ওরা তোমাদেরকে আগুনের দিকে ডাকে — আল-বাক্বারাহ ২২১

চৌধুরী সাহেব তার বিদেশের বাড়িতে আরাম চেয়ারে বসে, কফি হাতে নিয়ে একটা বইয়ে ডুবে আছেন। তখন তার ছেলে এসে বলল, “বাবা, আমি জেনিফারকে বিয়ে করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওকে আমার অনেক ভালো লাগে। ও অন্যদের মতো খারাপ না। পার্টি করে না। আমি ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।”

“কী!”, চৌধুরী সাহেব রাগে লাল হয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলেন , “তুমি বিয়ে করবে এক খ্রিস্টান মেয়েকে? এই জন্য তোমাকে আমি বিদেশে বড় করেছি? আমরা চৌধুরী বংশ! আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে আমি খ্রিস্টান মেয়ে বিয়ে করতে দেবো না….”, বলতে বলতে চৌধুরী সাহেব বুক চেপে ধরে মাটিতে পড়ে গেলেন।

এই ধরনের ঘটনা আজকে বিদেশে বসবাসকারী মুসলিম পরিবারগুলোতে নিত্যদিনের ঘটনা। চৌধুরী সাহেব টাইপের বাবা-মা তাদের সন্তানদের বড় করেন পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিতে। তাদের ছেলেমেয়েরা পশ্চিমা টিভি, মুভি, ম্যাগাজিন দেখে জীবন সম্পর্কে শেখে। পশ্চিমা স্কুল-কলেজ-ইউনিভারসিটিতে হাজারো অমুসলিম ছেলেমেয়ের সাথে ওঠাবসা করে বড় হয়। আর তাদের বাবা-মায়েরা  সপ্তাহে একদিন তাদেরকে জুমুআহ’র নামাজে মসজিদে নিয়ে, পহেলা বৈশাখে বাঙালি পোশাক পরিয়ে, পান্তা ভাত খাইয়ে ধরে নেন: তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে ‘বাঙালি মুসলিম আদর্শ’ ধরে রাখবে। তারপর দেশ থেকে আমদানি করে আনা কাউকে ধরিয়ে দিলেই তাকে বিয়ে করে সুখে সংসার পার করবে।

এই বাবা-মা’রা যদি তাদের সন্তানদেরকে কুর’আন শেখাতেন এবং নিজেরা শিখতেন, তাহলে তারা বিয়ে সম্পর্কে আজকাল প্রচলিত অনেক বিভ্রান্তির উত্তর পেয়ে যেতেন—

2_221

মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করবে না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনছে। একজন বিশ্বাসী দাসীও মুশরিক নারী থেকে ভালো, যদিও কিনা মুশরিক নারী তোমাদেরকে বিমোহিত করে। আর তোমাদের মেয়েদেরকে মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দেবে না, কারণ একজন বিশ্বাসী দাসও মুশরিক পুরুষ থেকে ভালো, যদিও কিনা সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। ওরা তোমাদেরকে আগুনের দিকে ডাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে জান্নাত এবং তার নিজগুণে ক্ষমার দিকে ডাকেন। তিনি তাঁর নির্দেশগুলোকে মানুষের কাছে একদম পরিষ্কার করে দেন, যাতে করে তারা শিক্ষা নিতে পারে। [আল-বাক্বারাহ ২২১]

আজকাল প্রায়ই শোনা যায় এমন সব প্রশ্ন: “ভাই, আমি আমার হিন্দু বান্ধবীকে বিয়ে করতে চাই। তাকে আমি মুসলিম বানিয়ে ফেলবো। সে-ও বলেছে যে সে ইসলাম “ট্রাই” করে দেখতে চায়। এভাবে একজনকে মুসলিম বানানোর বিরাট সওয়াব আমি পাবো। তাছাড়া আজকালকার মুসলিম মেয়েদের কী অবস্থা দেখেন না? ইউনিভার্সিটি পার না হতেই কয় হাত বদল হয়। আমার এই বিয়েটা তো অবশ্যই হালাল হবে, তাই না ভাই?”  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা কী করো, সে ব্যাপারে আল্লাহ বেখেয়াল নন — আল-বাক্বারাহ ১৪০

চৌদ্দশ বছর আগে একদিনের ঘটনা: কয়েকজন উচু পর্যায়ের খ্রিস্টান পাদ্রীরা হন্তদন্ত হয়ে বড় পাদ্রীর সাথে দেখা করতে গেছেন। তিনি এক জরুরি গোপন বৈঠক ডেকেছেন। বাইবেলের কিছু বাণী নিয়ে বিরাট বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। মক্কায় কুরাইশ বংশে এক মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক নাকি দাবী করছেন: তিনিই হচ্ছেন বাইবেলে ভবিষ্যত বাণী করা শেষ নবী! বাইবেলেই নাকি এক আরব নবীর আগমনের কথা ভবিষ্যত বাণী করা আছে। তারা বাইবেল ঘেটে সেই সব বাণী পড়ে, মক্কার সেই মধ্য বয়স্ক লোকের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছেন, বাইবেলে তার সম্পর্কে যা যা লেখা আছে, তার সব মিলে যায়! হায়, হায়, এখন কী হবে!

তাদের এত বড় চার্চ, এত ক্ষমতা, রাজকীয় সন্মান, বিরাট লোকলস্কর সব শেষ হয়ে যাবে। এতদিন তারা বাইবেল বিকৃত করে, নিজেদের সুবিধা মত বাণী ঢুকিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে যে আরাম-আয়েসের জীবন পার করছিলেন, তা সব শেষ হয়ে যাবে। সর্বনাশ! যেভাবেই হোক সেই লোকটাকে থামাতেই হবে। বড় পাদ্রী গম্ভীর গলায় বললেন, “যান, ব্যবস্থা করুন। লোকটাকে যেন কালকে থেকে আর খুঁজে পাওয়া না যায়।”

2_140_title

2_140

তোমরা কি বলছ যে, ইব্রাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তার বংশধর গোত্ররা ইহুদি বা খ্রিস্টান ছিল? ওদেরকে বলো, “তোমরা কি বেশি জানো, নাকি আল্লাহ تعالى?” ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর تعالى কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ লুকিয়ে রাখে? তোমরা কী করো, সে ব্যাপারে আল্লাহ تعالى কখনই বেখেয়াল নন। [আল-বাক্বারাহ ১৪০]

বিংশ শতাব্দীর ঘটনা: কয়েকজন ‘বিখ্যাত হুজুর’ হন্তদন্ত হয়ে ‘বড় হুজুরের’ সাথে দেখা করতে গেছেন। ‘বড় হুজুর’ এক গোপন বৈঠক ডেকেছেন। বিদেশ থেকে কিছু শেখ এসে কুরআন এবং সহিহ হাদিস ব্যবহার করে তাদের দলের প্রচার করা নানা শিক্ষাকে বিদআত বলে দাবি করছে। উপমহাদেশে শত বছর ধরে চলে আসা তাদের বিখ্যাত দরবার শরিফ, সেই শেখদের প্রচারের কারণে বিতর্কের মুখে পড়েছে। তাদের দরবার শরিফের অনুসারীরা আজকাল নানা ধরনের প্রশ্ন করা শুরু করেছে। টিভিতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানে তাদের শত বছর থেকে চলে আসা নানা ইবাদতকে ভুল বলে প্রচারণা করা হচ্ছে। হুজুররা সেই শেখদের সব দাবিকে একেবারে উড়িয়েও দিতে পারছেন না, কারণ সেই শেখদের দলিল বড়ই শক্ত। হায়, হায়, এখন কী  হবে!

এভাবে চলতে থাকলে তো তাদের লক্ষ লক্ষ অনুসারী হারিয়ে যাবে! তাদের দরবার শরিফের মাদ্রাসা, ইসলামিক রিসার্চ কমপ্লেক্স, কোটি কোটি টাকার যাকাত-সাদাকা ফান্ড, আলিশান ভবন, লাইব্রেরি, বিদেশ যাওয়ার ফান্ড  —এগুলো সব তো হুমকির মুখে পড়বে। এতদিন তারা কেউ কেউ নিজেদের মত ফাতওয়া, বিদআহ প্রচলন করে বই বিক্রি করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে, নানা ধরনের ধর্মীয় উৎসব, ফান্ড কালেকশন, সরকারী পলিসির ব্যবস্থা করে যে বিশাল সম্পত্তি, প্রতিপত্তির আয়োজন করেছেন, সেগুলো তো শেষ হয়ে যাবে। তাদেরকে আবার গরীবি জীবনে ফিরে যেতে হবে!

এরকম কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। ‘বড় হুজুর’ গম্ভীর গলায় বললেন, “এই সব শেখদের দলিলগুলো যেভাবেই হোক ভুল প্রমাণ করে তিন সপ্তাহের মধ্যে বই বেরুন করুন। ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করুন। এদের বিরুদ্ধে পীর, বুজুর্গদের অপমান করার কালিমা লাগিয়ে দিন। মানুষ তখন এদেরকে আর সহ্য করতে পারবে না। এদেরকে দেশ ছাড়া করে ছাড়বে। আর সরকারকে জানিয়ে দিন: এই সব শেখরা আফগানিস্তানে টেরোরিস্টদের মদদ দেয়। তাহলে সরকার আর এদেরকে দেশে ঢুকতে দেবে না।”

“ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর تعالى কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ লুকিয়ে রাখে?”

তোমরা কি বেশি জানো?
ইহুদি, খ্রিস্টানরা দুই পক্ষই নিজেদের মতো দাবি করত যে, সব সত্যিকারের নবী এসেছেন তাদের বংশে, সব নবীরা আসলে তাদেরই ধর্ম প্রচার করে গেছেন, বাকি সব নবী ভন্ড। অথচ তারা ভালো করে জানতো: নবী ইব্রাহিম عليه السلام, ইসমাইল عليه السلام, ইসহাক عليه السلام, ইয়াকুব عليه السلام—এরা কেউ ইহুদি বা খ্রিস্টান ছিলেন না, বরং তারা সবাই এক আল্লাহর উপাসনা করতেন। আজকে যে ইহুদি, খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার হচ্ছে, সেগুলোর উদ্ভব হয়েছে এই নবীদের মারা যাওয়ার বহু পরে। কিন্তু তারপরেও ইহুদি, খ্রিস্টানরা দাবি করে যাচ্ছে যে, তাদের ধর্মই সঠিক ধর্ম! একারণেই আল্লাহ تعالى তাদেরকে বিদ্রুপ করে জিগ্যেস করতে বলছেন, “তোমরা কি বেশি জানো, নাকি আল্লাহ تعالى ?[৬] [৩]

ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর تعالى কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ লুকিয়ে রাখে?

অনেক সময় আমরা ইসলামের উপর বই বা আর্টিকেল পড়ে উপলব্ধি করি যে, আমরা এতদিন যা শিখে এসেছি, তার মধ্যে ভুল রয়েছে। হাজার বছর থেকে বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা কিছু রীতিনীতি, ধারণাগুলো আসলে ইসলাম সমর্থন করে না। অনেক সময় দেখা যায়: আমরা যে দলের শিক্ষা এতদিন অনুসরণ করে এসেছি, তার বিরুদ্ধে কুরআন, সাহিহ হাদিসেই যথেষ্ট শক্ত দলিল আছে। তখন আমরা অনেক সময় ভাবা শুরু করি, “এই খবর যদি মানুষকে জানানো হয় তাহলে ফিতনা তৈরী হবে। মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। হুজুরদের প্রতি শ্রদ্ধা উঠে যাবে। এরচেয়ে বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর ত্যাগ করা ভালো। থাক না কিছু কথা গোপন। আল্লাহ تعالى মাফ করবেন।”

না! আল্লাহ تعالى কঠিনভাবে সাবধান করেছেন—

“ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর تعالى কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ লুকিয়ে রাখে?”

তোমরা কী করো, সে ব্যাপারে আল্লাহ تعالى কখনই বেখেয়াল নন

আমরা অনেক সময় টিভিতে কোনো আপত্তিকর কিছু দেখার সময় ভাবি, “থাক, একটু আকটু দেখলে কিছু হবে না। আল্লাহ تعالى অত কিছু ধরেন না।” ব্যাংক থেকে আসা মাসিক স্টেটমেন্ট-এ সুদের পরিমাণ দেখে নিজেকে বোঝাই, “এত অল্প ব্যাপারে আল্লাহ تعالى কিছু মনে করেন না। আমি না নিলে অন্য কেউ তো ঠিকই নিত।” বছরের এক বিশেষ রঙ ছোড়াছুড়ির উৎসবে, বিপরীত লিঙ্গের গায়ে হাত দিয়ে রঙ ঘসাঘসি করে এসে ফেইসবুকে পোস্ট দেই, “আহ হা, তোমরা এইসব ছোটখাটো ব্যাপারে এমন বাড়াবাড়ি করছ কেন? আল্লাহ تعالى অনেক বড়। তিনি এসব ছোটখাটো ব্যাপারে ধরেন না।” অফিসে কেউ এসে তার ফাইলটা সবার আগে পাস করার জন্য একটা দামী বিদেশী সিগারেট সাধলে, তাতে টান দিয়ে ভাবি, “একটু আধটু টানলে আল্লাহ تعالى ধরেন না। আল্লাহ تعالى অনেক বড়। আমার মত মামুলি বান্দার দিকে নজর রাখার সময় কোথায় তার?”

আল্লাহ تعالى সাবধান করে দিয়েছেন—

তোমরা কী করো, সে ব্যাপারে আল্লাহ تعالى কখনই বেখেয়াল নন।

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আরবিতে অত্যন্ত কঠিনভাবে বলেছেন وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ — খবরদার! আল্লাহ تعالى এক মুহুর্তের জন্যও বেখায়াল নন! আমরা টিভিতে আড়চোখে তাকিয়ে কী দেখি, তা আল্লাহ تعالى খুব ভালোভাবে খেয়াল করেন। আমরা বাচ্চাদেরকে স্কুলে দেওয়ার সময় কাকে ফোন করে কী অফার দেই, সেটা আল্লাহ تعالى খুব ভালো করে শোনেন। চাকরির ইন্টারভিউ এর আগে মামা-চাচা-খালুকে কী অনুরোধ করি, সেটা আল্লাহ تعالى রেকর্ড করে রাখেন। বিল দিতে বলার সময় কত টাকা বাড়িয়ে লিখতে বলি, যেন অফিস থেকে বেশি টাকা আদায় করা যায়, সেটার আল্লাহ تعالى হিসেব রাখেন। আল্লাহ تعالى এক মুহুর্তের জন্যও বেখায়াল নন।

আল্লাহ الغفور আল-গাফুউর — অনেক পাপ ক্ষমা করেন, الغفار আল-গাফফার — বার বার ক্ষমা করেন। কিন্তু তাই বলে তিনি غَٰفِل গাফিল — বেখায়াল, অসতর্ক, উদাসীন নন। আমাদের নিয়ত যদি হয় আল্লাহর تعالى ক্ষমার গুণের ফায়দা উঠিয়ে পাপ করে যাওয়া, তাহলে সেটার ক্ষমা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

আল্লাহ تعالى তাওবাহ বা আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করেন, বার বার করেন, যদি সেই ক্ষমা প্রার্থনার সাথে সেই পাপ আর কখনো না করার প্রতিশ্রুতি থাকে। তাওবাহ এসেছে ت و ب থেকে যার অর্থ: ফিরে আসা। আমরা যদি শুধু মুখে বলি, “আল্লাহ, আমি ভুল করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিন”—তাহলে সেটা তাওবাহ হলো না। তাওবাহ হচ্ছে: ১) যেই ভুল কাজটা করছিলাম সেটা করা বন্ধ করা, ২) অন্যের সাথে অন্যায় করলে তার প্রায়শ্চিত্ত করা বা তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া, ৩) একই সাথে আল্লাহর تعالى কাছে ভুল করার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ৪) সেই ভুল ভবিষ্যতে আর না করার জন্য প্রতিজ্ঞা করা।[৫] তাহলেই সেটা তাওবাহ হবে।

আসুন আমরা আন্তরিকভাবে আল্লাহর تعالى কাছে তাওবাহ করি। এতদিন আল্লাহকে تعالى উপেক্ষা করে যে সব খারাপ কাজ করছিলাম, ধরে নিচ্ছিলাম যে, আল্লাহ تعالى অতশত খেয়াল করেন না, সেগুলোর জন্য আন্তরিকভাবে অনুশোচনা করি। আল্লাহ تعالى কখনই গাফিল নন, কিন্তু তিনি গাফুউর, গাফফার। তাঁর কাছে আকুলভাবে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে সংশোধন করলে, তিনি ক্ষমা করে দেবেন বলে কু’রআনে বার বার কথা দিয়েছেন।

সূত্র:

  • [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
  • [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
  • [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
  • [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
  • [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
  • [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
  • [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
  • [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
  • [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
  • [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
  • [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
  • [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
  • [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [১৫] তাফসির আল জালালাইন।

তিনি বিশুদ্ধ বিশ্বাসের অধিকারী ছিলেন — আল-বাক্বারাহ ১৩৫-১৩৭

ইহুদি, খ্রিস্টানরা রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام-কে মানুষ হিসেবে বেশ পছন্দই করতো। তারা জানতো: তিনি একজন সৎ, বিনয়ী মানুষ, কোনো অন্যায় করেন না, ধনী-গরিব পার্থক্য করেন না। এমনকি তারা রাসুলের عليه السلام কাছে নিজেদের সম্পদ আমানত হিসেবেও রেখে যেত। সবদিক থেকে তারা রাসুলকে عليه السلام একজন অনুসরণ করার মত আদর্শ মানুষ হিসেবেই মানতো। কিন্তু তারপরেও যখন রাসুল عليه السلام তাদেরকে হাজারো যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করতেন যে, তারা ভুল পথে আছে, তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত হয়ে গেছে, তখন তারা আর রাসুলের عليه السلام কথা শুনত না। বরং উলটো বলতো—

2_135_title

2_135ওরা বলে, “তোমরা ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান হয়ে যাও, তাহলেই পথ পাবে।” বলে দাও, “আমরা বরং ইব্রাহিমের পথ অনুসরণ করবো, তিনি বিশুদ্ধ বিশ্বাসের অধিকারী ছিলেন। তিনি কখনই আল্লাহর تعالى সাথে শিরককারীদের একজন ছিলেন না।” [আল-বাক্বারাহ ১৩৫]

প্রথমে আমাদের বোঝা দরকার: তারা যখন বলছে ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে যেতে, তারা আসলে কোন ধর্মের দিকে ডাকছে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আল্লাহর কাছ থেকে তোমাকে রক্ষা করার জন্য তুমি কাউকে পেতে না — আল-বাক্বারাহ ১২০

ইহুদি, খ্রিস্টানরা রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام-কে মানুষ হিসেবে বেশ পছন্দই করতো। তারা জানতো: তিনি একজন সৎ, বিনয়ী মানুষ, কোনো অন্যায় করেন না, ধনী-গরিব পার্থক্য করেন না। এমনকি তারা রাসুলের عليه السلام কাছে নিজেদের সম্পদ আমানত হিসেবেও রেখে যেত। সবদিক থেকে তারা রাসুলকে عليه السلام একজন অনুসরণ করার মত আদর্শ মানুষ হিসেবেই মানতো। তাদের বক্তব্য ছিল: লোকটা ভালোই ছিল, শুধু নিজেকে নবি বলে দাবি না করলেই পারতো। তাহলে আমাদের আর কোনো সমস্যা ছিল না।

2_120

ইহুদি নাসারারা কখনই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি তাদের মতবাদ অনুসরণ করছ। বলে দাও, “আল্লাহর تعالى পথনির্দেশ একমাত্র সঠিক পথনির্দেশ।” তোমার কাছে এই জ্ঞান আসার পরেও তুমি যদি তাদের ইচ্ছাকে মেনে চলতে চাইতে, তাহলে আল্লাহর تعالى কাছ থেকে তোমাকে রক্ষা করার জন্য তুমি কাউকে পেতে না, কোনো সাহায্যকারীও না। [আল-বাক্বারাহ ১২০]

sandstorm

এখানেই বিধর্মীদের সাথে আমাদের সমস্যা। আমরা যতই ভালো মানুষ হই, তারা আমাদের কথা, কাজ, গুণের যতই প্রশংসা করুণ না কেন, শেষ পর্যন্ত গিয়ে একটা ব্যাপারে তাদের অনেকেই আমাদের সাথে কোনো আপোষ করবে না, সেটা হলো ইসলাম। আমরা তাদের সাথে যতই ওঠাবসা করি, একসাথে পড়ালেখা করি, চাকরি-ব্যবসা করি, ছুটি কাটাতে বেড়াতে যাই, যখনি রাসুলের عليه السلام শেষ নবি হওয়ার কথা আসবে, বা আল্লাহ تعالى একমাত্র উপাসনার যোগ্য প্রভু দাবি করা হবে, তখন তাদের অনেকেই তাদের ধর্মের শিক্ষার ব্যাপারে একদম কঠোর অবস্থান নেবে এবং আমাদের সাথে কোনো আপোষ করবে না।

মেরুদণ্ডহীন মুসলিমরা হিন্দুদের বিয়ের রীতিনীতি অনুসরণ করে বিয়ে করলেও, হিন্দুদেরকে কখনো দেখবেন না মুসলিমদের রীতিনীতি অনুসরণ করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে। কুপমন্ডক মুসলিমদেরকে ক্রিস্টমাসে যীশুর জয়গানে অংশগ্রহণ, হ্যালোইন উদযাপন করতে দেখলেও, খ্রিস্টানদেরকে কখনো দেখবেন না ঈদ-উল-আযহায় কুরাবানি করে গরিবদের খাওয়াতে। যখনি মুসলিমরা এমন কিছু করবে, যেটা শুধু ইসলামেই রয়েছে, অন্য কোনো ধর্মে নেই, তখনি অন্য ধর্মের লোকেরা, বিশেষ করে ইহুদি, খ্রিস্টানরা, যারা তাদের ধর্মের ব্যাপারে কিছুটা হলেও জানে, তারা অনেকেই আর মুসলিমদের ধারে কাছেও ঘিরবে না। তারা ঠিকই তাদের ধর্মের ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আল্লাহই কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে এই মতবিরোধের বিচার করবেন — আল-বাক্বারাহ ১১৩

“না ভাই, আপনি ভুল জানেন। ইসলাম মোটেও এটা সমর্থন করে না। আপনাদের আক্বিদায় গণ্ডগোল আছে।”

– “না জেনে বোকার মত কথা বলবেন না। আমার হুজুর আমাকে দলিল দিয়ে দেখিয়েছেন। আপনাদের আক্বিদা ভুল। যত সব সালাফি বাতিল ফিরকার দল।”

“মুখ সামলে কথা বলবেন। আমার শেখ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা। আপনারা কোথাকার কোন মাদ্রাসার পণ্ডিতের কাছ থেকে মান্ধাত্না আমলের খারেজি নিয়ম কানুন শেখেন।”

– “কত বড় সাহস! আমার হুজুরকে গালি দাও! তোমাদের সেই শেখ বাইরে থেকে শিখে এসে আমাদের পীর জমানার হাজার বছরের জ্ঞান ছাড়িয়ে গেছে? আজকে মাগরিবে মসজিদে আসো। বড় হুজুর থাকবেন, আমরা সবাই থাকবো। দেখা যাবে কে ঠিক।”

মুসলিমদের মধ্যে এধরনের তর্ক এতটাই জঘন্য ব্যাপার যে, এরকম একটি ঘটনার উদাহরণ আল্লাহ تعالى কু’রআনেই দিয়ে দিয়েছেন, আমাদেরকে সাবধান করার জন্য, যেন আমরা ইহুদি, খ্রিস্টানদের অনুকরণ না করি—

2_113

ইহুদিরা বলে, “খ্রিস্টানদের কোনো ভিত্তি নেই”; খ্রিস্টানরা বলে, “ইহুদিদের কোনো ভিত্তি নেই”; যদিও তারা দুই পক্ষই কিতাব পড়ে। একইভাবে যাদের কোনো জ্ঞান নেই (আরব মুশরিকরা), তারাও একই কথা বলে। আল্লাহ تعالى কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে এই মতবিরোধের বিচার করবেন। [আল-বাক্বারাহ ১১৩]

jerusalem  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যি বলে থাকো — আল-বাক্বারাহ ১১১-১১২

আজকাল সুধীবৃন্দরা দাবি করেন, “তোমাদের ইসলাম একটা অসহনশীল, বর্বর ধর্ম। তোমরা দাবি করো যে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সঠিক ধর্ম, আর অন্য সব ধর্ম সব ভুল। আর তোমরা অন্য ধর্মের মানুষদের সন্মান করো না, তাদের অধিকার দাও না, তাদেরকে কাফির গালি দিয়ে হত্যা করার কথা বলো। এরচেয়ে অমুক ধর্ম অনেক সহনশীল, সুন্দর। ”
—এর উত্তর খুব সহজ: প্রথমত, হ্যা, ইসলাম দাবি করে যে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সঠিক ধর্ম এবং বাকি সব ধর্ম তার আসল রূপ থেকে বিকৃত হয়ে গেছে, যার কারণে সেগুলো আর মানা যাবে না। দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মও সেটাই দাবি করে, এমনকি হিন্দু ধর্মও একই দাবি করে, যেখানে খোদ কৃষ্ণই সেই কথা বলেছেন ভগবৎ গীতায়। তৃতীয়ত, যদি কোনো ধর্ম না দাবি করে যে, সে একমাত্র সঠিক ধর্ম, কারণ বাকি সব ধর্ম বিকৃত হয়ে গেছে, তার মানে দাঁড়ায়: সৃষ্টিকর্তা সেই নতুন ধর্ম পাঠিয়েছেন এমনিতেই সময় কাটানোর জন্য। তিনি বসে বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলেন, তাই তিনি নতুন একটা কিছু করার জন্য প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে, বিপুল পরিমাণ মানুষের সময় খরচ করে, অনেক মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে এমন একটা নতুন ধর্ম পাঠালেন, যেটা না মানলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ আগের ধর্মগুলো তো ঠিকই আছে। অন্য ধর্মের লোকরা সব সৎ পথেই আছে এবং স্বর্গেও যাবে। তাই এই নতুন ধর্মটা যদি কেউ মানে তো ভালো, না মানলেও কোনো সমস্যা নেই।

আজকাল এইসব সুধীবৃন্দরা যা দাবি করছেন, তা হচ্ছে অনেকটা এরকম: ইসলাম বা অন্য ধর্মগুলোতে, যেখানে সৃষ্টিকর্তা ঘোষণা দিয়েছেন যে, সেটাই একমাত্র সঠিক ধর্ম কারণ অন্য ধর্মগুলো বিকৃত হয়ে গেছে, সেখানে আসলে স্রস্টার বলা উচিত ছিল, “হে আমার বান্দারা, আজকে আমি তোমাদেরকে একটা ধর্ম দিলাম। এটা অন্য সব ধর্ম থেকে বেশি ঠিক, তা আমি দাবি করবো না। আমার ভুল ত্রুটি হতেই পারে। আর এটা তোমরা মানতেও পারো, নাও পারো। সমস্যা নেই, একটা ধর্ম মানলেই হলো। বেশি দুষ্টামি না করলে তোমরা স্বর্গে যাবেই।”

এই পর্বে ধর্ম নিয়ে দুটো ব্যাপারে আলোচনা করা হবে: ১) Religious Exclusivity বা ধর্মীয় স্বতন্ত্রতা, ২) Religious Intolerance বা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা। আমরা দেখব হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, ইসলাম — এই ধর্মগুলোর মধ্যে কোনটা আসলেই সহিষ্ণুতা প্রচার করে।

quran-and-bible

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওদেরকে কোনো দাবি না রেখে ক্ষমা করো — আল-বাক্বারাহ ১০৯-১১০

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাইকোলজি শেখাবেন। মানুষ কিছু মানসিক সমস্যায় ভোগে, যার সম্পর্কে আমাদের সবসময় সাবধান থাকতে হবে। সাবধান না থাকলে, কিছু অসাধু মানুষ সহজেই আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করবে। আমরা সরল মনে এদের ভালো করতে গিয়ে, এদের সাথে মিলমিশ করে থাকতে গিয়ে উল্টো নিজেদের বিরাট ক্ষতি করে ফেলব। আমরা বুঝতেও পারবো না: কীভাবে আমরা তাদের হাতের পুতুল হয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে কাজ করে যাচ্ছি। এরকম একটি প্রেক্ষাপট এসেছে এই আয়াতে—

2_109

যদিও তাদের কাছে সত্য পরিষ্কার হয়ে গেছে, তারপরেও আহলে কিতাবের (ইহুদি, খ্রিস্টান) অনুসারীদের অনেকেই তাদের স্বার্থপর হিংসার কারণে চায় যে, তোমাদের যাদের ঈমান আছে, তারা যেন আবার কাফির হয়ে যায়। ওদেরকে কোনো দাবি না রেখে ক্ষমা করো, কোনো কিছু ধরে না রেখে উপেক্ষা করো; যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর تعالى নির্দেশ না আসছে। আল্লাহর تعالى সবকিছুর উপরে সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। [আল-বাক্বরাহ ১০৯]

gaza.si

এই ধরনের ইহুদি খ্রিস্টানরা বেশিরভাগই চায় না যে, ইসলামের প্রচার হোক, মুসলিমদের কোনো উন্নতি হোক। কারণ তারা বুঝে গেছে ইসলাম একটি সত্য ধর্ম, এবং এই ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা কোনো এক অদ্ভুত কারণে ‘আশঙ্কাজনক’ হারে বাড়ছে, যা তারা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সরূপ মনে করে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার তথাকথিত মুসলিম দেশগুলো থেকে বহুগুণে বেশি। সিএনএন-এর রিপোর্টে[২৩৮] প্রকাশ করা নিচের ম্যাপটি যেকোনো ইহুদি, খ্রিস্টান বা হিন্দুর রাতের ঘুম হারাম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট—

IslamSpread

১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মুসলিমদের বৃদ্ধির হার: ফ্রান্স ৭২৮%, ফিনল্যান্ড ২৮১%, সুইডেন ২০৬%, নরওয়ে ১৮৬%, পোল্যান্ড ২৩৩%, কানাডা ২০০%, চিলি ৩০০%, স্পেইন ২৭৬%, অস্ট্রেলিয়া ১৫৯%, আর্জেন্টিনা ১২৫% ইত্যাদি।[২৩৮] সেই তুলনায় বাংলাদেশ ৪৫.৫%, সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে ৫৮%।

এই ধরনের ইহুদি, খ্রিস্টানদের জন্য পাশ্চাত্যের আধুনিক দেশে মুসলিমদের বৃদ্ধির হার একটা ভয়াবহ ঘটনা। সেজন্য তারা প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার বাজেট খরচ করে, বিশাল লোকবল নিয়োগ করে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক আধুনিক, শক্তিশালী, সম্পদশালী দেশগুলোতে মুসলিমদের বৃদ্ধি কমাতেই হবে। এজন্য তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার কিছু নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওরা চায় না তোমাদের ভালো কিছু হোক — আল-বাক্বারাহ ১০৫

কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো অমুসলিম সমালোচকরা এবং ইসলামকে যারা আক্রমণ করার জন্য সবসময় ওতপেতে থাকেন, তারা পড়লে বড়ই খুশি হন, কারণ তারা ইসলামকে একটি “মধ্যযুগীয় বর্বর ধর্ম” হিসেবে প্রচার করার জন্য এই আয়াতগুলো থেকে অস্ত্র পেয়ে যান। আবার এই একই আয়াতগুলো একদল চরমপন্থী মুসলিমরা পড়লে বড়ই খুশি হন, কারণ তারা এই আয়াতগুলো থেকে অমসুলিমদের বিরুদ্ধে মারামারি, খুনাখুনি করার জন্য অনুপ্রেরণা এবং আদেশ খুঁজে পান। এই দুই ধরনের মানুষরা গত হাজার বছর ধরে ইসলামের একই ক্ষতি করে গেছেন: ইসলামকে সাধারণ মানুষের মাঝে একটি অসহনশীল, কট্টর, আগ্রাসী ধর্ম হিসেবে কুখ্যাত করে দিয়ে গেছেন। এরকম একটি আয়াত হলো—

2_105

আল্লাহর সাথে যারা শিরক করে এবং আহলে কিতাবের (ইহুদি এবং খ্রিস্টান) মধ্যে থেকে যারা সত্যকে অস্বীকার (কুফরি) করেছে, তারা কখনই চায় না যে, তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে একটুও ভালো কিছু আসুক তোমাদের উপর। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহের জন্য মনোনীত করেন। আল্লাহ অপরিসীম অনুগ্রহের অধিকারী। [আল-বাক্বারাহ ২:১০৫]

এই আয়াত পড়ে অমুসলিমরা বলে, “তোমাদের কাছে আমরা সবাই কাফির? তোমরা না বল ইসলাম হচ্ছে শান্তি, সহমর্মিতার ধর্ম? এই হচ্ছে তার নমুনা?” আর অন্যদিকে একদল মুসলিমরা, যারা রক্তের গন্ধের জন্য পাগল হয়ে আছেন, তারা এইধরনের আয়াত পড়ে চোখ লাল করে চিৎকার দিয়ে ওঠেন, “ওরা সব কাফির! ওরা কেউ চায় না আমাদের ভালো কিছু হোক। ভাই সব, অস্ত্র হাতে নিয়ে ইহুদি, খ্রিস্টান, মুশরিকদেরদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আল্লাহু আকবার!”

gaza.si  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তাদের পুরস্কার তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে — আল-বাক্বারাহ ৬২

সূরা বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়েছে এবং এক শ্রেণীর ‘আধুনিক মুসলিম’ এই ধরনের আয়াতকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে অপব্যবহার করেছে পাশ্চাত্যের সমাজের সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে, সেখানকার মুসলিম-অমুসলিম উভয়ের কাছেই তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য—

2_62

কোনো সন্দেহ নেই, যারা বিশ্বাস করেছে এবং যারা ইহুদী, খ্রিস্টান, সাবিইন — এদের মধ্যে যারা আল্লাহকে এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে, তাদের পুরস্কার তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখও করবে না। [আল-বাক্বারাহ ৬২]

heaven-on-mountain

এই আয়াতের অর্থ কি এই যে, আজকে যারা ভালো ইহুদী, ভালো খ্রিস্টান, তারা সবাই জান্নাতে যাবে? তাহলে এত কষ্ট করে ইসলাম মানার কি দরকার? কারো যদি কু’রআনের সালাত, হিজাব, রোযা রাখার আইন পছন্দ না হয়, তাহলে সে কালকে থেকে খ্রিস্টান হয়ে গেলেই তো পারে? সে তখনো আল্লাহকে বিশ্বাস করবে, শেষ দিনেও বিশ্বাস করবে, এমনকি ভালো কাজও করবে। তখন এই আয়াত অনুসারে “তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখ করবে না।” কী দরকার এত কষ্ট করে, এত নিয়ম মেনে মুসলিম হয়ে থাকার?  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এই গাছের ধারে কাছেও যাবে না — বাকারাহ ৩৫-৩৯

মানুষ তার জীবনের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ভুলটা করতে যাচ্ছে। ক্ষমতা এবং অনন্ত সুখের লোভ সামলাতে না পেরে, সে মহান আল্লাহর تعالى নিষেধকে ভুলে গিয়ে প্রমাণ করতে যাচ্ছে যে, সে আসলে কত দুর্বল এবং কত সহজে সে শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের এবং অন্যের সর্বনাশ ডেকে আনে—

2_35

‘আমি’ বলেছিলাম, “আদম, তুমি এবং তোমার সঙ্গিনী/স্ত্রী বাগানে শান্তিতে বসবাস করো এবং তোমরা দুজনে এখান থেকে নিঃসংকোচে খাও, যেখান থেকে তোমরা চাও। কিন্তু কখনও এই গাছের কাছেও যাবে না, যাতে করে তোমরা অবাধ্য/সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে না যাও।” [বাকারাহ ৩৫]

riverside_garden

আল্লাহ تعالى এখানে আদমকে عليه السلام  বলেননি, “এই গাছের ফল খাবে না।” তিনি বলেছেন, “এই গাছের কাছেও যাবে না।” কেন তিনি গাছটার কাছেই যেতে মানা করেছিলেন?  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)