তার সম্পদ তার পতনকে ঠেকাতে পারবে না —আল-লাইল

আজকাল অনেক আধুনিক মুসলিম ধর্ম মানার কোনো কারণ খুঁজে পান না। তারা ভাবেন যে, ধর্মীয় রীতিগুলো অনুসরণ করা, যেমন নামাজ পড়া, রোজা রাখা —এগুলো করে কী হবে? এগুলো করে কী মানুষের কোনো লাভ হচ্ছে? মানুষের কষ্ট কমছে? অভাব দূর হচ্ছে? সমাজের সংস্কার হচ্ছে? — তাদেরকে সূরাহ আল-লাইল অনুপ্রেরণা দেবে, কারণ এই সূরাহ’র মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে দান করার গুরুত্ব এবং কৃপণদের কঠিন পরিণতি।

শপথ রাতের যখন তা আধারে ঢেকে যায়। শপথ দিনের যখন তা আলোয় উদ্ভাসিত হয়। শপথ তাঁর নর-নারী সৃষ্টির। তোমাদের চেষ্টাগুলো কতই না ভিন্ন। তবে, যে দান করে এবং আল্লাহকে ভয় পায়, আর ভালো কাজের পরিণামে বিশ্বাস করে, আমি তার জন্য সহজকে পাওয়া সহজ করে দেবো। আর যে কৃপণ, মনে করে যে, তার সবই আছে এবং ভালো কাজের পরিণামে অস্বীকার করে, আমি তার জন্য কষ্টের দিকে যাওয়া সহজ করে দেবো। তার সম্পদ তার পতনকে ঠেকাতে পারবে না। —আমার উপরই নির্ভর করে কে সঠিক পথ পাবে। এই দুনিয়া এবং আখিরাত শুধুই আমার।

তাই আমি তোমাদেরকে এক জ্বলন্ত আগুন সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছি। এটা শুধু কঠিন পাপীদেরকে পুড়িয়ে ছারখার করে, যারা সত্য অস্বীকার করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু যে আল্লাহর প্রতি সাবধান, তাকে এটা থেকে দূরে রাখা হবে। যে তার সম্পদ দান করেছে নিজেকে পবিত্র করার জন্য। যে অন্য কারও কাছ থেকে প্রতিদান পাওয়ার জন্য দান করে না। শুধুই তার সুমহান রবকে পাওয়ার আশায় সে তা করে। অচিরেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।  —আল-লাইল

পৃথিবীর মূল ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলাম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম, যেখানে মানুষের জন্য খরচ করা বাধ্যতামূলক। ইসলামে শুধু মানুষের জন্য খরচ করার নির্দেশই দেওয়া হয়নি, একই সাথে কার জন্য কীভাবে খরচ করতে হবে, সেটাও সুন্দরভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে বিশ্বাসের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে একটি হলো বাধ্যতামূলক দান। যারা মনে করেন: মানব ধর্মই আসল ধর্ম, মানুষের উপকার করতে পারাটাই আসল কথা, নামাজ, রোজা করে কী হবে? —তারা হয়তো জানেন না যে, মানব ধর্মের যে সব ব্যাপার তাদের কাছে এত ভালো লাগে, সেগুলো ইসলামের অংশ মাত্র। একজন প্রকৃত মুসলিম শুধুই একজন নিয়মিত নামাজী, রোজাদার নন, একই সাথে তিনি একজন দানশীল, চরিত্রবান, আইনের প্রতি অনুগত, আদর্শ, বিবেকবান নাগরিক। যিনি সহমর্মিতার এক অনুসরণীয় উদাহরণ।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যারা তাদের সম্পদ দিন-রাত প্রকাশ্যে, গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে — আল-বাক্বারাহ ২৭৪

যারা তাদের সম্পদ দিন-রাত প্রকাশ্যে, গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে — তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে রাখা আছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো আফসোস করবে না। [আল-বাক্বারাহ ২৭৪]

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى সেই সব মানুষদের কথা বলেছেন, যারা সবসময় দান করেন। দিনের বেলা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো অভাবীকে দেখলে দান করেন। কোনো সংগঠন এসে সাহায্য চাইলে দান করেন। কেউ তাকে অভাবী মানুষের দুর্দশার কথা শোনালে তিনি দান করার জন্য ছুটে যান। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারিতে দুস্থ মানুষদের দান করার সুযোগ পেলে তিনি কখনও ছেড়ে দেন না। আত্মীয়রা চাওয়ার আগেই তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেন। মসজিদে কারও চেহারা দেখে সে কষ্টে আছে মনে হলে, তিনি তার কষ্ট কমাতে এগিয়ে যান। এই ধরনের নিবেদিত প্রাণ মানুষরা দিনে, রাতে, প্রকাশ্যে, গোপনে যখন যেভাবে পারেন দান করতে থাকেন। এদের সম্পর্কে আল্লাহ تعالى বলছেন যে, এদের পুরস্কার বিশেষভাবে তাঁর تعالى কাছেই জমা আছে। এরা কিয়ামতের দিন যখন তাঁর تعالى কাছে আসবেন, সেদিন তাদের কোনো ভয়, কোনো আফসোস বা দুঃখ থাকবে না। আল্লাহ تعالى এদেরকে বিরাট পুরস্কার দেবেন। এমন পুরস্কার, যা তিনি تعالى নিজের কাছে রেখেছেন। অন্য কাউকে তিনি تعالى এত বড় পুরস্কার ধরে রাখার জন্য যোগ্য মনে করেননি।

প্রশ্ন হচ্ছে: কেন দানশীলদের জন্য এত বড় পুরস্কার? এই ধরনের পুরস্কার কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি, নিয়মিত রোজাদারদের জন্য থাকা উচিত ছিল না?

ঘরে বসে নামাজ, রোজা করা সোজা কাজ। কিন্তু নিজের কষ্টের সম্পদ কাউকে দান করা কঠিন ব্যাপার। দান করতে গেলেই মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা শুরু হয়ে যায়, “যদি দান করি তাহলে বাচ্চার পড়ার খরচের জন্য টাকা থাকবে? আগামী কয়েকমাস বাড়ি ভাড়া দিতে পারবো? পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার টাকা কীভাবে দেব? গাড়ি-বাড়ি কেনার জন্য টাকা জমাবো কীভাবে?” — যখনি আমরা কোনো দান করার পরিস্থিতিতে পড়ি, তখনি আমরা একেক জন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হয়ে যাই। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের যাবতীয় সম্পদ, বিনিয়োগ এবং ঝুঁকির হিসাব মাথার মধ্যে গিজগিজ করতে থাকে। দান করতে গেলেই বোঝা যায় কার আল্লাহর تعالى প্রতি বিশ্বাস কতটা দৃঢ়।

একারণেই যারা নিজের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে জয়ী হয়ে দিন-রাত দান করতে পারেন, তাদের বিশ্বাস অত্যন্ত মজবুত হয়ে যায় এবং তাদের অন্তর খুবই শক্তিশালী হয়ে যায়। তখন তাদের ভেতরে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। যেমন, আল্লাহর تعالى প্রতি আস্থা অনেক বেড়ে যায়, ভবিষ্যৎ নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা করা কমে যায়, অমূলক ভয়-ভীতিকে তারা জয় করেন, নেতিবাচক চিন্তা কমে যায়, অন্যের প্রতি আত্মত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি হয়, সহমর্মিতা বোধ বাড়ে। একারণেই যারা নিয়মিত দান করেন, তাদের অন্তর মজবুত হয়, অল্পতেই মন ভেঙ্গে পড়ে না। দান করাটা হচ্ছে কঠিন পরিস্থিতিতেও অন্তরকে আল্লাহর تعالى আদেশ মানানোর জন্য এক ধরনের ট্রেনিং। দুর্ভিক্ষ, মহামারি বা কষ্টের সময় মানুষকে দান করা, যখন কিনা নিজেরই অভাব চলছে, আত্মীয়দেরকে দান করা যাদের সাথে সম্পর্ক ভালো না—এগুলো বেশ কঠিন কাজ। এগুলো আমাদেরকে সহজ, আরামের ইবাদতের গণ্ডি থেকে বের করে, কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহর تعالى প্রতি আস্থা রাখা, তাঁর تعالى আদেশ মেনে চলার ট্রেনিং দেয়।[৭]

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তারা মানুষের কাছে হাত পাতেন না — আল-বাক্বারাহ ২৭৩

তোমাদের দান সেই অভাবীরা পাবে, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে নিবেদিত যে, তারা জীবিকার খোঁজে বের হতে পারে না। তারা মানুষের কাছে হাত পাতেন না দেখে অজ্ঞরা মনে করে যে, তাদের কোনো অভাব নেই। কিন্তু তুমি তাদের লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল করলে বুঝতে পারবে। তারা কখনও নাছোড়বান্দার মতো চায় না। আর তোমরা ভালো যা কিছুই দান করবে, আল্লাহ অবশ্যই সে ব্যাপারে সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৭৩]

কিছু মানুষ আছেন যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদেরকে পুরোপুরি বিলিয়ে দেন। এরা এমন সব ত্যাগ স্বীকার করেন, যেগুলো আমরা সাধারণ মুসলিমরা করার মতো সাহস কখনও করতে পারি না। এদের অনেকে নিজেদের ভিটেমাটি, সচ্ছল জীবন ছেড়ে দূর দেশে চলে যান ইসলামের জন্য পড়াশুনা করতে। আবার অনেকে হারাম চাকরি বা ব্যবসা আর করবেন না, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধুই আল্লাহকে খুশি করার জন্য চাকরি বা ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অভাবের জীবন বেছে নেন। আবার অনেকে এলাকায় অন্যায় শাসন, দুর্নীতি এসব থেকে পালিয়ে সৎভাবে বেঁচে থাকার জন্য সব ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যান। এভাবে আল্লাহর تعالى পথে নিজেদেরকে পুরোপুরি নিবেদিত করে দেওয়ার ফলে তাদের পক্ষে আর জীবিকা অর্জন করে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করার সুযোগ থাকে না। তারা অত্যন্ত অভাবের মধ্যে জীবন পার করতে থাকেন, কিন্তু আশেপাশের কাউকে সেটা নিজে থেকে বুঝতে দেন না।[১১][১২][১৪][১৭]

এই ধরনের মানুষরা ভিখিরি নন। তারা কখনও মানুষের কাছে হাত পাতেন না। তাদের ভেতরে আত্মসম্মান বোধ আছে। সাধারণ ফকিরের মতো মানুষের কাছে গিয়ে তাদের অভাব নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করেন না। এঁদেরকে দেখে আমরা অনেক সময় ভাবি, “অভাব থাকলে তো সে চাইতই। কিছু চাচ্ছে না যখন, তাহলে নিশ্চয়ই টাকাপয়সা ভালোই আছে। নিশ্চয়ই কোনো পার্ট টাইম কাজ করে যেটা আমি জানি না। না হলে হয়ত গ্রামে জমি জমা আছে, যেখান থেকে ভালোই ইনকাম হয়।” —যারা এরকম ভাবে আল্লাহ تعالى তাদের জন্য এই আয়াতে কঠিন একটা শব্দ ব্যবহার করেছেন —জাহিল।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা যদি তোমাদের দানের কথা প্রকাশ করে দাও, তাহলে তাতেও কল্যাণ আছে — আল-বাক্বারাহ ২৭১-২৭২

তোমরা যদি তোমাদের দানের কথা প্রকাশ করে দাও, তাহলে তাতেও কল্যাণ আছে। আর যদি তা গোপন রাখো এবং তা অভাবীদের দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরও বেশি ভালো হবে। তোমাদের গুনাহগুলোর কিছু মাফ করার উপায় হয়ে যাবে। আর তোমাদের সব কাজের ব্যাপারে আল্লাহ খবর রাখেন। [আল-বাক্বারাহ ২৭১]

সাদাকা অর্থাৎ দান করে সেটা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেওয়া দোষের কিছু নয়, যদি সেটাতে অন্যরা দান করতে উদ্বুদ্ধ হয়। শুধু সাবধান থাকতে হবে যেন, দানের উদ্দেশ্য শুধুই লোক দেখানো হয়ে না যায়। এর আগের আয়াতগুলোতেই আমরা দেখেছি যে, যারা শুধুই লোক দেখানো দান করে, আল্লাহকে تعالى খুশি করা একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে না, অথবা যাদেরকে দান করা হয়েছে, তাদেরকে বার বার খোটা দেয়, তাদের পরিণাম ভয়ংকর। তারা এর কোনো প্রতিদান আল্লাহর কাছে তো পাবেইনা উপরন্তু এটা তাদের জাহান্নামে যাবার কারণও হতে পারে। কিন্তু এই আয়াতে বলা হচ্ছে যে, যদি দান করে সেটা মানুষ প্রকাশ করে দেয়, এবং তা থেকে অন্যরা উৎসাহিত হয়, যা থেকে অভাবীদেরই শেষ পর্যন্ত উপকার হয়, তাহলে এই প্রকাশ করার মধ্যেও কল্যাণ রয়েছে।[১২][১৪][১৯][২০]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা যা কিছুই খরচ করো, বা যেটাই মানত করো, আল্লাহ অবশ্যই তা জানেন — আল-বাক্বারাহ ২৭০

তোমরা যা কিছুই খরচ করো, বা যেটাই মানত করো, আল্লাহ অবশ্যই তা জানেন। আর যালিমদের সাহায্য করার কেউ নেই। [আল-বাক্বারাহ ২৭০]

আমরা যা কিছুই খরচ করি, সেটা আল্লাহর تعالى রাস্তায় হোক, বা অন্য কোনো অসৎ কাজে হোক না কেন, আল্লাহ تعالى তা অবশ্যই জানেন। রাস্তায় চলার সময় এক অন্ধ ফকিরকে দেখে খুব খারাপ লাগলো, পকেট থেকে একশ টাকার নোট বের করে চুপচাপ তার হাতে গুঁজে দিলেন, সেটা আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ تعالى অবশ্যই দেখলেন। কেউ রাস্তার মধ্যে ময়লা ফেলে গেছে। মানুষ কষ্ট করে তা পাশ কাটিয়ে হেটে যাচ্ছে। আপনি নিজের টাকা খরচ করে কাউকে ডেকে এনে তা পরিষ্কার করে দিলেন। এর জন্য কেউ আপনাকে কোনো ধন্যবাদ দিলো না, কোনো পদক দিলো না, ইলেকশনে দাঁড়াতে আমন্ত্রণ জানালো না। কিন্তু আল্লাহ تعالى ঠিকই তা দেখেছেন। আপনার জন্য সম্মান পদক-এর থেকেও বিরাট কিছু অপেক্ষা করছে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় — আল-বাক্বারাহ ২৬৮

আমরা যখন যাকাত দেওয়ার সময় হিসেব করে দেখি কত যাকাত দিতে হবে, তখন ভাবি, “এত্ত গুলো টাকা দিয়ে দিতে হবে! এত টাকা যাকাত দিয়ে কী হবে? মানুষের অভাবের তো কোনো শেষ নেই। যত দিবো, তত চাইবে।” — যাকাতের পরিমাণ দেখে আমাদের আফসোস শুরু হয়ে যায়, অথচ ভেবে দেখি না যে, এটা হচ্ছে আমাদের সম্পত্তির মাত্র ২.৫%অংশ, খুবই নগণ্য পরিমাণ। বাকি বিশাল ৯৭.৫% অংশ সম্পত্তি আমাদের জমা হয়ে আছে। যাকাত দেওয়ার সময় আমাদের শুধু আফসোস হয় যে, কতগুলো টাকা বের হয়ে গেলো। সেই টাকা না দিলে কত কিছু কিনতে পারতাম, কত কিছু করতে পারতাম। অথচ চিন্তা করে দেখি না যে, আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এত সম্পত্তি দিয়েছেন যে, তার এক নগণ্য অংশও আমাদের কাছে এত বেশি মনে হচ্ছে —এই ধরনের চিন্তাগুলো আসে শয়তানের কাছ থেকে, কারণ আল্লাহ تعالى বলেছেন—

শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায়, আর তোমাদেরকে অশ্লীল কাজ করতে তাগাদা দেয়। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং প্রাচুর্যের নিশ্চয়তা দেন। আল্লাহ তো সবকিছু ঘিরে আছেন, তিনি সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৬৮]

আমরা যখন আল্লাহর تعالى পথে দান করতে যাই, তখন আমাদের মনে নানা ধরনের চিন্তা আসা শুরু হয়ে যায়, “বাড়ি ভাড়া দেওয়ার টাকা থাকবে? ছেলে মেয়েদের পড়ার খরচ দিতে পারবো? ঈদের শপিং করতে পারবো?” অথচ যখন শপিং মল বা রেস্টুরেন্টে যাই, আমরাই তখন দেদারসে টাকা উড়াতে থাকি। তখন আমাদের মাথায় বাড়ি-ভাড়া, সন্তানের ভবিষ্যৎ-এর কথা মাথায় আসে না। যে লোক মসজিদের দান বাক্সে একশ টাকা দিবে না দশ টাকা দিবে এই নিয়ে নিজের মধ্যে যুদ্ধ করতে থাকে, সেই মানুষই সিনেমা, টিভি, রংবেরঙের পানীয়, দামি খাবার, ব্রান্ড কাপড়, বিদেশে বেড়াতে যাওয়া — এসবের জন্য দুহাতে টাকা খরচ করতে একটুও বাধে না।[১৭]    (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

খারাপ জিনিসগুলো দেওয়ার নিয়ত করবে না, যেগুলো যদি কেউ তোমাদেরকে দিত, তাহলে তোমরা ঘৃণায় চোখ বুজে তা নিতে — আল-বাক্বারাহ ২৬৭

আমরা যখন দান করার চিন্তা করি, তখন আলমারিতে খুঁজে দেখি কোন জামাকাপড়গুলো আর পরার যোগ্য নেই, কোন আসবাবপত্রগুলো মানুষের সামনে রাখলে আর মান সম্মান থাকছে না, ফ্রিজে কোন খাবারগুলো খেলে বাথরুম থেকে আর বের না হওয়ার সম্ভাবনা আছে ইত্যাদি। গরিবদেরকে খাওয়াতে গেলে হাড্ডি-চর্বি ভর্তি মাংসগুলো দেই, যেগুলো নিজে খাওয়ার কথা চিন্তা করব না, আর নিজের জন্য ভালো মাংসগুলো রেখে দিই। গরিব প্রতিবেশী, কর্মচারীদেরকে তিনদিনের বাসি তরকারিগুলো সুন্দর প্লেটে করে পাঠিয়ে দেই। এভাবে দান করে মনে করি বিরাট সওয়াবের কাজ করে ফেলেছি, আল্লাহ تعالى নিশ্চয়ই এখন আমার উপরে বড়ই খুশি।

বিশ্বাসীরা শোনো, তোমরা যা কিছু অর্জন করেছ, আর যা কিছু আমি তোমাদেরকে পৃথিবী থেকে দিয়েছি, তার মধ্যে থেকে ভালোগুলো আল্লাহর পথে খরচ করো। খারাপ জিনিসগুলো দেওয়ার নিয়ত করবে না, যেগুলো যদি কেউ তোমাদেরকে দিত, তাহলে তোমরা ঘৃণায় চোখ বুজে তা নিতে। আর জেনে রেখো, আল্লাহ সকল চাহিদার ঊর্ধ্বে, তিনি অত্যন্ত প্রশংসিত। [আল-বাক্বারাহ ২৬৭]

আল্লাহ تعالى পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, তিনি تعالى এধরনের দান গ্রহণ করবেন না। দান করার সময় যেন আমরা নিজেদেরকে গ্রহীতার জায়গায় চিন্তা করি। আমি গরিব, অভাবী হলে কি সেই দান খুশি মনে নিতাম? যদি আমি নিজে সেই দান না নিই, তাহলে কীভাবে আমি সেটা অন্যকে দেওয়ার কথা চিন্তা করি? আমার কি কোনো বিবেক নেই? সূরা আলে ইমরানে এক ভয়ংকর আয়াত আছে—“তুমি কোনোদিনও পুণ্য অর্জন করবে না, যতক্ষণ না তুমি সেটা দান করো, যা তুমি নিজে ভালোবাসো।” [৯২]

অনেক সময় আমরা নিজেদেরকে বোঝাই যে, অভাবীরা এইসব ছেড়া, ভাঙা, বাসি জিনিস পেলেই খুশি হয়। ওদের কি আর আমাদের মতো এত চাহিদা আছে নাকি? আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলেননি খুঁজে দেখতে যে, ওরা খুশি হবে কিনা। তিনি تعالى এক কঠিন স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে দিয়েছেন: আমি নিজে খুশি হবো কিনা, যদি আমাকে কেউ সেই সব জিনিস দান করত।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

দানের কথা মনে করিয়ে খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না —আল-বাক্বারাহ ২৬৪-২৬৬

দান করে তারপর খোটা দেওয়া, কথা শোনানো কতটা খারাপ, তা আল্লাহ تعالى আবারো আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন—

বিশ্বাসীরা শোনো, দানের কথা মনে করিয়ে খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না, সেই লোকের মত, যে কিনা দান করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে না। ওর উদাহরণ হলো একটা বড় পাথরের মতো, যার উপরে কিছুটা মাটির আস্তর জমে, কিন্তু তারপর ভারি বৃষ্টি এসে সব মাটি ধুয়ে আবার খালি পাথর রেখে যায়। সে যা অর্জন করলো, তার কিছুই তার আর কাজে লাগলো না। আল্লাহ অবিশ্বাসী লোকদের পথ দেখান না। [আল-বাক্বারাহ ২৬৪]

“দেখেন ভাবি, বুয়াকে এই ঈদে এই নতুন কাপড়টা কিনে দিয়েছি। ও সবসময় পুরনো ছেড়া একটা কাপড় পড়ে আসতো। এখন ওকে কত ভালো দেখাচ্ছে না?” অথবা, “ভাই সাহেব, আপনাকে আমি অনেকদিন থেকে সাহায্য করে আসছি। এবার আপনি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন, নাকি? আপনি কি সারাজীবন আমার ঘাড়ে ঝুলে থাকবেন?” —অনেক সময় আমরা যাদেরকে দান করি, তাদেরকে নানা ভাবে কষ্ট দিই। তাদের অভাবের কথা বার বার মনে করিয়ে দিই। তাদেরকে যে আমি কত উপকার করছি, সেটা সুযোগ পেলেই জানান দিই। তাদের কাছ থেকে ফুটফরমাশ একটু কম পেলেই দানের কথা মনে করিয়ে দিই, যেন সে আমার দানের প্রতিদান দিতে কোনো গাফিলতি না করে। এসব করে আমরা আমাদের দানকে পুরোপুরি বাতিল করে দিই।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

দান করে তারপর কষ্ট দেওয়ার থেকে সুন্দর কথা বলা এবং ক্ষমা করা উত্তম —আল-বাক্বারাহ ২৬১-২৬৩

ইসলাম সম্পর্কে অনেকের এক ধরনের ধারণা আছে যে, ধর্ম হচ্ছে নামাজ পড়া, রোজা রাখা, বছরে একবার যাকাত দেওয়া, ব্যাস এই পর্যন্তই। এর বাইরে অন্য ভালো কাজগুলো, যেমন দান করা, আত্মীয়ের উপকার করা, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, এগুলো ঐচ্ছিক ব্যাপার; করলে ভালো, না করলেও চলে। এই ভুল ধারণার কারণে আজকে মুসলিম সমাজে আমরা অনেক মুসলিম দেখতে পাই, যারা দাঁড়ি-টুপি, টাখনুর উপরে কাপড়ের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস, কিন্তু কোনোদিন তাদেরকে এতিম খানায় দান করতে দেখা যায় না। আবার অনেকে হিজাবের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস, কিন্তু প্রতিবেশীরা তার কাছে সামান্য তেল, লবণ বা প্লেট-বাটি ধার চাইতে এসে মন খারাপ করে ফিরে যায়। আবার অনেকে দিনরাত ইসলামি বই পড়ে, অনলাইনে ফাতওয়ার পর ফাতওয়া পড়ে, ফেইসবুকে কাফির, খারিজি, বিদআতি এই সব নিয়ে তর্ক করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে, নিজেদেরকে সালাফদের প্রকৃত অনুসারী মনে করে, অথচ কোনোদিন তাদেরকে মসজিদের দান বাক্সে মানিব্যাগের ছোট নোটের থেকে বেশি কিছু দিতে দেখা যায় না।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

সেই দিন চলে আসার আগেই আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে দান করো — আল-বাক্বারাহ ২৫৪

আমরা যখন দান করতে যাই, তখন আমাদের অনেকেরই বেশ কষ্ট হয়। মনে হয়, ইশ! নিজের এত কষ্টের টাকা অন্যকে দিয়ে দিলাম, হায় হায়, এই টাকাটা দিয়ে কত কিছু করতে পারতাম। অথচ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, আমাদের যা কিছু আছে, তার সবই তাঁর দেওয়া। তিনি تعالى আমাদেরকে ‘আমাদের সম্পত্তি’ খরচ করতে বলছেন না, বরং বলছেন, তিনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে যেন আমরা খরচ করি।

সময় নিয়ে চিন্তা করলেই আমরা দেখবো, আমরা জীবনে যা কিছুই অর্জন করেছি, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আল্লাহর تعالى দেওয়া। যদি আল্লাহ تعالى আমাদেরকে মেধা, বুদ্ধি, হাত- পা, চোখ-কান, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, উপকারী মামা-চাচা-খালু না দিতেন, তাহলে আমাদের অর্জনগুলোর কিছুই হতো না। কু’রআনে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে যখন দান করতে বলেন, তখন তিনি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেন যে, আমরা দান করছি তাঁরই দেওয়া রিজক থেকে।

আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছেন যে, আমরা যেন সেই দিন আসার আগেই জলদি দান করি, যেদিন আর দান করার কোনো সুযোগ থাকবে না—

2_254

বিশ্বাসীরা, সেই দিন চলে আসার আগেই দান করো, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে, যেদিন কোনো বিনিময় করা যাবে না, কোনো প্রাণের বন্ধু কাজে আসবে না, কোনো সুপারিশও না। আর যারা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে, তারাই হচ্ছে অন্যায়কারী। [আল-বাক্বারাহ ২৫৪]

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)