আল্লাহর কাছ থেকে তোমাকে রক্ষা করার জন্য তুমি কাউকে পেতে না — আল-বাক্বারাহ ১২০

ইহুদি, খ্রিস্টানরা রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام-কে মানুষ হিসেবে বেশ পছন্দই করতো। তারা জানতো: তিনি একজন সৎ, বিনয়ী মানুষ, কোনো অন্যায় করেন না, ধনী-গরিব পার্থক্য করেন না। এমনকি তারা রাসুলের عليه السلام কাছে নিজেদের সম্পদ আমানত হিসেবেও রেখে যেত। সবদিক থেকে তারা রাসুলকে عليه السلام একজন অনুসরণ করার মত আদর্শ মানুষ হিসেবেই মানতো। তাদের বক্তব্য ছিল: লোকটা ভালোই ছিল, শুধু নিজেকে নবি বলে দাবি না করলেই পারতো। তাহলে আমাদের আর কোনো সমস্যা ছিল না।

2_120

ইহুদি নাসারারা কখনই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি তাদের মতবাদ অনুসরণ করছ। বলে দাও, “আল্লাহর تعالى পথনির্দেশ একমাত্র সঠিক পথনির্দেশ।” তোমার কাছে এই জ্ঞান আসার পরেও তুমি যদি তাদের ইচ্ছাকে মেনে চলতে চাইতে, তাহলে আল্লাহর تعالى কাছ থেকে তোমাকে রক্ষা করার জন্য তুমি কাউকে পেতে না, কোনো সাহায্যকারীও না। [আল-বাক্বারাহ ১২০]

sandstorm

এখানেই বিধর্মীদের সাথে আমাদের সমস্যা। আমরা যতই ভালো মানুষ হই, তারা আমাদের কথা, কাজ, গুণের যতই প্রশংসা করুণ না কেন, শেষ পর্যন্ত গিয়ে একটা ব্যাপারে তাদের অনেকেই আমাদের সাথে কোনো আপোষ করবে না, সেটা হলো ইসলাম। আমরা তাদের সাথে যতই ওঠাবসা করি, একসাথে পড়ালেখা করি, চাকরি-ব্যবসা করি, ছুটি কাটাতে বেড়াতে যাই, যখনি রাসুলের عليه السلام শেষ নবি হওয়ার কথা আসবে, বা আল্লাহ تعالى একমাত্র উপাসনার যোগ্য প্রভু দাবি করা হবে, তখন তাদের অনেকেই তাদের ধর্মের শিক্ষার ব্যাপারে একদম কঠোর অবস্থান নেবে এবং আমাদের সাথে কোনো আপোষ করবে না।

মেরুদণ্ডহীন মুসলিমরা হিন্দুদের বিয়ের রীতিনীতি অনুসরণ করে বিয়ে করলেও, হিন্দুদেরকে কখনো দেখবেন না মুসলিমদের রীতিনীতি অনুসরণ করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে। কুপমন্ডক মুসলিমদেরকে ক্রিস্টমাসে যীশুর জয়গানে অংশগ্রহণ, হ্যালোইন উদযাপন করতে দেখলেও, খ্রিস্টানদেরকে কখনো দেখবেন না ঈদ-উল-আযহায় কুরাবানি করে গরিবদের খাওয়াতে। যখনি মুসলিমরা এমন কিছু করবে, যেটা শুধু ইসলামেই রয়েছে, অন্য কোনো ধর্মে নেই, তখনি অন্য ধর্মের লোকেরা, বিশেষ করে ইহুদি, খ্রিস্টানরা, যারা তাদের ধর্মের ব্যাপারে কিছুটা হলেও জানে, তারা অনেকেই আর মুসলিমদের ধারে কাছেও ঘিরবে না। তারা ঠিকই তাদের ধর্মের ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আমি অবশ্যই তোমাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছি — আল-বাক্বারাহ ১১৯

আজকাল অনেক মসজিদে জুম্মার খুতবায় বা হালাক্বাগুলোতে আলোচনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকে: আমরা কত খারাপ, কত ভুল করছি, কীভাবে আমাদের চামড়া বার বার পুড়িয়ে কাবাব বানানো হবে, অমানুষিক ভাবে পিটানো হবে, গলার মধ্যে গরম পানি ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হবে, আমাদের সব কষ্টের কারণ হচ্ছে ধর্ম না মানা ইত্যাদি নানা ধরনের হতাশাকর, নির্মম কথাবার্তা। প্রতি শুক্রবার কোনোমতে বাবা-মা, স্ত্রীর ধাক্কায়, না হলে ‘লোকে কী বলবে’ এই ভয়ে মসজিদে মানুষ যাও বা যায়, কিন্তু গিয়ে এমন সব হতাশাকর, বিরক্তিকর কথাবার্তা শুনতে থাকে যে, তখন মানুষের মনে শুধু একটাই চিন্তা আসে: কখন এই লোকটা চুপ করবে, কখন নামাজ শুরু হবে, আর কত তাড়াতাড়ি আমি বাড়ি ফিরে যাবো।

এমনিতেই মানুষের জীবন যথেষ্ট সংগ্রামের, কষ্টের, হতাশার। সপ্তাহে ছয় দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় শুক্রবার মসজিদে গিয়ে আরো হতাশাকর কিছু কথাবার্তা শুনে বিমর্ষ মনে আমরা ঘরে ফিরি। আজকাল কিশোর-তরুণরা যে বাংলা খুতবা শুরু হলেই মোবাইল ফোন নিয়ে বসে পড়ে, তার জন্য তাদেরকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। দোষ হচ্ছে সেই খাতিবের, যার কথাবার্তার মধ্যে এমন কিছুই নেই, যা তাদেরকে আকর্ষণ করতে পারে।

নামাজ শুরুর ১০ মিনিট আগে সিংহভাগ মানুষ যে মসজিদে ঢোকে, সেটা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়: আমরা কী নির্মমভাবে বিফল হয়েছি সঠিকভাবে মানুষকে দাওয়াহ দিতে। গানের কনসার্টে মানুষ ঘণ্টাখানেক আগে যায়, যেন সামনের সারিতে জায়গা পাওয়া যায়, শিল্পীদেরকে নিজের চোখে কাছ থেকে দেখা যায়। আর মসজিদে মানুষ যায় একদম শেষ মুহূর্তে, তারপর জুতা রাখার জায়গায়, না হয় বের হওয়ার গেটের কাছে বসার জন্য ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়, যেন নামাজ শেষে সবার আগে বের হয়ে যাওয়া যায়।

কুরআনে বার বার বলা হয়েছে: নবি, রাসুল হচ্ছেন মানুষের জন্য সুখবরের বাহক এবং সাবধানকারী। بَشِير বাশিরুন (সুখবরের বাহক) এবং نَذِير নাযিরুন (সাবধানকারী) একসাথে কমপক্ষে ২০ বার কুরআনে এসেছে, যার মধ্যে ১৫ বারই প্রথমে বাশিরুন (সুখবরের বাহক) বলা হয়েছে। নবি-রাসুলরা আগে একজন সুখবরের বাহক, পরে একজন সাবধানকারী। কিন্তু আজকাল আমাদের দাওয়াহ দেওয়ার পদ্ধতি হয়ে গেছে: প্রথমে ১ ঘন্টা সমাজের, দেশের গুষ্টি উদ্ধার, পরে ১০ মিনিট কিছু আশার কথা।

2_119

আমি অবশ্যই তোমাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছি, সুখবরের বাহক এবং সাবধানকারী হিসেবে। তোমাকে আগুনের সাথীদের ব্যাপারে জবাব দিতে হবে না। [আল-বাক্বারাহ ১১৯]

আয়াতের শুরুতে আল্লাহ تعالى বলছেন, “আমি অবশ্যই তোমাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছি।” কু’রআন কোনো মেটাফিজিক্স বা ফিলসফির উপর বই নয় যে, এখানে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মানুষের অনুমান এবং যুক্তির উপর নির্ভর করে থিওরির পর থিওরি লেখা আছে এবং যার ভূমিকাতে লেখক আগেভাগেই বলে দেন, “আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।” কু’রআন অকাট্য সত্য —এই ঘোষণা করতে আল্লাহ تعالى দ্বিধাবোধ করেন না।

Quran
  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না? — আল-বাক্বারাহ ১১৮

আজকাল সুধীবৃন্দ প্রশ্ন করেন, “সত্যিই যদি আল্লাহ বলে কেউ থাকে, তাহলে তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? আমি তো কোনোদিন কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটতে দেখলাম না? প্রমান কী যে আল্লাহ বলে আসলেই কেউ আছেন?” প্রথমত, তাদেরকে অভিনন্দন! তারা এমন একটি জটিল, আধুনিক, যুগোপযোগী প্রশ্ন আবিষ্কার করেছেন, যা ১৪০০ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর, অশিক্ষিত, অসামাজিক বেদুইনরা রাসুলকে عليه السلام করেছিল। শুধু তাই না, তাদের আগেও নবীদেরকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর উত্তর আল্লাহ تعالى কু’রআনেই দিয়ে দিয়েছেন—

2_118

যারা বোঝে না, তারা বলে, “কেন আল্লাহ تعالى আমাদের সাথে কথা বলে না?” বা “আমাদের কাছে কোনো অলৌকিক নিদর্শন আসে না কেন?” ওদের আগের প্রজন্মও একই কথা বলে গেছে। ওদের সবার অন্তর আসলে একই রকম। আমি অবশ্যই আমার নিদর্শনগুলো যথেষ্ট পরিষ্কার করে দিয়েছি সেই সব মানুষের কাছে, যারা নিশ্চিত হতে চায়। [আল-বাক্বারাহ ১১৮]

nature-pattern-photography-10

যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে, তাদের আসল সমস্যা হচ্ছে: তারা মনে করে না যে, ইসলাম এমন কোনো অসাধারণ ধর্ম, যা তাদের মানতে হবে। অথবা তারা মনে করে না যে, ইসলাম তাদেরকে এমন কিছু দিতে পারে, যা তারা নিজেরাই চিন্তা ভাবনা করে বের করতে পারে না। তাই তাদের দাবি হচ্ছে: আল্লাহ تعالى যেন তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদেরকে বোঝান, কেন তারা ইসলাম মানবে? ইসলামে এমন কী আহামরি কিছু আছে যে, তা মানতে হবে?

আপনাকে যখন কোনো গাড়ির সেলসম্যান একটা সাধারণ গাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করে, সে আপনাকে অনেক বোঝাবে: কেন আপনার গাড়িটা কেনা উচিত, এই গাড়ির চমৎকার বৈশিষ্ট্য কী যা অন্য গাড়ির নেই, কীভাবে এই গাড়িটা সমাজে আপনার স্ট্যাটাস বাড়িয়ে দেবে ইত্যাদি। সে নানা ভাবে চেষ্টা করবে আপনাকে গাড়িটা গছিয়ে দেওয়ার, কারণ গাড়িটা এমন কোনো অসাধারণ কোনো গাড়ি নয়, যা কেনার জন্য মানুষ গভীর আগ্রহে কয়েক মাস আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য লাইন ধরে থাকে।

ধরুন আপনি একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন: আপনি একটা বিশেষ দামী ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনবেন। আপনার বন্ধুরা আপনাকে অনেক বুঝিয়েছে যে, এর চেয়ে ভালো, নিরাপদ গাড়ি আর নেই। আপনি নিজেও অনেক পড়াশুনা করে দেখলেন যে, আসলেই এর চেয়ে শক্তসামর্থ্য, নিরাপদ গাড়ি এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি বানায়নি। কিন্তু কেনার আগে আপনি দাবি করলেন: সেই গাড়ির কোম্পানির সিইও-র সাথে আপনি নিজে কথা বলবেন, তারপরেই সেই গাড়ি কিনবেন, নাহলে কিনবেন না। সিইও যেন নিজে আপনাকে ফোন করে তার গাড়ি কিনতে অনুরোধ করে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তিনি সেটাকে বলেন ‘হও’, আর তা হয়ে যায় — আল-বাক্বারাহ ১১৭

কীভাবে কোনো কিছুর সৃষ্টি হয়, এনিয়ে নানা ধর্মে নানা মতবাদ রয়েছে। কিছু ধর্ম মতে: বস্তু এবং শক্তি সবসময়ই ছিল, সেগুলোর শুধুই রূপান্তর হয়। এর বিরুদ্ধে খুব সহজ কিছু যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা ভুল প্রমাণ করা যায় (দেখুন আল-বাক্বারাহ ১০৮)। আবার কিছু ধর্ম (এমনকি বৈজ্ঞানিক মতবাদও) প্রচার করে: মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে এক মহা-মহাবিশ্ব ছিল, যেখানে যা কিছু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব, তার সবকিছু সৃষ্টি হচ্ছে, এবং আমাদের মহাবিশ্বের মত আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব রয়েছে।

আবার কিছু ধর্ম এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রচার করে: বস্তু এবং শক্তির আগে ‘কিছু’ একটা ছিল, যা থেকে সবকিছু এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের চারপাশে যে বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগৎ আমরা দেখছি, তার জন্য কোনো বুদ্ধিমান বা ব্যক্তিত্ববান স্রষ্টার কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো সব কিছুই সেই ‘কিছু’ একটা থেকে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। —এর বিরুদ্ধেও খুব সহজ যুক্তি দিয়ে তা সহজেই ভুল প্রমাণ করা যায়।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ধারণা, যার বিরুদ্ধে কোনো ফিলসফিকাল যুক্তি ধোপে টিকতে পারেনি, তা পাওয়া যায় কু’রআনে—

2_117

সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অস্তিত্বদানকারী তিনি। যখন তিনি কিছুর অস্তিত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি সেটাকে শুধু বলেন: ‘হও’, আর তা হয়ে যায়। [আল-বাক্বারাহ ১১৭]

Hot spring 600

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

সবকিছুই তাঁর একান্ত অনুগত — আল-বাক্বারাহ ১১৬

ইসলাম ছাড়া বাকি প্রায় সবগুলো ধর্ম কোনো না কোনো ভাবে চেষ্টা করে: পরম স্রষ্টার পাশাপাশি এক বা একাধিক ‘স্রষ্টার হেল্পার’ বা পাতি-ঈশ্বর-এর ধারণা নিয়ে আসতে, যারা মানুষের ‘অনেক কাছের’, যেখানে পরম স্রষ্টা হন অনেক দূরের। যারা মানুষের দুঃখ, কষ্ট বোঝে, যা পরম স্রষ্টা বোঝার ঊর্ধ্বে। যারা মানুষের নানা ভাবে উপকার করার চেষ্টা করে, যা পরম স্রষ্টা তাদের জন্য করার প্রয়োজন মনে করেন না। যাদের মানুষের মতই দোষ-ত্রুটি আছে, যেখানে পরম  স্রষ্টা খুব বেশি পবিত্র, তিনি মানুষের দোষগুলো বোঝেন না।
এভাবে মানুষ এই ধরনের পাতি-ঈশ্বরদেরকে জন্ম দিয়ে পরম স্রষ্টাকে দূরে সরিয়ে দেয়। একইসাথে তারা নিজেদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, যেহেতু তাদের সেই সব পাতি-ঈশ্বরদের রাগ, অভিমান, কামনা-বাসনা, ভুলে যাওয়া, আইন অমান্য করা ইত্যাদি নানা ধরনের ‘গুণ’ আছে, তাই মানুষের এসব ‘গুণ’ থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। সুতরাং, মানুষের ধর্ম নিয়ে এত কড়াকড়ি করার দরকার নেই। এই সব পাতি-ঈশ্বররা মানুষের দোষত্রুটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। পরম স্রষ্টার কঠিন শাস্তি থেকে তাদেরকে বাঁচাবে।

আল্লাহ تعالى এই ধরনের ফাঁকিবাজি মানসিকতাকে কু’রআনে বহুবার গুড়িয়ে দিয়েছেন—

2_116

ওরা বলে, “আল্লাহ تعالى একজন সন্তান নিয়েছেন।” তিনি এসব থেকে পবিত্র! কখনই না! সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তাঁর। সবকিছুই তাঁর একান্ত অনুগত। [আল-বাক্বারাহ ১১৬]

970867_470804919667726_576974296_n  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে পাবে — আল-বাক্বারাহ ১১৫

মানুষ ভুলে যায়। অনেক সময় পরিস্থিতির শিকার হয়ে সে মনে রাখতে পারে না: আল্লাহ تعالى তার কাছ থেকে কী আশা করেন, কী করতে নিষেধ করেছেন, কী করতে বার বার বলেছেন। একারণেই মানুষকে দৈনন্দিন জীবনের নির্দেশ, উপদেশগুলো —যেগুলো তার জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে— সেগুলো একবার, দুইবার দিলে হয় না, বার বার মনে করিয়ে দিতে হয়। তখন তা তার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। কঠিন পরিস্থিতিতেও সে নিজেকে মনে করিয়ে দিতে পারে। এরকম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, দৃষ্টিভঙ্গি পালটিয়ে দেওয়ার মত উপদেশ এসেছে আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতে—

2_115

পূর্ব পশ্চিম সব আল্লাহর। তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে تعالى পাবে। আল্লাহ تعالى সবকিছুকেই ঘিরে আছেন, সবকিছুই জানেন।  [আল-বাক্বারাহ ১১৫]

scotland-landscape-photography-1

একটি ঘটনা দেখি—

রাত দুটা। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। আপনি কম্পিউটার ছেড়ে ফেইসবুকের দিকে তাকিয়ে আছেন। একজনের শেয়ার করা একটা ভিডিও দেখে আপনার হার্টবিট বেড়ে গেছে। ভিডিওটা দেখার জন্য আপনার প্রাণ আকুপাকু করছে। ক্লিক করতে গিয়েও করছেন না। নিজের সাথে সংগ্রাম করছেন: এরকম একটা বাজে ভিডিও দেখে নিজের ভেতরটা নোংরা করে ফেলবেন?  ঠিক তখনি আপনার মনে পড়ল—

তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে تعالى পাবে। আল্লাহ تعالى সবকিছুকেই ঘিরে আছেন, সবকিছুই জানেন।

আপনি সাথে সাথে উপলব্ধি করলেন: আপনি যে এই ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে আছেন এবং ভিডিওটা পুরোটা দেখার চিন্তা করছেন, এগুলো সব আল্লাহ تعالى দেখছেন। আপনি লজ্জা পেয়ে গেলেন। ছি! আল্লাহর تعالى সামনে এরকম একটা বাজে কাজ আপনি কীভাবে করতে পারেন! আপনি তাড়াতাড়ি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলেন। ফেইসবুক বন্ধ করে ঘুমাতে গেলেন।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এই সব লোকেরা যেন প্রার্থনার জায়গাগুলোতে প্রবেশ না করে — আল-বাক্বারাহ ১১৪

মসজিদে বোর্ড মিটিং চলছে। চৌধুরী সাহেব সভাপতি। ইমাম সাহেব তাকে বললেন, “ভাইসাহেব, এলাকার একটি গ্রুপ আগামী শুক্রবার এই মসজিদে তাওহীদের উপর একটি কনফারেন্স করার জন্য আবেদন করছে। সৌদি আরব থেকে বিখ্যাত আলেম এসেছেন তাদের কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার জন্য। আমরা কি তাদেরকে ব্যবস্থা করে দিতে পারি?”

চৌধুরী সাহেব বললেন, “আপনি কি ওই সালাফি গ্রুপের কথা বলছেন? প্রশ্নই ওঠে না। এটা হানাফি মসজিদ। আমরা এখানে ওই সব সৌদি ওয়াহাবি, সালাফিদের প্রশ্রয় দেই না। ওদেরকে অন্য কোনো কনফারেন্স সেন্টার ভাড়া করতে বলেন।”

ইমাম সাহেব চুপসে গেলেন। তিনি বললেন, “আচ্ছা, তাহলে এই শুক্রবার এলাকার তরুণরা বিকেলে এসে রাসুলের জীবনী নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছিল। ওদেরকে আসতে বলি?”

চৌধুরী সাহেব বললেন, “না, মসজিদ হচ্ছে শান্তিতে নামাজ পড়ার জায়গা। এখানে কোনো আলোচনা, সভা, অনুষ্ঠান, কনফারেন্স করার জায়গা না। এমনিতেই মসজিদ পরিষ্কার রাখার জন্য পাঁচটা লোক রাখতে হয়। এই সব অনুষ্ঠান করলে মসজিদের মেরামত, পরিষ্কারের পেছনে কী পরিমাণের খরচ করতে হবে জানেন? আর এই সব তরুণদেরকে মসজিদে ঘন ঘন ঢুকতে দিলে ডিজিএফআই এর লোকজন আমাদের উপর নজর রাখা শুরু করবে। মনে করবে আমরা এদেরকে জিহাদের ট্রেইনিং দিচ্ছি। অযথা ঝামেলা বাড়াবেন না।”

এই ধরনের মানসিকতা এতটাই জঘন্য যে, কু’রআনে এক ভয়ঙ্কর আয়াত রয়েছে এই ব্যাপারে—

2_114

ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে প্রার্থনার জায়গায় আল্লাহর تعالى নাম নিতে বাঁধা দেয়? সেগুলো বিরান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে? এই সব লোকেরা প্রার্থনার জায়গাগুলোতে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাড়া প্রবেশ করার যোগ্য নয়। ওদের জন্য এই দুনিয়াতে রয়েছে অপমান-লাঞ্ছনা, এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ ১১৪]

beautiful_mosque_dome_at_sunset  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আল্লাহই কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে এই মতবিরোধের বিচার করবেন — আল-বাক্বারাহ ১১৩

“না ভাই, আপনি ভুল জানেন। ইসলাম মোটেও এটা সমর্থন করে না। আপনাদের আক্বিদায় গণ্ডগোল আছে।”

– “না জেনে বোকার মত কথা বলবেন না। আমার হুজুর আমাকে দলিল দিয়ে দেখিয়েছেন। আপনাদের আক্বিদা ভুল। যত সব সালাফি বাতিল ফিরকার দল।”

“মুখ সামলে কথা বলবেন। আমার শেখ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা। আপনারা কোথাকার কোন মাদ্রাসার পণ্ডিতের কাছ থেকে মান্ধাত্না আমলের খারেজি নিয়ম কানুন শেখেন।”

– “কত বড় সাহস! আমার হুজুরকে গালি দাও! তোমাদের সেই শেখ বাইরে থেকে শিখে এসে আমাদের পীর জমানার হাজার বছরের জ্ঞান ছাড়িয়ে গেছে? আজকে মাগরিবে মসজিদে আসো। বড় হুজুর থাকবেন, আমরা সবাই থাকবো। দেখা যাবে কে ঠিক।”

মুসলিমদের মধ্যে এধরনের তর্ক এতটাই জঘন্য ব্যাপার যে, এরকম একটি ঘটনার উদাহরণ আল্লাহ تعالى কু’রআনেই দিয়ে দিয়েছেন, আমাদেরকে সাবধান করার জন্য, যেন আমরা ইহুদি, খ্রিস্টানদের অনুকরণ না করি—

2_113

ইহুদিরা বলে, “খ্রিস্টানদের কোনো ভিত্তি নেই”; খ্রিস্টানরা বলে, “ইহুদিদের কোনো ভিত্তি নেই”; যদিও তারা দুই পক্ষই কিতাব পড়ে। একইভাবে যাদের কোনো জ্ঞান নেই (আরব মুশরিকরা), তারাও একই কথা বলে। আল্লাহ تعالى কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে এই মতবিরোধের বিচার করবেন। [আল-বাক্বারাহ ১১৩]

jerusalem  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যি বলে থাকো — আল-বাক্বারাহ ১১১-১১২

আজকাল সুধীবৃন্দরা দাবি করেন, “তোমাদের ইসলাম একটা অসহনশীল, বর্বর ধর্ম। তোমরা দাবি করো যে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সঠিক ধর্ম, আর অন্য সব ধর্ম সব ভুল। আর তোমরা অন্য ধর্মের মানুষদের সন্মান করো না, তাদের অধিকার দাও না, তাদেরকে কাফির গালি দিয়ে হত্যা করার কথা বলো। এরচেয়ে অমুক ধর্ম অনেক সহনশীল, সুন্দর। ”
—এর উত্তর খুব সহজ: প্রথমত, হ্যা, ইসলাম দাবি করে যে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সঠিক ধর্ম এবং বাকি সব ধর্ম তার আসল রূপ থেকে বিকৃত হয়ে গেছে, যার কারণে সেগুলো আর মানা যাবে না। দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মও সেটাই দাবি করে, এমনকি হিন্দু ধর্মও একই দাবি করে, যেখানে খোদ কৃষ্ণই সেই কথা বলেছেন ভগবৎ গীতায়। তৃতীয়ত, যদি কোনো ধর্ম না দাবি করে যে, সে একমাত্র সঠিক ধর্ম, কারণ বাকি সব ধর্ম বিকৃত হয়ে গেছে, তার মানে দাঁড়ায়: সৃষ্টিকর্তা সেই নতুন ধর্ম পাঠিয়েছেন এমনিতেই সময় কাটানোর জন্য। তিনি বসে বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলেন, তাই তিনি নতুন একটা কিছু করার জন্য প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে, বিপুল পরিমাণ মানুষের সময় খরচ করে, অনেক মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে এমন একটা নতুন ধর্ম পাঠালেন, যেটা না মানলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ আগের ধর্মগুলো তো ঠিকই আছে। অন্য ধর্মের লোকরা সব সৎ পথেই আছে এবং স্বর্গেও যাবে। তাই এই নতুন ধর্মটা যদি কেউ মানে তো ভালো, না মানলেও কোনো সমস্যা নেই।

আজকাল এইসব সুধীবৃন্দরা যা দাবি করছেন, তা হচ্ছে অনেকটা এরকম: ইসলাম বা অন্য ধর্মগুলোতে, যেখানে সৃষ্টিকর্তা ঘোষণা দিয়েছেন যে, সেটাই একমাত্র সঠিক ধর্ম কারণ অন্য ধর্মগুলো বিকৃত হয়ে গেছে, সেখানে আসলে স্রস্টার বলা উচিত ছিল, “হে আমার বান্দারা, আজকে আমি তোমাদেরকে একটা ধর্ম দিলাম। এটা অন্য সব ধর্ম থেকে বেশি ঠিক, তা আমি দাবি করবো না। আমার ভুল ত্রুটি হতেই পারে। আর এটা তোমরা মানতেও পারো, নাও পারো। সমস্যা নেই, একটা ধর্ম মানলেই হলো। বেশি দুষ্টামি না করলে তোমরা স্বর্গে যাবেই।”

এই পর্বে ধর্ম নিয়ে দুটো ব্যাপারে আলোচনা করা হবে: ১) Religious Exclusivity বা ধর্মীয় স্বতন্ত্রতা, ২) Religious Intolerance বা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা। আমরা দেখব হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, ইসলাম — এই ধর্মগুলোর মধ্যে কোনটা আসলেই সহিষ্ণুতা প্রচার করে।

quran-and-bible

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওদেরকে কোনো দাবি না রেখে ক্ষমা করো — আল-বাক্বারাহ ১০৯-১১০

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাইকোলজি শেখাবেন। মানুষ কিছু মানসিক সমস্যায় ভোগে, যার সম্পর্কে আমাদের সবসময় সাবধান থাকতে হবে। সাবধান না থাকলে, কিছু অসাধু মানুষ সহজেই আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করবে। আমরা সরল মনে এদের ভালো করতে গিয়ে, এদের সাথে মিলমিশ করে থাকতে গিয়ে উল্টো নিজেদের বিরাট ক্ষতি করে ফেলব। আমরা বুঝতেও পারবো না: কীভাবে আমরা তাদের হাতের পুতুল হয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে কাজ করে যাচ্ছি। এরকম একটি প্রেক্ষাপট এসেছে এই আয়াতে—

2_109

যদিও তাদের কাছে সত্য পরিষ্কার হয়ে গেছে, তারপরেও আহলে কিতাবের (ইহুদি, খ্রিস্টান) অনুসারীদের অনেকেই তাদের স্বার্থপর হিংসার কারণে চায় যে, তোমাদের যাদের ঈমান আছে, তারা যেন আবার কাফির হয়ে যায়। ওদেরকে কোনো দাবি না রেখে ক্ষমা করো, কোনো কিছু ধরে না রেখে উপেক্ষা করো; যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর تعالى নির্দেশ না আসছে। আল্লাহর تعالى সবকিছুর উপরে সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। [আল-বাক্বরাহ ১০৯]

gaza.si

এই ধরনের ইহুদি খ্রিস্টানরা বেশিরভাগই চায় না যে, ইসলামের প্রচার হোক, মুসলিমদের কোনো উন্নতি হোক। কারণ তারা বুঝে গেছে ইসলাম একটি সত্য ধর্ম, এবং এই ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা কোনো এক অদ্ভুত কারণে ‘আশঙ্কাজনক’ হারে বাড়ছে, যা তারা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সরূপ মনে করে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার তথাকথিত মুসলিম দেশগুলো থেকে বহুগুণে বেশি। সিএনএন-এর রিপোর্টে[২৩৮] প্রকাশ করা নিচের ম্যাপটি যেকোনো ইহুদি, খ্রিস্টান বা হিন্দুর রাতের ঘুম হারাম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট—

IslamSpread

১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মুসলিমদের বৃদ্ধির হার: ফ্রান্স ৭২৮%, ফিনল্যান্ড ২৮১%, সুইডেন ২০৬%, নরওয়ে ১৮৬%, পোল্যান্ড ২৩৩%, কানাডা ২০০%, চিলি ৩০০%, স্পেইন ২৭৬%, অস্ট্রেলিয়া ১৫৯%, আর্জেন্টিনা ১২৫% ইত্যাদি।[২৩৮] সেই তুলনায় বাংলাদেশ ৪৫.৫%, সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে ৫৮%।

এই ধরনের ইহুদি, খ্রিস্টানদের জন্য পাশ্চাত্যের আধুনিক দেশে মুসলিমদের বৃদ্ধির হার একটা ভয়াবহ ঘটনা। সেজন্য তারা প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার বাজেট খরচ করে, বিশাল লোকবল নিয়োগ করে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক আধুনিক, শক্তিশালী, সম্পদশালী দেশগুলোতে মুসলিমদের বৃদ্ধি কমাতেই হবে। এজন্য তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার কিছু নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)