তখনি কেন তোমরা অহংকারী হয়ে যাও — আল-বাক্বারাহ ৮৭

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন, যেন আমরা ইসলাম অনুসারে আমাদের জীবন গড়ে তুলি। কিন্তু অনেককেই দেখা যায় তাদের লাইফ স্টাইল, সংস্কৃতি, ফ্যাশন, দুই নম্বরি ব্যবসায় যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য ইসলামকে তাদের ইচ্ছামত পরিবর্তন করেন, যাতে করে সেই ‘ইসলাম’ মানতে নিজেদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন করতে না হয়। যেমন, আপনি আপনার প্রতিবেশীকে একদিন বললেন, “চৌধুরী সাহেব, ভাই কিছু মনে করবেন না, আপনার ব্যবসাটা কিন্তু হারাম ব্যবসা। আপনার ঘরের মেয়েরা যেই ধরনের কাপড় পড়ছেন, সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে একেবারেই নিষিদ্ধ। আর আপনার ছেলেমেয়ের বিয়েতে যে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা উড়ালেন, আল্লাহর تعالى কাছে তার জবাব কীভাবে দেবেন?”

সাথে সাথে তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠবেন, “কি! আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ইসলাম কী আমি সেটা জানি না? আপনাদের মত তালেবানদের জন্য আজকে ইসলামের এই অবস্থা। দেশটাকে আপনারা আরেকটা আফগানিস্তান বানিয়ে ফেলছেন।”

এধরনের মানুষদেরকে যখন কেউ বার বার নিষেধ করতে থাকে, এবং তাদের আসল জায়গায়: ব্যাংক ব্যালেন্স এবং সম্পত্তিতে সমস্যা তৈরি করে —তখন তারা তাদের ‘সোনার ছেলেদের’ ফোন করেন, “তোমাকে একটা লোকের নাম-ঠিকানা পাঠাচ্ছি। একে সরিয়ে ফেল।”

এদের উদাহরণ হলো এই আয়াতের বনী ইসরাইলের মতো—

2_87

আমি অবশ্যই মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম। তারপর তার সমর্থন করে ধারাবাহিকভাবে কয়েকজন রাসুল/বার্তাবাহক পাঠিয়েছিলাম। আর আমি মরিয়মের সন্তান ঈসাকে একদম পরিষ্কার নিদর্শন দিয়েছিলাম এবং তাকে পবিত্র রূহ দিয়ে শক্তিশালী করেছিলাম। যখনি কোনো রাসুল/বার্তাবাহক এমন কিছু নিয়ে আসে, যা তোমাদের কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে যায়, তখনি কেন তোমরা অহংকারী হয়ে যাও? কেন তাদের কয়েকজনকে তোমরা মিথ্যাবাদীর কালিমা দাও, কয়েকজনকে খুন করো? [আল-বাক্বারাহ ৮৭]

Corruption-1

মানুষের মধ্যে একটা স্বভাবজাত প্রবৃত্তি আছে আইনকে নিজের সুবিধামত বিকৃত করে, অন্যের সাথে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করার, যাতে করে তারা তাদের স্বার্থপর সাম্প্রদায়িক, জাতিগত, দলগত উদ্দেশ্যগুলো হাসিল করতে পারে। এটা সাধারণত সেই সব সমাজে দেখা যায়, যেখানে মানুষ ন্যায়ভাবে চলার ন্যূনতম ধারণাগুলো হারিয়ে ফেলে।[৬]

একটা ছোট বাচ্চা চেষ্টা করে কীভাবে বাবা-মার কাছ থেকে ঘরের নিয়ম কানুনে শুধুমাত্র তার জন্য বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়, “বাবা, আমি জানি আমাদের দিনে একটার বেশি চকলেট খাওয়া নিষেধ। কিন্তু শুধু আমাকে দিনের বেলা একটা, আর রাতের বেলা আরেকটা দেওয়া যায়? আমি ছোটকে দেখাব না। একদম লুকিয়ে লুকিয়ে খাব।” তারপর মানুষ বড় হলে মন্ত্রীকে ফোন করে, “সালাম মন্ত্রী সাহেব, সংসদে ওই বিলটা পাশ হলে কিন্তু আমাদের দল আর এই বছর গাড়ি পাবে না। আপনি ব্যবস্থা করুণ যেভাবেই হোক সেই বিলটা যেন পাশ না হয়। আমি আপনাকে খুশি করে দেব। গুলশানে দুটো বাড়ি আর আগামি দশ বছরের জন্য আপনার রঙিন পানির সাপ্লাই আমার দায়িত্ব। আপনার আর কী লাগবে শুধু বলেন আমাকে।” ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে চলে আরেক ধরনের আলোচনা, “হুজুরে পাক, আপনি দেশের সবচেয়ে বড় মুফতিদের একজন। এই ফতোয়াটা মঞ্জুর করে দেন। আমরা অমুক গ্রুপের সাথে চুক্তি করেছি। তারা আগামি বছর বাজারে হালাল সাবান ছাড়তে যাচ্ছে। সেখান থেকে ২০% কমিশন আমরা পাবো। শুধু দরকার এই ফতোয়াটা পাশ করার। তাহলেই সবাই অন্য সব সাবান বাদ দিয়ে, এই হালাল সাবান কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আপনার মসজিদ করার জন্য যত বাজেট লাগে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”

সঠিক আইন, ন্যায়নীতি, আদর্শ তৈরি হয় নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা থেকে, যা মানুষের কামনা-বাসনা দিয়ে বিকৃত হয় না। এটা মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়, এর জন্য মানুষের উর্ধে কোনো উৎস দরকার, যার মধ্যে মানুষের যে মানবিক দুর্বলতাগুলো রয়েছে, সেগুলো নেই।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)