তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো — আল-বাক্বারাহ ১০৪

আপনি একটি কনফারেন্সে এসেছেন একজন বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্টের কথা শুনতে। সেই বক্তার সম্পর্কে আপনি অনেক ভালো কথা শুনেছেন আগে। তাই আপনি বেশ আশা নিয়ে বসে আছেন যে, আজকে একটা ভালো অভিজ্ঞতা হবে, অনেক কিছু জানতে পারবেন। বক্তৃতা শুরু হলো। বক্তা তরুণ সমাজের বেহাল অবস্থা নিয়ে নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক মন্তব্য করছেন। তখন আপনার পাশের বন্ধু, যার অবস্থার সাথে বক্তার কথা বেশ মিলে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি বলা শুরু করল, “আরে গাধাটা বলে কি! ও কোথা থেকে এই সব আবোল তাবোল জিনিস শিখে এসেছে?” সাথে সাথে বক্তার উপর আপনার সব শ্রদ্ধা চলে গেল। বাকি সময়টা আপনিও বক্তার কথা পজেটিভলি বোঝার চেষ্টা না করে, উল্টো তার প্রতিটা কথায় দোষ ধরা শুরু করলেন।

ফেইসবুকে একদিন একটা ইসলামের উপর গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল লক্ষ করলেন, যা দেখে আপনার মনে হলো আর্টিকেলটা পড়া দরকার। পড়ার আগে আপনি একবার অন্যদের মন্তব্যগুলো দেখে নিলেন। কয়েকটা মন্তব্য পড়ে আপনি আর্টিকেলটা পড়তে প্রস্তুত। কিন্তু একটা মন্তব্যে আপনার চোখ আটকে গেল — “এইসব ফালতু গাঁজাখুরি কথাবার্তা কোথায় পান? যতসব গণ্ডমূর্খের দল।” ব্যাস, আপনার পড়ার প্রস্তুতি সব শেষ। আপনি আর্টিকেলটা পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন।

এই ধরণের অসন্মানজনক তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাটা আগে একদল ইহুদির অভ্যাস ছিল। ব্যাপারটা আল্লাহর تعالى কাছে এতটাই জঘন্য যে, তিনি একটি আয়াত নাজিল করে দিয়েছেন তাদের এই জঘন্য অভ্যাসটার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে—

2_104

তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, নবীকে “রাই’না” (আমাদের কথা শুনো) বলবে না, বরং অনুরোধ করবে “উনযুরনা” (আমাদের জন্য অপেক্ষা করুন) এবং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। যারা তা মানবে না, সেই কাফিরদের জন্য রয়েছে প্রচণ্ড কষ্টের শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ ১০৪]

listen

আল-বাক্বারাহ’র এর আগের আয়াতগুলোতে আল্লাহ تعالى একদল ইহুদীদের যত কুকর্ম আছে, সব ফাঁস করে দিয়েছেন। সেই আয়াতগুলো নাজিল হওয়ার পর, নবী عليه السلام তা মানুষের কাছে তিলাওয়াত করে সেই ইহুদীদের হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিতেন। তারা যে সব ভিত্তিহীন যুক্তি-তর্ক, কথার প্যাঁচ ব্যবহার করত: ইসলামের বাণীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে, নবীকে عليه السلام না মানার অজুহাত দেখাতো — সেই সব পদ্ধতি নবী عليه السلام সেই আয়াতগুলোর মাধ্যমে ফাঁস করে দিতেন। তখন সেই ইহুদীরা আর থাকতে না পেরে, নবীকে عليه السلام অসন্মান করে আজে বাজে কথা বলা শুরু করল।[৩]

তখনকার সময় মুসলিমরা নবিকে রাই’না বলে সম্বোধন করত। আরবিতে রাই’না رَٰعِنَا মানে হচ্ছে, “আমাদের কথা শুনো” বা “আমাদের দিকে তাকাও।”[১৯৩] কিন্তু ইহুদীদের হিব্রু ভাষায় (যা আরবির কাছাকাছি একটা ভাষা) রাই’না’র মত শুনতে শব্দগুলো হচ্ছে অনেকটা গালি দেওয়ার মত, যেমন, আমরা যদি বাংলায় বলি, “আরে গাধা, কী বলছি শুনো”, “শুনো, তুমি বধির হয়ে যাও।” এছাড়া রাই’না শব্দটিকে যদি লম্বা করে বলা হয় রাই’ইনা, তাহলে তার মানে দাঁড়ায়: “আমাদের রাখাল।”[৮] সেই ইহুদীরা রাই’নার উচ্চারণ বিকৃত করে নবীর عليه السلام পেছনে তাকে গালি দিয়ে বেড়াত। আর মুসলিমরা না বুঝে নবিকে عليه السلام রাই’না বলে সম্বোধন করে যেত। একইভাবে একদল ইহুদীরা হিব্রুতে বলত, “আসসামু আলাইকুম” (আসসালামু আলাইকুম নয়), যার অর্থ “তোমার উপরে মৃত্যু আসুক।”[৯][১৪]

এই ধরনের বেয়াদপির সামান্য গ্রহণযোগ্যতা আল্লাহর تعالى কাছে নেই—

“যারা তা মানবে না, সেই কাফিরদের জন্য রয়েছে প্রচণ্ড কষ্টের শাস্তি।”

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى এই ধরনের মানুষদেরকে কাফির বলেছেন। নবীকে عليه السلام এইভাবে গালি যে দেয়, সে কাফির, তার জন্য রয়েছে প্রচণ্ড কষ্টের শাস্তি।[৪] মুসলিমদের তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন, নবিকে عليه السلام সন্মানের সাথে ٱنظُرْنَا “উনযুরনা” বলে সম্বোধন করতে এবং তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে, যেন বার বার বলার প্রয়োজন না হয়। “উনযুরনা” এর অর্থ হচ্ছে অনেকটা: “বুঝতে পারিনি, আরেকবার বলবেন?” বা “আমাদের দিকে অনুগ্রহ করে লক্ষ করবেন?” উনযুরনা যদিও রাই’নার মত একই অর্থ বহন করে, কিন্তু একে অন্য কোনো ভাষায় বিকৃত করা যায় না।

নবিকে عليه السلام সন্মানের সাথে সম্বোধন করার এই নির্দেশ শুধু তখনকার যুগের সাহাবিদের বেলায়ই প্রযোজ্য নয়, বরং সকল যুগের সকল মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক।[২] আজকের যুগে অনেককে দেখা যায়, নবিকে অপমান করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ব্লগ খুলে যা-তা লিখে যাচ্ছেন। এরকম একজন ব্লগার তার অশ্লীল ব্লগের জন্য প্রাণও হারিয়েছেন। এই ধরনের সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তিকর কাজ করে মানুষের কোনো কল্যাণ তো হচ্ছেই না, বরং মানুষে-মানুষে সন্দেহ, বিতৃষ্ণা বাড়ছে, এবং তা থেকে মারামারি, এমনকি খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।

যদি সত্যিই কারো উদ্দেশ্য থাকে ইসলাম ধর্মকে ভুল প্রমাণ করার, তাহলে সে কু’রআনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে কু’রআনে অসামঞ্জস্য খুঁজে বের করলেই পারে? তাহলেই তো সে প্রমাণ করে দিতে পারবে যে, ইসলাম সত্য ধর্ম নয়। অযথা নবিদেরকে গালাগালি করে, মানুষকে সস্তা উত্তেজনার খোরাক দিয়ে তো তার আসল উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে না? সত্যিই সে যদি মানুষকে ‘সঠিক পথ’ দেখানোর ইচ্ছা রাখে, মানুষকে ‘ধর্মীয় অন্ধকার জগত’ থেকে বের করে ‘আধুনিকতার আলোতে’ নিয়ে আসতে চায়, তাহলে তার জন্য সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হচ্ছে আল্লাহর تعالى চ্যালেঞ্জের জবাব দেওয়া—

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلْقُرْءَانَ ۚ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُوا۟ فِيهِ ٱخْتِلَٰفًا كَثِيرًا

তারা কি এই কু’রআনকে নিয়ে চিন্তা করে না? যদি এটা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আসতো, তাহলে তারা এর মধ্যে অনেক অসামঞ্জস্য খুঁজে পেত। [আন-নিসা ৪:৮২]

কিন্তু সেটা না করে, কাপুরুষের মত নকল ফেইসবুক প্রোফাইল, ব্লগের আড়ালে লুকিয়ে থেকে, নিজের নাম গোপন করে আজে বাজে কথা বলে যায়। এরা এতটাই ভিতু যে, নিজেদের আসল পরিচয় পর্যন্ত মানুষের কাছে প্রকাশ করে না।

মানুষ কেন অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে?

ড: মানন, তার The Fundamentals of Psychology বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন কেন আমরা অন্যদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি—

“In order to preserve our honor, we may try to substitute our defeats or shortcomings by blaming others for them. For instance, if we fail an exam we blame the teacher for the questions given; or if we cannot get promoted to a position, we put the position down or slander those who occupy it. Or we may hold others responsible for our inability while in fact they are not.”

“আমাদের আত্মসন্মান বজায় রাখার জন্য আমরা অনেক সময় নিজেদের পরাজয়কে ঢাকা দেই অন্যদেরকে দোষ দিয়ে। যেমন, আমরা যখন পরীক্ষায় ফেল করি, দোষ দেই শিক্ষকে, কঠিন প্রশ্ন করার জন্য। যদি কোনো পজিশনে প্রমোশন না পাই, তখন আমরা সেই পজিশনটাকে খারাপ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করি। যে সেই প্রমোশনটা পেয়েছে, তার নামে আজেবাজে কথা ছড়াই। আবার অনেক সময় আমাদের দুর্বলতার জন্য আমরা অন্যকে দায়ী করি, যেখানে অন্যের কোনোই ভুমিকা নেই।”

যাদেরকেই দেখবেন অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলছে, নিজেকে সব বিষয়ে সবজান্তা বলে জাহির করছে, অন্যদেরকে—যারা হয়ত সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ—তাদেরকে হেয় করে লেখালেখি করছে, এদের প্রত্যেকের কোনো না কোনো মানসিক দুর্বলতা বা মানসিক সমস্যা রয়েছে। যারা এই ধরনের কাজ করে আনন্দ পায়, তারা মানসিকভাবে বিকৃত এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এরা নোংরা সব জিনিসে আসক্ত; পরিবারের সাথে সম্পর্ক খারাপ; সারাদিন রাস্তায় বখাতে ছেলে-মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়ায়; ফোনে সারাদিন মানুষের সাথে মানুষের কথা লাগায়; টিভি, ভিডিও গেম, মুভি, ফেইসবুকে বুঁদ হয়ে থাকে। এই ধরনের মানুষদের থেকে সাবধান। সাইকোলজির ভাষায় একে Narcissism (নারসিসিজম) বা নারসিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বলে।[১৯৪]

নিজেদের ভেতরে হীনমন্যতায় ঘেরা হতাশায় ভোগা এই সব নারসিসিস্টিক মানুষগুলো সবসময় চেতন, অবচেতনভাবে অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, আজেবাজে আপত্তিকর কথা বলে নিজেদেরকে সবজান্তা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করে। যদিও বিজ্ঞান আজকে খুঁজে পেয়েছে যে, এই ধরনের নারসিসিজমে ভোগা কিছু মানুষের সমস্যা আসলে neurotic বা তারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ। কিন্তু বেশিরভাগই আসলে চরম আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতার মানুষ, যারা নিজেদেরকে মনে প্রাণে অন্যদেরকে থেকে সবদিক দিয়ে বড় মনে করে।[১৯৪]

এই ধরনের নারসিসিজম ভয়াবহ আকার ধারণ করে একসময় Malignant Narcissism (ম্যালিগন্যান্ট নারসিসিজমে)[১৯৪] পরিণত হয়, যখন তার দেমাগ, অহংকার, আত্তকেন্দ্রিকতা শুধুমাত্র কিছু গলাবাজি থেকে একসময় লেখালেখি, কাজে পরিণত হয়। একসময় সে ইন্টারনেটে ব্লগ খুলে, পত্রিকায় কলামে বা ফেইসবুকে মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আজেবাজে কথা লেখা শুরু করে। নবিদেরকে নিয়ে কৌতুক, গালাগালি করা শুরু করে। এমনকি আল্লাহকে تعالى নিয়েও নোংরা কথা লেখার আস্পর্ধা দেখায়। মানুষের দেহে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার মতই এরা তখন সমাজের মধ্যে একটা ক্যান্সার হয়ে যায়। তখন এদেরকে কেটে ফেলে না দিলে বাকি সমাজে ইনফেকশন ছড়িয়ে যেতে থাকে।

সন্মান — ক্রমাগত হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি 

আজকে বিংশ শতাব্দীতে মানুষের একে ওপরকে সন্মান করা দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অনেক কমে গেছে। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিতে মগজ ধোলাই হওয়া কিশোর তরুণরা বয়সে বড়দেরকে সন্মান করা ভুলে গেছে। কারণ পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিতে মানুষের বয়স তাকে কোনো সন্মান দেয় না। সেই সংস্কৃতিতে একটা আঠারো বছরের ছেলের, আর একজন পঞ্চাশ বছরের প্রবীণ মানুষের সন্মান একই, যদি সেই প্রবীণ মানুষটার ছেলেটার থেকে বেশি টাকাপয়সা, গাড়িবাড়ি, উচ্চপদ এসব কিছু না থাকে। তাদের দৃষ্টিতে সন্মান সম্পূর্ণ নির্ভর করে মানুষের সম্পদ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তির উপর। সেখানে বয়সের কোনো ব্যাপার নেই।

পাশ্চাত্যের চলচ্চিত্র, টিভি সিরিয়াল দেখে আজকের যুগের কিশোর তরুণদের যখন মগজ ধোলাই হয়ে যায়, তখন আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ, ইসলামের শিক্ষা আর তার ভেতরে স্পর্শ করতে পারে না। তখন তাদেরকে দেখা যায় বৃদ্ধ একজন রিকশাওয়ালাকে রাস্তায় সবার সামনে চড় মারতে। বাসায় বয়স্ক কাজের বুয়াকে কিল, লাথি মারতে। এমনকি বাবা-মাকে অহরহ আঘাত করে, একসময় হত্যা করার ঘটনাও আজকাল ঘটতে দেখা যাচ্ছে।

ইসলামে ‘সন্মান’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। ইসলাম বয়সে বড় সবাইকে সন্মান করতে বলে। এখানে কোনো টাকাপয়সা, গাড়ি বাড়ি, উচ্চপদের কোনো দরকার নেই। বয়সে বড় সবাইকে আমরা সন্মান করি, সে একজন রিকশাচালক হোক, এইজন সুইপার হোক, আর একজন অশিক্ষিত কাজের লোকই হোক না কেন। আমাদের নবী عليه السلام ছিলেন নিরক্ষর। সুতরাং নিরক্ষর বা অশিক্ষিত কাউকে অসন্মান করার প্রশ্নই উঠে না। বরং আল্লাহ تعالى একজন নিরক্ষর মানুষকে সর্বকালের সবচেয়ে সফল মানুষ হিসেবে প্রেরণ করে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, এই পৃথিবীতে এবং আখিরাতে সফল হওয়ার জন্য উচ্চ শিক্ষা, ধনসম্পদ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি কোনো শর্ত নয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষ সন্মানিত, কারণ আল্লাহ নিজে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, যোগ্যতা নির্বিশেষে সব আদম সন্তানকে সন্মান দিয়েছেন—

وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِىٓ ءَادَمَ

নিশ্চয় আমি সকল আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি… [আল-ইসরা ১৭:৭০]

إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে—যাতে করে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। [আল-হুজরাত ৪৯:১০]

মানুষের সাথে সুন্দরভাবে, সন্মানের সাথে কথা বলা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এই ব্যাপারে কু’রআনে একটা-দুটা নয়, অনেকগুলো আয়াত রয়েছে, যেখানে কিনা রমজানে রোযা রাখার উপর পুরো কু’রআনে আয়াত রয়েছে মাত্র একটি। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন—

  • যে কোনো মানুষের সাথে কথা বলার সময় ভদ্র, মার্জিত ভাবে কথা বলবে – ২:৮৩।
  • কোনো ভণিতা না করে, ধোঁকা না দিয়ে, যা বলতে চাও পরিস্কার করে বলবে – ৩৩:৭০।
  • চিৎকার করবে না, কর্কশ ভাবে কথা বলবে না, নম্র ভাবে কথা বলবে – ৩১:১৯।
  • মনের মধ্যে যা আছে সেটাই মুখে বলবে– ৩:১৬৭।
  • ফালতু কথা বলবে না এবং অন্যের ফালতু কথা শুনবে না। যারা ফালতু কথা বলে, অপ্রয়োজনীয় কাজ করে সময় নষ্ট করে তাদের কাছ থেকে সরে যাবে – ২৩:৩, ২৮:৫৫।
  • কাউকে নিয়ে উপহাস করবে না, টিটকারি দিবে না, ব্যঙ্গ করবে না – ৪৯:১০।
  • অন্যকে নিয়ে খারাপ কথা বলবে না, কারো মানহানি করবে না – ৪৯:১০।
  • কাউকে কোন বাজে নামে ডাকবে না। – ৪৯:১০।
  • কারো পিছনে বাজে কথা বলবে না – ৪৯:১২।
  • যাদেরকে আল্লাহ বেশি দিয়েছেন, তাদেরকে হিংসা করবে না, সে যদি তোমার নিজের ভাই-বোনও হয় – ৪:৫৪।
  • অন্যকে কিছু সংশোধন করতে বলার আগে অবশ্যই তা নিজে মানবে। কথার চেয়ে কাজের প্রভাব বেশি – ২:৪৪।
  • কখনও মিথ্যা কথা বলবে না – ২২:৩০।
  • সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঘোলা করবে না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করবে না – ২:৪২।
  • যদি কোন ব্যপারে তোমার সঠিক জ্ঞান না থাকে, তাহলে সে ব্যপারে মুখ বন্ধ রাখো। তোমার মনে হতে পারে এসব সামান্য ব্যপারে সঠিকভাবে না জেনে কথা বললে অত সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি জানো না সেটা হয়ত আল্লাহর কাছে কোনো ভয়ঙ্কর ব্যপার – ২৪:১৪, ২৪:১৬।
  • মানুষকে বিচক্ষণভাবে, মার্জিত কথা বলে  আল্লাহর পথে ডাকবে। তাদের সাথে অত্যন্ত ভদ্র, শালীনভাবে যুক্তি তর্ক করবে – ১৬:১২৫।

সূত্র:

  • [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
  • [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
  • [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
  • [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
  • [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
  • [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
  • [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
  • [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
  • [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
  • [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
  • [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
  • [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
  • [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [১৯৩] رَٰعِنَا শব্দের আভিধানিক অর্থ — http://ejtaal.net/aa/img/br/3/br-0396.png
  • [১৯৪] Malignant Narcissism — http://www.manipulative-people.com/malignant-narcissism/http://www.psychologytoday.com/conditions/narcissistic-personality-disorder

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *