নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ছুঁড়ে দেবে না — আল-বাক্বারাহ ১৯৫

সূরা বাক্বারাহ’র এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেবেন, যা প্রতিটি মুসলিমের উচিত প্রতিদিন সকালে উঠে নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া। দরকার হলে মোবাইল ফোনে, কম্পিউটারে ওয়ালপেপার সেট করে রাখা। এই আয়াতগুলো আমাদেরকে বিরাট সব শিক্ষা দেয়, যা মুসলিম জাতি যদি নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারতো, তাহলে আজকে তাদের এত হতাশাকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না—

2_195_title

2_195

আল্লাহর تعالى পথে খরচ করো। আর নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ছুঁড়ে দেবে না। ভালো কাজ সুন্দরভাবে করো। যারা ভালো কাজ সুন্দরভাবে করে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ تعالى তাদেরকে ভালবাসেন। [আল-বাক্বারাহ ১৯৫]

আল্লাহর تعالى পথে খরচ করো

আল্লাহর تعالى পথে খরচ বহুভাবে করা যায়। ইসলামের প্রচারে সাহায্য করতে খরচ করা, নিজে ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করতে খরচ করা, অভাবী প্রতিবেশী, আত্মীয়, এতিম, অসহায় মানুষদের জন্য খরচ করা, পরিবারের জন্য খরচ করা[৩৩৭] — এসব কিছুই আল্লাহর تعالى পথে খরচ করার অন্তর্ভুক্ত। একইসাথে দেশে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করে এমন সত্যিকারের ইসলামি দলকে সাহায্য করা, মানুষকে ইসলামের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন দিতে আগ্রহী করা ইত্যাদি নানা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও খরচ করা যায়। মুসলিমদেরকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে, অত্যাচারিত মুসলিমদের পাশে দাঁড়াতে খরচ করাও আল্লাহর تعالى পথে খরচ করার অন্তর্ভুক্ত।[১১]

এই আয়াতের আগের কয়েকটি আয়াত যুদ্ধ সম্পর্কিত। এখানে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে তাঁর تعالى পথে খরচ করতে বলছেন, কারণ যুদ্ধ করতে গেলে সম্পদের দরকার। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম তৈরি করতে এবং কিনতে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হয়। একই সাথে যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও প্রতিদিন প্রচুর খরচ করতে হয় বাহিনীর খাবার, বাসস্থান, চিকিৎসা, অস্ত্র, যানবাহনের যোগান দিতে। যদি মুসলিমরা যুদ্ধের জন্য অর্থ খরচ না করে, তাহলে যুদ্ধ চলবে কীভাবে?

আমরা যদি আল্লাহর تعالى পথে খরচ না করি, তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মারবো, কারণ আমাদের শত্রুরা বসে নেই। প্রতিবছর তারা বিপুল পরিমাণ বাজেট খরচ করছে মুসলিম, অমুসলিম উভয়ের মধ্যেই ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করতে, ইসলামের অবমাননা করতে, মুসলিমদেরকে মেরে শেষ করে ফেলতে। তাদের সঙ্ঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র, আক্রমণের বিরুদ্ধে মুসলিমরা যদি তাদের সম্পত্তি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা না করে, তাহলে মিডিয়া, দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ সব ইসলামের শত্রুরা দখল করে ফেলবে। ইতিমধ্যে অনেকখানি দখল হয়েও গেছে।  মিডিয়াতে ইসলামের পক্ষে কতখানি বলা হয়, আর বিপক্ষে কতখানি বলা হয়, সেটা আমরা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি। টিভিতে চ্যানেলগুলো ইসলামের বিপক্ষে বলে সেটা আমরা প্রতিদিন দেখি। সংবাদপত্রে কতখানি থাকে ইসলামি সংস্কৃতি, আর কতখানি ইসলাম বিদ্বেষী সংস্কৃতি, সেটা আমরা সবাই জানি।

শুধুমাত্র আমেরিকাতেই কয়েকটি বিখ্যাত দাতা সংগঠন ২০০১-২০০৯ সালের মধ্যে ৪.২৬ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে বই, ওয়েবসাইট, টিভি প্রোগ্রাম, চলচ্চিত্র, ইউটিউব, ফেইসবুক এর মাধ্যমে আমেরিকায় এবং সারা বিশ্বে মানুষের মধ্যে ইসলামের প্রতি আতংক ছড়িয়ে দিয়ে, ইসলাম যে একটি মধ্যযুগীয়, বর্বর, ‘টেররিস্ট বানানোর ধর্ম’ —মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারনাগুলো বদ্ধমূল করে দেবার জন্য।[৩৩৫] গাজা, ইরাক, সিরিয়াতে মুসলিম নিধনে আমেরিকা, ইসরাইল ইতিমধ্যেই হাজার কোটি ডলার খরচ করে ফেলেছে। এক গাজার যুদ্ধেই ইসরাইল খরচ করেছে ২৫২ কোটি ডলার। প্রতিদিন তারা ৫ কোটি ডলার খরচ করে এই যুদ্ধে। এই যুদ্ধের পেছনে যত সম্পদ নষ্ট হয়, তা দিয়ে পৃথিবীর অনাহারে থাকা দেড় শত কোটি গরিব মানুষকে সারাবছর খাওয়ানো যেত।

আমরা মুসলিমরা যদি আল্লাহর تعالى পথে খরচ না করি, নিজেরা কোনোমতে বেঁচে-পড়ে খেয়ে, বাচ্চাগুলোকে কোনো মতে বড় করে কবরে যেতে পারি —এই নিম্ন মানের উদ্দেশ্য নিয়ে জীবন পার করি, তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবো। আমাদের শত্রুরা বদ্ধ পরিকর যে, আমাদেরকে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তারা শেষ করে ছাড়বেই। তারা এই উদ্দেশ্যে সঙ্ঘবদ্ধ। বিপুল পরিমাণের বাজেট তাদের। আমরা যতই ভাবি: ছেলেমেয়েদেরকে পড়ালেখা শিখিয়ে কোনো একটা চাকরি-ব্যবসায় ঢুকিয়ে দিতে পারলেই তারা সুন্দরভাবে জীবন পার করতে পারবে, আর আমরা শান্তিতে কবরে যেতে পারবো —এটা কোনো মুসলিমের জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। আমাদের সন্তানদেরকে শেষ করে দেওয়ার জন্য আমাদের শত্রুরা সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। আমরা যদি তাদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ না হই, নিজেদের কষ্টের অর্জন করা সম্পদ খরচ করে আমাদের সন্তানদের জন্য একটি সুন্দর ইসলামি জীবন ব্যবস্থা তৈরিতে যথেষ্ট অবদান রেখে না যাই, তাহলে আমাদের আফসোসের কোনো সীমা থাকবে না।

আমাদের অনেকেরই দান করতে গেলে অনেক কষ্ট হয়। কোনো মসজিদ ফান্ডে টাকা দিলে, এতিম খানায় দান করলে, বা কোনো গরিব আত্মীয়কে হাজার খানেক টাকা দিলে, মনে হয় কেউ যেন বুকের একটা অংশ ছিঁড়ে নিয়ে গেল। আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে চিন্তা করতে পারি: দুনিয়াতে আমার একটি একাউন্ট রয়েছে, আখিরাতে আমার আরেকটি একাউন্ট রয়েছে। আমি যখন আল্লাহর تعالى রাস্তায় খরচ করছি, আমি আসলে আমার দুনিয়ার একাউন্ট থেকে আখিরাতের একাউন্টে ট্রান্সফার করছি মাত্র। এর বেশি কিছু না। আমার সম্পত্তি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না, আমারই থাকছে। একদিন আমি দেখবো আমার ওই একাউন্টে কত জমেছে এবং আল্লাহ‌ تعالى আমাকে কত পার্সেন্ট বেশি মুনাফা দিয়েছেন। সেদিন শুধুই আমি আফসোস করবো, “হায়, আর একটু যদি এই একাউন্টে ট্রান্সফার করতাম, তাহলে আজকে …!”

সূরা আল-বাক্বারাহ’র শুরুর কয়েকটি আয়াতেই আল্লাহ‌ تعالى বলছেন: মু’মিন হবার প্রথম তিনটি শর্ত হল গাইবে বিশ্বাস, নামাজ এবং তার পরেই আল্লাহর تعالى দেওয়া রিজিক থেকে দান করা। এখন প্রশ্ন আসে: দান করার সাথে ঈমানের কি সম্পর্ক? কীভাবে দান করার মাধ্যমে একজন মানুষের ঈমানের পরীক্ষা হয়?

আপনি দেখবেন কিছু মানুষ আছে যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানে ত্রিশটা রোজা রাখে, কিন্তু গত এক বছরেও কোনোদিন কোনো এতিম খানায় একটা টাকাও দিতে পারেনি। ড্রাইভার, কাজের বুয়া, বাড়ির দারোয়ান তার কাছে বার বার টাকা চাইতে এসে, “দিবো, দিবো, রমজান আসুক” —এই শুনে খালি হাতে ফিরে গেছে। গরিব আত্মীয়স্বজন সাহায্য চাইতে এসে, কয়েকদিন অপেক্ষা করে, শুধু কয়েক বেলা ভাত খেয়ে ফিরে গেছে, কিন্তু কোনো টাকা নিয়ে যেতে পারেনি। মসজিদে বহুবার সে বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য টাকার আবেদন শুনেছে, কিন্তু কোনোদিন পকেটে হাত দিয়ে একটা একশ টাকার নোটও বের করে দিতে পারেনি।

এই ধরনের মানুষদের আল্লাহর تعالى সাথে সম্পর্ক কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পর্যন্তই। এরা এখনো মুসল্লি থেকে উপরে উঠে মু’মিন হতে পারেনি। আল্লাহর تعالى প্রতি তাদের বিশ্বাস এখনও এতটা মজবুত হয়নি। তাই তারা আল্লাহ‌কে تعالى বিশ্বাস করে কিছু টাকা নির্দ্বিধায় একটা এতিম খানায় দিয়ে দিতে পারে না। কিয়ামতের দিনের প্রতিদান নিয়ে এখনও তাদের সন্দেহ যথেষ্ট দূর হয়নি। তাই তারা নির্দ্বিধায় গরিব আত্মীয়দের চিকিৎসায় কিছু টাকা লাগলেও, সেটা হাসিমুখে দিয়ে দিতে পারে না। তারা যদি সত্যিই মু’মিন হতো, তাহলে তারা প্রতিদিন সকালে উঠে চিন্তা করতো, “আজকে আমি কাকে আল্লাহর تعالى সম্পদ ফিরিয়ে দিতে পারি? আল্লাহর تعالى কোন মেহমানকে আজকে আমি কিছু খাওয়াতে পারি? কার কাছে গিয়ে আজকে আমি জান্নাতের জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট করতে পারি?”

নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ছুঁড়ে দেবে না

এই অল্প কিছু কথার মধ্যে বিরাট প্রজ্ঞা রয়েছে। কতভাবে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ছুঁড়ে ফেলি, তা নিয়ে আলেমরা বেশ কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন—

প্রথমত, আমরা যদি আল্লাহর تعالى পথে খরচ না করি, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য, ইসলামের প্রচার এবং প্রসারের জন্য, ইসলামি জীবন ব্যবস্থার প্রতি হুমকিগুলোকে দূর করার জন্য, তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ছুঁড়ে দেবো। তবে আল্লাহর تعالى পথে খরচ করতে গিয়ে আমরা যেন পরিবারের অধিকারকে নষ্ট না করি। কোনো একদিন পত্রিকায় মুসলিমদের রক্ত মাখা ছবি দেখে মাথা গরম করে ব্যাংকের সব জমানো টাকা সিরিয়ার যুদ্ধে দান করে না দেই।  তাহলে সেটা নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হবে।[৪] কারণ কিয়ামতের দিন পরিবার যখন তাদের অধিকার আদায় না করার জন্য আল্লাহর تعالى কাছে অভিযোগ করবে, তখন আমরা শেষ হয়ে যাবো। কিয়ামতের দিনের এক ভয়ঙ্কর বর্ণনা আছে সূরা আবাসা’য়—

সেই দিন সে আতংকে দৌড়ে পালাবে নিজের ভাইয়ের কাছ থেকে,
নিজের মা, বাবা,
জীবন-সঙ্গিনী, সন্তানদের কাছ থেকে।  [আবাসা ৮০:৩৪-৩৬]

আমরা যেমন পাগলা কুকুর দেখে আতংকে দৌড়ে পালাই, কিয়ামতের দিন আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকে দেখে আমরা ঠিক সেরকম ভাবে পালাবো — يَوْمَ يَفِرُّ ٱلْمَرْءُ। তাদেরকে দেখে আমরা যেভাবে পালাবো, আমাদের প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের দেখে সেভাবে পালাবো না। এর কারণ: আমরা সবচেয়ে বেশি যাদের অধিকার ভাঙ্গি, তারা হচ্ছে আমাদের আপন ভাই বোন, বাবা, মা, স্ত্রী এবং সন্তান। কিয়ামতের দিন যখন দেখবো আমার মা আমার দিকে এগিয়ে আসছেন, তখন সাথে সাথে মনে পড়ে যাবে সারাজীবন তার সাথে কত অন্যায় করেছি। যেদিন নিজের ভাইকে দেখবো আমার দিকে এগিয়ে আসছে, সাথে সাথে মনে পড়ে যাবে আমি নিজের পরিবার নিয়ে ভালো থাকার জন্য কত চেষ্টা করেছি, অথচ নিজের ভাইয়ের জন্য কিছুই করিনি।[১]

এখন অনেকে ভাবেন, তাহলে আবু বকর (রা) যে তার সব সম্পদ দান করে দিয়েছিলেন? সেটার কী হবে? এটা সত্যি যে, আবু বকর (রা) তার সব সম্পদ জিহাদের প্রয়োজনে দান করে দিতেন, কিন্তু তার মেয়ের জামাই ছিলেন রাসুলুল্লাহ عليه السلام। তিনি জানতেন তার অভাবের সময় তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব রাসুলুল্লাহ عليه السلام নেবেন। তবে আমাদের পরিস্থিতি আলাদা। আমাদের অনুপস্থিতিতে পরিবারের ভরণপোষণের কোনো নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিচ্ছে না।[১১]

নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ছুঁড়ে দেবে না — এর আরেকটি অর্থ হচ্ছে নিজের হাতে নিজের কোনো শারীরিক ক্ষতি না করা। যেমন আত্মহত্যা। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে আমাদের দেহ দিয়েছেন আমানত হিসেবে। এই দেহের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর تعالى ইবাদত করতে পারি, নিজের ভবিষ্যতের জন্য অর্জন করতে পারি। এই দেহের ঠিকমতো যত্ন নেওয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া —এগুলো আমাদের দায়িত্ব, আমাদের উপর আমাদের দেহের হক। তাই অস্বাস্থ্যকর পানীয়, সিগারেট, মাদক, ফাস্টফুড খেয়ে দেহ, মস্তিষ্কের ইচ্ছে করে ক্ষতি করে নিজেকে ধ্বংসের পথে যেন ঠেলে না দেই।[১১]

আজকের যুগে নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ছুঁড়ে দেওয়ার একটি সাধারণ ঘটনা হলো উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদেরকে প্রযুক্তির ভালোমন্দ ব্যবহার না শিখিয়েই, তাদের হাতে তা তুলে দেয়া। যেমন স্মার্টফোন দেওয়া। অধিকাংশ বাবা-মাদের দেখা যায়, গর্ব করে তাদের কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েদেরকে দামি স্মার্টফোনের সাথে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছেন, যেনো তাদের সন্তানরা আধুনিক হতে পারে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি শিখতে পারে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। কিন্তু তারা ভেবে দেখেন না যে, তারা যেহেতু তাদের সন্তানদের ভালোমন্দের ব্যবহার শিখেয়ে দেননি, মন্দ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার যথেষ্ট ট্রেনিংও দেননি, তাই তাদের সন্তানরা স্মার্টফোন থেকে কিছুটা ভালো কিছু শিখলেও, খারাপটা শিখছে অনেক বেশি। মা-বাবাদের জানা নেই যে, তাদের সন্তান এখন স্মার্ট ফোনে ভয়ঙ্কর রকমের অশ্লীল ছবি দেখছে, রাতের বেলা লুকিয়ে সিনেমা হলে না গিয়ে বরং দিনের বেলা ঘরে বসেই নোংরা সিনেমা দেখছে। মোবাইল ফোনে অহরহ তারা এমন সব জঘন্য, অনৈতিক কাজ করছে, যেগুলো আগেকার যুগে কেউ করলে তাকে ঘর থেকে, সমাজ থেকে বের করে দেওয়া হতো। দু:ক্ষজনক যে, কিছু মা-বাবারা শুধু স্মার্ট ফোন দিয়েই সন্তুষ্ট হননি, সাথে ল্যাপটপ, এমনকি সন্তানের ঘরে টিভিও কিনে দিয়েছেন। এই মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টিভির অনিষ্ট থেকে সন্তানদের বাঁচানোর জন্য কোনো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাও তারা করে রাখেননি। —আজকাল আমরা কতটাই নির্বোধ হয়ে গেছি! জেনেশুনে নিজেদের সন্তানদেরকে জাহান্নামে যাওয়ার সব ব্যবস্থা নিজের হাতেই করে দিচ্ছি।

ভালো কাজ সুন্দরভাবে করো

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইহসান করতে বলেছেন। আমরা যেন শুধুই ভালো কাজ না করি, একই সাথে ভালো কাজগুলো যেন সুন্দর ভাবে করি। এখানে আল্লাহ تعالى মুহসিনিনদের مُحْسِنِين কথা বলছেন, যারা সবসময় ইহসান إِحْسَٰن করার চেষ্টা করে। সাধারণত ইহসান এর অনুবাদ করা হয়: ভালো কাজ। কিন্তু ইহসান অর্থ শুধুই ভালো কাজ নয়, বরং ভালো কাজটি সঠিক আদাবের সাথে সুন্দরভাবে করা।[৪][১] যেমন: আপনি একটা ফকিরকে দেখে মানিব্যাগ থেকে সবচেয়ে ছোট ছেঁড়া নোটটা বের করে তাকে দিতে পারেন। অথবা, একটা ঝকঝকে নোট তাকে দিতে পারেন এবং দেওয়ার পর তার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাঁসি দিয়ে বলতে পারেন, “ভাই, আমার ছেলেমেয়ের জন্য দু’আ করবেন” – এটা হবে ইহসান। আপনি আপনার কাজের-মেয়েকে এই ঈদে ফুটপাতের খোলা বাজার থেকে সস্তায় একটা নতুন জামা কিনে দিতে পারেন। অথবা আপনি তাকে আপনার মেয়ের সাথে শপিং মলে নিয়ে গিয়ে, একই দোকান থেকে দুজনকে একই জামা কিনে দিতে পারেন –এটা হবে ইহসান। যারা ইহসান করে তাদেরকে আল্লাহ تعالى কু’রআনে বহু জায়গায় এত সুন্দর সব পুরস্কারের কথা বলেছেন, যা বুঝলে মুসলিমদের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যেত ইহসান করার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে।

সূত্র:

  • [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
  • [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
  • [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
  • [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
  • [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
  • [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
  • [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
  • [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
  • [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
  • [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
  • [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
  • [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
  • [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [১৫] তাফসির আল জালালাইন।
  • [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ।
  • [৩৩৫] Fear, Inc. Retrieved 11 October 2015, from https://www.americanprogress.org/issues/religion/report/2011/08/26/10165/fear-inc/
  • [৩৩৬] Beaumont, P. (2014). Israel estimates cost of Gaza conflict at £1.5bn. the Guardian. Retrieved 11 October 2015, from http://www.theguardian.com/world/2014/aug/31/gaza-war-costs-israel-budget-cuts
  • [৩৩৭] Islamqa.info,. (2015). Is his spending on his wife who is also a relative regarded as kindness towards her family? – islamqa.info. Retrieved 13 October 2015, from http://islamqa.info/en/104166

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *