আমাদের সন্তানদের কেউ যদি মেধাবী হয়, তাহলে তাকে ডাক্তার বানাই। তারচেয়ে কম মেধাবীটা হয় ইঞ্জিনিয়ার। আরেকটু কম হলে বাংলা বা ইংলিশে পড়ে। আর যেটার অবস্থা একেবারেই খারাপ, সেটাকে আমরা মাদ্রাসায় দেই, ইমাম সাব বানাই। আমাদের মধ্যে কোনো এক অদ্ভুত কারণে একটা ধারণা আছে যে, সম্পূর্ণ ইসলাম বিবর্জিত সেকুলার শিক্ষায় ছেলেমেয়েরা বড় হলে নিজেরাই সৎ, আদর্শ মানুষ হবে, দুনিয়ায় শান্তিতে থাকবে। দুনিয়ায় শান্তিতে থাকাটাই আসল কথা। পরে কী হবে তা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। ছেলেমেয়েদেরকে অত ইসলাম শেখানোর প্রয়োজন নেই। ইসলাম শিখে হবেটা কী? ইসলাম কী ছেলেমেয়েকে বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ, সন্মান, উচ্চশিক্ষা —এসব কিছু দেবে?
তারপর তারা বড় হয়। ডাক্তারটা একসময় গিয়ে ১ লাখ টাকার অপারেশন করে ৫ লাখ টাকায়। বছর খানেকের মধ্যে কোটিপতি হয়ে বিদেশে চলে যায়। ওদিকে সেই ৫ লাখ টাকার বিল দিতে গিয়ে রোগীর পরিবার লোণে জর্জরিত হয়ে, পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করে, অভাবে, কষ্টে, দুশ্চিন্তায় বছরের পর বছর পার করে। ইঞ্জিনিয়ারটা বড় হয়ে বিরাট অঙ্কের ঘুষ খেয়ে প্রজেক্ট করে। সেই ঘুষের টাকা দিয়ে সে বাড়ি-গাড়ি করে, আর তার ছেলেমেয়েরা ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়ে থার্টি-ফার্স্ট নাইটে ড্রিঙ্ক করে মাতলামি করে। বাংলা, ইংরেজিতে পড়াগুলো রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হয়ে মারামারি, খুনাখুনি, ধর্ষণ করে। সম্পূর্ণ ইসলাম বিবর্জিত সেকুলার শিক্ষার কুফল হাড়ে হাড়ে টের পাই।
এদিকে ইমাম সাহেব মাসে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পেয়ে তার পরিবারকে নিয়ে কোনোমতে দিন পার করে হলেও তার ছেলেমেয়েকে নৈতিকতা শেখান, হাফেজ বানান। বাবা-মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়লে তিনি এবং তার স্ত্রী নিষ্ঠার সাথে বছরের পর বছর তাদের সেবা করেন। যেদিন বাবা-মা মারা যায়, সেদিন তিনি তার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ভাইদেরকে ফোন করে আর পান না। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি নিজেই হাজার হাজার মুসল্লিকে সাথে নিয়ে বাবা-মার জানাজা পড়েন। ইমাম সাহেবের বাবা-মা’র জানাজা, কত বিরাট সন্মানের জানাজা!
এর মানে এই নয় যে, আমরা সব সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াবো, ইমাম, মুয়াজ্জিন বানাবো। তাহলে মানব জাতি বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে আদিম যুগে বসে থাকবে। এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। কুরআনে ২০০ এর বেশি আয়াত রয়েছে বিজ্ঞান নিয়ে। সেগুলোর বাস্তবায়ন করবে কে? আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, সেকুলার শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ইসলামের শিক্ষা যেন তারা পায়, তা নিশ্চিত করা। না হলে, ফলাফল হবে প্রতিভাবান, বুদ্ধিমান শয়তান প্রজন্ম।
আজকের প্রজন্মের একটা বড় অংশ ভয়াবহ রকমের নৈতিক অবক্ষয়ে ডুবে গেছে: তাদের বাবা-মা’দের দুনিয়ায় সম্পদ, সন্মান, আরাম-আয়েশের লোভের জন্য। সেই সব বাবা-মা’দের কাছে তাদের সন্তানরা হচ্ছে পেনশন। সেই পেনশনের মূল্য বাড়ানোর জন্য তারা যতভাবে সম্ভব চেষ্টা করেন সন্তানদেরকে দুনিয়াতে বড়লোক বানাবার। ইসলাম হচ্ছে তাদের পেনশনের মূল্য বৃদ্ধিতে একটি বাঁধা মাত্র। ছেলে ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা শুরু করলে, দাঁড়িওলা বন্ধুদের সাথে মেলামেশা শুরু করলে, তারা আতঙ্কিত হয়ে যান: এই বুঝি আমাদের পেনশন গেল!
এই ধরনের বাবা-মাদের ভেতরে এই ভয়ঙ্কর লোভ জন্ম হতে দিয়েছে তাদেরই বাবা-মা, যারা অনেকে নিজেরা ইসলাম মানলেও, তাদের সন্তানদেরকে ইসলামের পথে রাখার জন্য কোনো জোর দেননি। যার ফলে তারা তাদের বংশধরদের মধ্যে ইসলাম হারিয়ে যাওয়ার একটা চেইন রিয়াকশন শুরু করে দিয়ে গেছেন, যার ফলাফল আজকের ইসলাম ভুলে যাওয়া, নৈতিকভাবে ধ্বসে যাওয়া প্রজন্ম।
এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে এই প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য একটাই উপায়— তাদেরকে আল্লাহর تعالى প্রতি অনুগত করা। তাদেরকে উপলব্ধি করানো যে, সামনে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা আসছে। আজকে তাদেরকে ‘বাস্তবতা’ বলতে যা শেখানো হচ্ছে, সেটা কয়েক বছরের মায়া মাত্র। আসল বাস্তবতা আসছে সামনে, যেখানে সময় কখনো শেষ হবে না, যেই মহাবিশ্ব কখনো ধ্বংস হবে না। নবী ইব্রাহিম عليه السلام তা উপলব্ধি করেছিলেন। তাই তিনি তার সন্তান এবং বংশধরদের জন্য দু’আ করেছিলেন—
(আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)ও আমাদের প্রভু! আমাদের দুজনকে আপনার প্রতি অনুগত করে রাখুন এবং আমাদের বংশধর থেকে আপনার প্রতি অনুগত একটি জাতি তৈরি করে দিন। আমাদেরকে দেখিয়ে দিন কীভাবে ইবাদত করতে হয় এবং আমাদের ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করুন। নিঃসন্দেহে আপনি বার বার ক্ষমা করেন, নিরন্তর দয়াময়। [আল-বাক্বারাহ ১২৮]