ওরা তোমাকে নতুন চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে — আল-বাক্বারাহ ১৮৯

2_189_title

ওরা তোমাকে নতুন চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। বলো, “এটি মানুষের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের হিসেব রাখা এবং হাজ্জের সময় নির্ধারণ করার জন্য।” আর পেছন দিক দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে সেটা বেশ ধার্মিকতা হয়ে গেল না। বরং আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান থাকাটাই হচ্ছে আসল ধার্মিকতা। তাই দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করো, আর আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান থেকো, যেন তোমরা সফল হতে পারো। [আল-বাক্বারাহ ১৮৯]

চাঁদ – এক অসাধারণ সৃষ্টি

আল্লাহ تعالى চাঁদকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের জন্য উপযোগী করার জন্য। পৃথিবীর উপরের পৃষ্ঠটি একটি পাতলা খোলসের মতো, যা অনেকগুলো টুকরোতে ভাগ করা। এই টুকরোগুলোকে বলা হয় ‘টেক্টনিক প্লেট’। এই প্লেটগুলো ক্রমাগত নড়াচড়া করে, সম্প্রসারিত হয়, একটা প্লেট অন্য প্লেটের নীচে আটকিয়ে যায় এবং একসময় হঠাৎ করে ছুটে যায়, আর তখন ভুমিকম্প হয়।

চাঁদের আকর্ষণের কারণে পৃথিবীর উপরের স্তর ক্রমাগত টান পড়ে। এর ফলে প্লেট টেকটনিক্স হয়। পৃথিবীতে প্রাণ টিকে থাকার জন্য হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং সালফারের ক্রমাগত সরবরাহ দরকার। পৃথিবীর ভেতর থেকে এই প্রয়োজনীয় পদার্থগুলো বেরিয়ে আসে এই প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে।[৩৩১] অনেক আগে আদি প্রাণীগুলোর বেঁচে থাকার জন্য যে পুষ্টির দরকার ছিল, তা সরবরাহ করেছিল এই প্লেট টেক্টনিক্স—প্লেটগুলোর ক্রমাগত সম্প্রসারণ, নড়াচড়া এবং ভুমিকম্প।

Convection

যদি চাঁদ না থাকতো, তাহলে প্লেট টেকটনিক্স হতো না, পৃথিবীতে জটিল প্রাণ টিকে থাকতো না, কোনোদিন মানুষ আসতে পারতো না। মানুষকে পাঠানোর জন্য দরকার ছিল চাঁদকে ঠিক এখন যে আকৃতি এবং দূরত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই রাখা।[৩২৬]

চাঁদ হচ্ছে পৃথিবীর স্ট্যাবিলাইজার। এটি পৃথিবীকে নিজের অক্ষের উপর বেশি দোলা থেকে রক্ষা করে। এর টানের কারণে পৃথিবী ঘোরার সময় লাটিমের মতো হেলে দুলে না ঘুরে একই অক্ষের উপর ঘোরে। যদি এরকম না হতো, পৃথিবীতে ঋতুগুলো ভয়ঙ্কর হতো। পৃথিবীর আবহাওয়া খুব দ্রুত চরমভাবে পরিবর্তন হতো। জটিল প্রাণ থাকতে পারতো না। মানুষ তো দূরের ব্যাপার। যেরকম কিনা মঙ্গল গ্রহে হয়েছে। মঙ্গল গ্রহের পৃথিবীর মতো চাঁদ না থাকার কারণে সেখানে আবহাওয়া চরম হয়ে গেছে।[৩২৬]

শুধু তাই না, চাঁদ পৃথিবীর ঘোরার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। চাঁদের টানে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির ঘর্ষণের কারণে পৃথিবীর ঘোরার গতি নিয়ন্ত্রিত থাকে। চাঁদ না থাকলে এক দিনের দৈর্ঘ্য হতো মাত্র ৬ ঘণ্টা![৩২৭]

চাঁদের কারণে যে পূর্ণ সূর্য গ্রহণ হয়, সেটা একটা বিরাট ব্যাপার। সূর্যের ব্যাস চাঁদের থেকে প্রায় ৪০০গুণ বেশি। যদি সূর্য চাঁদের থেকে প্রায় ৪০০ গুণ দূরে না থাকতো, তাহলে আকাশে সূর্য এবং চাঁদের আকৃতি প্রায় সমান হতো না এবং কোনোদিন পূর্ণ সূর্য গ্রহণ হতো না। সূর্য এবং চাঁদের আকৃতি এবং দূরত্ব এত নিখুঁত অনুপাতে আল্লাহ تعالى রেখেছেন দেখেই পূর্ণ সূর্য গ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে একদম সঠিক মাপে ঢেকে ফেলে।

TotalSolarEclipse  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এরাই সত্যিকারের তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছে —আল-বাক্বারাহ ১৭৭

আমাদের সমাজে কিছু মুসলিম আছেন যাদেরকে বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত ধার্মিক মনে হয়। এরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দিয়েছেন। মসজিদে তাদেরকে নিয়মিত দেখা যায়। কিন্তু গরিব আত্মীয়রা তাদের কাছে বার বার সাহায্য চেয়ে “আগামী রমজান আসুক” শুনে ফিরে যায়। এলাকার এতিমখানায় কোনোদিন তাদের দান করতে দেখা যায় না। মসজিদে দান বাক্স তাদের কাছে আসতে শুরু করলে হঠাৎ করে তারা চোখ বন্ধ করে গভীর জিকিরে মগ্ন হয়ে যান, বাক্সটা তাদের সামনে দিয়ে চলে যায়। এরা ব্যবসায় কাস্টমারকে অভিনব পদ্ধতিতে বেশি দামে কম মাল দেওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত পারদর্শী। কর্মীদেরকে কত উপায়ে কম বেতন, কম বোনাস দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে তাদের অসামান্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। তারপর যখন তাদের কোনো বড় ধরনের বিপদ হয়, তখন তাদের প্রলাপ শুরু হয়— “হায় আল্লাহ تعالى! আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রমজানে রোজা রাখি, যাকাত দেই। আমি আপনার কত খাস বান্দা। তারপরেও আমার কেন বিপদ হয়?”

এধরনের মানুষদের জন্য আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি চিন্তার বিষয়, কারণ আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বলছেন যে, আমরা যদি শুধু নামাজ পড়ি, কিন্তু অন্য কোনো ভালো কাজ না করি, তাহলে তাতে কোনো পুণ্য নেই—

2_177_title

2_177 (1)পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফেরালেই সেটা ধার্মিকের মতো কাজ হয়ে গেল না। বরং সত্যিকারের ধার্মিকতা হচ্ছে: যারা আল্লাহর تعالى প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং বিচারের দিন, ফেরেশতাগন, সব কিতাব এবং নবীদের প্রতি বিশ্বাস রাখে। যারা নিজেদের সম্পদকে ভালোবাসার পরেও তা দান করে নিকটজনকে, এতিম, মিসকিনকে, বিপদে পড়া ভ্রমণকারীদেরকে, যারা সাহায্য চায় তাদেরকে এবং দাস-যুদ্ধবন্দিদের মুক্ত করার জন্য দান করে। যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, কথা দিয়ে কথা রাখে; দুর্দশা-দারিদ্রতা, অসুস্থতা-কষ্ট এবং ভীষণ কঠিন সময়েও ধৈর্যধারণকারী। —এরাই নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে, আর এরাই সত্যিকারের তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছে। [আল-বাক্বারাহ ১৭৭]

এখানে পূর্ব-পশ্চিম দিকে মুখ করা বলতে কিবলা পরিবর্তের পরে মক্কার দিকে, আর কিবলা পরিবর্তনের আগে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ পড়া বোঝানো হয়েছে।[১২]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)