কিয়ামতের দিন আল্লাহ ওদের সাথে কথা বলবেন না — আল-বাক্বারাহ ১৭৪-১৭৬

গত কয়েক শতকে উপমহাদেশের মানুষদেরকে কৌশলে কুরআন থেকে দূরে রেখে কয়েকটা প্রজন্ম তৈরী করা হয়েছে, যারা কুরআন সম্পর্কে নুন্যতম জ্ঞানও রাখে না। এরা জানে না কুরআনে পরিষ্কারভাবে কী হালাল, কী  হারাম বলা আছে, তাওহীদের শিক্ষা কী? তারা শুধু পড়েছে কিছু গৎবাঁধা বই, যেই বইগুলোর অনেকগুলোতেই নানা ধরনের জাল হাদিস, বিদআতের ছড়াছড়ি।[১১] এভাবে একটি পুরো জাতিকে কুরআনে নিরক্ষর করে রেখে গেছে কিছু ইসলামী নামধারি দল এবং কথিত আলেম নিজেদের ইচ্ছামত ধর্ম ব্যবসা করার জন্য। এদের পরিণাম ভয়ঙ্কর—

2_174_title

2_174আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন সেটা যারা গোপন রাখে, আর দুনিয়ায় সামান্য লাভের বিনিময়ে তা বেচে দেয়, ওরা নিজেদের পেটে জাহান্নামের আগুন ছাড়া আর কিছু ভরে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ ওদের সাথে কথা বলবেন না, ওদেরকে পবিত্রও করবেন না। ওদের জন্য রয়েছে প্রচণ্ড কষ্টের শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ ১৭৪]

আজকাল অনেক ‘আধুনিক মুসলিম’ কু’রআনের আয়াতগুলোর পরিষ্কার বাণীকে ধামাচাপা দিয়ে, অনেকসময় বিশেষভাবে অনুবাদ করে, ইসলামকে একটি ‘সহজ জীবন ব্যবস্থা’ হিসেবে মানুষের কাছে প্রচার করার চেষ্টা করছেন। তারা দেখছেন যে, পাশ্চাত্যের ‘উন্নত’ জাতিগুলো ধর্ম থেকে দূরে সরে গিয়ে কত আনন্দের জীবন যাপন করছে, জীবনে কত স্বাধীনতা উপভোগ করছে: প্রতিদিন রংবেরঙের মদ পান করছে, বিশাল সব আভিজাত্যের হোটেলে গিয়ে জুয়া খেলছে, সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছে; ইচ্ছামত সুন্দর কাপড় পড়ছে, বন্ধু বান্ধব নিয়ে নাচগান করছে—জীবনে কতই না ফুর্তি ওদের।

ওদের এত সুখ, এত আনন্দ দেখে তারা ভিতরে ভিতরে ঈর্ষায় জ্বলে যাচ্ছে। কেন তারা ওদের মতো ফুর্তি করতে পারবে না? কেন তাদেরকে এতটা নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হবে?— এটা তারা কোনোভাবেই নিজেদেরকে বোঝাতে না পেরে, চেষ্টা করছে কোনোভাবে যদি ইসলামকে একটি ‘আধুনিক’, ‘সহজ’ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মানুষের কাছে প্রচার করা যায়। তখন তারা পশ্চিমাদের মতো ফুর্তি করতে পারবে, আবার মুসলিমদের কাছ থেকে একদম দূরেও সরে যেতে হবে না, সমাজে অপরাধীর মতো লুকিয়ে চলতে হবে না। ‘মুহাম্মাদ’ ‘আব্দুল্লাহ’ নাম নিয়ে একদিকে তারা সপ্তাহে একদিন জুম্মার নামায পড়তে যেতে পারবে, অন্যদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে মেয়েদের সাথে নাচতে পারবে, রবিবারে পার্টিতে বন্ধুদের সাথে একটু রঙিন পানিও টানতে পারবে। এভাবে তারা ‘আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন সেটা গোপন রাখে, আর দুনিয়ায় সামান্য লাভের বিনিময়ে তা বেচে দেয়,’—কু’রআনের শিক্ষার পরিপন্থী একটি জীবন যাত্রাকে নিজেদের ফুর্তির জন্য মুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্য করানোর চেষ্টা করছে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আর শেখায় যা তোমরা কখনো জানতে না — আল-বাক্বারাহ ১৫১

2_151যেমন আমি তোমাদেরই মধ্যে থেকে একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনায়, পবিত্র করে, বিধি-বিধান এবং প্রজ্ঞা শেখায়। আর শেখায় যা তোমরা কখনো জানতে না। [আল-বাক্বারাহ ১৫১]

মানুষকে ইসলামের দাওয়াহ দেওয়ার সময় যারা দাওয়াহ দেন, তাদেরকে এই তিনটি বাধা পার করতে হয়—

১) তুমি কে? তোমার কথা আমি কেন শুনবো?
২) তোমার ধর্ম কি আমার ধর্মের থেকে বেশি সঠিক? তুমি কি মনে করো যে, তুমি সঠিক পথে আছে, আর আমরা সবাই ভুল পথে আছি?
৩) আমাদেরকে কেন সবদিক থেকে তোমাদের মতোই হতে হবে?

নবী, রাসূলদেরকে এই বাধাগুলো পার করতে হয়েছে। তাদেরকে এমন সব সময়ে, এমন সব মানুষের কাছে পাঠানো হয়েছিল, যারা একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একশ্রেণীর মানুষের চরম অন্যায়ের কারণে আরেক শ্রেণীর মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও নবী, রাসূলরা অত্যাচারিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এই কঠিন বাধাগুলোকে অতিক্রম করে অত্যাচারী মানুষগুলোকে পথ দেখিয়ে গেছেন।

এখন আমাদের কাছে যদি বাইরের দেশ থেকে কেউ এসে ধর্ম প্রচার করা শুরু করে, তাহলে প্রথমেই আমাদের মনে হবে যে, সে কোথাকার কে, যে আমাদেরকে ধর্ম শেখাতে এসেছে? সে কীভাবে বুঝবে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের মানসিকতা, আমাদের সীমাবদ্ধতা? তার দেশে অনেক কিছু চলতে পারে, যেটা আমাদের দেশে চলবে না। আবার আমাদের অনেক কিছুই তার সংস্কৃতি অনুসারে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। আমাদেরকে কি সব দিক থেকে তার মতো, তার দেশের মানুষের মতো হতে হবে নাকি?

একারণে যখন কোনো নবী বা রাসুল তাদের এলাকার মানুষের মাঝে বড় হয়ে, তাদেরই মাঝে ধর্ম প্রচার করতেন, তখন তাদেরকে এই সমস্যাটার সম্মুখীন হতে হতো না। তারা তাদের আশেপাশের মানুষের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, মানসিকতা ভালো করে বুঝতেন এবং সে অনুসারে তাদেরকে ধর্ম শেখাতে পারতেন। একারণে একজন বাঙালি দাঈ যতটা না ভালোভাবে বাঙালীদের মাঝে ইসলামের শিক্ষা প্রচার করতে পারবেন, মানুষকে বোঝাতে পারবেন, মানুষের ভেতরে পরিবর্তন আনতে পারবেন, একজন আরব বা ইংরেজ দাঈ সেভাবে পারবেন না। ভাষা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আদব-কায়দা একটা বিরাট বাধা হয়ে থাকবে সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতার পথে।

2_151_title2  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যারা তা যেভাবে অনুসরণ করার কথা, ঠিক সেভাবে অনুসরণ করে — আল-বাক্বারাহ ১২১

চৌধুরী সাহেব একজন ভালো মানুষ। আত্মীয়স্বজনের উপকার করেন, গরিবকে দান-খয়রাত করেন, দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। সামাজিকতা এবং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু তিনি করেন না। তাই তিনি মনে করেন: তার কু’রআন না পড়লেও চলবে, শুধু জুম্মার নামাজ পড়লেই হবে। সবগুলো রোজা না রাখলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ এগুলো নিছক কিছু আনুষ্ঠানিকতা। একজন সৎ, আদর্শ নাগরিক হয়ে মানুষের ভালো করাটাই আসল কথা। মানব ধর্মই আসল ধর্ম; “জীবে দয়া করিছে যে জন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর।”

এদের জন্য এই আয়াতটি চিন্তার ব্যাপার—

2_121

যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একমাত্র তারাই তাতে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে, যারা তা যেভাবে অনুসরণ করার কথা, ঠিক সেভাবে অনুসরণ করে। আর যারা তা অস্বীকার করে, ওরা হচ্ছে সর্বহারা। [আল-বাক্বারাহ ১২১]

MasjidulHaram

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলছেন, কু’রআনকে তারাই বিশ্বাস করে, যারা তা সঠিকভাবে ‘তিলাওয়াত’ করে। তিলাওয়াত শব্দটা নিয়ে আমাদের উপমহাদেশে ব্যাপক ভুল ধারণা আছে, যার কারণে আমরা আজকে কু’রআনকে আরবিতে গড়গড় করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছি, এবং আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে হাফিজ ভাড়া করে আরবিতে কু’রআন পড়িয়ে করিয়ে কু’রআন তিলাওয়াত করাচ্ছি বলে মনে করছি। অথচ তারা কু’রআনে আল্লাহ تعالى তাদেরকে কী শিখিয়েছেন তার কিছুই বুঝছে না, অনুসরণ করা তো দূরের কথা।

তিলাওয়াহ تلاوة এসেছে ت ل و থেকে, যার অর্থ: পেছনে পেছনে অনুসরণ করা, সারিবদ্ধভাবে চলা, কোনো কিছু অর্জনের জন্য চলা, কাউকে পথপ্রদর্শক হিসেবে নেওয়া, কারো কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া, কোনো জীবনধারা অনুসরণ করা, কারো চিন্তার ধারা অনুসরণ করা ইত্যাদি।[২৬৩] কু’রআন তিলাওয়াহ মানে শুধু আয়াতগুলোকে যেভাবে আরবিতে উচ্চারণ করার কথা, শুধু সেভাবেই উচ্চারণ করা নয়, একইসাথে সঠিকভাবে কু’রআনের আয়াতগুলোকে বুঝে নিজের জীবনে অনুসরণ করা। বুঝে, চিন্তা করে, সঠিকভাবে কু’রআনের বাণী মেনে চলাটা হচ্ছে: তিলাওয়াহ।[১৪] কু’রআনকে আমাদের জীবনে পথপ্রদর্শক হিসেবে নেওয়া হচ্ছে তিলাওয়াহ। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কু’রআন দিয়েছেন শুধুই ‘ইক্বরা’ পড়ার জন্য নয়, তিনি আমাদেরকে কু’রআন সঠিকভাবে ‘তিলাওয়াহ’ করার জন্য কঠিন নির্দেশ দিয়েছেন। যারা সেটা করবে না, তারা ‘খাসিরিন’ হয়ে যাবে।

خَٰسِرِين (খাসিরিন) এসেছে خسر থেকে যার অর্থ: ১) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ২) হেরে যাওয়া, ৩) যা দেওয়া উচিত, তার কম দেওয়া, ৪) ওজনে কম দেওয়া।[১৫০] যারা কিয়ামতের দিন হেরে যাবে, যাদের ভালো কাজগুলোর ওজন খারাপ কাজের ওজন থেকে কম হয়ে যাবে, তারা হবে খাসিরিন। এরা সেদিন হবে সর্বহারা, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। দুনিয়ায় এদেরকে দেখে যতই সুখী, যতই জীবনটা উপভোগ করছে মনে হোক না কেন, কিয়ামতের দিন তারা সবকিছু হারিয়ে ফেলে হাহাকার করতে থাকবে।

আমি উচ্চ শিক্ষিত, আমার কু’রআন দরকার নেই

আজকাল সুধীবৃন্দরা মনে করেন যে, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং উন্নত বিচার-বুদ্ধির কারণে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ —এটা তারা নিজেরাই যথেষ্ট বুঝতে পারেন এবং আল্লাহকে এবং তাঁর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে তারা যথেষ্ট গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন, যেটা অন্যেরা পারে না। কু’রআনের নির্দেশ অনুসরণ করে নামাজ, রোজা করা শুধু ওই সব অর্ধ-শিক্ষিত, অল্প-জ্ঞানী মানুষদের জন্য দরকার যারা এখনও তাদের মত চিন্তার গভীরতা এবং উপলব্ধির উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। কু’রআন পড়ার কোনো দরকার নেই, কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ —তা শিক্ষিত মানুষরা নিজেরাই চিন্তা করে বের করতে পারে।

এদের অনেকে আবার মনে করেন যে, নামাজ, রোজা না করে তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, তারা এমনিতেই যথেষ্ট ভালো আছেন। যেহেতু তাদের মতে তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, সুতরাং তাদের আল্লাহর বাণী শোনার কোনো প্রয়োজন নেই। কু’রআন মতো চলাটা যদি এত খারাপ কাজ হতোই, তাহলে এতদিনে তাদের অনেক ক্ষতি হতে থাকতো। কিন্তু সেরকম কিছু তো হতে দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং, তারা যা করছে ঠিকই করছে।

যাদের অবস্থা এরকম, তাদেরকে অভিনন্দন! তারা শয়তানের মানুষকে ডোবানোর তিনটি মুল পদ্ধতির উৎকৃষ্ট নিদর্শন। শয়তান গত লক্ষ বছর ধরে একদম প্রথম মানুষ আদম عليه السلام থেকে শুরু করে আপনি-আমি পর্যন্ত বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে ডোবানোর জন্য যতগুলো পদ্ধতি সফল ভাবে প্রয়োগ করে এসেছে, তার মধ্যে তিনটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হল—

১) শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায়: তারা আসলে ভালো মানুষ, তাদের থেকে কত খারাপ মানুষ পৃথিবীতে আছে! একজন ট্রাফিক পুলিশ রিকশাওয়ালার কাছ থেকে দশ-বিশ টাকা ঘুস নেবার সময় মনে করে যে, সে একজন যথেষ্ট ভালো মানুষ, কারণ সে তো সার্জেন্টের মত ট্রাক ড্রাইভারদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা ঘুষ খাচ্ছেনা। একজন সার্জেন্ট মনে করে যে, সে যথেষ্ট ভালো মানুষ, কারণ সে তো ডিসির মত লক্ষ লক্ষ টাকার পুলিশের বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্র বিক্রি করে গুলশান-বনানীতে বাড়ি-গাড়ি করে ফেলছে না। একজন ডিসি মনে করে যে, সে মন্ত্রীদের থেকে অনেক ভালো মানুষ, কারণ সে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের হক মেরে দেশের কোটি টাকার ক্ষতি করছে না। —এদের প্রত্যেককে শয়তান অত্যন্ত সফলভাবে বুঝাতে পেরেছে যে, তারা যা করছে তা এত খারাপ কিছু না। তাদের থেকে কত খারাপ মানুষ পৃথিবীতে আছে। আর তারা অন্যায় না করলে কী হবে, তাদের পরে যারা আসবে, তারা তো ঠিকই একই কাজ করবে।

২) শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায়: ধর্ম শেখার কিছু না, এটি মানুষের নিজের এবং আল্লাহর ব্যাপার। ধর্মের মত একটা সাধারণ ব্যাপারে আবার পড়াশুনা করতে হবে নাকি? নিজের কাছে যেটা ভালো মনে হয়, সেটাই আল্লাহর কাছে ভালো, আর নিজের কাছে যেটা খারাপ মনে হয়, সেটাই আল্লাহর কাছে খারাপ। তাছাড়া ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য যেই বই পুস্তকগুলো পড়ব, সেগুলো যে নির্ভেজাল তার প্রমাণ কী? ওই বইগুলো তো যত সব কাঠমোল্লাদের লেখা। এরচেয়ে নিজে যা ভাল-মন্দ মনে করি সেটা মেনে চললেই হল।

একারণেই অনেককে দেখবেন নাচ-গানের আয়োজন করে খ্রিস্টানদের মত ছেলে-মেয়েদের জন্মদিন, আকিকা করে; হিন্দুদের প্রথা অনুসারে গায়ে-হলুদ, বউ-ভাত করে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়। কিন্তু যখন নিজের বাবা-মা মারা যায়, তখন তাদের জন্য কু’রআন খতমের ব্যবস্থা করে, চল্লিশা করে, প্রতিবছর মৃত্যু বার্ষিকীতে মিলাদের আয়োজন করে। শয়তান এদেরকে সফলভাবে বুঝাতে পেরেছে: এগুলো সবই ভালো কাজ, ইসলাম সম্মত কাজ, চালিয়ে যাও, আল্লাহ তোমার উপর অনেক খুশি।

৩) শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায়: তোমার মত খারাপ মানুষ নামাজ পড়বে? রোজা রাখবে? তুমি নামাজে আল্লাহর কাছে মুখ দেখাবে কী করে? তোমার নামাজ পড়ার কথা ভাবতে লজ্জা লাগে না? এধরনের মানুষকে দেখবেন তারা কোনো মতে চক্ষু লজ্জায় পড়ে হয়তো সপ্তাহে একদিন জুম্মার নামাজটা পড়তে মসজিদে যায় এবং রাস্তায় ফকির দেখলে মানিব্যাগ খুলে সবচেয়ে ছোট নোটটা বের করে দেয়। কিন্তু তাদের দৌড় এই পর্যন্তই। শয়তান এদেরকে সফল ভাবে বোঝাতে পেরেছে: তাদের আর কোনো আশা নেই, আল্লাহর পক্ষেও তাদেরকে মাফ করা সম্ভব না। সুতরাং নামাজ পড়ে, রোজা রেখে কোনো লাভ নেই। শুধু শুধু সময় নষ্ট, অযথা না খেয়ে থাকার কষ্ট। এরচেয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে সেখান থেকে লাখ খানেক টাকা গরিব আত্মীয়স্বজনকে দাও। কোটি টাকার সূদের লোণ নিয়ে বাড়ি কিনে হাজার খানেক টাকা গ্রামের বাড়িতে স্কুল-কলেজে দান করো। বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকার যাকাত না দিয়ে কালে ভদ্রে গরিব মানুষদেরকে কম্বল, জামা কাপড় কিনে দাও। এতেই আল্লাহ তোমাকে অল্প কয়েকদিন জাহান্নামে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিবে।

কারো অবস্থা যদি এই তিনটির যে কোনো একটি হয়, তবে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। শয়তান লক্ষ বছর ধরে মানুষের সাইকোলজি নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছে। মানুষের সাইকোলজিতে তার মত অভিজ্ঞ কোনো সত্তা পৃথিবীতে আর কেউ আছে বলে জানা নেই। লক্ষ বছর আগে প্রথম মানুষ আদমকে عليه السلام বানানোর পর শয়তানের সাথে আল্লাহর যে কথোপকথনগুলো কু’রআনে রেকর্ড করা আছে, তা থেকে শয়তানের বিশাল জ্ঞানের অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। তখনি সে জানতো: মানুষকে কীভাবে বোকা বানানো যায়, একদিন কিয়ামতে যে মানুষের বিচার হবে, সে যে মানব জাতির একটা বিরাট অংশকে বোকা বানাতে পারবে ইত্যাদি। আর লক্ষ বছর পরে তার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা কোথায় পৌঁছেছে, সেটা চিন্তাও করা যায় না।

মানুষকে সঠিক সময়ে সবচেয়ে মোক্ষম কুবুদ্ধি দিতে সে এতটাই অভিজ্ঞ হয়ে গেছে যে বিংশ শতাব্দীতে সে মানুষকে দিয়ে যে পরিমাণের মানুষ মারতে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছে, তার ধারে কাছে মানুষ পুরো মানবজাতির ইতিহাসে মারা যায়নি। প্রতি মিনিটে শয়তানের কুমন্ত্রণা শুনে মানুষ সারা পৃথিবীতে গড়ে ৭৮টা ধর্ষণ করে, প্রতিদিন শত শত মানুষকে খুন করে, হাজার হাজার মানুষকে নিঃস্ব করে পথে বসায়, কোটি কোটি মানুষ জঘন্য, অশ্লীল কাজে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে।

ইউটিউবে এক ‘গ্যাংগনাম স্টাইল’ ভিডিও দেখার পিছনে মানবজাতি জুলাই ২০১২ থেকে এই পর্যন্ত মোট ১৪০ মিলিয়ন ঘণ্টা ব্যায় করেছে, যা ১৬,০০০ বছরের সমান। এই একই সময় ব্যায় করে মানুষ ২০টা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, বা চারটা লন্ডন অলিম্পিক পার্ক, বা ছয়টা দুবাইয়ের ‘বুর্জ আল-খালিফা’ বিল্ডিং তৈরি করতে পারতো। এই এক ভিডিও ২০০ কোটি বারের বেশি দেখে মানুষ তার সময় নষ্ট করেছে। ১০০ কোটি বারের বেশি মানুষ জাস্টিন বীবারের একটা মিউজিক ভিডিও দেখেছে[২৬৪] শয়তানকে আজকাল বেশি কষ্ট করতে হয় না। মানুষ নিজেই ইন্টারনেট, টিভি, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে শয়তানের থেকেও বেশি সফল হয়েছে নিজেদেরকে ধ্বংস করতে।

Dubai

অথচ আল্লাহ تعالى শয়তানকে শুধুমাত্র মানুষের অবচেতন মনে কুমন্ত্রণা দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। আর তিনি মানুষকে ক্ষমতা দিয়েছেন: শয়তানের কুমন্ত্রণা না শুনে নিজের বিবেকবুদ্ধি ব্যবহার করে খারাপ পথে না যাওয়ার। শয়তানের কোনোই ক্ষমতা নেই মানুষকে কোনো কিছু করতে বাধ্য করানোর। এছাড়াও তিনি মানুষকে আরও সাহায্য করার জন্য ৬৩৪৬টি বাণী সহ কু’রআন দিয়েছেন। এরপরেও মানুষ শয়তানের চাকর হয়ে অল্প কিছু আরাম, সন্মান, নিরাপত্তা পাওয়ার লোভে দিনের বেশির ভাগ সময় আল্লাহর সাথে বেঈমানি করা থেকে নিজেদেরকে আটকায় না।

একারণেই আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বলেছেন—

যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একমাত্র তারাই তাতে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে, যারা তা যেভাবে অনুসরণ করার কথা, ঠিক সেভাবে অনুসরণ করে। আর যারা তা অস্বীকার করে, তারাই তো সর্বহারা। [আল-বাক্বারাহ ১২১]

আমরা যদি সঠিকভাবে কু’রআন অনুসরণ না করি, তাহলে আমরা দুনিয়াতেও হারাবো, আখিরাতেও হারাবো। আমরা হয়ে যাবো সর্বহারা।

সাধু সাবধান!

অনেক মুসলিম আছেন, যারা খুব ভালো করে জানেন যে, কু’রআনে আল্লাহ تعالى অনেক বার নামাজ, যাকাত, গরিবদের দান, আত্মীয়ের হক আদায়, বাবা-মার সাথে সবচেয়ে ভালভাবে সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা খুব ভালো করে বোঝেন যে, এগুলো সব তার মহান প্রভুর বাণী, কিন্তু তারা নিজেদেরকে বুঝিয়েছেন: তারা আসলে অলস মানুষ এবং শুধু অলসতার জন্যই তারা নামাজ পড়েন না, এর বেশি কিছু না। “প্রত্যেকটা দিন নামাজ পড়তে হবে? দিনে পাঁচ বার! তাও আবার সপ্তাহে সাত দিন!! অসম্ভব। এতো কঠিন কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। আমি আসলে একটু ফাঁকিবাজ টাইপের মানুষ।”

এরা নিজেদেরকে এক ধরনের বিভ্রমের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন এই ভেবে যে, তারা আসলে একটু অলস টাইপের দেখেই নামাজ পড়েন না, এর বেশি কিছু না। তারা রাত জেগে মুভি দেখতে পারেন, কিন্তু নামাজ পড়তে পারেন না। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মার্কেটে বেহুদা ঘুরতে পারেন, কিন্তু দশ মিনিট দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন না। তারা প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সাথে ফোনে কথা বলতে পারেন, কিন্তু আধা ঘণ্টা আল্লাহর تعالى  সাথে কথা বলার সময় করতে পারেন না। তারা দিনে কয়েক ঘণ্টা আপনার ছেলে-মেয়ের খাওয়া, গোসল, ঘুম, স্কুল, হোম ওয়ার্ক এসবের পিছনে ব্যায় করতে পারেন, কিন্তু আধা ঘণ্টা তার মালিক, তার একমাত্র প্রভুর জন্য ব্যায় করতে পারেন না। নিজের সাথে প্রতারণা করার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কিছু হতে পারে না।

“The human brain is a complex organ with the wonderful power of enabling man to find reasons for continuing to believe whatever it is that he wants to believe.” – Voltaire

সাইকোলজির ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় self-delusion – নিজেকেই নিজে ভুল বুঝিয়ে ধোঁকা দেওয়া, নিজেকে মতিবিভ্রমের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা। মানুষকে কোনো অনুশোচনার সুযোগ না দিয়ে, দিনের পর দিন একই অন্যায় বারবার করানোর জন্য শয়তানের এক চমৎকার পদ্ধতি হচ্ছে: সেলফ ডিলিউসন।

আপনি মাঝে মাঝেই দেখবেন আপনার যখন নামাজ পড়ার কথা মনে হয়, হঠাৎ হঠাৎ অনুশোচনা হয় যে, এভাবে নামাজ ফাঁকি দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না, তখনি দেখবেন আপনার ভেতরে একটা কণ্ঠস্বর আপনাকে বলছে, “কিন্তু আমি তো এর আগের ওয়াক্তের নামাজটা পড়িনি, এখন এই ওয়াক্ত পড়ে কী হবে?” ফজরের সময় ঘুম ভাঙলে: “রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছে। ভালমতো ঘুমানো দরকার। নাহলে সারাদিন শরীর খারাপ লাগবে, মেজাজ গরম থাকবে। একবারে সকালে উঠে নাস্তা খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে নিলেই হবে।” আসরের ওয়াক্ত প্রায় শেষ হতে চলল: “এখনও তো অনেক সময় আছে ওয়াক্ত শেষ হবার। এই কাজটা শেষ না করে উঠে গেলে তাল হারিয়ে ফেলবো। মাগরিবের সময় একবারে পড়ে নেব।” মাগরিবের ওয়াক্ত প্রায় শেষ: “আমি এখন রান্না না করলে তো কেউ খেতে পারবে না, আল্লাহ নিশ্চয়ই আমার অবস্থা বুঝবেন?” মেহমান আসলে, “মেহমানকে বসিয়ে রেখে কীভাবে নামাজ পড়তে উঠে যাই? তারচেয়ে রাতে একবারে সবগুলো নামাজ একসাথে পড়ে নিব।”

এগুলো হচ্ছে শয়তানের কণ্ঠস্বর। যত তাড়াতাড়ি পারুন বোঝার চেষ্টা করুন আপনার ভেতরে যে চিন্তার এক কণ্ঠস্বর আছে, সেটা কখন আপনি, আর কখন সেটা শয়তান।

আমাকে ছাড়া দুনিয়া চলবে না

আরেক ধরনের মানুষ মনে করেন যে, তাদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তারা মানুষের অনেক বড় উপকার করছেন। তাদের কাজ ঠিকমত না হলে তাদের নিজেদের, তাদের পরিবারের, মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের গুরু দায়িত্বের কথা বুঝবেন। তাই কাজের ব্যস্ততার জন্য যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে না পারেন, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিবেন।

যারা মানুষের সরাসরি উপকার করে – ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সমাজসেবকরা হচ্ছেন এই অবস্থার সুন্দর উদাহরণ। যেমন, ডাক্তাররা মনে করেন: “আমি একজন ডাক্তার! আমি মানুষের জীবন বাঁচাই! মানুষের এত বড় একটা সেবার জন্য আল্লাহ আমাকে নামাজ, রোজার হিসাব থেকে মাফ করে দিবেন না? আল্লাহ কি এতই অবিবেচক?”

প্রথমত, যদি ডাক্তাররা এতই মহান হতেন, তাহলে তারা কখনও তাদের কাজের জন্য বেতন নিতেন না। বিনা খরচে মানুষের চিকিৎসা করতেন। তারা কখনও মামা-চাচা-খালু ধরে অন্যায়ভাবে ঢাকায় পোস্টিং নিয়ে পার্টটাইম প্রাইভেট ক্লিনিকে কাজ করতেন না। বরং দূরের কোনো গ্রামের অভাবী, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায় নিজেই পোস্টিং নিয়ে ছুটে যেতেন। ডাক্তাররা যখন তাদের কাজের জন্য বেতন নিচ্ছেন, তখন তারা একজন বেতন ভুক্ত কর্মচারী ছাড়া আর কিছুই নন। তারাও মানুষের উপকার করছেন, আবার একজন সুইপারও মানুষের উপকার করছেন। সুইপাররা না থাকলে লক্ষ লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতো।

কেউ যত বড় ডাক্তার হন, যত বড় দানশীল ব্যবসায়ী হন, যত বড় শিক্ষক হন, কেউ কোনো মানুষের জীবন বাঁচান না; আল্লাহ মানুষের জীবন বাঁচান। কেউ কোনো মানুষকে ইসলামের পথে আনেন না; আল্লাহ যাকে চান তাকে তিনি তাঁর ধর্ম মেনে চলার সন্মান দেন। পৃথিবীতে কেউ নেই যার কাজ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, সে নামাজ না পড়লে বা রোজা না রাখলে আল্লাহ তাকে তার কাজের গুরুত্বর জন্য নামাজের হিসাব ছেড়ে দিবেন। যদি তাই হতো, তাহলে কোনো নবীর নামাজ পড়ার দরকার হতো না, রোজা রাখার প্রয়োজন হতো না এবং কাফিরদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার দরকার হতো না।

তাদের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা নিশ্চয়ই করছি না?

সূত্র:

  • [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
  • [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
  • [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
  • [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
  • [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
  • [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
  • [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
  • [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
  • [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
  • [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
  • [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
  • [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
  • [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [১৫] তাফসির আল জালালাইন।
  • [২৬৩] তিলাওয়াত শব্দের বিস্তারিত অর্থ: http://ejtaal.net/aa/img/br/1/br-0160.png, http://www.onislam.net/english/shariah/quran/recite-a-memorize/455998-tilawah-quran-recitation-revisited.html
  • [২৬৪] গ্যাংগনাম স্টাইল —এর ক্ষতির পরিমাণ: http://www.economist.com/blogs/graphicdetail/2014/06/daily-chart-1

আসলে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো ঈমান নেই — আল-বাক্বারাহ ১০০-১০১

চৌধুরী সাহেব একদিন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, “ইয়া আল্লাহ, এই রমজান থেকে আমি সবসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ব। আমাকে বাঁচিয়ে দিন আল্লাহ।” তিনি সুস্থ হয়ে বাসায় আসলেন। রমজান শেষে ঈদ আসল। তিনি সারাদিন বন্ধুদের বাসায় ঈদের দাওয়াত খেয়ে ঘুরে বেড়ালেন। পাঁচ ওয়াক্ত তো দূরের কথা, ঈদের জামাত ছাড়া আর এক ওয়াক্ত নামাজও তিনি পড়লেন না। তারপরে একদিন তিনি ঠিক করলেন: এখন থেকে অন্তত মাগরিব, ঈশা বাসায় এসে পড়বেন। কিন্তু দেখা যায়, তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় আসেন। তারপর খবর, সিরিয়াল, টক শো দেখতে বসেন। তার আর কোনো নামাজ পড়া হয় না।

যাইহোক, একসময় চৌধুরী সাহেব ঠিক করলেন, এলাকায় তার কিছু করা দরকার, কিছু পরিচিতি হওয়া দরকার। তিনি এলাকার মসজিদের বোর্ডকে বললেন, তাকে যদি সভাপতি বানানো হয়, তিনি মসজিদের সব মেরামত করবেন, মসজিদের পাশে একটা মাদ্রাসা করবেন। তাকে সসন্মানে মসজিদের সভাপতি বানানো হলো। জুন্মার নামাজে হাজারো মুসল্লির সামনে ঘটা করে তার নাম ঘোষণা দেওয়া হলো। কিন্তু মাসখানেক পর মসজিদের মেরামত শেষে মসজিদের মেম্বাররা যখন তাকে মাদ্রাসার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি অবাক হয়ে বললেন, “মাদ্রাসা? আমি কবে বললাম মাদ্রাসা করার কথা? মসজিদের না সব মেরামত আমিই করে দিলাম? আপনারা দেখি আমাকে পেয়ে বসেছেন! আগামী পাঁচ বছর আর কিছু হবে না।”

এই ধরনের চৌধুরী সাহেবদের সাথে এই আয়াতের বনী ইসরাইলদের সাথে অনেক মিল পাওয়া যায়—

2_100

এমনটাই কি সবসময় হয় না যে, যখনি তারা অঙ্গীকার করে, তাদের মধ্যে একদল তা ছুঁড়ে ফেলে? আসলে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো ঈমান নেই। [আল-বাক্বারাহ ১০০]

এখানে বলা হয়েছে, এরা অঙ্গীকার ছুঁড়ে ফেলে। نبذ অর্থ কোনো কিছুর মূল্য না দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া।[৫][১] অঙ্গীকার মানা তো দূরের কথা, কোনোদিন যে অঙ্গীকার করেছিল, সেটা স্বীকার পর্যন্ত করে না।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা কি বুদ্ধি ব্যবহার করো না? — আল-বাক্বারাহ ৭৬-৭৯

মসজিদে বসে নামায শেষে চৌধুরী সাহেব তার বন্ধুর সাথে ব্যবসার ব্যাপারে আলাপ করছেন। তিনি দুঃখ করে বন্ধুকে বললেন, “ভাই, ট্যাক্স দিতে দিতে অবস্থা খারাপ। ব্যবসার খরচ করে কুলাতে পারছি না।” বন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি ট্যাক্স পুরোটা দেন নাকি? আমি তো নামমাত্র ট্যাক্স দেই।” তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “বলেন কি? কীভাবে?” বন্ধু বললেন , “আমি একজনকে টাকা খাওয়াই। সে আমাকে ট্যাক্স সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়। আপনার সাথে কালকে পরিচয় করিয়ে দেব।” চৌধুরী সাহেব এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচু গলায় বললেন, “ছি, ছি, ভাই। মসজিদে বসে এই সব কথা বলতে হয় না, এটা আল্লাহর ঘর। চলেন, ওই চায়ের দোকানে গিয়ে বাকি আলাপ করি।”

আল্লাহর تعالى সম্পর্কে এই ধরনের চরম অবমাননাকর ধারণার একটি উদাহরণ দেওয়া আছে এই আয়াতে—

2_76

যখন তারা বিশ্বাসীদের সাথে দেখা করে, তখন বলে, “আমরা ঈমানদার”; কিন্তু যখন তারা নিজেদের মধ্যে থাকে, তখন বলে, “তোমরা কেন তাদেরকে বলে দিলে আল্লাহ আমাদেরকে কী প্রকাশ করেছেন? তারা তো আল্লাহর সামনে এনিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করাবে? তোমরা কি বুদ্ধি ব্যবহার করো না?” [আল-বাক্বারাহ ৭৬]

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)