একমাত্র চরম অবাধ্যরাই এটা অস্বীকার করবে — আল-বাক্বারাহ ৯৯

চৌধুরী সাহেব একজন স্বঘোষিত নাস্তিক। তিনি একসময় কু’রআনের ‘ভুল’ নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। নবীদেরকে عليه السلام নিয়ে অনেক অপমানজনক কৌতুক করেছেন। তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, মানুষকে সস্তা আনন্দ দেওয়া এবং ফেইসবুকে লাইক পাওয়ার জন্য অনেক উক্তি দিয়েছেন। কিন্তু একসময় গিয়ে চৌধুরী সাহেব বুঝতে পারলেন: তার যুক্তি এবং চিন্তা ভাবনায় বেশ কিছু ভুল আছে। তিনি কু’রআন নিয়ে যতই পড়াশুনা করেন, ততই ধাক্কা খান। তিনি এখন আর আগের মতো “কু’রআন মানুষের বানানো বই”, “স্রস্টা বলে আসলে কেউ নেই”, “নবীরা সব মানসিক ভারসাম্যহীন হেলুসিনেশনে ভোগা মানুষ” — এইসব উলটোপালটা কথা নিজেকে ঠিক আর মানাতে পারছেন না। কিন্তু সমস্যা হলো তিনি যদি তার কথাবার্তা এবং লেখায় এইসব প্রকাশ করে ফেলেন, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তার নাস্তিক বন্ধুরা, যাদের সাথে তিনি ওঠা বসা করেন, যারা তাকে তার ‘জ্ঞানের’ জন্য অনেক সন্মান করে, যারা তার কথা শোনার জন্য তাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে ফ্রি কফি খাওয়ায় —তারা তখন তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুরু করবে। ফেইসবুকে তার এত বিখ্যাত একাউন্ট, তিন হাজার মুরিদ (ফলোয়ার) তাকে থুথু দিবে। না, এটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। তিনি নিজেকে বোঝান: “না! আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। কু’রআন সম্পর্কে কিছু ভালো ভালো কথা পড়ে আমি আমার অবস্থান থেকে নড়তে পারি না। আজকে থেকে এই সব বই পড়া বন্ধ। রিচারড ডকিন্স, এন্থনি ফ্লিউ, রবার্ট ব্রাউন এদের বই আবার রিভিশন দিতে হবে। মনের জোর ফিরে পাওয়া দরকার।”

এই ধরনের চরম অবাধ্যদের সম্পর্কে আল্লাহ تعالى বলেছেন—

2_99

আমি অবশ্যই তোমাকে একদম পরিষ্কার বাণী দিয়েছিলাম। একমাত্র চরম অবাধ্যরাই এটা অস্বীকার করবে। [আল-বাক্বারাহ ৯৯]

aurora

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

কেউ যদি জিবরাইলের শত্রু হয় — আল-বাক্বারাহ ৯৭-৯৮

একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে একজন সন্মানিত সত্তা উপরের মহাজগত থেকে রওনা হয়েছেন নিচে মহাবিশ্বের দিকে। তার গন্তব্য ছায়াপথের বাইরের দিকে সূর্য নামের একটি বিশেষ নক্ষত্রের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবী। এই গ্রহে মাটি থেকে তৈরি বুদ্ধিমান প্রাণীরা মারামারি, খুনাখুনি, নৈতিকভাবে জঘন্য সব কাজ করে নিজেদেরকে শেষ করে ফেলছে। তাদেরকে সংশোধন করার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতাবানের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী এসেছে, যা তিনি নিয়ে যাচ্ছেন সেই বুদ্ধিমান প্রাণী ‘মানবজাতি’র বিশেষ একজনের কাছে পৌঁছে দিতে।

কিন্তু সেই গ্রহে আরেক ধরনের শক্তিশালী বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে, যারা শক্তির তৈরি। এদের অনেকে নিজেদেরকে মাটির তৈরি প্রাণীদের থেকে উঁচু পর্যায়ের মনে করে। এরা চায় না সেই বাণী মানুষ নামের ‘নিচুস্তরের’ প্রাণীদের কাছে পৌঁছাক। হাজার বছর ধরে তারা নানা ভাবে মানুষকে প্রতারিত করেছে, ভুল পথে নিয়ে গেছে। মানব জাতিকে শেষ করে দেওয়া তাদের উদ্দেশ্য।

জিন নামের শক্তির তৈরি এই প্রাণীদের মধ্যে আবার একজন আছে, যে ভয়ঙ্কর। তার নাম ইবলিস। সে একসময় এতটাই উপরে উঠে গিয়েছিল যে, এই সন্মানিত সত্তার মতো সেও একসময় মহান স্রষ্টার সাথে কথা বলতে পারত। অনেক কাল আগে সে স্রষ্টার সাথে এক ভয়ঙ্কর বেয়াদবি করে উপরের জগত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তখন সে স্রষ্টার কাছ থেকে অমরত্ব চেয়ে নিয়েছিল, যেন সে মানবজাতিকে সারা জীবন ভুল পথে তাড়িয়ে নিতে পারে। সে কোনোভাবেই চায় না মানুষের জন্য ভালো কিছু হোক। তাই সে তার বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত। যেভাবেই হোক মানুষের কাছে এই বাণী পৌঁছানো আটকাতে হবে। আর পৌঁছে গেলেও, সেটা যেন মানুষের মধ্যে প্রচার না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

সেই সন্মানিত সত্তা পৃথিবীতে এসে পৌঁছালেন। ইবলিস এবং তার বাহিনীর ব্যাপারে তিনি মোটেও চিন্তিত নন, কারণ তার প্রচণ্ড ক্ষমতার কাছে ওরা কিছুই না। তিনি আরও উচ্চতর শক্তির তৈরি। সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান মহান স্রষ্টা নিজে তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। সৃষ্টিজগতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই, যে এই গুরু দায়িত্ব তাঁর থেকে ভালো ভাবে পালন করতে পারে। ইবলিস এবং তার বাহিনী হাজার চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারল না। তিনি সেই বিশেষ মানুষটির কাছে স্রষ্টার বাণী পৌঁছে দিলেন।

এই সন্মানিত সত্তার নাম জিবরাইল। তিনি বহুবার পৃথিবীতে এসে নবীদের عليه السلام কাছে মহান আল্লাহর تعالى বাণী পৌঁছে দিয়েছেন—

2_97

বলে দাও, “কেউ যদি জিবরাইলের শত্রু হয় —যে কিনা নিঃসন্দেহে আল্লাহর অনুমতিতে কু’রআনকে নিয়ে এসেছে তোমার অন্তরে, এর আগে যা এসেছিল তাকে সত্যায়িত করে —যা একটি পথনির্দেশ এবং বিশ্বাসীদের জন্য সুসংবাদ।” [আল-বাক্বারাহ ৯৭]

cloud light 2

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

দেখবে, এরা তাদের জীবনটাকে অন্য সবার থেকে বেশি কামড়ে ধরে থাকতে চায় — আল-বাক্বারাহ ৯৪-৯৬

আজকে যদি আমাকে ডাক্তার বলে: আপনার রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং আপনি আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মারা যাবেন, সিঙ্গাপুরে গিয়েও লাভ হবে না—আমি তখন কী করব? আমি কি তখন কাঁথা জড়িয়ে টিভির সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফালতু তারকা শো, টক শো, হিন্দি সিরিয়াল দেখব? আমি কি পরদিন অফিসে গিয়ে কলিগদের সাথে শেষ বারের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারব? আমি কি আমার ছেলেমেয়েকে শেষ বারের মতো একটু খুশি করার জন্য ভিডিও গেম কিনে দেব, যেখানে তারা রামদা-ছুরি নিয়ে একপাল অর্ধ মৃত, রক্তাক্ত জম্বিকে মেরে কোনো এক বিকৃত কারণে বড়ই আনন্দ পায়? আমি কি এই অবস্থায় আমার মেয়েকে নৃত্য শিল্পী বানাব, ছেলেকে ব্যান্ডের দলে যোগ দেওয়াব, যেন তারা সেগুলো করে আমার মৃত্যুর পরে আমার জন্য ‘অশেষ সওয়াব’ অর্জন করে?

না, আমরা তখন এগুলোর কিছুই করব না, কারণ জীবনের শেষ দিনগুলি এভাবে নষ্ট করার মতো বোকামি আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু আজকে আমরা ঠিকই সেগুলো করে যাচ্ছি এটা ভালো করে জেনে যে: আমরা আজকে হোক, কালকে হোক, একদিন না একদিন মারা যাবই। তারপর একসময় আমাদেরকে আবার জাগিয়ে তোলা হবে এবং তারপর আমাদেরকে ধরে নিয়ে বিশ্বজগতের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবানের সামনে দাঁড় করানো হবে: আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তের হিসাব দেওয়ার জন্য। সেদিন তাঁর সামনে মাথা নিচু করে আমরা তাঁকে কী বলব—সেটা ঠিক করে রেখেছি কি?

কোনো কারণে আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে চাই না। এরকম চিন্তা মাথায় এলেই আমাদের কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। আমরা দ্রুত চিন্তার টপিক পাল্টে ফেলি। যদি আমাদের কোনো বন্ধু বা আত্মীয় আমাদেরকে এই ব্যাপারটি নিয়ে কিছু বলা শুরু করে, আমরা জলদি তাকে বলি, “কি বলছেন এইসব! আস্তাগফিরুল্লাহ! এই সব মরা-টরার কথা শুনতে ভালো লাগছে না। বাদ দেন এইসব। আসেন অন্য কিছু নিয়ে কথা বলি।”

2_94

বলে দাও, “যদি আখিরাতের জীবনটা আল্লাহর সান্নিধ্যে তোমাদের জন্যই হয়ে থাকে, অন্য কারো জন্য না হয়, তাহলে এখনই মরে যেতে চাচ্ছ না কেন? তোমরা না বড়ই সত্যবাদী?” [আল-বাক্বারাহ ৯৪]

Dubai

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আমরা শুনলাম এবং আমরা অস্বীকার করলাম — আল-বাক্বারাহ ৯২-৯৩

কোনো এক অদ্ভুত কারণে হাজার হাজার বছর আগে থেকেই মানুষের গরুর প্রতি একধরনের বিশেষ প্রীতি ছিল। প্রাচীন মিশরীয়রা গরু পূজা করত।[১৮২] বনী ইসরাইল জাতি গরু পূজা করত। আজকে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী গরুকে দেবতা মনে করে। তারা গরুকে এক বিশেষ পবিত্র সৃষ্টি মনে করে বছরে এক বিশেষ দিন গরুর সন্মানে উদযাপন করে।[১৮২] শয়তান পূজারিরা গরুর মাথার কঙ্কাল এবং রক্ত ব্যবহার করে। এমনকি শয়তানের চিত্রকর্মে তাকে গরুর মত শিং দেওয়া হয়। নানা ধরনের প্রাচীন জাদু, ডাইনীবিদ্যায় গরুর জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়।[১৮৩] এমনকি আমাদের সময় স্কুলে বাংলা কোর্সে এত প্রাণী থাকতে গরুর রচনাই লিখতে দেওয়া হত ।

2_92

কোনো সন্দেহ নেই, মুসা তোমাদেরকে পরিষ্কার নিদর্শন এনে দেখিয়েছিল। তারপর সে যখন অনুপস্থিত ছিল, তোমরা বাছুরকে পূজা করাশুরু করলে। তোমরা চরম অন্যায়কারী ! [আল-বাক্বারাহ ৯২]

আল্লাহর تعالى বাণী নিয়ে মানুষের তামাশা করার প্রবণতার আরেকটি উদাহরণ আমরা এই আয়াতে পাব। বনী ইসরাইলিরা দেখল যে, নবী মূসা عليه السلام আল্লাহর تعالى কাছ থেকে যে তাওরাতের বাণী নিয়ে এসেছেন, সেই বাণী মেনে চলাটা বেশ কঠিন। তখন তারা সেটা থেকে বাঁচার জন্য অজুহাত খোঁজা শুরু করল। প্রথমে তারা নবী মূসাকে عليه السلام বলল: তার মুখের কথা তারা বিশ্বাস করবে না, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর تعالى কাছ থেকে নিজের কানে না শুনছে।[৪][৮]

তখন নবী মূসা عليه السلام তাদের মধ্য থেকে ৭০ জন প্রতিনিধিকে বাছাই করে তূর পাহাড়ে নিয়ে গেলেন। সেখানে আল্লাহ تعالى তাদেরকে সরাসরি তাওরাত মেনে চলার হুকুম দিলেন। তারপর সেই প্রতিনিধিরা ফিরে এসে নিজ নিজ গোত্রের সামনে স্বীকার করল যে, আল্লাহ تعالى সত্যিই তাদেরকে তাওরাত মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এর সাথে তারা আর একটি কথা যোগ করে দিল: “আল্লাহ বলেছেন যে, তোমাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, ততটুকু মেনে চলবে। যা মেনে চলতে পারবে না, তা তিনি ক্ষমা করে দিবেন।”

এরপর থেকে তাওরাতের যেই নির্দেশই তাদের কাছে কঠিন মনে হতো, সেটাকেই তারা ছেড়ে দিত — এই মনে করে যে, আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিবেন।[৪][৮] তাদের এই ভণ্ডামিতে আল্লাহ تعالى রেগে গিয়ে এক অসাধারণ ঘটনা ঘটালেন —  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওদের বিশ্বাস একেবারেই নগণ্য পর্যায়ের — আল-বাক্বারাহ ৮৮-৯১

আপনি পাড়ার কলেজের শিক্ষক মীর-জাফর সাহেবকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছেন, “ভাই, কিছু চরমপন্থি দলের উল্টোপাল্টা কাজকর্মকে ইসলামের শিক্ষা বলে প্রচার করে ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করছেন, এটা তো অন্যায়। চেতনার নাম করে কিশোর-তরুণদের উত্তেজনার ড্রাগ দিয়ে, তাদেরকে রাজনৈতিক নেতাদের হাতের পুতুল বানাচ্ছেন, এটা কি একটা বিরাট প্রতারণা নয়? পাবলিসিটির লোভে আপনি মানুষকে অহেতুক ফুসলিয়ে, তাদেরকে সস্তা আবেগের খোরাক দিচ্ছেন, আল্লাহর تعالى কাছে এসবের জবাব কীভাবে দেবেন?”

কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। তার উত্তর, “ভাই, আমাকে এইসব ফালতু নীতিকথা বলে লাভ নেই। আমি একজন বিদেশ থেকে পিএইচডি করা শিক্ষিত মানুষ। আমি জানি আমি যা করছি সেটা ঠিক কাজ। আমাকে এই সব সব হাজার বছরের পুরনো আরব কেচ্ছা কাহিনী শুনিয়ে কোনো লাভ নেই। আমি কোনো গ্রামের অর্ধশিক্ষিত লোক না যে, আপনার এই সব শাস্তির কথা শুনে ভয় পাব। আপনি অন্যদিকে দেখেন।”

এই ধরনের মানুষরা কোনো আধুনিক সৃষ্টি নয়। হাজার বছর আগেও এই ধরনের মানুষ ছিল—

2_88

ওরা বলে, “(তোমরা যাই বলো না কেন) আমাদের অন্তর একদম সুরক্ষিত, কিছুই ঢুকবে না।” কিসের সুরক্ষিত? বরং আল্লাহ ওদেরকে ঘৃণা ভরে পরিত্যাগ করেছেন ওদের অবিশ্বাসের জন্য। ওদের বিশ্বাস একেবারেই নগণ্য পর্যায়ের। [আল-বাক্বারাহ ৮৮]

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তখনি কেন তোমরা অহংকারী হয়ে যাও — আল-বাক্বারাহ ৮৭

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন, যেন আমরা ইসলাম অনুসারে আমাদের জীবন গড়ে তুলি। কিন্তু অনেককেই দেখা যায় তাদের লাইফ স্টাইল, সংস্কৃতি, ফ্যাশন, দুই নম্বরি ব্যবসায় যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য ইসলামকে তাদের ইচ্ছামত পরিবর্তন করেন, যাতে করে সেই ‘ইসলাম’ মানতে নিজেদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন করতে না হয়। যেমন, আপনি আপনার প্রতিবেশীকে একদিন বললেন, “চৌধুরী সাহেব, ভাই কিছু মনে করবেন না, আপনার ব্যবসাটা কিন্তু হারাম ব্যবসা। আপনার ঘরের মেয়েরা যেই ধরনের কাপড় পড়ছেন, সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে একেবারেই নিষিদ্ধ। আর আপনার ছেলেমেয়ের বিয়েতে যে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা উড়ালেন, আল্লাহর تعالى কাছে তার জবাব কীভাবে দেবেন?”

সাথে সাথে তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠবেন, “কি! আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ইসলাম কী আমি সেটা জানি না? আপনাদের মত তালেবানদের জন্য আজকে ইসলামের এই অবস্থা। দেশটাকে আপনারা আরেকটা আফগানিস্তান বানিয়ে ফেলছেন।”

এধরনের মানুষদেরকে যখন কেউ বার বার নিষেধ করতে থাকে, এবং তাদের আসল জায়গায়: ব্যাংক ব্যালেন্স এবং সম্পত্তিতে সমস্যা তৈরি করে —তখন তারা তাদের ‘সোনার ছেলেদের’ ফোন করেন, “তোমাকে একটা লোকের নাম-ঠিকানা পাঠাচ্ছি। একে সরিয়ে ফেল।”

এদের উদাহরণ হলো এই আয়াতের বনী ইসরাইলের মতো—

2_87

আমি অবশ্যই মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম। তারপর তার সমর্থন করে ধারাবাহিকভাবে কয়েকজন রাসুল/বার্তাবাহক পাঠিয়েছিলাম। আর আমি মরিয়মের সন্তান ঈসাকে একদম পরিষ্কার নিদর্শন দিয়েছিলাম এবং তাকে পবিত্র রূহ দিয়ে শক্তিশালী করেছিলাম। যখনি কোনো রাসুল/বার্তাবাহক এমন কিছু নিয়ে আসে, যা তোমাদের কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে যায়, তখনি কেন তোমরা অহংকারী হয়ে যাও? কেন তাদের কয়েকজনকে তোমরা মিথ্যাবাদীর কালিমা দাও, কয়েকজনকে খুন করো? [আল-বাক্বারাহ ৮৭]

Corruption-1

মানুষের মধ্যে একটা স্বভাবজাত প্রবৃত্তি আছে আইনকে নিজের সুবিধামত বিকৃত করে, অন্যের সাথে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করার, যাতে করে তারা তাদের স্বার্থপর সাম্প্রদায়িক, জাতিগত, দলগত উদ্দেশ্যগুলো হাসিল করতে পারে। এটা সাধারণত সেই সব সমাজে দেখা যায়, যেখানে মানুষ ন্যায়ভাবে চলার ন্যূনতম ধারণাগুলো হারিয়ে ফেলে।[৬]

একটা ছোট বাচ্চা চেষ্টা করে কীভাবে বাবা-মার কাছ থেকে ঘরের নিয়ম কানুনে শুধুমাত্র তার জন্য বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়, “বাবা, আমি জানি আমাদের দিনে একটার বেশি চকলেট খাওয়া নিষেধ। কিন্তু শুধু আমাকে দিনের বেলা একটা, আর রাতের বেলা আরেকটা দেওয়া যায়? আমি ছোটকে দেখাব না। একদম লুকিয়ে লুকিয়ে খাব।” তারপর মানুষ বড় হলে মন্ত্রীকে ফোন করে, “সালাম মন্ত্রী সাহেব, সংসদে ওই বিলটা পাশ হলে কিন্তু আমাদের দল আর এই বছর গাড়ি পাবে না। আপনি ব্যবস্থা করুণ যেভাবেই হোক সেই বিলটা যেন পাশ না হয়। আমি আপনাকে খুশি করে দেব। গুলশানে দুটো বাড়ি আর আগামি দশ বছরের জন্য আপনার রঙিন পানির সাপ্লাই আমার দায়িত্ব। আপনার আর কী লাগবে শুধু বলেন আমাকে।” ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে চলে আরেক ধরনের আলোচনা, “হুজুরে পাক, আপনি দেশের সবচেয়ে বড় মুফতিদের একজন। এই ফতোয়াটা মঞ্জুর করে দেন। আমরা অমুক গ্রুপের সাথে চুক্তি করেছি। তারা আগামি বছর বাজারে হালাল সাবান ছাড়তে যাচ্ছে। সেখান থেকে ২০% কমিশন আমরা পাবো। শুধু দরকার এই ফতোয়াটা পাশ করার। তাহলেই সবাই অন্য সব সাবান বাদ দিয়ে, এই হালাল সাবান কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আপনার মসজিদ করার জন্য যত বাজেট লাগে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”

সঠিক আইন, ন্যায়নীতি, আদর্শ তৈরি হয় নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা থেকে, যা মানুষের কামনা-বাসনা দিয়ে বিকৃত হয় না। এটা মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়, এর জন্য মানুষের উর্ধে কোনো উৎস দরকার, যার মধ্যে মানুষের যে মানবিক দুর্বলতাগুলো রয়েছে, সেগুলো নেই।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা কী করে যাচ্ছ, সেটা আল্লাহর অজানা নয় — আল-বাক্বারাহ ৮৪-৮৬

এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে রাজনীতি কত নোংরা হতে পারে, তা শেখাবেন। মানুষ কীভাবে নিজের স্বার্থের কারণে নিজের ভাইকে খুন করতে পারে, নিজের ভাইকে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে এবং দরকারের সময় রাতারাতি ভোল পাল্টে দুমুখো সাপ হয়ে যেতে পারে, তা এই আয়াত দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আজকের মুসলিমরা যে সাচ্চা বনী ইসরাইল হয়ে গেছে, সেটা আপনি নিজেই দেখতে পাবেন—

মনে করে দেখ, যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, “তোমরা তোমাদের রক্ত ঝরাবে না এবং নিজেরদেকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দিবে না।” তোমরাই তো  তখন কথা দিয়েছিলে, আর তোমরাই ছিলে তার সাক্ষী!  [আল-বাক্বারাহ ৮৪]

“তোমরা তোমাদের রক্ত ঝরাবে না” 
  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি — আল-বাক্বারাহ ৮৩ — পর্ব ২

গত পর্বে এই আয়াতের প্রথম তিনটি অঙ্গীকার — একমাত্র আল্লাহকে প্রভু হিসেবে নেওয়া, বাবা-মার প্রতি ইহসান এবং আত্মীয়দের প্রতি ভালো ব্যবহারের উপর আলোচনা হয়েছে। এই পর্বে আয়াতের বাকি অঙ্গীকারগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। আমরা মুসলিমরা প্রতিদিন কত অঙ্গীকার ভাঙছি, সেটা এই আয়াত থেকে পরিষ্কার হয়ে বেড়িয়ে যাবে—

2_83

মনে করে দেখ, যখন আমি বনী ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম: “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুরই ইবাদত করবে না; বাবা-মার জন্য সবকিছু সবচেয়ে ভালোভাবে করবে; এবং নিকটাত্মীয়, অসহায়-এতিম আর গরিব-সামর্থ্যহীনদের সাথেও; মানুষের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবে; সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে।” এরপরও তোমাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে। তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি। [আল-বাক্বারাহ ৮৩]

বনী ইসরাইলিরা ছিল সেই যুগের মুসলিম। তাদের কাছ থেকে আল্লাহ تعالى কিছু অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তারা সেগুলো মানেনি। আল্লাহ تعالى তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজকের যুগের মুসলিমরা হচ্ছে বনী ইসরাইলের উত্তরসূরি। আমরা কতখানি সেই অঙ্গীকার মানছি দেখা যাক—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি — আল-বাক্বারাহ ৮৩ – পর্ব ১

আল্লাহ تعالى এই আয়াতে আমাদেরকে এমন কিছু করতে বলবেন, যেগুলো আমরা সচরাচর শুনতে চাই না। বরং কেউ আমাদেরকে এই কথাগুলো বললে আমাদের গা জ্বালা করে, আমরা নানা টালবাহানা করে, অজুহাত দেখিয়ে এগুলো এড়িয়ে যেতে যাই। আজকে আমরা মুসলিমরা কত নীচে নেমে গেছি, সেটা এই আয়াত থেকে একেবারে পরিষ্কার হয়ে বেড়িয়ে যাবে—

2_83

মনে করে দেখ, যখন আমি বনী ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম: “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুরই ইবাদত করবে না; বাবা-মার জন্য সবকিছু সবচেয়ে ভালোভাবে করবে; এবং নিকটাত্মীয়, অসহায়-এতিম আর গরিব-সামর্থ্যহীনদের সাথেও; মানুষের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবে; সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে।” এরপরও তোমাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে। তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি। [আল-বাক্বারাহ ৮৩]

CityRuin

বনী ইসরাইলিরা ছিল সেই যুগের মুসলিম। তাদের কাছ থেকে আল্লাহ تعالى কিছু অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তারা সেগুলো মানেনি। আল্লাহ تعالى তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজকের যুগের মুসলিমরা হচ্ছে বনী ইসরাইলের উত্তরসূরি। আমরা কতখানি সেই অঙ্গীকার মানছি দেখা যাক—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আমরা জাহান্নামে কয়েকটা দিন মাত্র থাকব — আল-বাক্বারাহ ৮০-৮২

আপনি চৌধুরী সাহেবকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছেন তার হারাম ব্যবসাটা বন্ধ করার জন্য। কিন্তু সে পাত্তা দিচ্ছে না। তার কথা হচ্ছে, “ভাই, বুঝলাম এই ব্যবসার জন্য আমার শাস্তি হবে। কিন্তু একদিন না একদিন তো জান্নাতে যাবই। কত হাজার টাকা এতিম খানায় দিলাম, গরিব আত্মীয়স্বজনদের দিলাম। জীবনে কত নামায পড়েছি, রোযা রেখেছি। কয়েকটা দিন না হয় জাহান্নামে কষ্ট করলামই। কী যায় আসে?” এই ধরনের মানুষদেরকে আল্লাহ تعالى সতর্ক করছেন—

2_80

আর ওরা বলে, “আগুন আমাদেরকে মাত্র কয়েকটা দিনই স্পর্শ করবে।” বল, “তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোনো অঙ্গীকার নিয়েছ, কারণ আল্লাহ তার অঙ্গীকার ভাঙ্গেন না? নাকি তোমরা আল্লাহর সম্পর্কে না জেনেই কথা বল?” [আল-বাক্বারাহ ৮০]

যারা কু’রআন কখনো পুরোটা একবারও অর্থ বুঝে পড়ে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেননি, তারা এই ধরনের কথা বলেন। ইসলাম সম্পর্কে তারা নিজেদের ভেতরে একটা ধারণা করে নিয়েছেন। তাদের কাছে ইসলাম হচ্ছে: জীবনে যত খারাপ কাজ করেছি, তার জন্য কিছু সময় জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, তারপর জান্নাতে গিয়ে পার্টি আর পার্টি। অনেকের মধ্যে একটা ধারণা আছে: যারা নামে মুসলিম (ঈমান না থাকলেও), তারা  সবাই জান্নাতে যাবেই। পাপের জন্য কয়েকটা দিন হয়ত জাহান্নামে শাস্তি পেতে হবে। তারপর জান্নাতে গিয়ে সব ভুলে যাবে। তাই এই দুনিয়ায় যে পাপ করছি, সেটা কোনো ব্যাপার না। একদিন না একদিন তো জান্নাতে যাবই। “হাজার হোক, আমার নাম আব্দুল্লাহ। আমার পাসপোর্টে ধর্ম লেখা আছে ‘ইসলাম’। আমি মুসলিম দেশে জন্মেছি! আমি জান্নাতে যাব না তো যাবে কে?”[১৬৮]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)