যারা নেওয়ার সময় ঠিকই কানাকড়ি বুঝে নেয় — আল-মুতাফফিফিন

ঠকবাজেরা সব শেষ হয়ে যাক। যারা নেওয়ার সময় ঠিকই কানাকড়ি পর্যন্ত বুঝে নেয়, কিন্তু যখন অন্যকে পরিমাপ বা ওজন করে দেয়, তখন ফাঁকি দিয়ে কম দেয়। এরা কি মনে করে যে, এদেরকে আর ওঠানো হবে না? এক কঠিন দিনে? যেদিন সব মানুষ দাঁড়াবে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের সামনে? — আল-মুতাফফিফিন ১-৬

মুতাফ্‌ফিফিন হচ্ছে যারা অন্যকে কিছু দেওয়ার সময় এদিক-ওদিক একটু কম দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু নিজে নেওয়ার সময় ঠিকই কানাকড়ি পর্যন্ত বুঝে নেয়। কিছু উদাহরণ দেই—

চৌধুরী সাহেব ফল দামাদামি করছেন। বিক্রেতা দামে রাজি হয়ে তাকে প্যাকেট করে দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু দেখা গেলো একটা ফল একটু বেশি-পাকা, একটু দাগ বেশি। তিনি নাছোড় বান্দা। তাকে সবগুলো তরতাজা ফল দিতে হবে, একটাও বেশি-পাকা হওয়া যাবে না। চৌধুরী সাহেবের হম্বিতম্বি শুনে বিক্রেতা জলদি পাশের বিক্রেতার কাছ থেকে তরতাজা একটা ফল এনে দিলেন। তারপরও চৌধুরী সাহেব দাম পরিশোধ করার সময় কিছু কম দিলেন। ফলবিক্রেতা পুরো দাম দিতে অনুরোধ করলে তিনি—“পরে দিবো নে, এখন ভাংতি নাই”—বলে হাটা দিলেন। তার পরবর্তী শিকার সবজি বিক্রেতা… —এই হচ্ছে একজন মুতাফ্‌ফিফ। নিজে নেওয়ার সময় কোনো ছাড় দেবে না, কিন্তু কাউকে দেওয়ার সময় একটু হলেও ফাঁকি দেবেই।

হাসান সাহেব ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে প্রতিদিন বাসা থেকে দেরি করে বের হন। তারপর অফিসে নয়টার পরিবর্তে সাড়ে নয়টায় পৌঁছে ক্লান্ত চেহারা বানিয়ে বলেন, “দেশটা আর বসবাসের যোগ্য নেই। জ্যামে পড়ে জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।…” —অফিসে দুপুরে আধা ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। দেড়টার সময় তার ডেস্কে ফিরে আসার কথা। কিন্তু তিনি সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে আগে-পিছে সুন্নত, নফলসহ যুহরের নামাজ পড়ে, তারপর আরও আধাঘণ্টা ধরে আয়েশ করে দুপুরের খাবার এবং চা খেয়ে, ধীরে সুস্থে দুইটার দিকে ডেস্কে ফিরে যান। প্রতিদিন তিনি ঘণ্টাখানেক কম্পিউটারে এবং মোবাইলে বিনোদন করেন, ব্যক্তিগত কাজ করেন। তারপর ঘড়িতে পাঁচটা বাজলেই তিনি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি। —এই হচ্ছেন আরেকজন মুতাফ্‌ফিফ। কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে যতটুকু ফাঁকি দেওয়া যায়, তা দেবে, কিন্তু মাস শেষে নিজের পাওনা বুঝে নেওয়ার সময় কখনো গিয়ে বলবে না যে, তাকে বেতন কিছু কম দেওয়া হোক, কারণ সে চুক্তি অনুসারে পুরোপুরি কাজ করেনি।

দরজায় কড়া নাড়ছে। দরজা খুলে দেখলেন প্রতিবেশী ভাবি একটি বাটি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি লজ্জিত মুখে বললেন, “ভাবি, কিছু মনে করবেন না। আমার লবণ শেষ হয়ে গেছে। রান্না করতে পারছি না। আমাকে এই বাটিতে একটু লবণ ভরে দেবেন? আমি কালকেই আপনাকে ফেরত দেবো।” আপনি তাকে বাটি ভরে লবণ দিলেন। তারপর, পরের সপ্তাহে প্রতিবেশী ভাবি লবণ কিনে এনে সেই বাটিতে ভরছেন আপনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভরার পর তিনি দেখলেন যে, তার লবণের প্যাকেট প্রায় অর্ধেক শেষ। তার ভেতরটা কেমন খচ্‌ করে উঠল। এতগুলো লবণ চলে যাচ্ছে! আগামী সপ্তাহেই আবার লবণ কিনতে হবে। তখন তিনি কয়েক চামচ লবণ তুলে রেখে আপনাকে ফেরত দিয়ে গেলেন। আপনি ধরতে পারলেন না, কিন্তু আপনার মনে একটা ক্ষীণ সন্দেহ হলো যে, গত মাসে তেল ফেরত দেওয়ার সময় বোতলটা সম্ভবত অর্ধেক ভরা ছিল, তার আগের মাসে মসলার কৌটাটাও মনে হয় অর্ধেক ভরা ছিল, তার আগের মাসে ঝাড়ুটা …  —এই প্রতিবেশী ভাবি হচ্ছেন একজন মুতাফফিফ। দেওয়ার সময় ন্যায্য পরিমাণ দিতে গেলেই তার মন খচ্‌খচ্‌ শুরু হয়ে যায়।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)