তুমি কি দেখোনি তোমার প্রভু হাতিওয়ালাদের কী অবস্থা করেছিলেন? —আল-ফীল

তুমি কি দেখোনি তোমার প্রভু হাতিওয়ালাদের কী অবস্থা করেছিলেন? তিনি কি তাদের পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দেননি? তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছিলেন। যারা ওদেরকে পোড়া মাটির পাথর ছুরে মারলো। তারপর ওরা চিবানো খড়কুটোর মতো পড়ে রইল। —আল-ফীল

রাসুল عليه السلام জন্ম হওয়ার কয়েক বছর আগে ইয়েমেনের একজন গভর্নর আবরাহা দেখল যে, মক্কায় কা’বাকে ঘিরে ব্যাপক ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ মানুষ হাজ্জ করতে আসে। সে সুযোগে মক্কাবাসীরা হাজিদের সাথে ব্যবসা করে অনেক সম্পদের অধিকারী হয়ে যায়। তখন সে ভাবল যে, সে-ও একটা বিরাট গির্জা তৈরি করবে এবং হাজ্জের মতো সেই গির্জাতে তীর্থযাত্রা করার প্রচলন করবে। কিন্তু তার পরিকল্পনা কাজে লাগলো না। তার সাধের গির্জাতে বেশি মানুষ আসলো না। শুধু তাই না, কিছু আরব গিয়ে তার গির্জায় আগুন লাগিয়ে দিলো। তখন সে মহা ক্ষেপে গিয়ে তার বাহিনী নিয়ে মক্কায় গেল কা’বা ধ্বংস করে দিতে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এত কিছুর পরেও তোমাদের অন্তর পাথরের মতো কঠিন হয়ে গেছে — আল-বাক্বারাহ ৭২-৭৪

এই তিনটি আয়াতে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার শিখব: মানুষের জীবনে নানা ধরনের সমস্যা আসে, যেগুলো তাকে ধাক্কা দেয়, যেন সে নিজেকে পরিবর্তন করে, অন্যায় করা বন্ধ করে। কিন্তু তারপরেও অনেক মানুষ অন্যায় করতে করতে একসময় তাদের অন্তর পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। অন্যায় তখন তাদের কাছে আর অন্যায় মনে হয় না। তারা তাদের নিজেদের ভুলগুলোকে নিয়ে আর ভেবে দেখে না। কেউ তাদেরকে সেই ভুলগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও, সে উপলব্ধি করে না। উপলব্ধি করলেও, নিজেকে পরিবর্তন করার মতো ইচ্ছা তাদের থাকে না।

cloudy mountain

আজকের যুগের একটি উদাহরণ দেই—

চৌধুরী সাহেব একটা সরকারি প্রোজেক্টে ঘুষ খেতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন। তার চাকরি চলে গেল। তিনি বছরের পর বছর ধরে বেকার। পরিবারের খরচ দিতে গিয়ে জমি-জমা বিক্রি করে নিঃস্ব হওয়ার মতো অবস্থা। একসময় তিনি তার প্রতিবেশীর অনেক অনুরোধে নামাজ পড়া শুরু করলেন। তিনি আল্লাহর কাছে বার বার ক্ষমা চাইলেন, যেন আল্লাহ তাকে আরেকবার সুযোগ দেন। এক বছর পর তিনি একটা বিদেশি কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি পেলেন।

দুই বছর পরের ঘটনা: চৌধুরী সাহেব সেই বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করার সময় কোম্পানির খরচে বিদেশে গিয়ে অবৈধভাবে থেকে গেলেন। তারপর শুরু হলো হাজারো আইনগত সমস্যা। একটা সমস্যা কাটাতে গিয়ে তাকে আরেকটা অন্যায় করতে হয়, একে ওকে টাকা খাওয়াতে হয়, কাগজপত্র জাল করতে হয়। তার নিকট আত্মীয়রা তাকে বার বার বোঝালেন, যেন তিনি নিজেকে শোধরান। এভাবে দুই নম্বরি করে অশান্তিতে আর কতদিন থাকবেন? চৌধুরী সাহেব শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি তার লোভ সংবরণ করবেন, যতটুকু সম্ভব হালাল উপায়ে চলার চেষ্টা করবেন।

তিন বছর পরের ঘটনা: চৌধুরী সাহেব নানা ভাবে কাগজ জালিয়াতি করে, ভুয়া ডিগ্রি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে বিদেশে বাস করছেন। শুধু তাই না, তিনি তার চৌদ্দ গুষ্টিকে দুই নম্বরি করে বিদেশে নিয়ে এসেছেন। এখন তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। সাত মাস পর চেকআপ করতে গিয়ে ডাক্তার বললেন, “এক ভয়ংকর জটিলতা দেখা দিয়েছে: হয় মা বাঁচবে, না হয় সন্তান। তাদেরকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে: কাকে তারা বাঁচাতে চান?”

এরপর থেকে চৌধুরী সাহেব বার বার নামাজে কাঁদেন, “ও আল্লাহ! আমার স্ত্রী এবং সন্তানকে এবারের মতো বাঁচিয়ে দিন। আমি এখন থেকে নিষ্ঠার সাথে ধর্ম মানব, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ব, পরের বছরই হাজ্জ করতে যাব।” খুব শীঘ্রই তার মুখে ঘন দাঁড়ি, কপালে সিজদার দাগ, ঘন ঘন রোজা রাখতে দেখা গেল।

দুই মাস পর ডেলিভারি হলো। কোনো এক অদ্ভুত কারণে মা এবং সন্তান দুজনেই বেঁচে গেলেন। চৌধুরী সাহেব এবং তার স্ত্রী আনন্দে, কৃতজ্ঞতায় চোখের পানি ফেলেন, এবং সন্তানের চেহারার দিকে দিন-রাত অবাক হয়ে পরম শান্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন।

এক বছর পরের ঘটনা: চৌধুরী সাহেবের হারাম লোন নিয়ে কেনা বাড়িতে বাচ্চার জন্মদিনের পার্টি হচ্ছে। রঙ বেরঙের পানীয়, টিভিতে প্রায় নগ্ন গায়িকার গানের ভিডিও চলছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ছেলে-মেয়ে সবাই মাখামাখি করে নাচানাচি করছে। চৌধুরী সাহেবের স্ত্রী এক আপত্তিকর পশ্চিমা কাপড় পড়ে তার বন্ধুদের সামনে ঘোরাঘুরি করছেন। এদিকে চৌধুরী সাহেব চকচকে চোখে বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন…  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)