তোমরা মন ভরে খাও – বাকারাহ ৫৮

2_58

মনে করে দেখো, যখন আমি বলেছিলাম, “এই শহরে প্রবেশ করো এবং এখানে তোমরা মন ভরে খাও, কিন্তু এর দরজা দিয়ে প্রবেশের সময় আমার প্রতি (কৃতজ্ঞতায়) অবনত হয়ে প্রবেশ করো  এবং বলতে থাকো, “আমাদের পাপের বোঝা হালকা করে দিন!” তাহলে আমি তোমাদের দোষ-ত্রুটি-অন্যায় আচরণ ক্ষমা করে দিব এবং যারা ভালো কাজ সুন্দরভাবে করে তাদের পুরস্কার আরও বাড়িয়ে দিব। [আল-বাকারাহ ৫৮]

কু’রআনে এই কথাগুলো বার বার আসে: সুস্বাদু খাবারের কথা, জীবনকে উপভোগ করার কথা, আল্লাহর تعالى সৃষ্টি করা এই অত্যন্ত সুন্দর পৃথিবী এবং আকাশ ঘুরে দেখা। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কু’রআনে বার বার তাঁর অনুগ্রহের কথা চিন্তা করতে বলেছেন, আমাদেরকে হালাল উপায়ে জীবনকে উপভোগ করে আখিরাতে আরও বেশি আনন্দের জন্য চেষ্টা করতে বলেছেন।

moutain-restaurant

কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে অনেক মুসলিমের ভেতরে একটি ধারণা চলে এসেছে যে, যদি একজন আদর্শ মুসলিম হতে চাও, তাহলে আজকে থেকে জীবনের সব আনন্দ ছেড়ে দিয়ে, কোনোমতে চলে–এরকম একটা জীবন-যাপন করো এবং নিজেকে যত পারো কষ্টের মধ্যে রাখো। হাজার হলেও, হাদিসে আছে: “দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা, কাফিরের জন্য বেহেশত।”[১০]

এটি একটি বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা যে, একজন আদর্শ মুসলিম হতে হলে জীবনের সব হালাল আনন্দ, সম্পদ অর্জনের সুযোগ, উচ্চতর ডিগ্রি পাওয়ার চেষ্টা – এই সব ছেড়ে দিয়ে, গরিবের মতো জীবন যাপন শুরু করতে হবে। “সবসময় মুখ গম্ভীর করে রাখতে হবে, যেন মানুষ আমাকে দেখলেই বুঝতে পারে আমি একজন খাঁটি ঈমানদার। সস্তা, সাধাসিধে, তালি দেওয়া কাপড় পড়তে হবে, যেন আমাকে দেখলে মনে হয় আমি একজন আদর্শ সুন্নতি বান্দা। পরিবারকে নিয়ে ভুলেও রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে, সবাই যাকাত দিয়ে, সব গরিব মানুষ সচ্ছল হয়ে না যাচ্ছে। দিনরাত নিজেকে বিভিন্ন ধরনের কষ্টের মধ্যে রাখতে হবে। কারণ যত বেশি কষ্ট, তত বেশি সওয়াব”— এগুলো সবই ভুল ধারণা, যা হাদিসটির বিভিন্ন ধরনের অপব্যাখ্যা থেকে এসেছে। এধরনের অপপ্রচারের কারণে আজকাল মানুষ ‘ইসলাম’ মানেই মনে করে একটি বন্দি, হতাশাকর, বিষণ্ণ জীবন ব্যবস্থা।

Prison

এই দুনিয়াতে মানুষের আত্মাকে আল্লাহ تعالى দেহ নামের এক জেলখানায় ভরে দিয়েছেন। এই জেলখানায় থাকার অনেক নিয়মকানুন আছে। এখানে কিছু কাজ করা নিষিদ্ধ, কিছু কাজ নিয়মিত করা বাধ্যতামূলক। এই নিয়মগুলো দেওয়া হয়েছে জেলখানার সবার ভালোর প্রতি লক্ষ রেখে, জেলখানায় নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। এই হচ্ছে জেলখানার প্রকৃতি। একজন মু’মিনের কাছে এই ব্যবস্থাকে একটা জেলখানার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই বাস্তবতা এবং সে সেটা মেনে নেয়।

কিন্তু অবিশ্বাসীরা এটা বিশ্বাস করতে চায় না যে, একদিন কিয়ামত হবে, বা মৃত্যুর পরে আর কোনো জীবন আছে। তারা মনে করে: এই দুনিয়াটাই হচ্ছে তাদের বেহেশত— এখানে কোনো নিয়ম নেই, কোনো নিষেধ নেই, যখন যা খুশি তাই করা যাবে। যেহেতু তাদের কাছে এই দুনিয়াটাই হচ্ছে একমাত্র জীবন, এর পরে আর কোনো অস্তিত্ব নেই, তাই তারা এই দুনিয়াটাকে তাদের মতো করে বেহেশত বানিয়ে, যতটুকু সম্ভব আমোদ ফুর্তি করে যেতে চায়। এই দুনিয়ার মতো ক্ষণস্থায়ী একটা জায়গা, যেখানে অসুখ হয়, প্রিয়জনেরা হারিয়ে যায়, পদে পদে নানা কটু কথা, অন্যায় সহ্য করতে হয়–এটাই তাদের শেষ বেহেশত। এর পরে আর কিছু পাওয়ার আশা নেই।

এরকম একটি ধারণা মানুষকে কতখানি হতাশ করে দেয়, সেটা আমাদের মুসলিমদের পক্ষে চিন্তা করাটা কঠিন। একটা মানুষ যখন প্রতিদিন নিজেকে বোঝায়: “একদিন আমি মরে যাবো, আর এই সবকিছু হারিয়ে যাবে, আমার পরিবার আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, আর কোনোদিন আমি তাদেরকে পাবো না; আমার সব সম্পত্তি একদিন আমার কাছ থেকে চলে যাবে, আমার অস্তিত্ব একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, আর মাত্র কয়েকটা বছর, তারপর সব শেষ”–কি ভয়ংকর হতাশাকর পরিস্থিতির মধ্যে তাকে জীবনটা পার করতে হয়। সে তখন মরিয়া হয়ে যায় এই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যত বেশি করে পারে আনন্দ করে নিতে। তখন সে বন্ধু বান্ধব নিয়ে মরিয়া হয়ে ড্রিঙ্ক করে মাতাল হয়ে যায়। যৌবন শেষ হয়ে গেল, শরীর নষ্ট হয়ে গেল–এই তাড়নায় ছুটতে থেকে অশ্লীল কাজে গা ভাসিয়ে দেয়।

তারপর শরীর এবং মন ভর্তি অসুখ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় সে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তার ভয়ংকর আসক্তির জন্য এবং জঘন্য সব স্মৃতিকে ভুলে থাকার জন্য নিজেকে অ্যালকোহলে, ড্রাগে বুঁদ করে রাখতে হয়। এদেরকে বাইরে থেকে দেখে অনেক আমোদে আছে, জীবনটা অনেক উপভোগ করছে মনে হলেও, রাতে ঘরে ফেরার পর যখন তারা একা হয়, তখন তাদের উপরে হঠাৎ করে নেমে আসে ভয়ংকর বিষণ্ণতা, অবসাদ এবং হতাশা। তাদের জীবনে আর বড় কোনো গন্তব্য নেই, বড় কোনো উদ্দেশ্য নেই। এই নষ্ট দুনিয়াটাই তাদের শেষ চাওয়া-পাওয়া।

আপনারা যদি পাশ্চাত্যের অমুসলিমদের মুসলিম হওয়ার ঘটনাগুলো পড়েন, দেখবেন তাদের ঘটনায় একটি ব্যাপার বার বার ঘুরে ফিরে আসে: তাদের অনেকেই দিনরাত ফুর্তি করত, ব্যভিচার, মদ ছিল তাদের জীবনে খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। শনি-রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বারে গিয়ে সারারাত ড্রিঙ্ক করে মাতাল হয়ে আসত। তারপর যখন সোমবারে হুঁশ ফিরত, এক ভয়ংকর হতাশা, বিষণ্ণতায় ডুবে যেত। জীবনটা তাদের কাছে অসহ্য মনে হতো। নিজের কাছে নিজেকে একটা পশু মনে হতো। “জীবন কি এটাই? জীবনে কি এর চেয়ে বড় কিছু নেই? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কি লাভ?”—এই ধরনের প্রশ্ন তাদেরকে পাগলের মতো তাড়িয়ে বেড়াত। তাদের জীবনে কোনো সুখ ছিল না, ছিল কিছু ক্ষণস্থায়ী ফুর্তি। হতাশা, বিষণ্ণতা, অশান্তি এবং নিজেকে শেষ করে দেওয়ার একটা অসহ্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে দিনরাত নিজের সাথে সংগ্রাম করতে হতো, নিজেকে মদে বুঁদ করে রাখতে হতো।

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এর ঠিক উল্টোটা করতে বলেছেন। তিনি আমাদেরকে যে জীবন-বিধান দিয়ে দিয়েছেন, সেভাবে জীবন পার করলে এই দুনিয়াতেই আমরা হাসিখুশি থাকতে পারব, নিজের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, দেশে শান্তি নিয়ে আসতে পারব। একই সাথে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনাবিল, অফুরন্ত শান্তিতে জান্নাত উপভোগ করতে পারব। তিনি আমাদেরকে বলেননি এই দুনিয়াতে নিজেদের উপরে ইচ্ছা করে কষ্ট দিতে। বরং তিনি পৃথিবীতে অসংখ্য হালাল আনন্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং সেগুলো উপভোগ করার নির্দেশ কু’রআনেই দিয়েছেন—

আল্লাহ তোমাদেরকে এই জীবনে যা দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে এর পরের জীবনকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা কর, কিন্তু সেই সাথে এই দুনিয়াতে তোমার যে প্রাপ্য রয়েছে, সেটা ভুলে যেও না। অন্যের সাথে ভালো কাজ কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দিয়েছেন। এই পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়ানোর চেষ্টা করবে না। দুর্নীতিবাজদের আল্লাহ পছন্দ করেন না! [আল-কাসাস ২৮:৭৭]

বল, “কে তোমাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট সৌন্দর্য এবং ভালো-পবিত্র খাবার উপভোগ করতে মানা করেছে, যা তিনি তার বান্দাদের জন্যই তৈরি করেছেন?” বলে দাও, “এগুলো তাদেরই জন্য যারা এই দুনিয়াতে বিশ্বাস করে: কিয়ামতের দিন এগুলো শুধুমাত্র তাদেরই হবে।” এভাবেই আমি আমার বাণীকে পরিষ্কার করে দেই বুদ্ধিমান লোকদের জন্য। [আল-আরাফ ৭:৩২]

ও প্রভু, আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিয়েন। আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। [আল-বাকারাহ ২:২০১]

উপরের আয়াতগুলো এবং বাকারাহ-এর আলোচ্য আয়াতের মূলকথা একটাই: জীবনকে উপভোগ করতে হবে আল্লাহর প্রতি অনুগত থেকে, কৃতজ্ঞ থেকে এবং পাপের ব্যাপারে সবসময় সাবধান থেকে। মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে আমরা যা কিছুই উপভোগ করব, কিয়ামতের দিন সেগুলোর সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। সুতরাং আমরা যেন উপভোগ করতে গিয়ে আল্লাহর تعالى অবাধ্য না হই। এমন কিছু যেন করে না ফেলি, যেটা কিয়ামতের দিন আমাদেরকে দেখানো হলে আমরা লজ্জায় কিছু বলতে পারব না।

এর আগের আয়াতে আল্লাহ تعالى বনী ইসরাইলিদেরকে মান্‌ন[৯] দেওয়ার ঘটনা বলেছেন। তিনি তাদেরকে এমন এক অসাধারণ খাবার পাঠালেন, যেটা তাদেরকে কষ্ট করে চাষ করতে হতো না, মাঠ থেকে তুলে এনে রান্না করেও খেতে হতো না, এমনকি খাওয়ার পর পরিত্যক্ত খাবার ডাস্টবিনে গিয়েও ফেলতে হতো না, তা নিজেই উবে যেত।[১][১১] মরুভূমিটা তাদের জন্য ব্যুফে সার্ভিস হয়ে গিয়েছিল। হেঁটে হেঁটে থালায় করে ইচ্ছেমত মান্‌ন সংগ্রহ করে, আরামে বসে খাওয়া, আর গল্প করা ছাড়া তাদের আর কোনো কষ্টই করতে হতো না। শুধু তাই না, তিনি তাদেরকে সালওয়া নামক একধরনের পাখি পাঠিয়ে দিলেন। এই পাখিগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে এসে তাদের সামনে মাটিতে বসে থাকত, ধরতে গেলেও পালিয়ে যেত না।[১২] একেবারে বিনামূল্য মাংসের হোম ডেলিভারি! একটু কষ্ট করে আগুনে ঝলসিয়ে খেলেই হলো।

কিন্তু এই দুটি সম্পূর্ণ ফ্রি, স্বাস্থ্যকর, ঝামেলাবিহিন খাবার খেয়ে তাদের বেশিদিন মন ভরল না। একসময় তারা খাবারের মেন্যুতে আরও বৈচিত্র্যের জন্য আবদার জানানো শুরু করল এবং তারা মিশরে থাকার সময় সেখানকার রান্না করা স্বাভাবিক খাবারের জন্য দাবি করা শুরু করল।[বাকারাহ ২:৬১] মিশরের খাবারের কথা মনে করাটা যে কী ভয়ংকর অকৃতজ্ঞতার প্রমাণ, সেটা বুঝতে হলে নিচের উদাহরণটি দেখুন—

ধরুন একজন লোক ত্রিশ বছর জেল খেটে আসল। সে বাসায় আসার পর তার স্ত্রী–যে কিনা তার জন্য ত্রিশ বছর ধৈর্য ধরে একা সংসার আগলে রেখেছিল–সে তাকে গভীর ভালবাসায় নিজের হাতে রান্না করে কত কিছু খাওয়াচ্ছে! কিন্তু একদিন স্ত্রীর রান্না করা ডাল খেতে খেতে লোকটা আফসোস করে বলল, “আহারে! জেলের বাবুর্চিটার ডালটা কি মজাই না ছিল। ঘন ডাল, একদম ঠিকমত পেঁয়াজ-লবণ দেওয়া। তেলের পরিমাণটাও ছিল পারফেক্ট। ইস, সেই ঘন ডালটা এখন খেতে খুব ইচ্ছে করছে।” একটা মানুষ কত বড় অকৃতজ্ঞ হলে এধরনের কথা বলতে পারে? কেউ যদি একসময় জেলের খাবারের জন্য আফসোস করা শুরু করে, তার মানে দাঁড়ায় সে আসলে জেলের জীবনটার জন্যই আফসোস করছে।

বনী ইসরাইল যখন আল্লাহর تعالى দেওয়া মান্‌ন এবং সালওয়া খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে মিশরের খাবারের জন্য আফসোস করা শুরু করল, প্রকৃতপক্ষে তারা আসলে মিশরের জীবনটার জন্যই আফসোস করা শুরু করল। ফেরাউনের সেই নৃশংস অত্যাচারে থাকার পরে, তাদের কখনই মিশরের জীবনের কোনো কিছুর ব্যাপারেই আফসোস করার কথা নয়। বিনামূল্যে আকাশ থেকে খাবার পাচ্ছে, যার জন্য তাদেরকে কোনোই কষ্ট করতে হচ্ছে না–এত স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনের জন্য আল্লাহর تعالى প্রতি তাদের চিরকৃতজ্ঞ থাকার কথা। উঠতে বসতে প্রতি নিয়ত আল্লাহর تعالى প্রশংসা করার কথা। কিন্তু তারা যখন কয়েকদিন আরামে থাকার পর মিশরের খাবারের জন্য আফসোস করা শুরু করে দিল, তার মানে দাঁড়ায় তারা মিশরের জীবনের জন্যই আফসোস করা শুরু করল।[১] একটা জাতি কত বড় অকৃতজ্ঞ হলে এধরনের কাজ করতে পারে!

BaniIsraelTorture

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى তাদের এই দাবির উত্তরে তাদেরকে এমন একটি সম্পদশালী শহরের উপর আধিপত্য দেন, যেখানে খুব শক্তিশালী একটি জাতি থাকত। সেই জাতিকে তিনি পরাজিত করে দেন, যেন বনী ইসরাইলিরা সেই শহরে নিরাপদে, প্রাচুর্যে থাকতে পারে।[৬][৫:২০-২৬] সেখানে তিনি তাদেরকে ইচ্ছেমত যা খুশি খাবারের অনুমতি দেন। “এখানে তোমরা ইচ্ছেমত যত খুশি খাও”—ঠিক একই নির্দেশ তিনি আদম عليه السلام-কেও দিয়েছিলেন[২] কিন্তু শর্ত একটাই: আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকতে হবে এবং তারা যে একটা বিরাট অন্যায় করে ফেলেছে, তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। এই শর্ত শুধু বনী ইসরাইলিদের জন্যই নয়, আজকের মুসলিমদের জন্যও প্রযোজ্য।

আমরা পৃথিবীতে আল্লাহর تعالى তৈরি সৌন্দর্য, ভালো-পবিত্র খাবার যখন ইচ্ছে উপভোগ করতে পারি, যদি সেটা আল্লাহর تعالى প্রতি অনুগত অবস্থায়, তাঁর দেওয়া নিয়মের মধ্যে থেকে করি, এবং একই সাথে আমরা যে সবসময় ভুল করছি, সেটার জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাই। এরকম বিনীত, কৃতজ্ঞ অবস্থায় পৃথিবীতে আল্লাহর تعالى অসাধারণ অনুগ্রহগুলো পরিমিতভাবে উপভোগ করে, জান্নাতে গিয়ে অনন্তকাল আনন্দ করার চেষ্টার মধ্যে কোনোই বাধা নেই।[১]

seashore-sitting

আয়াতটির শেষটি খুব সুন্দর:

…যারা ভালো কাজ সুন্দরভাবে করে তাদের পুরস্কার আরও বাড়িয়ে দিব।

এখানে আল্লাহ تعالى মুহসিনিনদের مُحْسِنِين কথা বলছেন, যারা ইহসান إِحْسَٰن করে। সাধারণত ইহসান এর অনুবাদ করা হয়: ভালো কাজ। কিন্তু ইহসান অর্থ শুধুই ভালো কাজ নয়, বরং ভালো কাজটি সঠিক আদাবের সাথে সুন্দরভাবে করা।[৪] যেমন: আপনি একটা ফকিরকে দেখে মানিব্যাগ থেকে সবচেয়ে ছোট ছেড়া নোটটা বের করে তাকে দিতে পারেন। অথবা, আপনি এটিএম মেশিন থেকে তোলা একটা ঝকঝকে নোট তাকে দিতে পারেন এবং দেওয়ার পর তার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাঁসি দিতে পারেন – এটা হবে ইহসান। আপনি আপনার কাজের-মেয়েকে এই ঈদে ফার্মগেটের খোলা বাজার থেকে সস্তায় একটা নতুন জামা কিনে দিতে পারেন। অথবা আপনি তাকে আপনার মেয়ের সাথে শপিং মলে নিয়ে গিয়ে, একই দোকান থেকে দুজনকে একই জামা কিনে দিতে পারেন – এটা হবে ইহসান। যারা ইহসান করে তাদেরকে আল্লাহ تعالى কু’রআনে বহু জায়গায় এত সুন্দর সব পুরস্কারের কথা বলেছেন, যা বুঝলে মুসলিমদের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যেত ইহসান করার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে।

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

8 thoughts on “তোমরা মন ভরে খাও – বাকারাহ ৫৮”

    1. ভাই আসসালামু আলাইকুম
      ভাই আমি অনেক confusion এর মধ্যে আছি…(42:20) ব্যাখ্যাটা যদি এই পোষ্টের আলোকে দিতেন!

  1. আসসালামু আলাইকু। ভাই 42:20 আয়াতটা নিয়ে আমারও প্রশ্ন আছে। আয়াতটা হল >>
    যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে তা থেকে কিছু দেই এবং আখিরাতে তার জন্য কোন অংশই থাকবে না।
    তাহলে কি আল্লাহর কাছে দুনিয়ার জন্য কিছু চাওয়া যাবে না? নাকি যারা শুধু দুনিয়া আশা করে তাদের কথা বলা হয়েছে।আশা করি উত্তরটা বিস্তারিত দিবেন। ধন্যবাদ।

    1. যারা শুধু দুনিয়া আশা করে, আখিরাতে প্রতিদান পাওয়ার কোনো চিন্তা নেই, থাকলে হয়ত সেই আশাটাই করত না, সেই ধরনের মানুষদের কথা বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *