আমরা শুনলাম এবং আমরা অস্বীকার করলাম — আল-বাক্বারাহ ৯২-৯৩

কোনো এক অদ্ভুত কারণে হাজার হাজার বছর আগে থেকেই মানুষের গরুর প্রতি একধরনের বিশেষ প্রীতি ছিল। প্রাচীন মিশরীয়রা গরু পূজা করত।[১৮২] বনী ইসরাইল জাতি গরু পূজা করত। আজকে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী গরুকে দেবতা মনে করে। তারা গরুকে এক বিশেষ পবিত্র সৃষ্টি মনে করে বছরে এক বিশেষ দিন গরুর সন্মানে উদযাপন করে।[১৮২] শয়তান পূজারিরা গরুর মাথার কঙ্কাল এবং রক্ত ব্যবহার করে। এমনকি শয়তানের চিত্রকর্মে তাকে গরুর মত শিং দেওয়া হয়। নানা ধরনের প্রাচীন জাদু, ডাইনীবিদ্যায় গরুর জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়।[১৮৩] এমনকি আমাদের সময় স্কুলে বাংলা কোর্সে এত প্রাণী থাকতে গরুর রচনাই লিখতে দেওয়া হত ।

2_92

কোনো সন্দেহ নেই, মুসা তোমাদেরকে পরিষ্কার নিদর্শন এনে দেখিয়েছিল। তারপর সে যখন অনুপস্থিত ছিল, তোমরা বাছুরকে পূজা করাশুরু করলে। তোমরা চরম অন্যায়কারী ! [আল-বাক্বারাহ ৯২]

আল্লাহর تعالى বাণী নিয়ে মানুষের তামাশা করার প্রবণতার আরেকটি উদাহরণ আমরা এই আয়াতে পাব। বনী ইসরাইলিরা দেখল যে, নবী মূসা عليه السلام আল্লাহর تعالى কাছ থেকে যে তাওরাতের বাণী নিয়ে এসেছেন, সেই বাণী মেনে চলাটা বেশ কঠিন। তখন তারা সেটা থেকে বাঁচার জন্য অজুহাত খোঁজা শুরু করল। প্রথমে তারা নবী মূসাকে عليه السلام বলল: তার মুখের কথা তারা বিশ্বাস করবে না, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর تعالى কাছ থেকে নিজের কানে না শুনছে।[৪][৮]

তখন নবী মূসা عليه السلام তাদের মধ্য থেকে ৭০ জন প্রতিনিধিকে বাছাই করে তূর পাহাড়ে নিয়ে গেলেন। সেখানে আল্লাহ تعالى তাদেরকে সরাসরি তাওরাত মেনে চলার হুকুম দিলেন। তারপর সেই প্রতিনিধিরা ফিরে এসে নিজ নিজ গোত্রের সামনে স্বীকার করল যে, আল্লাহ تعالى সত্যিই তাদেরকে তাওরাত মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এর সাথে তারা আর একটি কথা যোগ করে দিল: “আল্লাহ বলেছেন যে, তোমাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, ততটুকু মেনে চলবে। যা মেনে চলতে পারবে না, তা তিনি ক্ষমা করে দিবেন।”

এরপর থেকে তাওরাতের যেই নির্দেশই তাদের কাছে কঠিন মনে হতো, সেটাকেই তারা ছেড়ে দিত — এই মনে করে যে, আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিবেন।[৪][৮] তাদের এই ভণ্ডামিতে আল্লাহ تعالى রেগে গিয়ে এক অসাধারণ ঘটনা ঘটালেন —  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

এত কিছুর পরেও তোমাদের অন্তর পাথরের মতো কঠিন হয়ে গেছে — আল-বাক্বারাহ ৭২-৭৪

এই তিনটি আয়াতে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার শিখব: মানুষের জীবনে নানা ধরনের সমস্যা আসে, যেগুলো তাকে ধাক্কা দেয়, যেন সে নিজেকে পরিবর্তন করে, অন্যায় করা বন্ধ করে। কিন্তু তারপরেও অনেক মানুষ অন্যায় করতে করতে একসময় তাদের অন্তর পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। অন্যায় তখন তাদের কাছে আর অন্যায় মনে হয় না। তারা তাদের নিজেদের ভুলগুলোকে নিয়ে আর ভেবে দেখে না। কেউ তাদেরকে সেই ভুলগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও, সে উপলব্ধি করে না। উপলব্ধি করলেও, নিজেকে পরিবর্তন করার মতো ইচ্ছা তাদের থাকে না।

cloudy mountain

আজকের যুগের একটি উদাহরণ দেই—

চৌধুরী সাহেব একটা সরকারি প্রোজেক্টে ঘুষ খেতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন। তার চাকরি চলে গেল। তিনি বছরের পর বছর ধরে বেকার। পরিবারের খরচ দিতে গিয়ে জমি-জমা বিক্রি করে নিঃস্ব হওয়ার মতো অবস্থা। একসময় তিনি তার প্রতিবেশীর অনেক অনুরোধে নামাজ পড়া শুরু করলেন। তিনি আল্লাহর কাছে বার বার ক্ষমা চাইলেন, যেন আল্লাহ তাকে আরেকবার সুযোগ দেন। এক বছর পর তিনি একটা বিদেশি কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি পেলেন।

দুই বছর পরের ঘটনা: চৌধুরী সাহেব সেই বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করার সময় কোম্পানির খরচে বিদেশে গিয়ে অবৈধভাবে থেকে গেলেন। তারপর শুরু হলো হাজারো আইনগত সমস্যা। একটা সমস্যা কাটাতে গিয়ে তাকে আরেকটা অন্যায় করতে হয়, একে ওকে টাকা খাওয়াতে হয়, কাগজপত্র জাল করতে হয়। তার নিকট আত্মীয়রা তাকে বার বার বোঝালেন, যেন তিনি নিজেকে শোধরান। এভাবে দুই নম্বরি করে অশান্তিতে আর কতদিন থাকবেন? চৌধুরী সাহেব শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি তার লোভ সংবরণ করবেন, যতটুকু সম্ভব হালাল উপায়ে চলার চেষ্টা করবেন।

তিন বছর পরের ঘটনা: চৌধুরী সাহেব নানা ভাবে কাগজ জালিয়াতি করে, ভুয়া ডিগ্রি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে বিদেশে বাস করছেন। শুধু তাই না, তিনি তার চৌদ্দ গুষ্টিকে দুই নম্বরি করে বিদেশে নিয়ে এসেছেন। এখন তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। সাত মাস পর চেকআপ করতে গিয়ে ডাক্তার বললেন, “এক ভয়ংকর জটিলতা দেখা দিয়েছে: হয় মা বাঁচবে, না হয় সন্তান। তাদেরকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে: কাকে তারা বাঁচাতে চান?”

এরপর থেকে চৌধুরী সাহেব বার বার নামাজে কাঁদেন, “ও আল্লাহ! আমার স্ত্রী এবং সন্তানকে এবারের মতো বাঁচিয়ে দিন। আমি এখন থেকে নিষ্ঠার সাথে ধর্ম মানব, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ব, পরের বছরই হাজ্জ করতে যাব।” খুব শীঘ্রই তার মুখে ঘন দাঁড়ি, কপালে সিজদার দাগ, ঘন ঘন রোজা রাখতে দেখা গেল।

দুই মাস পর ডেলিভারি হলো। কোনো এক অদ্ভুত কারণে মা এবং সন্তান দুজনেই বেঁচে গেলেন। চৌধুরী সাহেব এবং তার স্ত্রী আনন্দে, কৃতজ্ঞতায় চোখের পানি ফেলেন, এবং সন্তানের চেহারার দিকে দিন-রাত অবাক হয়ে পরম শান্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন।

এক বছর পরের ঘটনা: চৌধুরী সাহেবের হারাম লোন নিয়ে কেনা বাড়িতে বাচ্চার জন্মদিনের পার্টি হচ্ছে। রঙ বেরঙের পানীয়, টিভিতে প্রায় নগ্ন গায়িকার গানের ভিডিও চলছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ছেলে-মেয়ে সবাই মাখামাখি করে নাচানাচি করছে। চৌধুরী সাহেবের স্ত্রী এক আপত্তিকর পশ্চিমা কাপড় পড়ে তার বন্ধুদের সামনে ঘোরাঘুরি করছেন। এদিকে চৌধুরী সাহেব চকচকে চোখে বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন…  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমাদেরকে যা বলা হয়েছে সেটা করো — আল-বাক্বারাহ ৬৮-৭১

ধর্মীয় নিয়ম-কানুনগুলোকে কীভাবে খামোখা ঘাঁটাঘাঁটি করে কঠিন বানানো যায়, যাতে তার অনুসরণ করা মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়, এবং ধর্মীয় নির্দেশ শেষ পর্যন্ত মানতে না পারলে কীভাবে সব দোষ আল্লাহকে تعالى দেওয়া যায় — তার কিছু অভিনব উদাহরণ আমরা সূরা আল-বাক্বারাহ’র ৬৭-৭১ আয়াতে দেখতে  পাবো। প্রথমত আজকের যুগের মুসলিমদের একইভাবে ধর্মকে পেঁচিয়ে কঠিন বানানোর একটি উদাহরণ দেই—

চৌধুরী সাহেব সম্প্রতি ধর্মের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস হয়েছেন। তিনি তার জীবন থেকে, ধর্মীয় নির্দেশের বিরুদ্ধে যায়, এমন সব ব্যাপার একে একে দূর করার চেষ্টা করছেন। একদিন এলাকার জ্ঞানীগুণী হাজি সাহেবকে মসজিদে আলোচনায় বলতে শুনলেন, “মুসল্লি ভাইয়েরা, আজকাল টিভিতে অনেক হারাম জিনিস দেখানো হয়। টিভি আমাদের কিশোর-তরুন সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। টিভি দেখা হারাম। আপনারা আজকেই টিভির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিন।”

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)