যখন সূর্য গুটিয়ে ফেলা হবে। যখন তারকাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে। যখন পর্বতমালাকে চলমান করা হবে। যখন পূর্ণ গর্ভবতী উটকে উপেক্ষা করা হবে। যখন বন্য পশুদের একসাথে করা হবে। যখন সাগরগুলো উত্তাল করে ফেলা হবে। যখন আত্মাকে জুড়ে দেওয়া হবে। যখন জীবন্ত পুতে ফেলা শিশু কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে: কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে? যখন আমলনামা প্রকাশ করা হবে। যখন আকাশের আবরণ তুলে ফেলা হবে। যখন জাহান্নামের তীব্র আগুনকে ভীষণভাবে প্রজ্বলিত করা হবে। যখন জান্নাতকে কাছে নিয়ে আসা হবে। তখন প্রত্যেকে জেনে যাবে: সে কী নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। —আত-তাকউইর ১-১৪
মহাবিশ্বের ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। সেদিন আমাদের উপরে আকাশে এবং আমাদের চারপাশে পৃথিবীতে এমন ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটবে যে, মানুষ সেদিন তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তির কথাও বেমালুম ভুলে গিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটতে থাকবে। আরবদের কাছে দশ মাসের গর্ভবতী উট, যার বাচ্চা দেওয়ার করার সময় হয়ে গেছে, তা ছিল সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, কারণ সেটি তাদেরকে আরেকটি মূল্যবান সম্পদ— একটি উটের বাচ্চা উপহার দিত এবং একই সাথে দুধ দিত। এধরনের উটকে তারা নিয়মিত সবরকম যত্ন নিত, নিরাপত্তার সবরকম ব্যবস্থা করতো, দিনরাত এই উটের চিন্তায় মশগুল থাকতো।
যেদিন মহাবিশ্বের ধ্বংস শুরু হয়ে যাবে, সেদিন সেই মূল্যবান সম্পদকে উপেক্ষা করে নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আজকের দিনে তুলনা করলে, মানুষ তার দামি গাড়ি, বাড়ি, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ফেলে পালাতে থাকবে—রাস্তায় পড়ে থাকবে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, আওডি। আলিশান বাড়ি, ফুল-ফলের বাগান দরজা খোলা অবস্থায় খালি পড়ে থাকবে। অনেক পরিশ্রমের অর্জন যেই মূল্যবান সম্পদগুলো, যেগুলোর চিন্তায় মানুষ দিনরাত মশগুল থাকতো, নিরাপত্তার সবরকম ব্যবস্থা নিত, নিয়মিত যত্ন নিত—সেদিন কেউ ফিরেও তাকাবে না সেগুলোর দিকে।
—এই ধরনের আয়াতের মধ্যে দিয়ে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বাস্তবতা শেখান। আমরা যেই সম্পদগুলো অর্জন করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করি, দুশ্চিন্তা করি, যেগুলোর যত্নের পেছনে সময় এবং অর্থ খরচ করি, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে তটস্থ থাকি —বাস্তবতা হলো যে, কিয়ামত শুরু হয়ে গেলে মুহূর্তের মধ্যে সেগুলোই আমাদের কাছে মূল্যহীন, ফালতু ব্যাপার হয়ে যাবে। তাহলে কেন আমরা কিয়ামতের আগে সেগুলোর পেছনে ছুটতে গিয়ে নিজেদেরকে শেষ করে দিচ্ছি? কেন আমরা এত সময়, অর্থ, চিন্তাশক্তি ব্যয় করছি সেগুলোর পেছনে? আমরা কি আমাদের সময়-সম্পদ-মেধা আরও বড় কিছু অর্জনে ব্যয় করতে পারি না?
অনেক মুসলিম কুরআনে এবং হাদিসে দুনিয়ার জীবনটাকে ক্ষণস্থায়ী, মূল্যহীন হিসেবে উপস্থাপন করা দেখে ধরে নেন যে, দুনিয়াতে কোনো কিছু পাওয়ার চেষ্টা করে লাভ নেই। দুনিয়াতে থাকবো গরিবী হালে। কোনোমতে তিন বেলা খাবার জুটলেই হলো। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নয়নে দিন-রাত পরিশ্রম করা অর্থহীন। এই দুনিয়াই যে কোনো সময় শেষ হয়ে যাবে। তাহলে এই দুনিয়ার জন্য কিছু করে কী লাভ? বিশেষ করে শেষ পারার সুরাহগুলোতে বার বার এই জগত ধ্বংস হয়ে যাওয়া, সবকিছু এত তুচ্ছ, মূল্যহীন হিসেবে উপস্থাপন করা দেখে অনেক মুসলিমই অবচেতনভাবে এই জীবনে কোনো কিছু পাওয়ার জন্য কোনো ধরনের চেষ্টা করার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে যান। ফলাফল হয় মুসলিম জাতির শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি সবদিক থেকে অন্য জাতিগুলোর থেকে পিছিয়ে পড়া এবং অন্য জাতিগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া।
তাহলে সমস্যা কোথায়? ইসলামের শিক্ষাই কি তাহলে মুসলিমদেরকে পৃথিবীতে সবচেয়ে পশ্চাৎপদ, পরনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত করেছে?
সমস্যা কুরআন সম্পর্কে আমাদের আংশিক ধারণা। পুরো কুরআন পড়লে আমরা দেখতাম: আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কুরআনে বহু জায়গায় বলেছেন যে, পৃথিবীতে মানুষ যেন চষে বেড়ায় আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে। মানুষ যেন সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তা করে। মানুষ যেন আবহাওয়া, পানি প্রবাহ, প্রকৃতির হাজারো প্রাণীর ডিজাইন এবং কাজ সম্পর্কে চিন্তা করে। মানুষ যেন আল্লাহর দেওয়া হালাল এবং উত্তম খাবার খায়। পুরো কুরআনে আমরা দু’শ এর বেশি আয়াত খুঁজে পাই, যেখানে আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করতে বলেছেন। বহু আয়াত পাই, যেখানে আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে দেওয়া সম্পদ সন্ধান করতে বলেছেন। যদি পৃথিবী এতটাই ক্ষণস্থায়ী, মূল্যহীন হয়, তাহলে এগুলো করতে বলে কী লাভ?
সমস্যা আমাদের বোঝায়। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে দুনিয়াতে সম্পদ, ক্ষমতা, সম্মান অর্জন করতে মানা করেননি। বরং সম্পদ অর্জন করতে গিয়ে নিয়ম-নীতি ভেঙ্গে ফেলা, অন্যের ক্ষতি করে হলেও সম্পদ অর্জন করা, পরিবারের ক্ষতি করা, সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখে অর্থনীতিতে অবদান না রাখা, অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করা, অভাবীদের সম্পদ দান না করা, অতিরিক্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে সম্পদ উজাড় করা —এসব করতে তিনি নিষেধ করেছেন।
আমরা ভুলে যাই আবু বকর (রা) ছিলেন সেই যুগের মিলিওনিয়ার। তার বিপুল সম্পত্তি মুসলিমদের যুদ্ধ করতে অর্থের যোগান দিয়েছে। তিনি তার অর্থ দিয়ে অভাবী, অসহায় মুসলিমদের অনেক সাহায্য করেছেন। উছমান (রা) ছিলেন সেই যুগের বিলিয়নিয়ার। তার সময়ে মুসলিম সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বেশি প্রসার ঘটে। তিনি তার বিপুল সম্পদ খরচ করেছেন ইসলামের প্রচার এবং প্রসারে। মুসলিমদের অনেক কঠিন সময়ে, দুর্ভিক্ষ, মহামারির সময়ে তাদেরকে অনেকভাবে সাহায্য করেছেন। আল্লাহ تعالى মুসলিম জাতিকে অত্যন্ত কঠিন সব সময়গুলোতে সাহায্য করেছেন কয়েকজন সম্পদশালী মুসলিমের মাধ্যমে। এই অত্যন্ত ধনি মুসলিমরা ইসলামের নিয়ম অনুসারে সম্পদের যথার্থ ব্যবহার করেছিলেন। এই বিপুল সম্পদ এমনিতেই তাদের কাছে আসেনি। এজন্য তাদেরকে যথেষ্ট সময় দিতে হয়েছিল, পরিশ্রম করতে হয়েছিল, বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে হয়েছিল। তারা ইবাদতের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনাও করেছিলেন।
যখন আত্মাকে জুড়ে দেওয়া হবে
সেদিন সকল মানুষ এবং জিনের আত্মাকে এক নতুন দেহের সাথে জুড়ে দেওয়া হবে, যেন তারা বিচার দিবসের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারে। আরেকটি অর্থ হলো— প্রত্যেককে একসাথে করা হবে, যারা তাদের মতো, তাদের সাথে— বিশ্বাসীরা থাকবে বিশ্বাসীদের সাথে। কাফিররা থাকবে কাফিরদের সাথে।[১৪][১৭][১৮] দুনিয়াতে মানুষ যাদের সাথে উঠবস করতো, নিজেদেরকে যে দলের মনে করতো, সেদিন তারা তাদের সাথেই একসাথে থাকবে। তাদের সবার পরিণতি হবে একই রকমের। সেদিন সৎ, নীতিবান, ধার্মিক, সম্মানিত মানুষেরা দাঁড়িয়ে থাকবেন না একপাল দুর্নীতিবাজ, ঠকবাজ, প্রতারকদেরকে মাঝখানে।
যখন জীবন্ত পুতে ফেলা শিশু কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে: কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?
জাহিলি যুগে আরবদের মধ্যে অনেক বর্বর প্রথা প্রচলিত ছিল। এরমধ্যে একটি জঘন্য প্রথা হলো— কন্যা সন্তানদেরকে তারা বোঝা মনে করতো এবং অনেক সময় তাদেরকে জীবন্ত পুঁতে ফেলত। এই কাজটা তারা দুইভাবে করতো— সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় হলে একটা গর্ত খুঁড়ত। যদি সন্তান মেয়ে হতো, তাহলে তাকে সেই গর্তে ফেলে মাটি চাপা দিত। অথবা, মেয়েকে তারা কিছুটা বড় হতে দিত যেন কিছু কাজকর্ম করানো যায়। তারপর একসময় মরুভূমিতে নিয়ে গিয়ে একটা গর্ত খুঁড়ে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসত।
এই অত্যন্ত জঘন্য কাজটা তারা নিজেদের কাছে শোভনীয় করেছিল এই ধারণা প্রচার করে যে, কন্যা সন্তানদের মেরে ফেললে তারা ফেরেশতা হয়ে যায়। তারা মনে করতো ফেরেশতারা হলো আল্লাহর تعالى কন্যা। তাই মেয়েদেরকে মেরে ফেলার মধ্যে দোষের কিছু নেই। তাদের মেয়ে ফেরেশতা হয়ে আল্লাহর تعالى কাছে ফিরে যাচ্ছে।[১৪] যদিও এই জঘন্য প্রথার বিরুদ্ধে সমাজের একটি অংশ বিরোধিতা করতো, কিছু কবিরা এই বর্বরতার বিরুদ্ধে কবিতা লিখে মানুষকে বোঝাতে চাইত, কিন্তু সিংহভাগ ছিল এই প্রথার পক্ষে।[১৪]
ইসলাম আসার পরে এই বর্বর প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। নারীদেরকে মায়ের সম্মান দেওয়া হয়। সম্পত্তির উত্তরাধিকার করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, রাজনীতি, সামাজিক কাজ, এমনকি যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করার সম্মান দেওয়া হয়। ইসলাম আসার পরে আরব জগতে নারীদের আর সমাজের বোঝা মনে করা হতো না। বরং তারা হয়ে গেলো সম্মানিত মায়ের জাতি, জান্নাতের চাবি।
কিন্তু ভারত এবং চায়নাতে এই জঘন্য প্রথা উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও প্রচলিত ছিল। ভারতে যত বংশ আছে, তাদের মধ্যে রাজপুত বংশ ছিল সবচেয়ে সম্মানিত বংশ। এই বংশের প্রথম সারিতে ছিল চুহান-রা। মাইনপুরি জেলায় প্রায় ত্রিশ হাজার এরকম রাজপুত পাওয়া গিয়েছিল। দেখা গেলো তাদের মধ্যে একজনও নারী নেই। প্রতিটি কন্যা সন্তানকে জন্ম নেওয়ার পর হত্যা করা হয়েছে। —এটা কোনো লোকমুখে প্রচলিত ঘটনা নয়। ১৮৫৬ সালে বিশেষ তদন্তের মাধ্যমে এই তথ্য বেরিয়ে আসে।[১০]
কন্যা সন্তানদের জীবন্ত হত্যা শুধু রাজপুত-দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আগ্রা, ঔধ, পাঞ্জাবে, এমনকি বোম্বে-এর কিছু এলাকাতেও এই জঘন্য প্রথা চলছিল। বহু গ্রাম ঘুরে দেখা গেলো, স্মরণকালে কোনো মেয়েকে সেখানে দেখা যায়নি।[১০]
চায়নাতে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতেও কন্যা সন্তানদের নদীতে ফেলে, ময়লার স্তূপে ফেলে, অথবা গাছের নিচে ফেলে রেখে এসে মেরে ফেলা হতো। অনেক সময় বাচ্চারা দুই-তিন দিন পর্যন্ত বেঁচে থেকে চিৎকার করতে করতে একসময় মারা যেত।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে শিক্ষা, প্রযুক্তির এত উন্নতি হওয়ার পরেও এই জঘন্য মানসিকতার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। প্রতি বছর ভারতে প্রায় ছয় লাখ কন্যা-শিশু এখনো হত্যা করা হচ্ছে। ভ্রূণ হত্যা করার বিরাট চক্র সারা ভারতে কাজ করে যাচ্ছে। আইনত নিষিদ্ধ থাকার পরেও লাভ হচ্ছে না। গোপনে আলট্রাসাউন্ড করে বাচ্চার লিঙ্গ জানার পরে গর্ভপাতের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে। যদিও কিনা ভারতে আলট্রাসাউন্ড করে বাচ্চার লিঙ্গ জানাটাই আইনত নিষিদ্ধ! —কন্যা-শিশু হত্যার মূল কারণ হচ্ছে আরেকটি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি— যৌতুক প্রথা। যৌতুকের ভয়েই মানুষ বাধ্য হচ্ছে কন্যা-সন্তানকে হত্যা করতে।[৪৪১]
“যখন জীবন্ত পুতে ফেলা শিশু কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে: কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?” — এই আয়াতে আল্লাহর ভীষণ রাগ ফুটে উঠেছে। হত্যাকারী বাবা-মা’কে সুযোগ দেওয়া হবে না সাফাই গাওয়ার: কেন তারা তাদের শিশুকে হত্যা করেছে? বরং সেই বিচার দিনের আদালতে সবচেয়ে দুর্বল, অসহায়কে — নির্মমভাবে হত্যা করা শিশুকেই সুযোগ দেওয়া হবে ন্যায়বিচার চাওয়ার— কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?
যখন আমলনামা প্রকাশ করা হবে
আমাদের হিসেবের বই নুশিরাত نشرت অর্থাৎ বিস্তৃত করে উপস্থাপন করা হবে। একজন মানুষের জীবনের হিসেব কোনো ছোট ব্যাপার নয়। এতে খুঁটিনাটি সব কিছুই লেখা থাকে। সেই বিশাল রেকর্ড বিস্তৃত করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
যখন হিসেবের খাতা এনে রাখা হবে , তুমি দেখবে অপরাধীরা ভয় পেয়ে গেছে , সেখানে কী লেখা আছে দেখে । তারা হায় হায় করে উঠবে , “ কী সর্বনাশ ! এটা কী বই ! এখানে দেখি খুঁটিনাটি সবকিছুই আছে ! কিছুই বাদ নেই !” তারা যা কিছু করে এসেছে , তার সব সেখানে উপস্থিত পাবে । তোমার রব বিন্দুমাত্র অন্যায় করেন না । — আল – কাহফ ৪৯
যখন আকাশের আবরণ তুলে ফেলা হবে
কুশিতাত كشطت অর্থ চামড়া তুলে ফেলা, যেন ভেতরে কি আছে দেখা যায়। আকাশের উপরের আবরণ যেন চামড়া তুলে ফেলার মতো ছিলে ফেলা হবে। আকাশের রং গোলাপের মতো লাল হয়ে যাবে। আমরা তখন দেখতে পাবো আকাশের বাইরে অন্য জগতে কী আছে।[১৪]
না! আমি শপথ করছি লুকিয়ে পড়া নক্ষত্রের। যা চলতে চলতে অদৃশ্য হয়ে যায়। শপথ করছি রাতের, যখন তা শেষ হয়ে যায়। শপথ ভোরের যখন তা শ্বাস নিয়ে জেগে ওঠে। নিঃসন্দেহে এটা অবশ্যই এক সম্মানিত বার্তাবাহকের নিয়ে আসা বাণী —শক্তিশালী এক সত্তার, আরশের মালিকের কাছে সে সম্মানিত, সেখানে অন্যেরা তাকে মানে, অত্যন্ত বিশ্বস্ত সে। তোমাদের সাথী উম্মাদ নন। তিনি তো তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন। তিনি অদৃশ্যর-বাণী প্রচারে কৃপণতা করেন না। এটা কখনোই অভিশপ্ত শয়তানের কথা হতে পারে না। —আত-তাকউইর ১৫-২৫
আরবিতে তিলাওয়াত করলে এই আয়াতগুলোর ভেতরে যে অসাধারণ কাব্যিক ছন্দ আছে, তা উপলব্ধি করা যায়। গভীর অর্থবোধক কিছু শব্দের মাধ্যমে আল্লাহ تعالى আমাদের চারপাশের জগতের চমৎকার কিছু ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
লুকিয়ে পড়া নক্ষত্র — আকাশে কিছু নক্ষত্র রয়েছে যেগুলো পিছিয়ে যায়। অনেকে বলেন এগুলো আসলে তারা নয়, এগুলো হচ্ছে সৌরজগতের গ্রহগুলো — শনি, বৃহস্পতি, শুক্র ও বুধ। এগুলো রাতের আকাশে একদিকে চলতে চলতে, আবার অন্য দিকে চলা শুরু করে। এমনটা হয় পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে।[১৭] আবার অনেকে বলেন এগুলো হচ্ছে নক্ষত্র চলতে চলতে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। ব্ল্যাকহোল যখন নক্ষত্রকে খেয়ে ফেলে অদৃশ্য করে দেয়, এখানে যেন সেই ভয়ংকর ঘটনার শপথ করা হয়েছে।[১৭]
একসময় রাত শেষ হয়ে যায়। ভোর ঘুম থেকে জেগে ওঠে শ্বাস নেয়। ভোরকে যেন রাত আবরণে ঢেকে রেখেছিল। ভোর ছটফট করছিল দম নেওয়ার জন্য। রাত সরে গেলেই তা দম নিয়ে জেগে ওঠে।
নিঃসন্দেহে এটা অবশ্যই এক সম্মানিত বার্তাবাহকের নিয়ে আসা বাণী —শক্তিশালী এক সত্তার, আরশের মালিকের কাছে সে সম্মানিত, সেখানে অন্যেরা তাকে মানে, অত্যন্ত বিশ্বস্ত সে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে একজন অতিপ্রাকৃত সত্তা উচ্চমাত্রার জগত থেকে রওনা হয়েছেন নিচে মহাবিশ্বের দিকে। তার গন্তব্য ছায়াপথের বাইরের দিকে সূর্য নামের একটি বিশেষ নক্ষত্রের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবী। এই গ্রহে বস্তুর তৈরি একধরনের বুদ্ধিমান প্রাণীরা মারামারি, খুনাখুনি, নৈতিকভাবে জঘন্য সব কাজ করে নিজেদেরকে শেষ করে ফেলছে। তাদেরকে সংশোধন করার জন্য সর্বপ্রধানের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী এসেছে, যা তিনি নিয়ে যাচ্ছেন সেই বুদ্ধিমান প্রাণী ‘মানবজাতি’র বিশেষ একজনের কাছে পৌঁছে দিতে।
কিন্তু সেই গ্রহে আরেক ধরনের শক্তিশালী বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে, যারা শক্তির তৈরি। এদের অনেকে নিজেদেরকে মাটির তৈরি প্রাণীদের থেকে উঁচু পর্যায়ের মনে করে। এরা চায় না সেই বাণী মানুষ নামের ‘নিচুস্তরের’ প্রাণীদের কাছে পৌঁছাক। হাজার বছর ধরে তারা নানাভাবে মানুষকে প্রতারিত করেছে, ভুল পথে নিয়ে গেছে। মানবজাতিকে শেষ করে দেওয়া তাদের উদ্দেশ্য।
জিন নামের শক্তির তৈরি এই প্রাণীদের মধ্যে আবার একজন আছে, যে ভয়ঙ্কর। তার নাম ইবলিস। সে একসময় এতটাই উপরে উঠে গিয়েছিল যে, এই সন্মানিত সত্তার মতো সেও একসময় মহান স্রষ্টার সাথে কথা বলতে পারত। অনেক কাল আগে সে স্রষ্টার সাথে এক ভয়ঙ্কর বেয়াদবি করে উপরের জগত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তখন সে স্রষ্টার কাছ থেকে অমরত্ব চেয়ে নিয়েছিল, যেন সে মানবজাতিকে সারা জীবন ভুল পথে তাড়িয়ে নিতে পারে। সে কোনোভাবেই চায় না মানুষের জন্য ভালো কিছু হোক। তাই সে তার বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত। যেভাবেই হোক মানুষের কাছে এই বাণী পৌঁছানো আটকাতে হবে। আর পৌঁছে গেলেও, সেটা যেন মানুষের মধ্যে প্রচার না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
ওদিকে সর্বপ্রধানের নির্দেশে সেই সম্মানিত বার্তাবাহক যাত্রা শুরু করলেন পৃথিবীর দিকে। তার সামনে-পিছনে মহাবিশ্বে বিপুল পাহারাদার বাহিনী দাঁড়িয়ে গেল। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনি পৃথিবীতে এসে পৌঁছালেন। ইবলিসের বাহিনী তার প্রচণ্ড ক্ষমতার কাছে কিছুই না। তিনি আরও উচ্চতর শক্তির তৈরি। সর্বপ্রধান নিজে তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। সৃষ্টিজগতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই, যে এই গুরু দায়িত্ব তাঁর থেকে ভালোভাবে পালন করতে পারে। ইবলিস এবং তার বাহিনী হাজার চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারল না। তিনি সেই বিশেষ মানুষটির কাছে স্রষ্টার বাণী পৌঁছে দিলেন।
এই সন্মানিত সত্তার নাম জিবরাইল। তিনি বহুবার পৃথিবীতে এসে নবীদের عليه السلام কাছে মহান আল্লাহর تعالى বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। মানবজাতিকে আল্লাহর تعالى বাণী পৌঁছে দেওয়াতে সামান্য কোনো ত্রুটি হলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। কু’রআনের বাণীর একটা আয়াত এদিক ওদিক হলে বিরাট ভুল বোঝাবুঝি হবে। একারণে দরকার তার মতো প্রচণ্ড শক্তিশালী, বুদ্ধিমান সত্তা, যার উপস্থিতিতে অন্য কোনো অশুভ সৃষ্টি এসে কোনো ধরনের সমস্যা করতে পারবে না।
তোমাদের সাথী উম্মাদ নন। তিনি তো তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন।
একদিন একজন উম্মাদ এসে দেশের নেতাদের বলা শুরু করলো, “সৃষ্টিকর্তা এক, অদ্বিতীয়। আপনারা যেসব জিনিসের দাসত্ব করছেন, যাদের কথায় উঠবস করছেন, সব বাতিল। এগুলো এখনি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করুন। অন্যায়ভাবে অন্যের টাকা আত্মসাৎ করা বন্ধ করুন। নারীদের অধিকার নিশ্চিত করুন। দেশ ও দশের উন্নয়নে অর্থ দান করুন। দেশের সকল মানুষকে সমান অধিকার দিন। আপনারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। আপনাদের সবাইকে সমান শাস্তি পেতে হবে। শিশু-কন্যা হত্যা নিষিদ্ধ। ব্যাভিচার করলে চরম শাস্তি দেওয়া হবে। চুরি করলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। প্রতিবছর বাধ্যতামূলকভাবে আপনাদের সম্পদের একটি অংশ দান করতে হবে, না হলে শাস্তি দেওয়া হবে। মদ, জুয়া, নষ্ট বিনোদন সব নিষিদ্ধ। আমাকে স্রস্টা এই নির্দেশ পাঠিয়েছেন একজন ফেরেশতার মাধ্যমে।” — সত্যিই যদি কেউ এসে শুধু মুখের কথাই না, একটি সংগঠন তৈরি করে এগুলো বাস্তবায়ন করতে দিন-রাত সংগ্রাম করতে থাকে, হাজারো প্রতিরোধ এবং অত্যাচারের সামনেও নতি স্বীকার না করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায় —এধরনের মানুষকে যে উম্মাদ বলবে, তার নিজের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। কারণ, কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি একইসাথে সত্যবাদী, নিষ্ঠাবান, উদার, কর্মঠ, অন্যায়ের প্রতি আপোষহীন, মানুষের সুখ-দুঃখে সমব্যাথি, বুদ্ধিমান, নেতৃত্বের গুণে গুণান্বিত, চারিত্রিকভাবে নিষ্কলঙ্ক হয় না। যার মধ্যে এই সব গুণ একসাথে বিরাজমান, সে আর যাই হোক, কোনো সাধারণ মানুষ নয়। তাকে একমাত্র উম্মাদরাই উম্মাদ মনে করবে।
তিনি অদৃশ্যর-বাণী প্রচারে কৃপণতা করেন না। এটা কখনোই অভিশপ্ত শয়তানের কথা হতে পারে না।
যারা জিন ডেকে, ঝাড়ফুঁক করে, গায়েবি তথ্য বের করে, তারা আর যাই হোক, বিনামূল্যে সেবা দিয়ে বেড়ায় না। এটাই তাদের ব্যবসা। নানা ধরনের নাটক করে, আবোলতাবোল কথার মালা সাজিয়ে, তাদের কাছে গায়েবি তথ্য আছে বলে প্রচার করে। তারপর অর্থের বিনিময়ে একটু একটু করে তা প্রকাশ করে। যত জটিল কাজ, তত বেশি চার্জ।
কিন্তু রাসুল عليه السلام কখনো তার কাজের জন্য কারো কাছে সম্মানী দাবি করেননি। তিনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যেই গায়েবি তথ্য মানুষের কাছে প্রচার করে গেছেন, তাতে মানুষের কল্যাণ চাওয়া ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য ছিল বলে কেউ দাবি করতে পারবে না। তাহলে কীভাবে তা শয়তানের কথা হতে পারে?
ইসলামে পুরুষ এবং নারীদের যে পর্যায়ের শালীনতা অবলম্বন করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা পৃথিবীর যে কোনো ধর্মীয় নীতি এবং সংস্কৃতির থেকে বেশি শালীন। অপরদিকে শয়তানের কাজই হচ্ছে নগ্নতার প্রচার এবং প্রসার করা। ইসলামে ব্যভিচার কঠিনভাবে নিষিদ্ধ, চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর শয়তান ব্যাভিচার সহ যতধরনের অসুস্থ বিনোদনের উৎসব করায়। ইসলামে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ, আর শয়তান মদ-জুয়ার আসর বসায়। ইসলামে রক্ত এবং শুকর খাওয়া নিষিদ্ধ। ওদিকে শয়তান পূজারিরা তাদের উৎসব করে গরু এবং শুকরের রক্ত পান করে। —পৃথিবীতে যদি কোনো বিশ্বাস, রীতিনীতি থেকে থাকে যা শয়তানের ধ্যান-ধারণা-পরিকল্পনার সবচেয়ে বিপরীত এবং বিরোধী, তাহলে সেটা হবে ইসলাম। কীভাবে তাহলে ইসলাম শয়তানের কথা হতে পারে? শয়তান নিশ্চয়ই কাউকে দিয়ে শয়তানি বন্ধ করার জন্য প্রচার করাবে না?
তাহলে কোথায় যাচ্ছ তোমরা? এটা তো বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ মাত্র। তোমাদের মধ্যে যে সঠিক পথে চলতে চায়, শুধু তাদের জন্য। আর তোমরা ইচ্ছা করতে পারো না, যদি না বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছা না করেন। — আত-তাকউইর ২৬-২৯
অনেকেই প্রশ্ন করেন, “আল্লাহ ইচ্ছা না করলে যদি আমি ইচ্ছা না-ই করতে পারি, তাহলে আমার কী দোষ? আমি ভালো কিছু করতে না পারলে তো সেটা আল্লাহর ইচ্ছার অভাব? আমি কোনো অন্যায় করলে তো সেটা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হলো? তাহলে আমাকে কেন আমার ভুলের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে? আর আমি যদি ভালো কিছু করিও, সেটা তো আল্লাহরই ইচ্ছে? তাহলে আমাকে পুরস্কার দিয়েই বা কী লাভ?” ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়, ক্বদর কী —এনিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির শেষ নেই।
ক্বদর সম্পর্কে যুক্তি দিয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে কোনো ধরণের ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব না। কারণ যেই ব্যাখ্যাই মানুষ দাঁড় করাতে যাবে, দেখা যাবে যে, হয় সেই ব্যাখ্যা দাবি করছে যে, মানুষ তার ইচ্ছা অনুসারে ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে, যা আল্লাহ تعالى আগে থেকে জানতেন না। অথবা মানুষের কোনো ইচ্ছাই নেই, আল্লাহ تعالى আগে থেকেই সব কিছু নির্ধারণ করে রেখেছেন, যেহেতু তিনি আগে থেকেই সব জানেন এবং তার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়। —এই দুই পরিণাম ছাড়া আর কোনো পরিণামে শুধু যুক্তি ব্যবহার করে পৌঁছানো যায় না।
একারণে ক্বদর হচ্ছে বিশ্বাসের ব্যাপার। আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আমি কী সিদ্ধান্ত নেব, সেটা আল্লাহ تعالى আগে থেকেই জানেন, কিন্তু একই সাথে আমার সিদ্ধান্ত আমি নেই এবং সে জন্য আমি দায়ী। —এই কথাটা অযৌক্তিক বা স্ববিরোধী মনে হতে পারে। একারণেই এটা বিশ্বাসের ব্যাপার।
কিন্তু কেন আমাদেরকে অযৌক্তিক ব্যাপার বিশ্বাস করতে হবে? বিজ্ঞানে কোনো অযৌক্তিক ব্যাপার নেই। তাহলে ধর্মের মধ্যে কেন অযৌক্তিক ব্যাপার?
সত্যিই কি বিজ্ঞানে কোনো অযৌক্তিক, অবাস্তব ব্যাপার নেই? কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে একটি পরমাণু একই সময় দুই জায়গায় থাকতে পারে। এটা শুধু কোনো তত্ত্ব নয়, গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে, একটি পরমাণু একই সময় প্রায় দুই ফুট দূরত্বে দুটো জায়গায় ছিল। অনেকটা এমন যে, আপনার হাতে যেই বলটা আছে, সেটা একই সময় আমার হাতেও আছে। আপনি বলটাতে লাথি মারলে আমার বলটাতেও লাথি লাগে। —যতই অযৌক্তিক, অবাস্তব শোনাক না কেন, পরমাণুর জগতে এই ধরণের ঘটনা ঘটে।
কোয়ান্টাম ফিজিক্স নামে ফিজিক্সের পুরো একটি শাখা রয়েছে, যার কাজ হচ্ছে এই সব অযৌক্তিক, অবাস্তব ঘটনা নিয়ে কাজ করা। আমাদের চারপাশের জগত আপাতত দৃষ্টিতে দেখে যতই যৌক্তিক এবং বাস্তব মনে হোক না কেন, যখনি আমরা পরমাণুর অতিক্ষুদ্র জগতে চলে যাই, আমরা দেখতে পাই যে, মহাবিশ্বে বহু অযৌক্তিক, অবাস্তব ঘটনা ঘটে, যেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।[৪০১][৪০২]
সুতরাং, আমাদের কাছে কিছু একটা অবাস্তব মনে হওয়া মানেই সেটা মিথ্যা নয়, বরং সেটা মানুষের চিন্তার সীমা। এই সীমার বাইরে কোনো কিছু মানুষ হাজার চেষ্টা করলেও বুঝতে পারে না। যেমন, ‘সময়’ কী, সেটা আমরা জানি না। বিজ্ঞানীরা এবং দার্শনিকরা হাজার চেষ্টা করেও সময়ের সংজ্ঞায় একমত হতে পারেননি। মহাবিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ‘সময়’ সম্পর্কেই মানুষের কোনো ধারনা নেই। সময়ের বাইরে কোনো কিছু মানুষ ধারনাই করতে পারে না। আমাদের ভাষায় অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে শব্দ আছে। কিন্তু সময়ের বাইরে কোনো কিছু বোঝানোর জন্য কোনো শব্দ নেই, কারণ আমরা সেটা ধারনাই করতে পারি না।
শুধু তাই না, মহাবিশ্বের অন্যতম প্রাথমিক ব্যাপারগুলো, যেমন অভিকর্ষ এবং শক্তি —এগুলো আসলে কী, তা কেউ বলতে পারে না। আমরা এগুলোর প্রভাব দেখতে পাই, এদেরকে যন্ত্রে পরিমাপ করতে পারি। কিন্তু আসলে অভিকর্ষ কী, কীভাবে এটি তৈরি হয়, কীসের কারণে অভিকর্ষ বল হয়, তা কেউ জানে না। আমাদের সৃষ্টিজগতের মূল তিনটি বিষয়— সময়, অভিকর্ষ এবং শক্তি—এগুলো আসলে কী, তার কোনো সর্বজনগৃহীত ব্যাখ্যা মানুষের কাছে নেই!
পুরো বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে মৌলিক কিছু বিশ্বাসের উপরে। তাহলে ধর্ম কেন বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না?
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্শাফ। [৪৪১] BBC Bangla. “ভারতে কন্যা শিশু কেন এত অনাকাঙ্ক্ষিত?” https://www.bbc.com/bengali/news-39550841
আলহামদুলিল্লাহ। অসাধারণ । আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। সব সময় ফোনে নোটিফিকেশন অন করে রাখি যাতে কুরআনের কথার আর্টিকেল পেতে পারি ।
মাশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বোধ দান করুন। আমিন।