তোমরা কি ধরে নিয়েছ যে, কষ্ট না করে এমনিতেই তোমরা জান্নাতে চলে যাবে? — আল-বাক্বারাহ ২১৪

অনেক সময় আমাদের ভেতরে একটা দাবি চলে আসে যে, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, যাকাত দেই, মাঝে মাঝে দান-খয়রাত করি, ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করি, তাহলে আমার জীবনে আবার কষ্ট আসবে কেন? মুসলিমের জীবন তো সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যের হওয়ার কথা? আল্লাহর تعالى বান্দাদের জীবনে তো কোনো বড় ধরনের কষ্ট পাওয়ার কথা না?

জীবনে ছোটখাটো কষ্ট মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু নিকটজনকে ‘অকালে’ হারানো, চাকরি চলে যাওয়া, ব্যবসা ধ্বসে পরিবার নিয়ে পথে বসা, নিজের কঠিন অসুখ হওয়া, সন্তান বখে যাওয়া, বাবা-মার কঠিন অসুখ, দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ হয়ে দিনের পর দিন না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করা —এইসব কঠিন সমস্যা তো শুধু অমুসলিমদের হওয়ার কথা? মুসলিমদের জীবনে তো কখনো এত বড় বিপদ হওয়ার কথা নয়? আমরা না সঠিক ধর্ম মানছি?

—এই ধারণা মুসলিমদের ভেতরে কীভাবে চলে এসেছে, তা আমাদের জানা নেই, কারণ কু’রআন পড়লে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে, মুসলিমদেরকে জীবনে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে দেখা হবে তারা নামে-মুসলিম, নাকি কাজেও মুসলিম—

2_214_title

2_214

তোমরা কি ধরে নিয়েছ যে, আগের প্রজন্মের মতো কষ্ট না করে এমনিতেই তোমরা জান্নাতে চলে যাবে? আগের প্রজন্মকে দুর্দশা-দারিদ্রতা, কষ্ট-যন্ত্রণা আঘাত করেছিল এবং তাদেরকে এতটাই কাঁপিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, তাদের মধ্যে যে রাসুল ছিল, সে এবং তার সাথের বিশ্বাসীরা পর্যন্ত বলে উঠেছিল, “কবে আল্লাহর تعالى সাহায্য আসবে?” কোনো সন্দেহ নেই, আল্লাহর تعالى সাহায্য একদম কাছেই। [আল-বাক্বারাহ ২১৪]

আমাদের জীবনে প্রায়ই কষ্ট, দুর্দশা আসে। তখন আমরা অনেকেই দিশেহারা হয়ে যাই। কাউকে তখন ভাগ্য, যোগ্যতার অভাব অথবা কপালকে দোষ দিতে দেখা যায়। আবার কারো বেলায় সেটা অন্য কারো দোষ: সমাজের দোষ, দেশের দোষ, সরকারের দোষ, না হলে বউয়ের দোষ। অনেককে আবার নানা ধরনের দার্শনিক প্রশ্ন করতে দেখা যায়: “আমার কেন এরকম হলো? আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, সারাজীবন মানুষের সেবা করেছি। তাহলে আমার কপালে এত দুঃখ-কষ্ট কেন?” একজন মুসলিম যখন মুখে বলে “আমি আল্লাহর تعالى উপর আস্থা রাখি”, আসলে কতখানি সে নিজে সেটা বিশ্বাস করে, তা এধরনের পরিস্থিতিতে পড়লেই বের হয়ে আসে।

—এধরনের আহাজারি, দোষারোপ করে কোনো লাভ হয় না। বরং নেতিবাচক কথা এবং চিন্তা আমাদের মানসিক অবস্থাকে আরও খারাপ করে দেয়। নিজের ভেতরের তিক্ততা অন্যের মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়। অন্যদের জন্য সে তখন মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যরা তখন তাদের মন খারাপ হয়ে যাওয়ার ভয়ে এই ধরনের মানুষদের এড়িয়ে চলে।

অথচ একজন মুসলিমের কখনোই এভাবে চিন্তা করার কথা না। মুসলিমদের যে ধরনের মানসিকতা থাকার কথা, যা থাকলে একজন মুসলিম যে কোনো বিপদ, কষ্টের সময় হাসিমুখে পার করতে পারে, তা আল্লাহ تعالى আল-বাক্বারাহ’র আগে দুটি আয়াতে আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন—

الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّـهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴿١٥٦﴾ أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ ﴿١٥٧﴾

দুর্দশা আঘাত করলে যারা সাথে সাথে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই تعالى সম্পত্তি, আর অবশ্যই আমরা আল্লাহর تعالى কাছেই ফিরে যাচ্ছি।” এরাই হচ্ছে তারা, যাদের জন্য বিশেষভাবে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে অভিবাদন এবং অনুগ্রহ। আর এরাই তারা, যারা সঠিক পথ পেয়ে গেছে। [আল-বাক্বারাহ ১৫৬-১৫৭]

আগের প্রজন্মকে দুর্দশা-দারিদ্রতা, কষ্ট-যন্ত্রণা আঘাত করেছিল  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)