যখন জীবন্ত পুতে ফেলা শিশু কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে… —আত-তাকউইর

যখন সূর্য গুটিয়ে ফেলা হবে। যখন তারকাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে। যখন পর্বতমালাকে চলমান করা হবে। যখন পূর্ণ গর্ভবতী উটকে উপেক্ষা করা হবে। যখন বন্য পশুদের একসাথে করা হবে। যখন সাগরগুলো উত্তাল করে ফেলা হবে। যখন আত্মাকে জুড়ে দেওয়া হবে। যখন জীবন্ত পুতে ফেলা শিশু কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে: কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে? যখন আমলনামা প্রকাশ করা হবে। যখন আকাশের আবরণ তুলে ফেলা হবে। যখন জাহান্নামের তীব্র আগুনকে ভীষণভাবে প্রজ্বলিত করা হবে। যখন জান্নাতকে কাছে নিয়ে আসা হবে। তখন প্রত্যেকে জেনে যাবে: সে কী নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।  —আত-তাকউইর ১-১৪

মহাবিশ্বের ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। সেদিন আমাদের উপরে আকাশে এবং আমাদের চারপাশে পৃথিবীতে এমন ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটবে যে, মানুষ সেদিন তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তির কথাও বেমালুম ভুলে গিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটতে থাকবে। আরবদের কাছে দশ মাসের গর্ভবতী উট, যার বাচ্চা দেওয়ার করার সময় হয়ে গেছে, তা ছিল সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, কারণ সেটি তাদেরকে আরেকটি মূল্যবান সম্পদ— একটি উটের বাচ্চা উপহার দিত এবং একই সাথে দুধ দিত। এধরনের উটকে তারা নিয়মিত সবরকম যত্ন নিত, নিরাপত্তার সবরকম ব্যবস্থা করতো, দিনরাত এই উটের চিন্তায় মশগুল থাকতো।

যেদিন মহাবিশ্বের ধ্বংস শুরু হয়ে যাবে, সেদিন সেই মূল্যবান সম্পদকে উপেক্ষা করে নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আজকের দিনে তুলনা করলে, মানুষ তার দামি গাড়ি, বাড়ি, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ফেলে পালাতে থাকবে—রাস্তায় পড়ে থাকবে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, আওডি। আলিশান বাড়ি, ফুল-ফলের বাগান দরজা খোলা অবস্থায় খালি পড়ে থাকবে। অনেক পরিশ্রমের অর্জন যেই মূল্যবান সম্পদগুলো, যেগুলোর চিন্তায় মানুষ দিনরাত মশগুল থাকতো, নিরাপত্তার সবরকম ব্যবস্থা নিত, নিয়মিত যত্ন নিত—সেদিন কেউ ফিরেও তাকাবে না সেগুলোর দিকে।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ও মানুষ, কীসে তোমাকে তোমার দয়াময় প্রতিপালকের কাছ থেকে দূরে নিয়ে গেলো? —আল-ইনফিত্বার

যখন আকাশ ছিঁড়ে বিদীর্ণ হবে, তারাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হবে, সাগরে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে, কবরগুলো উল্টে সব বের করে ফেলা হবে… প্রত্যেকে জেনে যাবে সে কী করেছে এবং কী ছেড়ে এসেছে। —আল-ইনফিতার ১-৫

অকল্পনীয় লম্বা সময় ধরে আকাশ এই সৃষ্টিজগতকে আগলে রেখেছে। একদিন তাকে ছিঁড়ে বিদীর্ণ করে ফেলা হবে। এর মধ্যে খুলে দেওয়া হবে অতিজাগতিক দরজা, যেগুলো দিয়ে অন্য জগত থেকে অজানা সত্ত্বারা এই জগতে চলে আসবে। সৃষ্টিজগতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্তপূর্ণ দিন পরিচালনা করার জন্য তারা অপেক্ষা করছিল। সেদিন নির্দেশ পাওয়া মাত্র তারা আকাশ ছিঁড়ে ভেদ করে চলে এসে শুরু করে দেবে এক মহাপ্রলয়ের প্রস্তুতি। ‘ইনফিত্বার’  ٱنفطار এসেছে ‘ফাত্বর’ থেকে, যার অর্থ বিদীর্ণ হয়ে যাওয়া, কোনো কিছু ছিঁড়ে ফেটে বের হয়ে যাওয়া। যেমন, মাড়ি ভেদ করে দাঁত বের হয়ে যাওয়া হচ্ছে ফাত্বর। এই আয়াতে যেন বলা হচ্ছে যে, একদিন আকাশ ছিঁড়ে কিছু বের হয়ে আসবে।[১৪]

পুরো আকাশ এমনভাবে বিদীর্ণ করে ফেলা হবে যে, নক্ষত্রগুলো সব বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে। আরবিতে كواكب ‘কাওয়াকিব’ অর্থ সেই উজ্জ্বল স্থির নক্ষত্রগুলো, যেগুলো ব্যবহার করে মানুষ রাতের আধারে, মরুভূমিতে, সমুদ্রে পথ খুঁজে পায়।[১] সেদিন সেই নক্ষত্রগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে, মানুষ হারিয়ে ফেলবে দিক নির্দেশনা। আর কোনো প্রয়োজন নেই দিক-নির্দেশনার। এই জগতের সময় শেষ। সকল জাগতিক ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ এখন বন্ধ।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যারা নেওয়ার সময় ঠিকই কানাকড়ি বুঝে নেয় — আল-মুতাফফিফিন

ঠকবাজেরা সব শেষ হয়ে যাক। যারা নেওয়ার সময় ঠিকই কানাকড়ি পর্যন্ত বুঝে নেয়, কিন্তু যখন অন্যকে পরিমাপ বা ওজন করে দেয়, তখন ফাঁকি দিয়ে কম দেয়। এরা কি মনে করে যে, এদেরকে আর ওঠানো হবে না? এক কঠিন দিনে? যেদিন সব মানুষ দাঁড়াবে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের সামনে? — আল-মুতাফফিফিন ১-৬

মুতাফ্‌ফিফিন হচ্ছে যারা অন্যকে কিছু দেওয়ার সময় এদিক-ওদিক একটু কম দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু নিজে নেওয়ার সময় ঠিকই কানাকড়ি পর্যন্ত বুঝে নেয়। কিছু উদাহরণ দেই—

চৌধুরী সাহেব ফল দামাদামি করছেন। বিক্রেতা দামে রাজি হয়ে তাকে প্যাকেট করে দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু দেখা গেলো একটা ফল একটু বেশি-পাকা, একটু দাগ বেশি। তিনি নাছোড় বান্দা। তাকে সবগুলো তরতাজা ফল দিতে হবে, একটাও বেশি-পাকা হওয়া যাবে না। চৌধুরী সাহেবের হম্বিতম্বি শুনে বিক্রেতা জলদি পাশের বিক্রেতার কাছ থেকে তরতাজা একটা ফল এনে দিলেন। তারপরও চৌধুরী সাহেব দাম পরিশোধ করার সময় কিছু কম দিলেন। ফলবিক্রেতা পুরো দাম দিতে অনুরোধ করলে তিনি—“পরে দিবো নে, এখন ভাংতি নাই”—বলে হাটা দিলেন। তার পরবর্তী শিকার সবজি বিক্রেতা… —এই হচ্ছে একজন মুতাফ্‌ফিফ। নিজে নেওয়ার সময় কোনো ছাড় দেবে না, কিন্তু কাউকে দেওয়ার সময় একটু হলেও ফাঁকি দেবেই।

হাসান সাহেব ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে প্রতিদিন বাসা থেকে দেরি করে বের হন। তারপর অফিসে নয়টার পরিবর্তে সাড়ে নয়টায় পৌঁছে ক্লান্ত চেহারা বানিয়ে বলেন, “দেশটা আর বসবাসের যোগ্য নেই। জ্যামে পড়ে জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।…” —অফিসে দুপুরে আধা ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। দেড়টার সময় তার ডেস্কে ফিরে আসার কথা। কিন্তু তিনি সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে আগে-পিছে সুন্নত, নফলসহ যুহরের নামাজ পড়ে, তারপর আরও আধাঘণ্টা ধরে আয়েশ করে দুপুরের খাবার এবং চা খেয়ে, ধীরে সুস্থে দুইটার দিকে ডেস্কে ফিরে যান। প্রতিদিন তিনি ঘণ্টাখানেক কম্পিউটারে এবং মোবাইলে বিনোদন করেন, ব্যক্তিগত কাজ করেন। তারপর ঘড়িতে পাঁচটা বাজলেই তিনি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি। —এই হচ্ছেন আরেকজন মুতাফ্‌ফিফ। কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে যতটুকু ফাঁকি দেওয়া যায়, তা দেবে, কিন্তু মাস শেষে নিজের পাওনা বুঝে নেওয়ার সময় কখনো গিয়ে বলবে না যে, তাকে বেতন কিছু কম দেওয়া হোক, কারণ সে চুক্তি অনুসারে পুরোপুরি কাজ করেনি।

দরজায় কড়া নাড়ছে। দরজা খুলে দেখলেন প্রতিবেশী ভাবি একটি বাটি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি লজ্জিত মুখে বললেন, “ভাবি, কিছু মনে করবেন না। আমার লবণ শেষ হয়ে গেছে। রান্না করতে পারছি না। আমাকে এই বাটিতে একটু লবণ ভরে দেবেন? আমি কালকেই আপনাকে ফেরত দেবো।” আপনি তাকে বাটি ভরে লবণ দিলেন। তারপর, পরের সপ্তাহে প্রতিবেশী ভাবি লবণ কিনে এনে সেই বাটিতে ভরছেন আপনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভরার পর তিনি দেখলেন যে, তার লবণের প্যাকেট প্রায় অর্ধেক শেষ। তার ভেতরটা কেমন খচ্‌ করে উঠল। এতগুলো লবণ চলে যাচ্ছে! আগামী সপ্তাহেই আবার লবণ কিনতে হবে। তখন তিনি কয়েক চামচ লবণ তুলে রেখে আপনাকে ফেরত দিয়ে গেলেন। আপনি ধরতে পারলেন না, কিন্তু আপনার মনে একটা ক্ষীণ সন্দেহ হলো যে, গত মাসে তেল ফেরত দেওয়ার সময় বোতলটা সম্ভবত অর্ধেক ভরা ছিল, তার আগের মাসে মসলার কৌটাটাও মনে হয় অর্ধেক ভরা ছিল, তার আগের মাসে ঝাড়ুটা …  —এই প্রতিবেশী ভাবি হচ্ছেন একজন মুতাফফিফ। দেওয়ার সময় ন্যায্য পরিমাণ দিতে গেলেই তার মন খচ্‌খচ্‌ শুরু হয়ে যায়।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

মানুষেরা শোনো, তুমি প্রতিপালকের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত খাটতেই থাকবে —আল-ইনশিক্বাক

যখন আকাশকে ছিঁড়ে বিদীর্ণ করে ফেলা হবে এবং সেটা তার প্রতিপালকের আদেশ পালন করবে —যা তার করারই কথা। যখন ভূমিকে প্রসারিত করে সমতল করা হবে, তার ভেতরে যা আছে, তা বের করে দিয়ে খালি হয়ে যাবে এবং তার রবের আদেশ পালন করবে —যা তার করারই কথা। মানুষেরা শোনো, তুমি প্রতিপালকের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত খাটতেই থাকবে, তারপর তাঁর সাথে তোমার দেখা হবে। — আল-ইনশিক্বাক ১-৬

যখন আকাশকে ছিঁড়ে বিদীর্ণ করে ফেলা হবে

মহাবিশ্বে এক অদ্ভুত কিছু একটা রয়েছে, যা কোনো যন্ত্রে ধরা যায় না, পরিমাপ করা যায় না, পদার্থ বিজ্ঞানের কোনো সূত্রও মানে না। বিজ্ঞানীরা এর সম্পর্কে কিছুই ধারনা করতে পারছেন না। এই প্রচণ্ড ক্ষমতাধর শক্তি ক্রমাগত মহাবিশ্বকে সম্প্রসারণ করছে। বিজ্ঞানীরা একে ‘শক্তি’ নাম দিয়েছেন, কিন্তু এটা আমাদের জানা কোনো শক্তির মতো কিছু নয়। একে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডার্ক এনার্জি’ বা অজানা-শক্তি।

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, মহাবিশ্বের যে তিনটি সম্ভাব্য পরিণতি হতে পারে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা হচ্ছে মহাবিশ্ব একদিন ছিঁড়ে ফেটে যাবে ডার্ক এনার্জির কারণে। আমরা যদি তখনো বেঁচে থাকতে পারতাম, তাহলে আমরা দেখতাম যে, আকাশে নক্ষত্রগুলো ঝরে যাচ্ছে, পৃথিবী ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, আকাশে ফাটল ধরছে, তারপর অণু-পরমাণুর গঠন ভেঙ্গে পুরো মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে—কুরআনে মহাবিশ্ব ধ্বংসের বর্ণনার সাথে যেন এক অদ্ভুত মিল!

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওরা বসে বসে দেখছিল বিশ্বাসীদের সাথে কী করা হচ্ছিল —আল-বুরুজ

বিশাল নক্ষত্রে ভরা আকাশের শপথ। শপথ সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া দিনের। শপথ সাক্ষীর এবং যা সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। — আল-বুরুজ ১-৩

চিত্র: মরুভূমির রাতের পরিষ্কার আকাশে আমাদের ছায়াপথ

বুরুজ শব্দটির অর্থ দুর্গ, উঁচু দালান, প্রাসাদ, বড় নক্ষত্র ইত্যাদি।[৫] কুরআনে আল্লাহ تعالى আরও বলেন, “আমি আকাশে নক্ষত্র বীথি বসিয়েছি, সবার দেখার জন্য আকর্ষণীয় করেছি।”— ১৫:১৬। “সুউচ্চ মর্যাদাবান তিনি, যিনি আকাশে নক্ষত্রবীথি দিয়েছেন, দিয়েছেন একটি জ্বলন্ত সূর্য এবং উজ্জ্বল চাঁদ।”—২৫:৬১। মহাকাশে বিশাল সব সৃষ্টি তিনি تعالى তৈরি করে রেখেছেন, যাদের বিশালত্ব আমাদের কল্পনার সীমার বাইরে। আমাদের সূর্য এত বড় যে, এর ভেতরে তের লক্ষ পৃথিবী ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। আর সূর্য তেমন কোনো বড় নক্ষত্রও নয়। এমন সব দানবাকৃতির নক্ষত্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে, যাদের ভেতরে দশ কোটি সূর্য এঁটে যাবে। এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে বড় নক্ষত্রটি পঞ্চাশ কোটি সূর্যের সমান।[৪৩৮]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তুমি কি জানো, রাতে যা হঠাৎ করে আসে, সেটা কী? এক বিদীর্ণকারী নক্ষত্র —আত-তারিক

শপথ আকাশের এবং রাতে যা হঠাৎ করে আসে তার। তুমি কি জানো, রাতে যা হঠাৎ করে আসে, সেটি কী? এক বিদীর্ণকারী নক্ষত্র। এমন কেউ নেই যার জন্য তত্ত্বাবধায়ক নেই। তাই মানুষ ভেবে দেখুক কীসের থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সবেগে বের হওয়া তরল থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মেরুদণ্ড এবং পাঁজরের হাড়ের মধ্যে থেকে সে বেরিয়ে আসে। অবশ্যই তিনি পারেন তাকে পুনরায় জীবন দিতে। —আত-তারিক ১-৮

শপথ আকাশের এবং রাতে যা হঠাৎ করে আসে তার

এই আয়াতগুলো যুগে যুগে কৌতূহলী মানুষের মধ্যে অনেক চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে। কোন সেই নক্ষত্র যা রাতের বেলা হঠাৎ করে আসে? এমন এক কল্পনাতীত উজ্জ্বল নক্ষত্র, যার আলো মহাবিশ্বে কোটি কোটি মাইল পাড়ি দিয়ে, সকল বাধা বিদীর্ণ করে রাতের আকাশে জ্বল জ্বল করতে থাকে? তারিক طاِرِق অর্থ রাতের বেলা হঠাৎ করে আসা, অথবা রাতের আধারে খট খট করে দরজায় টোকা দেওয়া। অপ্রত্যাশিত এমন কিছু, যা মানুষকে চিন্তায় ফেলে দেয়। কোন সেই নক্ষত্র যা রাতের বেলা হঠাৎ করে এসে মানুষকে চিন্তায় ফেলে দেয়?[১][৭][৮][১৭][১৮]

একটি নক্ষত্র যখন তার ভেতরের প্রচণ্ড চাপে বিস্ফোরিত হয়ে যায়, অথবা আশপাশ থেকে খুব বেশি পদার্থ ঢুকে গেলে তারপর বিস্ফোরিত হয়ে যায়, তখন সেটি এতই উজ্জ্বল হয় যে, মহাবিশ্বের সুদূর প্রান্ত থেকেও তাকে দেখা যায়। মহাবিশ্বের সব গ্যালাক্সির উজ্জ্বলতাকে হারিয়ে এটি রাতের আকাশে কয়েক দিন, অনেক সময় কয়েক মাস জ্বল জ্বল করতে থাকে। একে সুপারনোভা বলে। সুপারনোভা অনেক সময় এতই উজ্জ্বল হয় যে, দিনের বেলায়ও তা দেখা যায়। প্রতি হাজার বছরে কয়েকবার এরকম ঘটনা পৃথিবীর আকাশে খালি চোখে দেখা যায়।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তুমি উপদেশ দিতে থাকো, এতে লাভ হোক আর না হোক — আল-আ়লা ৬-১৯ পর্ব ৩

অচিরেই আমি তোমাকে দিয়ে পড়াবো, তারপর তুমি আর ভুলবে না। তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। তিনি প্রকাশ্য এবং যা গোপন  করা হয়,তা অবশ্যই জানেন। আর আমি তোমার জন্য সহজকে পাওয়া সহজ করে দেবো। তাই তুমি উপদেশ দিতে থাকো, এতে লাভ হোক আর না হোক। যার অন্তরে ভয় আছে সে তা গ্রহণ করবে। আর চরম হতভাগা তা পাশ কাটিয়ে যাবে। সে ভয়ংকর আগুনে পুড়বে। তারপর সেখানে সে না মরবে, না বাঁচবে। যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে-ই তো সাফল্য লাভ করে। আর যে তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে নামাজ পড়ে।

অচিরেই আমি তোমাকে দিয়ে পড়াবো, তারপর তুমি আর ভুলবে না। তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। তিনি প্রকাশ্য এবং যা গোপন করা হয় তা অবশ্যই জানেন।

ধরুন, একদিন এক অতি উন্নত মহাজাগতিক প্রাণী, একজন মানুষের সাথে যোগাযোগ করে বলল যে, পুরো মানবজাতির

অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। তোমাকে আমি এমন কিছু তথ্য দেব, যার মধ্যে মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচার উপায় দেওয়া আছে। তুমি প্রথমে নিজে মুখস্ত করবে, তারপর মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেবে। আর সাবধান, এই তথ্য এসেছে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্বয়ং মহাবিশ্বের স্রস্টার কাছ থেকে। মানুষ যদি তার কথা না শোনে, তাহলে তিনি তোমার জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন।

—এরকম ভয়ংকর দায়িত্ব কাউকে দিলে স্বাভাবিকভাবেই তার ভেতরে আতংক তৈরি হবে। যদি সে ভুলে যায়? যদি সে নিজে ভুল বুঝে অন্যকে ভুল শেখায়? যদি সে ঠিকমত পুরো তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে না পারে? তখন কী হবে? মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব তার একার ঘাড়ে এখন? কি সর্বনাশ!  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যিনি পরিমাপ নির্ধারণ করে দিয়ে পথ দেখিয়েছেন —আল-আ়লা ১-৫ পর্ব ২

তোমার রবের মহত্ত্ব ঘোষণা করো। যিনি সৃষ্টি করে তাকে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন। যিনি পরিমাপ নির্ধারণ করে দিয়ে পথ দেখিয়েছেন। যিনি তৃণাদি বের করে এনে ঘন-কালো সবুজে পরিণত করেন।—আল-আ়লা ১-৫

আল্লাহ تعالى প্রতিটি সৃষ্টির ক্বদর অর্থাৎ পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং তারপর তিনি তাকে হুদা অর্থাৎ পথ দেখিয়েছেন। মহাবিশ্বের প্রতিটি পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন এবং প্রোটনের চার্জ সমান এবং বিপরীত করে দিয়েছেন, যেন ইলেকট্রন পরমাণু ছেড়ে চলে না যায়। আবার এরা যেন একে অন্যকে আকর্ষণ করে একসাথে লেগে ধ্বংস হয়ে না যায়, সেজন্য তিনি এদের মধ্যে নিখুঁত পরিমাণে বিকর্ষণ বল দিয়েছেন, যা এদেরকে একে অন্যের থেকে দূরে রাখে।

চিত্র: পরমাণুর ভেতরে প্রোটন এবং ইলেকট্রন (কাল্পনিক)

প্রতিটি কোষ নিখুঁতভাবে তিনি تعالى তৈরি করেছেন, যেন তা থেকে একটি পূর্ণ উদ্ভিদ বা প্রাণী তৈরি হতে পারে। একটু পুরো মানুষ তৈরি করার ডিজাইন সংরক্ষণ করা আছে মানুষের একটি কোষের মধ্যে। মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল যন্ত্র ‘মানব মস্তিষ্ক’ তৈরি করার অকল্পনীয় জটিল ব্লু-প্রিন্ট রাখা আছে খালি চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্র কোষের ডিএনএ-তে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যিনি সৃষ্টি করে তাকে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন — আল-আ়লা ১-৫ পর্ব ১

তোমার রবের মহত্ত্ব ঘোষণা করো। যিনি সৃষ্টি করে তাকে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন। যিনি পরিমাপ নির্ধারণ করে দিয়ে পথ দেখিয়েছেন। যিনি তৃণাদি বের করে এনে ঘন-কালো সবুজে পরিণত করেন। —আল-আ়লা ১-৫

সুরাহ আল-আ়লা’য় আমরা বহু ধরনের স্রষ্টা বিদ্বেষীদের প্রশ্নের উত্তর পাবো। আজকে যদি আমরা চারিদিকে তাকিয়ে দেখি কত ধরনের মানুষ স্রষ্টাকে অস্বীকার করে নানা ধরনের প্রশ্ন, তর্ক, প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছে, তাহলে আমরা তাদেরকে কয়েকটি দলে ভাগ করতে পারবো—

উঠতি নাস্তিক: আল্লাহ ﷻ যদি সবকিছু সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তাকে সৃষ্টি করলো কে?

হতাশাগ্রস্থ নাস্তিক: সত্যিই যদি আল্লাহ ﷻ থাকে, তাহলে পৃথিবীতে এত দুঃখ, কষ্ট, মুসলিমদের উপর এত অত্যাচার, এত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি হয় কেন? আল্লাহ ﷻ এগুলো হতে দেয় কেন?

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নাস্তিক: আল্লাহ ﷻ বলে কেউ আছে —এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞান সম্মত প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, সৃষ্টিজগৎ কোনো অতিবুদ্ধিমান সত্তা বানিয়েছে। সুতরাং আল্লাহ ﷻ বলে কেউ নেই।

আঁতেল নাস্তিক: আল্লাহ ﷻ ধারণাটা আসলে মানুষের কল্পনা প্রসূত। মানুষ যখন কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারত না, তখন তারা মনে করত: নিশ্চয়ই কোনো অতিপ্রাকৃত সত্তা রয়েছে, যে এসব ঘটাচ্ছে। একারণে মানুষ এমন কোনো সত্তাকে কল্পনা করে নেয়, যার কোনো দুর্বলতা নেই। যেমন: তার ক্ষুধা, ঘুম পায় না; সে মারা যায় না; কেউ তাকে জন্ম দেয় না; তার কোনো শরীর নেই যেখানে সে আবদ্ধ; তার কোনো আকার নেই, যা তাকে দুর্বল করে দেবে। এরকম নিরাকার, অবিনশ্বর, অসীম ক্ষমতা ইত্যাদি যত সব কল্পনাতীত গুণ মানুষ চিন্তা করে বের করতে পেরেছে, তার সবকিছু ব্যবহার করে সে এক স্রষ্টা সৃষ্টি করেছে। এর মানে তো এই না যে, স্রষ্টা বলে আসলেই কেউ আছে? এগুলো সবই মানুষের ধারণা।

ঘৃণাস্তিক: ধর্মের নামে যে পরিমাণ মানুষ হত্যা হয়েছে, আর অন্য কোনোভাবে এত মানুষ মারা যায়নি। ধর্মের কারণে মানুষে মানুষে ঝগড়া, ঘৃণা, মারামারি, দলাদলি, এক জাতি আরেক জাতিকে মেরে শেষ করে ফেলা —এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা হয় না। পৃথিবীতে যদি কোনো ধর্ম না থাকতো, তাহলে মানুষে-মানুষে এত ভেদাভেদ, এত রক্তারক্তি কিছুই হতো না। যদি আল্লাহ বলে আসলেই কেউ থাকে, তাহলে ধর্মের নামে এত হত্যা কেন হয়? ধার্মিকরা এত অসাধু হয় কেন? যতসব চোর, লম্পট, প্রতারকরা দেখা যায় দাঁড়ি-টুপি পড়ে মসজিদে নামাজ ঠিকই পড়ে।

—এগুলো হলো বিজ্ঞানে যারা অ-জ্ঞান, তাদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বের হওয়া যুক্তি, তর্ক। আবার, বিজ্ঞানী মহলে যারা স্রষ্টা বিদ্বেষী রয়েছেন, তাদের বক্তব্যগুলোও একই রকমের অবাস্তব, বৈজ্ঞানিক পরিভাষার জালে লুকোনো ধোঁকাবাজি—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তারা উটের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? — আল-গাশিয়াহ পর্ব ২

তারা উটের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশকে কীভাবে উপরে ধরে রাখা হয়েছে? পাহাড়কে কীভাবে উঁচু করে গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে? ভূমিকে কীভাবে বিছানো হয়েছে?
সুতরাং, তুমি উপদেশ দিতে থাকো। তুমি শুধুই একজন উপদেশদাতা। জোর করে মানানো তোমার কাজ নয়। তবে যে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং অস্বীকার করবে, আল্লাহ তাকে ভীষণ শাস্তি দেবেন। এরা শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই ফিরে আসবে। আমিই তখন এদের কাছ থেকে সব হিসেব নেব।
— আল-গাশিয়াহ ১৭-২৬

সুরাহ গাশিয়াহ’য় আল্লাহ تعالى চারটি প্রশ্ন করেছেন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি দিতে গেলে অবস্থা হতো এরকম

“উটের দিকে তাকিয়ে দেখেছ, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?”
— না, দেখিনি।

“আকাশকে কীভাবে উপরে ধরে রাখা হয়েছে?”
— জ্বি না।

“পাহাড়কে কীভাবে উঁচু করে গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে?”
— না, দুঃখিত।

“ভূমিকে কীভাবে বিছানো হয়েছে?”
— না, কখনও ভাবিনি।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)