তারপর তাকে তার অবাধ্যতা এবং বাধ্যতার বোধ দেওয়া হয়েছে — আশ-শামস

শপথ সূর্যের, তার উজ্জ্বল আলোর; চাঁদের, যখন তাকে অনুসরণ করে; দিনের, যখন তাকে প্রকাশ করে; এবং রাতের, যখন তাকে ঢেকে ফেলে। শপথ আকাশের এবং তার অসাধারণ নির্মাণের। শপথ পৃথিবীর এবং যেভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে। শপথ মানবাত্নার এবং তার যথাযথ বিন্যাসের। তারপর তাকে তার অবাধ্যতা এবং বাধ্যতার বোধ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে একে পরিশুদ্ধ করেছে, সে সফল হয়েছে। আর যে একে নষ্ট করে ফেলেছে, সে ব্যর্থ হয়েছে।

ছামুদ তাদের বিদ্রোহী মনোভাবের জন্য পুরোপুরি অবাধ্য হয়ে গিয়েছিল, যখন তাদের নিষ্ঠুরতমজন মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। তখন আল্লাহর রাসুল তাকে বললেন, “এটা আল্লাহর উট, একে পানি পান করানোর ব্যাপারে সাবধান!” কিন্তু তারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলা শুরু করলো এবং নিষ্ঠুরভাবে উটটিকে হত্যা করলো। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের সবাইকে ভীষণভাবে মেরে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দিলেন। তিনি পরোয়া করেন না এর পরিণতির। [আশ-শামস]

সৃষ্টিজগত-এর শপথ

কুর‘আনে আল্লাহ تعالى বহুবার সৃষ্টিজগতের নানা দিক নিয়ে শপথ করেছেন। এই শপথগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ যেন ভালো করে সেই ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করে। যেমন, “শপথ সূর্যের এবং তার উজ্জ্বল আলোর…” — এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে যেন বলছেন: সূর্যের দিকে লক্ষ্য করেছ? সেটা কীভাবে উজ্জ্বল আলো দেয়? কী প্রচণ্ড শক্তির উৎস এই সূর্য, যার আলো যতদূর চোখ যায় সব আলোকিত করে দেয়? কত বড় আগুনের গোলা হলে এটা এত উত্তাপ দেয় যে, বিশাল এলাকার মাটি শুকিয়ে ফেটে মরুভূমি হয়ে যায়? নদী নালার পানি বাষ্প হয়ে উবে যায়? তোমাদের বানানো কোনো আগুন পারে এর ধারে কাছে কিছু করতে?  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওরা তোমাকে নতুন চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে — আল-বাক্বারাহ ১৮৯

2_189_title

ওরা তোমাকে নতুন চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। বলো, “এটি মানুষের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের হিসেব রাখা এবং হাজ্জের সময় নির্ধারণ করার জন্য।” আর পেছন দিক দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে সেটা বেশ ধার্মিকতা হয়ে গেল না। বরং আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান থাকাটাই হচ্ছে আসল ধার্মিকতা। তাই দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করো, আর আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান থেকো, যেন তোমরা সফল হতে পারো। [আল-বাক্বারাহ ১৮৯]

চাঁদ – এক অসাধারণ সৃষ্টি

আল্লাহ تعالى চাঁদকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের জন্য উপযোগী করার জন্য। পৃথিবীর উপরের পৃষ্ঠটি একটি পাতলা খোলসের মতো, যা অনেকগুলো টুকরোতে ভাগ করা। এই টুকরোগুলোকে বলা হয় ‘টেক্টনিক প্লেট’। এই প্লেটগুলো ক্রমাগত নড়াচড়া করে, সম্প্রসারিত হয়, একটা প্লেট অন্য প্লেটের নীচে আটকিয়ে যায় এবং একসময় হঠাৎ করে ছুটে যায়, আর তখন ভুমিকম্প হয়।

চাঁদের আকর্ষণের কারণে পৃথিবীর উপরের স্তর ক্রমাগত টান পড়ে। এর ফলে প্লেট টেকটনিক্স হয়। পৃথিবীতে প্রাণ টিকে থাকার জন্য হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং সালফারের ক্রমাগত সরবরাহ দরকার। পৃথিবীর ভেতর থেকে এই প্রয়োজনীয় পদার্থগুলো বেরিয়ে আসে এই প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে।[৩৩১] অনেক আগে আদি প্রাণীগুলোর বেঁচে থাকার জন্য যে পুষ্টির দরকার ছিল, তা সরবরাহ করেছিল এই প্লেট টেক্টনিক্স—প্লেটগুলোর ক্রমাগত সম্প্রসারণ, নড়াচড়া এবং ভুমিকম্প।

Convection

যদি চাঁদ না থাকতো, তাহলে প্লেট টেকটনিক্স হতো না, পৃথিবীতে জটিল প্রাণ টিকে থাকতো না, কোনোদিন মানুষ আসতে পারতো না। মানুষকে পাঠানোর জন্য দরকার ছিল চাঁদকে ঠিক এখন যে আকৃতি এবং দূরত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই রাখা।[৩২৬]

চাঁদ হচ্ছে পৃথিবীর স্ট্যাবিলাইজার। এটি পৃথিবীকে নিজের অক্ষের উপর বেশি দোলা থেকে রক্ষা করে। এর টানের কারণে পৃথিবী ঘোরার সময় লাটিমের মতো হেলে দুলে না ঘুরে একই অক্ষের উপর ঘোরে। যদি এরকম না হতো, পৃথিবীতে ঋতুগুলো ভয়ঙ্কর হতো। পৃথিবীর আবহাওয়া খুব দ্রুত চরমভাবে পরিবর্তন হতো। জটিল প্রাণ থাকতে পারতো না। মানুষ তো দূরের ব্যাপার। যেরকম কিনা মঙ্গল গ্রহে হয়েছে। মঙ্গল গ্রহের পৃথিবীর মতো চাঁদ না থাকার কারণে সেখানে আবহাওয়া চরম হয়ে গেছে।[৩২৬]

শুধু তাই না, চাঁদ পৃথিবীর ঘোরার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। চাঁদের টানে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির ঘর্ষণের কারণে পৃথিবীর ঘোরার গতি নিয়ন্ত্রিত থাকে। চাঁদ না থাকলে এক দিনের দৈর্ঘ্য হতো মাত্র ৬ ঘণ্টা![৩২৭]

চাঁদের কারণে যে পূর্ণ সূর্য গ্রহণ হয়, সেটা একটা বিরাট ব্যাপার। সূর্যের ব্যাস চাঁদের থেকে প্রায় ৪০০গুণ বেশি। যদি সূর্য চাঁদের থেকে প্রায় ৪০০ গুণ দূরে না থাকতো, তাহলে আকাশে সূর্য এবং চাঁদের আকৃতি প্রায় সমান হতো না এবং কোনোদিন পূর্ণ সূর্য গ্রহণ হতো না। সূর্য এবং চাঁদের আকৃতি এবং দূরত্ব এত নিখুঁত অনুপাতে আল্লাহ تعالى রেখেছেন দেখেই পূর্ণ সূর্য গ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে একদম সঠিক মাপে ঢেকে ফেলে।

TotalSolarEclipse  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)