যারা তা যেভাবে অনুসরণ করার কথা, ঠিক সেভাবে অনুসরণ করে — আল-বাক্বারাহ ১২১

চৌধুরী সাহেব একজন ভালো মানুষ। আত্মীয়স্বজনের উপকার করেন, গরিবকে দান-খয়রাত করেন, দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। সামাজিকতা এবং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু তিনি করেন না। তাই তিনি মনে করেন: তার কু’রআন না পড়লেও চলবে, শুধু জুম্মার নামাজ পড়লেই হবে। সবগুলো রোজা না রাখলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ এগুলো নিছক কিছু আনুষ্ঠানিকতা। একজন সৎ, আদর্শ নাগরিক হয়ে মানুষের ভালো করাটাই আসল কথা। মানব ধর্মই আসল ধর্ম; “জীবে দয়া করিছে যে জন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর।”

এদের জন্য এই আয়াতটি চিন্তার ব্যাপার—

2_121

যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একমাত্র তারাই তাতে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে, যারা তা যেভাবে অনুসরণ করার কথা, ঠিক সেভাবে অনুসরণ করে। আর যারা তা অস্বীকার করে, ওরা হচ্ছে সর্বহারা। [আল-বাক্বারাহ ১২১]

MasjidulHaram

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলছেন, কু’রআনকে তারাই বিশ্বাস করে, যারা তা সঠিকভাবে ‘তিলাওয়াত’ করে। তিলাওয়াত শব্দটা নিয়ে আমাদের উপমহাদেশে ব্যাপক ভুল ধারণা আছে, যার কারণে আমরা আজকে কু’রআনকে আরবিতে গড়গড় করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছি, এবং আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে হাফিজ ভাড়া করে আরবিতে কু’রআন পড়িয়ে করিয়ে কু’রআন তিলাওয়াত করাচ্ছি বলে মনে করছি। অথচ তারা কু’রআনে আল্লাহ تعالى তাদেরকে কী শিখিয়েছেন তার কিছুই বুঝছে না, অনুসরণ করা তো দূরের কথা।

তিলাওয়াহ تلاوة এসেছে ت ل و থেকে, যার অর্থ: পেছনে পেছনে অনুসরণ করা, সারিবদ্ধভাবে চলা, কোনো কিছু অর্জনের জন্য চলা, কাউকে পথপ্রদর্শক হিসেবে নেওয়া, কারো কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া, কোনো জীবনধারা অনুসরণ করা, কারো চিন্তার ধারা অনুসরণ করা ইত্যাদি।[২৬৩] কু’রআন তিলাওয়াহ মানে শুধু আয়াতগুলোকে যেভাবে আরবিতে উচ্চারণ করার কথা, শুধু সেভাবেই উচ্চারণ করা নয়, একইসাথে সঠিকভাবে কু’রআনের আয়াতগুলোকে বুঝে নিজের জীবনে অনুসরণ করা। বুঝে, চিন্তা করে, সঠিকভাবে কু’রআনের বাণী মেনে চলাটা হচ্ছে: তিলাওয়াহ।[১৪] কু’রআনকে আমাদের জীবনে পথপ্রদর্শক হিসেবে নেওয়া হচ্ছে তিলাওয়াহ। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কু’রআন দিয়েছেন শুধুই ‘ইক্বরা’ পড়ার জন্য নয়, তিনি আমাদেরকে কু’রআন সঠিকভাবে ‘তিলাওয়াহ’ করার জন্য কঠিন নির্দেশ দিয়েছেন। যারা সেটা করবে না, তারা ‘খাসিরিন’ হয়ে যাবে।

خَٰسِرِين (খাসিরিন) এসেছে خسر থেকে যার অর্থ: ১) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ২) হেরে যাওয়া, ৩) যা দেওয়া উচিত, তার কম দেওয়া, ৪) ওজনে কম দেওয়া।[১৫০] যারা কিয়ামতের দিন হেরে যাবে, যাদের ভালো কাজগুলোর ওজন খারাপ কাজের ওজন থেকে কম হয়ে যাবে, তারা হবে খাসিরিন। এরা সেদিন হবে সর্বহারা, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। দুনিয়ায় এদেরকে দেখে যতই সুখী, যতই জীবনটা উপভোগ করছে মনে হোক না কেন, কিয়ামতের দিন তারা সবকিছু হারিয়ে ফেলে হাহাকার করতে থাকবে।

আমি উচ্চ শিক্ষিত, আমার কু’রআন দরকার নেই

আজকাল সুধীবৃন্দরা মনে করেন যে, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং উন্নত বিচার-বুদ্ধির কারণে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ —এটা তারা নিজেরাই যথেষ্ট বুঝতে পারেন এবং আল্লাহকে এবং তাঁর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে তারা যথেষ্ট গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন, যেটা অন্যেরা পারে না। কু’রআনের নির্দেশ অনুসরণ করে নামাজ, রোজা করা শুধু ওই সব অর্ধ-শিক্ষিত, অল্প-জ্ঞানী মানুষদের জন্য দরকার যারা এখনও তাদের মত চিন্তার গভীরতা এবং উপলব্ধির উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। কু’রআন পড়ার কোনো দরকার নেই, কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ —তা শিক্ষিত মানুষরা নিজেরাই চিন্তা করে বের করতে পারে।

এদের অনেকে আবার মনে করেন যে, নামাজ, রোজা না করে তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, তারা এমনিতেই যথেষ্ট ভালো আছেন। যেহেতু তাদের মতে তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, সুতরাং তাদের আল্লাহর বাণী শোনার কোনো প্রয়োজন নেই। কু’রআন মতো চলাটা যদি এত খারাপ কাজ হতোই, তাহলে এতদিনে তাদের অনেক ক্ষতি হতে থাকতো। কিন্তু সেরকম কিছু তো হতে দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং, তারা যা করছে ঠিকই করছে।

যাদের অবস্থা এরকম, তাদেরকে অভিনন্দন! তারা শয়তানের মানুষকে ডোবানোর তিনটি মুল পদ্ধতির উৎকৃষ্ট নিদর্শন। শয়তান গত লক্ষ বছর ধরে একদম প্রথম মানুষ আদম عليه السلام থেকে শুরু করে আপনি-আমি পর্যন্ত বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে ডোবানোর জন্য যতগুলো পদ্ধতি সফল ভাবে প্রয়োগ করে এসেছে, তার মধ্যে তিনটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হল—

১) শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায়: তারা আসলে ভালো মানুষ, তাদের থেকে কত খারাপ মানুষ পৃথিবীতে আছে! একজন ট্রাফিক পুলিশ রিকশাওয়ালার কাছ থেকে দশ-বিশ টাকা ঘুস নেবার সময় মনে করে যে, সে একজন যথেষ্ট ভালো মানুষ, কারণ সে তো সার্জেন্টের মত ট্রাক ড্রাইভারদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা ঘুষ খাচ্ছেনা। একজন সার্জেন্ট মনে করে যে, সে যথেষ্ট ভালো মানুষ, কারণ সে তো ডিসির মত লক্ষ লক্ষ টাকার পুলিশের বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্র বিক্রি করে গুলশান-বনানীতে বাড়ি-গাড়ি করে ফেলছে না। একজন ডিসি মনে করে যে, সে মন্ত্রীদের থেকে অনেক ভালো মানুষ, কারণ সে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের হক মেরে দেশের কোটি টাকার ক্ষতি করছে না। —এদের প্রত্যেককে শয়তান অত্যন্ত সফলভাবে বুঝাতে পেরেছে যে, তারা যা করছে তা এত খারাপ কিছু না। তাদের থেকে কত খারাপ মানুষ পৃথিবীতে আছে। আর তারা অন্যায় না করলে কী হবে, তাদের পরে যারা আসবে, তারা তো ঠিকই একই কাজ করবে।

২) শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায়: ধর্ম শেখার কিছু না, এটি মানুষের নিজের এবং আল্লাহর ব্যাপার। ধর্মের মত একটা সাধারণ ব্যাপারে আবার পড়াশুনা করতে হবে নাকি? নিজের কাছে যেটা ভালো মনে হয়, সেটাই আল্লাহর কাছে ভালো, আর নিজের কাছে যেটা খারাপ মনে হয়, সেটাই আল্লাহর কাছে খারাপ। তাছাড়া ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য যেই বই পুস্তকগুলো পড়ব, সেগুলো যে নির্ভেজাল তার প্রমাণ কী? ওই বইগুলো তো যত সব কাঠমোল্লাদের লেখা। এরচেয়ে নিজে যা ভাল-মন্দ মনে করি সেটা মেনে চললেই হল।

একারণেই অনেককে দেখবেন নাচ-গানের আয়োজন করে খ্রিস্টানদের মত ছেলে-মেয়েদের জন্মদিন, আকিকা করে; হিন্দুদের প্রথা অনুসারে গায়ে-হলুদ, বউ-ভাত করে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়। কিন্তু যখন নিজের বাবা-মা মারা যায়, তখন তাদের জন্য কু’রআন খতমের ব্যবস্থা করে, চল্লিশা করে, প্রতিবছর মৃত্যু বার্ষিকীতে মিলাদের আয়োজন করে। শয়তান এদেরকে সফলভাবে বুঝাতে পেরেছে: এগুলো সবই ভালো কাজ, ইসলাম সম্মত কাজ, চালিয়ে যাও, আল্লাহ তোমার উপর অনেক খুশি।

৩) শয়তান মানুষকে বিশ্বাস করায়: তোমার মত খারাপ মানুষ নামাজ পড়বে? রোজা রাখবে? তুমি নামাজে আল্লাহর কাছে মুখ দেখাবে কী করে? তোমার নামাজ পড়ার কথা ভাবতে লজ্জা লাগে না? এধরনের মানুষকে দেখবেন তারা কোনো মতে চক্ষু লজ্জায় পড়ে হয়তো সপ্তাহে একদিন জুম্মার নামাজটা পড়তে মসজিদে যায় এবং রাস্তায় ফকির দেখলে মানিব্যাগ খুলে সবচেয়ে ছোট নোটটা বের করে দেয়। কিন্তু তাদের দৌড় এই পর্যন্তই। শয়তান এদেরকে সফল ভাবে বোঝাতে পেরেছে: তাদের আর কোনো আশা নেই, আল্লাহর পক্ষেও তাদেরকে মাফ করা সম্ভব না। সুতরাং নামাজ পড়ে, রোজা রেখে কোনো লাভ নেই। শুধু শুধু সময় নষ্ট, অযথা না খেয়ে থাকার কষ্ট। এরচেয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে সেখান থেকে লাখ খানেক টাকা গরিব আত্মীয়স্বজনকে দাও। কোটি টাকার সূদের লোণ নিয়ে বাড়ি কিনে হাজার খানেক টাকা গ্রামের বাড়িতে স্কুল-কলেজে দান করো। বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকার যাকাত না দিয়ে কালে ভদ্রে গরিব মানুষদেরকে কম্বল, জামা কাপড় কিনে দাও। এতেই আল্লাহ তোমাকে অল্প কয়েকদিন জাহান্নামে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিবে।

কারো অবস্থা যদি এই তিনটির যে কোনো একটি হয়, তবে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। শয়তান লক্ষ বছর ধরে মানুষের সাইকোলজি নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছে। মানুষের সাইকোলজিতে তার মত অভিজ্ঞ কোনো সত্তা পৃথিবীতে আর কেউ আছে বলে জানা নেই। লক্ষ বছর আগে প্রথম মানুষ আদমকে عليه السلام বানানোর পর শয়তানের সাথে আল্লাহর যে কথোপকথনগুলো কু’রআনে রেকর্ড করা আছে, তা থেকে শয়তানের বিশাল জ্ঞানের অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। তখনি সে জানতো: মানুষকে কীভাবে বোকা বানানো যায়, একদিন কিয়ামতে যে মানুষের বিচার হবে, সে যে মানব জাতির একটা বিরাট অংশকে বোকা বানাতে পারবে ইত্যাদি। আর লক্ষ বছর পরে তার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা কোথায় পৌঁছেছে, সেটা চিন্তাও করা যায় না।

মানুষকে সঠিক সময়ে সবচেয়ে মোক্ষম কুবুদ্ধি দিতে সে এতটাই অভিজ্ঞ হয়ে গেছে যে বিংশ শতাব্দীতে সে মানুষকে দিয়ে যে পরিমাণের মানুষ মারতে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছে, তার ধারে কাছে মানুষ পুরো মানবজাতির ইতিহাসে মারা যায়নি। প্রতি মিনিটে শয়তানের কুমন্ত্রণা শুনে মানুষ সারা পৃথিবীতে গড়ে ৭৮টা ধর্ষণ করে, প্রতিদিন শত শত মানুষকে খুন করে, হাজার হাজার মানুষকে নিঃস্ব করে পথে বসায়, কোটি কোটি মানুষ জঘন্য, অশ্লীল কাজে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে।

ইউটিউবে এক ‘গ্যাংগনাম স্টাইল’ ভিডিও দেখার পিছনে মানবজাতি জুলাই ২০১২ থেকে এই পর্যন্ত মোট ১৪০ মিলিয়ন ঘণ্টা ব্যায় করেছে, যা ১৬,০০০ বছরের সমান। এই একই সময় ব্যায় করে মানুষ ২০টা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, বা চারটা লন্ডন অলিম্পিক পার্ক, বা ছয়টা দুবাইয়ের ‘বুর্জ আল-খালিফা’ বিল্ডিং তৈরি করতে পারতো। এই এক ভিডিও ২০০ কোটি বারের বেশি দেখে মানুষ তার সময় নষ্ট করেছে। ১০০ কোটি বারের বেশি মানুষ জাস্টিন বীবারের একটা মিউজিক ভিডিও দেখেছে[২৬৪] শয়তানকে আজকাল বেশি কষ্ট করতে হয় না। মানুষ নিজেই ইন্টারনেট, টিভি, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে শয়তানের থেকেও বেশি সফল হয়েছে নিজেদেরকে ধ্বংস করতে।

Dubai

অথচ আল্লাহ تعالى শয়তানকে শুধুমাত্র মানুষের অবচেতন মনে কুমন্ত্রণা দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। আর তিনি মানুষকে ক্ষমতা দিয়েছেন: শয়তানের কুমন্ত্রণা না শুনে নিজের বিবেকবুদ্ধি ব্যবহার করে খারাপ পথে না যাওয়ার। শয়তানের কোনোই ক্ষমতা নেই মানুষকে কোনো কিছু করতে বাধ্য করানোর। এছাড়াও তিনি মানুষকে আরও সাহায্য করার জন্য ৬৩৪৬টি বাণী সহ কু’রআন দিয়েছেন। এরপরেও মানুষ শয়তানের চাকর হয়ে অল্প কিছু আরাম, সন্মান, নিরাপত্তা পাওয়ার লোভে দিনের বেশির ভাগ সময় আল্লাহর সাথে বেঈমানি করা থেকে নিজেদেরকে আটকায় না।

একারণেই আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বলেছেন—

যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একমাত্র তারাই তাতে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে, যারা তা যেভাবে অনুসরণ করার কথা, ঠিক সেভাবে অনুসরণ করে। আর যারা তা অস্বীকার করে, তারাই তো সর্বহারা। [আল-বাক্বারাহ ১২১]

আমরা যদি সঠিকভাবে কু’রআন অনুসরণ না করি, তাহলে আমরা দুনিয়াতেও হারাবো, আখিরাতেও হারাবো। আমরা হয়ে যাবো সর্বহারা।

সাধু সাবধান!

অনেক মুসলিম আছেন, যারা খুব ভালো করে জানেন যে, কু’রআনে আল্লাহ تعالى অনেক বার নামাজ, যাকাত, গরিবদের দান, আত্মীয়ের হক আদায়, বাবা-মার সাথে সবচেয়ে ভালভাবে সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা খুব ভালো করে বোঝেন যে, এগুলো সব তার মহান প্রভুর বাণী, কিন্তু তারা নিজেদেরকে বুঝিয়েছেন: তারা আসলে অলস মানুষ এবং শুধু অলসতার জন্যই তারা নামাজ পড়েন না, এর বেশি কিছু না। “প্রত্যেকটা দিন নামাজ পড়তে হবে? দিনে পাঁচ বার! তাও আবার সপ্তাহে সাত দিন!! অসম্ভব। এতো কঠিন কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। আমি আসলে একটু ফাঁকিবাজ টাইপের মানুষ।”

এরা নিজেদেরকে এক ধরনের বিভ্রমের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন এই ভেবে যে, তারা আসলে একটু অলস টাইপের দেখেই নামাজ পড়েন না, এর বেশি কিছু না। তারা রাত জেগে মুভি দেখতে পারেন, কিন্তু নামাজ পড়তে পারেন না। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মার্কেটে বেহুদা ঘুরতে পারেন, কিন্তু দশ মিনিট দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন না। তারা প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সাথে ফোনে কথা বলতে পারেন, কিন্তু আধা ঘণ্টা আল্লাহর تعالى  সাথে কথা বলার সময় করতে পারেন না। তারা দিনে কয়েক ঘণ্টা আপনার ছেলে-মেয়ের খাওয়া, গোসল, ঘুম, স্কুল, হোম ওয়ার্ক এসবের পিছনে ব্যায় করতে পারেন, কিন্তু আধা ঘণ্টা তার মালিক, তার একমাত্র প্রভুর জন্য ব্যায় করতে পারেন না। নিজের সাথে প্রতারণা করার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কিছু হতে পারে না।

“The human brain is a complex organ with the wonderful power of enabling man to find reasons for continuing to believe whatever it is that he wants to believe.” – Voltaire

সাইকোলজির ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় self-delusion – নিজেকেই নিজে ভুল বুঝিয়ে ধোঁকা দেওয়া, নিজেকে মতিবিভ্রমের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা। মানুষকে কোনো অনুশোচনার সুযোগ না দিয়ে, দিনের পর দিন একই অন্যায় বারবার করানোর জন্য শয়তানের এক চমৎকার পদ্ধতি হচ্ছে: সেলফ ডিলিউসন।

আপনি মাঝে মাঝেই দেখবেন আপনার যখন নামাজ পড়ার কথা মনে হয়, হঠাৎ হঠাৎ অনুশোচনা হয় যে, এভাবে নামাজ ফাঁকি দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না, তখনি দেখবেন আপনার ভেতরে একটা কণ্ঠস্বর আপনাকে বলছে, “কিন্তু আমি তো এর আগের ওয়াক্তের নামাজটা পড়িনি, এখন এই ওয়াক্ত পড়ে কী হবে?” ফজরের সময় ঘুম ভাঙলে: “রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছে। ভালমতো ঘুমানো দরকার। নাহলে সারাদিন শরীর খারাপ লাগবে, মেজাজ গরম থাকবে। একবারে সকালে উঠে নাস্তা খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে নিলেই হবে।” আসরের ওয়াক্ত প্রায় শেষ হতে চলল: “এখনও তো অনেক সময় আছে ওয়াক্ত শেষ হবার। এই কাজটা শেষ না করে উঠে গেলে তাল হারিয়ে ফেলবো। মাগরিবের সময় একবারে পড়ে নেব।” মাগরিবের ওয়াক্ত প্রায় শেষ: “আমি এখন রান্না না করলে তো কেউ খেতে পারবে না, আল্লাহ নিশ্চয়ই আমার অবস্থা বুঝবেন?” মেহমান আসলে, “মেহমানকে বসিয়ে রেখে কীভাবে নামাজ পড়তে উঠে যাই? তারচেয়ে রাতে একবারে সবগুলো নামাজ একসাথে পড়ে নিব।”

এগুলো হচ্ছে শয়তানের কণ্ঠস্বর। যত তাড়াতাড়ি পারুন বোঝার চেষ্টা করুন আপনার ভেতরে যে চিন্তার এক কণ্ঠস্বর আছে, সেটা কখন আপনি, আর কখন সেটা শয়তান।

আমাকে ছাড়া দুনিয়া চলবে না

আরেক ধরনের মানুষ মনে করেন যে, তাদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তারা মানুষের অনেক বড় উপকার করছেন। তাদের কাজ ঠিকমত না হলে তাদের নিজেদের, তাদের পরিবারের, মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের গুরু দায়িত্বের কথা বুঝবেন। তাই কাজের ব্যস্ততার জন্য যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে না পারেন, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিবেন।

যারা মানুষের সরাসরি উপকার করে – ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সমাজসেবকরা হচ্ছেন এই অবস্থার সুন্দর উদাহরণ। যেমন, ডাক্তাররা মনে করেন: “আমি একজন ডাক্তার! আমি মানুষের জীবন বাঁচাই! মানুষের এত বড় একটা সেবার জন্য আল্লাহ আমাকে নামাজ, রোজার হিসাব থেকে মাফ করে দিবেন না? আল্লাহ কি এতই অবিবেচক?”

প্রথমত, যদি ডাক্তাররা এতই মহান হতেন, তাহলে তারা কখনও তাদের কাজের জন্য বেতন নিতেন না। বিনা খরচে মানুষের চিকিৎসা করতেন। তারা কখনও মামা-চাচা-খালু ধরে অন্যায়ভাবে ঢাকায় পোস্টিং নিয়ে পার্টটাইম প্রাইভেট ক্লিনিকে কাজ করতেন না। বরং দূরের কোনো গ্রামের অভাবী, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায় নিজেই পোস্টিং নিয়ে ছুটে যেতেন। ডাক্তাররা যখন তাদের কাজের জন্য বেতন নিচ্ছেন, তখন তারা একজন বেতন ভুক্ত কর্মচারী ছাড়া আর কিছুই নন। তারাও মানুষের উপকার করছেন, আবার একজন সুইপারও মানুষের উপকার করছেন। সুইপাররা না থাকলে লক্ষ লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতো।

কেউ যত বড় ডাক্তার হন, যত বড় দানশীল ব্যবসায়ী হন, যত বড় শিক্ষক হন, কেউ কোনো মানুষের জীবন বাঁচান না; আল্লাহ মানুষের জীবন বাঁচান। কেউ কোনো মানুষকে ইসলামের পথে আনেন না; আল্লাহ যাকে চান তাকে তিনি তাঁর ধর্ম মেনে চলার সন্মান দেন। পৃথিবীতে কেউ নেই যার কাজ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, সে নামাজ না পড়লে বা রোজা না রাখলে আল্লাহ তাকে তার কাজের গুরুত্বর জন্য নামাজের হিসাব ছেড়ে দিবেন। যদি তাই হতো, তাহলে কোনো নবীর নামাজ পড়ার দরকার হতো না, রোজা রাখার প্রয়োজন হতো না এবং কাফিরদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার দরকার হতো না।

তাদের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা নিশ্চয়ই করছি না?

সূত্র:

  • [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
  • [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
  • [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
  • [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
  • [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
  • [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
  • [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
  • [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
  • [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
  • [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
  • [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
  • [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
  • [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [১৫] তাফসির আল জালালাইন।
  • [২৬৩] তিলাওয়াত শব্দের বিস্তারিত অর্থ: http://ejtaal.net/aa/img/br/1/br-0160.png, http://www.onislam.net/english/shariah/quran/recite-a-memorize/455998-tilawah-quran-recitation-revisited.html
  • [২৬৪] গ্যাংগনাম স্টাইল —এর ক্ষতির পরিমাণ: http://www.economist.com/blogs/graphicdetail/2014/06/daily-chart-1

আল্লাহর কাছ থেকে তোমাকে রক্ষা করার জন্য তুমি কাউকে পেতে না — আল-বাক্বারাহ ১২০

ইহুদি, খ্রিস্টানরা রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام-কে মানুষ হিসেবে বেশ পছন্দই করতো। তারা জানতো: তিনি একজন সৎ, বিনয়ী মানুষ, কোনো অন্যায় করেন না, ধনী-গরিব পার্থক্য করেন না। এমনকি তারা রাসুলের عليه السلام কাছে নিজেদের সম্পদ আমানত হিসেবেও রেখে যেত। সবদিক থেকে তারা রাসুলকে عليه السلام একজন অনুসরণ করার মত আদর্শ মানুষ হিসেবেই মানতো। তাদের বক্তব্য ছিল: লোকটা ভালোই ছিল, শুধু নিজেকে নবি বলে দাবি না করলেই পারতো। তাহলে আমাদের আর কোনো সমস্যা ছিল না।

2_120

ইহুদি নাসারারা কখনই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি তাদের মতবাদ অনুসরণ করছ। বলে দাও, “আল্লাহর تعالى পথনির্দেশ একমাত্র সঠিক পথনির্দেশ।” তোমার কাছে এই জ্ঞান আসার পরেও তুমি যদি তাদের ইচ্ছাকে মেনে চলতে চাইতে, তাহলে আল্লাহর تعالى কাছ থেকে তোমাকে রক্ষা করার জন্য তুমি কাউকে পেতে না, কোনো সাহায্যকারীও না। [আল-বাক্বারাহ ১২০]

sandstorm

এখানেই বিধর্মীদের সাথে আমাদের সমস্যা। আমরা যতই ভালো মানুষ হই, তারা আমাদের কথা, কাজ, গুণের যতই প্রশংসা করুণ না কেন, শেষ পর্যন্ত গিয়ে একটা ব্যাপারে তাদের অনেকেই আমাদের সাথে কোনো আপোষ করবে না, সেটা হলো ইসলাম। আমরা তাদের সাথে যতই ওঠাবসা করি, একসাথে পড়ালেখা করি, চাকরি-ব্যবসা করি, ছুটি কাটাতে বেড়াতে যাই, যখনি রাসুলের عليه السلام শেষ নবি হওয়ার কথা আসবে, বা আল্লাহ تعالى একমাত্র উপাসনার যোগ্য প্রভু দাবি করা হবে, তখন তাদের অনেকেই তাদের ধর্মের শিক্ষার ব্যাপারে একদম কঠোর অবস্থান নেবে এবং আমাদের সাথে কোনো আপোষ করবে না।

মেরুদণ্ডহীন মুসলিমরা হিন্দুদের বিয়ের রীতিনীতি অনুসরণ করে বিয়ে করলেও, হিন্দুদেরকে কখনো দেখবেন না মুসলিমদের রীতিনীতি অনুসরণ করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে। কুপমন্ডক মুসলিমদেরকে ক্রিস্টমাসে যীশুর জয়গানে অংশগ্রহণ, হ্যালোইন উদযাপন করতে দেখলেও, খ্রিস্টানদেরকে কখনো দেখবেন না ঈদ-উল-আযহায় কুরাবানি করে গরিবদের খাওয়াতে। যখনি মুসলিমরা এমন কিছু করবে, যেটা শুধু ইসলামেই রয়েছে, অন্য কোনো ধর্মে নেই, তখনি অন্য ধর্মের লোকেরা, বিশেষ করে ইহুদি, খ্রিস্টানরা, যারা তাদের ধর্মের ব্যাপারে কিছুটা হলেও জানে, তারা অনেকেই আর মুসলিমদের ধারে কাছেও ঘিরবে না। তারা ঠিকই তাদের ধর্মের ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আমি অবশ্যই তোমাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছি — আল-বাক্বারাহ ১১৯

আজকাল অনেক মসজিদে জুম্মার খুতবায় বা হালাক্বাগুলোতে আলোচনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকে: আমরা কত খারাপ, কত ভুল করছি, কীভাবে আমাদের চামড়া বার বার পুড়িয়ে কাবাব বানানো হবে, অমানুষিক ভাবে পিটানো হবে, গলার মধ্যে গরম পানি ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হবে, আমাদের সব কষ্টের কারণ হচ্ছে ধর্ম না মানা ইত্যাদি নানা ধরনের হতাশাকর, নির্মম কথাবার্তা। প্রতি শুক্রবার কোনোমতে বাবা-মা, স্ত্রীর ধাক্কায়, না হলে ‘লোকে কী বলবে’ এই ভয়ে মসজিদে মানুষ যাও বা যায়, কিন্তু গিয়ে এমন সব হতাশাকর, বিরক্তিকর কথাবার্তা শুনতে থাকে যে, তখন মানুষের মনে শুধু একটাই চিন্তা আসে: কখন এই লোকটা চুপ করবে, কখন নামাজ শুরু হবে, আর কত তাড়াতাড়ি আমি বাড়ি ফিরে যাবো।

এমনিতেই মানুষের জীবন যথেষ্ট সংগ্রামের, কষ্টের, হতাশার। সপ্তাহে ছয় দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় শুক্রবার মসজিদে গিয়ে আরো হতাশাকর কিছু কথাবার্তা শুনে বিমর্ষ মনে আমরা ঘরে ফিরি। আজকাল কিশোর-তরুণরা যে বাংলা খুতবা শুরু হলেই মোবাইল ফোন নিয়ে বসে পড়ে, তার জন্য তাদেরকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। দোষ হচ্ছে সেই খাতিবের, যার কথাবার্তার মধ্যে এমন কিছুই নেই, যা তাদেরকে আকর্ষণ করতে পারে।

নামাজ শুরুর ১০ মিনিট আগে সিংহভাগ মানুষ যে মসজিদে ঢোকে, সেটা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়: আমরা কী নির্মমভাবে বিফল হয়েছি সঠিকভাবে মানুষকে দাওয়াহ দিতে। গানের কনসার্টে মানুষ ঘণ্টাখানেক আগে যায়, যেন সামনের সারিতে জায়গা পাওয়া যায়, শিল্পীদেরকে নিজের চোখে কাছ থেকে দেখা যায়। আর মসজিদে মানুষ যায় একদম শেষ মুহূর্তে, তারপর জুতা রাখার জায়গায়, না হয় বের হওয়ার গেটের কাছে বসার জন্য ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়, যেন নামাজ শেষে সবার আগে বের হয়ে যাওয়া যায়।

কুরআনে বার বার বলা হয়েছে: নবি, রাসুল হচ্ছেন মানুষের জন্য সুখবরের বাহক এবং সাবধানকারী। بَشِير বাশিরুন (সুখবরের বাহক) এবং نَذِير নাযিরুন (সাবধানকারী) একসাথে কমপক্ষে ২০ বার কুরআনে এসেছে, যার মধ্যে ১৫ বারই প্রথমে বাশিরুন (সুখবরের বাহক) বলা হয়েছে। নবি-রাসুলরা আগে একজন সুখবরের বাহক, পরে একজন সাবধানকারী। কিন্তু আজকাল আমাদের দাওয়াহ দেওয়ার পদ্ধতি হয়ে গেছে: প্রথমে ১ ঘন্টা সমাজের, দেশের গুষ্টি উদ্ধার, পরে ১০ মিনিট কিছু আশার কথা।

2_119

আমি অবশ্যই তোমাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছি, সুখবরের বাহক এবং সাবধানকারী হিসেবে। তোমাকে আগুনের সাথীদের ব্যাপারে জবাব দিতে হবে না। [আল-বাক্বারাহ ১১৯]

আয়াতের শুরুতে আল্লাহ تعالى বলছেন, “আমি অবশ্যই তোমাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছি।” কু’রআন কোনো মেটাফিজিক্স বা ফিলসফির উপর বই নয় যে, এখানে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মানুষের অনুমান এবং যুক্তির উপর নির্ভর করে থিওরির পর থিওরি লেখা আছে এবং যার ভূমিকাতে লেখক আগেভাগেই বলে দেন, “আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।” কু’রআন অকাট্য সত্য —এই ঘোষণা করতে আল্লাহ تعالى দ্বিধাবোধ করেন না।

Quran
  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না? — আল-বাক্বারাহ ১১৮

আজকাল সুধীবৃন্দ প্রশ্ন করেন, “সত্যিই যদি আল্লাহ বলে কেউ থাকে, তাহলে তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? আমি তো কোনোদিন কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটতে দেখলাম না? প্রমান কী যে আল্লাহ বলে আসলেই কেউ আছেন?” প্রথমত, তাদেরকে অভিনন্দন! তারা এমন একটি জটিল, আধুনিক, যুগোপযোগী প্রশ্ন আবিষ্কার করেছেন, যা ১৪০০ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর, অশিক্ষিত, অসামাজিক বেদুইনরা রাসুলকে عليه السلام করেছিল। শুধু তাই না, তাদের আগেও নবীদেরকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর উত্তর আল্লাহ تعالى কু’রআনেই দিয়ে দিয়েছেন—

2_118

যারা বোঝে না, তারা বলে, “কেন আল্লাহ تعالى আমাদের সাথে কথা বলে না?” বা “আমাদের কাছে কোনো অলৌকিক নিদর্শন আসে না কেন?” ওদের আগের প্রজন্মও একই কথা বলে গেছে। ওদের সবার অন্তর আসলে একই রকম। আমি অবশ্যই আমার নিদর্শনগুলো যথেষ্ট পরিষ্কার করে দিয়েছি সেই সব মানুষের কাছে, যারা নিশ্চিত হতে চায়। [আল-বাক্বারাহ ১১৮]

nature-pattern-photography-10

যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে, তাদের আসল সমস্যা হচ্ছে: তারা মনে করে না যে, ইসলাম এমন কোনো অসাধারণ ধর্ম, যা তাদের মানতে হবে। অথবা তারা মনে করে না যে, ইসলাম তাদেরকে এমন কিছু দিতে পারে, যা তারা নিজেরাই চিন্তা ভাবনা করে বের করতে পারে না। তাই তাদের দাবি হচ্ছে: আল্লাহ تعالى যেন তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদেরকে বোঝান, কেন তারা ইসলাম মানবে? ইসলামে এমন কী আহামরি কিছু আছে যে, তা মানতে হবে?

আপনাকে যখন কোনো গাড়ির সেলসম্যান একটা সাধারণ গাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করে, সে আপনাকে অনেক বোঝাবে: কেন আপনার গাড়িটা কেনা উচিত, এই গাড়ির চমৎকার বৈশিষ্ট্য কী যা অন্য গাড়ির নেই, কীভাবে এই গাড়িটা সমাজে আপনার স্ট্যাটাস বাড়িয়ে দেবে ইত্যাদি। সে নানা ভাবে চেষ্টা করবে আপনাকে গাড়িটা গছিয়ে দেওয়ার, কারণ গাড়িটা এমন কোনো অসাধারণ কোনো গাড়ি নয়, যা কেনার জন্য মানুষ গভীর আগ্রহে কয়েক মাস আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য লাইন ধরে থাকে।

ধরুন আপনি একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন: আপনি একটা বিশেষ দামী ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনবেন। আপনার বন্ধুরা আপনাকে অনেক বুঝিয়েছে যে, এর চেয়ে ভালো, নিরাপদ গাড়ি আর নেই। আপনি নিজেও অনেক পড়াশুনা করে দেখলেন যে, আসলেই এর চেয়ে শক্তসামর্থ্য, নিরাপদ গাড়ি এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি বানায়নি। কিন্তু কেনার আগে আপনি দাবি করলেন: সেই গাড়ির কোম্পানির সিইও-র সাথে আপনি নিজে কথা বলবেন, তারপরেই সেই গাড়ি কিনবেন, নাহলে কিনবেন না। সিইও যেন নিজে আপনাকে ফোন করে তার গাড়ি কিনতে অনুরোধ করে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তিনি সেটাকে বলেন ‘হও’, আর তা হয়ে যায় — আল-বাক্বারাহ ১১৭

কীভাবে কোনো কিছুর সৃষ্টি হয়, এনিয়ে নানা ধর্মে নানা মতবাদ রয়েছে। কিছু ধর্ম মতে: বস্তু এবং শক্তি সবসময়ই ছিল, সেগুলোর শুধুই রূপান্তর হয়। এর বিরুদ্ধে খুব সহজ কিছু যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা ভুল প্রমাণ করা যায় (দেখুন আল-বাক্বারাহ ১০৮)। আবার কিছু ধর্ম (এমনকি বৈজ্ঞানিক মতবাদও) প্রচার করে: মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে এক মহা-মহাবিশ্ব ছিল, যেখানে যা কিছু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব, তার সবকিছু সৃষ্টি হচ্ছে, এবং আমাদের মহাবিশ্বের মত আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব রয়েছে।

আবার কিছু ধর্ম এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রচার করে: বস্তু এবং শক্তির আগে ‘কিছু’ একটা ছিল, যা থেকে সবকিছু এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের চারপাশে যে বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগৎ আমরা দেখছি, তার জন্য কোনো বুদ্ধিমান বা ব্যক্তিত্ববান স্রষ্টার কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো সব কিছুই সেই ‘কিছু’ একটা থেকে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। —এর বিরুদ্ধেও খুব সহজ যুক্তি দিয়ে তা সহজেই ভুল প্রমাণ করা যায়।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ধারণা, যার বিরুদ্ধে কোনো ফিলসফিকাল যুক্তি ধোপে টিকতে পারেনি, তা পাওয়া যায় কু’রআনে—

2_117

সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অস্তিত্বদানকারী তিনি। যখন তিনি কিছুর অস্তিত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি সেটাকে শুধু বলেন: ‘হও’, আর তা হয়ে যায়। [আল-বাক্বারাহ ১১৭]

Hot spring 600

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

সবকিছুই তাঁর একান্ত অনুগত — আল-বাক্বারাহ ১১৬

ইসলাম ছাড়া বাকি প্রায় সবগুলো ধর্ম কোনো না কোনো ভাবে চেষ্টা করে: পরম স্রষ্টার পাশাপাশি এক বা একাধিক ‘স্রষ্টার হেল্পার’ বা পাতি-ঈশ্বর-এর ধারণা নিয়ে আসতে, যারা মানুষের ‘অনেক কাছের’, যেখানে পরম স্রষ্টা হন অনেক দূরের। যারা মানুষের দুঃখ, কষ্ট বোঝে, যা পরম স্রষ্টা বোঝার ঊর্ধ্বে। যারা মানুষের নানা ভাবে উপকার করার চেষ্টা করে, যা পরম স্রষ্টা তাদের জন্য করার প্রয়োজন মনে করেন না। যাদের মানুষের মতই দোষ-ত্রুটি আছে, যেখানে পরম  স্রষ্টা খুব বেশি পবিত্র, তিনি মানুষের দোষগুলো বোঝেন না।
এভাবে মানুষ এই ধরনের পাতি-ঈশ্বরদেরকে জন্ম দিয়ে পরম স্রষ্টাকে দূরে সরিয়ে দেয়। একইসাথে তারা নিজেদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, যেহেতু তাদের সেই সব পাতি-ঈশ্বরদের রাগ, অভিমান, কামনা-বাসনা, ভুলে যাওয়া, আইন অমান্য করা ইত্যাদি নানা ধরনের ‘গুণ’ আছে, তাই মানুষের এসব ‘গুণ’ থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। সুতরাং, মানুষের ধর্ম নিয়ে এত কড়াকড়ি করার দরকার নেই। এই সব পাতি-ঈশ্বররা মানুষের দোষত্রুটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। পরম স্রষ্টার কঠিন শাস্তি থেকে তাদেরকে বাঁচাবে।

আল্লাহ تعالى এই ধরনের ফাঁকিবাজি মানসিকতাকে কু’রআনে বহুবার গুড়িয়ে দিয়েছেন—

2_116

ওরা বলে, “আল্লাহ تعالى একজন সন্তান নিয়েছেন।” তিনি এসব থেকে পবিত্র! কখনই না! সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তাঁর। সবকিছুই তাঁর একান্ত অনুগত। [আল-বাক্বারাহ ১১৬]

970867_470804919667726_576974296_n  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে পাবে — আল-বাক্বারাহ ১১৫

মানুষ ভুলে যায়। অনেক সময় পরিস্থিতির শিকার হয়ে সে মনে রাখতে পারে না: আল্লাহ تعالى তার কাছ থেকে কী আশা করেন, কী করতে নিষেধ করেছেন, কী করতে বার বার বলেছেন। একারণেই মানুষকে দৈনন্দিন জীবনের নির্দেশ, উপদেশগুলো —যেগুলো তার জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে— সেগুলো একবার, দুইবার দিলে হয় না, বার বার মনে করিয়ে দিতে হয়। তখন তা তার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। কঠিন পরিস্থিতিতেও সে নিজেকে মনে করিয়ে দিতে পারে। এরকম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, দৃষ্টিভঙ্গি পালটিয়ে দেওয়ার মত উপদেশ এসেছে আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতে—

2_115

পূর্ব পশ্চিম সব আল্লাহর। তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে تعالى পাবে। আল্লাহ تعالى সবকিছুকেই ঘিরে আছেন, সবকিছুই জানেন।  [আল-বাক্বারাহ ১১৫]

scotland-landscape-photography-1

একটি ঘটনা দেখি—

রাত দুটা। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। আপনি কম্পিউটার ছেড়ে ফেইসবুকের দিকে তাকিয়ে আছেন। একজনের শেয়ার করা একটা ভিডিও দেখে আপনার হার্টবিট বেড়ে গেছে। ভিডিওটা দেখার জন্য আপনার প্রাণ আকুপাকু করছে। ক্লিক করতে গিয়েও করছেন না। নিজের সাথে সংগ্রাম করছেন: এরকম একটা বাজে ভিডিও দেখে নিজের ভেতরটা নোংরা করে ফেলবেন?  ঠিক তখনি আপনার মনে পড়ল—

তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে تعالى পাবে। আল্লাহ تعالى সবকিছুকেই ঘিরে আছেন, সবকিছুই জানেন।

আপনি সাথে সাথে উপলব্ধি করলেন: আপনি যে এই ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে আছেন এবং ভিডিওটা পুরোটা দেখার চিন্তা করছেন, এগুলো সব আল্লাহ تعالى দেখছেন। আপনি লজ্জা পেয়ে গেলেন। ছি! আল্লাহর تعالى সামনে এরকম একটা বাজে কাজ আপনি কীভাবে করতে পারেন! আপনি তাড়াতাড়ি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলেন। ফেইসবুক বন্ধ করে ঘুমাতে গেলেন।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এই সব লোকেরা যেন প্রার্থনার জায়গাগুলোতে প্রবেশ না করে — আল-বাক্বারাহ ১১৪

মসজিদে বোর্ড মিটিং চলছে। চৌধুরী সাহেব সভাপতি। ইমাম সাহেব তাকে বললেন, “ভাইসাহেব, এলাকার একটি গ্রুপ আগামী শুক্রবার এই মসজিদে তাওহীদের উপর একটি কনফারেন্স করার জন্য আবেদন করছে। সৌদি আরব থেকে বিখ্যাত আলেম এসেছেন তাদের কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার জন্য। আমরা কি তাদেরকে ব্যবস্থা করে দিতে পারি?”

চৌধুরী সাহেব বললেন, “আপনি কি ওই সালাফি গ্রুপের কথা বলছেন? প্রশ্নই ওঠে না। এটা হানাফি মসজিদ। আমরা এখানে ওই সব সৌদি ওয়াহাবি, সালাফিদের প্রশ্রয় দেই না। ওদেরকে অন্য কোনো কনফারেন্স সেন্টার ভাড়া করতে বলেন।”

ইমাম সাহেব চুপসে গেলেন। তিনি বললেন, “আচ্ছা, তাহলে এই শুক্রবার এলাকার তরুণরা বিকেলে এসে রাসুলের জীবনী নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছিল। ওদেরকে আসতে বলি?”

চৌধুরী সাহেব বললেন, “না, মসজিদ হচ্ছে শান্তিতে নামাজ পড়ার জায়গা। এখানে কোনো আলোচনা, সভা, অনুষ্ঠান, কনফারেন্স করার জায়গা না। এমনিতেই মসজিদ পরিষ্কার রাখার জন্য পাঁচটা লোক রাখতে হয়। এই সব অনুষ্ঠান করলে মসজিদের মেরামত, পরিষ্কারের পেছনে কী পরিমাণের খরচ করতে হবে জানেন? আর এই সব তরুণদেরকে মসজিদে ঘন ঘন ঢুকতে দিলে ডিজিএফআই এর লোকজন আমাদের উপর নজর রাখা শুরু করবে। মনে করবে আমরা এদেরকে জিহাদের ট্রেইনিং দিচ্ছি। অযথা ঝামেলা বাড়াবেন না।”

এই ধরনের মানসিকতা এতটাই জঘন্য যে, কু’রআনে এক ভয়ঙ্কর আয়াত রয়েছে এই ব্যাপারে—

2_114

ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে প্রার্থনার জায়গায় আল্লাহর تعالى নাম নিতে বাঁধা দেয়? সেগুলো বিরান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে? এই সব লোকেরা প্রার্থনার জায়গাগুলোতে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাড়া প্রবেশ করার যোগ্য নয়। ওদের জন্য এই দুনিয়াতে রয়েছে অপমান-লাঞ্ছনা, এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ ১১৪]

beautiful_mosque_dome_at_sunset  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আল্লাহই কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে এই মতবিরোধের বিচার করবেন — আল-বাক্বারাহ ১১৩

“না ভাই, আপনি ভুল জানেন। ইসলাম মোটেও এটা সমর্থন করে না। আপনাদের আক্বিদায় গণ্ডগোল আছে।”

– “না জেনে বোকার মত কথা বলবেন না। আমার হুজুর আমাকে দলিল দিয়ে দেখিয়েছেন। আপনাদের আক্বিদা ভুল। যত সব সালাফি বাতিল ফিরকার দল।”

“মুখ সামলে কথা বলবেন। আমার শেখ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা। আপনারা কোথাকার কোন মাদ্রাসার পণ্ডিতের কাছ থেকে মান্ধাত্না আমলের খারেজি নিয়ম কানুন শেখেন।”

– “কত বড় সাহস! আমার হুজুরকে গালি দাও! তোমাদের সেই শেখ বাইরে থেকে শিখে এসে আমাদের পীর জমানার হাজার বছরের জ্ঞান ছাড়িয়ে গেছে? আজকে মাগরিবে মসজিদে আসো। বড় হুজুর থাকবেন, আমরা সবাই থাকবো। দেখা যাবে কে ঠিক।”

মুসলিমদের মধ্যে এধরনের তর্ক এতটাই জঘন্য ব্যাপার যে, এরকম একটি ঘটনার উদাহরণ আল্লাহ تعالى কু’রআনেই দিয়ে দিয়েছেন, আমাদেরকে সাবধান করার জন্য, যেন আমরা ইহুদি, খ্রিস্টানদের অনুকরণ না করি—

2_113

ইহুদিরা বলে, “খ্রিস্টানদের কোনো ভিত্তি নেই”; খ্রিস্টানরা বলে, “ইহুদিদের কোনো ভিত্তি নেই”; যদিও তারা দুই পক্ষই কিতাব পড়ে। একইভাবে যাদের কোনো জ্ঞান নেই (আরব মুশরিকরা), তারাও একই কথা বলে। আল্লাহ تعالى কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে এই মতবিরোধের বিচার করবেন। [আল-বাক্বারাহ ১১৩]

jerusalem  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যি বলে থাকো — আল-বাক্বারাহ ১১১-১১২

আজকাল সুধীবৃন্দরা দাবি করেন, “তোমাদের ইসলাম একটা অসহনশীল, বর্বর ধর্ম। তোমরা দাবি করো যে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সঠিক ধর্ম, আর অন্য সব ধর্ম সব ভুল। আর তোমরা অন্য ধর্মের মানুষদের সন্মান করো না, তাদের অধিকার দাও না, তাদেরকে কাফির গালি দিয়ে হত্যা করার কথা বলো। এরচেয়ে অমুক ধর্ম অনেক সহনশীল, সুন্দর। ”
—এর উত্তর খুব সহজ: প্রথমত, হ্যা, ইসলাম দাবি করে যে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সঠিক ধর্ম এবং বাকি সব ধর্ম তার আসল রূপ থেকে বিকৃত হয়ে গেছে, যার কারণে সেগুলো আর মানা যাবে না। দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মও সেটাই দাবি করে, এমনকি হিন্দু ধর্মও একই দাবি করে, যেখানে খোদ কৃষ্ণই সেই কথা বলেছেন ভগবৎ গীতায়। তৃতীয়ত, যদি কোনো ধর্ম না দাবি করে যে, সে একমাত্র সঠিক ধর্ম, কারণ বাকি সব ধর্ম বিকৃত হয়ে গেছে, তার মানে দাঁড়ায়: সৃষ্টিকর্তা সেই নতুন ধর্ম পাঠিয়েছেন এমনিতেই সময় কাটানোর জন্য। তিনি বসে বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলেন, তাই তিনি নতুন একটা কিছু করার জন্য প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে, বিপুল পরিমাণ মানুষের সময় খরচ করে, অনেক মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে এমন একটা নতুন ধর্ম পাঠালেন, যেটা না মানলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ আগের ধর্মগুলো তো ঠিকই আছে। অন্য ধর্মের লোকরা সব সৎ পথেই আছে এবং স্বর্গেও যাবে। তাই এই নতুন ধর্মটা যদি কেউ মানে তো ভালো, না মানলেও কোনো সমস্যা নেই।

আজকাল এইসব সুধীবৃন্দরা যা দাবি করছেন, তা হচ্ছে অনেকটা এরকম: ইসলাম বা অন্য ধর্মগুলোতে, যেখানে সৃষ্টিকর্তা ঘোষণা দিয়েছেন যে, সেটাই একমাত্র সঠিক ধর্ম কারণ অন্য ধর্মগুলো বিকৃত হয়ে গেছে, সেখানে আসলে স্রস্টার বলা উচিত ছিল, “হে আমার বান্দারা, আজকে আমি তোমাদেরকে একটা ধর্ম দিলাম। এটা অন্য সব ধর্ম থেকে বেশি ঠিক, তা আমি দাবি করবো না। আমার ভুল ত্রুটি হতেই পারে। আর এটা তোমরা মানতেও পারো, নাও পারো। সমস্যা নেই, একটা ধর্ম মানলেই হলো। বেশি দুষ্টামি না করলে তোমরা স্বর্গে যাবেই।”

এই পর্বে ধর্ম নিয়ে দুটো ব্যাপারে আলোচনা করা হবে: ১) Religious Exclusivity বা ধর্মীয় স্বতন্ত্রতা, ২) Religious Intolerance বা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা। আমরা দেখব হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, ইসলাম — এই ধর্মগুলোর মধ্যে কোনটা আসলেই সহিষ্ণুতা প্রচার করে।

quran-and-bible

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)