যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের অবস্থা কঠিন করে দিতে পারতেন — আল-বাক্বারাহ ২২০

আমাদের যাদের ছোট বাচ্চা আছে, তারা জানি দিনের মধ্যে কতবার তারা বাবা-মাকে ডাকে। বাবা-মা কিছুক্ষণের জন্য চোখের আড়াল হলেই তারা অস্থির হয়ে ‘বাবা! মা!’ ডাকাডাকি শুরু করে। আর আজকের নিষ্ঠুর সমাজে অল্প বয়সে বাবা-মা হারিয়ে ফেলা একটি ছোট বাচ্চা একা কীভাবে বেঁচে থাকে, কী খায়, কোথায় ঘুমায়, জ্বর হলে কে তাকে মাথায় পানি ঢেলে দেয়, কে তাকে কোলে নিয়ে হাঁটে —এগুলো নিয়ে আমরা কতখানি ভাবি? সারাদিন আমাদের মনের কোনায় চিন্তা চলতে থাকে: নিজের বাচ্চাকে কী খাওয়াবো, কখন ঘুম পাড়াবো, কোথায় পড়াবো, কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবো, কী কিনে দেবো — আর ওদিকে লক্ষ লক্ষ ছোট বাচ্চারা বাবা-মা ছাড়া একা বড় হচ্ছে চরম অবহেলা, অনাদরে, মানুষের নিষ্ঠুর ব্যবহার সহ্য করে।

মানুষের জন্য কল্যাণ করা ইসলামের মূলভিত্তিগুলোর একটি। কু’রআনে আল্লাহ تعالى বহু আয়াতে বহুভাবে আমাদেরকে বলেছেন যে, শুধু নামাজ, রোজা, হাজ্জ ইত্যাদি ধর্মীয় রীতিনীতিগুলো পালন করলেই হবে না, একইসাথে আমাদেরকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, সামাজিক, নৈতিক দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে। এতিমদের কথা কু’রআনে বহুবার এসেছে, কারণ আল্লাহর تعالى কাছে এতিমদের গুরুত্ব অনেক বেশি। বাবা-মা হারিয়ে ফেলা এতিমের থেকে বেশি আর কেউ আমাদের সামাজিক সেবার দাবীদার হতে পারে না। এতিমদের প্রতি মুসলিমদের দায়িত্ব কতখানি, কীভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে, করার পুরষ্কার এবং না করার শাস্তি সম্পর্কে আমাদের বহুবার সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। এরকম একটি আয়াত হলো—

2_220_title

2_220

দুনিয়া এবং আখিরাতের ব্যাপারে চিন্তা করো। ওরা তোমাকে এতিমদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, “তাদের জন্য সুব্যবস্থা করাটা তোমাদের জন্যই উত্তম। যদি তাদের সাথে একসাথে থাকো, তাহলে তারা তোমাদের ভাইবোন। আল্লাহ জানেন কে অনিষ্টকারী, আর কে উপকারী। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের অবস্থা কঠিন করে দিতে পারতেন। নিঃসন্দেহে তিনি সমস্ত ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের অধিকারী, পরম প্রজ্ঞাবান।” [আল-বাক্বারাহ ২২০]

তাদের জন্য সুব্যবস্থা করাটা তোমাদের জন্যই উত্তম  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

মানুষের মাঝে এমন লোক আছে, জীবন সম্পর্কে যার দৃষ্টিভঙ্গি শুনলে তুমি মুগ্ধ হবে — আল-বাক্বারাহ ২০৪-২০৬

আগামী নির্বাচনের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী আলহাজ্ব চৌধুরী সাহেব মসজিদে জুমুআহ’য় মাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচনে দেওয়া কিছু প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তিনি কথা বলবেন, “ভাই সব, আমি আপনাদের এলাকারই সন্তান। এই এলাকার আলো, মাটি, বাতাস খেয়ে আমি বড় হয়েছি। আমি এই বছর হজ্জে গিয়ে আল্লাহর কাছে অনেক কান্নাকাটি করেছি, আমাকে তিনি যেন এলাকার খেদমত করার সম্মান দেন। আপনারা যদি আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে আমি এই এলাকার চেহারা পালটিয়ে দেবো ইন-শাআ-আল্লাহ। এলাকায় এতিমখানা হবে, মাদ্রাসা হবে, এই মসজিদের উপরে দুই তলা হবে সবার আগে। এলাকায় আমি নষ্ট সংস্কৃতি মোটেও ঢুকতে দেবো না। এলাকার ক্যাবল অপারেটরদের সব হিন্দি চ্যানেল বন্ধ করে দিতে বলবো। আমি আল্লাহর تعالى শপথ করে বলছি, আমাদের এই এলাকা দুই বছরের মধ্যে হয়ে যাবে পবিত্র মদিনা শহরের এক প্রতিচ্ছবি।” —বিপুল করতালি এবং ‘আল্লাহু আকবার’ এর মধ্য দিয়ে তার ভাষণ শেষ হয়।

2_2042_205

মানুষের মাঝে এমন লোক আছে, জীবন সম্পর্কে যার দৃষ্টিভঙ্গি শুনলে তুমি মুগ্ধ হবে। সে আল্লাহর تعالى শপথ নিয়ে বলে তার মনে কী আছে। অথচ দেখা যায় সে একজন চরম ঝগড়াটে প্রতিদ্বন্দ্বী। যখন সে কাজে ফিরে যায়, সে দ্রুত চেষ্টা করে যেন অনিষ্ট করতে পারে, যেন ধ্বংস করতে পারে শস্য ফলন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। আল্লাহ تعالى কোনো ধরনের অনিষ্ট করা পছন্দ করেন না। [আল-বাক্বারাহ ২০৪-২০৫]

নির্বাচন শেষ। চৌধুরী সাহেব জয়ী হয়েছেন। তার আলিশান ড্রয়িং রুমে তিনি তার ‘সোনার ছেলেদের’কে রাতের পার্টির আয়োজনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছেন, “রাতে ফাইভ স্টার হোটেলের সব ব্যবস্থা ঠিক আছে? মন্ত্রী সাহেব আসবেন ঠিক আটটায়। বিদেশি গায়িকারা যেন আগে থেকেই গান শুরু করে না দেয়। কাস্টমস থেকে রঙিন পানি ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিস তো? স্যার কিন্তু বিদেশি ব্র্যান্ড ছাড়া কিছু পান করেন না। আর এলাকার ডেভেলপারদেরকে আগামীকাল ডাক। এলাকায় যত কাজ হচ্ছে, তার সবগুলোর তালিকা চাই। কে আমাকে কত দিবে, তার উপর নির্ভর করবে, কে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। আর আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর ড্রাইভারটা গত কালকে আমাকে দেখে সালাম দেয়নি। ওর একটা পা ভেঙ্গে দিয়ে আয়।”

2_204-205

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

বারোটি ঝর্ণা বের হয়ে আসলো – আল-বাক্বারাহ ৬০

ওয়াশিংটন ডিসি। ইউনাইটেড নেশনসের কনফারেন্স চলছে। কীভাবে পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থার উন্নতি করা যায়: এনিয়ে অনেক বড় বড় উদ্যোক্তা এসেছেন বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে। WaterAid Sweden-এর চেয়ারম্যান দাঁড়ালেন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য।[১০] তিনি তার সামনে রাখা একটা পানির গ্লাস হাতে তুলে বললেন–

This is a luxury, a dream for more than 800 million people in the world.
এটা একটা বিলাস সামগ্রী। আজকে পৃথিবীতে ৮০ কোটির বেশি মানুষ স্বপ্ন দেখে এটাকে পাওয়ার।

আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি আমাদেরকে পানি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা শেখাবে—

2_60

মনে করে দেখো, যখন মূসা তার লোকদের জন্য পানির দু’আ করেছিল এবং আমি তাকে বলেছিলাম, “পাথরটাকে তোমার হাতের লাঠি দিয়ে বাড়ি দাও।” সাথে সাথে বারোটা পানির ঝর্ণা ফেটে বেরিয়ে আসলো। প্রত্যেক গোত্র ঠিকভাবে তাদের পানের জায়গা চিনে গেল। “খাও এবং পান করো, যা আল্লাহ তোমাদেরকে জোগান দিয়েছেন। আর কুকর্ম করবে না, দুনিয়াতে দুর্নীতি ছড়াবে না।”

  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)