কত বার এমন হয়েছে যে, ছোট একটা দল বড় বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছে আল্লাহর অনুমতিতে —আল-বাক্বারাহ ২৪৬-২৫২

মুসলিমদের উপর যখন অমুসলিমরা নির্যাতন করে, তাদের সম্পত্তি লুট করে নিয়ে যায়, কর্তৃত্ব দখল করে নেয়, বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়, তখন মুসলিমরা কীভাবে যুদ্ধ করে তাদের অধিকার আদায় করবে, তা আল্লাহ تعالى আল-বাক্বারাহ’তে তালুত এবং দাউদ عليه السلام-এর ঘটনার মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়েছেন। এই আয়াতগুলো থেকে আমরা জানতে পারি: তারা কোন প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ করেছিলেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে একটি মুসলিম সম্প্রদায় হাতে অস্ত্র তুলে যুদ্ধ করতে পারে। মাত্র ছয়টি আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইতিহাসের সেই অসাধারণ ঘটনার পরিষ্কার বর্ণনা দেবেন, যেই ঘটনা নিয়ে বাইবেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বিভ্রান্তিকর বর্ণনা আছে। এই আয়াতগুলো থেকে একজন নেতা অনেক উপলব্ধির বিষয় পাবেন। একই সাথে অনুসারীরাও বিভিন্ন প্রকারের নেতাদের সম্পর্কে সাবধান হতে পারবেন—

2_246_title

2_246

বনি ইসরাইলের ওই গোত্র প্রধানদের কথা ভেবে দেখেছ, যারা তাদের নবীকে বলেছিল, “আমাদের জন্য এক রাজা নির্ধারণ করে দিন, যেন আমরা আল্লাহর تعالى পথে যুদ্ধ করতে পারি।” তিনি বলেন, “যদি এমন হয় যে, তোমাদের উপর যুদ্ধ করার আদেশ আসলো, কিন্তু তারপরেও তোমরা যুদ্ধ করলে না, তখন?” তারা বলল, “কেন আমরা আল্লাহর تعالى পথে যুদ্ধ করবো না, যখন কিনা আমাদের ঘরবাড়ি থেকে আমাদেরকে এবং আমাদের সন্তানদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে?” তারপর যখন তাদের উপর যুদ্ধ করার আদেশ আসলো, কয়েকজন বাদে বেশিরভাগই পিঠটান দিলো। আল্লাহ تعالى অন্যায়কারীদের ভালো করে চেনেন। [আল-বাক্বারাহ ২৪৬]

এই আয়াতে বেশ কিছু শেখার ব্যাপার রয়েছে। কখন আল্লাহ تعالى যুদ্ধ করার অধিকার দেন? যখন মুসলিমদের উপর আক্রমণ হয়, তাদের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে দখল হয়ে যায়, তখন তারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় যুদ্ধ করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ করার জন্য পরিষ্কার প্রমাণ কু’রআনে রয়েছে। এথেকেই দেখা যায়, ক্বিতাল বা যুদ্ধ হচ্ছে মূলত আত্মরক্ষামূলক।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন —আল-বাক্বারাহ ২৪৫

2_245

কে আছে যে আল্লাহকে تعالى ধার দেবে? তাহলে তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন। আল্লাহই تعالى কমিয়ে দেন এবং বাড়িয়ে দেন। তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে। [আল-বাক্বারাহ ২৪৫]

এই আয়াত পড়ে যে কোনো মুসলিমের লজ্জা পাওয়া উচিত। আল্লাহ تعالى আমার কাছে ধার চাইছেন? আমি দুনিয়ার লোভে এতটাই স্বার্থপর হয়ে গেছি যে, তিনি تعالى এই ভাষা ব্যবহার করে আমাকে বলছেন তাঁর পথে খরচ করতে?

ধরুন, আপনার মা ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে কাজ করে আপনাকে বড় করেছেন।  আপনার পড়ালেখার খরচ যোগান দিয়েছেন। তিনি আপনাকে একটুও কষ্ট করতে দেননি, যেন আপনার পড়াশুনায় কোনো ক্ষতি হয়, যেন আপনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। আপনার মায়ের এই বিরাট আত্মত্যাগের জন্য আপনি বড় হয়ে শিক্ষিত হলেন, ডিগ্রি অর্জন করলেন, যথেষ্ট সম্পত্তির মালিকও হলেন। আপনার মা আপনার যত এত কষ্ট না করলে আপনি এত উপরে উঠতে পারতেন না। একদিন তিনি আপনাকে অনুরোধ করছেন, ‘বাবা, আমাকে কিছু টাকা ধার দেবে? আমি আগামী বছরই ফেরত দিয়ে দেবো। আর আমি তোমাকে ধারের টাকার দ্বিগুণ ফেরত দেবো। কোনো চিন্তা করো না বাবা। একটু ধার দেবে?’ —যখন মা তাকে এই ভাষায় অনুরোধ করছেন, দ্বিগুণ ফেরত দেওয়ার কথা বলছেন, এথেকেই বোঝা যায়, সে ছেলে হিসেবে কতটা নীচে নেমেছে, কতটা লোভী হয়ে গেছে যে, তাকে এভাবে বোঝাতে হচ্ছে।   (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা মৃত্যুর ভয়ে হাজারে হাজারে বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে গিয়েছিলো? — আল-বাক্বারাহ ২৪৩

2_243

তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা মৃত্যুর ভয়ে হাজারে হাজারে বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে গিয়েছিলো? তখন আল্লাহ تعالى তাদেরকে বললেন, “মরো”। তারপরে একদিন তিনি তাদেরকে জীবিত করলেন। আল্লাহ تعالى মানুষের অনেক কল্যাণ করেন, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ কৃতজ্ঞতা দেখায় না। [আল-বাক্বারাহ ২৪৩]

2_244

আর আল্লাহর تعالى পথে যুদ্ধ (ক্বিতাল) করো। জেনে রেখো, আল্লাহ تعالى সব শুনছেন, সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৪৪]

এই আয়াতের প্রেক্ষাপট নিয়ে দুটো ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। একটি ঘটনা হলো: একদল মানুষ একবার মহামারি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ تعالى তাদেরকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যু দেন এটা শেখানোর জন্য যে, মানুষ কখনো মৃত্যু থেকে পালাতে পারবে না। যাদের জন্য মৃত্যু নির্দিষ্ট, সেদিন সে মারা যাবেই। মানুষের ক্ষমতা নেই তার জন্য নির্ধারিত মৃত্যু থেকে পালিয়ে যাওয়ার। [৬][৮][৯][১০][১২][১৪][১৭][১৮]

আরেকটি ঘটনা, যার সাথে কু’রআনের আয়াতগুলোর সাথে সঙ্গতি মেলে, তা হলো: বনু ইসরাইলদেরকে যখন তাদের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদেশ করা হয়েছিল নবীর মাধ্যমে, তখন হাজার খানেক মানুষ জানের ভয়ে যুদ্ধ করা থেকে পালিয়ে যায়। তাদেরকে আল্লাহ تعالى অবাধ্যতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যু দেন। এভাবে তিনি মানুষকে শেখান যে, আল্লাহর تعالى পথে যুদ্ধ করা থেকে পালিয়ে গিয়ে কোনো লাভ নেই। যার মারা যাওয়ার কথা, সে মারা যাবেই। যার জন্য আল্লাহ تعالى হায়াত লিখে রেখেছেন, সে একটার পর একটা যুদ্ধে অংশ নিলেও মরবে না, জীবিত অবস্থায় ফিরে আসবেই। আর যার জন্য আল্লাহ تعالى মৃত্যু লিখে রেখেছেন, সে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে গুহায় গিয়ে বসে থাকলেও মারা যাবেই। শুধুই পার্থক্য হলো, যুদ্ধে গেলে মৃত্যু হবে একটা বিরাট অর্জন, আর পালিয়ে গেলে মৃত্যু হবে অর্থহীন, অপমানকর এক সমাপ্তি।[১২][১৪][৪][৬][১৭][১৮][১৩]

2_243_title

জিহাদ এবং ক্বিতালের মধ্যে পার্থক্য
আজকে জিহাদ এবং ক্বিতাল শব্দদুটোর ব্যাপক অপব্যবহার করা হচ্ছে। একদল সংগঠন কু’রআনের আয়াতগুলোতে জিহাদ এবং ক্বিতালের মধ্যে পার্থক্য না করে, জিহাদের জায়গায় ক্বিতাল করার প্রচারণা চালাচ্ছে। আরেকদল সংগঠন ক্বিতালের আয়াতগুলোকে সাধারণ জিহাদ অনুবাদ করে স্পষ্ট প্রতিরোধ এবং যুদ্ধের জায়গায় চুপচাপ বসে অপেক্ষা করা এবং অন্যায়ের সাথে আপোষ করে চলার জন্য প্রচারণা করছে।

এই দুই পক্ষই দাবি করে যে, যেহেতু জিহাদ এবং ক্বিতাল সমার্থক শব্দ, তাই এই শব্দ দুটোকে একে অপরের জায়গায় বদল করা যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এরা আয়াতগুলোতে জিহাদের জায়গায় ক্বিতাল এবং ক্বিতালের জায়গায় জিহাদ সুবিধামত বসিয়ে, তাদের ইচ্ছেমত অনুবাদ এবং ব্যাখ্যা করে, যেন তারা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারে। একারণে যখনই যুদ্ধ, সংগ্রাম, হত্যা ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো আয়াত বা হাদিস পাবেন, প্রথমেই দেখে নেবেন আরবিতে শব্দটা কি জিহাদ নাকি ক্বিতাল।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

নামাজগুলোর সাবধানে যত্ন নাও — আল-বাক্বারাহ ২৩৮

ফার্সি ভাষায় ‘নামাজ’, আরবিতে ‘সালাহ’ শব্দটির একটি অর্থ হলো ‘সংযোগ’। নামাজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর تعالى সাথে আমাদের সম্পর্ক স্থাপন করি, সবসময় তাঁকে মনে রাখি। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একারণেই দিয়েছেন, যেন আমরা কাজের চাপে পড়ে, হিন্দি সিরিয়াল বা খেলা দেখতে গিয়ে, বা রাতভর ভিডিও গেম খেলতে গিয়ে তাঁকে ভুলে না যাই। কারণ তাঁকে ভুলে যাওয়াটাই হচ্ছে আমাদের নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ। যখনি আমরা একটু একটু করে আল্লাহকে تعالى ভুলে যাওয়া শুরু করি, তখনি আমরা আস্তে আস্তে অনুশোচনা অনুভব না করে খারাপ কাজ করতে শুরু করি। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আমাদের পতন। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদেরকে এই একটু একটু করে নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে, আল্লাহর تعالى সাথে সংযোগ কিছুটা হলেও ধরে রাখে।

লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার হলো, সূরা আল-বাক্বারাহ’তে তালাক নিয়ে কয়েকটি আয়াত এবং বিধবাদের নিয়ে কয়েকটি আয়াতের ঠিক মাঝখানে আল্লাহ تعالى নামাজের কথা বললেন—

2_238

নামাজগুলোর সাবধানে যত্ন নাও, আর বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের, আর আল্লাহর تعالى সামনে সম্পূর্ণ একাগ্রতার সাথে দাঁড়াও। [আল-বাক্বারাহ ২৩৮]

তালাক এবং মৃত্যু দুটোই মানুষের জন্য ভয়াবহ ঘটনা। অনেকেই এই পরিস্থিতিতে পড়ে সবার আগে আল্লাহকে تعالى দোষ দেন, “কেন আমার বেলায় এমন হলো? আমি কী করেছি? আমার তো কোন দোষ ছিলো না? আমি এত নামাজ পড়তাম, যাকাত দিতাম, রোজা রাখতাম, তাহলে আমার কপালে এমন মানুষ জুটলো কেন?” —আল্লাহ تعالى এই দুই কঠিন ঘটনার মাঝখানে নামাজের আয়াত দিয়ে আমাদেরকে শেখাচ্ছেন যে, জীবনে যতই কষ্ট আসুক, আমরা যেন নামাজ ছেড়ে না দেই। নামাজকে আমাদের শক্ত হাতে পাহারা দিতে হবে। জীবনের কঠিন ঘটনাগুলোতে আল্লাহর تعالى সাথে রাগ করে নামাজ ছেড়ে না দিয়ে, বরং দৃঢ়ভাবে নামাজকে আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে। নামাজ হচ্ছে আল্লাহর تعالى সাথে আমাদের সংযোগ, আল্লাহর সাথে আমাদের একান্ত সম্পর্ক। বিপদ, দুর্যোগ, শারীরিক বা মানসিক কষ্টের সময় যদি আমরা আল্লাহর تعالى সাথেই সংযোগ কেটে দেই, তাহলে আমরা কার কাছে যাবো? আল্লাহ تعالى ছাড়া আর কে আছে, যে আমাদের কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারে?

2_238_title  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা যদি সেই নারীদের বিয়ের ইঙ্গিত দাও — আল-বাক্বারাহ ২৩৪-২৪২

গত হাজার বছর ধরে ভারত উপমহাদেশে বিধবারা ভয়ঙ্কর অত্যাচার এবং অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। হিন্দু আঞ্চলিক প্রথা অনুসারে বিধবাদের একসময় স্বামীর চিতায় জীবন্ত জ্বলে মরতে বাধ্য করা হতো। না হলে ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে তাদের অর্ধমৃতের মতো বেঁচে থাকতে হতো। বিধবারা সারাজীবন সাদা কাপড় পড়ে থাকতো, কখনো সাজতে পারত না, প্রথা অনুসারে মাথা কামিয়ে ফেলতে হতো। স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। বিধবা হয়ে যাওয়ার পর তাদের দেখাশুনা, ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর পক্ষ থেকে কেউ নিত না। তাদের জন্য পেঁয়াজ, রসুন, আমিষ ইত্যাদি খাওয়া সারা জীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যেত। সমাজ তাদেরকে দেখত এক অশুভ, অস্পৃশ্য, ঘৃণিত সত্তা হিসেবে। স্বামীর মৃত্যুর জন্য বিধবার পোড়া কপালকে দোষ দেওয়া হতো।[৩৭৮][৩৭৯][৩৮০]  এই হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থা। আর ইসলাম আসার আগে প্রাচীন আরবে বিধবাদের নিয়ে কী করা হতো তা বর্ণনা করার ভাষা নেই।[১৪][১২]

আজকে লক্ষ লক্ষ নারী বাল্য বিয়ে করে স্বামী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অল্প বয়সে মা হয়ে স্বামী হারিয়ে, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে, বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত ভীষণ কষ্টের জীবন পার করে। পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে ৪ কোটি বিধবা রয়েছে, যার একটি বড় অংশ আশ্রমে থাকে, না হয় রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, না হলে পতিতালয়ে থেকে জীবন যাপন করছে। —এদের কেউ দেখে না। তাদের সন্তানরা তাদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোথাও তারা মানুষ হিসেবে সম্মান পায় না।[৩৭৮][৩৭৯][৩৮০]

বহু যুগ ধরে উপমহাদেশের বেশিরভাগ মুসলিমরা ইসলাম এবং হিন্দু সংস্কৃতি মিলিয়ে একটা খিচুড়ি ধর্ম পালন করছে। যার ফলে মুসলিমরা না শান্তি পাচ্ছে, না অন্যায় বন্ধ হচ্ছে, না সমাজের সংস্কার হচ্ছে। হিন্দুদের মতো অনেক মুসলিম পরিবারে স্বামী মারা গেলে বিধবা স্ত্রীর ‘পোড়া কপালকে’ দোষ দেওয়া হয়, যেখানে ইসলামে পরিষ্কারভাবে বলা আছে: মৃত্যুর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আল্লাহর تعالى হাতে এবং ‘পোড়া কপাল’, ‘কুফা’ এই ধারণাগুলো হচ্ছে শিরক।[৩৮৩] এখনো গ্রামে-গঞ্জে মুসলিম সমাজে বিধবাদের অশুভ, কুলক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। অনেক মুসলিম পরিবারে বিধবাদের আর কখনো বিয়ে করতে দেওয়া হয় না। বেশিরভাগ মুসলিম পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় বিধবাদের কথা চিন্তাও করবে না, যেখানে কিনা রাসুল عليه السلام-এর মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন কুমারী, আর বিভিন্ন সময়ে ৮ জন স্ত্রী হয়েছিলেন বয়স্ক বিধবা।

মুসলিমরা যদি কুরআন পড়ত, তাহলে দেখত বিধবাদের সম্পর্কে আল্লাহ تعالى কত সুন্দর শিক্ষা দিয়েছেন, যা ১৪০০ বছর আগে মুসলিমরা অনুসরণ করে বিধবাদের জীবনকে সুন্দর, সম্মানের করে দিয়েছিল। লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার হলো:  ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি —এই তিন ধর্মেই বিধবাদের সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবন নিরাপদে, সুন্দরভাবে পার করার জন্য আবারো বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। বিধবাদের ঠিকমতো দেখাশুনা করার দায়িত্ব সমাজের উপর দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিধবাদের যত্ন নেওয়ার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।[৩৮৩] শুধুই হিন্দু ধর্ম বাদে। এথেকেই বোঝা যায় যে, ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি ধর্মের উৎস একজন অত্যন্ত দয়ালু, নারী-পুরুষের প্রতি সদয় দৃষ্টিভঙ্গির একজন সত্তা, যার পুরুষদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব নেই। আর হিন্দু ধর্মের উৎস পুরুষতান্ত্রিক, নারী-বিদ্বেষী, অমানবিক এক বা একাধিক সত্তা।

সূরা আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে শিখিয়েছেন বিধবাদের সম্পর্কে ইসলামের নিয়ম কী হবে। আমরা লক্ষ করলে দেখবো, নিয়মগুলো বেশিরভাগই নারীদের পক্ষে। আয়াতগুলো নিয়ে ঠিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, এই নিয়মগুলোর পেছনে কী বিরাট প্রজ্ঞা রয়েছে—  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

মায়েরা তাদের বাচ্চাদের পুরো দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাবে — আল-বাক্বারাহ ২৩৩

উনিশ শতকের পর থেকে সারা পৃথিবীতে বাচ্চাদের এক ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়তে হয়েছে: তাদের মায়েরা আর তাদেরকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়ায় না। মানবজাতির একদম শুরু থেকে লক্ষ বছর ধরে বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ تعالى কু’রআনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পুরো দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কিন্তু আজকের ‘আধুনিক সমাজের’ বাচ্চারা আর মায়ের বুকের দুধ না খেয়ে, ‘টিনের দুধ’ নামের কেমিক্যালের মিশ্রণে তৈরি একধরনের সাদা গুড়া ওষুধ খেয়ে বড় হচ্ছে। এই সাদা গুড়া কেমিক্যাল মিশ্রণকে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ‘ফর্মুলা’ বলা হয়, ‘দুধ’ বলা হয় না, কারণ এটি মায়ের দুধের ধারে কাছেও কিছু নয় এবং এতে কয়েকটি ক্ষতিকর ক্যামিকেল রয়েছে। কিন্তু অল্প শিক্ষিত দেশগুলোতে মার্কেটিং-এর জোরে একে মায়ের দুধের কাছাকাছি দুধ বলে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা হয়। মায়ের দেহে দুধ যেভাবে তৈরি হয়, তার ধারে কাছে প্রযুক্তি এখনো মানুষ অবিস্কার করেনি। অথচ সেই ১৮৬৫ সালে প্রথম ফর্মুলা আবিষ্কারের পর থেকে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে মানুষকে বোঝানো হয়েছে যে, টিনের গুড়া দুধ হচ্ছে মায়ের বুকের দুধের কাছাকাছি দুধ।[৩৭২] পানি মেশানোর পর সেটা দেখতে দুধের মতো হয় দেখে সরল মানুষরা বুঝতে পারে না যে, এটা গরুর দুধের প্রোটিন মেশানো একধরনের সাদা গুড়া ওষুধ ছাড়া আর কিছু নয়। উনিশ শতকে এই ফর্মুলা দুধের ব্যাপক প্রচলনের পর থেকে শুরু হয়েছে বিপুল পরিমাণে বাচ্চার মৃত্যু এবং অসুস্থ বাচ্চার সংখ্যা বৃদ্ধি।[৩৭২]

বাংলাদেশে খাবার পানির সঙ্গে ফরমালিন, কাটিং ওয়েল, পার অক্সাইড, খাইসোডা ও দুধের ননী মিশিয়ে নকল ভেজাল দুধ তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে বহুদিন থেকে ‘দুধ’ খাওয়াচ্ছে। আমরা সেটা ধরতে পারিনি। এই বিষ আমরা বছরের পর বছর খেয়েছি। খবরের কাগজে আসার পর আমরা এই ভয়াবহ ঘটনা জানতে পেরেছি।[৩৭১] একইভাবে বাচ্চাদের ফর্মুলা তৈরির কোম্পানিগুলো সফলভাবে আমাদেরকে শত বছর ধরে ঘোল খাইয়ে এসেছে যে, তাদের দুধে পুষ্টি বেশি, সেটি মায়ের দুধের বিকল্প, সেটা খেয়ে বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি হয় না, বাচ্চার পুষ্টির ঘাটতি মেটায়, বুকের দুধের পাশাপাশি সেটা খাওয়ানো ভালো ইত্যাদি।

অতিরিক্ত প্রোটিন এবং ফ্যাট দেওয়া ‘দুধ’ নামের এই ওষুধ খেয়ে বাচ্চারা অল্প সময়ে মোটাসোটা, আকৃতিতে বড় হয় দেখে বাবা-মায়েরা ধরে নেয় যে, এই গুড়া ওষুধে নিশ্চয়ই মায়ের বুকের দুধের থেকে পুষ্টি বেশি। একারণে তারা বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চাদেরকে ফর্মুলা খাওয়ায়, যেন বাচ্চার স্বাস্থ্য বেশি ভালো হয়। স্বল্প শিক্ষিত বাবা-মা’র কাছে বাচ্চা মোটাসোটা হওয়াটাই স্বাস্থ্যের লক্ষণ। তারা বিশ্বাস করে ফেলেছে যে, আল্লাহর تعالى ডিজাইন করা বুকের দুধের থেকে মানুষের আবিষ্কার করা কৃত্রিম দুধ বেশি উন্নত। অথচ খোদ আমেরিকাতেই বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে দ্বিগুণ বাচ্চার মৃত্যু হয়।[৩৬৯] গরিব দেশগুলোতে যেমন, ঘানা, ভারত, পেরুতে কর্মজীবী মায়েদের বুকের দুধ কম খাইয়ে ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে সাড়ে দশগুণ বেশি বাচ্চা মারা যায়।[৩৭০] এছাড়া ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে বাচ্চাদের প্রায় তিনগুণ বেশি ডাইরিয়া হয়, পঞ্চাশভাগ বেশি কানের ইনফেকশন হয়, ১৬.৭ গুণ বেশি ফুসফুসের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া হয়, একজিমা, র‍্যাশ, এল্যারজি হয়, সারাজীবনের জন্য হজমে দুর্বলতা হয়, দেড়গুণ বেশি  টাইপ ১ এবং ২ ডায়াবেটিস হয়, প্রায় দ্বিগুণ বেশি এজমা হয়, প্রায় দেড় গুণ বেশি লিউকেমিয়া হয়, এবং প্রায় দ্বিগুণ বেশি বাচ্চা কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ করে মারা যায়।[৩৭৩][৩৭৪] এই ফর্মুলার ক্ষতির সাথে যোগ হয় কলের পানির মধ্যে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন এবং নানা পানি পরিষ্কারের ক্যামিকাল। সুয়ারেজের ময়লা মিশ্রিত পুকুর, নদীর ময়লা-বিষাক্ত পানি বিপুল পরিমাণের ক্যামিকাল দিয়ে পরিষ্কার করে কলে সরবরাহ করা হয়, যা ব্যবহার করে আমরা বাচ্চার ফর্মুলা দুধ তৈরি করি। এই ভয়ঙ্কর ক্যামিক্যালের সুপ খেয়ে আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মে জটিল অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায় আজকে বাচ্চারা কী পরিমাণে অসুস্থ হচ্ছে। ডায়াবেটিস, এজমা, একজিমা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কানের ইনফেকশন আজকে ঘরে ঘরে।

2_233_title

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন দুই বছর পূর্ণ করে বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এটা বাচ্চার হক। অথচ আমরা অনেকে ছয় মাস হলেই শুধুই বুকের দুধ ছেড়ে ফর্মুলা খাওয়ানো শুরু করে দিয়েছি। পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতিতে মগজ ধোলাই হওয়া ক্যারিয়ার সচেতন মা তাদের বাচ্চাদেরকে শুধুমাত্র বুকের দুধ না খাইয়ে এই সাদা গুড়া ওষুধ খাইয়ে বড় করেন। অনেকে নিজের ফিগার ঠিক রাখার জন্য ফর্মুলা খাইয়ে বাচ্চার শরীর সারাজীবনের জন্য নষ্ট করে দেন। অন্যদিকে স্বল্প শিক্ষিত বাবা-মা বুকের দুধের পাশাপাশি  বাচ্চাকে ‘গরু মোটাতাজাকরন পদ্ধতির’ মতো ফর্মুলা খাইয়ে মোটা ফার্মের মুরগি বানান, যেন বাচ্চার স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের কাছে কথা শুনতে না হয়। আরেকটা বড় অন্যায় হলো: কোনো সমস্যা ছাড়াই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চাকে স্বাভাবিকভাবে জন্ম হতে না দিয়ে, মায়ের কষ্ট কমানোর জন্য অযথা সিজারিয়ান করে অস্বাভাবিকভাবে বাচ্চা বের করা। এভাবে বের করা বাচ্চা জরায়ু পথে বের হওয়ার সময় মায়ের দেহের মাইক্রব নিয়ে বের হয় না, যার কারণে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে দুর্বল এবং বাচ্চা বড় হওয়ার সময় বিভিন্ন ইনফেকশন হয়।[৩৭৭] একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক যুগে এসেও আজকে আমরা অজ্ঞানতা, স্বার্থপরতার কী গভীর অন্ধকার গর্তে ডুবে আছি!  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

যদি তালাক দিবে বলেই অটল থাকে, তাহলে সাবধান! আল্লাহ সব শোনেন, সব দেখেন — আল-বাক্বারাহ ২২৬-২৩২

ইসলাম আসার আগে এবং প্রাচীন ধর্মগুলোতে নারীরা ছিল স্বামীদের সম্পত্তি। নারীদের তারা অনেকটা পোষা প্রাণীর মতো পালত। বিয়ে এবং তালাকের ব্যাপারে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। তাদের বাবা-মা যেখানে তাদের বিয়ে দিত, সেখানেই তারা সংসার করতে বাধ্য ছিল। বিয়ের পরে তারা হয়ে যেত স্বামীর সম্পত্তি। স্বামী যখন ইচ্ছা তাদের তালাক দিত, যখন ইচ্ছা তাদের ফিরিয়ে নিত। স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীদের কোনো অধিকার ছিল না। স্ত্রীর সম্পত্তি স্বামী যেভাবে ইচ্ছা খরচ করত। স্বামীর সিদ্ধান্তের উপর প্রশ্ন করার অধিকারও তাদের ছিল না। দাসির মতো মানবেতর জীবনযাপন করে স্ত্রীরা সারাজীবন স্বামীকে খুশি রাখার সবরকম চেষ্টায় যাবতীয় অপমান, অন্যায় মেনে নিয়ে জীবন পার করে দিত। আর প্রার্থনা করত যেন তার কখনো মেয়ে সন্তান জন্ম না হয়।[৪]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে ধরবেন না — আল-বাক্বারাহ ২২৪-২২৫

আজকাল আমরা কথায় কথায় এমন সব শপথ নেই, যেগুলো আমাদের মধ্যে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, নিজেদের মধ্যে মিলমিশ করতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন ধরুন, একদিন এক আত্মীয়ের অন্যায় কাজে আপনি রেগে গিয়ে মনে মনে বললেন, “আল্লাহর تعالى কসম! আমি যদি কোনোদিন আর এর কোনো উপকার করেছি।” এই শপথের কারণে আপনি রমজানে তাকে আর যাকাত দিলেন না, অথচ সে ছিল আপনার কাছ থেকে যাকাত পাওয়ার সবচেয়ে বড় দাবীদার। আবার অনেকে মন মতো কিছু না হলে এমন সব শপথ নেন, যা ভয়ঙ্কর। যেমন, ছেলে নিজে পছন্দ করে মেয়ে বিয়ে করে এনেছে দেখে, ছেলের মা অপমানে মুখ বুঝে কোনোমতে বিয়ের অনুষ্ঠানটা পার করেছে। মেয়ে-পক্ষের দাওয়াতে মুরগির রান না দেওয়াতে সে রেগে গজ গজ করে বলেছে, “আল্লাহর تعالى কসম! এই মেয়েকে আমি কোনোদিন মেনে নিবো না।” এরপর থেকে সেই শপথের কথা রাখার জন্য শাশুড়ি কোনোদিন বউয়ের সাথে হাসিমুখে, ভদ্রভাবে কথা বলে না। সব কথায় একটা খোঁচা, একটা ধমক থাকবেই, পাছে আবার শপথ ভেঙ্গে যায়।

এই ধরনের শপথের ব্যাপারে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কঠিনভাবে বলেছেন—

2_224

আল্লাহর নামে নেওয়া শপথকে বাঁধা হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেবে না তোমাদের সৎকাজ, আত্মসংযম এবং মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মধ্যে। আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২২৪]

প্রথমত, আল্লাহর تعالى পবিত্র নাম নিয়ে কোনো অন্যায় কাজের শপথই করার কথা না। এই ধরনের শপথ যারা করে, তাদের কাছে আল্লাহর تعالى নাম নেওয়াটা একটা খেলা হয়ে গেছে। তারা কথায় কথায় আল্লাহর تعالى পবিত্র নাম মুখে আনার দুঃসাহস দেখায়।

2_224_title

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র — আল-বাক্বারাহ ২২৩

“তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র… [সূরা আল-বাক্বারাহ]” — কত অপমানকর কথা! ইসলাম নারীদেরকে মানুষ মনে করে না, চাষের জমি মনে করে? “… তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার করো ” — নারীরা কি পুরুষদের সম্পত্তি যে, যখন যা খুশি করবে? এই হচ্ছে ইসলামে নারীর সম্মান? ইসলাম না বড় গলায় বলে যে, এটা নারীদের অধিকার দিয়েছে? এই হচ্ছে তার নমুনা?

আজকাল একদল নাস্তিক এবং নারীবাদীরা সূরা আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি ব্যবহার করে ইসলামকে নারীদের জন্য একটি বর্বর, নিষ্ঠুর, পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম বলে অপপ্রচার চালায়। আসুন দেখি কু’রআন আসলে কী বলে, আর তারা কু’রআনকে দিয়ে কী বলায়—

2_223

তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত। তাই তোমাদের শস্যক্ষেতে যাও, যেভাবে তোমরা চাও। নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা করো। আর আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান! জেনে রেখো তোমরা তাঁর সামনা সামনি হতে যাচ্ছো। আর যারা পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে গেছে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও। [আল-বাক্বারাহ ২২৩]

2_223_title

নারীবাদী এবং নাস্তিকরা নানা বিকৃত উপমা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, কু’রআন নারীদেরকে কতটা নিচু মনে করে, মানুষের সমান মর্যাদা দেয় না, পুরুষদেরকে স্ত্রীদের সাথে যা খুশি করার অধিকার দেয় ইত্যাদি। তাদের এইসব নোংরা উপমা পড়ে মুসলিমরাও ঘাবড়ে যান। অনেক মুসলিম নারী সেই সব অপব্যাখ্যা পড়ে কু’রআনকে খারাপভাবে দেখা শুরু করেন। তারপর তার এবং আল্লাহ تعالى সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরা শুরু হয়ে যায়।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওরা তোমাকে মাসিকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে — আল-বাক্বারাহ ২২২

2_222

ওরা তোমাকে মাসিকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এটা কষ্ট। তাই মাসিকের দিনগুলোতে নিজেদেরকে তাদের থেকে আলাদা রাখো। যতক্ষণ তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে না যাচ্ছে, ততক্ষণ তাদের কাছে যাবে না। তারপর যখন তারা নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন করে, তখন তাদের কাছে যাও, যেখানে যেতে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা বার বার তাঁর কাছে ক্ষমা চায়। তিনি তাদেরকে ভালোবাসেন যারা নিজেদেরকে সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করে। [আল-বাক্বারাহ ২২২]

অন্য ধর্মের মানুষদের মধ্যে মাসিকের ব্যাপারে নানা ধরনের কুসংস্কার এবং নোংরা সব ধারণা ছিল এবং এখনো আছে। নারীদেরকে এই সময়টাতে এক ঘরে করে রাখা হতো। তাদের সাথে এক বিছানায় কেউ শুতে চাইত না। তাদের সাথে একসাথে বসে খাবার পর্যন্ত খেত না, আলাদা করে খেতে বসতে দেওয়া হতো। নারীদেরকে রান্না ঘরে রান্না করতে দেওয়া হতো না, কারণ তাদের রান্না করা খাবার খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। এধরনের নানা রকমের অন্যায় থেকে শুরু করে এই সময়টাতে নারীদের সাথে নানা ধরনের নোংরা কাজও করা হতো।[১২] দুঃখের ব্যাপার হলো এই কষ্টের সময়টাতে পুরুষরা নারীদের সাথে অন্যায় তো করতোই, এমনকি পরিবারের অন্য নারীরাও মাসিকে থাকা মেয়েদের সাথে দুর্ব্যবহার করতো।

ইসলাম মাসিক সম্পর্কে যাবতীয় ভুল ধারণা অবসান করেছে, নারীদের সাথে অন্যায় করা বন্ধ করেছে, নারীদের এই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ব্যাপারটাকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে। যেই সব নারীবাদীরা অপপ্রচার করে বেড়ায় যে, ইসলাম নারীদেরকে হেয় করে, তারা ইতিহাস পড়ে দেখুক ইসলাম আসার আগে নারীদের জীবন কী ভয়ঙ্কর কষ্টের এবং অপমানের ছিল। ইসলাম আসার আগে প্রত্যেক মাসে এক সপ্তাহ নারীরা যে পরিমাণের অন্যায়, দুর্ব্যবহার এবং অপমান সহ্য করতো, আর ইসলাম আসার পরে নারীদের অবস্থা কীভাবে আমূল বদলে গেল, সেটাই নারীবাদীদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। দুঃখজনকভাবে উপমহাদেশের মুসলিমরা হিন্দু ধর্ম দিয়ে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। হিন্দুদের নানা কুসংস্কার, অশুচির ধারণা মুসলিমদের মধ্যেও ঢুকে গেছে। যার ফলে মাসিক সম্পর্কে ইসলাম যা শিখিয়েছে, সেটা মুসলিমরা হিন্দুদের সংস্কৃতি, বিশ্বাস, কুসংস্কার দিয়ে গুলিয়ে ফেলেছে। এখনো গ্রামে-গঞ্জে এই সময়টাতে নারীদের সাথে ব্যাপক অন্যায় আচরণ হতে দেখা যায়।

আল্লাহ تعالى মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ডিজাইনে তৈরি করেছেন। মাসিক আল্লাহর تعالى সর্বশ্রেষ্ঠ ডিজাইনের একটি অংশ। মাসিকের ব্যাপারটাকে খারাপভাবে দেখার সময় আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে: আমরা কি আল্লাহর تعالى সর্বশ্রেষ্ঠ ডিজাইনকে খারাপভাবে দেখছি? আমরা কি আল্লাহর تعالى ডিজাইনের কোনো একটি ব্যাপারকে ঘৃণা করছি? আল্লাহ تعالى কু’রআনে গর্ব করে বলেছেন যে, তিনি মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর গঠনে সৃষ্টি করেছেন [সূরা আত-ত্বিন ৯৫:৪]। আমরা কি তাহলে মানুষের গঠনের কোনো একটি দিকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন করার মতো ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি?

2_222_title

মাসিক কেন হয়?  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)