আমি কি তাকে ভালো-মন্দের পরিষ্কার দুটো পথ দেখিয়ে দেইনি? —আল-বালাদ পর্ব ২

আমি কি তাকে ভালো-মন্দের পরিষ্কার দুটো পথ দেখিয়ে দেইনি? এরপরও সে কঠিন পথে চলার চেষ্টা করেনি। জানো সে কঠিন পথ কী? তা হচ্ছে, দাসকে মুক্তি দেওয়া। অথবা, কঠিন অভাবের দিনে খাবার দান করা, নিকটাত্মীয় এতিমদের এবং দারিদ্রের আঘাতে নিষ্পেষিত অসহায় মানুষকে। তারপর এমন সব মানুষদের একজন হয়ে যাওয়া, যারা গভীর বিশ্বাস করেছে এবং একে অন্যকে ধৈর্য ধারণ করতে তাগাদা দেয় এবং একে অন্যকে দয়া-মমতার প্রতি তাগাদা দেয়। তারাই তো সৌভাগ্যবান দল।

কিন্তু এরপরেও যারা আমার বাণী অস্বীকার করেছে, তারা হতভাগার দল। এদেরকে চারিদিক থেকে আগুন ঘিরে ফেলবে। —আল-বালাদ

আমি কি তাকে ভালো-মন্দের পরিষ্কার দুটো পথ দেখিয়ে দেইনি?

সুধীবৃন্দরা প্রশ্ন করেন, “কেন মানুষকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়ে আবার তাদেরকে এত সব নিয়ম দেওয়া হলো? একদিকে স্রস্টা মানুষকে চিন্তাভাবনার স্বাধীনতা দেবে, নিজের ভালমন্দ বোঝার ক্ষমতা দেবে, আবার অন্যদিকে বলে দেবে যে, এটা করা যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না, এটা দেখা যাবে না, ওটা শোনা যাবে না। —স্বাধীনতা দিয়ে আবার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া—এটা কি স্ববিরোধী কাজ নয়? এরকম স্ববিরোধী কাজ একজন স্রস্টা কীভাবে করতে পারে?”  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এরাই সত্যিকারের তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছে —আল-বাক্বারাহ ১৭৭

আমাদের সমাজে কিছু মুসলিম আছেন যাদেরকে বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত ধার্মিক মনে হয়। এরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দিয়েছেন। মসজিদে তাদেরকে নিয়মিত দেখা যায়। কিন্তু গরিব আত্মীয়রা তাদের কাছে বার বার সাহায্য চেয়ে “আগামী রমজান আসুক” শুনে ফিরে যায়। এলাকার এতিমখানায় কোনোদিন তাদের দান করতে দেখা যায় না। মসজিদে দান বাক্স তাদের কাছে আসতে শুরু করলে হঠাৎ করে তারা চোখ বন্ধ করে গভীর জিকিরে মগ্ন হয়ে যান, বাক্সটা তাদের সামনে দিয়ে চলে যায়। এরা ব্যবসায় কাস্টমারকে অভিনব পদ্ধতিতে বেশি দামে কম মাল দেওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত পারদর্শী। কর্মীদেরকে কত উপায়ে কম বেতন, কম বোনাস দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে তাদের অসামান্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। তারপর যখন তাদের কোনো বড় ধরনের বিপদ হয়, তখন তাদের প্রলাপ শুরু হয়— “হায় আল্লাহ تعالى! আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রমজানে রোজা রাখি, যাকাত দেই। আমি আপনার কত খাস বান্দা। তারপরেও আমার কেন বিপদ হয়?”

এধরনের মানুষদের জন্য আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি চিন্তার বিষয়, কারণ আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বলছেন যে, আমরা যদি শুধু নামাজ পড়ি, কিন্তু অন্য কোনো ভালো কাজ না করি, তাহলে তাতে কোনো পুণ্য নেই—

2_177_title

2_177 (1)পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফেরালেই সেটা ধার্মিকের মতো কাজ হয়ে গেল না। বরং সত্যিকারের ধার্মিকতা হচ্ছে: যারা আল্লাহর تعالى প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং বিচারের দিন, ফেরেশতাগন, সব কিতাব এবং নবীদের প্রতি বিশ্বাস রাখে। যারা নিজেদের সম্পদকে ভালোবাসার পরেও তা দান করে নিকটজনকে, এতিম, মিসকিনকে, বিপদে পড়া ভ্রমণকারীদেরকে, যারা সাহায্য চায় তাদেরকে এবং দাস-যুদ্ধবন্দিদের মুক্ত করার জন্য দান করে। যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, কথা দিয়ে কথা রাখে; দুর্দশা-দারিদ্রতা, অসুস্থতা-কষ্ট এবং ভীষণ কঠিন সময়েও ধৈর্যধারণকারী। —এরাই নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে, আর এরাই সত্যিকারের তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছে। [আল-বাক্বারাহ ১৭৭]

এখানে পূর্ব-পশ্চিম দিকে মুখ করা বলতে কিবলা পরিবর্তের পরে মক্কার দিকে, আর কিবলা পরিবর্তনের আগে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ পড়া বোঝানো হয়েছে।[১২]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আল্লাহর চেয়ে সুন্দর রঙ আর কে দিতে পারে? — আল-বাক্বারাহ ১৩৮

হাজার বছর ধরে মানুষের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে নানা রঙের নানা ধরনের মাহাত্ম্য বের হয়েছে। হিন্দু ধর্মে লাল পবিত্রতার প্রতীক, তাই বিভিন্ন উৎসবে লাল রঙের ব্যবহার দেখা যায়, যেমন বিয়ে, শিশু জন্ম। হলুদ হচ্ছে জ্ঞান এবং শিক্ষার রঙ, তাই বিষ্ণু এবং গণেশ হলুদ রঙের কাপড় পড়ে। নীল স্থিরতা, সাহসিকতা, একনিষ্ঠতার রঙ, তাই রাম, কৃষ্ণর রঙ নীল।[২৭২]

খ্রিস্টানরা কোনো ব্যক্তিকে খ্রিস্ট ধর্মের দীক্ষা দেওয়ার সময় হলুদ রঙের পানিতে গোসল করায়। একইভাবে নবজাতক শিশুকেও, যে কিনা জন্ম হয়েছে পাপী হয়ে, তাকে হলুদ রঙের পানি দিয়ে ‘বাপটাইজ’ করানো হয়। তখন সে যীশুর জীবন দানের ফলে মানুষের সব পাপ কেটে যাওয়ার দাবীদার হয়ে যায়।[৮]

এভাবে যুগে যুগে নানা ধর্মে, বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন মাহাত্ম্য বের হয়েছে। ধর্মীয় উৎসবগুলোতে নানা রঙের ছড়াছড়ি দেখা যায়।[৮] একইসাথে মুসলিমদের মধ্যে নানা রঙ নিয়ে নানা ধরনের কুসংস্কার চলে এসেছে। কু’রআনে এই সব ফালতু ধারণাকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে—

2_138_title

2_138আমরা আল্লাহর تعالى রঙে রঞ্জিত। আল্লাহর تعالى চেয়ে সুন্দর রঙ আর কে দিতে পারে? আমরা শুধুমাত্র তাঁরই দাস। [আল-বাক্বারাহ ১৩৮]

অনেকে এই আয়াতের অনুবাদ পড়ে ভাবেন, “আল্লাহর تعالى আবার রঙ আছে নাকি? আস্তাগফিরুল্লাহ! কী সব কুফরি কথাবার্তা!” এই আয়াতে ‘আল্লাহর تعالى রঙ’ বলতে একধরনের প্রতীকী অর্থে বোঝানো হয়েছে। আমরা যেমন বলি “তার হৃদয়ে বসন্তের হাওয়া লেগেছে” তখন কিন্তু আমরা ধরে নেই না যে, তার হৃদপিণ্ডে বসন্তের বাতাস ঢুকেছে। এই কথাটা কেউ গ্রীষ্মকালেও বলতে পারে, আবার শীতকালেও বলতে পারে, এর সাথে বসন্ত ঋতুর কোনো সম্পর্ক নেই। একইভাবে এই আয়াতে আক্ষরিক অর্থে কোনো রঙ বোঝানো হয়নি, এটি একটি আরবি প্রবাদ বাক্য। এমনকি যারা কু’রআনে আল্লাহর تعالى সিফাত-এর আক্ষরিক অর্থ করেন, যেমন আল্লাহর تعالى হাত বলতে আক্ষরিক অর্থে হাতই বোঝান, তারাও এই আয়াতে রঙ বলতে আক্ষরিক অর্থে রঙ দাবি করেননি।

এই আয়াতে صِبْغَة বা রঙ-এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। রঙ যেমন দেখলেই সনাক্ত করা যায়, ঠিক একইভাবে যাদের খাঁটি ঈমান রয়েছে, তাদের কথাবার্তা, কাজ, আচরণ দেখলেই তাকে সনাক্ত করা যায়। একজন প্রকৃত মুসলিমকে দেখলেই বোঝা যায় যে, সে আল্লাহর تعالى রঙে রঞ্জিত।[৪] যদি কোনো মুসলিম-এর কথা-কাজ-আচরণ দেখে কোনোভাবেই বোঝা না যায় যে, সে একজন মুসলিম, তাহলে তার ভেতরে তাওহীদের অভাব রয়েছে। সে এখনো আল্লাহর تعالى রঙে রঞ্জিত হতে পারেনি।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)