তিনি ছাড়া উপাসনার যোগ্য আর কিছু নেই — আল-বাক্বারাহ ১৬৩

ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এসেছে এই আয়াতে—

2_163_title

2_163তোমাদের উপাসনার যোগ্য সত্তা একজন। তিনি ছাড়া উপাসনার যোগ্য আর কিছু নেই। পরম দয়ালু তিনি, নিরন্তর করুণাময় তিনি। [আল-বাক্বারাহ ১৬৩]

“তোমাদের إِلَٰه ‘ইলাহ’ একজন” — إِلَٰه ইলাহ শব্দটিকে সাধারণত উপাস্য বা উপাসনার যোগ্য প্রভু অনুবাদ করা হয়। কিন্তু ইলাহ অর্থ আসলে হচ্ছে: কোনো কিছু বা কাউকে এতটাই চাওয়া হয়, এতটাই ভালবাসা হয় যে, ভালবাসা তখন উপাসনার পর্যায়ে চলে যায়। হৃদয়ে তখন দিন, রাত শুধু ইলাহ-এর চিন্তা ঘোরে। ইলাহ হয়ে যায় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ আকাঙ্খা। বাকি সব কিছু ইলাহ’র কাছে তখন তুচ্ছ। মন তখন ইলাহকে পাওয়া, ইলাহকে তুষ্ট করার চিন্তায় বিভোর হয়ে যায়।[১] [১১]

হাজার বছর ধরে মানুষের ইলাহ ছিল বিভিন্ন দেব-দেবী, সূর্য, চাঁদ, তারা, গরু ইত্যাদি নানা প্রাকৃতিক বস্তু, এমনকি বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষও। এদেরকে তুষ্ট করার জন্য, এদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য মানুষ এমন কিছু নেই, যা করতো না, সেটা মানুষ কুরবানী করে হলেও। ইলাহ যে শুধু এধরনের কোনো প্রাকৃতিক কিছু বা মানুষ হতে হবে তা নয়, এটি যে কোনো কিছু হতে পারে। কারো বেলায় ইলাহ হয় তার সম্পদ। কারো বেলায় তা হয় তার মান-সম্মান, সমাজে স্ট্যাটাস। কারো বেলায় ইলাহ হয়ে যায় তার জৈবিক কামনা। কারো বেলায় তার ইলাহ হয়ে যায় তার স্বামী, বা স্ত্রী, এমনকি সন্তানরাও। মানুষ তখন এসব ইলাহ’কে পেতে গিয়ে তার সমস্ত মনোযোগ, সময়, শক্তি দিয়ে দেয়। শুধু তাই না, অনেক সময় মানুষ একাধিক ইলাহ’কে একই সাথে পাওয়ার চেষ্টা করে। তখন শুরু হয় একাধিক ইলাহ’র মধ্যে প্রতিযোগিতা। শেষ পর্যন্ত একাধিক ইলাহ’র কোনোটাকেই ঠিক মতো না পেয়ে অশান্তি, অতৃপ্তিতে, হতাশায় ডুবে যায়।[১১]

অনেক সময় দেখা যায়, আমরা যখন আলেমদেরকে বলি, “অমুক লোকটার অমুক সমস্যা”, তখন আলেমরা উত্তর দেন, “তাওহীদের শিক্ষা দেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।” দেশে অরাজকতা, অস্থিরতা, পরিবারের ভাঙ্গন, নৈতিক অবক্ষয়, তখন আলেমরা বলেন, “তাওহীদের শিক্ষা ঠিকমতো পেলে এই সমস্যাগুলো থাকতো না।” নিকট আত্নীয় হারিয়ে কেউ চরম হতাশায় ভুগে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, আলেমরা আফসোস করেন, “আহা! তাওহীদের শিক্ষা না থাকলে মানুষের জীবনটা কত কষ্টের হয়!” আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না, সব সমস্যার সমাধান তাওহিদ হয় কীভাবে? আল্লাহ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র রব, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ —এগুলো তো সবাই জানে। তাহলে তাওহিদ কীভাবে মানুষের সব সমস্যার সমাধান দেয়?

তিনি ছাড়া উপাসনার যোগ্য আর কিছু নেই

আমরা যখন কালেমা পড়ে ঘোষণা দেই, “লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ” —তখন আমরা শপথ করি: “আল্লাহ تعالى ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমার জীবনে আল্লাহর تعالى থেকে বড় আর কেউ নেই। আজ থেকে আমার প্রতিটা সিদ্ধান্ত এবং কাজে আল্লাহ تعالى থাকবেন সবার আগে, তারপরে অন্য কিছু। আমি অন্য কোনো কিছুকে আল্লাহর تعالى থেকে বেশি গুরুত্ব দিবো না।” কিন্তু তারপর যা ঘটে তা হচ্ছে অনেকটা এরকম—

  • মেহমান এসেছে, তুমুল আড্ডা চলছে দেশের অবস্থা নিয়ে, ওদিকে মাগরিবের সময় পার হয়ে যাচ্ছে, “আহ্‌ হা, মাগরিবের সময় দেখি শেষ হয়ে গেল। কিন্তু এখন উঠে গেলে ওরা আবার কী মনে করে। তারচেয়ে রাতে একবারে ঈশার সাথে পড়ে নিবো। আল্লাহ تعالى মাফ করুন।”
  • বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার আগে রঙবেরঙের সাজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, “মাথায় ঘোমটা দিলে কেমন খ্যাত-খ্যাত মনে হচ্ছে। থাক, ঘোমটা ছাড়াই যাই, আত্মীয়-স্বজনরা আবার কী সব বলাবলি করে। বান্ধবীরা দেখলে হাসা-হাসি করবে। ফুল-হাতা ব্লাউজটাও একদম মানাচ্ছে না। দেখি হাফ-হাতা পরি, স্মার্ট লাগবে। মাত্র এক রাতেরই তো ব্যাপার, কিছু হবে না, আল্লাহ تعالى মাফ করবেন।”
  • বন্ধুর নতুন গাড়ির পাশে নিজের পুরনো গাড়িটার দিকে তাকিয়ে, “নাহ্‌, এই ভাঙ্গা গাড়িটা ফেলে দিয়ে ব্যাংক থেকে গাড়ির লোন নিয়ে এবার একটা নতুন গাড়ি কিনতেই হবে। এই গাড়ি নিয়ে বের হলে মানুষকে মুখ দেখাতে পারি না। প্রতিবেশীরা কেমন করে তাকায়, নিজেকে গরিব-গরিব মনে হয়। একটু সুদ দিলে কিছু হবে না। আল্লাহ تعالى নিশ্চয়ই আমার কষ্টের কথা বুঝবেন।”
  • মাসের ভাড়া দিয়ে বাড়িওয়ালার বাসা থেকে মুখ কালো করে ফেরত আসার পথে, “আর না, অনেক অপমান সহ্য করেছি, বন্ধু বান্ধবকে মুখ দেখাতে পারি না। মানুষকে বলতে হয় – ‘আমি ভাড়াটিয়া।’ এইবার সুদের লোনটা নিয়ে একটা বাড়ি কিনবোই। পরে একসময় হজ্জ্ব করে আল্লাহর تعالى কাছে মাফ চেয়ে নিবো।”
  • রাস্তায় সার্জেন্টকে পাঁচশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিতে দিতে, “ছি, ছি, ঘুষ দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু না দিলে তো আবার গাড়ি নিয়ে যাবে। কী লজ্জার ব্যাপার হবে যদি প্রতিবেশীরা জেনে ফেলে গাড়িটা দুই নম্বরি করে কেনা। থাক না, মাত্র পাঁচশ টাকা, আল্লাহ মাফ করবেন।”

এধরনের মানুষরা ‘লোকে কী বলবে’-কে এতই ভয় পায় যে, তারা কখনও চিন্তা করে দেখে না যে, তারা আসলে কী বলে, যখন তারা মুখে বলে—

লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ – আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনোই উপাসনার যোগ্য নেই।

বরং তাদের চিন্তা-ভাবনা, কথা, কাজের মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন তারা ঘোষণা দিচ্ছে—

লা ইলাহা ইল্লা ‘লোকে কী বলবে’

কালেমা পড়ে কাকে তারা একমাত্র প্রভু হিসেবে মেনে নিয়েছে —সেটা এখনও তারা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেনি। এধরণের মানুষের কাছে আল্লাহ تعالى একমাত্র প্রভু নন, ‘লোকে কী বলবে’ আল্লাহর تعالى থেকেও বড় প্রভু। যখনি তাদের জীবনে কোনো পরিস্থিতি আসে, যেখানে তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়— “আমি এটা করলে তো আল্লাহ تعالى রাগ করবেন, কিন্তু না করলে লোকে কী বলবে?” —তখন তারা আল্লাহর থেকে ‘লোকে কী বলবে’-কে বেশি ভয় পায় এবং আল্লাহকে تعالى উপেক্ষা করে ‘লোকে কী বলবে’ ঠেকানোর জন্য যা করা দরকার সেটাই করে।

এরপরেও কিছু লোক আছে যারা অন্যদেরকে আল্লাহর সমান মনে করে। তাদেরকে তারা এমন ভাবে ভালবাসে, যেভাবে আল্লাহকে ভালবাসার কথা। কিন্তু যারা বিশ্বাসী, তাদের আল্লাহর প্রতি ভালবাসা অত্যন্ত মজবুত। হায়রে! যদি অন্যায়কারীরা দেখতে পেত যে, [যেটা তারা পাবে, যখন তারা  জাহান্নামের শাস্তির দিকে তাকিয়ে থাকবে] সকল ক্ষমতা আল্লাহর এবং আল্লাহ বড়ই কঠিন শাস্তি দেন। [আল-বাক্বারাহ ২:১৬৫]

মজার ব্যাপার হচ্ছে: এধরনের মানুষরা ঠিকই স্বীকার করে যে, আল্লাহ হচ্ছেন তাদের সৃষ্টিকর্তা। সে ব্যাপারে তাদের মনে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা আল্লাহকে ইলাহ (একমাত্র উপাসনার যোগ্য) হিসেবে মেনে নিতে পারেনি, যাঁকে পাওয়ার জন্য আমাদের সবকিছুকে, সবাইকে তাঁর পরে স্থান দিতে হবে।

ইবলিস কিন্তু জানতো আল্লাহ تعالى একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। সে আল্লাহর تعالى সাথে কথা পর্যন্ত বলতে পারতো। আল্লাহর تعالى ক্ষমতা, সন্মান, অবস্থান নিয়ে তার কোনোই সন্দেহ ছিল না। কিন্তু তারপরেও সে কাফির হয়ে গিয়েছিল। ইবলিসের কুফরি আল্লাহর تعالى অস্তিত্বকে অস্বীকার করা ছিল না, তার কুফরি ছিল আল্লাহর تعالى অবাধ্যতা। এই ব্যাপারটা খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন: ইবলিসের কুফরি ছিল না যে, সে নাস্তিক ছিল বা সে আল্লাহকে تعالى বিশ্বাস করতো না, বা আল্লাহর تعالى বিরুদ্ধে ব্লগে, পত্রিকায় লেখালেখি করতো। তার কুফরি ছিল আল্লাহর تعالى অবাধ্যতা।

একজন ব্যক্তি আল্লাহর تعالى অবাধ্যতা তখনি করে, যখন সে জেনেশুনে আল্লাহর নির্দেশকে মানতে অস্বীকার করে। আর এই অস্বীকারকার করাটা হচ্ছে কু’রআনের ভাষায় কুফরী। আমরা যখন জেনে শুনে– “কু’রআনে কঠিন নির্দেশ আছে, আল্লাহ আমাকে সবসময় দেখছেন” –এটা জানার এবং বোঝার পরেও আল্লাহর নির্দেশ দিনের পর দিন অমান্য করতে থাকি, তাঁর অবাধ্য হতে থাকি, তখন আমরা কু’রআনের ভাষায় কুফরী করি। আর মানুষ যখন আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কাউকে ইলাহ’র পর্যায়ে নিয়ে যায়, তখন সে শিরক করে ফেলে।

পরম দয়ালু তিনি, নিরন্তর করুণাময় তিনি

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে তিনি কেমন প্রভু, তার এক বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। মাত্র দুটি শব্দের মধ্যে কী ব্যাপক পরিমাণের তথ্য আছে দেখুন।

প্রথমত, রাহমা-ন এবং রাহি-ম: এই দুটো শব্দই এসেছে রাহমা থেকে, যার অর্থ: দয়া। আরবিতে রাহমা শব্দটির আরেকটি অর্থ ‘মায়ের গর্ভ।’ মায়ের গর্ভে শিশু নিরাপদে, নিশ্চিন্তে থাকে। মায়ের গর্ভ শিশুর জীবনের সব মৌলিক চাহিদার ব্যবস্থা করে দেয়, শিশুকে আঘাত থেকে রক্ষা করে, শিশুর বেড়ে উঠার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেয়। শিশুর জন্য সকল দয়ার উৎস হচ্ছে তার মায়ের গর্ভ। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইঙ্গিত দিচ্ছেন আমাদের প্রতি তাঁর দয়া কি গভীর পর্যায়ের দয়া।

এখন রাহমান এবং রাহিম দুটো শব্দই এসেছে রাহমাহ থেকে, কিন্তু যেহেতু শব্দ দুটোর গঠন দুই ধরনের, তাই তাদের অর্থ দুই ধরণের দয়ার—

আররাহমা-ন

রাহমা-ন এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘আন’, তা প্রচণ্ডতা নির্দেশ করে। রাহমান হচ্ছে পরম দয়ালু, অকল্পনীয় দয়ালু। আল্লাহ تعالى তার একটি গুণ ‘আর-রাহমা-ন’ দিয়ে আমাদেরকে বলেছেন যে, তিনি পরম দয়ালু, তাঁর দয়ার কথা আমরা কখনও কল্পনা করতে পারব না।[১] একজন মা যেমন তার শিশুর জন্য সবরকম মৌলিক চাহিদা পূরণ করে, সবরকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে, আল্লাহ تعالى তার থেকেও বেশি দয়ার সাথে তাঁর সকল সৃষ্টিকে পালন করেন, রক্ষা করেন, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেন।

আল্লাহ تعالى তাঁর অসীম দয়া দিয়ে প্রকৃতিতে হাজারো ব্যবস্থা করে রেখেছেন পৃথিবীর সবধরনের প্রাণীর মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য। মানুষ হাজার বছর ধরে নানা ভাবে প্রকৃতির এই ব্যবস্থাগুলো ধ্বংস করেছে, চরম দূষণ করেছে, অবাধে মাত্রাতিরিক্ত গাছ, পশুপাখি নিধন করেছে। কিন্তু তারপরেও কোটি কোটি প্রাণী প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে বের হয় এবং ঠিকই খাবার খেয়ে ঘরে ফিরে। আমাদের গবাদি পশু, হাস-মুরগির কোনো অভাব হয় না, কারণ আল্লাহ تعالى পরম দয়ালু।

দ্বিতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, এটি কোনো কিছু এই মুহূর্তে হচ্ছে —তা নির্দেশ করে। যেমন আপনি যদি বলেন: “হাসান একজন উদার মানুষ”, তার মানে এই না যে হাসান এই মুহূর্তে কোনো উদার কাজ করছে, বা কাউকে কিছু দান করছে। কিন্তু রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, তা নির্দেশ করে এই মুহূর্তে আল্লাহ تعالى অকল্পনীয় দয়ালু।[১] তিনি আপনাকে, আমাকে, আমাদের পরিবারকে, সমাজকে, আমাদের দেশকে, আমাদের ছোট গ্রহটাকে, আমাদের ছায়াপথের ১০০ কোটি তারা এবং কোটি কোটি গ্রহকে, পুরো মহাবিশ্বের ১০০ কোটি ছায়াপথকে এবং তাদের প্রত্যেকটির ভিতরে কোটি কোটি তারা এবং গ্রহকে এই মুহূর্তে, একই সময়ে, একই সাথে দয়া করছেন।

তৃতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, এটি একটি অস্থায়ী ব্যাপার নির্দেশ করে। একই ধরণের কিছু শব্দ হল জাওআ’-ন (جوعان) যার অর্থ প্রচণ্ড খুধায় কাতর, আ’তশা-ন (عطشان) প্রচণ্ড পিপাসার্ত। এই ধরণের শব্দগুলোর প্রতিটি একটি অস্থায়ী ধারণা নির্দেশ করে, যা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন, খাবার খুধাকে দূর করে দেয়, পানি পিপাসাকে দূর করে দেয়। ঠিক একইভাবে আমরা যদি আল্লাহর تعالى অবাধ্য হই, তাহলে আল্লাহ تعالى তাঁর রহমতকে আমাদের উপর থেকে তুলে নিতে পারেন। আল্লাহর تعالى রহমত যে অস্থায়ী, তা রাহমা-ন শব্দটির গঠন নির্দেশ করে।[১]

আররাহি-ম

রাহি-ম এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘ইম’ −সেটা ‘সবসময় হচ্ছে’ এমন কিছু নির্দেশ করে। আল্লাহ تعالى নিরন্তর করুণাময় প্রভু। তিনি মানুষের মত অল্প করুণাময়, মাঝে মাঝে করুণাময় নন। আল্লাহ কিন্তু শুধুই বলতে পারতেন “তিনি পরম করুণাময়”, ব্যাস। কিন্তু একজন পরম করুণাময় কিন্তু সবসময় করুণা নাও দেখাতে পারেন। তিনি সকালে করুণা দেখালেন, রাতে আর দেখালেন না। কিন্তু না, তিনি নিরন্তর করুণাময়। তিনি প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে করুণা করছেন।[১]

আপনি যখন সকালে ফজরের এলার্ম বন্ধ করে নামাজ পড়বেন কিনা তা কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে আবার ঘুম দেন, তখন আপনার একটা হাত খুলে পড়ে যায় না। আপনি যখন একজন অন্ধ ফকিরের পাশ দিয়ে না দেখার ভান করে হেটে চলে যান, তখন কিন্তু আপনার চোখ দুটা নষ্ট হয়ে যায় না, কারণ আল্লাহ تعالى নিরন্তর করুণাময়। আপনি তাঁর এক মামুলি দাস হয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় তাঁর আদেশ অমান্য করে, তাঁকে আপনার পরিবারের সদস্যদের চাহিদা থেকে কম গুরুত্ব দিয়ে, ‘লোকে কী বলবে’ এই ভেবে ক্রমাগত তার আদেশ ভেঙ্গে যাবার পরেও তিনি আপনাকে প্রতিদিন ছেড়ে দেন। কারণ তিনি ‘রাহি-ম’ নিরন্তর করুণাময়।

আল্লাহ تعالى এই আয়াতে আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তাঁর মত একজন পরম দয়ালু, নিরন্তর দয়ালু প্রভু থাকতে, কেন আমরা অন্য কিছুকে ইলাহ হিসেবে নেব? কীভাবে আমরা এমন অবিবেচকের মতো কাজ করতে পারি? তিনি আল্লাহ تعالى, মহান সৃষ্টিকর্তা। মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা, প্রতিটি প্রাণ তিনি নিজে সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি অস্তিত্বের যত্ন তিনি নিজে নিচ্ছেন। প্রতিটি অস্তিত্ত্ব তাঁর উপর পুরোপুরি নির্ভর করে। তিনি সবাইকে সবকিছু দেন, কেউ কাউকে কিছু দেয় না। তাহলে কীভাবে আমরা অন্য কিছুকে আমাদের ইলাহ করে ফেলি?

এখন মূর্তিপুজারী, বহুইশ্বরবাদীরা (মুশরিক) দাবি করে, “উপাসনার যোগ্য একমাত্র একজন  —এর প্রমাণ কী? আমরা দাবি করছি উপাসনার যোগ্য অনেক সত্তা আছে। প্রমাণ দেখাও যে, উপাসনার যোগ্য একজনই।” —এর উত্তর আল্লাহ تعالى দিয়েছেন পরের আয়াতে।

সূত্র:

  • [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
  • [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
  • [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
  • [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
  • [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
  • [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
  • [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
  • [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
  • [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
  • [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
  • [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
  • [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
  • [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [১৫] তাফসির আল জালালাইন।

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *