আসলে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো ঈমান নেই — আল-বাক্বারাহ ১০০-১০১

চৌধুরী সাহেব একদিন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, “ইয়া আল্লাহ, এই রমজান থেকে আমি সবসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ব। আমাকে বাঁচিয়ে দিন আল্লাহ।” তিনি সুস্থ হয়ে বাসায় আসলেন। রমজান শেষে ঈদ আসল। তিনি সারাদিন বন্ধুদের বাসায় ঈদের দাওয়াত খেয়ে ঘুরে বেড়ালেন। পাঁচ ওয়াক্ত তো দূরের কথা, ঈদের জামাত ছাড়া আর এক ওয়াক্ত নামাজও তিনি পড়লেন না। তারপরে একদিন তিনি ঠিক করলেন: এখন থেকে অন্তত মাগরিব, ঈশা বাসায় এসে পড়বেন। কিন্তু দেখা যায়, তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় আসেন। তারপর খবর, সিরিয়াল, টক শো দেখতে বসেন। তার আর কোনো নামাজ পড়া হয় না।

যাইহোক, একসময় চৌধুরী সাহেব ঠিক করলেন, এলাকায় তার কিছু করা দরকার, কিছু পরিচিতি হওয়া দরকার। তিনি এলাকার মসজিদের বোর্ডকে বললেন, তাকে যদি সভাপতি বানানো হয়, তিনি মসজিদের সব মেরামত করবেন, মসজিদের পাশে একটা মাদ্রাসা করবেন। তাকে সসন্মানে মসজিদের সভাপতি বানানো হলো। জুন্মার নামাজে হাজারো মুসল্লির সামনে ঘটা করে তার নাম ঘোষণা দেওয়া হলো। কিন্তু মাসখানেক পর মসজিদের মেরামত শেষে মসজিদের মেম্বাররা যখন তাকে মাদ্রাসার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি অবাক হয়ে বললেন, “মাদ্রাসা? আমি কবে বললাম মাদ্রাসা করার কথা? মসজিদের না সব মেরামত আমিই করে দিলাম? আপনারা দেখি আমাকে পেয়ে বসেছেন! আগামী পাঁচ বছর আর কিছু হবে না।”

এই ধরনের চৌধুরী সাহেবদের সাথে এই আয়াতের বনী ইসরাইলদের সাথে অনেক মিল পাওয়া যায়—

2_100

এমনটাই কি সবসময় হয় না যে, যখনি তারা অঙ্গীকার করে, তাদের মধ্যে একদল তা ছুঁড়ে ফেলে? আসলে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো ঈমান নেই। [আল-বাক্বারাহ ১০০]

এখানে বলা হয়েছে, এরা অঙ্গীকার ছুঁড়ে ফেলে। نبذ অর্থ কোনো কিছুর মূল্য না দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া।[৫][১] অঙ্গীকার মানা তো দূরের কথা, কোনোদিন যে অঙ্গীকার করেছিল, সেটা স্বীকার পর্যন্ত করে না।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি — আল-বাক্বারাহ ৮৩ — পর্ব ২

গত পর্বে এই আয়াতের প্রথম তিনটি অঙ্গীকার — একমাত্র আল্লাহকে প্রভু হিসেবে নেওয়া, বাবা-মার প্রতি ইহসান এবং আত্মীয়দের প্রতি ভালো ব্যবহারের উপর আলোচনা হয়েছে। এই পর্বে আয়াতের বাকি অঙ্গীকারগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। আমরা মুসলিমরা প্রতিদিন কত অঙ্গীকার ভাঙছি, সেটা এই আয়াত থেকে পরিষ্কার হয়ে বেড়িয়ে যাবে—

2_83

মনে করে দেখ, যখন আমি বনী ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম: “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুরই ইবাদত করবে না; বাবা-মার জন্য সবকিছু সবচেয়ে ভালোভাবে করবে; এবং নিকটাত্মীয়, অসহায়-এতিম আর গরিব-সামর্থ্যহীনদের সাথেও; মানুষের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবে; সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে।” এরপরও তোমাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে। তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি। [আল-বাক্বারাহ ৮৩]

বনী ইসরাইলিরা ছিল সেই যুগের মুসলিম। তাদের কাছ থেকে আল্লাহ تعالى কিছু অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তারা সেগুলো মানেনি। আল্লাহ تعالى তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজকের যুগের মুসলিমরা হচ্ছে বনী ইসরাইলের উত্তরসূরি। আমরা কতখানি সেই অঙ্গীকার মানছি দেখা যাক—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি — আল-বাক্বারাহ ৮৩ – পর্ব ১

আল্লাহ تعالى এই আয়াতে আমাদেরকে এমন কিছু করতে বলবেন, যেগুলো আমরা সচরাচর শুনতে চাই না। বরং কেউ আমাদেরকে এই কথাগুলো বললে আমাদের গা জ্বালা করে, আমরা নানা টালবাহানা করে, অজুহাত দেখিয়ে এগুলো এড়িয়ে যেতে যাই। আজকে আমরা মুসলিমরা কত নীচে নেমে গেছি, সেটা এই আয়াত থেকে একেবারে পরিষ্কার হয়ে বেড়িয়ে যাবে—

2_83

মনে করে দেখ, যখন আমি বনী ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম: “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুরই ইবাদত করবে না; বাবা-মার জন্য সবকিছু সবচেয়ে ভালোভাবে করবে; এবং নিকটাত্মীয়, অসহায়-এতিম আর গরিব-সামর্থ্যহীনদের সাথেও; মানুষের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবে; সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে।” এরপরও তোমাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে। তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি। [আল-বাক্বারাহ ৮৩]

CityRuin

বনী ইসরাইলিরা ছিল সেই যুগের মুসলিম। তাদের কাছ থেকে আল্লাহ تعالى কিছু অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তারা সেগুলো মানেনি। আল্লাহ تعالى তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজকের যুগের মুসলিমরা হচ্ছে বনী ইসরাইলের উত্তরসূরি। আমরা কতখানি সেই অঙ্গীকার মানছি দেখা যাক—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যদি ঈমানদার হও, তাহলে সকল অঙ্গীকার পূরণ করো — আল-মায়িদাহ ১

নিচের এই আয়াতটি আমাদের বড় করে প্রিন্ট করে কম্পিউটারের সামনে, সরকারি অফিসের দেওয়ালে দেওয়ালে, ট্রাফিক সিগন্যালের উপরে ঝুলিয়ে রাখা দরকার—

5_1_frame

আমরা অনেক মুসলিমরাই, কোনো এক বিশেষ কারণে আমাদের অঙ্গীকারগুলোর ব্যাপারে খুবই উদাসিন। অফিসে গেলে যাই দশ মিনিট দেরি করে: ট্রাফিক জ্যামের অজুহাত দেখিয়ে, কিন্তু বের হওয়ার সময় ঠিকই বের হই আধা ঘণ্টা আগে। অথচ চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় কন্ট্রাক্টে সাইন করেছি: সপ্তাহে কমপক্ষে ৪০ ঘণ্টা কাজ করব, ৯-৫টা অফিসের সময় মেনে চলব। যুহরের নামাযের সময় আধা ঘণ্টার বিরতির জায়গায় এক ঘণ্টা বিরতি নেই, এই মনে করে: আল্লাহর تعالى জন্য আধা ঘণ্টা বেশি বিরতি নিচ্ছি, এটা তো সওয়াবের কাজ! মাস শেষে বিদ্যুতের, পানির বিল দেওয়ার আগে মিস্ত্রি ডেকে মিটারের রিডিং কমিয়ে দেই। ট্যাক্স দেওয়ার সময় চেষ্টা করি: বিভিন্নভাবে মূল বেতনের পরিমাণকে কমিয়ে, নানা ধরনের বেনিফিট হিসেবে দেখানোর, যাতে করে কম ট্যাক্স দিতে হয়। কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার সময় সুযোগ খুঁজি তাদের কাজে বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে কতভাবে বেতন কাটা যায়। ঘণ্টা হিসেবে কন্ট্রাক্টে কাজ করার সময় চেষ্টা করি যত বেশি সম্ভব ঘণ্টা দেখিয়ে বেশি করে ক্লায়েন্টকে বিল পাঠানোর। কারও সাথে দেখা করার সময় ঠিক করি সকাল দশটায়, কিন্তু দেখা করতে যাই এগারটায়। উঠতে বসতে আমরা অঙ্গীকার ভাঙছি।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)