বেশি-বেশি পাওয়ার প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে—আত-তাকাছুর

বেশি-বেশি পাওয়ার প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরে পৌঁছে যাও।
না! তোমরা একদিন জানতে পারবে।
আবারো বলছি, না! তোমরা একদিন জানতে পারবে।
সত্যিই, তোমরা যদি নিশ্চিতভাবে জানতে কী ঘটবে।
তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখতে পাবে। আবারো বলছি, তোমরা অবশ্যই নিজের চোখে তাকে দেখতে পাবে।
তারপর, সেদিন সুযোগ-সুবিধাগুলোর ব্যাপারে তোমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে। —আত-তাকাছুর

বেশি-বেশি পাওয়ার প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে

“বন্ধুবান্ধব সব এতদিনে নিজের বাড়ি-গাড়ি করে ফেলেছে। আমি এখনও ভাড়াটিয়া বলে মানুষের কথা শুনছি। ওদের বাসায় বেড়াতে গেলে নিজেকে ফকির-ফকির মনে হয়। আর না। এবার বাড়ি কেনার ঋণটা নিতেই হবে।”

“অনেক হয়েছে, আর না। পুরনো গাড়িটা ফেলে দিয়ে এবার একটা নতুন গাড়ি কিনবোই। প্রতিবেশির বড় গাড়িটার পাশে আমার গাড়িটাকে একটা টেম্প্যু মনে হয়।”

“আমার পুরনো আমি-ফোনটা মানুষের সামনে বের করতে লজ্জা লাগে। সবাই যেন কেমন-কেমন করে তাকায়। আজকাল সবার হাতে আমি-ফোন ৭। পাশের বাড়ির কাজের মেয়েটার হাতেও আমার থেকে নতুন মডেলের ফোন!”

এই যে লোক দেখানোর প্রতিযোগিতার মানসিকতা—অন্যদের থেকে ভালো বাড়ি, গাড়ি কিনতে হবে। সব দামি ব্রান্ডের জিনিস ব্যবহার করি দেখাতে হবে—বেশি-বেশি পাওয়ার এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা হচ্ছে আত-তাকাছুর (التَّكَاثُر)।[১][৪]

একসময় আমরা অনেক কাটখোর পুড়িয়ে বাড়ি কিনি। মানুষকে গর্ব করে দেখাই নতুন কেনা দামি আসবাবপত্র, ঝকঝকে বাথরুম। কিন্তু কয়েক বছর না যেতেই সেই স্বপ্নের বাড়ির উপর থেকে মন উঠে যায়। বেড়াতে গিয়ে অন্যের বাড়ির আসবাবপত্র, বাথরুম দেখে আফসোস শুরু হয়। আবার হয়তবা একদিন শখের ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনি। মানুষকে বলে বেড়াই, “এবার গাড়িটা কিনেই ফেললাম। বেশি না, মাত্র ৩৫ লাখ। সস্তায় পেয়ে গেছি, কী বলেন?” তারপর কয়েক বছর না যেতেই বন্ধুর নতুন গাড়ির সামনে সেটাকে লক্কড় মনে হয়। একসময় সবাইকে গর্ব করে দেখিয়ে বেড়ানো নতুন মোবাইল ফোনটা দুই বছর না যেতেই টেবিল থেকে সরিয়ে পকেটে লুকিয়ে রাখতে হয়। এত চেষ্টা করে এতসব পাওয়ার পরেও বেশিদিন প্রাপ্তির সুখ ধরে রাখা যায় না। শুরু হয় আবার প্রতিযোগিতার দৌড়।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

ভালো কাজে এগিয়ে থাকার জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করো — আল-বাক্বারাহ ১৪৮

চারিদিকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র, ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি, টিভিতেও মুসলিমদের অবমাননা, সরকারগুলোর ইসলামী দলগুলোকে মেরে শেষ করে ফেলা,  ইন্টারনেটে নবী, রাসুল (তাঁদের সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) কে অপমান করে হাজারো ওয়েবসাইট, মাযহাবে-মাযহাবে ষড়যন্ত্র, ঝগড়াঝাটি, মারামারি, ইলিউমিনাটি, সিক্রেট সোসাইটি, কন্সপিরেসি থিওরি  —এত সব ব্যাপার দেখে মুসলিমরা অনেক সময় ঘাবড়ে যায়। দিনরাত চিন্তা করতে থাকে- এত বিরাট সংঘবদ্ধ শত্রুর বিরুদ্ধে কীভাবে মোকাবেলা করবে? কীভাবে সবাইকে প্রতিহত করে নিজেদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করবে? কীভাবে ‘খিলাফত’ নিয়ে আসবে?

দিনরাত দুশ্চিন্তায় তাদের ঘুম হয় না। সারাদিন ইন্টারনেট ঘেঁটে এইসব নিয়ে পড়তে পড়তে তাদের চোখ গর্তে ঢুকে যায়। চারিদিকে এত মিথ্যা, প্রতারণা, বিরোধ, ষড়যন্ত্র দেখে তারা আশা হারিয়ে ক্যান্সার রুগীর মত শুকিয়ে যায়। নেতিবাচক কথা, চিন্তার ভারে ন্যুব্জ হয়ে যায়। এদেরকে আল্লাহ পরামর্শ দিচ্ছেন—

2_148_title

2_148
প্রত্যেকের আপন লক্ষ্য রয়েছে, যেদিকে সে ঘুরে দাঁড়ায়। তাই ভালো কাজে এগিয়ে থাকার জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, আল্লাহ تعالى তোমাদেরকে এক জায়গায় করবেন। অবশ্যই আল্লাহর تعالى যেকোনো কিছু করার ক্ষমতা আছে। [আল-বাক্বারাহ ১৪৮]

ইসলামের বিরুদ্ধে কে, কী করছে, এই সব নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, আমাদেরকে প্রতিযোগিতা করতে হবে- আমরা কে, কত বেশি ভালো কাজ করতে পারি। আল্লাহ প্রত্যেককে বিশেষ লক্ষ্য দিয়েছেন। আমাদেরকে সেই লক্ষ্য উপলব্ধি করে চেষ্টা করে যেতে হবে সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার।[৬][২] এর জন্য দিনের পর দিন বসে থাকলে হবে না, প্রতি মুহূর্তে প্রতিযোগিতা করতে হবে। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ভালো কাজে দ্রুত চেষ্টা করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন। বসে বসে সময় নষ্ট করলে আল্লাহর تعالى প্রতি অবাধ্যতা দেখানো হবে। আমাদের উপর থেকে আল্লাহর تعالى দেওয়া সময়ের বরকত চলে যাবে।[৪]

আমাদের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। দুনিয়াতে আমাদের সেই প্রতিযোগিতার সময়সীমা প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই শেষ ঘণ্টা বাজল বলে…  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)