আকাশকে খুলে দেওয়া হবে — আন-নাবা ১৭-৩০

চৌধুরী সাহেব স্বপরিবারে সমুদ্রের পাড়ে বেড়াতে এসেছেন। পাড়ে বসে তারা সমুদ্র উপভোগ করছিলেন, কিন্তু তার শিশু বাচ্চাটি এখন ক্ষুধায় কান্না শুরু করেছে। স্ত্রীকে নিয়ে উঠলেন নিরিবিলি একটা জায়গা খুঁজে বের করতে। তারা হেঁটে যাচ্ছিলেন, আর তখন এক ভীষণ শব্দে কানে তালা লেগে গেলো। তারপর পায়ের নিচে মাটি ভীষণ জোরে ঝাঁকুনি দিলো। তিনি দূরে ছিটকে পড়ে গেলেন। 

উপরে তাকিয়ে দেখলেন আকাশটা যেন গোলাপের মত লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে, আকাশটাকে পৃথিবীর উপর থেকে ছিঁড়ে তুলে ফেলা হয়েছে। মহাকাশ খালি চোখে দেখা যাচ্ছে। আর পুরো মহাকাশে অজস্র ফাটল তৈরি হচ্ছে। তারাগুলো একে একে ঝরে যাচ্ছে। সূর্যকে কালো একটা কী যেন ঘিরে ফেলছে। দিনের বেলাতেও রাতের মত অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। চাঁদের শেষ আলোটুকুও একসময় নিভে গেলো। 

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ধন-সম্পদ, সন্তান কোনো কিছুই তার কাজে আসবে না — আল-মাসাদ

সুরা মাসাদ বা লাহাব কুর‘আনের অন্যতম বিতর্কিত সূরাহ। শুধুই যে অমুসলিমরা এই সূরাহকে আক্রমণ করে তাই নয়, একইসাথে অনেক মুসলিমদেরকেও দেখা যায় এই সূরাহ নিয়ে নানা সন্দেহে ভুগতে। তাদের উভয়ের অভিযোগ হচ্ছে, কেন কুর‘আনে শুধুই দুইজনকে অভিশাপ দিয়ে পুরো একটা সূরাহ দেওয়া হলো? এই সূরাহ পড়ে মুসলিমদের কী লাভ? কুর‘আন না মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক? এই সূরাহ’র মধ্যে তো কোনো পথনির্দেশ দেখা যাচ্ছে না? কোটি কোটি মানুষ এই সূরাহ মুখস্ত করে কোটি কোটি বার পড়ছে, শুধুই কোনো এক বদ পরিবারকে অভিশাপ দেওয়ার জন্য, এ কেমন কথা হলো? নামাজে দাঁড়িয়ে লক্ষ কোটি মানুষ এক পরিবারের গুষ্টি উদ্ধার করছে, এতে মুসলিম উম্মাহর কী উপকার হচ্ছে?  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমাদের মনে যা কিছু আছে, তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো — আল-বাক্বারাহ ২৮৪

কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ تعالى ইসলাম ধর্মের মূলনীতিকে এক কথায় জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা যতই তাফসির, হাদিস, ফিকহ পড়ি এবং মানার চেষ্টা করি না কেন, এই মূলনীতিগুলো যদি ঠিকভাবে নিজের ভেতরে বাস্তবায়ন না করি, তাহলে ধর্মের আসল উদ্দেশ্য কী, তা আর ধরতে পারি না। মুসলিম হিসেবে আমাদের কথা এবং কাজ কেমন হওয়া উচিত ছিল, তা উপলব্ধি করি না। তখন আমরা ইসলাম ধর্মের আসল উদ্দেশ্য নিজের জীবনে এবং সমাজে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হই, নিজের এবং আশেপাশের মানুষের জীবনে অশান্তি ডেকে আনি। এরকম একটি আয়াত হলো—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

অনেকে আছে যারা শুধুই চায়, “ও রব্ব, আমাদেরকে দুনিয়াতে দিন” — আল-বাক্বারাহ ২০০-২০২

আমরা যখন হাজ্জ করতে যাই, আমাদের উদ্দেশ্য থাকে কীভাবে আমরা আল্লাহকে تعالى খুশি করতে পারি, যেন তিনি আমাদেরকে জান্নাত দেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, অনেকে হাজ্জে যান, কারণ তার দুনিয়াতে অনেক কিছু দরকার, এবং তিনি শুনেছেন হাজ্জে গিয়ে চাইলে নাকি সব পাওয়া যায়। যার ফলে তার হাজ্জে যাওয়াটা হয়ে যায়, মন্ত্রীর কাছে গিয়ে তদবির করার মতো একধরনের তদবির অনুষ্ঠান। হাজ্জে গিয়ে তার দু’আ হয়, “ও আল্লাহ, تعالى আমার ব্যবসাটা ভালো করে দিন, আমাকে চাকরিতে প্রমোশন দিন। আমাকে একটা বাড়ি কিনতে দিন। আমার ছেলেমেয়েকে বিদেশে পাঠাতে দিন। আমার জমিগুলোকে নিরাপদ রাখুন। আমার স্ত্রীর অত্যাচার দূর করে দিন। আমার ডায়াবেটিস ঠিক করে দিন।…” —অবশ্যই এগুলো চাওয়াটা দোষের নয়, কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে: এই মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কী। কেন আমাদেরকে সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আমরা যদি দুনিয়ার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে এই বিরাট ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব না দেই, ভুলে যাই, হাজ্জের মতো এত বড় একটা সুযোগ পেয়েও উপলব্ধি না করি, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, কারণ আল্লাহ تعالى বলেছেন—

2_200

হাজ্জের অনুষ্ঠানগুলো শেষ করার পর, আল্লাহকে تعالى বেশি করে মনে করবে, যেভাবে তোমাদের বাপদাদাদের মনে করো। না, বরং তারচেয়ে বেশি করে! কারণ অনেকে আছে যারা শুধুই চায়, “ও রব্ব, আমাদেরকে দুনিয়াতে দিন” —এদের জন্য পরকালে বিন্দুমাত্র কোনো ভাগ থাকবে না। [আল-বাক্বারাহ ২০০]

আগেকার আমলে হাজ্জ শেষ হওয়ার পর হাজ্জিরা একসাথে বসে তাদের বাপ-দাদাদের কৃতিত্ব নিয়ে গল্প করতো —কে কবে কাকে কত খাইয়েছে, কত সাহায্য করেছে, কত জমিজমা করেছে, কত যুদ্ধ করেছে, কত বীর পদক পেয়েছে ইত্যাদি।[১২][১৪][৬] আজকের দিনে আমরা বাপ-দাদাদের নিয়ে এভাবে গর্ব করি না। আমাদের গল্পগুলো হয়ে গেছে: কার বাবা মন্ত্রী, কার দাদা জমিদার ছিলেন, কে সৈয়দ বংশের, কার চাচা হাজ্জ কাফেলার চেয়ারম্যান ইত্যাদি। হাজ্জের মতো এত মূল্যবান সময়গুলো আমরা পার করি এসব খোশ গল্প করে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

কিয়ামতের দিন আল্লাহ ওদের সাথে কথা বলবেন না — আল-বাক্বারাহ ১৭৪-১৭৬

গত কয়েক শতকে উপমহাদেশের মানুষদেরকে কৌশলে কুরআন থেকে দূরে রেখে কয়েকটা প্রজন্ম তৈরী করা হয়েছে, যারা কুরআন সম্পর্কে নুন্যতম জ্ঞানও রাখে না। এরা জানে না কুরআনে পরিষ্কারভাবে কী হালাল, কী  হারাম বলা আছে, তাওহীদের শিক্ষা কী? তারা শুধু পড়েছে কিছু গৎবাঁধা বই, যেই বইগুলোর অনেকগুলোতেই নানা ধরনের জাল হাদিস, বিদআতের ছড়াছড়ি।[১১] এভাবে একটি পুরো জাতিকে কুরআনে নিরক্ষর করে রেখে গেছে কিছু ইসলামী নামধারি দল এবং কথিত আলেম নিজেদের ইচ্ছামত ধর্ম ব্যবসা করার জন্য। এদের পরিণাম ভয়ঙ্কর—

2_174_title

2_174আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন সেটা যারা গোপন রাখে, আর দুনিয়ায় সামান্য লাভের বিনিময়ে তা বেচে দেয়, ওরা নিজেদের পেটে জাহান্নামের আগুন ছাড়া আর কিছু ভরে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ ওদের সাথে কথা বলবেন না, ওদেরকে পবিত্রও করবেন না। ওদের জন্য রয়েছে প্রচণ্ড কষ্টের শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ ১৭৪]

আজকাল অনেক ‘আধুনিক মুসলিম’ কু’রআনের আয়াতগুলোর পরিষ্কার বাণীকে ধামাচাপা দিয়ে, অনেকসময় বিশেষভাবে অনুবাদ করে, ইসলামকে একটি ‘সহজ জীবন ব্যবস্থা’ হিসেবে মানুষের কাছে প্রচার করার চেষ্টা করছেন। তারা দেখছেন যে, পাশ্চাত্যের ‘উন্নত’ জাতিগুলো ধর্ম থেকে দূরে সরে গিয়ে কত আনন্দের জীবন যাপন করছে, জীবনে কত স্বাধীনতা উপভোগ করছে: প্রতিদিন রংবেরঙের মদ পান করছে, বিশাল সব আভিজাত্যের হোটেলে গিয়ে জুয়া খেলছে, সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছে; ইচ্ছামত সুন্দর কাপড় পড়ছে, বন্ধু বান্ধব নিয়ে নাচগান করছে—জীবনে কতই না ফুর্তি ওদের।

ওদের এত সুখ, এত আনন্দ দেখে তারা ভিতরে ভিতরে ঈর্ষায় জ্বলে যাচ্ছে। কেন তারা ওদের মতো ফুর্তি করতে পারবে না? কেন তাদেরকে এতটা নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হবে?— এটা তারা কোনোভাবেই নিজেদেরকে বোঝাতে না পেরে, চেষ্টা করছে কোনোভাবে যদি ইসলামকে একটি ‘আধুনিক’, ‘সহজ’ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মানুষের কাছে প্রচার করা যায়। তখন তারা পশ্চিমাদের মতো ফুর্তি করতে পারবে, আবার মুসলিমদের কাছ থেকে একদম দূরেও সরে যেতে হবে না, সমাজে অপরাধীর মতো লুকিয়ে চলতে হবে না। ‘মুহাম্মাদ’ ‘আব্দুল্লাহ’ নাম নিয়ে একদিকে তারা সপ্তাহে একদিন জুম্মার নামায পড়তে যেতে পারবে, অন্যদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে মেয়েদের সাথে নাচতে পারবে, রবিবারে পার্টিতে বন্ধুদের সাথে একটু রঙিন পানিও টানতে পারবে। এভাবে তারা ‘আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন সেটা গোপন রাখে, আর দুনিয়ায় সামান্য লাভের বিনিময়ে তা বেচে দেয়,’—কু’রআনের শিক্ষার পরিপন্থী একটি জীবন যাত্রাকে নিজেদের ফুর্তির জন্য মুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্য করানোর চেষ্টা করছে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

সে এক জঘন্য যাওয়ার জায়গা — আল-বাক্বারাহ ১২৬-১২৭

2_126

ইব্রাহিম বলেছিলেন, “ও আমার প্রভু, এই শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং এখানকার অধিবাসীদেরকে ফলমূল-সংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন: যারা আল্লাহ تعالى এবং আখিরাতে বিশ্বাস রাখে তাদের জন্য।” আল্লাহ تعالى বলেছিলেন, “যারা অবিশ্বাস করবে, তাদেরকেও আমি কিছু দিনের জন্য সুখে থাকার ব্যবস্থা করে দেব, তারপর তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তিতে জোর করে ঢোকাবো— সে এক জঘন্য যাওয়ার জায়গা।” [আল-বাক্বারাহ ১২৬]

প্রশ্ন হল: কীসের শহর? নবী ইব্রাহিম عليه السلام যখন কা’বা বানাচ্ছিলেন, তখন তার চারপাশে ধুধু মরুভূমি। শহরের কোনো চিহ্ন নেই। কিন্তু তিনি তার দূরদর্শিতা থেকে ঠিকই বুঝেছিলেন: আল্লাহর تعالى এই ঘরের আশেপাশে একদিন একটা শহর হবে। মানুষ দূর দূর থেকে আসবে এখানে হাজ্জ করতে। তাই তিনি আল্লাহর تعالى কাছে দু’আ করেছিলেন, যেন এখানকার বিশ্বাসী অধিবাসীদের নিরাপত্তা এবং খাওয়ার কোনো অভাব না হয়।

তার দু’আ আল্লাহ تعالى কবুল করেছেন। মক্কায় সারাবছর কোনো ফলের অভাব হয় না। অথচ মক্কায় এবং তার আশেপাশে মরুভূমিতে খেজুর ছাড়া কোনো ফল হয় না। তারপরেও সেখানে গেলে আপনি চায়নার আপেল, মিশরের কমলা, ভারতের কলা —কোনো কিছুর অভাব দেখবেন না। নানা দেশ থেকে সব সুস্বাদু ফল সেখানে সরবরাহ হচ্ছে গত হাজার বছর ধরে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

দেখবে, এরা তাদের জীবনটাকে অন্য সবার থেকে বেশি কামড়ে ধরে থাকতে চায় — আল-বাক্বারাহ ৯৪-৯৬

আজকে যদি আমাকে ডাক্তার বলে: আপনার রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং আপনি আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মারা যাবেন, সিঙ্গাপুরে গিয়েও লাভ হবে না—আমি তখন কী করব? আমি কি তখন কাঁথা জড়িয়ে টিভির সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফালতু তারকা শো, টক শো, হিন্দি সিরিয়াল দেখব? আমি কি পরদিন অফিসে গিয়ে কলিগদের সাথে শেষ বারের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারব? আমি কি আমার ছেলেমেয়েকে শেষ বারের মতো একটু খুশি করার জন্য ভিডিও গেম কিনে দেব, যেখানে তারা রামদা-ছুরি নিয়ে একপাল অর্ধ মৃত, রক্তাক্ত জম্বিকে মেরে কোনো এক বিকৃত কারণে বড়ই আনন্দ পায়? আমি কি এই অবস্থায় আমার মেয়েকে নৃত্য শিল্পী বানাব, ছেলেকে ব্যান্ডের দলে যোগ দেওয়াব, যেন তারা সেগুলো করে আমার মৃত্যুর পরে আমার জন্য ‘অশেষ সওয়াব’ অর্জন করে?

না, আমরা তখন এগুলোর কিছুই করব না, কারণ জীবনের শেষ দিনগুলি এভাবে নষ্ট করার মতো বোকামি আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু আজকে আমরা ঠিকই সেগুলো করে যাচ্ছি এটা ভালো করে জেনে যে: আমরা আজকে হোক, কালকে হোক, একদিন না একদিন মারা যাবই। তারপর একসময় আমাদেরকে আবার জাগিয়ে তোলা হবে এবং তারপর আমাদেরকে ধরে নিয়ে বিশ্বজগতের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবানের সামনে দাঁড় করানো হবে: আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তের হিসাব দেওয়ার জন্য। সেদিন তাঁর সামনে মাথা নিচু করে আমরা তাঁকে কী বলব—সেটা ঠিক করে রেখেছি কি?

কোনো কারণে আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে চাই না। এরকম চিন্তা মাথায় এলেই আমাদের কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। আমরা দ্রুত চিন্তার টপিক পাল্টে ফেলি। যদি আমাদের কোনো বন্ধু বা আত্মীয় আমাদেরকে এই ব্যাপারটি নিয়ে কিছু বলা শুরু করে, আমরা জলদি তাকে বলি, “কি বলছেন এইসব! আস্তাগফিরুল্লাহ! এই সব মরা-টরার কথা শুনতে ভালো লাগছে না। বাদ দেন এইসব। আসেন অন্য কিছু নিয়ে কথা বলি।”

2_94

বলে দাও, “যদি আখিরাতের জীবনটা আল্লাহর সান্নিধ্যে তোমাদের জন্যই হয়ে থাকে, অন্য কারো জন্য না হয়, তাহলে এখনই মরে যেতে চাচ্ছ না কেন? তোমরা না বড়ই সত্যবাদী?” [আল-বাক্বারাহ ৯৪]

Dubai

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)