যারা জ্বিন এবং মানুষ — আন-নাস

বলো, আমি আশ্রয় নেই মানুষের প্রতিপালক, মানুষের মালিক, মানুষের উপাস্যের কাছে। আত্মগোপনকারি প্ররোচকের প্ররোচনার অনিষ্ট থেকে। যে মানুষের ভেতরে প্রতিনিয়ত প্ররোচনা দেয়। যারা জ্বিন এবং মানুষ। [আন-নাস]

বলো, আমি আশ্রয় নেই মানুষের প্রতিপালক, মানুষের মালিক, মানুষের প্রভুর কাছে।

কেন বার বার ‘মানুষের’ বলা হলো?

এলাকার চেয়ারম্যান দাঁড়িয়ে যখন ভাষণ দেন, “ভাইসব, আমি আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি আপনাদেরই প্রতিনিধি। আমি আপনাদেরই মনোনীত নেতা। …” —এই কাজটা তিনি করেন এলাকাবাসীকে বোঝানোর জন্য যে, এলাকাবাসীর প্রতি তার বিশেষ টান রয়েছে। তিনি সত্যিই চান এলাকার মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে।

আল্লাহ تعالى যেন বার বার আমাদেরকে জানাচ্ছেন যে, মানুষের অবস্থার প্রতি তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি تعالى মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সবসময় রয়েছেন। তিনি تعالى মানুষকে সযত্নে পালন করেন, কারণ তিনি মানুষের রব। তাঁর ক্ষমতা দিয়ে প্রতিরক্ষা দেন, কারণ তিনি মানুষের মালিক। তিনি আমাদেরকে কোনোদিন ফিরিয়ে দেবেন না, কারণ তিনি تعالى যে আমাদের ইলাহ, আমাদের উপাস্য, আমাদের প্রভু, যাকে আমরা সবচেয়ে বেশি চাই।[১]

কেন আল্লাহ تعالى রব, মালিক, ইলাহ এই শব্দগুলো ব্যবহার করলেন? কেন তিনি শুধুই বললেন না, “বলো, আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর কাছে।” এক ‘আল্লাহ’ শব্দ দিয়েই কি সব বুঝিয়ে দেওয়া যেত না?

ধরুন, আপনার এক জটিল অসুখ হয়েছে। আপনি আপনার বন্ধুর উপদেশ মতো একজন ডাক্তারের কাছে দেখা করতে গেছেন। কিন্তু আপনি ঠিক ভরসা পাচ্ছেন না যে, ডাক্তারটা সত্যিই পারবে কিনা আপনার সঠিক চিকিৎসা করতে। ক্লিনিকে ঢোকার মুখে সাইনবোর্ডে দেখলেন লেখা আছে —  “সিনিয়র সার্জন – সরকারি হৃদরোগ হাসপাতাল, পিএইচডি – জনহপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, এম.সি.এম, এম.মেড.এসসি, এম.সার্জারি, ডি.এম.এসসি, ডি.ক্লিনি.সার্জ, এম.ডি.”। এতগুলো যোগ্যতা দেখে মুহূর্তের মধ্যে আপনার সব সন্দেহ উবে যাবে। তার উপর গভীর ভরসা চলে আসবে। আপনি নিশ্চিত হবেন যে, আপনি একজন যোগ্য মানুষের কাছে যাচ্ছেন।

মানুষ যখন শয়তানের ওয়াসওয়াসা’য় জর্জরিত হয়ে আশ্রয় চাইবে, তখন সে দুহাত তুলে আকুল হয়ে মানুষের রব-এর কাছে সাহায্য চাইবে, মানুষের মালিকের কাছে নিরাপত্তা চাইবে, মানুষের ইলাহের কাছে মাথা নত করবে। আল্লাহ تعالى যে আমাদের রব, মালিক, ইলাহ — তা আমরা নিজেদেরকে মনে করিয়ে দিলে আমাদেরই আল্লাহর تعالى উপর ভরসা বেড়ে যায়।  আমাদের মনে যখন সংশয় আসবে, “আল্লাহ কি আসলেই আমাকে সাহায্য করবেন? তিনি কি এইসব ব্যাপারে মানুষকে সাহায্য করেন?” —উত্তর পেয়ে যাবেন এই আয়াতগুলোতে। রব, মালিক এবং ইলাহ  —এই তিনটি শব্দের অর্থ ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই আমাদের যাবতীয় সংশয় দূর হয়ে যাবে। মনে সংশয় চেপে রেখে চেয়ে লাভ নেই। আগে সংশয় দূর করে, আল্লাহর تعالى প্রতি আস্থাশীল হয়ে, তারপরে তাঁর تعالى কাছে চাইতে হবে। দু’আ করার একটি শর্ত হলো, আল্লাহ تعالى যে দু’আ মনজুর করতে সক্ষম, তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা।[৩৯৩]

এই তিনটি শব্দের পেছনে অনেক উপলব্ধি করার মতো ব্যাপার রয়েছে। অনেক সময় আমরা মনে করি যে, আমি আমার পরিবার, নিজের প্রতিপালন করছি। আমি টাকা না দিলে সংসার চলবে কীভাবে? আবার অনেক সময় মনে করি যে, আমি আমার সম্পত্তির মালিক। আমার সম্পত্তি আমি যখন খুশি উপভোগ করতে পারবো। কেউ নাক গলাতে পারবে না। একসময় আমরা এমন পর্যায়ে চলে যাই যে, আমরা মনে করা শুরু করি: আমি নিজেই আমার প্রভু—আমার কাছে যা ভালো লাগবে আমি তা করবো, যা লাগবে না, তা করবো না। কোনো ধর্মটর্ম মানার দরকার নেই। ধর্ম হচ্ছে অল্প-শিক্ষিত মানুষদের জন্য। আমার জন্য না। —এভাবে আমরা পরোক্ষভাবে নিজেদেরকে রব, মালিক এবং ইলাহ বানিয়ে ফেলি।

সুরা আন-নাস আমাদেরকে দিয়ে বলায় যে, “বলো, আমি আশ্রয় নেই মানুষের রব , মালিক এবং ইলাহ-এর কাছে।” আমাদের ইগো অনেক সময় মুখ দিয়ে এই কথা বের হতে দেয় না। তাই সূরাহ শুরু হয়েছে ‘বলো’ দিয়ে। মুখে বলো। নিজের ইগোকে গিলে খেয়ে মাথা নত করে ঘোষণা দাও যে, তুমি কারও প্রতিপালন করো না, কোনো কিছুর মালিক নও তুমি এবং তুমি নিজের প্রভু নও। ঘোষণা দাও: আল্লাহ হচ্ছেন তোমার রব, তোমার মালিক, তোমার প্রভু। তারপরে আসো আল্লাহর تعالى কাছে সাহায্য চাইতে।

আত্মগোপনকারি প্ররোচকের প্ররোচনার অনিষ্ট থেকে

ওয়াসওয়াসা হচ্ছে বার বার প্ররোচনা দেওয়া। খন্নাস হচ্ছে যে লুকিয়ে থাকে, তারপর বেরিয়ে এসে তার কাজ করে আবার লুকিয়ে পড়ে।[১৭][৪] শয়তান লুকিয়ে থেকে মানুষের অন্তরে প্ররোচনা দেয়। তারপর মানুষ যখন আল্লাহর تعالى কাছে আশ্রয় চায়, বলে, “আ’উযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম” অর্থাৎ “আমি বিতাড়িত শয়তানের কাছ থেকে আশ্রয় চাই” — তখন সে পালিয়ে যায়। তারপর মানুষ যখন আবার দুর্বল হয়ে যায়, তখন সে আবার আসে। আবার ওয়াসওয়াসা দেয়। এভাবে সে তার কাজ চালিয়ে যেতেই থাকে, যতক্ষণ না সে মানুষকে পরাজিত করতে পারে।[১৭][৪]

শয়তানের সাথে মানবজাতি প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যে কোনো যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে শত্রু পক্ষ সম্পর্কে ভালো করে জানা। শত্রুর দুর্বলতা কোথায়, তার শক্তি কোথায়, সে কীভাবে কাজ করে, কীভাবে তাকে পরাজিত করা যায় —তা নিয়ে গবেষণা করা। তাহলেই শত্রুর সাথে যুদ্ধে যেতা সম্ভব। একারণে আমাদের ভালো করে জানা দরকার শয়তান কীভাবে কাজ করে।

শয়তান আসলে কী?

প্রথমত, আমাদেরকে ভালো করে বুঝতে হবে ইবলিস এবং তার শয়তান বাহিনী আসলে কী ধরণের সত্তা। আল্লাহ تعالى তাদেরকে কতখানি ক্ষমতা দিয়েছেন এবং কী ধরণের খারাপ কাজ শয়তান আমাদেরকে দিয়ে করায়, আর কী ধরণের খারাপ কাজ আমরা নিজেদের প্রবৃত্তির কারণে করি।

প্রথমে শয়তানের সংজ্ঞা কী ভালোভাবে জানা দরকার—

শয়তান: মানুষ বা জ্বিন, যারা ইবলিস এবং তার উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে।

শয়তান কখনও আমাদের কাছে এসে বলবে না, “আমি শয়তান, আমি তোমাকে জাহান্নামে পুড়াতে চাই। আসো আমরা ‘ইয়ে’ করি।” ইবলিস এবং জ্বিন শয়তানরা মানুষের কাছে অদৃশ্য প্রাণী। তারা সাইন্স ফিকশনের ভাষায় কোনো এক ‘প্যারালাল ইউনিভার্সে’ বা ‘অন্য ডাইমেনশনে’ থাকে, যেখান থেকে তারা ঠিকই আমাদেরকে দেখতে পায়, কিন্তু আমরা তাদেরকে দেখতে পাই না বা কোনো বৈজ্ঞানিক যন্ত্র দিয়ে সনাক্ত করতে পারি না—

সে এবং তার অনুসারিরা তোমাদেরকে তাদের জায়গা থেকে দেখতে পায়, কিন্তু তোমরা তাদেরকে দেখতে পাওনা। [আ’রাফ ৭:২৭]

শয়তান এমন কৌশলে আমাদের মনে কু-চিন্তা, অসুস্থ কামনা ঢুকিয়ে দেয় যে, আমরা মনে করবো সেগুলো আসলে আমাদের নিজেরই চিন্তা-ভাবনা, নিজের আবেগ এবং অনুভুতি। যেহেতু আমরা সবসময় শয়তানের ব্যাপারে সাবধান থাকি না, তাই কখন যে শয়তান আমাদের মধ্যে তার কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদেরকে দিয়ে তার কাজ করানো শুরু করে দেয়, তা আমরা ভুলে যাই। একারণেই আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সাবধান করেছেন—

যারা আল্লাহর প্রতি সচেতন থাকে, যখনি তাদের মনে শয়তান কোনো কুচিন্তা দেয়, তারা সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তখনি তারা পরিস্কার দেখতে পায় আসলে কী ঘটছে।  [আ’রাফ ৭:২০১]

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে একটা চমৎকার ফর্মুলা শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে শয়তানকে প্রতিহত করতে হবে। যখনি অনুভব করা শুরু করবো যে, আমরা এখন যেই কাজটা করছি, তা করা ঠিক হচ্ছে না, সাথে সাথে আল্লাহর تعالى কথা মনে করবো এবং বলবো, “আউ’যু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম” – “আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই বিতাড়িত শয়তানের কাছ থেকে”। দ্রুত কোনো কু’রআনের আয়াত মনে করার চেষ্টা করবো, যেটা পরিস্থিতির সাথে মিলে যায়। যেমন, আমরা হয়ত কারও প্রতি দুর্বলতা অনুভব করছি, এমন দিকে তাকাচ্ছি, যেদিকে আমাদের তাকানোর কথা না, সাথে সাথে নিজেকে মনে করিয়ে দেই—

বিশ্বাসী পুরুষদেরকে বলো, যেন তারা তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের গোপন অঙ্গকে সাবধানে রক্ষা করে, এটা তাদের জন্যই বেশি কল্যাণকর। আল্লাহ খুব ভালো করে জানেন তোমরা কী করো।  বিশ্বাসী নারীদেরকে বলো, যেন তারা তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের গোপন অঙ্গকে সাবধানে রক্ষা করে … [নুর ২৪:৩০]

তবে দরকারের সময় জরুরি কোনো আয়াত মনে করাটা খুব কঠিন, যদি না আমরা নিয়মিত কিছু জরুরি আয়াত ঝালিয়ে না নেই।

তবে আমরা যেন আল্লাহর تعالى উপদেশ মনে রাখতে না পারি, সে জন্য শয়তান যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। কারণ তার প্রথম সাফল্যের ঘটনা ছিল আদমকে عليه السلام ভুলিয়ে দেওয়া: আল্লাহ تعالى তাকে কী করতে মানা করেছিলেন। শয়তানের মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর একটি মোক্ষম উপায় হল—

আমাদেরকে ভুলিয়ে দিবে আমাদের কী করা উচিত না

ইনসান শব্দটির একটি অর্থ হল – যে ভুলে যায়। মানুষ ভুলে যায়। এটা তার একটা বিরাট দুর্বলতা। মানুষ যদি সবসময় সবকিছু মনে রাখতে পারতো, তাহলে সে আল্লাহর বাণী জানার পরেও খারাপ কাজ কমই করতো। আর এটা শয়তানের একটা বিরাট সুযোগ। শয়তান যতভাবে পারে চেষ্টা করে আমাদেরকে আল্লাহর تعالى নিষেধ মনে রাখতে না দেওয়ার। আমাদের মাথায় রাজনীতি, মারামারি, ধর্ষণ, মন্ত্রীদের কোটি টাকা আত্মসাৎ, গত দশটি সিরিজের কোন খেলোয়াড়ের স্কোর কত, কোন তারকা কোন ধরণের সালওয়ার-কামিজ পছন্দ করে ইত্যাদি হাজারো ধরণের আবর্জনা তথ্য দিয়ে আমাদের মস্তিস্ক ভরিয়ে ফেলা, যাতে করে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কী করতে বলেছেন এবং কী করতে মানা করেছেন, সেটা আর মনে রাখতে না পারি।

শয়তান আমাদেরকে প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলে – ‘যাও, মাথা ভর্তি ফালতু সব জিনিসপত্র ঢুকাও যেগুলো তোমার কোনো কাজে আসবে না।’ আমরা হয়তো বছরে একটা ভালো আর্টিকেল বা বই পড়লাম, কিন্তু তারপর শয়তান আমাদেরকে দশটা মুভি দেখিয়ে আমাদের ব্রেইনের কোটি কোটি নিউরন আবর্জনা দিয়ে ভরে ফেললো এবং যা কিছু ভালো শিখেছিলাম তার কিছুই যেন মস্তিষ্কে অবশিষ্ট না থাকে, তার জন্য আরও বিশটা হিন্দি, বাংলা বা ইংরেজি সিরিয়াল ঢুকিয়ে দিলো। এরপর আমরা যখনি একা বসে থাকি বা রাতে বিছানায় শুতে যাই, তখন আর আল্লাহর কথা মনে পড়ে না বা কু’রআনের কোন বাণী কানে বাজে না। বরং আমাদের কানে বাজে মুভির ডায়ালগ, চোখ বন্ধ করলে নাচ-গান বা মারামারির দৃশ্য ভেসে উঠে এবং আমরা মুখে কোনো গানের সুর গুন গুন করতে থাকি —এগুলো পরিষ্কার লক্ষণ যে, আমরা নিজেরাই শয়তানকে আমাদের মাথা দখল করে ফেলতে দিয়েছি।

আমাদের সবসময় চেষ্টা করতে হবে, শয়তান যেন আমাদেরকে ভালো কথা, ভালো উপদেশ, কু’রআনের বাণী ভুলিয়ে দিতে না পারে। একারণেই আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ বুঝে শুনে, গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলেছেন, যাতে করে আমরা ভালো জিনিসগুলো ভুলে না যাই। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারি না, কারণ শয়তান আমাদেরকে —

বিনোদনে ডুবিয়ে রাখে

আজকের প্রজন্মে এক ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিয়েছে, যেটা আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন এতটা খারাপ অবস্থা ছিল না। আজকালকার কিশোর, তরুণরা বাসায় এসে ঘণ্টা খানেক কম্পিউটারে গেম খেলে।  তারপর ঘণ্টা খানেক টিভি। তারপর ঘণ্টা খানেক ফেইসবুক, ইউটিউব। তারপর ঘণ্টা খানেক মোবাইলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে বেহুদা আড্ডা মারে। এতসব ব্যস্ততা শেষ হলে ঘুম। পরের দিন স্কুল/কলেজ/চাকরি। তারপর বাসায় এসে আবারো সেই মোবাইল ফোন, ভিডিও গেম, টিভি, কম্পিউটার, ফোন। এত কিছু করার পড়ে তাদের আর ভালো কিছু করার সময় থাকবে কোথায়? আগের প্রজন্মের যেমন মাদকাসক্তি ছিল, সেরকম আজকের প্রজন্মের ‘বিনোদনাসক্তি’ মহামারির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। একদিন টিভি না দেখে এরা থাকতে পারে না। সকালে, বিকালে, রাতে কখন ফেইসবুকে যাবে, তার জন্য জান আকুপাকু করতে থাকে। মোবাইল ফোন নষ্ট হয়ে গেলে এরা ডিপ্রেশনে চলে যায়।

আজকাল আর শয়তানদেরকে বেশি কষ্ট করতে হয় না। মানুষ নিজেই নিজেকে ধ্বংস করার জন্য এত ব্যবস্থা করে ফেলেছে যে, শয়তানরা আরামে বসে দেখতে থাকে: যখন বাবা-মা তার সন্তানদেরকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়ে শয়তানের কাজ করে দেয়। যখন বাবা-মারা সন্তানদেরকে খুনাখুনির ভিডিও গেম, নিজের ঘরে বসে যা খুশি করার জন্য ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং অবাধ ইন্টারনেটের সংযোগ এনে দিয়ে সন্তানদেরকে মানুষ থেকে শয়তান বানিয়ে দেয়। মানবজাতিকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করে মানুষরূপী শয়তান দিয়ে পৃথিবী ভরিয়ে ফেলার যে মহাপরিকল্পনা শয়তানের রয়েছে, তা বাস্তবায়নে অধিকাংশ মানুষ আজকাল নিয়মিত নিষ্ঠার সাথে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছে।

আজকাল টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ভিডিও গেম ছাড়া মানুষ নিজেদেরকে ছোট মনে করে। মাত্র ৩০ বছর আগেও মানুষের এগুলো কিছুই ছিল না। এর কারণ হল শয়তানের আরেকটি অন্যতম কৌশল—

আল্লাহর تعالى প্রতি কৃতজ্ঞ হতে না দেয়া

আল্লাহ تعالى যখন ইবলিসকে তার সান্নিধ্য থেকে বের করে দিচ্ছিলেন, তখন ইবলিস একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শপথ করেছিল, যা থেকে তার মানুষকে ধ্বংস করার অন্যতম একটি প্রধান কৌশল সম্পর্কে জানা যায়—

(ইবলিস বলল) “আমি মানুষের কাছে আসবো ওদের সামনে থেকে, ওদের পেছন থেকে, ওদের ডান দিক থেকে এবং ওদের বাম দিক থেকে। আপনি দেখবেন ওরা বেশিরভাগই কৃতজ্ঞ না। [আ’রাফ ৭:১৭]

কু’রআনে আল্লাহ تعالى প্রায় ৬০টি আয়াতে কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন। এর মধ্যে একটি বিখ্যাত আয়াত হল—

মনে পড়ে তোমাদের প্রভু কথা দিয়েছিলেন, “যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমি তোমাদেরকে আরও দিতেই থাকবো। কিন্তু তোমরা যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমার শাস্তি কঠিন। [ইব্রাহিম ১৪:৭]

এখানে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কথা দিয়েছেন যে, যদি আমরা কৃতজ্ঞ হই, তাহলে তিনি تعالى আমাদেরকে দিতেই থাকবেন। নিশ্চয়ই শয়তান চাইবে না আমরা জীবনে আরও বেশি পাই, আরও ভালো থাকি। একারণে শয়তানের সবসময় চেষ্টা থাকে কীভাবে আমাদেরকে অসুস্থ বিনোদনে বুঁদ করে রাখা যায়, যেই বিনোদন আমাদেরকে কখনই পরিতৃপ্তি দেয় না। কীভাবে আমাদেরকে ভুলিয়ে দেওয়া যায় যে, আল্লাহর تعالى অনুগ্রহে আমরা জীবনে কত কিছুই না পেয়েছি।

আল্লাহ تعالى আমাদের প্রত্যেককে অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছেন, কিন্তু তারপরেও আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ হই না। বরং সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকি কখন সেগুলো হারিয়ে ফেলব। কারণ শয়তান আমাদেরকে—

সবসময় সন্মান, সম্পত্তি হারানোর ভয়ে রাখে

মানুষকে অভাবের ভয় দেখানোর পদ্ধতিটি শয়তান হাজার হাজার বছর থেকে সফল ভাবে প্রয়োগ করে আসছে। আজো কোটি কোটি মানুষ কাজ করতে করতে তাদের জীবন শেষ করে ফেলে: যতটা পারা যায় সম্পত্তি জমানোর জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবরে যায় নগ্ন হয়ে একটা সাদা চাঁদর জড়িয়ে; সমস্ত সম্পত্তি, উপাধি, ক্ষমতা পিছনে ফেলে। যাদের ঈমান দুর্বল, শয়তান তাদেরকে সবসময় এসব কিছু হারানোর ভয়ে রাখে, যাতে করে তারা আল্লাহর تعالى উপর ভরসা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে মানুষ হয় কিপটা হয়ে জীবন পার করে, না হয় সম্পত্তি ধরে রাখার জন্য এমন কোনো খারাপ কাজ নাই যেটা করে না। শয়তানের এই পদ্ধতিকে আল্লাহ تعالى কু’রআনে বলেছেন—

শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায়, আর তোমাদেরকে অশ্লীল কাজ করতে তাগাদা দেয়। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং প্রাচুর্যের নিশ্চয়তা দেন। আল্লাহ তো সবকিছু ঘিরে আছেন, তিনি সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৬৮]

আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে, শয়তান আমাদেরকে সবসময় আরও চাওয়ার, আরও পাওয়ার জন্য খোঁচা দিতে থাকবে। আমাদের জীবনে যতই থাকুক, আমরা শান্তি পাবো না। আমরা আরও চাইতেই থাকবো। কারণ, যখন আমরা জীবনে যা পেয়েছি তা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যাবো, তখন আমরা ধিরস্থির হয়ে যাবো এবং আল্লাহর تعالى প্রতি কৃতজ্ঞ হবো। যার ফলে আমাদের ভেতরে প্রশান্তি আসবে এবং তা আমাদের পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের ছেলে-মেয়েগুলো সুস্থ পরিবারে বড় হয়ে আদর্শ মানুষ হবে। তখন তারা সমাজের মধ্যে সুখ, শান্তি ছড়িয়ে দিবে। শয়তান কোনোভাবেই চায় না এর কোনোটাই হোক। তাই যেভাবেই হোক শয়তান কখনও আপনাকে জীবনে ধিরস্থির হয়ে, নিজেকে নিয়ে ভাবার, আল্লাহকে تعالى নিয়ে ভাবার, পরিবারকে নিয়ে ভাবার সুযোগ হতে দিবে না। এর সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হল, আমাদের একটা নতুন মডেলের গাড়ি কেনার জন্য পাগল করে দেওয়া। একটা নতুন মডেলের ল্যাপটপ কিনে লোকজনকে দেখানোর জন্য অস্থির করে দেওয়া। ২০ ইঞ্চি টিভিটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেলে দিয়ে একটা ৪০ ইঞ্চি টিভি কেনার জন্য তাগাদা দেওয়া, যেন আমরা প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবের সামনে মুখ দেখাতে পারি। কারণ, শয়তানের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাকে—

আল্লাহর تعالى কথা ভুলিয়ে দেওয়া

মানুষের স্বভাব হচ্ছে শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে এমন সব ব্যাপার নিয়ে দিনরাত চিন্তা করা, যুক্তিতর্ক করা, বই লেখা, লেখকের সমালোচনা করা, দিনরাত ইন্টারনেট ব্রাউজ করা—যা তাকে নিজেকে সংশোধন করা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাকে এমন সব কাজ করা থেকে ভুলিয়ে রাখে, যেগুলো আল্লাহ تعالى আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তা মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে একদিন জান্নাতের বাগানে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু না। মানুষ যত সব অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে দিনরাত তর্ক করে। অন্যের কাছে নিজের জ্ঞান জাহির করার চেষ্টা করে। অন্যের ভুল ধরে অসুস্থ আনন্দ পাবার চেষ্টা করে। যাবতীয় অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে, তার পেছনে সময় নষ্ট করে, শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের এবং অন্যের সর্বনাশ ডেকে আনে।

কিছু মানুষ আছে যাদের উপর শয়তান পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। এধরনের মানুষের চিন্তা-ভাবনা, কাজকর্ম, অনুভুতি, আবেগ —সবকিছুই শয়তানের দখলে চলে গেছে। এরা কথা বললে খারাপ কথা বলে যা শুনলে মানুষ কষ্ট পায়, বিভ্রান্ত হয়ে যায়, মানুষে-মানুষে সমস্যা তৈরি হয়। এদের কাজগুলো বেশিরভাগই হারাম কাজ। যেমন, টিভি দেখলে এরা দেখে তারকাদের সাক্ষাতকার, মিউজিক শো, ড্যান্স কম্পিটিশন, নানা ধরণের অসুস্থ সিরিয়াল। মুভি দেখলে দেখে সব মারামারি, খুনাখুনি, হরোর মুভি, না হয় হারাম প্রেম-ভালবাসা, পরকীয়ার মুভি। খবরের কাগজে এরা সব আজেবাজে খবর পড়ে— নেতাদের কাঁদা ছোড়াছুড়ির ঘটনা, ধর্ষণের রগরগে বর্ণনা, তারকাদের গোপন কেলেঙ্কারির ঘটনা। কম্পিউটারে টরেন্ট দিয়ে দিন-রাত মানুষের পরিশ্রম করে বানানো সফটওয়ার, ভিডিও, অডিও বিনামূল্যে অন্য চোরদের কাছ থেকে চুরি করে। ইন্টারনেটে গেলে এরা বেশিরভাগ সময় পর্ণ, সিনেমা, সিরিয়াল; না হয় ফেইসবুকে পরকীয়া, অবৈধ মেলামেশা, ডেটিং সাইটে মিথ্যা যোগ্যতা দিয়ে অন্যদেরকে পটানোর চেষ্টা করে। মোবাইল ফোনে বন্ধু বান্ধবের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গীবত। এর নামে ওকে লাগানো, ওর গোপন খবর ফাঁস করে দেওয়া। এভাবে এরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত যত ধরণের শয়তানী কাজ করা যায়, তার সবই করে। এরা তাদের মস্তিস্কের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে দিয়ে দিয়েছে। তাদের চালকের আসনে আর তার বিবেক বসে নেই, বসে আছে শয়তান।

শয়তান এদের উপরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে এবং তাদেরকে আল্লাহর কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। এরা শয়তানের দল। সাবধান! এই শয়তানের দল একদিন ধ্বংস হয়ে যাবেই। [মুজাদিলা ৫৮:১৯]

এই ধরণের মানুষদের সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে। আল্লাহ تعالى এদেরকে শয়তানের দল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এরা আর সাধারণ মানুষ নেই। আল্লাহর দৃষ্টিতে এরা মানুষরূপী শয়তান। এরা আমাদের বাবা-মা, ভাইবোন, ছেলে-মেয়ে যেই হোক না কেন, সাবধানে থাকতে হবে, যেন তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে বা তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা আল্লাহকে تعالى সন্তুষ্ট রাখার কথা ভুলে না যাই, আল্লাহর تعالى বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু না করি। আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আমরা পৃথিবীতে এসেছি আল্লাহকে تعالى খুশি রেখে নিজে ভালো থাকার জন্য। আল্লাহর تعالى বিনিময়ে অন্যদেরকে খুশি রাখার জন্য নয়। তাই কখনও নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নিজের জীবন শেষ করবো না। কখনও বাবা-মার অন্যায়ের সমর্থনে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে শেষ করবো না। মানুষরূপী শয়তান বসের হয়ে জঘন্য কাজ করে নিজের উপরে আল্লাহর تعالى আক্রমণ ডেকে আনবো না। এদের কাছ থেকে আমরা সসন্মানে সরে আসবো, কারণ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সাবধান করেছেন—

তুমি এমন কাউকে পাবে না যারা সত্যিই আল্লাহ এবং শেষ বিচার দিনে বিশ্বাস করে, কিন্তু একই সাথে তাদেরকেও ভালবাসে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যায়, যদিও কিনা তারা তাদেরই বাবা, ছেলে, ভাই বা নিজেদের কোনো দল বা জাতির হয়। [মুজাদিলা ৫৮:২২]

উপসংহার

সুরা আন-নাস হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রুর কাছ থেকে আশ্রয় চাওয়া। আমাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে সংঘবদ্ধ বিরাট জ্বিন এবং মানুষ শয়তান বাহিনী। এদের নিরন্তর প্রভাব, কুমন্ত্রণা, প্ররোচনা থেকে প্রতিদিন নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য অনেক শক্তি দরকার। আমাদের সৌভাগ্য যে, এই যুদ্ধে আমাদের পাশে আছেন খোদ বিশ্ব জগতের প্রতিপালক, সর্বশক্তিমান স্রস্টা। আমরা তাঁর تعالى প্রতি নিবেদিত হয়ে, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পার করে, তাঁর কাছে আশ্রয় চাইলেই, তিনি تعالى আমাদেরকে শয়তান বাহিনীর সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে সহযোগিতা করবেন।

[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্‌শাফ। [৩৯৩] Conditions of du’aa’ being accepted by Allaah – islamqa.info. (2017). Islamqa.info. Retrieved 30 May 2017, from https://islamqa.info/en/13506

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

8 thoughts on “যারা জ্বিন এবং মানুষ — আন-নাস”

  1. মাশা—আল্লা-হ্। এই লেখাটির জন্য আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

  2. সত্যিই খুব ভাল লিখা।মানুষকে হেদেয়াতের জন্য এগুলো কাজে আসতে পারে,এবং বিচারের দিনে আপনার মুক্তির এটা একটাউছিলা হোক।

  3. কুরআনের আলো.কম এই পেজটা আমার মনের মতো একটা পেজ পেয়েছি। আল্লাহ তা’আলা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।আমিন
    আমার প্রশ্নঃ আমি এক মজলিসে বলেছি আল্লাহ তা’আলা বিচার করবেন মুসলমানদের, অমুসলিমদের বিনা বিচারে জাহান্নাম পাঠাবে।এই কথাটি কি সঠিক বলেছি নাকি ভুল বলেছি।যদি সঠিক বলে থাকি তাহলে কুরআনের আয়াত নং বলবেন।

    1. অমুসলিম আসলে দুই প্রকার – আহ্লুল ফাত্রাহ এবং কাফির। আহ্লুল ফাত্রাহ হচ্ছে যাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছায়নি বা যাদের পক্ষে ইসলাম বোঝা সম্ভব ছিল না, সেটা বয়স, প্রতিবন্ধী ইত্যাদি কারণে হতে পারে। আর কাফির হচ্ছে তাদের কাছে ইসলাম পৌঁছেছে এবং তারা তা সত্য জেনে শুনে অস্বীকার করেছে। কাফির অর্থ অস্বীকারকারী। অস্বীকার মানুষ তখনি করতে পারে, যখন সে কোনো কিছু জানে। না জানলে তো আর সেটা অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
      অমুসলিমরা জাহান্নামে যাবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর কুরআনেই আছে। ফিরাউন মুসা (আ) কে সরাসরি এই প্রশ্ন করেছিল এবং মুসা (আ) এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন —
      [Pharaoh] said, “Then what is the case of the former generations?”
      [Moses] said, “The knowledge thereof is with my Lord in a record. My Lord neither errs nor forgets.”
      মুসা (আ) বলতে পারতেন, ওরা সবাই ভুল পথে ছিল এবং ওরা সবাই জাহান্নামি। কিন্তু তিনি সেটা বলেননি।

      তার উত্তরটা হচ্ছে সঠিক উত্তর যা মুসলিমরা বলবে। অন্য কিছু যদি মুসলিমরা বলে, তাহলে তারা কুরআনের বিরুদ্ধে যাবে।

      আরও দেখুন
      “And We never punish until We have sent a Messenger (to give warning)” [al-Isra’ 17:15]
      কারো কাছে বাণী না পৌঁছালে আল্লাহ তাকে কখনো শাস্তি দেবেন না।

      আবার দেখুন
      Every time a group is cast therein [into Hell], its keeper will ask, Did no warner come to you? They will say, Yes indeed; a warner did come to us, but we belied him and said: Allaah never sent down anything (of revelation), you are only in great error. [al-Mulk 67:8]
      And those who disbelieved will be driven to Hell in groups, till, when they reach it, the gates thereof will be opened (suddenly like a prison at the arrival of its prisoners). And its keepers will say, Did not the Messengers come to you from yourselves, – reciting to you the Verses of your Lord, and warning you of the Meeting of this Day of yours? They will say: Yes, but the Word of torment has been justified against the disbelievers! [al-Zumar 39:71]

      এখানে দেখুন কাফিররা জাহান্নামে যাওয়ার সময় স্বীকার করছে যে, তাদের কাছে আল্লাহর বাণী এসেছিল এবং তারা তা অস্বীকার করেছিল।

      কুরআনে কোথাও আপনি পাবেন না যে, কেউ বলছে, আমাকে কেন জাহান্নামে দেওয়া হচ্ছে? আমি তো ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না?

      এই ফাতওয়াটি দেখুন—
      https://islamqa.info/en/answers/13350/if-kaafirs-have-good-morals-will-they-enter-paradise-will-the-children-of-the-kuffaar-enter-paradise

      আমরা কি বলতে পারি কে জাহান্নামে যাবে? – এই লেকচারটা দেখুন।
      https://www.youtube.com/watch?v=K7gedXcWmUI

  4. মাশাআল্লাহ, খুবই চমৎকার, তথ্যসমৃদ্ধ আর প্রাণবন্ত লিখা। আমি এই আর্টিকেল তিনবার পড়লাম আর অ্যাপ নামিয়ে রাখলাম।

    আপনার লিখা আমাকে নতুনভাবে চিন্তা করার তাগিদ দিলো। আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে উত্তম নিয়ামত দান করুক। ইনশাআল্লাহ, আমার দোয়াতে আপনি থাকবেন।

Leave a Reply to md.mostafizur rahman Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *