অনেকে আছে যারা শুধুই চায়, “ও রব্ব, আমাদেরকে দুনিয়াতে দিন” — আল-বাক্বারাহ ২০০-২০২

আমরা যখন হাজ্জ করতে যাই, আমাদের উদ্দেশ্য থাকে কীভাবে আমরা আল্লাহকে تعالى খুশি করতে পারি, যেন তিনি আমাদেরকে জান্নাত দেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, অনেকে হাজ্জে যান, কারণ তার দুনিয়াতে অনেক কিছু দরকার, এবং তিনি শুনেছেন হাজ্জে গিয়ে চাইলে নাকি সব পাওয়া যায়। যার ফলে তার হাজ্জে যাওয়াটা হয়ে যায়, মন্ত্রীর কাছে গিয়ে তদবির করার মতো একধরনের তদবির অনুষ্ঠান। হাজ্জে গিয়ে তার দু’আ হয়, “ও আল্লাহ, تعالى আমার ব্যবসাটা ভালো করে দিন, আমাকে চাকরিতে প্রমোশন দিন। আমাকে একটা বাড়ি কিনতে দিন। আমার ছেলেমেয়েকে বিদেশে পাঠাতে দিন। আমার জমিগুলোকে নিরাপদ রাখুন। আমার স্ত্রীর অত্যাচার দূর করে দিন। আমার ডায়াবেটিস ঠিক করে দিন।…” —অবশ্যই এগুলো চাওয়াটা দোষের নয়, কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে: এই মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কী। কেন আমাদেরকে সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আমরা যদি দুনিয়ার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে এই বিরাট ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব না দেই, ভুলে যাই, হাজ্জের মতো এত বড় একটা সুযোগ পেয়েও উপলব্ধি না করি, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, কারণ আল্লাহ تعالى বলেছেন—

2_200

হাজ্জের অনুষ্ঠানগুলো শেষ করার পর, আল্লাহকে تعالى বেশি করে মনে করবে, যেভাবে তোমাদের বাপদাদাদের মনে করো। না, বরং তারচেয়ে বেশি করে! কারণ অনেকে আছে যারা শুধুই চায়, “ও রব্ব, আমাদেরকে দুনিয়াতে দিন” —এদের জন্য পরকালে বিন্দুমাত্র কোনো ভাগ থাকবে না। [আল-বাক্বারাহ ২০০]

আগেকার আমলে হাজ্জ শেষ হওয়ার পর হাজ্জিরা একসাথে বসে তাদের বাপ-দাদাদের কৃতিত্ব নিয়ে গল্প করতো —কে কবে কাকে কত খাইয়েছে, কত সাহায্য করেছে, কত জমিজমা করেছে, কত যুদ্ধ করেছে, কত বীর পদক পেয়েছে ইত্যাদি।[১২][১৪][৬] আজকের দিনে আমরা বাপ-দাদাদের নিয়ে এভাবে গর্ব করি না। আমাদের গল্পগুলো হয়ে গেছে: কার বাবা মন্ত্রী, কার দাদা জমিদার ছিলেন, কে সৈয়দ বংশের, কার চাচা হাজ্জ কাফেলার চেয়ারম্যান ইত্যাদি। হাজ্জের মতো এত মূল্যবান সময়গুলো আমরা পার করি এসব খোশ গল্প করে।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

দেখবে, এরা তাদের জীবনটাকে অন্য সবার থেকে বেশি কামড়ে ধরে থাকতে চায় — আল-বাক্বারাহ ৯৪-৯৬

আজকে যদি আমাকে ডাক্তার বলে: আপনার রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং আপনি আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মারা যাবেন, সিঙ্গাপুরে গিয়েও লাভ হবে না—আমি তখন কী করব? আমি কি তখন কাঁথা জড়িয়ে টিভির সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফালতু তারকা শো, টক শো, হিন্দি সিরিয়াল দেখব? আমি কি পরদিন অফিসে গিয়ে কলিগদের সাথে শেষ বারের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারব? আমি কি আমার ছেলেমেয়েকে শেষ বারের মতো একটু খুশি করার জন্য ভিডিও গেম কিনে দেব, যেখানে তারা রামদা-ছুরি নিয়ে একপাল অর্ধ মৃত, রক্তাক্ত জম্বিকে মেরে কোনো এক বিকৃত কারণে বড়ই আনন্দ পায়? আমি কি এই অবস্থায় আমার মেয়েকে নৃত্য শিল্পী বানাব, ছেলেকে ব্যান্ডের দলে যোগ দেওয়াব, যেন তারা সেগুলো করে আমার মৃত্যুর পরে আমার জন্য ‘অশেষ সওয়াব’ অর্জন করে?

না, আমরা তখন এগুলোর কিছুই করব না, কারণ জীবনের শেষ দিনগুলি এভাবে নষ্ট করার মতো বোকামি আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু আজকে আমরা ঠিকই সেগুলো করে যাচ্ছি এটা ভালো করে জেনে যে: আমরা আজকে হোক, কালকে হোক, একদিন না একদিন মারা যাবই। তারপর একসময় আমাদেরকে আবার জাগিয়ে তোলা হবে এবং তারপর আমাদেরকে ধরে নিয়ে বিশ্বজগতের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবানের সামনে দাঁড় করানো হবে: আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তের হিসাব দেওয়ার জন্য। সেদিন তাঁর সামনে মাথা নিচু করে আমরা তাঁকে কী বলব—সেটা ঠিক করে রেখেছি কি?

কোনো কারণে আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে চাই না। এরকম চিন্তা মাথায় এলেই আমাদের কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। আমরা দ্রুত চিন্তার টপিক পাল্টে ফেলি। যদি আমাদের কোনো বন্ধু বা আত্মীয় আমাদেরকে এই ব্যাপারটি নিয়ে কিছু বলা শুরু করে, আমরা জলদি তাকে বলি, “কি বলছেন এইসব! আস্তাগফিরুল্লাহ! এই সব মরা-টরার কথা শুনতে ভালো লাগছে না। বাদ দেন এইসব। আসেন অন্য কিছু নিয়ে কথা বলি।”

2_94

বলে দাও, “যদি আখিরাতের জীবনটা আল্লাহর সান্নিধ্যে তোমাদের জন্যই হয়ে থাকে, অন্য কারো জন্য না হয়, তাহলে এখনই মরে যেতে চাচ্ছ না কেন? তোমরা না বড়ই সত্যবাদী?” [আল-বাক্বারাহ ৯৪]

Dubai

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

তোমরা কী করে যাচ্ছ, সেটা আল্লাহর অজানা নয় — আল-বাক্বারাহ ৮৪-৮৬

এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে রাজনীতি কত নোংরা হতে পারে, তা শেখাবেন। মানুষ কীভাবে নিজের স্বার্থের কারণে নিজের ভাইকে খুন করতে পারে, নিজের ভাইকে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে এবং দরকারের সময় রাতারাতি ভোল পাল্টে দুমুখো সাপ হয়ে যেতে পারে, তা এই আয়াত দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আজকের মুসলিমরা যে সাচ্চা বনী ইসরাইল হয়ে গেছে, সেটা আপনি নিজেই দেখতে পাবেন—

মনে করে দেখ, যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, “তোমরা তোমাদের রক্ত ঝরাবে না এবং নিজেরদেকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দিবে না।” তোমরাই তো  তখন কথা দিয়েছিলে, আর তোমরাই ছিলে তার সাক্ষী!  [আল-বাক্বারাহ ৮৪]

“তোমরা তোমাদের রক্ত ঝরাবে না” 
  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ওরাই শেষ পর্যন্ত সফল হবে – বাকারাহ ৪-৫

সূরা বাকারাহ ৪ নম্বর আয়াতটি নিয়ে আধুনিক মুসলিমদের মধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে—

2_4

যারা তোমার (মুহাম্মাদ) উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, যারা পরকালে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে।[বাকারাহ-৪]

Coexist

প্রশ্ন আসে, কেন আমাদেরকে কু’রআনের পাশাপাশি আগে যে কিতাবগুলো নাজিল হয়েছিল সেগুলোতে বিশ্বাস করতে হবে? −এর মানে কি আমাদের তাওরাত, জাবুর, ইনজিল এগুলো সব পড়তে হবে? আমাদের কি ইহুদিদের মতো তাওরাতে যা আছে সেটা মানতে হবে? খ্রিষ্টানদের মতো গস্পেলে যা আছে সেগুলো মানতে হবে? আজকে যারা ইহুদি এবং খ্রিষ্টান, তারা কি তাহলে আল্লাহর تعالى দেওয়া ধর্মের উপর আছে এবং তাদের কি কু’রআন মানার কোনো প্রয়োজন নেই? তারা কি মুসলিমদের মতোই জান্নাতে চলে যাবে?

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)