এরাই সত্যিকারের তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছে —আল-বাক্বারাহ ১৭৭

আমাদের সমাজে কিছু মুসলিম আছেন যাদেরকে বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত ধার্মিক মনে হয়। এরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দিয়েছেন। মসজিদে তাদেরকে নিয়মিত দেখা যায়। কিন্তু গরিব আত্মীয়রা তাদের কাছে বার বার সাহায্য চেয়ে “আগামী রমজান আসুক” শুনে ফিরে যায়। এলাকার এতিমখানায় কোনোদিন তাদের দান করতে দেখা যায় না। মসজিদে দান বাক্স তাদের কাছে আসতে শুরু করলে হঠাৎ করে তারা চোখ বন্ধ করে গভীর জিকিরে মগ্ন হয়ে যান, বাক্সটা তাদের সামনে দিয়ে চলে যায়। এরা ব্যবসায় কাস্টমারকে অভিনব পদ্ধতিতে বেশি দামে কম মাল দেওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত পারদর্শী। কর্মীদেরকে কত উপায়ে কম বেতন, কম বোনাস দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে তাদের অসামান্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। তারপর যখন তাদের কোনো বড় ধরনের বিপদ হয়, তখন তাদের প্রলাপ শুরু হয়— “হায় আল্লাহ تعالى! আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রমজানে রোজা রাখি, যাকাত দেই। আমি আপনার কত খাস বান্দা। তারপরেও আমার কেন বিপদ হয়?”

এধরনের মানুষদের জন্য আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি চিন্তার বিষয়, কারণ আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বলছেন যে, আমরা যদি শুধু নামাজ পড়ি, কিন্তু অন্য কোনো ভালো কাজ না করি, তাহলে তাতে কোনো পুণ্য নেই—

2_177_title

2_177 (1)পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফেরালেই সেটা ধার্মিকের মতো কাজ হয়ে গেল না। বরং সত্যিকারের ধার্মিকতা হচ্ছে: যারা আল্লাহর تعالى প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং বিচারের দিন, ফেরেশতাগন, সব কিতাব এবং নবীদের প্রতি বিশ্বাস রাখে। যারা নিজেদের সম্পদকে ভালোবাসার পরেও তা দান করে নিকটজনকে, এতিম, মিসকিনকে, বিপদে পড়া ভ্রমণকারীদেরকে, যারা সাহায্য চায় তাদেরকে এবং দাস-যুদ্ধবন্দিদের মুক্ত করার জন্য দান করে। যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, কথা দিয়ে কথা রাখে; দুর্দশা-দারিদ্রতা, অসুস্থতা-কষ্ট এবং ভীষণ কঠিন সময়েও ধৈর্যধারণকারী। —এরাই নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে, আর এরাই সত্যিকারের তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছে। [আল-বাক্বারাহ ১৭৭]

এখানে পূর্ব-পশ্চিম দিকে মুখ করা বলতে কিবলা পরিবর্তের পরে মক্কার দিকে, আর কিবলা পরিবর্তনের আগে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ পড়া বোঝানো হয়েছে।[১২]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওদেরকে কোনো দাবি না রেখে ক্ষমা করো — আল-বাক্বারাহ ১০৯-১১০

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাইকোলজি শেখাবেন। মানুষ কিছু মানসিক সমস্যায় ভোগে, যার সম্পর্কে আমাদের সবসময় সাবধান থাকতে হবে। সাবধান না থাকলে, কিছু অসাধু মানুষ সহজেই আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করবে। আমরা সরল মনে এদের ভালো করতে গিয়ে, এদের সাথে মিলমিশ করে থাকতে গিয়ে উল্টো নিজেদের বিরাট ক্ষতি করে ফেলব। আমরা বুঝতেও পারবো না: কীভাবে আমরা তাদের হাতের পুতুল হয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে কাজ করে যাচ্ছি। এরকম একটি প্রেক্ষাপট এসেছে এই আয়াতে—

2_109

যদিও তাদের কাছে সত্য পরিষ্কার হয়ে গেছে, তারপরেও আহলে কিতাবের (ইহুদি, খ্রিস্টান) অনুসারীদের অনেকেই তাদের স্বার্থপর হিংসার কারণে চায় যে, তোমাদের যাদের ঈমান আছে, তারা যেন আবার কাফির হয়ে যায়। ওদেরকে কোনো দাবি না রেখে ক্ষমা করো, কোনো কিছু ধরে না রেখে উপেক্ষা করো; যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর تعالى নির্দেশ না আসছে। আল্লাহর تعالى সবকিছুর উপরে সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। [আল-বাক্বরাহ ১০৯]

gaza.si

এই ধরনের ইহুদি খ্রিস্টানরা বেশিরভাগই চায় না যে, ইসলামের প্রচার হোক, মুসলিমদের কোনো উন্নতি হোক। কারণ তারা বুঝে গেছে ইসলাম একটি সত্য ধর্ম, এবং এই ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা কোনো এক অদ্ভুত কারণে ‘আশঙ্কাজনক’ হারে বাড়ছে, যা তারা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সরূপ মনে করে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার তথাকথিত মুসলিম দেশগুলো থেকে বহুগুণে বেশি। সিএনএন-এর রিপোর্টে[২৩৮] প্রকাশ করা নিচের ম্যাপটি যেকোনো ইহুদি, খ্রিস্টান বা হিন্দুর রাতের ঘুম হারাম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট—

IslamSpread

১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মুসলিমদের বৃদ্ধির হার: ফ্রান্স ৭২৮%, ফিনল্যান্ড ২৮১%, সুইডেন ২০৬%, নরওয়ে ১৮৬%, পোল্যান্ড ২৩৩%, কানাডা ২০০%, চিলি ৩০০%, স্পেইন ২৭৬%, অস্ট্রেলিয়া ১৫৯%, আর্জেন্টিনা ১২৫% ইত্যাদি।[২৩৮] সেই তুলনায় বাংলাদেশ ৪৫.৫%, সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে ৫৮%।

এই ধরনের ইহুদি, খ্রিস্টানদের জন্য পাশ্চাত্যের আধুনিক দেশে মুসলিমদের বৃদ্ধির হার একটা ভয়াবহ ঘটনা। সেজন্য তারা প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার বাজেট খরচ করে, বিশাল লোকবল নিয়োগ করে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক আধুনিক, শক্তিশালী, সম্পদশালী দেশগুলোতে মুসলিমদের বৃদ্ধি কমাতেই হবে। এজন্য তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার কিছু নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

কীভাবে তোমরা অন্যদেরকে ভালো কাজ করতে বলো, যখন তোমরা নিজেরাই সেটা করো না? — বাকারাহ ৪৩-৪৪

বাকারাহতে এই কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেবেন—

2_43

দৃঢ়ভাবে নামায প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো, আর যারা নামাযে নত হয় (রুকু), তাদের সাথে নত হও। [বাকারাহ ৪৩]

Screen Shot 2013-09-26 at 21.53.43দেখুন, আল্লাহ تعالى কিন্তু এখানে বলেননি, “নামায পড়ো”, বরং তিনি বলেছেন, “নামায প্রতিষ্ঠা করো।” أَقِيمُوا۟ এসেছে قوم (কু’মু) থেকে যার অর্থ দাঁড়ানো, প্রতিষ্ঠা করা।

প্রাচীন আরবরা যখন কোনো শক্ত পিলার স্থাপন করত, বা শক্ত দেয়াল তৈরি করত, তার জন্য তারা কু’মু শব্দটি ব্যবহার করত। এখানে কু’মু ব্যবহার করে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলছেন যে, আমাদের প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে পাঁচটি শক্ত পিলার দাঁড় করাতে হবে। এবং সেই পিলারগুলো কোনোভাবেই নাড়ানো যাবে না। আমাদের পড়ালেখা, কাজ, খাওয়া, বিনোদন, ঘুম—সবকিছু এই পিলারগুলোর আশপাশ দিয়ে যাবে। আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে নামায তার জায়গায় ঠিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, কোনোভাবেই তাদেরকে নড়ানো যাবে না।[১]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)