সুরা মাসাদ বা লাহাব কুর‘আনের অন্যতম বিতর্কিত সূরাহ। শুধুই যে অমুসলিমরা এই সূরাহকে আক্রমণ করে তাই নয়, একইসাথে অনেক মুসলিমদেরকেও দেখা যায় এই সূরাহ নিয়ে নানা সন্দেহে ভুগতে। তাদের উভয়ের অভিযোগ হচ্ছে, কেন কুর‘আনে শুধুই দুইজনকে অভিশাপ দিয়ে পুরো একটা সূরাহ দেওয়া হলো? এই সূরাহ পড়ে মুসলিমদের কী লাভ? কুর‘আন না মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক? এই সূরাহ’র মধ্যে তো কোনো পথনির্দেশ দেখা যাচ্ছে না? কোটি কোটি মানুষ এই সূরাহ মুখস্ত করে কোটি কোটি বার পড়ছে, শুধুই কোনো এক বদ পরিবারকে অভিশাপ দেওয়ার জন্য, এ কেমন কথা হলো? নামাজে দাঁড়িয়ে লক্ষ কোটি মানুষ এক পরিবারের গুষ্টি উদ্ধার করছে, এতে মুসলিম উম্মাহর কী উপকার হচ্ছে? (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)
Tag: নাস্তিকতা
কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না? — আল-বাক্বারাহ ১১৮
আজকাল সুধীবৃন্দ প্রশ্ন করেন, “সত্যিই যদি আল্লাহ বলে কেউ থাকে, তাহলে তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? আমি তো কোনোদিন কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটতে দেখলাম না? প্রমান কী যে আল্লাহ বলে আসলেই কেউ আছেন?” প্রথমত, তাদেরকে অভিনন্দন! তারা এমন একটি জটিল, আধুনিক, যুগোপযোগী প্রশ্ন আবিষ্কার করেছেন, যা ১৪০০ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর, অশিক্ষিত, অসামাজিক বেদুইনরা রাসুলকে عليه السلام করেছিল। শুধু তাই না, তাদের আগেও নবীদেরকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর উত্তর আল্লাহ تعالى কু’রআনেই দিয়ে দিয়েছেন—
যারা বোঝে না, তারা বলে, “কেন আল্লাহ تعالى আমাদের সাথে কথা বলে না?” বা “আমাদের কাছে কোনো অলৌকিক নিদর্শন আসে না কেন?” ওদের আগের প্রজন্মও একই কথা বলে গেছে। ওদের সবার অন্তর আসলে একই রকম। আমি অবশ্যই আমার নিদর্শনগুলো যথেষ্ট পরিষ্কার করে দিয়েছি সেই সব মানুষের কাছে, যারা নিশ্চিত হতে চায়। [আল-বাক্বারাহ ১১৮]
যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে, তাদের আসল সমস্যা হচ্ছে: তারা মনে করে না যে, ইসলাম এমন কোনো অসাধারণ ধর্ম, যা তাদের মানতে হবে। অথবা তারা মনে করে না যে, ইসলাম তাদেরকে এমন কিছু দিতে পারে, যা তারা নিজেরাই চিন্তা ভাবনা করে বের করতে পারে না। তাই তাদের দাবি হচ্ছে: আল্লাহ تعالى যেন তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদেরকে বোঝান, কেন তারা ইসলাম মানবে? ইসলামে এমন কী আহামরি কিছু আছে যে, তা মানতে হবে?
আপনাকে যখন কোনো গাড়ির সেলসম্যান একটা সাধারণ গাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করে, সে আপনাকে অনেক বোঝাবে: কেন আপনার গাড়িটা কেনা উচিত, এই গাড়ির চমৎকার বৈশিষ্ট্য কী যা অন্য গাড়ির নেই, কীভাবে এই গাড়িটা সমাজে আপনার স্ট্যাটাস বাড়িয়ে দেবে ইত্যাদি। সে নানা ভাবে চেষ্টা করবে আপনাকে গাড়িটা গছিয়ে দেওয়ার, কারণ গাড়িটা এমন কোনো অসাধারণ কোনো গাড়ি নয়, যা কেনার জন্য মানুষ গভীর আগ্রহে কয়েক মাস আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য লাইন ধরে থাকে।
ধরুন আপনি একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন: আপনি একটা বিশেষ দামী ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনবেন। আপনার বন্ধুরা আপনাকে অনেক বুঝিয়েছে যে, এর চেয়ে ভালো, নিরাপদ গাড়ি আর নেই। আপনি নিজেও অনেক পড়াশুনা করে দেখলেন যে, আসলেই এর চেয়ে শক্তসামর্থ্য, নিরাপদ গাড়ি এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি বানায়নি। কিন্তু কেনার আগে আপনি দাবি করলেন: সেই গাড়ির কোম্পানির সিইও-র সাথে আপনি নিজে কথা বলবেন, তারপরেই সেই গাড়ি কিনবেন, নাহলে কিনবেন না। সিইও যেন নিজে আপনাকে ফোন করে তার গাড়ি কিনতে অনুরোধ করে। (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)
ওরাই শেষ পর্যন্ত সফল হবে – বাকারাহ ৪-৫
সূরা বাকারাহ ৪ নম্বর আয়াতটি নিয়ে আধুনিক মুসলিমদের মধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে—
যারা তোমার (মুহাম্মাদ) উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, যারা পরকালে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে।[বাকারাহ-৪]
প্রশ্ন আসে, কেন আমাদেরকে কু’রআনের পাশাপাশি আগে যে কিতাবগুলো নাজিল হয়েছিল সেগুলোতে বিশ্বাস করতে হবে? −এর মানে কি আমাদের তাওরাত, জাবুর, ইনজিল এগুলো সব পড়তে হবে? আমাদের কি ইহুদিদের মতো তাওরাতে যা আছে সেটা মানতে হবে? খ্রিষ্টানদের মতো গস্পেলে যা আছে সেগুলো মানতে হবে? আজকে যারা ইহুদি এবং খ্রিষ্টান, তারা কি তাহলে আল্লাহর تعالى দেওয়া ধর্মের উপর আছে এবং তাদের কি কু’রআন মানার কোনো প্রয়োজন নেই? তারা কি মুসলিমদের মতোই জান্নাতে চলে যাবে?
(আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)যারা মানুষের চিন্তার ক্ষমতার বাইরে এমন সব ব্যাপারে বিশ্বাস করে – বাকারাহ ৩
এর আগের আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলেছেন যে, কুর’আন পড়ে যদি আমরা কোনো লাভ পেতে চাই, তাহলে আমাদের প্রথম যেটা দরকার সেটা হচ্ছে তাকওয়া: আল্লাহর تعالى প্রতি পূর্ণ সচেতনতা—এটা বিশ্বাস করা যে আমার দিকে সবসময় ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন তাক করে রাখা হয়েছে। আমি যা বলছি, যা করছি, যেদিকে তাকাচ্ছি, যেসব বদ চিন্তা করছি, তার সবগুলোই রেকর্ড করা হচ্ছে এবং একদিন আল্লাহর تعالى সামনে আমার সব কুকর্ম রিপ্লে করে দেখানো হবে। যতক্ষণ আমাদের ভিতরে এই তাকওয়া না আসছে, ততক্ষণ কুর’আন পড়ে আমরা সঠিক পথনির্দেশ পাব না। আমরা এক লাইন কুর’আন পড়ব, আর দশটা প্রশ্ন করব: “এরকম কেন হলো? ওরকম কেন হলো না? না, এটা তো ঠিক হলো না? ”
এর পরের আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে মুত্তাকী (আল্লাহর تعالى প্রতি পূর্ণ সচেতন) হওয়ার জন্য শর্তগুলো সম্পর্কে বলছেন—
তাঁর মতো আর কেউ নেই – সূরা ইখলাস
আমরা অনেক সময় চিন্তা করে দেখি না আমাদের ধর্মে যে সৃষ্টিকর্তার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটা কত সহজ এবং যুক্তিযুক্ত। আপনি যদি আজকে একজন খ্রিস্টান হতেন তাহলে আপনাকে কি বিশ্বাস করতে হতো দেখুন: প্রথম মানুষ আদম, খোদার নির্দেশ অমান্য করে এমন এক মহা পাপ করেছিলেন যে, তার পাপের জন্য তার পরে সমস্ত মানুষ জন্ম নিয়েছে পাপী হয়ে, এমনকি আপনিও জন্ম হয়েছেন এক বিরাট পাপ নিয়ে। হাজার বছর ধরে সেই পাপ জমতে জমতে এত বিশাল হয়ে গিয়েছিল যে, সেই মহাপাপ থেকে মানব জাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে মানুষ রূপে পৃথিবীতে এসে মানুষের হাতেই জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে! এখন যদি প্রশ্ন করেন, “আদম পাপ করেছে বলে আমাকে কেন তার পাপের বোঝা নিতে হবে? আমি কী দোষ করেছি?” অথবা “পাপ তো করা হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে, তাহলে সৃষ্টিকর্তা কি শুধু বলতে পারতেন না, ‘হে মানব জাতি, যাও, আমি তোমাদেরকে মাফ করে দিলাম’, ব্যস! কী দরকার ছিল তাঁর মানুষ হয়ে পৃথিবীতে এসে মানুষের হাতেই মার খাওয়ার?” —আপনি কোনো উত্তর পাবেন না। (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)