যেমন আমি তোমাদেরই মধ্যে থেকে একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনায়, পবিত্র করে, বিধি-বিধান এবং প্রজ্ঞা শেখায়। আর শেখায় যা তোমরা কখনো জানতে না। [আল-বাক্বারাহ ১৫১]
মানুষকে ইসলামের দাওয়াহ দেওয়ার সময় যারা দাওয়াহ দেন, তাদেরকে এই তিনটি বাধা পার করতে হয়—
১) তুমি কে? তোমার কথা আমি কেন শুনবো?
২) তোমার ধর্ম কি আমার ধর্মের থেকে বেশি সঠিক? তুমি কি মনে করো যে, তুমি সঠিক পথে আছে, আর আমরা সবাই ভুল পথে আছি?
৩) আমাদেরকে কেন সবদিক থেকে তোমাদের মতোই হতে হবে?
নবী, রাসূলদেরকে এই বাধাগুলো পার করতে হয়েছে। তাদেরকে এমন সব সময়ে, এমন সব মানুষের কাছে পাঠানো হয়েছিল, যারা একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একশ্রেণীর মানুষের চরম অন্যায়ের কারণে আরেক শ্রেণীর মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও নবী, রাসূলরা অত্যাচারিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এই কঠিন বাধাগুলোকে অতিক্রম করে অত্যাচারী মানুষগুলোকে পথ দেখিয়ে গেছেন।
এখন আমাদের কাছে যদি বাইরের দেশ থেকে কেউ এসে ধর্ম প্রচার করা শুরু করে, তাহলে প্রথমেই আমাদের মনে হবে যে, সে কোথাকার কে, যে আমাদেরকে ধর্ম শেখাতে এসেছে? সে কীভাবে বুঝবে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের মানসিকতা, আমাদের সীমাবদ্ধতা? তার দেশে অনেক কিছু চলতে পারে, যেটা আমাদের দেশে চলবে না। আবার আমাদের অনেক কিছুই তার সংস্কৃতি অনুসারে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। আমাদেরকে কি সব দিক থেকে তার মতো, তার দেশের মানুষের মতো হতে হবে নাকি?
একারণে যখন কোনো নবী বা রাসুল তাদের এলাকার মানুষের মাঝে বড় হয়ে, তাদেরই মাঝে ধর্ম প্রচার করতেন, তখন তাদেরকে এই সমস্যাটার সম্মুখীন হতে হতো না। তারা তাদের আশেপাশের মানুষের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, মানসিকতা ভালো করে বুঝতেন এবং সে অনুসারে তাদেরকে ধর্ম শেখাতে পারতেন। একারণে একজন বাঙালি দাঈ যতটা না ভালোভাবে বাঙালীদের মাঝে ইসলামের শিক্ষা প্রচার করতে পারবেন, মানুষকে বোঝাতে পারবেন, মানুষের ভেতরে পরিবর্তন আনতে পারবেন, একজন আরব বা ইংরেজ দাঈ সেভাবে পারবেন না। ভাষা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আদব-কায়দা একটা বিরাট বাধা হয়ে থাকবে সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতার পথে।