মুমিনরা, তোমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে অন্যায়ভাবে হত্যার বিরুদ্ধে অনুরূপ প্রতিশোধ নিতে —আল-বাক্বারাহ ১৭৮-১৭৯

গত কয়েক শতকে কিছু মনীষী যেমন গান্ধী, টলস্টয় এসে অপরাধীদেরকে করুণা দেখানো এবং হত্যাকারীদেরকে সোজা ফাঁসি না দিয়ে তাদেরকে সংশোধন করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অনেক ‘মহৎ উদ্যোগ’ নিয়ে গেছেন।[৭] তাদের অধ্যবসায়ের ফলাফল: আজকে পশ্চিমা দেশগুলোতে এমন জটিল সব আইন তৈরি হয়েছে যে, হত্যাকারীরা আজকাল হত্যা করে ফাঁসি পাওয়ার পরিবর্তে আইনের জটিল গলিঘুপছি দিয়ে বেরিয়ে এসে হয় মানসিক রোগী উপাধি পেয়ে অত্যাধুনিক ফাইভ-স্টার হোটেলের মতো হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা পাচ্ছে, না হয় থ্রি-স্টার হোটেলের মতো কারাগারে তিনবেলা খাবার, নিজের ব্যক্তিগত কক্ষ, সকালে-বিকালে খেলাধুলার ব্যবস্থা পাচ্ছে। এইসব কয়েদী, যাদের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার কথা, ফাঁসি না পেয়ে জনগণের কোটি কোটি টাকার ট্যাক্সের টাকায় নিশ্চিন্ত জীবন পার করছে। এদের চাকরি-ব্যবসা করতে হয় না, পরিবার চালাতে হয় না, সমাজের কোনো কল্যাণে অবদান রাখতে হয় না।

মানুষকে আইন বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হলে আইন প্রণেতাদের উর্বর মস্তিস্ক থেকে কী বের হয়, তার চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে আমেরিকার আইন। আজকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ২০ লক্ষ কয়েদী নিয়ে কী করবেন তা বুঝতে পারছেন না। লক্ষ লক্ষ কয়েদী পালার বিশাল খরচ জোগান দিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।[৩২০] এমনকি বিল ক্লিনটন সবার সামনে স্বীকার করছেন এত বিপুল পরিমাণের কয়েদী জেলে রাখার জন্য তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।[৩২১]

অথচ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এমন এক আইন দিয়েছেন, যার বাস্তবায়ন হলে, কেউ মানুষকে হত্যা করার আগে হাজার বার ভেবে দেখবে এবং হত্যাকারীদের পুষতে গিয়ে দেশের জনগণকে কোটি টাকার ট্যাক্স গুনতে হবে না, দেশের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি নষ্ট হবে না, নিহতের পরিবার সুষ্ঠু বিচার পাবে—

2_178_title

2_178মুমিনরা, তোমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে অন্যায়ভাবে হত্যার বিরুদ্ধে অনুরূপ প্রতিশোধ নিতে— স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে নিহতের নিকটজন যদি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়, তাহলে ন্যায্য বিনিময় নির্ধারণ করবে এবং হত্যাকারী তা সবচেয়ে ভালোভাবে পরিশোধ করবে। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে করুণা করেছেন। কিন্তু এরপরেও কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তাকে প্রচণ্ড কষ্টের শাস্তি দেওয়া হবে। [আল-বাক্বারাহ ১৭৮]

কুর’আনের বিধান অনুসারে হত্যাকারীকে আইনের সহায়তায় ঠিক সেভাবেই হত্যা করা হবে, যেভাবে সে হত্যা করেছে। তা না হলে কোনো শাশুড়ি তার বউয়ের গায়ে তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে মারবে, আর সেই শাশুড়িকে এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে শক দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে, কম কষ্টে মারা হবে। কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে এসিড মেরে ঝলসে মারবে, আর সেই স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে সরকারের টাকায় জেলে পোষা হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের ক্যাডার রাস্তায় কাউকে অনেকক্ষণ ধরে কুপিয়ে মারলে, তাকে ত্রিশ সেকেন্ডের ফাঁসি দিয়ে পার করে দেওয়া হবে। কেউ প্লেন থেকে বোমা মেরে নিরপরাধ মানুষকে ছিন্নভিন্ন করে মেরে ফেললে, তাকে একটা ফাঁসি দিয়ে দ্রুত মেরে ফেলা হবে। —এগুলো কোনো ন্যায়বিচার হলো না। ন্যায়বিচার যখন প্রতিষ্ঠিত হয় না, তখন কেউ হত্যার চিন্তা করার আগে হাজার বার ভেবে দেখে না যে, সে যেভাবে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে, ঠিক সেই অবস্থায় যখন তাকেও মারা হবে, তখন তার কষ্টটা কতখানি হবে। যার ফলে এরপরে সে যখন হাতে তেলের ক্যান, ছুরি, বন্দুক, বা প্লেনের কন্ট্রোল নেয়, তখন তার আত্মা শুকিয়ে যায় না।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)