কী ওদের কিবলা পালটিয়ে দিলো? — আল-বাক্বারাহ ১৪২-১৪৪

সূরা আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতে কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা নিয়ে সুধীবৃন্দরা অনেক তর্ক দাঁড় করিয়েছেন। তাদের দাবি: যেখানে নবী ইব্রাহিম عليه السلام কা’বা মুখি হয়ে সালাত পড়তেন, সেখানে কেন রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام আল-আক্বসা মুখি হয়ে সালাত পড়তেন? উনি কেন নবী ইব্রাহিমের عليه السلام বিরোধিতা করলেন? কেনই বা মুসলিমদেরকে কা’বা মুখি হয়ে সালাত পড়তে হবে, যেখানে কিনা আল্লাহ تعالى কোনো একটি দিকে নির্দিষ্ট নন? যেকোনো একদিকে মুখ করে সালাত পড়লেই তো হয়?

আবার অমুসলিমরা দাবি করেন: হিন্দুদের মতো মুসলিমরাও কা’বা পূজা করে। দেখো না সবাই কা’বা মুখি হয়ে সালাত পড়ে? হাজ্জ হচ্ছে গণপূজা, যেখানে লক্ষ লক্ষ মুসলিম গিয়ে একদম কা’বার সামনে মাথা নত করে। কা’বার সামনে এভাবে মাথা নত করাটা পূজা না তো কী?

অন্যদিকে ইহুদি, খ্রিস্টানরা দাবি করে: মুসলিমদের একসময় আল-আক্বসা মুখি হয়ে সালাত পড়াটা ঐতিহাসিকভাবে ভুল ঘটনা, কারণ রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام -এর মারা যাওয়ার প্রায় একশ বছর পরে আল-আক্বসা মসজিদ তৈরি হয়েছে। এমনকি উমার (রা) যখন জেরুজালেম দখল করেন, তখন আল-আক্বসার জায়গায় ছিল শুধুই কিছু ময়লার স্তূপ। উনিই তো আল-আক্বসার গম্বুজ তৈরি করেন। তাহলে আগে আল-আক্বসা ছিল কীভাবে? সুতরাং কু’রআনে ভুল আছে! —ইহুদি, খ্রিস্টানদের এই যুক্তি এবং ঐতিহাসিক দলিল অনেক ‘আধুনিক মুসলিম’ এবং নাস্তিকরা লুফে নিয়েছে।

আসুন এই ভুল ধারণাগুলোর অবসান করি—

2_142_title

2_142লোকদের মধ্যে বোকাগুলো বলবে, “কী ওদের প্রার্থনার দিক (কিবলা) পালটিয়ে দিলো, যেদিকে তারা মুখ করতো?” বলো, “পূর্ব, পশ্চিম সব আল্লাহর تعالى। তিনি যাকে চান তাকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেন।” [আল-বাক্বারাহ ১৪২]

ঘটনার প্রেক্ষাপট
রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام যখন মক্কায় ছিলেন, তখন তিনি যখন সালাত পড়তেন, তার সামনে কা’বা এবং আক্বসা দুটোই থাকতো। কিন্তু তিনি যখন মদিনা হিজরত করলেন, তখন মক্কা পড়ে গেল একদিকে, আর আক্বসা পড়ে গেল আরেকদিকে। যার ফলে তিনি যখন আক্বসা মুখি হয়ে সালাত পড়তেন, তখন কা’বা থাকতো তার পেছন দিকে। নবী ইব্রাহিমের عليه السلام প্রতি ভালবাসা, এবং তার চেয়েও বেশি কা’বার প্রতি টানের কারণে তিনি মাঝে মাঝেই আকাশের দিকে নির্বাক হয়ে তাকাতেন। যদিও তিনি মুখে কিছু বলতেন না, কিন্তু তিনি মনে মনে চাইতেন আল্লাহ تعالى যেন কা’বাকে কিবলা করে দেন। আল্লাহ تعالى তার এই গোপন চাওয়া পূরণ করলেন। সূরা আল-বাক্বারাহ’র আয়াত নাজিল হলো। আক্বসা থেকে কিবলা ঘুরে গেল কা’বার দিকে।[১৪]

2_144

আমি অবশ্যই দেখেছি তোমাকে বার বার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে। তাই আমি তোমাকে সেই কিবলা দিলাম, যা তুমি পছন্দ করো। এখন তুমি মাসজিদুল-হারাম-এর (কা’বা) দিকে মুখ করো। তোমরা (বিশ্বাসীরা) যেখানেই থাকো না কেন, এর দিকে মুখ করো। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তারা খুব ভালো করে বোঝে যে, এটি তাদের প্রভুর কাছ থেকে আসা সত্য। ওরা কী করে সে ব্যাপারে আল্লাহ تعالى বেখেয়াল নন। [আল-বাক্বারাহ ১৪৪]

কিন্তু আল-আক্বসা কেন কিবলা ছিল?
কা’বা থাকতে আল-আক্বসা কেন কিবলা হয়েছিল? এটা কি নবী ইব্রাহিমের عليه السلام বিরোধিতা হয়ে গেল না? এর উত্তর আছে পরের আয়াতে—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এই সব লোকেরা যেন প্রার্থনার জায়গাগুলোতে প্রবেশ না করে — আল-বাক্বারাহ ১১৪

মসজিদে বোর্ড মিটিং চলছে। চৌধুরী সাহেব সভাপতি। ইমাম সাহেব তাকে বললেন, “ভাইসাহেব, এলাকার একটি গ্রুপ আগামী শুক্রবার এই মসজিদে তাওহীদের উপর একটি কনফারেন্স করার জন্য আবেদন করছে। সৌদি আরব থেকে বিখ্যাত আলেম এসেছেন তাদের কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার জন্য। আমরা কি তাদেরকে ব্যবস্থা করে দিতে পারি?”

চৌধুরী সাহেব বললেন, “আপনি কি ওই সালাফি গ্রুপের কথা বলছেন? প্রশ্নই ওঠে না। এটা হানাফি মসজিদ। আমরা এখানে ওই সব সৌদি ওয়াহাবি, সালাফিদের প্রশ্রয় দেই না। ওদেরকে অন্য কোনো কনফারেন্স সেন্টার ভাড়া করতে বলেন।”

ইমাম সাহেব চুপসে গেলেন। তিনি বললেন, “আচ্ছা, তাহলে এই শুক্রবার এলাকার তরুণরা বিকেলে এসে রাসুলের জীবনী নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছিল। ওদেরকে আসতে বলি?”

চৌধুরী সাহেব বললেন, “না, মসজিদ হচ্ছে শান্তিতে নামাজ পড়ার জায়গা। এখানে কোনো আলোচনা, সভা, অনুষ্ঠান, কনফারেন্স করার জায়গা না। এমনিতেই মসজিদ পরিষ্কার রাখার জন্য পাঁচটা লোক রাখতে হয়। এই সব অনুষ্ঠান করলে মসজিদের মেরামত, পরিষ্কারের পেছনে কী পরিমাণের খরচ করতে হবে জানেন? আর এই সব তরুণদেরকে মসজিদে ঘন ঘন ঢুকতে দিলে ডিজিএফআই এর লোকজন আমাদের উপর নজর রাখা শুরু করবে। মনে করবে আমরা এদেরকে জিহাদের ট্রেইনিং দিচ্ছি। অযথা ঝামেলা বাড়াবেন না।”

এই ধরনের মানসিকতা এতটাই জঘন্য যে, কু’রআনে এক ভয়ঙ্কর আয়াত রয়েছে এই ব্যাপারে—

2_114

ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে প্রার্থনার জায়গায় আল্লাহর تعالى নাম নিতে বাঁধা দেয়? সেগুলো বিরান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে? এই সব লোকেরা প্রার্থনার জায়গাগুলোতে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাড়া প্রবেশ করার যোগ্য নয়। ওদের জন্য এই দুনিয়াতে রয়েছে অপমান-লাঞ্ছনা, এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ ১১৪]

beautiful_mosque_dome_at_sunset  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)