

প্রশ্ন হচ্ছে: কেন মানুষ বাপদাদার অনুসরণ করা এত পছন্দ করে। সাধারণ উত্তর হচ্ছে: তাদের প্রতি সম্মান রেখে এবং এই বিশ্বাস থেকে যে, তারা আমাদের থেকে ধর্ম ভালো জানতো। কিন্তু এর ভিতরে আরেকটা গোপন স্বার্থপর কারণ আছে। আমরা যদি লক্ষ্য করে দেখি কোন ব্যাপারগুলো মানুষ অন্ধ অনুকরণ করে, আমরা দেখবো যে, সেগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে: কীভাবে নিজের কথা, কাজ, আচরণ, উপার্জন, সংস্কৃতি, ফ্যাশন —এসব কিছুতে কোনো পরিবর্তন না করে, বিভিন্ন শর্টকাট ব্যবস্থায় পার পেয়ে যাওয়া যায়।

যেমন: আমরা কুর’আন না বুঝে শুধুই আরবিতে তিলাওয়াত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবো, কারণ আমাদের বাপ-দাদারা তাই করে গেছেন। কিন্তু আসল কারণ হচ্ছে, বুঝে কুর’আন পড়লে তো জেনে যাবো আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কী কী করতে বলেছেন, কী কী করতে মানা করেছেন। এসব জেনে গেলে তো বিবেকের দংশনে পুড়তে হবে। তারপর আল্লাহকে تعالى জবাব দেব কীভাবে? তার চেয়ে কিছুই না বুঝে দিন-রাত কুর’আন তিলাওয়াত করে যাও। আমাদের বাপ-দাদারা করলে, আমরা কেন করবো না?

আবার আমরা আমাদের সংস্কৃতিতে চলে আসা ইসলামের মূল্যবোধের বিরোধী কাজগুলো করা বন্ধ করবো না। ৭ দিন ধরে অনুষ্ঠান করে, নারী-পুরুষ সব মাখামাখি করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবো। তারপর বছরে এক রাত ১০০ রাকাআত নফল নামাজ পড়ে সব গুনাহ মাফ করে ফেলবো। আমরা নিয়মিত ঘুষ খেয়ে, দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হাতানো বন্ধ করবো না। কিন্তু সেই হারাম টাকা দিয়ে অমুকবাগী পিরের মুরিদ হয়ে, তাকে খুশি করে, তার হাত ধরে জান্নাতে চলে যাওয়ার আশা রাখবো। আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবো না। কিন্তু এক উমরি-ক্বাযা নামাজ পড়ে, সব ছেড়ে আসা নামাজ মাফ করিয়ে নেবো। এভাবে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন না এনে, বছরে দুই-তিন বার কোনো হুজুগের ইবাদত করে চেষ্টা করবো সব মাফ করে ফেলার। কারণ আমাদের বাপ-দাদারা সেটা করে গেছেন। তারা পারলে আমরা পারবো না কেন?

যখন এধরনের মানুষদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, এভাবে বাপ-দাদার অন্ধ অনুকরণ ভুল, তখন তারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন। এই ধরনের মানসিকতার মূল কারণ হচ্ছে হিংসা।[আল-বাক্বারাহ ৮৯-৯০] তবে এটি ঠিক হিংসা নয়, সাইকোলজির ভাষায় একে বলে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স বা আত্মগরীমা: অন্যের কাছে নিজের হীনমন্যতা ঢেকে রাখার জন্য নিজেকে বড় বলে জাহির করার এক ধরনের মানসিক প্রতিরক্ষা। তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না যে, আপনি তাদের যুগ যুগ ধরে করে আসা উপাসনাগুলোকে বিদ’আহ বলে প্রমাণ করে দিচ্ছেন; তাদের মাথা ভর্তি হাদিসগুলোকে জাল হাদিস বলে সংশোধন করে দিচ্ছেন। তারা কোনোভাবেই মানতে পারছে না যে, আপনি ইসলামের সঠিক শিক্ষা পেয়েছেন, আর তারা সারাজীবন বাপ-দাদার অনুসরণ করে ভুল পথে ছিল।

আপনি তাদেরকে যতই বোঝাবার চেষ্টা করেন, তারা কোনোভাবেই শুনবে না। কারণ তারা মনে করে যে, আপনার কথা শুনলে তারা আপনার কাছে হেরে যাবে। তাদের এত দিনের কামানো ধর্মীয় বেশভূষা, নূরানি দাঁড়ি-পাঞ্জাবি-আতরের সন্মান, যেখানে কিনা মসজিদে তাদেরকে দেখলে সবাই সরে গিয়ে প্রথম কাতারে জায়গা ছেড়ে দেয়, সেখানে কিনা আমরা তাদেরকে বলছি: তাদের ইসলামের ভিত্তিটাই ছিল ভুল? এটা হতেই পারে না! তাদের হিংসা, আত্মগরীমা তাদেরকে অন্ধ, বধির, মূক করে দিয়েছে।

এখানে একটা ব্যাপার পরিস্কার করা দরকার: এই আয়াতে আল্লাহ অন্ধ আনুগত্য করতে শুধুমাত্র তখনি মানা করেছেন, যখন আমরা এমন কারো অনুসরণ করছি, যে নিজে সঠিক পথে নেই, এবং যে তার বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করে না।[১৪] আল্লাহ এই আয়াতে দুটো শর্ত দিয়ে দিয়েছেন কাদেরকে অনুসরণ করা যাবে না—

১) বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করতো না

আক্বল عقل অর্থ কোনো কিছু বেধে নিয়ন্ত্রণে রাখা, যেমন উট দড়ি দিয়ে বেধে রাখা, যেন পালিয়ে না যায়। নিজের রাগ, ঘৃণা, হিংসা, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে নিরপেক্ষভাবে বুদ্ধি ব্যবহার করা হচ্ছে আক্বল।[১]

মানুষের অনেক বুদ্ধি থাকতে পারে। কিন্তু সেই বুদ্ধিকে যদি লাগাম দেওয়া না হয়, তখন সেই বুদ্ধি থেকে ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হয়। মানুষ তখন সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী হয়ে যায়। তাই বুদ্ধিমান হওয়া মানেই যে একজন ভালো মানুষ হওয়া, তা নয়। যেমন, অনেক জ্ঞানী মানুষদেরকে আমরা দেখেছি, যারা দীর্ঘ সাধনা করে আল্লাহকে تعالى খুশি করার নানা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। যেমন, আমুক মানুষটা অত্যন্ত পবিত্র। তাকে খুশি রাখতে পারলে, তিনি কিয়ামতের দিন আল্লাহর تعالى কাছে তদবির করে আমার বড় বড় গুনাহ মাফ করে দেবেন। তাই সেই পবিত্র মানুষটাকে মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা দাও, তার সাগরেদদেরকে ভুরিভোজ করাও। অমুক মাসে অমুক রাতে ১০০ রাকাআত নফল নামাজ পড়লে সারা জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়, যেটা বছরের অন্য কোনো দিনে হয় না, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

যে তার বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, তার বুদ্ধিকে ভালো কাজে লাগাতে পারে, বুদ্ধি ব্যবহার করে নিজেকে খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখতে পারে, কু’রআনের ভাষায় তারাই বুদ্ধিমান। কু’রআনে যত জায়গায় আক্বল অর্থাৎ বুদ্ধিমান মানুষদের কথা এসেছে, সব জায়গায় এমন সব মানুষদের বোঝানো হয়েছে, যাদের বিবেক তাদের বুদ্ধিকে লাগাম দিয়ে রাখে। এদের বুদ্ধি তাদের প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

২) তারা সঠিক পথেও ছিল না

এই আয়াতের শেষে يَهْتَدُون ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ সাধারণত করা হয়, “সঠিক পথ লাভ করেনি।” কিন্তু এটি এসেছে اهتدى ইহতাদা থেকে, যার অর্থ হচ্ছে: দেখানো সঠিক পথে চলার জন্য নিজে থেকে আন্তরিক চেষ্টা করা।[১] এখানে একটি খুব সূক্ষ্ম ভাষাগত পার্থক্য আছে। আল্লাহ تعالى মানুষকে সঠিক পথে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘাড় ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন না, বরং তিনি মানুষকে সঠিক পথ কোনটা সেটা দেখিয়ে দেন। তারপর মানুষের কাজ হচ্ছে সেই সঠিক পথে চলার চেষ্টা করা। মানুষকে সেই চেষ্টাটা করতে হবে। চেষ্টা ছাড়া কেউ সঠিক পথ পাবে না এবং চেষ্টা ছাড়া কেউ সঠিক পথে টিকেও থাকতে পারবে না।[১] যারা দার্শনিক তর্ক দেখায়, “আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে তো আমি সবসময় ভালোই থাকতাম। তিনি চাননি দেখেই তো আমি ভালো থাকতে পারিনি…”—তাদেরকে  ইহতাদা اهتدى এর মানে ঠিকভাবে বুঝতে হবে।

একটা উদাহরণ দেই—

আপনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন, একসময় একটা চৌরাস্তা মোড়ে গিয়ে একটা সাইন বোর্ড দেখলেন: “চট্টগ্রাম ৫০ মাইল”, কিন্তু আপনি সেদিকে না গিয়ে দূরে একটা সিনেমা হল দেখা যাচ্ছে, সেদিকে যাওয়া শুরু করলেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঠিকই আপনাকে সঠিক পথ দেখিয়েছিল, কিন্তু আপনি اهتدى (সঠিক পথে চলার চেষ্টা) করেননি।

যারা আল্লাহর تعالى বাণী অনুসরণ করে সঠিক পথে চলার আন্তরিক চেষ্টা করেনি, নিজের খেয়াল খুশি মতো ধর্ম অনুসরণ করেছে, অন্যের অন্ধ অনুকরণ করেছে, নিজেদের উর্বর মস্তিস্ক ব্যবহার করে বিভিন্ন শর্টকাট ইবাদত আবিষ্কার করেছে, তাদের অনুকরণ করতে আল্লাহ تعالى মানা করেছেন।

তাহলে কি কোনো ইমামকে অনুসরণ করবো না?

অনেকে মনে করেন এই আয়াতে ‘কোনো প্রশ্ন না করে অনুসরণ’ (তাক্বলিদ) পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাক্বলিদ নিষেধ করা হয়েছে তখনি, যখন কিনা যাকে অনুসরণ করা হচ্ছে, সে নিজে আক্বল ব্যবহার করে না এবং ইহতাদা-ও করে না। ধর্মীয় ব্যাপারে পারদর্শী নন এমন কাউকে অবশ্যই ধর্মীয় ব্যাপারে জ্ঞানী, অভিজ্ঞদের মত মেনে নিতে হবে, তাদের শেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে।[১৪] কারণ কুর’আনেই আল্লাহ تعالى বলেছেন—

তোমরা যদি কোনো ব্যাপারে না জানো, তাহলে যারা জানে, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো। [আন-নাহল ৪৩]

কিন্তু কাউকে জিগ্যেস করার আগে নিজে থেকে ইজতিহাদ, অর্থাৎ নিজের বিচার-বুদ্ধি, উপস্থিত তথ্য, প্রমাণ ব্যবহার করে নিশ্চিত হতে হবে যে, যাকে জিগ্যেস করা হচ্ছে, সে এই ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানে।[১৪] এমন কাউকে জিগ্যেস করতে যাবো না, যে কিনা আমি যা শুনতে চাই, সেটাই আমাকে বলবে। যদি সে আমার পছন্দ মতো উত্তর না দেয়, তাহলে আরেকজনকে গিয়ে জিগ্যেস করবো —এমনটা করা একধরনের প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। অথবা এমন কারো কাছে যাবো না, যে কিনা আমাকে সহজ কিছু করতে বলবে। আর যার কাছে গেলে কঠিন কিছু করতে বলবে, তার কাছে যাবো না —এমন করাটাও অসৎ মানসিকতার পরিচয়।

2_171অবিশ্বাসীদেরকে ডাকা হলো এমন কাউকে ডাকার মতো, যে কিনা হাঁকডাক ছাড়া আর কিছু শোনে না — বধির, মূক ও অন্ধ —এরা কেউ বিবেক-বুদ্ধি খাঁটায় না। [আল-বাক্বারাহ ১৭১]

এই ধরনের মানুষরা হলো তারা, যাদের কাছে প্রায়ই আল্লাহ‌র تعالى বাণী আসে। তারা সেটা নিয়ে অল্প একটু চিন্তা-ভাবনা করে ছেড়ে দেয়। আল্লাহ‌র تعالى বাণী শুনে, বুঝে, নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনার কোনো চেষ্টা তাদের মধ্যে নেই। একারণেই আল্লাহ‌ تعالى তাদেরকে বধির, মূক এবং অন্ধের সাথে তুলনা করেছেন। কারণ তাদের মস্তিস্কের সঠিক ব্যবহার না করতে করতে, তাদের সত্য শোনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে—তারা বধির। তারা নিজে থেকে মানুষকে প্রশ্ন করে সত্যকে জানার চেষ্টা করে না—তারা মূক। তাদের চোখের সামনে সত্য থাকলেও, তারা সেটা দেখে না দেখার ভান করে—তারা অন্ধ। তাদের আর কোনোভাবেই ভালো হবার সম্ভাবনা নেই।[৩]

আপনার মনে হতে পারে—আল্লাহ تعالى যদি অবিশ্বাসকারিদেরকে বধির, মূক, অন্ধ বলে ঘোষণা দেন, তাহলে তাদের দোষ কী? তারা তো ইচ্ছা করলেও ভালো হতে পারবে না। কাফির, মুনাফিকরা তাদের মস্তিস্কের সঠিক ব্যবহার না করতে করতে, তাদের মস্তিস্কের সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলেছে।[৩] মানুষ যদি ছয় মাস তার পা ব্যবহার না করে, তার পায়ের পেশি শুকিয়ে যায়, তখন আর সে দাঁড়াতে পারে না। একই ভাবে মানুষ যদি মস্তিস্কের যথেষ্ট ব্যবহার না করে, তাহলে তার মস্তিস্ক ভোঁতা হয়ে যায়। মস্তিস্ক এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, মানুষ তা যত ব্যবহার করবে, তা তত শক্তিশালী হবে। একারণেই আল্লাহ‌ تعالى কু’রআনে শত শত উপমা, দৃশ্য, ঘটনা, যুক্তি-তর্ক, নানা ধরনের রহস্য দিয়ে রেখেছেন, যেন মানুষ কু’রআন বার বার পড়লে তার চিন্তাশক্তি বাড়ে, কল্পনা শক্তি প্রখর হয়, সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার ক্ষমতা বাড়ে।

মানুষ যখন তার সত্যকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা ব্যবহার করে না, সত্য জানার পরেও সেটা মেনে নিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে না, তখন ধীরে ধীরে তার নিজেকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা একসময় নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের মস্তিস্কের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি আল্লাহ‌রই تعالى সৃষ্টি। তিনিই মানুষকে এভাবে বানিয়েছেন।

অনেক সময় আমরা ইসলামের উপর কোনো বই বা আর্টিকেল পড়ে উপলব্ধি করি যে, আমরা এতদিন যা শিখে এসেছি, তার মধ্যে ভুল রয়েছে। হাজার বছর থেকে বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা কিছু রীতিনীতি, ধারণাগুলো আসলে ইসলাম সমর্থন করে না। অনেক সময় দেখা যায়: আমরা যে দলের শিক্ষা এতদিন অনুসরণ করে এসেছি, তার বিরুদ্ধে কুরআন, সাহিহ হাদিসেই যথেষ্ট শক্ত দলিল আছে। তখন আমরা অনেক সময় ভাবা শুরু করি, “এই খবর যদি মানুষকে জানানো হয় তাহলে ফিতনা তৈরী হবে। মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। হুজুরদের প্রতি শ্রদ্ধা উঠে যাবে। এরচেয়ে বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর ত্যাগ করা ভালো। থাক না কিছু কথা গোপন। আল্লাহ تعالى মাফ করবেন।”

সাবধান! কুর’আনে বহু আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে এই ধরনের চিন্তা করা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। এই ধরনের মানসিকতা বিরাট সব অন্যায়ের পথ খুলে দেয়।

সূত্র:

  • [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
  • [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
  • [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
  • [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
  • [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
  • [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
  • [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
  • [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
  • [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
  • [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
  • [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
  • [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
  • [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [১৫] তাফসির আল জালালাইন।
  • [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ।

সে শুধুই তোমাদেরকে জঘন্য এবং অনৈতিক কাজ করতে বলে — আল-বাক্বারাহ ১৬৯ পর্ব ২

2_160_part2_title

আল্লাহ যখন শয়তানকে তার সান্নিধ্য থেকে বের করে দিচ্ছিলেন, তখন শয়তান একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শপথ করেছিল, যা থেকে তার মানুষকে ধ্বংস করার অন্যতম একটি প্রধান পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়—

(শয়তান বলল) “আমি মানুষের কাছে আসব ওদের সামনে থেকে, ওদের পেছন থেকে, ওদের ডান দিক থেকে এবং ওদের বাম দিক থেকে। আপনি দেখবেন ওরা বেশিরভাগই কৃতজ্ঞ না। [আল-আ’রাফ ৭:১৭]

কু’রআনে আল্লাহ প্রায় ৬০টি আয়াতে কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন। এর মধ্যে একটি বিখ্যাত আয়াত হল—

মনে করে দেখো, তোমাদের প্রভু কথা দিয়েছিলেন, “যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও দিতেই থাকবো। কিন্তু যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও…, আমার শাস্তি বড়ই কঠিন। [ইব্রাহিম ১৪:৭]

এখানে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কথা দিয়েছেন যে, যদি আমরা কৃতজ্ঞ হই, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে দিতেই থাকবেন। তিনি আরবিতে তিনবার জোর দিয়ে একথা বলেছেন, “যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমি তোমাদেরকে আরও দিতেই থাকবো, দিতেই থাকবো, দিতেই থাকবো।”[১]

নিশ্চয়ই শয়তান চাইবে না আপনি জীবনে আরও বেশি পান, আরও ভালো থাকেন। একারণে শয়তানের সবসময় চেষ্টা থাকে: কীভাবে আপনাকে অসুস্থ বিনোদনে বুঁদ করে রাখা যায়, যেই বিনোদন আপনাকে কখনই পরিতৃপ্তি দেয় না। কীভাবে আপনাকে ভুলিয়ে দেওয়া যায় যে, আল্লাহর تعالى অনুগ্রহে আপনি জীবনে কত কিছুই না পেয়েছেন।

কেন আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে বলেন? তাঁর তো আমাদের কাছ থেকে কিছুই পাওয়ার নেই। আমরা কৃতজ্ঞ হই আর না হই, তাতে তো তাঁর কোনো লাভ নেই। তাহলে কৃতজ্ঞ হয়ে কী লাভ?  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

সে শুধুই তোমাদেরকে জঘন্য এবং অনৈতিক কাজ করতে বলে — আল-বাক্বারাহ ১৬৯

2_169_title

সে শুধুই তোমাদেরকে জঘন্য এবং অনৈতিক কাজ করতে বলে, আর যেন তোমরা আল্লাহর تعالى সম্পর্কে না জেনে কথা বলো। [আল-বাক্বারাহ ১৬৯]

শয়তান কখনও আপনাকে এসে বলবে না, “আমি শয়তান। আমি তোমাকে জাহান্নামে পুড়াতে চাই। আসো আমরা … করি।” ইবলিস এবং অন্যান্য জিন শয়তানরা মানুষের কাছে অদৃশ্য প্রাণী। তারা বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে ‘প্যারালাল ইউনিভার্স’ বা ‘অন্য ডাইমেনশন’-এ থাকে, যেখান থেকে তারা ঠিকই আমাদেরকে দেখতে পায়, কিন্তু আমরা তাদেরকে দেখতে পাই না, বা কোনো বৈজ্ঞানিক যন্ত্র দিয়ে সনাক্ত করতে পারি না।

সে এবং তার অনুসারিরা তোমাদেরকে তাদের জায়গা থেকে দেখতে পায়, কিন্তু তোমরা তাদেরকে দেখতে পাওনা। [আল-আ’রাফ ৭:২৭]

শয়তান মানুষের অবচেতন মনে কুচিন্তা বা কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দেয়। আমরা সাবধানে লক্ষ্য করলেও বুঝতে পারবো না: আমাদের মনের গভীরে যে চিন্তাগুলো চলছে, তার কোনটা আমি, আর কোনটা শয়তান। সূরা আন-নাস-এ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলেছেন, কীভাবে শয়তান কাজ করে—

(আমি আশ্রয় চাই) তার অনিষ্ট থেকে, যে নিজেকে লুকিয়ে রেখে কুমন্ত্রণা দেয়। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জ্বিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে। [আন-নাস  ১১৪:৪-৬]

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, শয়তান শুধুই জ্বিন নয়। একইসাথে যে সব মানুষ ইবলিস এবং তার উদ্দেশকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে, তারাও শয়তান।

শয়তান এমন কৌশলে আমাদের মনে কু-চিন্তা, অসুস্থ কামনা ঢুকিয়ে দেয় যে, আমরা মনে করবো: সেগুলো আসলে আমাদের নিজেদেরই চিন্তা-ভাবনা, আবেগ এবং অনুভুতি। যেহেতু আমরা সবসময় শয়তানের ব্যাপারে সাবধান থাকি না, তাই কখন যে শয়তান আমাদের মধ্যে তার কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দিয়ে, আমাদেরকে দিয়ে তার কাজ করানো শুরু করে দেয়, তা আমরা ভুলে যাই। একারণেই আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সাবধান করেছেন—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

হে মানুষ, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং ভালো, পবিত্র আছে, তা খাও — আল-বাক্বারাহ ১৬৮

2_168_title

2_168হে মানুষ, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং ভালো, পবিত্র আছে, তা খাও। আর শয়তানের পথ অনুসরণ করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [আল-বাক্বারাহ ১৬৮]

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলছেন, “হে মানুষ”—এটি শুধু মুসলিমদের জন্যই নয়, বরং সকল যুগের, সকল মানুষের, সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম—সবার জন্য নির্দেশ। এখানে আল্লাহ تعالى শুধুই বলেননি হালাল খাবার খেতে, একইসাথে সেটা তাইয়িবও হতে হবে। তাইয়িব طيب হচ্ছে যা ভালো এবং পবিত্র— দুটোই একসাথে।[১] যা কিছুই খেতে ভালো, দেখতে সুন্দর, শ্রুতিমধুর, সুন্দর ঘ্রাণ —সেগুলোই তাইয়িব।[১৬]

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে যা দেন, সেটা আমাদের জন্য ভালো এবং পবিত্র। কিন্তু মানুষ অনেক সময় অনেক কিছু তৈরি করে যেটা খেতে ভালো হলেও, পবিত্র নয়। যেমন, আল্লাহ تعالى কলা দিয়েছেন, যা তাইয়িব— ভালো এবং পবিত্র। কিন্তু মানুষ যখন এই কলাকে পোকা মারার বিষ ডিডিটি এবং বিদেশ থেকে আনা কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করে[৩১১], তখন সেটা খাওয়ার যোগ্য হলেও, সেটা আর পবিত্র থাকে না, তাইয়িব-এর দুটি শর্ত পূরণ করে না। সুতরাং, এই ধরনের কলা, ফরমালিন দিয়ে রাখা ফল, মাছ খাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না, কুর’আনের এই আয়াতের নিষেধের জন্য এবং নিজের স্বাস্থ্যের জন্য।

একইভাবে আল্লাহ تعالى প্রকৃতিতে পানি, চিনি দিয়েছেন। সেগুলো হালাল এবং তাইয়িব। কিন্তু এগুলোর সাথে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, এসিড, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণের চিনি, রঙ ব্যবহার করে যখন নানাধরণের পানীয় তৈরি করে, তখন সেটা আর তাইয়িব থাকে না।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)