তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর সব কিছুর উপরে ক্ষমতা রয়েছে — আল-বাক্বারাহ ১০৬

মানুষকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে, তাদেরকে দিয়ে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে ধর্ম। জনসাধারণকে যদি কোনোভাবে বোঝানো যায় যে, ধর্ম কোনো কিছু করাকে বাধ্যতামূলক করেছে, তখন লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ কোনো প্রশ্ন না করে নিষ্ঠার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই উদ্দেশে কাজ করতে। একারণে ইতিহাসের শুরু থেকেই আমরা দেখতে পাই, ধর্ম প্রচারকরা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের বিকৃত অনুবাদ করে, জনসাধারণকে ভুল তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জনসাধারণকে ব্যাপক অপব্যবহার করে এসেছে।

মুসলিমরাও এদিক থেকে ব্যতিক্রম নয়। কু’রআনের বিশেষ কিছু আয়াতকে অনেক মুসলিম রাজা, আলেম বিকৃত অনুবাদ করে, বা অনেক সময় বিশেষ কিছু আয়াতকে বাতিল বা স্থগিত ঘোষণা করে, ইসলামকে বিকৃত করে ভয়ংকর সব কাজ করে গেছে। যেহেতু কু’রআনের আয়াতের বিকৃত অনুবাদ করা অনেক কঠিন কাজ, এবং এত তাফসীর থাকতে নতুন কোনো অনুবাদ নিয়ে আসাটা যথেষ্ট কঠিন, তাই কিছু অসাধু আলেমরা আরেকটি নতুন পথ খুজে বের করেছে। তারা ঘোষণা করা শুরু করে যে, কু’রআনের কিছু আয়াত রয়েছে, যা পরবর্তীতে অন্য আয়াত দিয়ে বাতিল বা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে তারা কু’রআনের কোন আয়াতকে মানা যাবে, কোন আয়াতকে আর মানা যাবে না, তা নিয়ে ব্যাপক জ্ঞানগর্ভ গবেষণা তৈরি করে, কু’রআনের অনেক আয়াতকে বাতিল ঘোষণা করে দেয়, যাতে করে তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কু’রআনের বিশেষ কিছু আয়াতকে কাজে লাগাতে পারে। তাদের এই কুকর্মের প্রধান হাতিয়ার সুরা আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি—

2_106

আমি কোনো আয়াত বাতিল করি না, বা ভুলিয়ে দেই না, যদি না তার মতো বা তার থেকে ভালো কিছু না দেই। তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর সব কিছুর উপরে ক্ষমতা রয়েছে? [আল-বাক্বারাহ ১০৬]

law

এই আয়াতে ‘আয়াত বাতিল করা’ (النسخ আন-নাসখ)-কে তিন ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়—

  • ১) আগের যুগের নবীর উম্মতদের জন্য প্রযোজ্য আদেশকে পরে অন্য কোনো নবীর মাধ্যমে বাতিল করা। যেমন তাওরাহ, ইঞ্জিলের কিছু আদেশকে কু’রআনের কিছু আয়াত দিয়ে বাতিল করা হয়েছে।
  • ২) আল্লাহর কোনো নিদর্শনকে বাতিল বা মানুষের স্মৃতি থেকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
  • ৩) কু’রআনের কিছু আয়াতকে কু’রআনের অন্য কোনো আয়াত দিয়ে বাতিল করা হয়েছে।

প্রথম দুটি নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। কিন্তু (৩) নিয়ে প্রচুর মতবিরোধ রয়েছে, যেহেতু এটি দাবি করছে: কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে, যা আল্লাহ পরবর্তীতে বাতিল বা স্থগিত করে দিয়েছেন, তাই সেই আয়াতগুলো আর মানা যাবে নানতুন যে আয়াত এসেছে, সেগুলো শুধু মানতে হবে।

এভাবে শারিয়াহ’র কোনো আদেশকে অন্য কোনো আইনত বৈধ আদেশ দিয়ে প্রতিস্থাপন করাকে النسخ আন-নাসখ বলে।[২০৫] আন-নাসখ-এর নানা ধরনের সংজ্ঞা আমরা আবু উবাইদ (২২৪ হি), আল-নাহহাস (৩৭৭ হি), মাক্কি (৪৩৭ হি), ইবন আল-আরাবি (৫৪৩ হি), ইবন আল-জাওযি (৫৪৩), আল-জারকাশি (৭৯৪ হি), আস-সুয়ুতি (৭৯৪ হি), আল-দেহলায়ি (১১৭৬ হি) এদের কাছ থেকে পেয়েছি। তাদের সংজ্ঞাগুলোর মধ্যে যথেষ্ট অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। আল-যুরকানি আগেকার আলেমদের সংজ্ঞাগুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং তিনি একটি সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দিয়েছেন — ইসলামের কোনো আদেশকে কু’রআন এবং সুন্নাহ’র আলোকে অন্য কোনো আইনত বৈধ দলিল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা।[২০৬]

নাসখ নিয়ে আক্রমণ

সুধীবৃন্দরা তর্ক দেখান, “দেখ, তোমাদের আল্লাহ ঠিক করতে পারছে না মানুষের জন্য কোনটা ঠিক। একবার একটা বলে, তারপর সেটা পালটিয়ে আরেকটা বলে। তোমরা না বল, আল্লাহ সব জানেন? তাহলে কেন সে মত পাল্টায়? সে কী একদম শুরুতেই সবকিছু ঠিক করে দিতে পারে না?”

আমরা যদি নাসখ অর্থাৎ আল্লাহর বাণীর পরিবর্তন দেখি, তবে লক্ষ্য করব, যে পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে, তার সবই করা হয়েছে সময়োপযোগী করে, মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে মানুষের জন্য ধর্মকে সহজ করার জন্য। আগেকার যুগে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কিছু ব্যাপার প্রযোজ্য ছিল, যা আর পরে প্রযোজ্য ছিল না। তখন সেগুলো পালটিয়ে নতুন আইন দেওয়া হয়েছে। যদি নতুন আইন দেওয়া না হত, বা পুরনো আইন পাল্টানো না হতো, তাহলে মানব জাতির জন্য ধর্ম কঠিন বা ক্ষতিকর হয়ে যেত।

নামাজ, যাকাত, সাওম, জান্নাতের অঙ্গীকার, জাহান্নামের শাস্তির প্রতিশ্রুতি এই সব মৌলিক ব্যাপারগুলো সকল নবীর সময় প্রযোজ্য ছিল। এই ধরণের মৌলিক ধর্মীয় ব্যাপারগুলো কখনও বাতিল হয়নি। শুধুমাত্র সামাজিক, অর্থনৈতিক আইন এবং ইবাদত করার ধরণে যুগের প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।[২০৬]

সুধীবৃন্দরা আরও তর্ক দেখান, “দেখেছ কু’রআনে যে বিভ্রান্তি রয়েছে? আয়াতের মধ্যে বিরোধিতা রয়েছে? না হলে এক আয়াত অন্য আয়াত দিয়ে বাতিল হয় কীভাবে?”

নাসখ অর্থ এই নয় যে, দুটি আয়াতের মধ্যে বিরোধিতা রয়েছে। বরং একটি আয়াত কোনো এক বিশেষ প্রেক্ষিতে প্রযোজ্য ছিল। তারপর প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। তখন নতুন আয়াত এসেছে, নতুন প্রেক্ষাপট অনুসারে নতুন আইন নিয়ে। নিচের উদাহরণগুলো দেখলেই তা পরিস্কার হয়ে যাবে—

আগেকার কিতাবে নাসখের উদাহরণ

আগেকার ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর কিছু আদেশকে যে পরের ধর্মীয় গ্রন্থ দিয়ে বাতিল করে, তার সমান বা তার থেকে ভালো আদেশ দেওয়া হয়েছে, তার বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে—

  • তাওরাহ অনুসারে গুরুতর পাপ থেকে মাফ চাওয়ার উপায় হলো নিজের জীবন নিয়ে নেওয়া, যার মাধ্যমে একজন আল্লাহর تعالى প্রতি তার পূর্ণ আনুগত্য দেখাতে পারে। কিন্তু কু’রআনে তা বাতিল করে গুরুতর পাপ থেকে মাফ চাওয়ার জন্য একনিষ্ঠ তাওবাহ’ই যথেষ্ট করা হয়েছে।[২০৭]
  • ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে আদমের عليه السلام সন্তানদের জন্য বৈধ ছিল, কারণ তা না হলে মানবজাতি এক প্রজন্ম পরেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তা অবৈধ, কারণ তা ব্যাপক পারিবারিক এবং সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করবে।[২০৮]
  • নুহ নবীর عليه السلام উম্মতের জন্য সব প্রাণী খাওয়া বৈধ ছিল, শুধু রক্ত বাদে।[২০৮] পরে ইঞ্জিলে এবং কু’রআনে শুকর অবৈধ করা হয়েছে।
  • বনি ইসরাইলের জন্য সাব্বাথ বা শনিবারে বৈষয়িক কাজ বৈধ ছিল, কিন্তু শুধু মুসা عليه السلام নবীর উম্মতদের জন্য তা অবৈধ করা হয়েছে।[২০৮]
  • দুই বোনকে বিয়ে করা ইয়াকুব عليه السلام নবীর সময় বৈধ ছিল, কিন্তু মুসা عليه السلام নবীর পর থেকে তা অবৈধ।[২০৮]

কু’রআনের আয়াত বাতিল

কু’রআনের কয়টি আয়াতকে বাতিল করা হয়েছে, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হিবাতুল্লাহ ইবন সালামা বলেছেন ২৩৯টি আয়াত। পরে অনেকে বলেছেন ১০০। ইমাম সুয়ুতি বলেছেন ১৯টি। শাহ ওয়ালি উল্লাহ তার মধ্যে থেকে মাত্র ৫টি সঠিক বলে দাবি করেছেন।[২০৯]
তবে এখন পর্যন্ত একটিও সাহিহ হাদিস পাওয়া যায়নি, যেখানে রাসুল عليه السلام নিজে বলেছেন যে, কু’রআনের অমুক আয়াত অমুক আয়াত দিয়ে বাতিল করা হয়েছে। আমরা কিছু হাদিস পেয়েছি যেখানে সাহাবীদের মত রয়েছে। কিন্তু সেই হাদিসগুলোর অনুবাদ এবং বৈধতা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।[২০৫]

আন-নাসখের কিছু ভয়ংকর ফলাফল

কু’রআনের কোনো আয়াতকে অন্য কোনো আয়াত দিয়ে বাতিল ঘোষণা করার ফলাফল কী ভয়াবহ হতে পারে, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো সুরা তাওবাহ এর এই আয়াতটি, যা ‘তরবারির আয়াত’ নামে পরিচিত—

নিষিদ্ধ মাসগুলো পার হলে, যেখানে মুশরিকদের পাও, ওদেরকে হত্যা কর। তাদের বন্দী কর, অবরোধ কর। প্রত্যেকটা ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাক। … [সুরা আত-তাওবাহ ৯:৫]

বহু প্রাচীন আলেমেদের মতে এই আয়াতটি কু’রআনের অনেক শান্তি প্রিয় আয়াতকে বাতিল করেছে। যেমন, কু’রআনের এই শান্তি প্রিয় আয়াতগুলি বাতিল হয়ে গেছে—

…যদি অমুসলিম আক্রমণকারিরা নিজেদেরকে উঠিয়ে নেয়, আর যুদ্ধ না করে, তোমাদের সাথে শান্তি করতে চায়, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে কোনোই সুযোগ দেননি তাদের বিরুদ্ধে কিছু করার। [আন-নিসা ৪:৯০]

… যারা তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে বঞ্ছিত করেছে, তাদের প্রতি ঘৃণা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘন না করায়। যা কিছু ন্যায় এবং ভালো, তা করতে তোমরা একে অন্যকে সাহায্য করো। অন্যায় এবং আগ্রাসনে একে অন্যকে কখনই সাহায্য করবে না। আল্লাহর কথা সবসময় মনে রাখবে। তাঁর শাস্তি খুবই কঠিন। [আল-মায়িদাহ ৫:২]

অমুসলিমরা যা বলে, তা ধৈর্য ধরে শোনো। … [ত্বাহা ২০:১৩০]

ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। সত্য পথ মিথ্যা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে।… [আল-বাক্বারাহ ২:২৫৬]

যদি তোমার প্রভু চাইতেন, তাহলে পৃথিবীতে সবাই অবশ্যই বিশ্বাস করত। তাহলে তুমি কি মানুষকে জোর জবরদস্তি করবে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত? [ইউনুস ১০:৯৯]

আহলে কিতাবের মানুষদের সাথে সুন্দরভাবে ছাড়া যুক্তিতর্ক করবে না। তবে যারা অন্যায় করে, তাদের কথা আলাদা। বল, “আমরা বিশ্বাস করি যা আমাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে, এবং যা তোমাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে; আমাদের এবং তোমাদের উপাস্য প্রভু একই সত্তা, আমরা তাঁরই প্রতি নিজেদেরকে সমর্পণ করি।” [আল-আনকাবুত ২৯:৪৬]

কোনো মুশরিক (মূর্তি পূজারি, যারা শিরক করে) যদি তোমাদের কাছ নিরাপত্তা চায়, তাহলে তাকে তা দেবে, যেন সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায়। তারপর তাকে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবে। আসলে তারা এমন একটা জাতি, যাদের জ্ঞান নেই। [আত-তাওবাহ ৯:৬]

কু’রআনের এত শান্তি প্রিয় আয়াতগুলো সব বাতিল হয়ে গেছে এক তরবারির আয়াত দিয়ে — এই ছিল অনেক প্রাচীন আলেম এবং তাফসিরকারিদের দাবি। ইবন যাওজি, মুস্তাফা জায়িদ, এমনকি ইবন কাছিরের মত বিখ্যাত তাফসিরেও এই ধরনের উক্তি রয়েছে—

এই আয়াতটি নবি মুহাম্মাদ عليه السلام এবং মুশরিকদের মধ্যে যত শান্তি চুক্তি, আপোষ নামা, শর্ত মেয়াদ রয়েছে —তার সব বাতিল করে দিয়েছে। [তাফসির ইবন কাছির][২১০]

আজকের যুগে অনেক চরমপন্থি মুসলিমরা এই ধরনের প্রাচীন তাফসির এবং আলেমদের ব্যাখ্যা পড়ে অমুসলিমদেরকে যখন তখন আক্রমণ করা, মারামারি করে তাদের সম্পত্তি জোর দখল করা, শান্তি চুক্তি ভেঙ্গে ফেলা সমর্থন করছে। রক্তের নেশায় পাগল এই মুসলিমদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার এই ভয়ংকর অধিকার আল্লাহ تعالى তাদেরকে দেননি, দিয়েছে অন্য কেউ।

অথচ ইমাম রাজি, ইমাম জামাল, ইমাম জামাখশারি, ইমাম বাদায়ি, ইমাম নাসাফি, ইমাম বাক্বায়ি সহ অনেক প্রাচীন আলেম পরিস্কার করে দেখিয়ে গেছেন যে, তরবারির এই আয়াতটির প্রেক্ষাপট হচ্ছে: মক্কার মুশরিকদের বার বার শান্তি চুক্তি করে তারপর ভেঙ্গে ফেলা এবং চুক্তি ভেঙ্গে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করার ঘটনা।[২০৯] এটি কোনো সাধারণ আয়াত নয়। সুরা তাওবাহ’র প্রথম আয়াত থেকে কেউ পড়া শুরু করলেই দেখতে পাবে যে, আল্লাহ সেই বিশেষ ঘটনার বর্ণনা করছেন এবং শুধুমাত্র সেই যুদ্ধের সময় তিনি মুশরিকদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর জন্য আপনার কোনো তাফসির পড়ার দরকার নেই। ধৈর্য ধরে এর আগের চারটি আয়াত এবং পরের কয়েকটি আয়াত পড়লেই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যাবে। অথচ কিছু চরমপন্থি মুসলিমরা এই একটি আয়াতকে তার প্রেক্ষাপট থেকে আলাদা করে, একটি ধারাবাহিক ঘটনা থেকে বের করে নিয়ে এসে, যে কোনো যুগে, যে কোনো সময়ে, যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য বলে ঘোষণা করছেন।

আন-নাসখের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি

কু’রআনের একটি আয়াত অন্য আয়াত দিয়ে বাতিল ঘোষণা করার পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক যুক্তি রয়েছে।  মুসলিম আলেমরা, বিশেষ করে ফুকাহা এবং তাফসির বিশারদরা এই ব্যাপারে অনেক তর্ক করে গেছেন, এবং একে অন্যকে অনেক আক্রমণ করেছেন। দুই পক্ষই তাদের মতের ব্যাপারে অটল, এবং তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন না। যদিও কু’রআন নাজিল হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে, কিন্তু এখনও এই ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে জোরালো তর্ক চলে আসছে।[২০৫]

এখন, যে কোনো একটি অবস্থান সঠিক হতে পারে: হয় কু’রআনের কিছু আয়াত অন্য আয়াত দিয়ে বাতিল হয়েছে, অথবা কু’রআনের কোনো আয়াত বাতিল হয়নি, প্রতিটি আয়াতই প্রযোজ্য। এই দুটো অবস্থান এক সাথে সঠিক হতে পারে না।
নাসখের পক্ষে এবং বিপক্ষে যেই আয়াতগুলো রয়েছে, তার কিছু উদাহরণ এখানে দেওয়া হলো—

আমি কোনো নিদর্শন/আয়াহ স্থগিত/বাতিল করি না, বা ভুলিয়ে দেই না, যদি না তার মত বা তার থেকে ভালো কিছু না দেই। তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর সব কিছুর উপরে ক্ষমতা রয়েছে? [আল-বাক্বারাহ ১০৬]

পক্ষ: এই আয়াতে পরিস্কার ভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ تعالى তাঁর আয়াহকে বাতিল করেন। এখানে আয়াহ অর্থ কু’রআনের আয়াত, অন্য কিছু নয়। ইবন আব্বাসের কাছ থেকে আসা একটি বর্ণনাও তাই সমর্থন করে।
বিপক্ষ: কু’রআনে একবচন ‘আয়াহ’ ব্যবহার করা হয়েছে আল্লাহর যে কোনো বাণী, নিদর্শন, শিক্ষা, মু’জিযা, ঊর্ধ্ব আসমানে বাণী, অকাট্য প্রমাণ ইত্যাদি অর্থে। এই আয়াতে একবচন আয়াহ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এখানে আয়াহ এর অর্থ শুধুমাত্র কু’রআনের আয়াত হবে, তা হতে পারে না।[২০৫][২০৬] এখানে তা নিদর্শন, আগের গ্রন্থের আয়াত, শিক্ষা অনেক কিছুই হতে পারে।

তিনি যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন। যাকে প্রজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাকে প্রভুত কল্যাণ দেওয়া হয়েছে। [আল-বাক্বারাহ ২:২৬৯]

পক্ষ: আল্লাহ تعالى বিশেষ কিছু মানুষকে প্রজ্ঞা দিয়েছেন, যারা কু’রআনের আয়াতের মধ্যে কোনগুলো বাতিল হয়ে গেছে, এবং কোন আয়াত সেগুলোকে বাতিল করেছে, কোন আয়াতগুলো পরিস্কার (মুহকাম) এবং কোনগুলো পরিস্কার নয় (মুতাশাবিহ) — তা উপলব্ধি করার। ইবন আব্বাসের কাছ থেকে একটি বর্ণনা এসেছে, যা এর সমর্থন করে।
বিপক্ষ: ইবন আব্বাসের কাছ থেকে এসেছে দাবি করা এই হাদিসের সনদে আলি ইবন তালহা রয়েছেন, যা সনদকে দুর্বল করে দেয়, কারণ ইবন তালহা কখনই ইবন আব্বাসের সংস্পর্শে আসেননি। এটি নির্ভরযোগ্য হাদিস নয়। হিকমাহ বা প্রজ্ঞা বলতে আন-নাসখের জ্ঞান বোঝায়, এর পক্ষে কোনো অকাট্য দলিল নেই।[২০৫] তাছাড়া এই আয়াতের আগের আয়াতগুলো পড়লে পরিস্কার বোঝা যায়, আয়াতগুলো সবগুলোই অর্থনৈতিক ব্যাপারে আলোচনা করছে এবং এই আয়াতে হিকমাহ বলতে অর্থনৈতিক ব্যাপারে প্রজ্ঞা বোঝানো হয়েছে। যে অর্থনৈতিক ব্যাপারে প্রজ্ঞা লাভ করে, সে দুনিয়াতে প্রভুত কল্যাণ পায় — এই অর্থটি প্রেক্ষাপট অনুসারে বেশি সঙ্গতিপূর্ণ।[২০৫] যে নাসখের ব্যাপারে প্রজ্ঞা লাভ করে, সে দুনিয়াতে প্রভুত কল্যাণ পায় — এটা বিশ্বাস করাটা কঠিন।

আল্লাহ যা ইচ্ছা নিশ্চিহ্ন করে দেন। কিতাবের উৎস শুধুমাত্র তাঁর কাছেই রয়েছে। [আর-রাদ ১৩:৩৯]

পক্ষ: এই আয়াতটি নিশ্চিতভাবে আন-নাসখ সমর্থন করে। ইবন আব্বাসের হাদিসও সেটাই বলছে।
বিপক্ষ: প্রথমত, এই আয়াতে নাসখ শব্দটি নেই, বরং মাহু শব্দটি রয়েছে, যার অর্থ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। আন-নাসখের একটি শর্ত হলো বাতিল করা আয়াতটি থেকে যায়, তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না। দ্বিতীয়ত, এই আয়াতের আগের আয়াতেই বলা হয়েছে যে, প্রতিটি সময়ের জন্য কিতাব/আইন দেওয়া হয়, যা সেই সময়ের জন্য প্রযোজ্য। তারপর আল্লাহ تعالى সেই কিতাব/আইনের কিছু অংশ বা পুরোটা নিশ্চিহ্ন করে নতুন কিতাব/আইন দেন। সুতরাং, এই আয়াত কু’রআনে নাসখ সমর্থন করে না।

যখন আমি এক আয়াতের বদলে অন্য আয়াত উপস্থাপন করি — এবং আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন তিনি কি অবতীর্ণ করেন — তখন ওরা বলে, “তুমি এগুলো সব নিজে বানাচ্ছ।” না! ওদের বেশিরভাগেরই কোনো বুদ্ধি নেই! [আন-নাহল ১৬:১০১]

পক্ষ: এই আয়াতে পরিস্কারভাবে বলা আছে যে, কু’রআনের এক আয়াতের বদলে অন্য আয়াত উপস্থাপন করা হয়। এটি নিশ্চিতভাবে কু’রআনে নাসখ সমর্থন করে।
বিপক্ষ: এটি মাক্কি আয়াত। মাক্কি আয়াতে কখনও কোনো আইনকে বদল করা হয় না, কারণ মাক্কি আয়াতগুলো তাওহিদ, রিসালাহ, আখিরাত ইত্যাদি আক্বিদা সম্পর্কিত।[২০৫][২০৬] মাদানি আয়াতগুলো ইবাদাত এবং আইন সম্পর্কিত এবং নাসখ হলে তা হয় মাদানি আয়াতে।[২০৬][২০৬] তাছাড়া মাক্কি আয়াতগুলো দেখলে দেখা যায় যে, আয়াতগুলোতে একই ধারণাগুলোকে নানা আঙ্গিকে, নানা যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করা হয়। মক্কার কুরায়েশরা যখন কোনো আয়াত শুনে তার বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি দেখাত, তখন আল্লাহ تعالى তাদের যুক্তি খণ্ডন করে একই ব্যাপারে ভিন্ন আঙ্গিকে আরেকটি আয়াত নাজিল করতেন। তখন কুরায়েশরা দাবি করত যে, নবি মুহাম্মাদ عليه السلام তাদের কথা শুনে এই নতুন আয়াতগুলো নিজে বানিয়ে বলছেন।[২০৫][২০৬]

ইহুদিদের অন্যায়ের জন্য আমি তাদেরকে কিছু জিনিস নিষিদ্ধ করে দিয়েছি, যা আগে তাদের জন্য বৈধ ছিল: কারণ তারা বার বার মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল। [আন-নিসা ৪:১৬০]

পক্ষ: এই আয়াতটি পরিস্কার ভাবে আন-নাসখ সমর্থন করছে। আল-জুরকানি এই মতটি দিয়েছেন।
বিপক্ষ: এখানে নাসখ কু’রআনে হয়নি, হয়েছে তাওরাতে। তাওরাতে ইহুদিদের জন্য কিছু ব্যাপার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা মোটেও কু’রআনের কোনো আয়াত বাতিল করা সমর্থন করে না।[২০৫]

এরকম আরও অনেক কু’রআনের আয়াত রয়েছে, যা ব্যবহার করে এক পক্ষের আলেমরা কু’রআনে নাসখ সমর্থন করে গেছেন, এবং আরেক পক্ষের আলেমরা দেখিয়েছেন কীভাবে তা কু’রআনে নাসখের সমর্থন হতেই পারে না। একইভাবে উমর (রা), আলি (রা), ইবন আব্বাসের (রা) কাছ থেকে আসা কিছু বর্ণনায় এক পক্ষ নাসখের সমর্থন দেখিয়েছেন, যেখানে অন্য পক্ষ দেখিয়েছেন যে, সেই বর্ণনায় কোনোভাবেই অকাট্যভাবে কু’রআনে নাসখের কথা নেই, বরং তা আগেরকার কিতাবের বাণী বাতিল করাই বেশি সমর্থন করে।[২০৫]
একইভাবে প্রসিদ্ধ তাবিইনের মধ্যে থেকে কয়েকজনের বাণী ব্যবহার করা হয়েছে নাসখ সমর্থন করতে। কিন্তু বিপক্ষের আলেমরা দেখিয়েছেন, যদি সত্যিই সেই তাবিইনরা নাসখ সমর্থন করে থাকেন, তাহলে তারা কেন বাতিল হয়ে যাওয়া আইন এরপরও নিজেরা বাস্তবায়ন করে গেছেন?[২০৫]

কু’রআনে নাসখের পক্ষে অবস্থান

আহলে সুন্নাহ ওয়া আল-জামাহ এর অবস্থান হলো, কু’রআনে সন্দেহাতীতভাবে নাসখ হয়েছে এবং এনিয়ে ইজমা (উলামাদের একমত) রয়েছে।[২০৬] কিন্তু ঠিক কোন আয়াতগুলো নাসখ হয়েছে, তানিয়ে এখনও ইজমা হয়নি। কেউ বলেছেন ১০০টি, কেউ ১৯টি, কেউ ৫টি।[২০৫] তাই আহলে সুন্নাহ এর অবস্থান হলো কু’রআনে নাসখ হলেও, তা হয়েছে খুবই অল্প সংখ্যক আয়াতে।[২০৬]

সাহাবীদের সময়কার কিছু আমল লক্ষ্য করলে নাসখের প্রমাণ দেখা যায়। যেমন, কু’রআনে বিবাহিত ব্যভিচারীদের শাস্তি ১০০ বার চাবুক হলেও নাসখের কারণে সাহাবিরা মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করে গেছেন।[২০৬] কু’রআনে প্রথমে অবিবাহিত ব্যভিচারী নারীকে সারাজীবনের জন্য ঘরে বন্দি করে রাখার নির্দেশ ছিল। তারপর তা শিথিল করে ১০০ বার চাবুকের নির্দেশ এসেছে।[২০৬] প্রথমে বিধবাদের ১ বছর অপেক্ষা করার নির্দেশ ছিল, তারপর তা কমে চার মাস দশ দিন করা হয়েছে।[২০৬] কু’রআনে প্রথমে বিশ্বাসীদেরকে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছিল, যদিও অবিশ্বাসী যোদ্ধার সংখ্যা তাদের ১০গুণ বেশিও হয়। পড়ে তা শিথিল করে ২গুণ করা হয়েছে।[২০৬] এরকম কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে যেখানে পক্ষের আলেমরা দাবি করছেন যে, সেগুলো নিশ্চিত ভাবে কু’রআনে নাসখ সমর্থন করে।

কু’রআনে নাসখের বিপক্ষে অবস্থান

যদিও আহলে সুন্নাহ ওয়া আল জামাহ-এর আলেমরা নাসখ-কে অস্বীকার করাটা কুফরির সামিল ধরেন, কিন্তু অনেক বিখ্যাত আলেম কু’রআনে নাসখের বিরোধিতা করে গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহাম্মাদ আল-গাজালি (১৯১৭-১৯৯৬), যিনি তার নাজারাত ফি আল-কু’রআন বইয়ে নাসখের বিরোধিতা করে বিস্তারিত লিখেছেন।[২১১] সৈয়দ আহমেদ খান (১৯১৭-১৯৯৮) নাসখ শুধুমাত্র আগেকার কিতাবের বেলায় প্রযোজ্য বলেছেন।[২১১] আসলাম জয়পুরি, গোলাম আহমেদ পারভেজ একই দাবি করে গেছেন।[২১১] মুহাম্মাদ আব্দুহ (১৮৪৯-১৯০৫) নাসখের সমর্থনে যে আয়াতগুলো রয়েছে বলে দাবি করা হয়, তার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।[২১১] তার ছাত্র মুহাম্মাদ রাশিদ তার তাফসির আল-মানার-এ একই ব্যাপার সমর্থন করেছেন।[২১১] মুহাম্মাদ খুদরি (১৯২৭) বলেছেন নাসখ হতে পারে, কিন্তু সুয়ুতি যে ২০টি নাসখের উদাহরণ দিয়েছেন, সেগুলোকে খুব সহজেই নাসখ ছাড়া অন্যভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।[২১১] আল-জাবরি, যিনি হাসান আল বান্না-এর একজন কাছের অনুসারি ছিলেন, তিনি মিশরের বিশ্ববিদ্যালয়ে নাসখ নিয়ে বিস্তারিত পড়াশুনা করে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি কু’রআনে নাসখের বিরোধিতা করে যথেষ্ট দলিল দেখিয়েছেন।[২১১] আজকের যুগের আলেমদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ডঃ আকরাম হোসেইন নদয়ই, যিনি কু’রআনে নাসখ অস্বীকার করেছেন।

নাসখ অস্বীকারকারীদের একটি সাধারণ দাবি হলো: যারাই কু’রআনের বিভিন্ন আয়াতকে বাতিল ঘোষণা করছেন, তারা তা করছেন তাদের মতো করে আয়াতটিকে বুঝে নেওয়ার জন্য। তারা যেভাবে আয়াতগুলোকে বুঝে নিচ্ছেন, সেটাই একমাত্র অর্থ নয়। সেই আয়াতগুলোকে প্রসঙ্গ বিবেচনা করে বুঝে নিলে আর সেগুলো বাতিল হওয়ার সুযোগ থাকে না।

কু’রআনে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ تعالى বার বার জোর দিয়ে বলেছেন যে, পুরো কু’রআনের প্রতিটি আয়াতে হিকমাহ, কল্যাণ রয়েছে। এতে কোনো বিভ্রান্তি নেই, কোনো আয়াতের সাথে অন্য কোনো আয়াতের বিরোধিতা নেই—

তারা কি কু’রআন নিয়ে চিন্তা করে না? যদি এটা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আসত, তাহলে তারা এর মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি/বিরোধিতা খুঁজে পেত। [আন-নিসা ৪:৮২]

নাসখ মেনে নেওয়ার অর্থ এই যে, কু’রআনের দুটি আয়াত স্ববিরোধী, যার কারণে একটি বাতিল হতে হবে।[২০৫]

আমি কু’রআন নাজিল করেছি, যা যারা বিশ্বাস করে, তাদের জন্য নিরাময় এবং রহমত। [আল-ইসরা ১৭:৮২]

যদি নাসখ সমর্থন করি, তার মানে দাঁড়ায় কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে যা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে, যা বিশ্বাসীদের জন্য নিরাময় এবং রহমত নয়।[২০৫]

প্রজ্ঞাময় কু’রআনের শপথ। [ইয়াসিন ৩৬:২]

কু’রআনকে আল্লাহ হাকিম-প্রজ্ঞাময় বলেছেন। যদি কু’রআনের কোনো আয়াত মানুষের জন্য বাতিল হয়ে যায়, প্রযোজ্য না হয়, তাহলে আর পুরো কু’রআন হাকিম থাকে না।[২০৫] বরং কু’রআন তখন একটি ফাঁদ হয়ে যায়, বিভ্রান্তির সুযোগ করে দেয়।

একটি আরবি কু’রআন, কোনো ধরনের বক্রতা/বিভ্রান্তি মুক্ত, যেন মানুষ আল্লাহর প্রতি সচেতন হতে পারে। [আয-যুমার ৩৯:২৮]

আল্লাহ বলছেন যে কু’রআনে কোনো ধরনের বক্রতা, বিভ্রান্তি নেই। কিন্তু নাসখ মেনে নেওয়ার অর্থ, কু’রআনে বক্রতা রয়েছে।[২০৫]

এরকম নানা ধরনের যুক্তি দেখানো হয়েছে কু’রআনে নাসখের বিরোধিতা করে। বিপক্ষের আলেমদের মতে নাসখ যা হওয়ার তা হয়েছে আগেকার কিতাবগুলোতে। কিন্তু কু’রআনের প্রতিটি আয়াত আমাদের জন্য এখনও প্রযোজ্য, কোনো আয়াত বাতিল হয়নি। আয়াতগুলোর অর্থ ঠিকভাবে বুঝে নিলেই নাসখের প্রয়োজনীয়তা চলে যায়।

উপসংহার

নাসখের পক্ষে-বিপক্ষে দু’দিকেই অনেক দলিল রয়েছে। যারা পক্ষে আছেন, তারা এখনও সবাই একমত হতে পারেননি কু’রআনের কোন আয়াতগুলো বাতিল হয়েছে, এবং কীভাবে প্রেক্ষাপট অনুসারে সেই বাতিল আয়াতগুলোকে বাতিল করতে হবে। একইভাবে বিপক্ষে যারা আছেন তারাও পক্ষের সবগুলো দলিল খণ্ডন করতে পারেননি। তাই উপসংহারে এটাই বলা যায় যে, আমরা যেন কখনও কু’রআনের কোনো আয়াত শুনে সোজা দাবি করে না বসি যে, সেই আয়াত বাতিল হয়ে গেছে। বিশেষ করে যারা কিছু ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাজকে সমর্থন করার জন্য কু’রআনের একের পর এক আয়াতকে নাসখ ঘোষণা করে দিচ্ছেন — তারা সাবধান! আল্লাহর تعالى বাণীকে বাতিল ঘোষণা করার মত ভয়ংকর আস্পর্ধা দেখানোর আগে হাজার বার চিন্তা করুন।

সুত্র:

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

2 thoughts on “তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর সব কিছুর উপরে ক্ষমতা রয়েছে — আল-বাক্বারাহ ১০৬”

  1. যদি স্রষ্টা মানুষকে কিছু বলেন – তবে তাতে কি ভুল থাকা সম্ভব?
    উত্তর হচ্ছে-না। সকল ধর্মের লোকেরাই এই ক্ষেত্রে একমত হবে।
    .
    এখন যদি বলা হয়- স্রষ্টা কি এমন বিধান দিতে পারেন, যা পরবর্তীতে রহিত করতে হয়? অনেকেই বলবে, “এটা সম্ভব না।” যুক্তি হচ্ছে-
    “কুরআন অনুসারে আল্লাহ ভবিষ্যত জানেন। যদি কুরআনের রচয়িতা আল্লাহই হন, তবে কেন তিনি এমন বিধান দিবেন যা পরবর্তীতে রহিত করতে হয়? তিনি কি জানতেন না যে তাঁর বিধান ভবিষ্যতে অকার্যকর হয়ে পড়বে?”
    .
    আসলেই কি তাই?
    রহিত করা কি আল্লাহ্‌ তায়ালার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নাকি তাঁর প্রজ্ঞার নিদর্শন! ধর্ম-গ্রন্থের মধ্যে কেবল কি কুর’আনেই রহিতকরণ রয়েছে?
    পড়ুন মুসলিম মিডিয়াতে প্রকাশিত এই লেখাটি।
    http://www.muslimmedia.info/2017/07/05/abrogation-is-a-great-sign-of-creators-wisdom

  2. আমার মতে, কুরআনে নাসখ-মানসুখ আয়াত নেই। ওমর আল-জাবির ভাইকে ধন্যবাদ সত্যটা সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *