কীভাবে আল্লাহ একে আবার জীবিত করবেন, যেখানে কিনা তা মৃত? — আল-বাক্বারাহ ২৫৯-২৬০

অথবা তাকে দেখেছ, যে ধ্বসে যাওয়া এক জনবসতির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল,  “কীভাবে আল্লাহ একে আবার জীবিত করবেন, যেখানে কিনা তা মৃত?” তখন আল্লাহ তাকে একশ বছর মৃত রাখলেন, তারপর তাকে আবার বাঁচিয়ে তুলে বললেন, “তুমি কতদিন এভাবে ছিলে?” সে উত্তর দিলো, “একদিন বা এক দিনের কিছু অংশ।” আল্লাহ বললেন, “না, বরং তুমি এভাবে একশ বছর ছিলে। তোমার খাবার এবং পানীয়ের দিকে তাকাও। সেগুলো পচেনি। এবার তোমার গাধার দিকে তাকাও —আমি তোমাকে মানুষের জন্য এক নিদর্শন করে দেব — হাড্ডিগুলোর দিকে তাকাও, দেখো কীভাবে আমি সেগুলোকে একসাথে করি, মাংস দিয়ে আবৃত করি।” তারপর যখন তাকে পরিষ্কার করে দেখানো হলো, সে বলল, “আমি জানি আল্লাহ সবকিছুর উপরে সব ক্ষমতা রাখেন।” [আল-বাক্বারাহ ২৫৯]

প্রেক্ষাপট

একবার একজন নবী, যার সাথে আল্লাহ تعالى যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি এক মৃত জনবসতির ধ্বংসস্তূপ দেখে ভাবছিলেন যে, কীভাবে আল্লাহ تعالى এই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া জনবসতিকে আবার প্রাণ দেবেন? তখন আল্লাহ تعالى তাকে একশ বছর মৃত রেখে, আবার জীবিত করে দেখিয়ে দিলেন। একই সাথে তার যেন কোনো সন্দেহ না থাকে, সেজন্য তিনি تعالى তার চোখের সামনে তার সাথের গাধার (বা তার) মৃত পচে যাওয়া দেহকে আবার জীবিত করে দেখিয়ে দিলেন।[১২][১৪]

এই আয়াত থেকে এবং এর পরের আয়াত থেকে আমরা দেখবো, নবীরা, যারা কিনা আল্লাহর تعالى প্রতি সবচেয়ে দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন, তারাও মাঝে মধ্যে গায়েবে বিশ্বাস নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করেন। তাদেরও জানতে ইচ্ছে করে আল্লাহ تعالى কীভাবে অলৌকিক ঘটনা ঘটান, কীভাবে তিনি تعالى মৃতকে জীবিত করেন। সুতরাং এথেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, আল্লাহর تعالى ক্ষমতা বা আল্লাহ تعالى কীভাবে আমাদের দৃষ্টিতে অলৌকিক ঘটনা ঘটাবেন, সেটা জানতে চাওয়াটা দোষের না। মানুষের কৌতূহল থাকবেই। আল্লাহ تعالى মানুষকে কৌতূহল দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এই কৌতূহলই মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে, প্রযুক্তি তৈরি করতে তাড়না দেয়। কৌতূহল না থাকলে মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী হতে পারত না। সুতরাং কৌতূহল সমস্যা না। তবে সমস্যা হচ্ছে অহেতুক কৌতূহল এবং কৌতূহল মেটাতে না পারলে আল্লাহর تعال ক্ষমতায় অবিশ্বাস করা।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদয় করেন, তুমি তাহলে সেটাকে পশ্চিম দিকে উদয় করাও দেখি? — আল-বাক্বারাহ ২৫৮

2_258

তুমি কি ওকে দেখনি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার রাব্ব সম্পর্কে তর্ক করেছিল, যেখানে কিনা আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছিলেন? যখন ইব্রাহিম বলল, “আমার রাব্ব হচ্ছেন তিনি, যিনি জীবন দেন, এবং মৃত্যু দেন।” তখন সে বলল, “আমি জীবন দেই, আমি মৃত্যু দেই।” তখন ইব্রাহিম বলল, “আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদয় করেন, তুমি তাহলে সেটাকে পশ্চিম দিকে উদয় করাও দেখি?” তখন সেই অস্বীকারকারী হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আল্লাহ অন্যায়কারী মানুষদের পথ দেখান না। [আল-বাক্বারাহ ২৫৮]

“তুমি কি ওকে দেখনি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার রাব্ব সম্পর্কে তর্ক করেছিল?”

আল্লাহ تعالى কল্পনা করতে বলছেন সেই রোমহর্ষক ঘটনার কথা, যখন নবী ইব্রাহিম عليه السلام তখনকার প্রতাপশালী রাজা নমরুদ-এর দরবারে গিয়ে তার মুখের উপর তাকে রাব্ব বলে মানতে অস্বীকার করেছিলেন।[১২] রাজা নমরুদ নিজের বিশাল রাজত্ব এবং ক্ষমতায় এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল যে, সে নিজেকে বিশ্বজগতের রাব্ব বলে দাবি করতো। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কল্পনা করতে বলছেন সেই দৃশ্যের কথা, যেখানে এরকম একজন ফিরাউন টাইপের রাজা, তার মন্ত্রীসভা, দেহরক্ষী, লোকবল নিয়ে সভার একদিকে বসে আছে, আর অন্যদিকে প্রতিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছেন নবী ইব্রাহিম عليه السلام একা। তিনি একা সেই অহংকারী প্রতাপশালী রাজার সামনে দাঁড়িয়ে তার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন, যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করছেন যে, রাজা যা দাবি করছে তা ভুল।

এটা এতটাই সাহসিকতার একটি ঘটনা যে, আল্লাহ تعالى কুর’আনে বলছেন, “তুমি কি ওকে দেখনি?” — অর্থাৎ একবার সেই দৃশ্যের কথা চিন্তা করো। আজকে আমরা অফিসের বসকে চোখের সামনে অন্যায় করতে দেখেও চাকরির ভয়ে কিছু বলি না। আত্মীয়স্বজনকে নিয়মিত ইসলামের নিয়ম ভাঙতে দেখেও কিছু বলি না, পাছে যদি সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাঘাটে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের অসামাজিক কাজ করতে দেখলে, নিজের মত রাস্তা মাপি, ‘কী দরকার খামোখা নিজের সম্মান নষ্ট করে?’ আর সেখানে নবী ইব্রাহিম عليه السلام তখনকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, কেবিনেট মিটিঙে সবার সামনে দাঁড়িয়ে, পুলিশ, আর্মির তোয়াক্কা না করে, প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি বলছিলেন যে, তিনি যা করছেন সেটা অন্যায়। — কুর’আনে দেওয়া এই দৃশ্য থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তিনি অনন্ত বিদ্যমান, সব কিছুর ধারক — আয়াতুল কুরসি, আল-বাক্বারাহ ২৫৫

কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ تعالى আমাদের অনেক মানসিক সমস্যা এবং প্রশ্নের সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। এই আয়াতগুলো আমরা যখন মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তখন ধাক্কা খাই। যখন সময় নিয়ে ভেবে দেখি, তখন আমাদের হতাশা, অবসাদ, ডিপ্রেশন, কিছু না পাওয়ার দুঃখ, নিজের উপরে রাগ, অন্যের উপরে হিংসা, প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা —এই সবকিছু কাটিয়ে ওঠার শক্তি খুঁজে পাই। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি যে, আমরা এতদিন থেকে যেসব সমস্যায় ভুগছিলাম, তার সমাধান তো এই আয়াতেই ছিল! এরকম একটি আয়াত হচ্ছে আয়াতুল কুরসি। এই আয়াতের প্রতিটি বাক্যে শিরক থেকে দূরে থাকার শিক্ষা রয়েছে এবং একই সাথে আমরা দুনিয়াতে যে নানা ধরনের শিকলের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছি, তা থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় শেখানো হয়েছে—

2_255

আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোনো উপাসনার যোগ্য কেউ নেই, তিনি অনন্ত বিদ্যমান, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু শুধুমাত্র তাঁর। কে আছে যে তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তাদের দৃষ্টির সামনে এবং দৃষ্টির অগোচরে যা কিছুই আছে, তিনি তাঁর সব জানেন। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসী আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে কখনো ক্লান্ত করে না। তিনি সবার ঊর্ধ্বে, সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান। [আল-বাক্বারাহ ২৫৫]

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

মায়েরা তাদের বাচ্চাদের পুরো দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাবে — আল-বাক্বারাহ ২৩৩

উনিশ শতকের পর থেকে সারা পৃথিবীতে বাচ্চাদের এক ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়তে হয়েছে: তাদের মায়েরা আর তাদেরকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়ায় না। মানবজাতির একদম শুরু থেকে লক্ষ বছর ধরে বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ تعالى কু’রআনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পুরো দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কিন্তু আজকের ‘আধুনিক সমাজের’ বাচ্চারা আর মায়ের বুকের দুধ না খেয়ে, ‘টিনের দুধ’ নামের কেমিক্যালের মিশ্রণে তৈরি একধরনের সাদা গুড়া ওষুধ খেয়ে বড় হচ্ছে। এই সাদা গুড়া কেমিক্যাল মিশ্রণকে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ‘ফর্মুলা’ বলা হয়, ‘দুধ’ বলা হয় না, কারণ এটি মায়ের দুধের ধারে কাছেও কিছু নয় এবং এতে কয়েকটি ক্ষতিকর ক্যামিকেল রয়েছে। কিন্তু অল্প শিক্ষিত দেশগুলোতে মার্কেটিং-এর জোরে একে মায়ের দুধের কাছাকাছি দুধ বলে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা হয়। মায়ের দেহে দুধ যেভাবে তৈরি হয়, তার ধারে কাছে প্রযুক্তি এখনো মানুষ অবিস্কার করেনি। অথচ সেই ১৮৬৫ সালে প্রথম ফর্মুলা আবিষ্কারের পর থেকে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে মানুষকে বোঝানো হয়েছে যে, টিনের গুড়া দুধ হচ্ছে মায়ের বুকের দুধের কাছাকাছি দুধ।[৩৭২] পানি মেশানোর পর সেটা দেখতে দুধের মতো হয় দেখে সরল মানুষরা বুঝতে পারে না যে, এটা গরুর দুধের প্রোটিন মেশানো একধরনের সাদা গুড়া ওষুধ ছাড়া আর কিছু নয়। উনিশ শতকে এই ফর্মুলা দুধের ব্যাপক প্রচলনের পর থেকে শুরু হয়েছে বিপুল পরিমাণে বাচ্চার মৃত্যু এবং অসুস্থ বাচ্চার সংখ্যা বৃদ্ধি।[৩৭২]

বাংলাদেশে খাবার পানির সঙ্গে ফরমালিন, কাটিং ওয়েল, পার অক্সাইড, খাইসোডা ও দুধের ননী মিশিয়ে নকল ভেজাল দুধ তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে বহুদিন থেকে ‘দুধ’ খাওয়াচ্ছে। আমরা সেটা ধরতে পারিনি। এই বিষ আমরা বছরের পর বছর খেয়েছি। খবরের কাগজে আসার পর আমরা এই ভয়াবহ ঘটনা জানতে পেরেছি।[৩৭১] একইভাবে বাচ্চাদের ফর্মুলা তৈরির কোম্পানিগুলো সফলভাবে আমাদেরকে শত বছর ধরে ঘোল খাইয়ে এসেছে যে, তাদের দুধে পুষ্টি বেশি, সেটি মায়ের দুধের বিকল্প, সেটা খেয়ে বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি হয় না, বাচ্চার পুষ্টির ঘাটতি মেটায়, বুকের দুধের পাশাপাশি সেটা খাওয়ানো ভালো ইত্যাদি।

অতিরিক্ত প্রোটিন এবং ফ্যাট দেওয়া ‘দুধ’ নামের এই ওষুধ খেয়ে বাচ্চারা অল্প সময়ে মোটাসোটা, আকৃতিতে বড় হয় দেখে বাবা-মায়েরা ধরে নেয় যে, এই গুড়া ওষুধে নিশ্চয়ই মায়ের বুকের দুধের থেকে পুষ্টি বেশি। একারণে তারা বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চাদেরকে ফর্মুলা খাওয়ায়, যেন বাচ্চার স্বাস্থ্য বেশি ভালো হয়। স্বল্প শিক্ষিত বাবা-মা’র কাছে বাচ্চা মোটাসোটা হওয়াটাই স্বাস্থ্যের লক্ষণ। তারা বিশ্বাস করে ফেলেছে যে, আল্লাহর تعالى ডিজাইন করা বুকের দুধের থেকে মানুষের আবিষ্কার করা কৃত্রিম দুধ বেশি উন্নত। অথচ খোদ আমেরিকাতেই বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে দ্বিগুণ বাচ্চার মৃত্যু হয়।[৩৬৯] গরিব দেশগুলোতে যেমন, ঘানা, ভারত, পেরুতে কর্মজীবী মায়েদের বুকের দুধ কম খাইয়ে ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে সাড়ে দশগুণ বেশি বাচ্চা মারা যায়।[৩৭০] এছাড়া ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে বাচ্চাদের প্রায় তিনগুণ বেশি ডাইরিয়া হয়, পঞ্চাশভাগ বেশি কানের ইনফেকশন হয়, ১৬.৭ গুণ বেশি ফুসফুসের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া হয়, একজিমা, র‍্যাশ, এল্যারজি হয়, সারাজীবনের জন্য হজমে দুর্বলতা হয়, দেড়গুণ বেশি  টাইপ ১ এবং ২ ডায়াবেটিস হয়, প্রায় দ্বিগুণ বেশি এজমা হয়, প্রায় দেড় গুণ বেশি লিউকেমিয়া হয়, এবং প্রায় দ্বিগুণ বেশি বাচ্চা কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ করে মারা যায়।[৩৭৩][৩৭৪] এই ফর্মুলার ক্ষতির সাথে যোগ হয় কলের পানির মধ্যে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন এবং নানা পানি পরিষ্কারের ক্যামিকাল। সুয়ারেজের ময়লা মিশ্রিত পুকুর, নদীর ময়লা-বিষাক্ত পানি বিপুল পরিমাণের ক্যামিকাল দিয়ে পরিষ্কার করে কলে সরবরাহ করা হয়, যা ব্যবহার করে আমরা বাচ্চার ফর্মুলা দুধ তৈরি করি। এই ভয়ঙ্কর ক্যামিক্যালের সুপ খেয়ে আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মে জটিল অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায় আজকে বাচ্চারা কী পরিমাণে অসুস্থ হচ্ছে। ডায়াবেটিস, এজমা, একজিমা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কানের ইনফেকশন আজকে ঘরে ঘরে।

2_233_title

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন দুই বছর পূর্ণ করে বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এটা বাচ্চার হক। অথচ আমরা অনেকে ছয় মাস হলেই শুধুই বুকের দুধ ছেড়ে ফর্মুলা খাওয়ানো শুরু করে দিয়েছি। পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতিতে মগজ ধোলাই হওয়া ক্যারিয়ার সচেতন মা তাদের বাচ্চাদেরকে শুধুমাত্র বুকের দুধ না খাইয়ে এই সাদা গুড়া ওষুধ খাইয়ে বড় করেন। অনেকে নিজের ফিগার ঠিক রাখার জন্য ফর্মুলা খাইয়ে বাচ্চার শরীর সারাজীবনের জন্য নষ্ট করে দেন। অন্যদিকে স্বল্প শিক্ষিত বাবা-মা বুকের দুধের পাশাপাশি  বাচ্চাকে ‘গরু মোটাতাজাকরন পদ্ধতির’ মতো ফর্মুলা খাইয়ে মোটা ফার্মের মুরগি বানান, যেন বাচ্চার স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের কাছে কথা শুনতে না হয়। আরেকটা বড় অন্যায় হলো: কোনো সমস্যা ছাড়াই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চাকে স্বাভাবিকভাবে জন্ম হতে না দিয়ে, মায়ের কষ্ট কমানোর জন্য অযথা সিজারিয়ান করে অস্বাভাবিকভাবে বাচ্চা বের করা। এভাবে বের করা বাচ্চা জরায়ু পথে বের হওয়ার সময় মায়ের দেহের মাইক্রব নিয়ে বের হয় না, যার কারণে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে দুর্বল এবং বাচ্চা বড় হওয়ার সময় বিভিন্ন ইনফেকশন হয়।[৩৭৭] একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক যুগে এসেও আজকে আমরা অজ্ঞানতা, স্বার্থপরতার কী গভীর অন্ধকার গর্তে ডুবে আছি!  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র — আল-বাক্বারাহ ২২৩

“তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র… [সূরা আল-বাক্বারাহ]” — কত অপমানকর কথা! ইসলাম নারীদেরকে মানুষ মনে করে না, চাষের জমি মনে করে? “… তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার করো ” — নারীরা কি পুরুষদের সম্পত্তি যে, যখন যা খুশি করবে? এই হচ্ছে ইসলামে নারীর সম্মান? ইসলাম না বড় গলায় বলে যে, এটা নারীদের অধিকার দিয়েছে? এই হচ্ছে তার নমুনা?

আজকাল একদল নাস্তিক এবং নারীবাদীরা সূরা আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি ব্যবহার করে ইসলামকে নারীদের জন্য একটি বর্বর, নিষ্ঠুর, পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম বলে অপপ্রচার চালায়। আসুন দেখি কু’রআন আসলে কী বলে, আর তারা কু’রআনকে দিয়ে কী বলায়—

2_223

তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত। তাই তোমাদের শস্যক্ষেতে যাও, যেভাবে তোমরা চাও। নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা করো। আর আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান! জেনে রেখো তোমরা তাঁর সামনা সামনি হতে যাচ্ছো। আর যারা পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে গেছে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও। [আল-বাক্বারাহ ২২৩]

2_223_title

নারীবাদী এবং নাস্তিকরা নানা বিকৃত উপমা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, কু’রআন নারীদেরকে কতটা নিচু মনে করে, মানুষের সমান মর্যাদা দেয় না, পুরুষদেরকে স্ত্রীদের সাথে যা খুশি করার অধিকার দেয় ইত্যাদি। তাদের এইসব নোংরা উপমা পড়ে মুসলিমরাও ঘাবড়ে যান। অনেক মুসলিম নারী সেই সব অপব্যাখ্যা পড়ে কু’রআনকে খারাপভাবে দেখা শুরু করেন। তারপর তার এবং আল্লাহ تعالى সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরা শুরু হয়ে যায়।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওরা তোমাকে মাসিকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে — আল-বাক্বারাহ ২২২

2_222

ওরা তোমাকে মাসিকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এটা কষ্ট। তাই মাসিকের দিনগুলোতে নিজেদেরকে তাদের থেকে আলাদা রাখো। যতক্ষণ তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে না যাচ্ছে, ততক্ষণ তাদের কাছে যাবে না। তারপর যখন তারা নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন করে, তখন তাদের কাছে যাও, যেখানে যেতে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা বার বার তাঁর কাছে ক্ষমা চায়। তিনি তাদেরকে ভালোবাসেন যারা নিজেদেরকে সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করে। [আল-বাক্বারাহ ২২২]

অন্য ধর্মের মানুষদের মধ্যে মাসিকের ব্যাপারে নানা ধরনের কুসংস্কার এবং নোংরা সব ধারণা ছিল এবং এখনো আছে। নারীদেরকে এই সময়টাতে এক ঘরে করে রাখা হতো। তাদের সাথে এক বিছানায় কেউ শুতে চাইত না। তাদের সাথে একসাথে বসে খাবার পর্যন্ত খেত না, আলাদা করে খেতে বসতে দেওয়া হতো। নারীদেরকে রান্না ঘরে রান্না করতে দেওয়া হতো না, কারণ তাদের রান্না করা খাবার খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। এধরনের নানা রকমের অন্যায় থেকে শুরু করে এই সময়টাতে নারীদের সাথে নানা ধরনের নোংরা কাজও করা হতো।[১২] দুঃখের ব্যাপার হলো এই কষ্টের সময়টাতে পুরুষরা নারীদের সাথে অন্যায় তো করতোই, এমনকি পরিবারের অন্য নারীরাও মাসিকে থাকা মেয়েদের সাথে দুর্ব্যবহার করতো।

ইসলাম মাসিক সম্পর্কে যাবতীয় ভুল ধারণা অবসান করেছে, নারীদের সাথে অন্যায় করা বন্ধ করেছে, নারীদের এই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ব্যাপারটাকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে। যেই সব নারীবাদীরা অপপ্রচার করে বেড়ায় যে, ইসলাম নারীদেরকে হেয় করে, তারা ইতিহাস পড়ে দেখুক ইসলাম আসার আগে নারীদের জীবন কী ভয়ঙ্কর কষ্টের এবং অপমানের ছিল। ইসলাম আসার আগে প্রত্যেক মাসে এক সপ্তাহ নারীরা যে পরিমাণের অন্যায়, দুর্ব্যবহার এবং অপমান সহ্য করতো, আর ইসলাম আসার পরে নারীদের অবস্থা কীভাবে আমূল বদলে গেল, সেটাই নারীবাদীদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। দুঃখজনকভাবে উপমহাদেশের মুসলিমরা হিন্দু ধর্ম দিয়ে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। হিন্দুদের নানা কুসংস্কার, অশুচির ধারণা মুসলিমদের মধ্যেও ঢুকে গেছে। যার ফলে মাসিক সম্পর্কে ইসলাম যা শিখিয়েছে, সেটা মুসলিমরা হিন্দুদের সংস্কৃতি, বিশ্বাস, কুসংস্কার দিয়ে গুলিয়ে ফেলেছে। এখনো গ্রামে-গঞ্জে এই সময়টাতে নারীদের সাথে ব্যাপক অন্যায় আচরণ হতে দেখা যায়।

আল্লাহ تعالى মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ডিজাইনে তৈরি করেছেন। মাসিক আল্লাহর تعالى সর্বশ্রেষ্ঠ ডিজাইনের একটি অংশ। মাসিকের ব্যাপারটাকে খারাপভাবে দেখার সময় আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে: আমরা কি আল্লাহর تعالى সর্বশ্রেষ্ঠ ডিজাইনকে খারাপভাবে দেখছি? আমরা কি আল্লাহর تعالى ডিজাইনের কোনো একটি ব্যাপারকে ঘৃণা করছি? আল্লাহ تعالى কু’রআনে গর্ব করে বলেছেন যে, তিনি মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর গঠনে সৃষ্টি করেছেন [সূরা আত-ত্বিন ৯৫:৪]। আমরা কি তাহলে মানুষের গঠনের কোনো একটি দিকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন করার মতো ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি?

2_222_title

মাসিক কেন হয়?  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওরা তোমাকে মদ এবং জুয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে — আল-বাক্বারাহ ২১৯

চৌধুরী সাহেব বলেন, “অ্যালকোহল পান করাটা কোনো বড় গুনাহ না, কারণ হাজার হলেও, কু’রআনেই বলা আছে, ‘তারা যদি তোমাকে মদ এবং জুয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে: বলে দাও, এগুলোতে বিরাট ক্ষতি আছে, কিন্তু মানুষের জন্য কিছু উপকারও আছে’। দেখলে তো? খোদ আল্লাহই বলে দিয়েছেন মদ এবং জুয়াতে কিছু উপকার আছে। সুতরাং একটুআধটু হুইস্কি পান করলে কোনো সমস্যা নেই, আমি তো আর মাতাল হয়ে যাচ্ছি না। বরং একটু হুইস্কি বা ওয়াইন পান করলে হজম ভালো হয়। আর লটারিতে তো কোনো সমস্যাই নেই। হাজার হলেও হার্ট ফাউন্ডেশনের লটারি, এতে কত মানুষের চিকিৎসা হবে কখনও চিন্তা করে দেখেছ? বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর ত্যাগ সবসময়ই আল্লাহ পছন্দ করেন।”

এধরনের চৌধুরী সাহেব টাইপের মানুষরা আপনাকে বলবে না, কু’রআনের আয়াতে আসলে বলা আছে—

2_219

ওরা তোমাকে মদ-মাদক এবং জুয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, বলে দাও, “এই দুটোতেই বিরাট পাপ, ক্ষতি রয়েছে এবং মানুষের জন্য কিছু উপকারও। কিন্তু এই দুটো থেকে যে পাপ, ক্ষতি হয়, তা তাদের উপকার থেকে অনেক বেশি। আর ওরা তোমাকে কী খরচ করবে সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, ‘প্রয়োজন মেটাবার পর যা বাড়তি থাকে।’ এভাবেই আল্লাহ تعالى তার নির্দেশকে তোমাদের কাছে পরিষ্কার করে দেন, যাতে করে তোমরা চিন্তাভাবনা করো।” [আল-বাক্বারাহ ২১৯]

অনেক মুসলিম সত্যিই মনে করেন অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা যেহেতু বৈজ্ঞানিক ভাবেই সমর্থিত, তাই তারা তা হারাম মনে করেন না। তারা বিশ্বাস করেন যে, শুধুমাত্র মাতাল হওয়ার মতো পরিমাণ পান করলেই তা হারাম। যদিও বিজ্ঞানীরা কী বলছেন তাতে কিছুই আসে যায় না সেটা হালাল না হারাম হবে কিনা। কিন্তু যারা বিজ্ঞানীদের উপর নির্ভর করেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ। ২০১৫ সালে বিস্তারিত পরীক্ষা করে বিবিসিতে দেখানো হয়েছে যে, অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল খাওয়াও লিভারের জন্য ক্ষতিকর। যারা নিয়মিত ‘নিরাপদ’ পরিমাণে অ্যালকোহল পান করে আসছিলেন, তাদের লিভারও দফারফা। দীর্ঘদিন অ্যালকোহল ছেড়ে না থাকলে লিভার আর সুস্থ অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না। এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশের পর শত বছর ধরে চলে আসা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইগুলো শীঘ্রই পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।[৩১৩]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওরা তোমাকে নতুন চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে — আল-বাক্বারাহ ১৮৯

2_189_title

ওরা তোমাকে নতুন চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। বলো, “এটি মানুষের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের হিসেব রাখা এবং হাজ্জের সময় নির্ধারণ করার জন্য।” আর পেছন দিক দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে সেটা বেশ ধার্মিকতা হয়ে গেল না। বরং আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান থাকাটাই হচ্ছে আসল ধার্মিকতা। তাই দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করো, আর আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান থেকো, যেন তোমরা সফল হতে পারো। [আল-বাক্বারাহ ১৮৯]

চাঁদ – এক অসাধারণ সৃষ্টি

আল্লাহ تعالى চাঁদকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের জন্য উপযোগী করার জন্য। পৃথিবীর উপরের পৃষ্ঠটি একটি পাতলা খোলসের মতো, যা অনেকগুলো টুকরোতে ভাগ করা। এই টুকরোগুলোকে বলা হয় ‘টেক্টনিক প্লেট’। এই প্লেটগুলো ক্রমাগত নড়াচড়া করে, সম্প্রসারিত হয়, একটা প্লেট অন্য প্লেটের নীচে আটকিয়ে যায় এবং একসময় হঠাৎ করে ছুটে যায়, আর তখন ভুমিকম্প হয়।

চাঁদের আকর্ষণের কারণে পৃথিবীর উপরের স্তর ক্রমাগত টান পড়ে। এর ফলে প্লেট টেকটনিক্স হয়। পৃথিবীতে প্রাণ টিকে থাকার জন্য হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং সালফারের ক্রমাগত সরবরাহ দরকার। পৃথিবীর ভেতর থেকে এই প্রয়োজনীয় পদার্থগুলো বেরিয়ে আসে এই প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে।[৩৩১] অনেক আগে আদি প্রাণীগুলোর বেঁচে থাকার জন্য যে পুষ্টির দরকার ছিল, তা সরবরাহ করেছিল এই প্লেট টেক্টনিক্স—প্লেটগুলোর ক্রমাগত সম্প্রসারণ, নড়াচড়া এবং ভুমিকম্প।

Convection

যদি চাঁদ না থাকতো, তাহলে প্লেট টেকটনিক্স হতো না, পৃথিবীতে জটিল প্রাণ টিকে থাকতো না, কোনোদিন মানুষ আসতে পারতো না। মানুষকে পাঠানোর জন্য দরকার ছিল চাঁদকে ঠিক এখন যে আকৃতি এবং দূরত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই রাখা।[৩২৬]

চাঁদ হচ্ছে পৃথিবীর স্ট্যাবিলাইজার। এটি পৃথিবীকে নিজের অক্ষের উপর বেশি দোলা থেকে রক্ষা করে। এর টানের কারণে পৃথিবী ঘোরার সময় লাটিমের মতো হেলে দুলে না ঘুরে একই অক্ষের উপর ঘোরে। যদি এরকম না হতো, পৃথিবীতে ঋতুগুলো ভয়ঙ্কর হতো। পৃথিবীর আবহাওয়া খুব দ্রুত চরমভাবে পরিবর্তন হতো। জটিল প্রাণ থাকতে পারতো না। মানুষ তো দূরের ব্যাপার। যেরকম কিনা মঙ্গল গ্রহে হয়েছে। মঙ্গল গ্রহের পৃথিবীর মতো চাঁদ না থাকার কারণে সেখানে আবহাওয়া চরম হয়ে গেছে।[৩২৬]

শুধু তাই না, চাঁদ পৃথিবীর ঘোরার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। চাঁদের টানে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির ঘর্ষণের কারণে পৃথিবীর ঘোরার গতি নিয়ন্ত্রিত থাকে। চাঁদ না থাকলে এক দিনের দৈর্ঘ্য হতো মাত্র ৬ ঘণ্টা![৩২৭]

চাঁদের কারণে যে পূর্ণ সূর্য গ্রহণ হয়, সেটা একটা বিরাট ব্যাপার। সূর্যের ব্যাস চাঁদের থেকে প্রায় ৪০০গুণ বেশি। যদি সূর্য চাঁদের থেকে প্রায় ৪০০ গুণ দূরে না থাকতো, তাহলে আকাশে সূর্য এবং চাঁদের আকৃতি প্রায় সমান হতো না এবং কোনোদিন পূর্ণ সূর্য গ্রহণ হতো না। সূর্য এবং চাঁদের আকৃতি এবং দূরত্ব এত নিখুঁত অনুপাতে আল্লাহ تعالى রেখেছেন দেখেই পূর্ণ সূর্য গ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে একদম সঠিক মাপে ঢেকে ফেলে।

TotalSolarEclipse  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

শুধুমাত্র এগুলোই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন — আল-বাক্বারাহ ১৭৩

আমরা যারা মুসলিম প্রধান দেশে থাকি, তারা সাধারণত এই ধরনের আয়াত পড়লে চোখ বুলিয়ে পার হয়ে যাই, কারণ মুসলিম প্রধান দেশে কি আর এসব সমস্যা থাকে নাকি? এগুলো হচ্ছে ‘কুফফার’দের দেশে থাকার সমস্যা। দেখা যাক আসলেই তাই কিনা—2_173_title

2_173মরা প্রাণী, রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা — শুধুমাত্র এগুলোই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু কেউ যদি বাধ্য হয় এগুলো খেতে এবং তার ভেতরে খাওয়ার কোনো আকাঙ্খা না থাকে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খায়, তাহলে তার কোনো পাপ হবে না। আল্লাহ অবশ্যই অনেক ক্ষমা করেন, তিনি নিরন্তর দয়ালু। [আল-বাক্বারাহ ১৭৩]

মরা প্রাণী

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে প্রথমেই ٱلْمَيْتَةَ আল-মাইতাহ হারাম করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে নিজে থেকে মরে যাওয়া, বা কোনো প্রাণীর আক্রমণে মরে পড়ে থাকা প্রাণীর মৃত দেহাবশেষ। লক্ষ্য করুন তিনি تعالى কিন্তু বলেননি যে, মৃত প্রাণীর ‘মাংস খাওয়া’ হারাম, বরং তিনি تعالى বলেছেন ‘মরা জিনিস হারাম’। মৃত জীব খাওয়া, কেনা, বেচা সবকিছুই হারাম। এগুলো থেকে কোনো ধরনের লাভ করাও হারাম। এমনকি নিজেদের পালিত পশুকে মোটা তাজা করার জন্য মৃত কিছু খাওয়ানোও নিষিদ্ধ। তবে ব্যবহারের জিনিস তৈরিতে মৃত প্রাণীর হাড় এবং চুল ব্যবহার করা বৈধ। একইসাথে ট্যানারিতে প্রক্রিয়া করা মৃত প্রাণীর চামড়া ব্যবহার করা বৈধ। তবে মৃত প্রাণীর চর্বি নিষিদ্ধ।[৪] বিভিন্ন তাফসিরে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

খবরের কাগজে আমরা কয়েক বছর থেকেই দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে নানা জেলায়, যেমন: ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, ইত্যাদি জায়গায় দেদারসে মরা গরু, মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে। সরাসরি বিক্রি ছাড়াও শহরের হোটেলগুলোতে নিয়মিত সরবরাহ হচ্ছে মরা গরু, মুরগি। প্রশাসন নিরব। পূর্বাঞ্চলের অ্যানথ্রাক্স সংক্রমিত এলাকাগুলোতে অ্যানথ্রাক্সে মরা গরুর মাংস পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে! এছাড়াও কসাইখানাগুলো অত্যন্ত নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, নোংরা মাটিতে মাংস রেখে বিক্রি হচ্ছে, যা আর হালালের শর্তগুলো পূরণ করে না। এমনকি রাজধানীর হোটেলগুলোতে বাথরুমে, ড্রেনের পাশে মাংস কাটাকাটি, রান্না হচ্ছে। আরও ভয়ঙ্কর খবর হলো ২০১৫ রমযানে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গরু, ছাগলের মাংসের পাশাপাশি শুকরের মাংস রাখা অবস্থায় ধরা পড়েছে। [সুত্রঃ প্রথম আলো, ইনকিলাব, আমার দেশ, জনকণ্ঠ, কালের কণ্ঠ][৩১৩]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

হে মানুষ, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং ভালো, পবিত্র আছে, তা খাও — আল-বাক্বারাহ ১৬৮

2_168_title

2_168হে মানুষ, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং ভালো, পবিত্র আছে, তা খাও। আর শয়তানের পথ অনুসরণ করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [আল-বাক্বারাহ ১৬৮]

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলছেন, “হে মানুষ”—এটি শুধু মুসলিমদের জন্যই নয়, বরং সকল যুগের, সকল মানুষের, সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম—সবার জন্য নির্দেশ। এখানে আল্লাহ تعالى শুধুই বলেননি হালাল খাবার খেতে, একইসাথে সেটা তাইয়িবও হতে হবে। তাইয়িব طيب হচ্ছে যা ভালো এবং পবিত্র— দুটোই একসাথে।[১] যা কিছুই খেতে ভালো, দেখতে সুন্দর, শ্রুতিমধুর, সুন্দর ঘ্রাণ —সেগুলোই তাইয়িব।[১৬]

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে যা দেন, সেটা আমাদের জন্য ভালো এবং পবিত্র। কিন্তু মানুষ অনেক সময় অনেক কিছু তৈরি করে যেটা খেতে ভালো হলেও, পবিত্র নয়। যেমন, আল্লাহ تعالى কলা দিয়েছেন, যা তাইয়িব— ভালো এবং পবিত্র। কিন্তু মানুষ যখন এই কলাকে পোকা মারার বিষ ডিডিটি এবং বিদেশ থেকে আনা কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করে[৩১১], তখন সেটা খাওয়ার যোগ্য হলেও, সেটা আর পবিত্র থাকে না, তাইয়িব-এর দুটি শর্ত পূরণ করে না। সুতরাং, এই ধরনের কলা, ফরমালিন দিয়ে রাখা ফল, মাছ খাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না, কুর’আনের এই আয়াতের নিষেধের জন্য এবং নিজের স্বাস্থ্যের জন্য।

একইভাবে আল্লাহ تعالى প্রকৃতিতে পানি, চিনি দিয়েছেন। সেগুলো হালাল এবং তাইয়িব। কিন্তু এগুলোর সাথে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, এসিড, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণের চিনি, রঙ ব্যবহার করে যখন নানাধরণের পানীয় তৈরি করে, তখন সেটা আর তাইয়িব থাকে না।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)