প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যি বলে থাকো — আল-বাক্বারাহ ১১১-১১২

আজকাল সুধীবৃন্দরা দাবি করেন, “তোমাদের ইসলাম একটা অসহনশীল, বর্বর ধর্ম। তোমরা দাবি করো যে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সঠিক ধর্ম, আর অন্য সব ধর্ম সব ভুল। আর তোমরা অন্য ধর্মের মানুষদের সন্মান করো না, তাদের অধিকার দাও না, তাদেরকে কাফির গালি দিয়ে হত্যা করার কথা বলো। এরচেয়ে অমুক ধর্ম অনেক সহনশীল, সুন্দর। ”
—এর উত্তর খুব সহজ: প্রথমত, হ্যা, ইসলাম দাবি করে যে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সঠিক ধর্ম এবং বাকি সব ধর্ম তার আসল রূপ থেকে বিকৃত হয়ে গেছে, যার কারণে সেগুলো আর মানা যাবে না। দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মও সেটাই দাবি করে, এমনকি হিন্দু ধর্মও একই দাবি করে, যেখানে খোদ কৃষ্ণই সেই কথা বলেছেন ভগবৎ গীতায়। তৃতীয়ত, যদি কোনো ধর্ম না দাবি করে যে, সে একমাত্র সঠিক ধর্ম, কারণ বাকি সব ধর্ম বিকৃত হয়ে গেছে, তার মানে দাঁড়ায়: সৃষ্টিকর্তা সেই নতুন ধর্ম পাঠিয়েছেন এমনিতেই সময় কাটানোর জন্য। তিনি বসে বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলেন, তাই তিনি নতুন একটা কিছু করার জন্য প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে, বিপুল পরিমাণ মানুষের সময় খরচ করে, অনেক মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে এমন একটা নতুন ধর্ম পাঠালেন, যেটা না মানলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ আগের ধর্মগুলো তো ঠিকই আছে। অন্য ধর্মের লোকরা সব সৎ পথেই আছে এবং স্বর্গেও যাবে। তাই এই নতুন ধর্মটা যদি কেউ মানে তো ভালো, না মানলেও কোনো সমস্যা নেই।

আজকাল এইসব সুধীবৃন্দরা যা দাবি করছেন, তা হচ্ছে অনেকটা এরকম: ইসলাম বা অন্য ধর্মগুলোতে, যেখানে সৃষ্টিকর্তা ঘোষণা দিয়েছেন যে, সেটাই একমাত্র সঠিক ধর্ম কারণ অন্য ধর্মগুলো বিকৃত হয়ে গেছে, সেখানে আসলে স্রস্টার বলা উচিত ছিল, “হে আমার বান্দারা, আজকে আমি তোমাদেরকে একটা ধর্ম দিলাম। এটা অন্য সব ধর্ম থেকে বেশি ঠিক, তা আমি দাবি করবো না। আমার ভুল ত্রুটি হতেই পারে। আর এটা তোমরা মানতেও পারো, নাও পারো। সমস্যা নেই, একটা ধর্ম মানলেই হলো। বেশি দুষ্টামি না করলে তোমরা স্বর্গে যাবেই।”

এই পর্বে ধর্ম নিয়ে দুটো ব্যাপারে আলোচনা করা হবে: ১) Religious Exclusivity বা ধর্মীয় স্বতন্ত্রতা, ২) Religious Intolerance বা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা। আমরা দেখব হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, ইসলাম — এই ধর্মগুলোর মধ্যে কোনটা আসলেই সহিষ্ণুতা প্রচার করে।

quran-and-bible

বাক্বারাহ’র এই আয়াতে আমরা দেখবো: ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা উভয়েই তাদের নিজ নিজ ধর্মের ব্যাপারে এই দুটি দাবি করেছিল। ইসলাম Religious Exclusivity বা ধর্মীয় স্বতন্ত্রতা দাবি করে, কিন্তু Religious Intolerance বা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ইসলামে নেই—
2_111

ওরা বলে, “একজন ইহুদি বা খ্রিস্টান ছাড়া কেউ স্বর্গে যাবে না।” এসব ওদের নিজেদের বানানো। ওদেরকে বলো, “প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যি বলে থাকো।” [আল-বাক্বারাহ ১১১]

খ্রিস্টানরা ঈসা عليه السلام নবীর পর শত বছর ধরে নানাভাবে তাদের ধর্মকে বিকৃত করেছে। বিশেষ করে সেইন্ট পল খ্রিস্টান ধর্মকে বিকৃত করে এক চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ওইসব খ্রিস্টানরা তাদের বাইবেলে ঢুকিয়েছে যে, যিশু বলে গেছেন: শুধুমাত্র খ্রিস্টানরাই স্বর্গে যাবে এবং একমাত্র যিশুর মাধ্যমেই স্বর্গে যাওয়া সম্ভব।
আসুন দেখি বাইবেলে[২৪৩] আসলে যিশু কী বলেছেন—

Luke10-25
[লুক ১০:২৫]

এখানে যিশু বলছেন: অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য ঈশ্বরকে ভালবাসতে হবে, তাকে নয়।

Luke18-18

[লুক ১৮:১৮]

এখানে যিশু বলছেন: তিনি সৎ নন, বরং ঈশ্বর হচ্ছেন একমাত্র সৎ। অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য কী করতে হবে, সেটাও তিনি বলে দিয়েছেন।

একইভাবে ইহুদীরা মনে করে: তারা স্বর্গে যাবেই। আল্লাহর تعالى সাথে তাদের এক বিশেষ চুক্তি আছে, কারণ তারা হচ্ছে আল্লাহর تعالى নির্ধারিত একমাত্র সঠিক ধর্মের বাহক।[৩][২][৮] তাদের এই ধারণাকে এই আয়াতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

হিন্দু ধর্মে সহিষ্ণুতা

হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা দাবি করেন: হিন্দু ধর্ম হচ্ছে সবচেয়ে সহিষ্ণু ধর্ম, কারণ এটি দাবি করে না: একমাত্র হিন্দু ধর্মই ঠিক, বাকি সব ধর্ম ভুল। এজন্য তারা উদাহরণ দেন হিন্দু ধর্মের পরম এবং চরম অস্তিত্ব, ‘ব্রহ্ম’-কে পাওয়ার পদ্ধতিকে। সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুসারে সকল দেবতা এবং অন্য সব ধর্মের দাবি করা স্রস্টাগুলো আসলে পরম ব্রহ্মার রূপেরই বহিপ্রকাশ। তাই যে কোনো দেবতাকে, বা স্রস্টাকে পাওয়ার চেষ্টা করা মানে, আসলে ব্রহ্মাকে পাওয়ারই চেষ্টা করে। —আপাতত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এটি একটি চমৎকার ধারণা এবং এই দাবি অনুসারে সনাতন হিন্দু ধর্ম, অন্য সব ধর্ম থেকে বেশি সহিষ্ণু। কিন্তু একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলেই এর সমস্যাগুলো দেখা যায়।

সনাতন হিন্দু ধর্ম শেখায় যে, সব কিছু, সকল প্রাণী, মানুষ, জড় বস্তু, শক্তি যা কিছুরই অস্তিত্ব আছে, তার সব হচ্ছে স্বয়ং ব্রহ্মার অংশ। মানুষ জন্ম এবং পুনর্জন্মের এক চক্রের মধ্যে রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ এই চক্র থেকে মুক্তি অর্জন করে ব্রহ্মার সাথে মিলিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মুক্তি নেই। অন্য ধর্মে যেমন এই দুনিয়াতে যথেষ্ট ভাল কাজ করলে মৃত্যুর পরে বিচার শেষে স্বর্গ লাভ করা যায়, তেমনি হিন্দু ধর্মে বিশেষ কিছু যোগ্যতা অর্জন করলে পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পেয়ে ব্রহ্মার সাথে একাত্ম হওয়া যায়। ব্রহ্মার সাথে একাত্ম হওয়া হচ্ছে হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।
হিন্দু ধর্মে কৃষ্ণ হচ্ছেন সর্বোচ্চ সৃষ্টিকর্তা, যিনি ব্রহ্মার একটি বহিঃপ্রকাশ, যিনি সৃষ্টি জগৎ সৃষ্টি, রক্ষণ, ধ্বংস করেন। কৃষ্ণকে পাওয়া হচ্ছে অন্য ধর্মে স্বর্গ লাভ করার মত।  তিনি ভগবৎ গীতায়[২৪৪] বলেন—

হে অর্জুন, যারা আমার শিক্ষায় বিশ্বাস রাখে না, তারা কখনো আমাকে পাবে না। সে এই দুর্বিষহ জাগতিক অস্তিত্বের পুনর্জন্মের মর্মান্তিক পথে চলতে থাকবে।  [গীতা ৯:৩]

অন্য ধর্মের মত স্বর্গ পেতে হলে একমাত্র উপায় হচ্ছে কৃষ্ণর শিক্ষা অনুসরণ করা। না হলে এই দুর্বিষহ জগতের পুনর্জন্মের চক্রে ঘুরপাক খেতে থাকবে।[২৪৫] অন্য কোনও ধর্ম কৃষ্ণর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

সব ধর্ম পরিত্যাগ কর, শুধুমাত্র আমার প্রতি সমর্পণ কর। আমি তোমাকে সকল পাপ থেকে মুক্তি দিবো, দুশ্চিন্তা করো না। … যে আমাদের এই সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ শিক্ষা পাঠ করবে, আমি তার সেই প্রজ্ঞাময় ত্যাগের কারণে প্রসন্ন হব, এই আমার ঘোষণা। [গীতা ১৮:৬৬-৭০]

কৃষ্ণর শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ শিক্ষা, যার অর্থ: অন্য সব ধর্মের শিক্ষা এর থেকে অধম।[২৪৫]

এই হচ্ছে হিন্দু ধর্মের স্বতন্ত্রতার নিদর্শন। এবার দেখা যাক হিন্দু ধর্মের সহিষ্ণুতার নিদর্শন—

হিন্দু অনুসারীরা অনেকেই দাবি করেন যে, কু’রআন ভর্তি সব যুদ্ধ, মারামারি, খুনাখুনির আয়াত। একারণেই মুসলিমরা এত রক্ত প্রিয় হয়, টেররিস্ট হয়। সে তুলনায় হিন্দু ধর্ম অনেক বেশি শান্তিপ্রিয়, সহনশীল, বিশেষ করে অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি, অবিশ্বাসীদের প্রতি।

কেউ যদি হিন্দু গ্রন্থগুলো অন্ধ ভক্তি ছাড়া নিরপক্ষে মানসিকতা নিয়ে শুরু থেকে পড়তে শুরু করেন[২৪৬], তাহলে কিছুক্ষণ পর পর ধাক্কা খাবেন—

[গীতা ২:৪-১১] অর্জুন বলল, কীভাবে আমি আমার দাদা ভিস্ম, আমার গুরু দ্রোনা, যারা আমার সন্মান পাওয়ার যোগ্য, তাদেরকে আমি কীভাবে আঘাত করতে পারি? আমার তীর দিয়ে? ও কৃষ্ণ, এই দুনিয়াতে ভিক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকাও তো এদের মত মহৎদেরকে হত্যা করার থেকে ভালো, কারণ এদেরকে হত্যা করে আমি যে সম্পদ এবং আরাম উপভোগ করব, তা এদেরই রক্তে রঞ্জিত। … কৃষ্ণ বললেন, “তুমি যাদের জন্য শোক করছ, ওরা শোকের করার যোগ্য নয়, তারপরেও তুমি জ্ঞানের কথা বলো। জ্ঞানীরা জীবিত বা মৃত কারো জন্য শোক করে না।”
[ঋগ্বেদ ১:১৬:৪] যারা তোমাকে পূজার উপহার দেয় না, তাদের প্রত্যেককে হত্যা করো; যাদেরকে বোঝানো কঠিন, যারা তোমাকে তৃপ্ত  করে না। ওদের সম্পদ আমাদেরকে দাও।
[ঋগ্বেদ ৭:৪:১১] ও যেন ভেসে যায়, নিজে এবং তার সন্তানেরা সহ। ওকে যেন ত্রিভুবন পিষে ফেলে। হে প্রভু, ওর সন্মান যেন নষ্ট হয়ে যায়, যে দিনে বা রাতে আমাদেরকে ধ্বংস করতে চায়।
[যজুর্ব্বেদ ১৭:৩৮] হে আমাদের লোকেরা, সেনাপতিকে উৎসাহ দাও, যেন সে তার শারীরিক, মানসিক, সামরিক ক্ষমতা দিয়ে শত্রুর পরিবারগুলোকে তছনছ করে, তাদের জমি জোর করে দখল করে, অস্ত্র দিয়ে শত্রুদেরকে হত্যা করে, শত্রুদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে দমিয়ে রাখে এবং পরাজিত করে।  সেনাপতি যেন অতুলনীয় বলিষ্ঠটা সহকারে শত্রুর পরিবারগুলোকে তছনছ করে, যে নির্দয়, রাগে হিংস্র, শত্রুদের দ্বারা অদমনীয়, যুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, বিজয়ী…
[যজুর্ব্বেদ ২৯:৩৯] — সামরিক শক্তি দিয়ে এই পৃথিবীকে আমরা জয় করি। যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে আমরা শত্রুর আশা তছনছ করি।তীরধনুক দিয়ে আমরা সকল ধর্মকে দমিয়ে রাখব।
[যজুর্ব্বেদ ৬:১-৬] হে প্রভু, … ঠিক যেভাবে আমি পাপীদের গলা কাটি, সেভাবে আপনিও কাটুন। হে প্রভু, … আমাদেরকে যারা ঘৃণা করে, যারা আমাদের শত্রু, তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিন। … তোমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে সারা পৃথিবীতে রাজত্ব শক্তিশালী করা। … পৃথিবীর সকল মানুষ এবং সকল বনের সকল প্রাণী যেন তোমার অধীনে হয়।
[অথর্ববেদ ১২:৫:৬৫-৭১] হে গরু দেবী, ব্রাহ্মণদের অত্যাচারী শাসক, পাপী, কৃপণ, ঈশ্বর নিন্দুকদের … ধড় এবং মাথা কেটে ফেল। মাথা থেকে টান দিয়ে চুল ছিঁড়ে ফেলো। তার শরীর থেকে চামড়া তুলে ফেলো। মাংসপেশি টেনে ছিঁড়ে ফেলো। তার মাংসগুলো খুলে পড়ে যেতে দাও। তার হাড্ডি গুড়া করো। হাড্ডির মজ্জা বের করে ফেলো। তার দেহের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আলাদা করে ফে

এছাড়াও হিন্দু ধর্ম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম যেখানে তার দেবতাদের সাধারণ মানুষ-নারীদের ধর্ষণ করার বর্ণনা রয়েছে, যা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, কোনও পাপ নয়। যুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতিদের শত শত কুমারী দাসী উপহার, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের উপহার হিসেবে দেওয়ায় উৎসাহ দান, স্ত্রী স্বামীকে তুষ্ট করতে না চাইলে তাকে মারার নির্দেশ, মেয়েদের বীরদর্পে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেওয়া, সমাজের এক শ্রেণীর মানুষদের জন্ম সূত্রে সারাজীবন আরেক শ্রেণীর মানুষের দাস হয়ে থাকা, বিধবাদের মৃত স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারা, যুদ্ধে নারী এবং শিশুদের হত্যা করা, নারীদের কোনও উত্তরাধিকার না দেওয়া, কালো চামড়ার থেকে সাদা চামড়ার মানুষ এবং দেবতাদের সাদা চামড়ার প্রশংসা ইত্যাদি জঘন্য সব অপধারণার প্রচলন করেছে। এগুলো সবই সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুসারে গ্রহণযোগ্য।

ইসলামে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা

আল-বাক্বারাহ’র পরের আয়াতে ফিরে যাই—

2_112

কখনই না! বরং যে-ই নিজেকে আল্লাহর تعالى প্রতি সমর্পণ করবে এবং সুন্দর-ভালো-উপকারী কাজ করবে, তার পুরস্কার তার প্রভুর কাছে রয়েছে। তাদের ভয় নেই, তারা কোনো দুঃখ করবে না। [আল-বাক্বারাহ ১১২]

এখানে আল্লাহ تعالى ইহুদি, খ্রিস্টানদের দাবির জবাবে যেন বলছেন, “তোমরা মনে করো তোমরা হচ্ছ ভিআইপি? যে-ই আমাকে বিশ্বাস করবে, সে যে-ই হোক না কেন, তার পুরস্কার আমার কাছে রয়েছে। তার কোনো ভয় নেই, সে কোনো দুঃখও করবে না।”

এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার: আল্লাহর تعالى কাছে একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। তিনি تعالى কোনো ইহুদি বা খ্রিস্টান বা সনাতন ধর্ম পাঠাননি। তাঁর تعالى কাছে এইসব নাম দেওয়া ধর্মের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। এগুলো সব মানুষের দেওয়া নাম। মুসা عليه السلام, ঈসা عليه السلام সহ সকল নবীর অনুসারীরা, যারাই তাদের প্রচার করা ধর্ম সঠিকভাবে অনুসরণ করে আল্লাহর تعالى আনুগত্য করেছেন, তারাই আল্লাহর تعالى দৃষ্টিতে মুসলিম ছিলেন।

ইহুদি বা জুডাইজম ধর্মের নাম নবী ইয়াকুবের عليه السلام ১২ জন সন্তানের একজন ‘জুডা’-এর নামের অনুসরণ করে রাখা, আল্লাহ تعالى কোনও ইহুদি ধর্ম পাঠাননি।[২৪১] একইভাবে খ্রিস্টান ধর্ম এসেছে যীশুখ্রিস্টের নাম থেকে, আল্লাহ تعالى খ্রিস্টান ধর্ম পাঠাননি। এই সব ধর্মের নামগুলো হয় কোনো মানুষের নামে, না হয় কোনো জায়গার নামে, না হয় কোনও বিখ্যাত মনিষীর উর্বর মস্তিষ্কের ফসল। এগুলোর কোনোটাই আল্লাহর تعالى দেওয়া নাম নয়। তাঁর تعالى দেওয়া একমাত্র ধর্মের নাম হচ্ছে ইসলাম, যার অর্থ: স্রস্টার প্রতি পূর্ণ সমর্পণ। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, অন্য সব ধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের মধ্যে মুল পার্থক্য কোথায়। একজন স্রস্টা এমন একটি ধর্ম পাঠাবেন যেটি সারা পৃথিবীর সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে, অথচ তার নাম তিনি দেবেন কোনো এক ভদ্রলোকের নাম অনুসারে, বা কোনো এক জায়গার নাম অনুসারে —এটা দাবি করাটা হাস্যকর।

ইসলাম ধর্ম রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام প্রথম নিয়ে আসেননি। আদম عليه السلام, নুহ عليه السلام, ইব্রাহিম عليه السلام, মুসা عليه السلام, ঈসা عليه السلام — এদের সবাইকে আল্লাহ تعالى যে ধর্ম দিয়েছিলেন, তার নাম ইসলাম। এরা সবাই এক আল্লাহর تعالى উপাসনা করতেন। আমরা কু’রআনেই দেখতে পাই ইব্রাহিম عليه السلام নবীর সময় থেকেই নামাজ, রোযা, হাজ্জ-এর প্রচলন ছিল। এই হচ্ছে কু’রআন অনুসারে ধর্মের ব্যাপারে মুসলিমদের অবস্থান, অমুসলিমরা নিজেদের মত যা খুশি দাবি করুক না কেন।

এই আয়াতটি রাসূল মুহাম্মাদের عليه السلام সময়ে যারা ইহুদী, খ্রিস্টান, সাবিইন ছিল, তাদেরকে নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, তারা এ পর্যন্ত যত ভালো কাজ করেছে আল্লাহর تعالى প্রতি সমর্পণ করে, সেগুলো সব আল্লাহ تعالى রেকর্ড করে রেখেছেন। সেগুলোর পুরস্কার তারা পাবে, কোনো দুশ্চিন্তা নেই। একই সাথে অতীতে যারা চলে গেছেন, নিজ নিজ যুগে যারা আল্লাহর تعالى ওপর বিশ্বাস উপস্থাপন করেছেন, তারাও পুরস্কার পাবেন, তাদেরও দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।[২][৪] এবার আল্লাহর تعالى কাছ থেকে নতুন বাণী এসেছে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই নতুন বাণী গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে যাওয়া।[৪] আর যারা আল্লাহর تعالى বাণীর সংস্পর্শে আসতে পারেনি বা কোনোদিন পারবে না, সেই সব আহলুল ফাতরাহ-দের ভালো কাজের পুরস্কারও আল্লাহর تعالى কাছে রয়েছে।[২০৪]

এই আয়াতে আল্লাহর تعالى শব্দ চয়ন খুব সুন্দর। তিনি বলেননি مَعَ رَبِّهِمْ বরং তিনি বলেছেন عِندَ رَبِّهِمْ। আরবিতে ‘কাছে রয়েছে’ বোঝানোর জন্য দুটো শব্দ রয়েছে مَعَ মা’আ এবং عِندَ ই’ন্দা। মা’আ ব্যবহার করা হয় বোঝানোর জন্য যে, কোনো কিছু অন্য কিছুর সাথে কোথাও রয়েছে।[১০] কিন্তু ই’ন্দা ব্যবহার করা হয় বোঝানোর জন্য যে, কোনো কিছু অন্য কিছুর সাথে যেখানে থাকা যথাযথ, ঠিক সেখানেই রয়েছে।[১০] যেমন, আমরা যদি বলি: ছাত্রটি প্রধান শিক্ষকের সাথে কোথাও রয়েছে — সেক্ষেত্রে মা’আ ব্যবহার করব, কারণ ছাত্রটি হয়ত প্রধান শিক্ষকের সাথে রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিচ্ছে।[১০] কিন্তু যদি বলি: ছাত্রটি প্রধান শিক্ষকের সাথে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে রয়েছে — তাহলে ই’ন্দা, কারণ সেখানে প্রধান শিক্ষক তার যথাযথরূপে রয়েছেন। এই আয়াতে আল্লাহ تعالى সুন্দর করে বলেছেন: তাদের জন্য যে শুধু পুরস্কার রয়েছে তা-ই নয়, সেই পুরস্কার রয়েছে একদম যথাযথ জায়গায়: আল্লাহর تعالى নিজের কাছে।[১০] এছাড়াও এই আয়াতে তিনি বিশেষভাবে বলেছেন, “তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে।” তিনি বলেননি “আল্লাহর কাছে রয়েছে” বা “তোমার প্রভুর কাছে রয়েছে।” তিনি বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলেছেন যে, তিনি তাদেরও প্রভু।

এই আয়াতে বলা হয়েছে: “যারা সুন্দর-ভালো-উপকারী কাজ করে…” —مُحْسِنٌ মুহসিনুন হচ্ছে যারা হাসানাহ করে। হাসানাহ শব্দটির অর্থ হচ্ছে: যা বুদ্ধিবৃত্তির কাছে গ্রহণযোগ্য এবং আকাঙ্ক্ষিত, বা যা ইন্দ্রিয়গত ভাবে চমৎকার। এটি শরীর, মন, আত্মার জন্য যা কিছুই ভালো, কাম্য, আকাঙ্ক্ষিত — তা নির্দেশ করে। সুন্দর কথা, সুন্দর কাজ, সুন্দর ব্যবহার হাসানাহ এর মধ্যে পড়ে।[২৩৯]

প্রশ্ন হলো, কে নির্ধারণ করছে কোন কাজটা ভালো, আর কোন কাজটা খারাপ?

আপনি যদি কোনো অফিসের একজন কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করেন, “ভাই, আপনি কি একজন ভালো কর্মচারী?” সে বলবে, “অবশ্যই! আমার চেয়ে নিষ্ঠার সাথে এই অফিসে আর কে কাজ করে? এই বছর আমার প্রমোশন না হলে আর কার হবে ভাই?” কিন্তু আপনি যদি তার বস্‌কে জিজ্ঞেস করেন তার ব্যাপারে, সে বলবে, “আরে ওই ফাঁকিবাজটাকে আমি আগামী মাসেই বের করে দেব। যথেষ্ট সহ্য করেছি।”

কোন কাজটা ভালো আর কোনটা খারাপ — সেটার মানদণ্ড হচ্ছে কু’রআন। যে কু’রআনের সংজ্ঞা অনুসারে ভালো কাজ করবে, তার কোনো ভয় নেই। তার পুরস্কার আছে আল্লাহর تعالى  কাছে। আর যে অন্য কোনো ধর্মীয় বই অনুসারে ভালো কাজ করবে, সেটা যদি কু’রআনের ভালো কাজের সংজ্ঞার বিরুদ্ধে যায়, তাহলে সেটা আর আল্লাহর تعالى কাছে গ্রহণযোগ্য ভালো কাজ নয়।

যেমন, কেউ যদি সিদ্ধি লাভের জন্য মাসের পর মাস জগৎ-সংসার ত্যাগ করে বনে গিয়ে আরাধনা করে, তাহলে আপাতত দৃষ্টিতে সেটা যত ভালো কাজই মনে হোক না কেন এবং যেই ধর্মই সেটা সমর্থন করুক না কেন, এভাবে বাবা-মা, ভাইবোন, স্ত্রী, সন্তান, সমাজের প্রতি দায়িত্ব অবহেলা করাটা ইসলাম সমর্থন করে না। সুতরাং এধরনের ‘ভালো কাজের’ গ্রহণযোগ্যতা ইসলামে নেই।

অন্য দিকে কেউ যদি বাবা-মার সাথে সুন্দর ব্যবহার করে, স্ত্রী-সন্তানদের যত্ন নেয়, গরিবদের খাওয়ায়, এতিমদের দেখাশুনা করে — তাহলে এগুলো সবই হাসানাহ। এগুলোর পুরস্কার আল্লাহর تعالى কাছে রয়েছে।

যে আল্লাহতে সমর্পণ করবে — কোন আল্লাহতে?

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলেছেন, “যে-ই নিজেকে আল্লাহর تعالى প্রতি সমর্পণ করবে…” এখন প্রশ্ন হলো: আল্লাহর تعالى সংজ্ঞা কী?

খ্রিস্টানরা তাদের ‘আল্লাহর’ যে সংজ্ঞা দিয়েছে তা হলো: তিনি তিন রূপে থাকেন: পিতা ঈশ্বর, পবিত্র আত্মা এবং যিশু। এই সংজ্ঞা কি কু’রআনের বাণী অনুসারে আল্লাহ تعالى?

যে সব লোক বলে, “আল্লাহ হচ্ছেন তিনটি সত্তার তৃতীয়টি” — তারা অবিশ্বাস করে। প্রভু শুধুমাত্র একজনই। তারা যদি একথা বলতেই থাকে, তাহলে তাদের উপরে এক অত্যন্ত যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আঘাত করবে। [আল-মায়িদাহ ৭৩]

আপনি যদি একজন খ্রিস্টান পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করেন, “ভাই, আপনি আল্লাহতে বিশ্বাস করেন?” সে বলবে, “অবশ্যই, তিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, সর্বোচ্চ প্রভু। তিনি সর্বশক্তিমান।” কিন্তু তারপরেই সে বলবে, “তার সন্তান যিশু আমাদের প্রভু। তিনি ক্রসে প্রাণ দিয়ে আমাদের সকল পাপ মোচন করে গেছেন। আমরা এখন নিষ্পাপ।”

যে সব লোক বলে যে, “আল্লাহ হচ্ছেন ঈসা মাসিহ, মরিয়মের পুত্র” — তারা আল্লাহতে অবিশ্বাস করেছে।… [আল-মায়িদাহ ৭২, আংশিক]

তাদের সেই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ تعالى নন। সেই সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করলে আল্লাহতে تعالى বিশ্বাস করা হয় না। আল্লাহর تعالى একমাত্র গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দেওয়া আছে কু’রআনে, আসল ইঞ্জিল এবং তাওরাতে। কিন্তু সেই ইঞ্জিল খ্রিস্টানরা বিকৃত করে, নিজেদের ধারণা ঢুকিয়ে আল্লাহর تعالى সংজ্ঞা বিকৃত করে গেলেছে। একইভাবে আসল তাওরাতে আল্লাহর تعالى সংজ্ঞা ছিল কু’রআনের সংজ্ঞার অনুরূপ, কিন্তু ইহুদিরা সেটা বিকৃত করে আল্লাহর تعالى নামে নানা ধরনের বিকৃত ঘটনা বানিয়েছে।

ইসলামে Religious Intolerance বা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা

সুধীবৃন্দরা দাবি করে যে, ইসলাম অন্য ধর্মের মানুষদের সহ্য করে না, তাদেরকে অধিকার দেয় না, তাদেরকে কাফির লেবেল দিয়ে হত্যা করতে বলে। এজন্য তারা প্রথমেই যে আয়াতটি নিয়ে আসবে তা হলো—

নিষিদ্ধ মাসগুলো পার হলে, যেখানে মুশরিকদের পাও, ওদেরকে হত্যা কর। তাদের বন্দী কর, অবরোধ কর। প্রত্যেকটা ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাক। … [সুরা আত-তাওবাহ ৯:৫]

এই আয়াত দেখিয়ে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করে: “কু’রআন বলছে: যেখানেই মুশরিক অর্থাৎ বহুঈশ্বরবাদী বা মূর্তিপূজারিদের পাও, তাদেরকে হত্যা করো। দেখেছে? ইসলাম কী জঘন্য একটা বর্বর ধর্ম?”
এর পরের আয়াতটি তারা কখনো পড়ে দেখে না, কারণ পড়লেই তারা ফেঁসে যাবে—

কোনো মুশরিক যদি তোমাদের কাছ নিরাপত্তা চায়, তাহলে তাকে তা দেবে, যেন সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায়। তারপর তাকে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবে। আসলে তারা এমন একটা জাতি, যাদের জ্ঞান নেই। [আত-তাওবাহ ৯:৬]

কু’রআনে যদি সত্যিই সব মুশরিকদের মেরে ফেলার আয়াত থাকে, তাহলে আজকে ইন্ডিয়াতে হিন্দুরা বেঁচে আছে কি করে? মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর এবং তার উত্তরসূরিরা হুমায়ূন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহ জাহান, আওরঙ্গজেব, বাহাদুর শাহ — এরা সবাই তো যথাসাধ্য ইসলামের আইন অনুসারে শাসন করে গেছেন? এতগুলো সম্রাটদের তো সব হিন্দু মূর্তিপূজারিদের মেরে শেষ করে ফেলতে বেশি সময় লাগার কথা নয়?

সেটা তো হয়ই নি, বরং মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ে ভারত উপমহাদেশ সম্পদ, সমৃদ্ধি, সংস্কৃতি, সাহিত্যে চরম উৎকর্ষে উঠে গিয়েছিল। কেমব্রিজ ইউনিভারসিটি থেকে প্রকাশিত বই India Before Europe-এ মুঘল সম্রাটদের সময়ে ভারত উপমহাদেশে যে শান্তি, সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে আর কখনো হিন্দু, মুসলিমরা এত শান্তি, সমৃদ্ধিতে থাকেনি, যেটা মুঘল সম্রাটদের প্রথম ছয়জনের সময়ে হয়েছিল।[২৪২]

আমরা কু’রআন পড়লে দেখতে পাই, সেখানে অমুসলিম, কাফির, মুশরিকদের সাথে আল্লাহ تعالى আমাদের কী ধরনের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করতে বলেছেন—

…যদি অমুসলিম আক্রমণকারিরা নিজেদেরকে উঠিয়ে নেয়, আর যুদ্ধ না করে, তোমাদের সাথে শান্তি করতে চায়, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে কোনোই সুযোগ দেননি তাদের বিরুদ্ধে কিছু করার। [আন-নিসা ৪:৯০]

… যারা তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে বঞ্ছিত করেছে, তাদের প্রতি ঘৃণা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘন না করায়। যা কিছু ন্যায় এবং ভালো, তা করতে তোমরা একে অন্যকে (অমুসলিমদের) সাহায্য করো। অন্যায় এবং আগ্রাসনে একে অন্যকে কখনই সাহায্য করবে না। আল্লাহর কথা সবসময় মনে রাখবে। তাঁর শাস্তি খুবই কঠিন। [আল-মায়িদাহ ৫:২]

অমুসলিমরা যা বলে, তা ধৈর্য ধরে শোনো। … [ত্বাহা ২০:১৩০]

ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। সত্য পথ মিথ্যা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে।… [আল-বাক্বারাহ ২:২৫৬]

এখন বোঝার চেষ্টা করি সুরা তাওবাহ-এর ওই আয়াতটির আসল অর্থ কী। সত্যিই কি ওই আয়াত যেখানেই মুশরিকদের পাই, সেখানেই তাদেরকে হত্যা করতে বলে?

ইমাম রাজি, ইমাম জামাল, ইমাম জামাখশারি, ইমাম বাদায়ি, ইমাম নাসাফি, ইমাম বাক্বায়ি সহ সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাচীন তাফসির বিশারদরা পরিস্কার করে দেখিয়ে গেছেন যে, তরবারির এই আয়াতটির প্রেক্ষাপট হচ্ছে: মক্কার মুশরিকদের বার বার শান্তি চুক্তি করে তারপর ভেঙ্গে ফেলা এবং চুক্তি ভেঙ্গে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করার ঘটনা।[২০৯] এটি কোনো সাধারণ আয়াত নয়। সুরা তাওবাহ’র প্রথম আয়াত থেকে কেউ পড়া শুরু করলেই দেখতে পাবে যে, আল্লাহ সেই বিশেষ ঘটনার বর্ণনা করছেন এবং শুধুমাত্র সেই যুদ্ধের সময় তিনি মুশরিকদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর জন্য আপনার কোনো তাফসির পড়ার দরকার নেই। ধৈর্য ধরে এর আগের চারটি আয়াত এবং পরের কয়েকটি আয়াত পড়লেই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যাবে। অথচ কিছু চরমপন্থি মুসলিমরা এবং অমুসলিমরা এই একটি আয়াতকে তার প্রেক্ষাপট থেকে আলাদা করে, একটি ধারাবাহিক ঘটনা থেকে বের করে নিয়ে এসে, যে কোনো যুগে, যে কোনো সময়ে, যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য বলে দাবি করছেন।
ইসলামকে আক্রমণ করাটা যারা নেশা এবং পেশা হিসেবে নিয়েছেন, তারা খুঁজে খুঁজে তাফসির ইবন কাছির থেকে এই উক্তিটি খুঁজে বের করেছেন—

এই আয়াতটি নবি মুহাম্মাদ عليه السلام এবং মুশরিকদের মধ্যে যত শান্তি চুক্তি, আপোষ নামা, শর্ত মেয়াদ রয়েছে —তার সব বাতিল করে দিয়েছে। [তাফসির ইবন কাছির][২১০]

এটা দেখিয়ে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, সুরা তাওবাহ’র “যেখানেই মুশরিক পাও, হত্যা কর” — এই নির্দেশটা কু’রআনের বাকি সব শান্তি প্রিয় আয়াতকে বাতিল করে দিয়েছে।

প্রথমত, এটা কোনো তাফসির নয়। ইবন কাছির এই আয়াতের ব্যাখ্যায় নিজে থেকে এই কথা বলেননি। তিনি শুধুই আদ-দাহাক বিন মুযাহিম-এর একটি উক্তিকে তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয়ত, এটি আদ-দাহাক-এর নিজের মত। সেটি বেশিরভাগ ইসলামের আলেম, তাফসির বিশারদের মতামত নয়। তৃতীয়ত, কু’রআনের এক আয়াত অন্য আয়াতকে বাতিল করতে পারে — এই ধারণাটার প্রবর্তক এক শ্রেণীর আলেম। সব আলেম বা মতবাদ এই ধারণার সমর্থন করেন না।

আসল কথা হলো, যেখানে কু’রআনের আয়াত বলছে: মুশরিকরা যদি শান্তি চায়, তাহলে তাদেরকে শান্তি দিতে মুসলিমরা বাধ্য, এবং তাদেরকে কোনো জোর-জবরদস্থি না করে, শান্তিপ্রিয় ভাবে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে, সেখানে কোথাকার কোন আলেম কী উক্তি দিল, কী ব্যাখ্যা দিলো, তাতে কিছুই যায় আসে না। সেই আলেম নবী মুহাম্মাদ عليه السلام নন।

জিযইয়া বা অমুসলিমদের উপর কর

ইসলামে  ٱلْجِزْيَةَ জিযইয়া বা অমুসলিমদের উপর কর আরোপ করা নিয়ে অনেক সুধীবৃন্দ তর্ক দেখান: কেন ইসলাম অমুসলিমদের কর দিতে বাধ্য করবে? কর না দিলে কেন তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা হবে? ইসলামে কি মানুষের স্বাধীনতা নেই?

আসুন দেখি যেই আয়াত নিয়ে এত তর্ক, সেই আয়াত কী বলে—

আহলে কিতাবের যে সব মানুষরা: ১) আল্লাহ تعالى এবং শেষ বিচার দিনে বিশ্বাস করে না, ২) যারা আল্লাহ تعالى এবং তার রাসুল عليه السلام যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা নিষেধ করে না, ৩) কিতাব যাদেরকে দেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে সত্য ধর্মকে গ্রহণ করে না — ওইসব মানুষদের সাথে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা কর দিয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ না করছে। [আত-তাওবাহ ৯:২৯]

এই আয়াতে এমন একদল মানুষের কথা বলা হচ্ছে, যারা কিছু গুরুতর অবাধ্যতা দেখায়—
১) তারা এক সর্বোচ্চ স্রস্টায় বিশ্বাস করে না এবং তারা মনে করে না যে, একদিন তাদের পাপের বিচার হবে এবং তাদেরকে কোনো ধরনের শাস্তি পেতে হবে। সুতরাং তারা যা খুশি করতে পারে, কারণ শেষ বিচার বলে কিছু নেই। শেষ বিচারে বিশ্বাস না থাকলে মানুষ কোথায় নামতে পারে, তা নিয়ে আল-বাক্বারাহ’র ৬২ আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
২) তারা আল্লাহ تعالى এবং তার রাসুল عليه السلام যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা নিষেধ করে না। অর্থাৎ খুন, ব্যাভিচার, বাবা-মা’র সাথে দুর্ব্যবহার, প্রতিবেশীর হক নষ্ট, গালাগালি, চোগলখুরি, অন্যায় ভাবে অন্যের সম্পদ লুট, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত দাফন; স্বামী মারা গেলে বিধবা স্ত্রীকে পুড়িয়ে ফেলা; সমাজের মধ্যে শ্রেণিভেদ তৈরি করে বিশেষ শ্রেণির মানুষদেরকে ধর্মীয় এবং সম্পদের দিক থেকে বিশেষ অধিকার দেওয়া; পরিবার-সন্তানদেরকে ফেলে রেখে, সামাজিক দায়-দায়িত্ব ছুড়ে ফেলে, বনে গিয়ে একা একা গাছের নিচে বসে ধ্যান করা ইত্যাদি —যত খারাপ কাজ আল্লাহ تعالى এবং তাঁর تعالى রাসুল عليه السلام নিষিদ্ধ করেছেন, এগুলো তারা নিষেধ করে না। তাদের কাছে এইসব কাজ পাপ নয়।
৩) যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, যেমন ইহুদি এবং খ্রিস্টান, তাদের কাছ থেকেও তারা ধর্ম গ্রহণ করে না। অর্থাৎ তারা নিজেদেরকে নামে ইহুদি বা খ্রিস্টান দাবি করলেও, তারা সেই ধর্মের মূল গ্রন্থের আইন মানে না। তারা হয় সেইন্ট পলের বানানো বিকৃত খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করে, নাহলে ইহুদি রাবাইদের হাতে লেখা ‘তালমুদ’ অনুসরণ করে নিজেদেরকে ইহুদি দাবি করে, যা জায়নিজম শিক্ষা দেয়।

এই সব মানুষদের জন্য ইসলামের আইন হচ্ছে: এইসব অবাধ্যদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে, যদি না তারা একটা কর দিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্রের সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে থাকতে চায়। এই কর শুধুমাত্র সামর্থ্য আছে এমন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। এটি নারী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য নয়। একইসাথে এই কর ধর্মীয় সাধক, সন্ন্যাসীদের উপর প্রযোজ্য নয়।[হানাফি মত][২৪০]

যেহেতু এরা মুসলিম নন, তাই তারা প্রতিবছর তাদের সম্পদের ২.৫% যাকাত দিতে বাধ্য নন, তাই তারা এই কর দিবেন সরকারের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য। সরকার তাদেরকে পানি, তেল, গ্যাস, রাস্তা, বাড়িঘর, পুলিশ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, সামরিক বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা ইত্যাদি হাজারো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ইসলামিক সরকারের কাছ থেকে এইসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিনিময়ে তাদেরকে এই কর দিতে হবে।[২৪০]

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, যেই সব সুধীবৃন্দরা জিযইয়া-কর নিয়ে এত বিরোধিতা করেন, তারাই আবার তাদের দেশের সরকারকে ইনকাম ট্যাক্স দেন, গাড়ির জন্য ট্যাক্স দেন, জমির জন্য ট্যাক্স দেন। সেগুলো দিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। যত আপত্তি আসে যখন কোনো ইসলামিক সরকার ট্যাক্স দাবি করে বসে! একইভাবে কোনও ইসলামিক সরকার তাদের উপর এই কর আরোপ করলে যত সমস্যা হয়, কিন্তু একটি খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, নাস্তিক সরকার তাদের আয় এবং সম্পদের উপর আয়কর, জমিকর, যানবাহন কর, রাস্তা কর, স্বাস্থ্য কর ইত্যাদি চার-পাঁচটা কর আরোপ করলেও কোনো সমস্যা নেই।

এইধরনের প্রকাশ্য ভণ্ডামির মধ্যেও তাদের কোনো চক্ষু লজ্জা নেই।

সব অমুসলিমরা কী কাফির?

কাফির তারাই যারা জেনে শুনে আল্লাহর تعالى বাণীকে অস্বীকার করে।যারা ইসলামের শিক্ষা পায়নি, বা যাদের কাছে ইসলামের বাণী সঠিকভাবে পৌঁছেনি, তারা হচ্ছে ‘আহলুল ফাতরাহ’ এবং তাদের পরীক্ষা হবে কিয়ামতের দিন।[২০৪] আমাদের চারপাশে যত অন্য ধর্মের মানুষরা আছে, তাদেরকে আমরা যদি ঢালাও ভাবে কাফির বলি, তাহলে আমরা একটা ভয়ংকর ভুল করব। আজকাল অনেক মুসলিমরা ইসলামের উপর কিছু ভ্রান্ত বই পড়ে কথায় কথায় মানুষকে কাফির লেবেল দেওয়া শুরু করেছে। এর পরিণতি ভয়ংকর।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো: কু’রআনের ভাষায় ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ অর্থাৎ “যারা অস্বীকার (কুফরি) করেছে” এবং ফিকহের পরিভাষায় ‘কাফির’ — দুটো আলাদা ব্যাপার।[১] যদিও ফিকহের ভাষায় সব অমুসলিমদের কাফির বলা হয়, কারণ ফিকহের ভাষায় যারাই ইসলাম মানছে না, তারাই ইসলাম অস্বীকার করছে, সুতরাং তারাই কাফির; কিন্তু কু’রআনে কিছু বিশেষ ধরনের মানুষের বেলায় ‘কাফির’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়।[১] কু’রআনের যে সব আয়াতে ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এমন কিছু মানুষের কথা বলা হয়েছে, যাদের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তারা জানে যে ইসলামের বাণী সত্য, মুহাম্মাদ عليه السلام  শেষ নবি, কু’রআন সত্যিই আল্লাহর تعالى বাণী, কিন্তু তারপরেও তারা সত্য মানবে না। তাদের ইসলাম না মানার পেছনে কোনো ভিত্তি নেই। শুধুই নিজেদের অহংকার, বংশ পরম্পরায় চলে আসা ধর্মকে মানার অন্ধ ইচ্ছা, আর নিজেদের স্বার্থ যাতে নষ্ট না হয়, সে কারণে নিজেদের ধর্ম, সংস্কৃতি আঁকড়ে থাকা। কু’রআনে আরেক ধরনের মানুষকে কাফির বলা হয়েছে, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে, বা মুসলিমদের ক্ষতি করার জন্য প্রকাশ্যে বা গোপনে কাজ করতে থাকে। কু’রআনের এই দুই ধরনের বিশেষ প্রজাতির মানুষদেরকে কাফির বলা হয়েছে, যারা শাস্তি পাবে।[১]

সূত্র:

  • [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
  • [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
  • [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
  • [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
  • [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
  • [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
  • [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
  • [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
  • [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
  • [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
  • [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
  • [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
  • [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [১৫] তাফসির আল জালালাইন।
  • [২০৪] আহলুল ফাতরাহ — http://www.fatwa-online.com/fataawa/creed/faith/0020113_1.htm,
    শেখ আল বাণী — তাকফির এর উপর বিস্তারিত আলোচনা: http://www.spubs.com/sps/downloads/pdf/MSC060006.pdf, http://sunnahonline.com/library/beliefs-and-methodology/106-ruling-about-ahlul-fartah-the,
    শেখ আজিজ বিন বাজ: http://www.fatwaislam.com/fis/index.cfm?scn=fd&ID=775,
    শেখ আল-জাবিরি (শেষ প্রশ্নটি দেখুন): http://abdurrahmanorg.files.wordpress.com/2013/10/the-excuse-of-ignorance-e28093-shaykh-ubayd-al-jaabiree.pdf
  • [২০৯] “Jihad, Abrogation in the Quran & the Verse of the Sword” http://seekersguidance.org/ans-blog/2010/11/06/jihad-abrogation-in-the-quran-the-verse-of-the-sword/
  • [২১০] তরবারির আয়াতের ব্যাখ্যা – তাফসির ইবন কাছির http://www.qtafsir.com/index.php?option=com_content&task=view&id=2581&Itemid=64
  • [২৩৯] حسن এর বিস্তারিত অর্থ http://seekersguidance.org/ans-blog/2009/08/16/what-is-the-difference-between-barakah-hasanah-and-nimah/, http://ejtaal.net/aa/img/br/2/br-0234.png
  • [২৪০] জিযইয়া এর নিয়ম হানাফি মতবাদ অনুসারে — http://islamqa.org/hanafi/daruliftaa-birmingham/20014
  • [২৪১] ইহুদি ধর্মের নামের উৎপত্তি — http://www.jewfaq.org/whoisjew.htm
  • [২৪২] মুঘল সম্রাটদের ইতিহাস — Asher, C. B.; Talbot, C (1 January 2008), India Before Europe (1st ed.), Cambridge University Press, ISBN 978-0-521-51750-8, http://en.wikipedia.org/wiki/Mughal_Empire
  • [২৪৩] বাংলা বাইবেল — http://www.bibleleague.org/resources/bible-download/bengali-bible
  • [২৪৪] ভগবৎ গীতা: ধর্মীয় স্বতন্ত্রতা এবং সহিষ্ণুতা — http://www.bhagavad-gita.org/Gita/verse-09-03.html, http://www.bhagavad-gita.org/Gita/verse-18-63.html
  • [২৪৫] Willie E. Honeycutt “An Analysis and Appraisal of the Exclusivist Claims of Hinduism, Buddhism and Christianity” http://www.phc.edu/UserFiles/File/_Other%20Projects/Global%20Journal/10-1/Will_Honeycutt_AnalysisAndAppraisal_vol_10_no_1.pdf
  • [২৪৬] ঋগ্বেদ, যজুর্ব্বেদ, অথর্ববেদ: অসহিষ্ণুতা ও স্বতন্ত্রতার দাবি — http://www.sacred-texts.com/hin/rigveda/rv01176.htm, http://www.sacred-texts.com/hin/rigveda/rv07104.htm, http://www.archive.org/stream/yajurveda029670mbp/yajurveda029670mbp_djvu.txt, http://vedabase.net/sb/4/4/17/en

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

39 thoughts on “প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যি বলে থাকো — আল-বাক্বারাহ ১১১-১১২”

  1. কুরআন এবং ইসলাম সম্পর্কে আপনার পরিশ্রম, গবেষণা এবং চমৎকার উপস্থাপনার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।।

  2. মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর এবং তার উত্তরসূরিরা হুমায়ূন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহ জাহান, আওরঙ্গজেব, বাহাদুর শাহ — এরা সবাই তো যথাসাধ্য ইসলামের আইন অনুসারে শাসন করে গেছেন? এতগুলো সম্রাটদের তো সব হিন্দু মূর্তিপূজারিদের মেরে শেষ করে ফেলতে বেশি সময় লাগার কথা নয়?

    Is Akbar was a muslim.You need to read more about AKbar.

    1. We will leave the judgement of whether he was a muslim or not (due to his hindu wife) to Allaah, because Allaah is the only judge of someone’s belief. However, the statement here does not say they were all ideal muslims, instead it says: they ruled as per shariah as much as they could.

      1. So far I know Akbar made a new religion named Din -e -Ilahi which is the mixed of rules of Islam and Hinduism. After this how is he a muslim?

  3. যারা আল্লাহর নাযিলকৃত সমাধান দিয়ে ফয়সালা করে না তারাই কাফের, সুরা মায়িদা ৪৪।

  4. কুরআন হলো সর্ব শেষ্ঠ কিতাব যা সুরা বাক্কার 2 আয়াতে আছে। আর কেউ যদি মনে করে কুরআন কোন বনানা কিতাব তাহলে তারা যেন সুরা বাক্কার 23 আয়াতের মুকাবিলা করে। যা আরবের বিখ্যাত কবি লাবিদ করতে গিয়ে লিখে (লাইছা হাযা কালামুল বাসার =অর্থ এটা মানুষের কোন কথা নয়)

  5. হিন্দুদের বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করলেন কেন??? বাস্তবিক অর্থ আর ধাতু গত অর্থের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে।।।।
    ইসলাম সম্পর্কে আমাদেরও কম বেশি ধারণা আছে।।। আপনার কুরান যদি সঠিক গ্রন্থ হয় তাহলে আমার ধর্ম সম্পুর্ন ভাবে সঠিক।।।
    আমি গর্বিত, আমি হিন্দু।।
    “জয় শ্রী কৃষ্ণ”

    1. ভাই, কোনো ধর্মকেই বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। ধর্মীয় গ্রন্থে যা লেখা আছে, সেটাই হুবহু তুলে ধরা আছে। আপনার কাছে যদি আপনার ধর্মের গ্রন্থের কথাগুলো আপত্তিকর মনে হয়, তাহলে কি আপনার আরেকবার ভেবে দেখা উচিত না যে, আপনি সঠিক ধর্ম অনুসরণ করছেন কিনা?
      আর আপনি যে অর্থের ব্যাপারটা বললেন, সে ব্যাপারে আমি জানি। আপনি যদি রেফারেন্স সহ ভুল ধরিয়ে দিতে পারেন, অবশ্যই সংশোধন করে দেবো। আমি হিন্দু ধর্ম গ্রন্থের ব্যাখ্যা পড়ে বুঝে তারপরে গীতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি।
      আপনার শেষ কথার সাথে একমত হতে পারলাম না। দুটো বিপরীত জিনিস কখনই একইসাথে সত্য হতে পারে না। একটি সত্য হলে অন্যটি অবশ্যই মিথ্যা। যদি ইসলাম সত্য হয়, তাহলে হিন্দু ধর্ম মিথ্যা। যদি হিন্দু ধর্ম সত্য হয়, তাহলে ইসলাম মিথ্যা। আসুন উম্মুক্ত মনে খুঁজে দেখি কোনটা সত্য।

      1. হিন্দু / সনাতন ধর্ম এইটা নিয়ে আপনার ধারনার দৌড় খুবই যৎসামান্য আর একটু পড়া লেখা করে তারপর অন্যকে নেয়ে লিখলে মনে হয় ভালো । সনাতন ধর্ম Monotheism কে অস্বীকার করেনি … যাই হোক আপনার সাথে এতো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না কেন জানি , অন্য কে নিয়ে নিন্দা করার আগে তার বেসিক টা জেনে করবেন আশা করি … জাজাকাল্লহ

        1. লেখার কোথায় ভুল পেয়েছেন তা রেফারেন্স সহ দেবেন। পরিবর্তন করে দেব। অনুগ্রহ করে রেফারেন্স দেবেন। নিজের ব্যক্তিগত মত দেবেন না।

  6. আল্লাহ আপনার শ্রমকে কবুল করক৷বহু মানুষ উপকৃত হওক৷আমীনঃ

  7. সালাম,ভাইয়া
    লেখাটায় অনেক ভুল আছে।আপনার উচিত ছিলো নিরপেক্ষভাবে আর্টিকেলটি লিখা,সালাম

    1. সালাম ভাই, ভুলগুলোর সংশোধন রেফারেন্স সহকারে দেবেন। অবশ্যই সংশোধন করে দেব। তবে অবশ্যই একাডেমিক রেফারেন্স দিতে হবে। কারও ব্যক্তিগত মতামত দিলে হবে না।

  8. আশ্চর্য লাগে, যখন দেখি কেউ দাবি করে আর্টিকেলে ভুল আছে বলে দাবি করে কিন্তু রেফারেন্স সহ ভুল গুলো দেখাতে বললে তখন এক্কেবারে নিশ্চুপ!!

  9. দাদা আপনার কোন ধারনা আছে গীতা, চতুর্বেদ সৃষ্টি ঠিক কখন হয়েছিল? ধারনা নেই। থাকলে প্রত্যেকটি বানীকে সঠিক ভাবে বোঝার চেষ্টা করতেন। শুনুন হিন্দু ধর্মকে সনাতন ধর্ম বলা হয়, কারন হিন্দু ধর্ম সবচেয়ে পুরাতন ধর্ম। রামায়ণ,মহাভারত এ বর্ণিত প্রত্যেকটি ঘটনা যে সত্য তা বহু তীর্থস্থান ও লোকমুখে প্রমাণ মেলে। রামায়ণ, মহাভারতে বর্ণিত কিছু চরিত্র আজও পৃথিবীর বুকে জীবিত! কারণ তারা অমর। ভগবান শ্রীবিষ্ণুর সর্বশেষ অবতার কল্কির আগমনের ও তাঁর কর্মে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে তাঁরা অমর।
    চতুর্বেদ সৃষ্টি করেছেন স্বয়ং ব্রহ্মা মানব জীবন সৃষ্টির প্রাক্কালে, মানব জীবন যাপনের রীতি নীতি বর্ণিত তাতে। গীতা রচিত হয়েছে মহাভারতের সর্বশেষ যুদ্ধ (যা ধর্মযুদ্ধ নামেও পরিচিত, কারন এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিলো অধর্মকে পরাজিত করে ধর্মকে স্থাপন করা) এর শেষ পর্যায়ে, ভগবান বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণ, নিস্পাপ অর্জুনকে ধর্মজ্ঞান দিচ্ছেন যখন যুদ্ধভূমিতে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য তখনও ইসলাম, খৃষ্টান বা অন্য কোন ধর্ম প্রচলিত হয়নি। আমাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ি কর্মই ধর্ম । কর্ম অর্থাৎ যার দ্বারা মানব জাতির মঙ্গলসাধন ও উন্নতিসাধন করা হয়, তাই হল ধর্ম। অধর্ম হলো হিংসা, হানাহানিতে মানব জাতির ক্ষতিসাধন করা। সৃষ্টি শুরুর পূর্বকাল থেকেই অশুভ শক্তি বা শয়তান, রাক্ষস, অসুরকূলের অস্তিত্ব রয়েছে। সেই অশুভ শক্তির উপাসকরা কখনও মানবজাতির ভালো করেনা, অধর্মের পথে যারা চলে তারাও মনবজাতির মঙ্গল করেনা। এরা পৃথিবী তে অশান্তি ছড়ায়। এদেরই ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে।
    হিন্দুধর্মগ্রন্থ রচনার সময় ইসলাম, খৃষ্টান বা বর্তমান কালের অন্যান্য ধর্মগুলির কোন অস্তিত্ব ছিলোনা। তাই এসব ধর্মের কথার কোন উল্লেখ নেই।
    সর্বশেষে ধর্ষন, অন্যায় বা হত্যালীলার যে বর্ননা দিয়েছেন তার উপদেশ সম্পূরর্নরূপে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কারনে কিছু মানুষ সৃষ্টি করেছে, আবার কিছু নামী, গুনী মানুষ হিন্দু শাস্ত্রের সহায়তায় সেগুলিকে খারাপ প্রমাণ করে বন্ধ করতেও সক্ষম হয়েছেন। এসব দুরাচার কখনই ভগবানসৃষ্ট কোন গ্রন্থের অংশ নয়।
    সর্বশেষ বলি, নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার দৌড়ে অন্য ধর্মকে ছোট করার অযথা প্রয়স করবেননা। তাতে আপনার ধর্মকেই ছোট করা হবে।

    1. দাদা, প্রথম মানব আদম থেকে ইসলামের শুরু। ইসলাম কোনো নতুন ধর্ম নয়। সৃষ্টিকর্তা প্রথম মানুষকে যেই শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেটাই ইসলাম। যুগে যুগে নবীরা এসেছেন মানুষের ইসলামকে ভুলে যাওয়া, এবং নিজেদের খেয়াল খুশি মতো বানানো ধর্ম থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য। মানুষ ইসলামের ধর্ম গ্রন্থ বানায়নি, যা হিন্দু ধর্মে করা হয়। বরং ইসলামে সরাসরি আল্লাহর বাণীকে মুখস্ত করে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
      আমার আর্টিকেলে সনাতন ধর্ম নিয়ে যে কথাগুলো বলা আছে, তার প্রতিটির রেফারেন্স দেওয়া আছে। আপনি যদি রেফারেন্স সহকারে কোনো ভুল ধরিয়ে দিতে পারে, আমি অবশ্যই সংশোধন করবো। কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত মত দেবেন না। ব্যক্তিগত মত দিয়ে ধর্ম হয় না। আপনার মতের পক্ষে যথাযথ রেফারেন্স থাকলে দিন।

  10. যারা মুসলিম ব্যতীত কেউ কি ঈশ্বর কে লাভ করতে পারব। যদি না পারে তাহলে কেন বা সৃষ্টি করেছেন তাদের।

  11. আপনার সমস্ত ধারণাটি ভুল। অন্ধ ব্যক্তির হাতি দর্শন হয় না। কেউ পা স্পর্শ করে বলে হাতি গাছের মত, কান ধরে কেউ বলে কুলোর মত, লেজ ধরে কেউ বলে দরির মত। বাস্তবে যার চক্ষু আছে সেই জানে হাতি দেখতে কেমন? আপনি শুধু নেগেটিভ ব্যাপারগুলো তুলে ধরলেন ভ্রান্তি সৃষ্টিকরা কি দরকার আপনার? গীতা সম্পর্কে সঠিক জানতে ভিজিট করুণ শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা – যথার্থ গীতা – মানব-ধর্মশাস্ত্র: http://www.youtube.com/playlist?list=PL33EnkVgY6o-XRjn8mMT3QLVal1UOD4-J

    অথবা:-www.yatharthgeeta.com

    1. ঢালাওভাবে অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য না করে, লেখার কোথায় ভুল পেয়েছেন তা রেফারেন্স সহ দেবেন। পরিবর্তন করে দেব। অনুগ্রহ করে রেফারেন্স দেবেন। নিজের ব্যক্তিগত মত দেবেন না।

  12. এছাড়াও হিন্দু ধর্ম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম যেখানে তার দেবতাদের সাধারণ মানুষ-নারীদের ধর্ষণ করার বর্ণনা রয়েছে, যা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, কোনও পাপ নয়। যুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতিদের শত শত কুমারী দাসী উপহার, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের উপহার হিসেবে দেওয়ায় উৎসাহ দান, স্ত্রী স্বামীকে তুষ্ট করতে না চাইলে তাকে মারার নির্দেশ, মেয়েদের বীরদর্পে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেওয়া, সমাজের এক শ্রেণীর মানুষদের জন্ম সূত্রে সারাজীবন আরেক শ্রেণীর মানুষের দাস হয়ে থাকা, বিধবাদের মৃত স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারা, যুদ্ধে নারী এবং শিশুদের হত্যা করা, নারীদের কোনও উত্তরাধিকার না দেওয়া, কালো চামড়ার থেকে সাদা চামড়ার মানুষ এবং দেবতাদের সাদা চামড়ার প্রশংসা ইত্যাদি জঘন্য সব অপধারণার প্রচলন করেছে। এগুলো সবই সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুসারে গ্রহণযোগ্য।

    হিন্দুদের কোন ধর্মগ্রন্থে বলেছেন যে এইগুলা গ্রহণযোগ্য তার প্রমাণ দিন। এগুলো অত্যাচারী শাসক শ্রেণীরা করেছেন হয়তো বা! আপনি যদি আপরাধ করেন তার জন্য আমি কি বলতে পারি আপনার ধর্মে এগুলো গ্রহণযোগ্য? হিন্দুদের কোন ধর্মগ্রন্থে বলেছে এগুলো পাপ নয় এই সব গ্রহণ যোগ্য তার প্রমাণ দিবেন…সেই গ্রন্থটার নাম বলেন যে গ্রন্থটা বলেছে এই খারাপ কাজগুলো গ্রহণযোগ্য। এড়িয়ে যান কেন? মনগড়া লেখা লিখে যাবেন কি?

  13. খুব ভালো লিখেছেন। আমি শুধু একটা প্রমান ও একটাই প্রশ্ন করতে চাই।
    গীতার চতুর্থ অধ্যায় 11 নম্বর শ্লোক দেখুন।
    সনাতন ধর্মের আগে বা সেই সময় কোনো ধর্ম ভারতের বুকে ছিলো কি??
    থাকলে অবশ্যই জানাবেন।

  14. যারা যেভাবে আমার প্রতি আত্মসমর্পণ করে, আমি তাদেরকে সেভাবেই পুরস্কৃত করি। হে পার্থ ! সকলেই সর্বতোভাবে আমার পথ অনুসরণ করে।(৪/১১)

  15. “যদি কোনো ধর্ম না দাবি করে যে, সে একমাত্র সঠিক ধর্ম, কারণ বাকি সব ধর্ম বিকৃত হয়ে গেছে, তার মানে দাঁড়ায়: সৃষ্টিকর্তা সেই নতুন ধর্ম পাঠিয়েছেন এমনিতেই সময় কাটানোর জন্য।”

    কোন যুক্তিতে ঈশ্বর যদি থেকেই থাকে, সে এই কাজ করতে পারবে না সময় কাটানোর জন্য? কিভাবে নিশ্চিত হবেন ঈশ্বর হবেন নৈতিক। হতেই পারে তিনি আপনাদেরকে মুরগি বানাতে এইসব ব্যাবস্থা করেছেন?

    এখন আসুন আল্লাহ নিজে কোরান রক্ষণাবেক্ষণ করতে চেয়েছেন, এবং আপনাদের মতে এতে তিনি সফল। আচ্ছা তারমানে পূর্ববর্তী কিতাব গুলো সংরক্ষণ করতে তিনি চান নি। যদি চেয়েই থাকেন তাহলে আপনাদের কথামতই তিনি ব্যার্থ হয়েছেন (যেহেতু সেগুলো বিকৃত হয়ে গেছে)। তারমানে সেগুলো এক ধরণের সময় নষ্টই বলা যায়।

    আচ্ছা, ঈমান যেহেতু খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে শক্ত পরীক্ষা, তাহলে সবচেয়ে অযৌক্তিক ধর্মে যে ঈমান আনতে পারবে সেই কি বড় ঈমানের পরিচয় দিচ্ছে না?

    সর্বোপরি, ঈশ্বর যদি একটাই ধর্ম পাঠিয়েই থাকেন, সেটা যে সহিষ্ণুই হবে, লজিকাল ই হবে এমন কোন কথা নাই। ঈশ্বর চাইলেই অসহিষ্ণু হতে পারেন। তাই এই আলোচনার মানে কি থাকে?

    1. “কোন যুক্তিতে ঈশ্বর যদি থেকেই থাকে, সে এই কাজ করতে পারবে না সময় কাটানোর জন্য? কিভাবে নিশ্চিত হবেন ঈশ্বর হবেন নৈতিক। হতেই পারে তিনি আপনাদেরকে মুরগি বানাতে এইসব ব্যাবস্থা করেছেন?”

      — এই নিয়ে গত হাজার বছরে বহু ফিলসফার ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। Argument from objective moral truth, Argument from conscience ইত্যাদি পড়ে দেখতে পারেন। কমেন্ট করে এটা বোঝানো সম্ভব না। আগে এই ধারনা মাথায় ঢুকানোর জন্য মানসিক ক্যাপাসিটি তৈরি করতে হয়। না হলে তা মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। একারণে বই না পড়ে এই ব্যাপারে কোনও উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব না। এটা এতোটাই যুক্তিযুক্ত এবং স্বাভাবিক ব্যাপার যে, একে অযৌক্তিক মনে করাটা পরিষ্কার দেখিয়ে দেয় চিন্তা ভাবনার গভীরতা এখনো যথেষ্ট হয়নি এই ধারনাটা আবশ্যিকতা ধরতে পারার জন্য।

      “এখন আসুন আল্লাহ নিজে কোরান রক্ষণাবেক্ষণ করতে চেয়েছেন, এবং আপনাদের মতে এতে তিনি সফল। আচ্ছা তারমানে পূর্ববর্তী কিতাব গুলো সংরক্ষণ করতে তিনি চান নি। যদি চেয়েই থাকেন তাহলে আপনাদের কথামতই তিনি ব্যার্থ হয়েছেন (যেহেতু সেগুলো বিকৃত হয়ে গেছে)। তারমানে সেগুলো এক ধরণের সময় নষ্টই বলা যায়।”

      — আফ্রিকার কোনও জঙ্গলে আদি বাসিদের কাছে পাঠানো কিতাব দিয়ে বিংশ শতাব্দীর জটিল মানব সমাজ চালানো সম্ভব না। একইসাথে বিংশ শতাব্দীর আধুনিক জটিল মানবজাতির জন্য যা যা নির্দেশ দরকার সেগুলো আফ্রিকার জংলিদের দেওয়াটা নির্বুদ্ধিতা। একারণে আগের কিতাবগুলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উপযোগী হবে না দেখে সেগুলো সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়েনি।

      “আচ্ছা, ঈমান যেহেতু খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে শক্ত পরীক্ষা, তাহলে সবচেয়ে অযৌক্তিক ধর্মে যে ঈমান আনতে পারবে সেই কি বড় ঈমানের পরিচয় দিচ্ছে না?”
      — পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা থাকতে হবে। অন্ধ বিশ্বাসের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। আল্লাহ অপ্রয়োজনীয় কাজ করেন না।

      “সর্বোপরি, ঈশ্বর যদি একটাই ধর্ম পাঠিয়েই থাকেন, সেটা যে সহিষ্ণুই হবে, লজিকাল ই হবে এমন কোন কথা নাই। ঈশ্বর চাইলেই অসহিষ্ণু হতে পারেন। তাই এই আলোচনার মানে কি থাকে?”

      — নির্ভর করে ঈশ্বর বলতে আপনি কী বোঝেন। ঈশ্বর বলতে যদি আপনি মানুষের থেকে উন্নত, বুদ্ধিমান কোনও সত্তা মনে করেন, তাহলে আপনার সেই ঈশ্বর ইল্লজিকাল কাজ করবে। কিন্তু ঈশ্বর বলতে আমরা মুসলিমরা যেই সব গুণের সমন্বয়ে একজন সত্তায় বিশ্বাস করি, তার বেলায় কোনও ধরনের ইল্লজিকাল কাজ করার প্রশ্নই ওঠে না, কারণ সেটা আল্লাহর ডেফিনিশনের সাথে কন্সিস্টেন্ট হয় না।

      আপনার প্রশ্নগুলো পড়ে আমি বুঝতে পারলাম আপনি চিন্তা করছেন। যেটা খুব ভালো লক্ষণ। কিন্তু আপনার চিন্তাগুলো এলোমেলো, ইঙ্কন্সিস্টেন্ট, ইঙ্কহেরেন্ট। খুব সম্ভবত আপনি ল্যাঙ্গুয়েজ, লজিক, ফিলসফি নিয়ে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা করেননি। একারণে আপনি একেবারেই স্কুল বয় আর্গুমেন্ট তৈরি করছেন। আপনাকে সাজেস্ট করবো এই তিন বিষয়ে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনো করতে। আপনি নিজেই অনেক প্রশ্নর উত্তর পেয়ে যাবেন, এবং আপনি তখন এমন সব প্রশ্ন করতে পারবেন, যেগুলো প্রয়োজনীয় প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত আপনার প্রশ্নগুলো হচ্ছে একেবারেই …

      আপনার সাথে আমার আলোচনা এখানেই সমাপ্তি।

  16. Argument from objective moral truth, argument from conscience, euthyphro dilemma and the third option claimed by theist এসব আমার জানা আছে। এসব ই বহু ফিলোসফারের কাজ দ্বারা বাতিল ও হয়ে গেছে বহু আগেই। এইসব নন্সেন্সিকাল সমাধান আমারে খাওয়াতে পারবেন না। আমি আপনার লেখায় কি কি জিনিস এস্টাব্লিশ করা হয় নাই সেগুলা নির্দেশ করতে প্রশ্মগুলা লিখছিলাম। সে যাই হোক এসব আপনি বুঝবেন বলে মনে হয় না। কারণ, স্বীকার করেন আর নাই করেন ঈশ্বর এমন এক ধারণা যেটা সম্পর্কে কিছুই জানা সম্ভব না। সেখানে আপনি মনে করেন আপনি প্রিসাইজলি অনেক কিছু জেনে বসে আছেন যেমন তিনি মহিলারা কি পোষাক পড়লে তিনি রুষ্ট হবেন না, মুখে দাড়ি ন মোছ থাকলে তিনি খুশি হবেন থেকে শুরু করে তার ব্যাপারে বহু জিনিস জানেন বলে দাবি করেন। ওই যায়গায় বসে থাকলে শুধু ঈশ্বর ধারণার অবমূল্যায়ন ই করা হবে। যেটা নিশ্চিতভাবে জানেন না, জানা সম্ভব না, সেটার ব্যাপারে দাবি করা সবচেয়ে বড় ভণ্ডামি এমনকি আপনার ঈশ্বরের কাছেও।

    লিখেছেন পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা থাকতে হবে, এবং ঈশ্বর অপ্রোয়জনীয় কাজ করেন না। প্রশ্ন হচ্ছে করেন না এটা আপনার দাবী, প্রমাণ করা সম্ভব না, এবং করেন না আর তার পক্ষে করা সম্ভব না দুইটা আলাদা জিনিস। সংজ্ঞানুজায়ী তিনি করতে পারেন এবংং এটা জানা সম্ভব না যে করেছেন কিনা। আবার সেই আপ্নি যা জানেন না সে বিষয়ে দাবি করে বসলেন এমন কি ঈশ্বরকে প্রয়োজনীয়তার মুখাপেক্ষী বানায় দিলেন।

    কিতাব বিষয়ে যা বললেন পুরা ননসেন্সিকাল দাবি, এইসব ভুজুং কেউ বিশ্বাসী না হলে দেয়া থেকে বিরত থাকা ভাল। আর আফ্রিকার মানুষের কাছে দেয়া বাণী আর পেগান আরবদের কাছে দেয়া বাণী নিয়ে যেউ অদ্ভুতুড়ে যুক্তি খাড়া করলেন সেটা শুধু স্টুপিডই না, চুড়ান্ত ইগ্নোর‍্যান্ট।

    আপনি লজিকাল ইল্লজিকাল ইশ্বর নিয়ে যা বল্লেন, আপনারা কি বিশ্বাস করেন তাতে কি আসে যায়। বিশ্বাসে বস্তু মিলিতে পারে, ঈশ্বর তো আর না। ঈশ্বর হতে হলে একটা ক্রাইটেরিয়ায় ই পুরণ করতে হয়। তার মানে এই নয় যে তিনি ইচ্ছা করে ইলজিকাল কিছু মানুষ কে বোকা বানাতে করতে পারবেন না। আপনি যদি বলেন আপনার ঈশ্বর এটা খারাপ হতে পারে না, এই হতে পারে না, সেই হতে পারে না তাহলে তো সে ঈশ্বর ই থাকে না। আপ্নি যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন তাতে কনফ্লিক্টিং রেজাল্ট আসতে পারে। যুক্তিবিদ্যার বেসিক হচ্ছে এই ধরণের মেথড অনুসরণ না করা।

    যে বিষয়গুলা পড়তে বল্লেন, সেগুলা আমার ন জানা, পড়া কিছু না। তবে এতসব জানার পরে যে আপনি ঈশ্বরের ব্যাপারে এত শিওর হয়ে গেছেন যে তিনি কারে কারে ওইফাইয়ের মাধ্যমে সত্যি ওহি পাঠাতেন এবং কি পাঠাতেন, সেটা জেনেই আমার আপনার এইসব ব্যাপারে জ্ঞ্যান কত তা বুঝা হয়ে গেছে। এবং জেনে যেহেতু গেছেন আপ্নার ফারদার জানার পথ ও রুদ্ধ।কি আর করা, আপনাকে আর জানতে বলে তো লাভ নাই৷ সব জেনে বেহেশতে যান।

  17. ভাই আপনার পরিশ্রম আমার কাছে যথেষ্ট ভাল লেগেছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন। আপনি বেদ থেকে যা যা বললেন, তা দেখে মনে হচ্ছে যারা খারাপ পাপী তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন– [অথর্ববেদ ১২:৫:৬৫-৭১] হে গরু দেবী, ব্রাহ্মণদের অত্যাচারী শাসক, পাপী, কৃপণ, ঈশ্বর নিন্দুকদের … ধড় এবং মাথা কেটে ফেল।

    [যজুর্ব্বেদ ১৭:৩৮] হে আমাদের লোকেরা, সেনাপতিকে উৎসাহ দাও, যেন সে তার শারীরিক, মানসিক, সামরিক ক্ষমতা দিয়ে শত্রুর পরিবারগুলোকে তছনছ করে, তাদের জমি জোর করে দখল করে, অস্ত্র দিয়ে শত্রুদেরকে হত্যা করে, শত্রুদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে দমিয়ে রাখে এবং পরাজিত করে। সেনাপতি যেন অতুলনীয় বলিষ্ঠটা সহকারে শত্রুর পরিবারগুলোকে তছনছ করে, যে নির্দয়, রাগে হিংস্র, শত্রুদের দ্বারা অদমনীয়, যুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, বিজয়ী…

    এইখানে শত্রুদের হত্যা করার কথা বলা হয়েছে এবং সেনাপতি কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার মানে যুদ্ধক্ষেত্রের কথা বলা হয়েছে।

    আমি আপনার বুদ্ধিমত্তাকে কোন প্রশ্ন করছি না। আমিও একজন মুসলিম। আমি রাসুল(স) এর কথা পালন করছি। তিনি আমাদের কে শিক্ষা দিয়েছেন কোন নতুন তথ্য আসলে তা verify করে নিতে (Sunan Abī Dāwūd 4972)

  18. আমার একটি প্রশ্ন ছিলো তা হলো, যারা মুসলমান বা মুসলিম নাহ,অন্য ধর্মের অনুসারি কিন্তু সবসময় ভালো কাজ করেছেন তাদের আখিরাতের পরিণতি কি হবে?তারা কি জান্নাত পাবে?
    এবং যেকোন অন্য ধর্মের অনুসারীর আখিরাতের পরিণতি কি হবে?

  19. হা এছাড়া অনেক বৈজ্ঞানিক ভুল আছে। হেদু ধর্ম আসলেই হাসির খোরাক

  20. হেদুদের কৃষ্ণ এক জায়গায় বলে সবাই তার আবার আরেক জায়গায় বাকি ধর্মকে অবহেলা করে। কৃষ্ণ নামের কাল্পনিক চরিত্র মেয়েদের কাপড়ও নাকি চুড়ি করেছে।
    আসলে এদের ধর্মের অনেক বৈশ্যাদৃশ্য আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *