যারা জেনেশুনে সত্য অস্বীকার করে, তাদের জন্যই এই দুনিয়াটাকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে — আল-বাক্বারাহ ২১২

কিছু মানুষ আছে যাদের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্টি, ভিডিও গেম, মুভি, প্রেম, ড্রিঙ্ক, নাচ, গান — এসব করে জীবনটা উপভোগ করা। এরা সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিকল্পনা করে: আজকে কোথায় ঘুরতে যাবে, কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খাবে, কোথায় গিয়ে আড্ডা দিবে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কোথায় গিয়ে পার্টি করবে, সন্ধ্যায় কী সিরিয়াল দেখবে, রাতে কী মুভি দেখবে, সারারাত কী ভিডিও গেম খেলবে, কখন কোথায় দাঁড়িয়ে কী পোজ নিয়ে সেলফি তুলবে ইত্যাদি। এরা এই সব আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা সবসময় ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে যা করা দরকার তাই করে। এর জন্য সম্পর্ক, সমাজ, সংস্কৃতি, সততা, আদর্শ, বিবেক বিক্রি করে দিতে হলেও তা করবে। তবে সবার আগে তারা যা বিক্রি করে দেয়, তা হলো ইসলাম।

এরা যখন কোনো মুসলিম ভাই বা বোনকে দেখে, যারা তাদের মতো চিপা, খোলা জামা পরে ‘জীবনটা উপভোগ’ করে না, ভিডিও গেম, হিন্দি সিরিয়াল, মুভিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বুঁদ হয়ে থাকে না, রেস্টুরেন্টে গিয়ে বাবা-মার কষ্টের অর্জন মুহূর্তের মধ্যে উড়িয়ে দিয়ে আসে না — তখন ভাবে, “ইস! জীবনটা কীভাবে এরা নষ্ট কর্‌তেসে? মোল্লাগুলো এদের ব্রেইন এমন ওয়াশ করে দিসে! মাথা এক্কেবারে গেসে। এরা কী আনস্মার্ট, ব্যাকডেটেড! হাজার বছর আগের গেঁয়ো আরবদের মতো লাইফস্টাইল এখনো এরা ফলো কর্‌তেসে।”—

2_212

যারা জেনেশুনে সত্য অস্বীকার করে, তাদের জন্যই এই দুনিয়াটাকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। বিশ্বাসীদেরকে এরা উপহাস করে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি সবসময় সাবধান থাকে, কিয়ামতের দিন তারা ওদের উপরে থাকবে —আল্লাহ যাকে চান তাকে এমন সামর্থ্য-সংস্থান দান করেন, যার কোনো হিসাবই হয় না। [আল-বাক্বারাহ ২১২]

2_212_title

কিন্তু এরপরেও কিছু মানুষ আছেন যারা সমাজ, সংস্কৃতি, সম্মান, সম্পদ, ক্ষমতা, স্ট্যাটাস, ‘লোকে কী বলবে’ এসবের থেকে আল্লাহকে تعالى বেশি ভালবাসতে পেরেছেন। তাদের কথার ধরণ, পোশাকের ধরণ, বন্ধু-বান্ধবদের প্রকৃতি, ঘরের আসবাবপত্র, লাইব্রেরিতে সাজিয়ে রাখা বইগুলো, ফেইসবুকের স্ট্যাটাস, মোবাইল ফোনের অ্যাপসগুলো—এই সবকিছু দেখলে বোঝা যায় যে: এদের জীবনে কোনো একটা বিরাট উদ্দেশ্য আছে এবং এরা সেই ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। এরা শপিং মলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেহুদা ঘুরে বেড়ান না, প্রতিদিন ফোনে দুই ঘণ্টা গল্প করেন না, দিনে তিনটা হিন্দি সিরিয়াল দেখেন না, ফেইসবুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন না, রাস্তা ঘাটে বসে পুরো সময়টা মোবাইল ফোনে Angry Birds খেলেন না। এদের ভাবসাব পুরোই আলাদা। একদল মানুষ এদেরকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে, এদেরকে নানা ধরনের নাম দেয়: মোল্লা, নিনজা, তালেবান, হুজুর। কিন্তু আল্লাহ تعالى এদের সম্পর্কে বলেছেন—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করো —আল-বাক্বারাহ ১৭২

সুরা আল-বাক্বারাহতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে তৃতীয় বারের মতো ভালো এবং পবিত্র খাবার খাওয়ার নির্দেশ দিলেন—2_172_title

2_172তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, ভালো এবং পবিত্রগুলো গ্রহণ করো, যা আমি তোমাদেরকে সংস্থান হিসেবে দিয়েছি। আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করো। [আল-বাক্বারাহ ১৭২]

এর আগে ৫৭তম এবং ১৬৮তম আয়াতেও তিনি আমাদেরকে বলেছেন হালাল এবং তাইয়িব (ভালো এবং পবিত্র) খাবার খেতে। একই সুরায় তিন তিনবার আমাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া থেকে সহজেই বোঝা যায়, ভালো এবং পবিত্র খাবার খাওয়াটা আল্লাহর تعالى কাছে কত গুরুত্ব রাখে। কুর’আনে কোনো কিছু তিনি একবার আদেশ করলেই যথেষ্ট। যেমন তিনি কুর’আনে মাত্র একবার আদেশ করেছেন রোজা রাখতে। মুসলিমদের মধ্যে রোজা রাখতে আগ্রহের কোনো কমতি নেই। যেই বান্দা বছরে কোনো দিন নামাজ পড়ে না, সেও রমজানে ৩০ দিন রোজা রাখে। অথচ কুর’আনে কমপক্ষে তিনবার ভালো, এবং পবিত্র খাবার খেতে বলার পরেও অনেক মুসলিমই সেই নির্দেশ প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে যায়। আল্লাহ تعالى জানেন কোন ব্যাপারগুলোতে আমরা সাবধান হবো না। সেই ব্যাপারগুলো একারণেই তিনি বার বার মনে করিয়ে দেন।

যেমন: আল্লাহ تعالى আমাদেরকে প্রকৃতিতে হাজার রকমের পানীয় দিয়েছেন—ডাবের পানি, তালের রস, আখের রস; আপেল-কমলা-আঙ্গুরসহ শত ফলের জুস; গ্রিন-টি, হারবাল-টিসহ শত ধরণের স্বাদের চা, কফি—কিন্তু তারপরেও ক্ষতিকর সফট ড্রিঙ্কস, ফ্রুটজুস, বিয়ার, হুইস্কি পান করার জন্য আমাদের অন্তর খাঁ খাঁ করতে থাকে। প্রকৃতিতে কয়েক হাজার রকমের স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু পানীয় পেয়েও আমাদের মন ভরে না। প্রকৃতিতে পাওয়া স্বাস্থ্যকর ফলগুলোকে বিকৃত করে, গাঁজিয়ে, বেশি করে চিনি এবং কেমিক্যাল দিয়ে বিষাক্ত কক্টেইল বানিয়ে, তারপর রঙ মিশিয়ে রঙ্গিন করে পান করে আমাদের মন ভরাতে হয়।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)