আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ চাপিয়ে দেন না — আল-বাক্বারাহ ২৮৬

সুরাহ আল-বাক্বারাহ‘র শেষ আয়াতটি অন্যতম সুন্দর একটি আয়াত। এখানে জীবন বদলে দেওয়ার মতো অসাধারণ কিছু বাণী রয়েছে। এই আয়াতটি নিয়ে আমরা যদি গভীরভাবে চিন্তা করি, জীবন সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে বাধ্য। একইসাথে এই আয়াতে একটি সুন্দর দু‘আ রয়েছে, যা কঠিন অন্তরকে নরম করে দেবে।

আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ চাপিয়ে দেন না। সে যা ভালো কাজ করেছে তার ফল পাবে এবং যা খারাপ করেছে তা তার বিরুদ্ধে যাবে।
“ও আমাদের রব, আমরা ভুলে গেলে বা ভুল করে ফেললে আমাদের পাকড়াও করেন না।
ও আমাদের রব, আগেকার লোকদের উপর যেমন কঠিন বোঝা দিয়েছিলেন, আমাদের উপর তেমন বোঝা দিয়েন না।
ও আমাদের রব, যে বোঝার ভার বইবার সামর্থ্য আমাদের নেই , সে-ই বোঝা চাপিয়ে দিয়েন না। আমাদের অপরাধগুলো মাফ করে দিন। আমাদের পাপগুলো গোপন করে দিন। আমাদের উপর দয়া করুন। আপনিই তো আমাদের রক্ষাকর্তা। তাই অবিশ্বাসী লোকগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।” [আল-বাক্বারাহ ২৮৬]

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আপনার কাছেই যে আমরা ফিরে যাব —আল-বাক্বারাহ ২৮৫

রাসূল বিশ্বাস করেন যা তার প্রভু তাকে পাঠিয়েছেন। পরিপূর্ণ বিশ্বাসীরাও তা-ই করে। তারা সবাই আল্লাহকে, তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর ধর্মগ্রন্থগুলো, তাঁর বার্তাবাহকদের বিশ্বাস করে। তারা বলে, “আমরা তাঁর রাসুলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। আমরা শুনলাম। মানলাম। আমাদের ক্ষমা করুন প্রভু। আপনার কাছেই যে আমরা ফিরে যাব।” [আল-বাক্বারাহ ২৮৫]

মুসলিমদের জন্য একটি খুব সুন্দর একটা দু’আ রয়েছে এই আয়াতে, “আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করি না। আমরা শুনলাম। মানলাম। আমাদের ক্ষমা করুন প্রভু। আপনার কাছেই যে আমরা ফিরে যাব।”

মুসলিমদের মধ্যে সমস্যা নেই “আমরা শুনলাম”-এই অংশটাতে, কিন্তু যাবতীয় সমস্যা হচ্ছে “মানলাম”-এ। যেমন কেউ বলেন, “কুর‘আন পড়তে ভালোই। অনেক নীতি কথা আছে। সুন্দর সুন্দর কাহিনী আছে। জাহান্নামের কীসব বাজে কথা লেখা আছে। কিন্তু তাই বলে এগুলো সব মানতে হবে নাকি? কুর‘আনের সব কথা আজকাল চলে না। হাজার বছর আগের আরবদের জন্য এটা ঠিক ছিল। আজকাল যুগ পাল্টেছে। আমাদেরকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।” — এই হচ্ছে আমাদের আসল সমস্যা।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমাদের মনে যা কিছু আছে, তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো — আল-বাক্বারাহ ২৮৪

কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ تعالى ইসলাম ধর্মের মূলনীতিকে এক কথায় জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা যতই তাফসির, হাদিস, ফিকহ পড়ি এবং মানার চেষ্টা করি না কেন, এই মূলনীতিগুলো যদি ঠিকভাবে নিজের ভেতরে বাস্তবায়ন না করি, তাহলে ধর্মের আসল উদ্দেশ্য কী, তা আর ধরতে পারি না। মুসলিম হিসেবে আমাদের কথা এবং কাজ কেমন হওয়া উচিত ছিল, তা উপলব্ধি করি না। তখন আমরা ইসলাম ধর্মের আসল উদ্দেশ্য নিজের জীবনে এবং সমাজে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হই, নিজের এবং আশেপাশের মানুষের জীবনে অশান্তি ডেকে আনি। এরকম একটি আয়াত হলো—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যখন কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদ শর্তে ঋণ দেবে, তখন তা লিখে রাখবে — আল-বাক্বারাহ ২৮২-২৮৩

“ভাই, দাড়িওয়ালা দেখে নিশ্চিন্ত মনে ধার দিয়েছিলাম। এক বছর পার হয়ে গেছে, টাকা ফেরত তো দেয়ই না, ফোন করলেও এখন আর ধরে না। ইসলাম কি এই শেখায়?” — আমাদের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে, যদি কাউকে টাকা ধার দেই, তাহলে সেটা লিখে রাখার দরকার নেই। পরিচিতদের মধ্যে ধার দিচ্ছি, লিখিত চুক্তি করতে গেলে কেমন যেন দেখায়। আর তাছাড়া ধর্মপ্রাণ মানুষ কি আর টাকা নিয়ে ফেরত দেবে না? আমরা অনেকেই জানি না যে, কাউকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধার দিলে সেটা লিখিত চুক্তি করে রাখাটা ফরজ। কুর‘আনে আল্লাহ এই নিয়ে এক বিরাট আয়াত দিয়েছেন, যেন মুসলিমদের মধ্যে ধার দেওয়া নিয়ে ঝামেলা কমানো যায়। মুসলিম মানেই এই না যে, তারা ধার নিলে সময় মতো ফেরত দেবে। বরং সময় মতো ধার ফেরত দেওয়া নিয়ে মুসলিমদের মধ্যেই প্রচুর ঝামেলা হয় দেখেই কুর‘আনের সবচেয়ে বড় আয়াতে বলা আছে কীভাবে ধার দেওয়ার সময় লিখিত চুক্তি করে রাখতে হবে। এই আয়াতটিতে খুব পরিষ্কারভাবে ধার দেওয়ার নিয়ম, বাধ্যতা, সাক্ষীর দায়িত্ব ইত্যাদি বর্ণনা করা আছে—

বিশ্বাসীরা শোনো! যখন কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদ শর্তে ঋণ দেবে, তখন তা লিখে রাখবে। চুক্তিলেখক চুক্তির শর্তগুলো ঠিকঠাকমতো লিখে দেবে। আল্লাহ যেহেতু তাকে লেখা শিখিয়েছেন, কাজেই সে যেন লিখতে অস্বীকার না-করে। দেনাদার লোক চুক্তির যা যা শর্ত বলবে সে তা লিখবে। বলার সময় সে যেন তার প্রভু আল্লাহকে মনে রাখে—কোনো ঊনিশ-বিশ না-করে। সে যদি কম বুঝে, দুর্বল হয় বা ঠিকমতো বলতে না-পারে, তাহলে তার অভিভাবক যেন ঠিকঠাকভাবে সব বলে দেয়।
চুক্তির সময় তোমাদের মধ্যে থেকে দুজন পুরুষকে সাক্ষী রাখবে। দুজন পুরুষ পাওয়া না-গেলে তোমাদের সম্মতিতে সাক্ষীদের মধ্যে একজন পুরুষ ও দুজন নারীকে সাক্ষী রাখতে পারো; যাতে একজন নারী ভুল করলে অন্যজন মনে করিয়ে দিতে পারে।
সাক্ষ্য দিতে ডাকা হলে সাক্ষীরা যেন অস্বীকার না-করে। ঋণ যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিত্তিতে হয়, তাহলে তা ছোট-বড় যা-ই হোক, লিখে রাখার ব্যাপারে হেলাফেলা করবে না। কারণ, আল্লাহর কাছে এটা বেশি সুবিচারপূর্ণ, প্রমাণ হিসেবে বেশি নির্ভরযোগ্য এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবে তাৎক্ষণিক লেনদেন হলে না-লিখলে সমস্যা নেই। আর যখন পরস্পর বেচাকেনা করো, তখন সাক্ষী রাখো। চুক্তিলেখক বা সাক্ষীর কাউকেই কোনো ক্ষতি করা যাবে না। করলেই তোমাদের অপরাধ হবে। আল্লাহর প্রতি সাবধান!
আল্লাহই তোমাদের শেখান। আর আল্লাহ সবকিছুই ভালোভাবে জানেন। [আল-বাকারাহ ২৮২]

এই আয়াতটি হচ্ছে ঋণের উপর একটি সম্পূর্ণ আইন সঙ্কলন। আল্লাহ تعالى একটি আয়াতের মধ্যেই ঋণ সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম আমাদেরকে বলে দিয়েছেন। এই আয়াতে বিশটিরও বেশি আইন রয়েছে। কোনো আইনজীবীকে যদি বলা হতো ঋণের যাবতীয় আইন নিয়ে লিখতে, তাহলে সে পঞ্চাশ পৃষ্ঠার এক বই লিখে নিয়ে আসতো, যা পড়তে গেলে মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেত। তারপর সেই বইয়ে কথার মধ্যে বহু ফাঁকফোকর পাওয়া যেত। কয়েকবার তার সংশোধনী বের হতো। অথচ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এমন সুন্দর একটি আয়াত দিয়েছেন, যা কবিতার ছন্দের মতো পড়তে পারি, সুমধুর তিলাওয়াতে শুনতে পারি এবং শোনার সময় সংবিধান শোনার মতো একঘেয়ে মনে হয় না। একইসাথে এটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম, কোনো ফাঁকফোকর নেই। কেউ দাবি করতে পারবে না যে, এই আয়াতে আইনগুলোর মধ্যে অমুক ফাঁক পাওয়া গেছে। আর ইসলাম যে বাস্তবতা বিমুখ, শুধুই ধর্ম-কর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোনো ধর্ম নয়, তার প্রমাণ এই আয়াত।[১১]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এরা বলত, ‘ব্যবসার লাভ নেওয়া আর সুদ নেওয়া তো একই কথা।’ — আল-বাক্বারাহ ২৭৫

অনেকে ভাবেন, আমি ব্যাংক থেকে মাসে মাসে সামান্য সুদ নিলে সমস্যা কী? আমার কষ্টের জমানো টাকা ব্যাংক খাটিয়ে লাভ করে সেখান থেকেই তো আমাকে সুদ দিচ্ছে? আর কেউ যদি ব্যবসা করার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারপর ব্যবসার লাভ থেকে সুদ দেয়, তাতে সমস্যা কী?

সুদ ছাড়া এমনি এমনি ব্যাংক বা কোনো মানুষ ঋণ দেবে কেন? তাতে তার কী লাভ হলো? টাকা ধার দিয়ে কিছু সময় পর একটু বেশি টাকা ফেরত নেওয়া তো এক ধরনের ব্যবসাই হয়, তাই না? তাছাড়া সুদ না নিলে ব্যাংকগুলো চলবে কী করে? তাদের কর্মচারীদের বেতন দিবে কীভাবে? ব্যাংক না থাকলে মানুষ ঋণ না নিয়ে বড় ব্যবসা করবে কীভাবে? দেশের উন্নয়নের জন্য বড় বড় প্রজেক্টগুলো হবে কীভাবে? ইসলামে সুদ হারাম করার পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে?

— সুদ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। আমরা ঠিক বুঝতে পারি না: সুদকে হারাম করার পেছনে যুক্তি কোথায়?  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যারা তাদের সম্পদ দিন-রাত প্রকাশ্যে, গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে — আল-বাক্বারাহ ২৭৪

যারা তাদের সম্পদ দিন-রাত প্রকাশ্যে, গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে — তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে রাখা আছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো আফসোস করবে না। [আল-বাক্বারাহ ২৭৪]

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى সেই সব মানুষদের কথা বলেছেন, যারা সবসময় দান করেন। দিনের বেলা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো অভাবীকে দেখলে দান করেন। কোনো সংগঠন এসে সাহায্য চাইলে দান করেন। কেউ তাকে অভাবী মানুষের দুর্দশার কথা শোনালে তিনি দান করার জন্য ছুটে যান। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারিতে দুস্থ মানুষদের দান করার সুযোগ পেলে তিনি কখনও ছেড়ে দেন না। আত্মীয়রা চাওয়ার আগেই তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেন। মসজিদে কারও চেহারা দেখে সে কষ্টে আছে মনে হলে, তিনি তার কষ্ট কমাতে এগিয়ে যান। এই ধরনের নিবেদিত প্রাণ মানুষরা দিনে, রাতে, প্রকাশ্যে, গোপনে যখন যেভাবে পারেন দান করতে থাকেন। এদের সম্পর্কে আল্লাহ تعالى বলছেন যে, এদের পুরস্কার বিশেষভাবে তাঁর تعالى কাছেই জমা আছে। এরা কিয়ামতের দিন যখন তাঁর تعالى কাছে আসবেন, সেদিন তাদের কোনো ভয়, কোনো আফসোস বা দুঃখ থাকবে না। আল্লাহ تعالى এদেরকে বিরাট পুরস্কার দেবেন। এমন পুরস্কার, যা তিনি تعالى নিজের কাছে রেখেছেন। অন্য কাউকে তিনি تعالى এত বড় পুরস্কার ধরে রাখার জন্য যোগ্য মনে করেননি।

প্রশ্ন হচ্ছে: কেন দানশীলদের জন্য এত বড় পুরস্কার? এই ধরনের পুরস্কার কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি, নিয়মিত রোজাদারদের জন্য থাকা উচিত ছিল না?

ঘরে বসে নামাজ, রোজা করা সোজা কাজ। কিন্তু নিজের কষ্টের সম্পদ কাউকে দান করা কঠিন ব্যাপার। দান করতে গেলেই মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা শুরু হয়ে যায়, “যদি দান করি তাহলে বাচ্চার পড়ার খরচের জন্য টাকা থাকবে? আগামী কয়েকমাস বাড়ি ভাড়া দিতে পারবো? পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার টাকা কীভাবে দেব? গাড়ি-বাড়ি কেনার জন্য টাকা জমাবো কীভাবে?” — যখনি আমরা কোনো দান করার পরিস্থিতিতে পড়ি, তখনি আমরা একেক জন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হয়ে যাই। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের যাবতীয় সম্পদ, বিনিয়োগ এবং ঝুঁকির হিসাব মাথার মধ্যে গিজগিজ করতে থাকে। দান করতে গেলেই বোঝা যায় কার আল্লাহর تعالى প্রতি বিশ্বাস কতটা দৃঢ়।

একারণেই যারা নিজের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে জয়ী হয়ে দিন-রাত দান করতে পারেন, তাদের বিশ্বাস অত্যন্ত মজবুত হয়ে যায় এবং তাদের অন্তর খুবই শক্তিশালী হয়ে যায়। তখন তাদের ভেতরে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। যেমন, আল্লাহর تعالى প্রতি আস্থা অনেক বেড়ে যায়, ভবিষ্যৎ নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা করা কমে যায়, অমূলক ভয়-ভীতিকে তারা জয় করেন, নেতিবাচক চিন্তা কমে যায়, অন্যের প্রতি আত্মত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি হয়, সহমর্মিতা বোধ বাড়ে। একারণেই যারা নিয়মিত দান করেন, তাদের অন্তর মজবুত হয়, অল্পতেই মন ভেঙ্গে পড়ে না। দান করাটা হচ্ছে কঠিন পরিস্থিতিতেও অন্তরকে আল্লাহর تعالى আদেশ মানানোর জন্য এক ধরনের ট্রেনিং। দুর্ভিক্ষ, মহামারি বা কষ্টের সময় মানুষকে দান করা, যখন কিনা নিজেরই অভাব চলছে, আত্মীয়দেরকে দান করা যাদের সাথে সম্পর্ক ভালো না—এগুলো বেশ কঠিন কাজ। এগুলো আমাদেরকে সহজ, আরামের ইবাদতের গণ্ডি থেকে বের করে, কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহর تعالى প্রতি আস্থা রাখা, তাঁর تعالى আদেশ মেনে চলার ট্রেনিং দেয়।[৭]

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তারা মানুষের কাছে হাত পাতেন না — আল-বাক্বারাহ ২৭৩

তোমাদের দান সেই অভাবীরা পাবে, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে নিবেদিত যে, তারা জীবিকার খোঁজে বের হতে পারে না। তারা মানুষের কাছে হাত পাতেন না দেখে অজ্ঞরা মনে করে যে, তাদের কোনো অভাব নেই। কিন্তু তুমি তাদের লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল করলে বুঝতে পারবে। তারা কখনও নাছোড়বান্দার মতো চায় না। আর তোমরা ভালো যা কিছুই দান করবে, আল্লাহ অবশ্যই সে ব্যাপারে সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৭৩]

কিছু মানুষ আছেন যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদেরকে পুরোপুরি বিলিয়ে দেন। এরা এমন সব ত্যাগ স্বীকার করেন, যেগুলো আমরা সাধারণ মুসলিমরা করার মতো সাহস কখনও করতে পারি না। এদের অনেকে নিজেদের ভিটেমাটি, সচ্ছল জীবন ছেড়ে দূর দেশে চলে যান ইসলামের জন্য পড়াশুনা করতে। আবার অনেকে হারাম চাকরি বা ব্যবসা আর করবেন না, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধুই আল্লাহকে খুশি করার জন্য চাকরি বা ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অভাবের জীবন বেছে নেন। আবার অনেকে এলাকায় অন্যায় শাসন, দুর্নীতি এসব থেকে পালিয়ে সৎভাবে বেঁচে থাকার জন্য সব ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যান। এভাবে আল্লাহর تعالى পথে নিজেদেরকে পুরোপুরি নিবেদিত করে দেওয়ার ফলে তাদের পক্ষে আর জীবিকা অর্জন করে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করার সুযোগ থাকে না। তারা অত্যন্ত অভাবের মধ্যে জীবন পার করতে থাকেন, কিন্তু আশেপাশের কাউকে সেটা নিজে থেকে বুঝতে দেন না।[১১][১২][১৪][১৭]

এই ধরনের মানুষরা ভিখিরি নন। তারা কখনও মানুষের কাছে হাত পাতেন না। তাদের ভেতরে আত্মসম্মান বোধ আছে। সাধারণ ফকিরের মতো মানুষের কাছে গিয়ে তাদের অভাব নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করেন না। এঁদেরকে দেখে আমরা অনেক সময় ভাবি, “অভাব থাকলে তো সে চাইতই। কিছু চাচ্ছে না যখন, তাহলে নিশ্চয়ই টাকাপয়সা ভালোই আছে। নিশ্চয়ই কোনো পার্ট টাইম কাজ করে যেটা আমি জানি না। না হলে হয়ত গ্রামে জমি জমা আছে, যেখান থেকে ভালোই ইনকাম হয়।” —যারা এরকম ভাবে আল্লাহ تعالى তাদের জন্য এই আয়াতে কঠিন একটা শব্দ ব্যবহার করেছেন —জাহিল।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা যদি তোমাদের দানের কথা প্রকাশ করে দাও, তাহলে তাতেও কল্যাণ আছে — আল-বাক্বারাহ ২৭১-২৭২

তোমরা যদি তোমাদের দানের কথা প্রকাশ করে দাও, তাহলে তাতেও কল্যাণ আছে। আর যদি তা গোপন রাখো এবং তা অভাবীদের দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরও বেশি ভালো হবে। তোমাদের গুনাহগুলোর কিছু মাফ করার উপায় হয়ে যাবে। আর তোমাদের সব কাজের ব্যাপারে আল্লাহ খবর রাখেন। [আল-বাক্বারাহ ২৭১]

সাদাকা অর্থাৎ দান করে সেটা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেওয়া দোষের কিছু নয়, যদি সেটাতে অন্যরা দান করতে উদ্বুদ্ধ হয়। শুধু সাবধান থাকতে হবে যেন, দানের উদ্দেশ্য শুধুই লোক দেখানো হয়ে না যায়। এর আগের আয়াতগুলোতেই আমরা দেখেছি যে, যারা শুধুই লোক দেখানো দান করে, আল্লাহকে تعالى খুশি করা একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে না, অথবা যাদেরকে দান করা হয়েছে, তাদেরকে বার বার খোটা দেয়, তাদের পরিণাম ভয়ংকর। তারা এর কোনো প্রতিদান আল্লাহর কাছে তো পাবেইনা উপরন্তু এটা তাদের জাহান্নামে যাবার কারণও হতে পারে। কিন্তু এই আয়াতে বলা হচ্ছে যে, যদি দান করে সেটা মানুষ প্রকাশ করে দেয়, এবং তা থেকে অন্যরা উৎসাহিত হয়, যা থেকে অভাবীদেরই শেষ পর্যন্ত উপকার হয়, তাহলে এই প্রকাশ করার মধ্যেও কল্যাণ রয়েছে।[১২][১৪][১৯][২০]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা যা কিছুই খরচ করো, বা যেটাই মানত করো, আল্লাহ অবশ্যই তা জানেন — আল-বাক্বারাহ ২৭০

তোমরা যা কিছুই খরচ করো, বা যেটাই মানত করো, আল্লাহ অবশ্যই তা জানেন। আর যালিমদের সাহায্য করার কেউ নেই। [আল-বাক্বারাহ ২৭০]

আমরা যা কিছুই খরচ করি, সেটা আল্লাহর تعالى রাস্তায় হোক, বা অন্য কোনো অসৎ কাজে হোক না কেন, আল্লাহ تعالى তা অবশ্যই জানেন। রাস্তায় চলার সময় এক অন্ধ ফকিরকে দেখে খুব খারাপ লাগলো, পকেট থেকে একশ টাকার নোট বের করে চুপচাপ তার হাতে গুঁজে দিলেন, সেটা আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ تعالى অবশ্যই দেখলেন। কেউ রাস্তার মধ্যে ময়লা ফেলে গেছে। মানুষ কষ্ট করে তা পাশ কাটিয়ে হেটে যাচ্ছে। আপনি নিজের টাকা খরচ করে কাউকে ডেকে এনে তা পরিষ্কার করে দিলেন। এর জন্য কেউ আপনাকে কোনো ধন্যবাদ দিলো না, কোনো পদক দিলো না, ইলেকশনে দাঁড়াতে আমন্ত্রণ জানালো না। কিন্তু আল্লাহ تعالى ঠিকই তা দেখেছেন। আপনার জন্য সম্মান পদক-এর থেকেও বিরাট কিছু অপেক্ষা করছে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়েছে, সে বিরাট কল্যাণ পেয়ে গেছে —আল-বাক্বারাহ ২৬৯

তিনি যাকে চান, তাকে প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়েছে, সে বিরাট কল্যাণ পেয়ে গেছে। আর চিন্তাশীল মানুষরা ছাড়া কেউ শিক্ষা নেবে না। [আল-বাক্বারাহ ২৬৯]

হিকমাহ অর্থাৎ প্রজ্ঞা এসেছে ইহ্‌কাম احكم থেকে, যার অর্থ কথা বা কাজে পরিপূর্ণতা, পারফেকশন।[১৪] প্রজ্ঞা হচ্ছে জ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার। আমাদের অনেক জ্ঞান থাকতে পারে, কিন্তু যদি প্রজ্ঞা না থাকে, তাহলে সেই জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার হবে না। যেমন: আমরা অনেকেই জানি, আল্লাহ تعالى আমাদের ক্বদর/ভাগ্যের মালিক, তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এই ব্যাপারে কুর’আনের আয়াতগুলো আমরা পড়েছি, আমাদের জ্ঞান যথেষ্টই আছে। কিন্তু তারপরও আমরা বাচ্চার কপালে কালো টিপ দেই, যেন অশুভ চোখ না লাগে। স্বামীর নাম নেওয়া যাবে না, তাতে অমঙ্গল হয়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পেছনে তাকানো যাবে না, তাতে যাত্রা অশুভ হয়। কুর‘আনের আয়াতের সাথে হাবিজাবি দু’আ লেখা তাবিজ পড়ি, যেন অসুখ না হয়। —এরকম শত শত ভুল ধারণায় আমরা বিশ্বাস করি, কারণ আমাদের জ্ঞান থাকলেও প্রজ্ঞা আসেনি। আমরা শিখিনি আমাদের জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগাতে হয়।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)