যেদিন তোমার রব আসবেন সারি সারি ফেরেশতাদের নিয়ে —আল-ফাজর ১৫-৩০

মানুষের অবস্থা হচ্ছে: যখন তার প্রতিপালক তাকে সম্মান, সামর্থ্য বাড়িয়ে দিয়ে পরীক্ষা নেন, তখন সে বলে, “আমার প্রতিপালক আমাকে সম্মানিত করেছেন!” আর যখন তিনি জীবিকা কমিয়ে দিয়ে পরীক্ষা নেন, তখন সে আফসোস করে, “আমার প্রতিপালক আমাকে অপমানিত করেছেন।” —সেটা কখনই নয়। বরং তোমরাই তো এতিমদের সম্মান করো না। অভাবীদের খাবার তাদেরকে দিতে উৎসাহ পর্যন্ত দাও না। উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ গোগ্রাসে আত্মসাৎ করো। সম্পদের প্রতি তোমাদের মাত্রাতিরিক্ত মোহ।—আল-ফাজর ১৫-২০

যখন তার প্রতিপালক তাকে সম্মান, সামর্থ্য বাড়িয়ে দিয়ে পরীক্ষা নেন

যখন কারও বেশ টাকা পয়সা হয়, তখন সে অনেক সময় এক ধরনের আত্মতৃপ্তিতে ভোগে যে, আল্লাহ تعالى তাকে এখন ভালোই পছন্দ করেন। আল্লাহকে تعالى খুশি রাখার জন্য সে মসজিদে কিছু দান করে। গরিব আত্মীয়দের মাঝে মধ্যে টাকা পয়সা বিলিয়ে দেয়। কিন্তু ওদিকে আলিশান রেস্টুরেন্টে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। প্রত্যেক মাসে জাঁকজমক করে পার্টি। বাসায় বিশাল টেলিভিশন, দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি, অভিজাত এলাকায় আলিশান বাড়ি। কয়েক মাস পর পর বিদেশে বেড়াতে যাওয়া। লক্ষ লক্ষ টাকা আমোদে উড়িয়ে আসা। পাঁচ তারা হোটেলে গিয়ে সন্তানের জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠান।

মাঝে মধ্যে তার মনে হতে থাকে যে, জীবনটা বাড়াবাড়ি রকমের বিলাসিতা হয়ে গেছে। আশে পাশে মানুষ কত কষ্টে আছে। তাদের জন্য কিছু করা দরকার। তখন সে বিবেকের দংশন কমাতে মসজিদের দান বাক্সে একশ টাকা দিয়ে আসে। তারপর পরদিন লক্ষ টাকা খরচ করে সপরিবারে ফুর্তি করতে যায়, আর মনে মনে ভাবতে থাকে, “আল্লাহ আমার উপর কত রহমত করেছেন! উনি আমাকে কত সম্মান দিয়েছেন! আলহামদুলিল্লাহ!” —কিন্তু সে জানে না যে, এই সবই ছিল পরীক্ষা। যেই পরীক্ষায় সে প্রতিদিন ফেল করছে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমার রব তোমার উপর যা অনুগ্রহ করেছেন, তা অন্যকে জানাতে থাকো। —আদ-দুহা

শপথ আলোকোজ্জ্বল দিনের। শপথ রাতের, যখন তা স্থির হয়ে যায়। তোমার প্রতিপালক মোটেও তোমাকে ছেড়ে যাননি, বা রাগ করেননি। বরং তোমার জন্য আগামী দিনগুলো হবে আগের দিনগুলোর থেকেও ভালো। অচিরেই তোমার রব তোমাকে যা দেবেন তাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে। তিনি কি তোমাকে এতিম অবস্থায় পেয়ে আশ্রয় দেননি? পথ হারা পেয়ে পথ দেখাননি? অভাবী পেয়ে অভাবমুক্ত করেননি? তাই, এতিমদের প্রতি কঠোর হবে না। কেউ কিছু চাইতে আসলে তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেবে না। আর তোমার রব তোমার উপর যা অনুগ্রহ করেছেন, তা অন্যকে জানাতে থাকো। —আদ-দুহা

সুরাহ আদ-দুহা একটি বিখ্যাত সুরা। হাজার বছর আগে এই সূরাহ’য় আল্লাহ تعالى রাসুলকে عليه السلام ভীষণ কষ্টের সময় সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। তারপর গত হাজার বছরে অগণিত মুসলিম এই সূরাহ’র মধ্যে ধৈর্য ধরে কষ্টের সময় পার করার সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছেন। সুরাহ আদ-দুহা মুসলিমদের জন্য হতাশা, অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার নিরাময়।

আলো ঝলমল সকাল। সকালের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাস্তায় মানুষের হট্টগোল শোনা যাচ্ছে। বাজার বসেছে। পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। চারিদিকে প্রাণের বন্যা। সবাই ব্যস্ত তাদের জীবিকার সন্ধানে।

রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। বাচ্চারা, বড়রা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। শান্ত, স্থির প্রকৃতি। যারা জেগে আছে, তারা গভীর চিন্তায় আত্মমগ্ন। জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভেবে দেখার সঠিক সময় এটা।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় — আল-বাক্বারাহ ২৬৮

আমরা যখন যাকাত দেওয়ার সময় হিসেব করে দেখি কত যাকাত দিতে হবে, তখন ভাবি, “এত্ত গুলো টাকা দিয়ে দিতে হবে! এত টাকা যাকাত দিয়ে কী হবে? মানুষের অভাবের তো কোনো শেষ নেই। যত দিবো, তত চাইবে।” — যাকাতের পরিমাণ দেখে আমাদের আফসোস শুরু হয়ে যায়, অথচ ভেবে দেখি না যে, এটা হচ্ছে আমাদের সম্পত্তির মাত্র ২.৫%অংশ, খুবই নগণ্য পরিমাণ। বাকি বিশাল ৯৭.৫% অংশ সম্পত্তি আমাদের জমা হয়ে আছে। যাকাত দেওয়ার সময় আমাদের শুধু আফসোস হয় যে, কতগুলো টাকা বের হয়ে গেলো। সেই টাকা না দিলে কত কিছু কিনতে পারতাম, কত কিছু করতে পারতাম। অথচ চিন্তা করে দেখি না যে, আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এত সম্পত্তি দিয়েছেন যে, তার এক নগণ্য অংশও আমাদের কাছে এত বেশি মনে হচ্ছে —এই ধরনের চিন্তাগুলো আসে শয়তানের কাছ থেকে, কারণ আল্লাহ تعالى বলেছেন—

শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায়, আর তোমাদেরকে অশ্লীল কাজ করতে তাগাদা দেয়। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং প্রাচুর্যের নিশ্চয়তা দেন। আল্লাহ তো সবকিছু ঘিরে আছেন, তিনি সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৬৮]

আমরা যখন আল্লাহর تعالى পথে দান করতে যাই, তখন আমাদের মনে নানা ধরনের চিন্তা আসা শুরু হয়ে যায়, “বাড়ি ভাড়া দেওয়ার টাকা থাকবে? ছেলে মেয়েদের পড়ার খরচ দিতে পারবো? ঈদের শপিং করতে পারবো?” অথচ যখন শপিং মল বা রেস্টুরেন্টে যাই, আমরাই তখন দেদারসে টাকা উড়াতে থাকি। তখন আমাদের মাথায় বাড়ি-ভাড়া, সন্তানের ভবিষ্যৎ-এর কথা মাথায় আসে না। যে লোক মসজিদের দান বাক্সে একশ টাকা দিবে না দশ টাকা দিবে এই নিয়ে নিজের মধ্যে যুদ্ধ করতে থাকে, সেই মানুষই সিনেমা, টিভি, রংবেরঙের পানীয়, দামি খাবার, ব্রান্ড কাপড়, বিদেশে বেড়াতে যাওয়া — এসবের জন্য দুহাতে টাকা খরচ করতে একটুও বাধে না।[১৭]    (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)