আমরা যখন দান করতে যাই, তখন আমাদের অনেকেরই বেশ কষ্ট হয়। মনে হয়, ইশ! নিজের এত কষ্টের টাকা অন্যকে দিয়ে দিলাম, হায় হায়, এই টাকাটা দিয়ে কত কিছু করতে পারতাম। অথচ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, আমাদের যা কিছু আছে, তার সবই তাঁর দেওয়া। তিনি تعالى আমাদেরকে ‘আমাদের সম্পত্তি’ খরচ করতে বলছেন না, বরং বলছেন, তিনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে যেন আমরা খরচ করি।
সময় নিয়ে চিন্তা করলেই আমরা দেখবো, আমরা জীবনে যা কিছুই অর্জন করেছি, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আল্লাহর تعالى দেওয়া। যদি আল্লাহ تعالى আমাদেরকে মেধা, বুদ্ধি, হাত- পা, চোখ-কান, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, উপকারী মামা-চাচা-খালু না দিতেন, তাহলে আমাদের অর্জনগুলোর কিছুই হতো না। কু’রআনে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে যখন দান করতে বলেন, তখন তিনি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেন যে, আমরা দান করছি তাঁরই দেওয়া রিজক থেকে।
আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছেন যে, আমরা যেন সেই দিন আসার আগেই জলদি দান করি, যেদিন আর দান করার কোনো সুযোগ থাকবে না—
বিশ্বাসীরা, সেই দিন চলে আসার আগেই দান করো, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে, যেদিন কোনো বিনিময় করা যাবে না, কোনো প্রাণের বন্ধু কাজে আসবে না, কোনো সুপারিশও না। আর যারা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে, তারাই হচ্ছে অন্যায়কারী। [আল-বাক্বারাহ ২৫৪]
এই আয়াতে আমরা ক্রিমিনাল সাইকোলজি শিখব। যারা দান করতে চায় না, নিজের কাছে সম্পত্তি ধরে রাখে, তারা সেটা করে তিন ধরনের ভুল ধারণা থেকে—
১) বিনিময়
প্রথমে অপরাধীরা চেষ্টা করে টাকা খাওয়ানোর, সম্পত্তির লোভ দেখানোর: “জজ সাহেব, আমার কেসটা ছেড়ে দ্যান, আমি আপনাকে খুশি করে দিবো। উত্তরায় আমার অনেক প্লট আছে। আপনার রঙিন পানির সাপ্লাই নিয়ে আর কোনো চিন্তা করতে হবে না।” কিয়ামাতের দিন কেউ যদি গিয়ে বলে, “আমি তো তিন-তিনবার হাজ্জ করেছি! এই দেখেন আমার পাসপোর্ট: তিনবার ভিসা দেওয়া আছে। সুদের লোন নিয়ে কেনা আমার একমাত্র বাড়িটা তিনটা হাজ্জ দিয়ে মাফ করা যায় না?” আল্লাহ تعالى বলে দিয়েছেন যে, তাঁর সাথে এসব কিছুই চলবে না: “কোনো বিনিময় নেওয়া হবে না।”
আমাদের সব হারাম সম্পত্তি হালাল করে যেতে হবে, যাদের হক মেরে দেওয়া হয়েছে, তাদের হক আদায় করে যেতে হবে। সেটা না পারলে সব হারাম সম্পত্তি দান করে দিতে হবে। কিন্তু হারাম টাকায় করা সম্পত্তি সারাজীবন ভোগ করে, মানুষের হক মেরে গিয়ে, তারপর সেটা সালাত, সিয়াম, হাজ্জ দিয়ে বিনিময় করার প্রস্তাব দেওয়া যাবে না। কিয়ামাত এধরনের ব্যবসা করার জায়গা নয়।
২) সম্পর্ক
টাকা খাওয়ানোর সুযোগ না থাকলে অপরাধীরা বন্ধুবান্ধবের দাপট খাটানোর চেষ্টা করে। “অমুক মন্ত্র আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। আমি নকল সাপ্লাই দিয়ে ওকে পাশ করিয়েছি। কার এত সাহস আমাকে পুলিশের ভয় দেখায়?” —এভাবে তারা অন্যায় করে উপরের লেভেলের বন্ধুদের দাপটে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। “কোনো প্রাণের বন্ধু কাজে আসবে না” —আল্লাহর تعالى সামনে তার দলের সাঙ্গপাঙ্গরা, ভাড়াটে খুনিরা, প্রাণের দোস্তরা কেউ কিছুই করতে পারবে না। উলটো ওরা সবাই ভয়ে, আতঙ্কে থর থর করে কাঁপতে থাকবে—নিজেদেরকে কীভাবে বাঁচানো যায়, সেই চিন্তায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে যাবে।
আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বিশেষভাবে خُلَّة অর্থাৎ খুবই গভীর সম্পর্কের বন্ধুদের কথা বলেছেন। একদম জানের দোস্তরা, যারা কিনা দুনিয়াতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করে, বিপদে বাঁচানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করে, সেই খালিল বা প্রাণের বন্ধুরাও সেদিন কোনো কাজে আসবে না।
সেদিন আমরা যখন নিজেদের দোষে জান্নাত হারিয়ে ফেলব, তারপর ভয়ংকর কিছু সত্তা এসে নিষ্ঠুরভাবে আমাদেরকে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামের আগুনের দিকে নিয়ে যেতে থাকবে, তখন আমরা যতই হাহাকার করি—
- “আমার ছেলেটা আমাকে শেষ করে দিয়েছে। ওকে ধরেন! ওর পড়ালেখার জন্য দিনরাত দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে আমি নামাজ পড়তে পারিনি। ওকে নিয়ে যান, আমাকে ছেড়ে দেন!”
- “আমার বাবা-মা তো আমাকে কোনোদিন ইসলাম শেখায়নি। তারা আমাকে ইসলাম শেখালে আমি এই ভুল করতাম না। আগে আমার মা-বাবাকে ধরুন, আমাকে ছেড়ে দেন!”
- “আমার স্বামীর জন্য আমি হিজাব করিনি। আমার স্বামীকে জাহান্নামে নেন, আমাকে বাঁচান! আমি তো বুঝতে পারিনি এরকম হবে!”
- “আমার বউয়ের শপিং-এর খরচের জন্য দিনরাত চাকরি-ব্যবসা করতে গিয়ে আমি ইসলাম শিখতে পারিনি। আমার তো কোনো দোষ নেই! আমার বউকে জাহান্নামে নেন। প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দেন!”
—কোনো লাভ হবে না। জাহান্নামের আগুনের শিখা ক্ষুধার্ত হিংস্র বাঘের মতো আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
يُبَصَّرُونَهُمْ ۚ يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِي مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ بِبَنِيهِ ﴿١١﴾ وَصَاحِبَتِهِ وَأَخِيهِ ﴿١٢﴾ وَفَصِيلَتِهِ الَّتِي تُؤْوِيهِ ﴿١٣﴾ وَمَن فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ يُنجِيهِ ﴿١٤﴾ كَلَّا ۖ إِنَّهَا لَظَىٰ
সেদিন তাদের একে অন্যকে দেখতে বাধ্য করা হবে। অন্যায়কারীরা চাইবে যেন সে নিজেকে সেই দিনের শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারে: তার নিজের সন্তান, সহধর্মিণী, ভাই, নিকটাত্মীয়দের বিনিময়ে হলেও, যারা কিনা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। এমনকি পৃথিবীর সবার বিনিময়ে হলেও সে নিজেকে বাঁচাতে চাইবে। কখনই নয়! সেটা এক হিংস্র আগুণের শিখা! [আল-মা’আরিজ ৭০:১১-১৫]
৩) সুপারিশ
বনী ইসরাইল মনে করতো: তারা হচ্ছে এক বিশেষ জাতি, যারা একমাত্র সঠিক ধর্মের উপর আছে।[১০] তাদেরকে আল্লাহ تعالى অনেক সন্মান দিয়েছেন, কারণ তারা বড় বড় নবীদের عليه السلام বংশধর।[৬] এছাড়াও তাদের জন্য আল্লাহ تعالى মহাবিশ্ব পরিচালনার স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে, এমন সব অসাধারণ অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন, যেটা তিনি এর আগে হাতেগোনা কয়েকবার মাত্র করেছেন। শুধু তাই না, তারা মনে করত: তারা যতই কুকর্ম করুক, তাদের নবীদের عليه السلام উসিলায় ঠিকই তারা কিয়ামাতের দিন পার পেয়ে যাবে—হাজার হলেও মুসা عليه السلام আছেন না? খোদ আল্লাহর تعالى সাথে কথা বলেছেন এমন একজন নবী! তার মতো এতো বড় নবী عليه السلام সুপারিশ করলে তাদের জান্নাতে যাওয়া আর ঠেকায় কে?[৬]
এই একই ধারণা আজকাল অনেক বনী ইসরাইল টাইপের মুসলিমদের মধ্যেও আছে, যারা মনে করে: তাদের বিরাট সব গুনাহ রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام এর অনুরোধ শুনেই আল্লাহ تعالى মাফ করে দেবেন। আবার অনেকে মনে করে: একজন পির ধরলে, বা কোনো মাজারে মুরিদ হলে, বা কোনো শেখের-মাওলানার বায়াত নিলে, কিয়ামাতের দিন সেই পীর-শেখ-মাওলানা তাদের হয়ে আল্লাহর تعالى কাছে তদবির করে জান্নাতে যাবার জন্য ভিসা করে দিবেন।
একমাত্র আল্লাহর تعالى যে ক্ষমতা আছে, সেই ক্ষমতা কোনো মানুষকে দিয়ে দেওয়া—এগুলো শির্ক এবং এই সব শাফাআতের ধারণা যে ভুল, তা আল্লাহ تعالى কু’রআনে একবার দুইবার নয়, বহু বার, বহু ভাবে, বহু উদাহরণ দিয়ে আমাদের সাবধান করেছেন। আমরা কু’রআনের এত স্পষ্ট আয়াত পড়েও কেন জানি মানতে চাই না। অন্যান্য বই থেকে সুপারিশের সমর্থনে কী কী পাওয়া যায়, সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আল্লাহ تعالى সুপারিশের ব্যাপারে একদম পরিষ্কার আরবিতে বার বার কী বলেছেন, তাতে আমাদের কিছুই যায় আসে না। বরং আবু অমুক, ইবন তমুক কী বলেছেন, সেটাই হচ্ছে আসল ব্যাখ্যা।
মানুষ কেন সুপারিশ খোঁজে?
আসুন বোঝার চেষ্টা করি মানুষ কেন এই ধরনের শির্ক করে শাফাআত পাওয়ার চেষ্টা করে। ধরুন, আপনি একটা কোম্পানিতে চাকরি করেন, যার চেয়ারম্যান খুবই ন্যায়পরায়ণ মানুষ। তিনি কাউকে কোনো ছাড় দেন না। প্রত্যেকের সাথে সমান আচরণ করেন এবং প্রত্যেকের কাজের খুঁটিনাটি হিসাব রাখেন। এখন তার অধীনে যে ডিরেকটররা আছে, তার মধ্যে একজন হচ্ছে আপনার মামা। আপনি জানেন যে আপনি যদি অফিসে একটু দেরি করে আসেন, মাঝে মধ্যে না বলে ছুটি নেন, হাজার খানেক টাকা এদিক ওদিক করে ফেলেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। চেয়ারম্যানের কাছে যদি একদিন ধরা পড়েও যান, আপনার মামা ঠিকই আপনাকে বাঁচিয়ে দেবে। হাজার হোক, মামা তো। সেজন্য মামাকে খুশি রাখার জন্য আপনি প্রতি মাসে তার বাসায় উপহার নিয়ে যান, অফিসে তাকে শুনিয়ে সবার কাছে তার নামে প্রশংসা করেন, তার জন্মদিনে বিপুল আয়োজন করে অনুষ্ঠান করেন। যেভাবেই হোক মামাকে হাতে রাখতেই হবে। মামা না থাকলে সর্বনাশ।
এই হচ্ছে শির্কের সমস্যা। মুসলিমরা জানে যে, আল্লাহ تعالى হচ্ছেন পরম বিচারক, পরম ন্যায়পরায়ণ। তিনি সব কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করবেনই। এদিকে মানুষ যে প্রতিদিন ইসলামের বড় বড় নিয়ম ভাঙছে, নিজের সুবিধার জন্য ঘুষ দিচ্ছে, সুদ নিচ্ছে– এগুলোর প্রত্যেকটা যদি গুণে গুণে হিসাব করা হয় এবং প্রতিটা অপকর্মের বিচার করা হয়, তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে! জান্নাত পাওয়ার কোনো আশাই থাকবে না! তাহলে কী করা যায়? দেখি আল্লাহর تعالى অধীনে কাউকে হাত করা যায় কি না। তাহলে তাকে দিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহকে تعالى বলালে তিনি হয়তো বড় দোষগুলো মাফ করে দিবেন।
আবার অনেকে মনে করেন: কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ تعالى তার বিচার করবেন, এবং বিচারের পরে দেখা যাবে তার অবস্থা খুবই খারাপ, তখন সে কিয়ামতের মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে তার পির-দরবেশ-শেখ-মাওলানাদেরকে খুঁজে বের করতে পারবে এবং তাদেরকে গিয়ে অনুরোধ করতে পারবে, যেন তারা সুপারিশ করে তাকে বাঁচাতে পারে। আবার অনেকে মনে করেন: আল্লাহ تعالى যখন কিয়ামতে তার বিচার করে তার উপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হবেন, তখন সে যদি মরিয়া হয়ে আল্লাহকে تعالى অনুরোধ করে, “ও আল্লাহ, আমি লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ খেয়েছি জানি—আমি খুবই দুঃখিত। কিন্তু আপনি আমার অমুক-বাগ শরীফের হুজুরকে একবার ডাকেন। আমি বিশ বছর তার বায়াতে ছিলাম। তাকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছি। উনি আমার জন্য কিছু বলবেন।”
আবার অনেকে ধরে নেয় যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ تعالى যখন বিচার করে তার উপরে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে থাকবেন, তখন সে যদি আল্লাহকে تعالى অনুরোধ করে, “ও আল্লাহ, আমি পর্দা না করে সারা জীবন নির্লজ্জের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি, বান্ধবীদের কাছে ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গিবত করেছি, হিন্দি সিরিয়াল দেখে শাশুড়ির সাথে অনেক কুটনামি করেছি—আমি অনেক অপরাধ করে ফেলেছি। কিন্তু আপনি একটু নবীকে عليه السلام ডাকেন। আমি ওনার জন্য অনেক দুরুদ পড়েছি, তাঁর জন্য কত মিলাদ দিয়েছি, কত সুন্নত নামাজ পড়েছি। উনাকে একটু ডাকেন, উনি আমার জন্য আপনাকে কিছু বলবেন, প্লিজ।”
আল-বাক্বারাহ’র ৪৮, ১২৩ এবং ২৫৪ —এই তিনটি আয়াতে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে, কেউ অন্য কারও সাহায্যে নিজে থেকে এগিয়ে আসবে না। পির, দরবেশ, মাওলানা, শায়খ—কেউ নিজে থেকে এগিয়ে আসবে না আমাদের অপকর্মের জন্য সুপারিশ করতে, এমনকি তারা করলেও তা গ্রহণ করা হবে না। তারা সবাই, এমনকি আল্লাহর تعالى সবচেয়ে কাছের নবী, রাসুলরাও সেদিন আল্লাহর تعالى ভয়ে থাকবেন, নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তিত থাকবেন[১৭]—
ওরা যাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের প্রভুর অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে—যদিও তারা তাঁর সবচেয়ে কাছের। তারা সবাই তাঁর করুণার আশা করে, তাঁর শাস্তিকে প্রচণ্ড ভয় পায়। নিঃসন্দেহে, তোমার প্রভুর শাস্তি অত্যন্ত ভয় পাওয়ার মতো। [আল-ইসরা ১৭:৫৭]
তার কী হবে যার জন্য শাস্তির হুকুম অবধারিত হয়ে গেছে? তুমি (মুহাম্মাদ) কি তাদেরকে বাঁচাতে পারবে, যারা ইতিমধ্যেই আগুনে নিমজ্জিত? [আজ-জুমার ৩৯:১৯]
শাফাআতের সঠিক ধারণা
তবে কিয়ামতের দিন একেবারেই যে কোনো ধরনের শাফাআত হবে না—সেটা ভুল ধারণা। আল্লাহ تعالى যখন বিশেষ কিছু কারণে কাউকে অনুমতি দিবেন, তখন শুধু তারাই শাফাআত করতে পারবে। কু’রআনের অন্যান্য আয়াতে এই ধরনের সুপারিশের ঘটনা বলা আছে—
সেদিন কোনো সুপারিশ কাজে লাগবে না, তবে তার সুপারিশ ছাড়া, যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দিবেন, যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট। [সূরা তাহা ২০:১০৯]
শাফাআত পাবার জন্য তিনটি শর্ত[২৬৫] জরুরি—
১) আল্লাহ تعالى যার শাফাআত গ্রহণ করবেন, তাকে প্রথমে তিনি অনুমতি দিবেন। আল্লাহর تعالى অনুমতি ছাড়া কেউ শাফাআত করতে পারবে না।[২০:১০৯, ২:২৫৫, ৫৩:২৬]
২) যিনি শাফাআত করবেন, তার প্রতি আল্লাহ تعالى সন্তুষ্ট থাকতে হবেন।[২১:২৮, ৫৩:২৬]
৩) যার জন্য শাফাআত করা হবে, তার প্রতি আল্লাহ تعالى সন্তুষ্ট থাকতে হবেন, তার ঈমান থাকতে হবে—নামাজ, যাকাত, গরিবদের হক আদায় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে পাশ করতে হবে।[৭৪:৩৮-৪৮]
যদি আল্লাহ تعالى কারও প্রতি সন্তুষ্ট না হন, সে যদি নিজেই ঘোরতর অপরাধী হয়ে আল্লাহর تعالى ক্রোধের কারণ হয়ে থাকে, তাহলে সে আর শাফাআত পাবে না। শাফাআত পাবার শর্ত হচ্ছে ঈমান থাকা।[৪] যাদের প্রতি আল্লাহ تعالى সন্তুষ্ট, যারা আল্লাহকে تعالى ভয় করে, শুধু তারাই শাফাআত পাওয়ার যোগ্য।[আম্বিয়া:২৮][১৭]
সুতরাং কেউ যদি ধরে নেয়: সে নামাজ না পড়ে, রোজা না রেখে, সামর্থ্য থাকতে যাকাত না দিয়ে, হজ্জ না করে, বড় বড় কবিরা গুনাহ করে, শুধুমাত্র কোনো নবী-পীর-দরবেশের সুপারিশ পেয়ে জান্নাতে চলে যাবেন, তাহলে শাফাআত সম্পর্কে তার একেবারেই ভুল ধারণা আছে। শাফাআত শুধু তারাই পাবে যারা মূলত ঈমানদার। ইসলামের মূল পাঁচটি ভিত্তি সম্পর্কে সে যথেষ্ট নিষ্ঠাবান ছিল, কিন্তু তার দুর্বলতার কারণে সে কিছু পাপ করে ফেলেছে, বা অল্প কিছু ভালো কাজের অভাবে জান্নাত হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে, তখন তাদের শাফাআত পাওয়ার সুযোগ হতে পারে।[১০][৮]
মানুষ একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারে যে, শাফাআতের পেছনে ছোটাছুটি করাটা কতটা বোকামি। কারও যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে বসে কোনো হুজুরের কাছে যাবার সময় থাকে, তাহলে তার সেই সময়টা নফল নামাজ পড়ে, অথবা কু’রআন পড়ে বিরাট সওয়াব অর্জন করে, স্বয়ং আল্লাহকে تعالى আরও বেশি খুশি করাটা কি বেশি যুক্তিযুক্ত নয়? কারও যদি পকেটে যথেষ্ট টাকা থাকে হুজুরের সেবা করার জন্য, তাহলে কি তার সেই টাকাটা গরিব, ইয়াতিম মানুষদেরকে সাদাকা দিয়ে বিশাল সওয়াব অর্জন করে, আল্লাহকে تعالى আরও বেশি খুশি করাটা বেশি যুক্তিযুক্ত নয়? সরাসরি আল্লাহকে تعالى আরও বেশি খুশি করার চেষ্টা না করে, তার অধীনে অন্য কারও জন্য আমাদের সীমিত জীবনের মূল্যবান সময়, সম্পদ ব্যয় করাটা কি কোনো যৌক্তিক কাজ?
সূত্র:
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [২৬৬] শেখ ইয়াসির কাজির শাফাআতের উপর লেকচার— http://www.youtube.com/watch?v=X5OQ8HSchYE
Waiting to read my most favorite verse no-255.
আল্লাহ আপনার চেষ্টাকে সফল করুক। ওমর ভাই সূচিপত্রে সুরা বাকারার ২০৯ আয়াতের পর বাকারার বাকি আয়াত গুলো নেই। তাই সিরিয়াল অনুযায়ী ২১০-২৫৪ পর্যন্ত আয়াত গুলো ক্রম অনুযায়ী পড়তে অনেক সমস্যা হচ্ছে, সমাধান এগিয়ে আসুন প্লিস। ২১০-২৫৪ এর মাঝে অনেক আয়াত খুঁজেই পাচ্ছিনা।
ধন্যবাদ ভাই, সূচিপত্র সম্পূর্ণ করা হলো।
Assalamu alaikum.vaia 255no Ayat nie kobe likhben??
Wassalam, it will take a while. Lot to study.
Really getting bore with out your new article.pls write something new.May Allah help you to complete verse no 255.
I think the writing which is filled with amazement and entertaining takes our attention quickly. This is because a write usually writes independently to attract the readers. But a writer can’t be independent even if he/she wishes to and has to confined him or herself in some rueles and regulations when something is written on quranic verses. Obviously this is a place where understanding core message is most important regardless amusement. Even then the writer here successfully tried to bring our attention. But we can’t expect it in every chapter. I think what quran wants to say is far more important to us than having attention. surely I also acknoledge the importance of the readers. Hope some of you will consider my opinion.
Omar bhai,
This section was written fantastically. The reason is in my opinion is different information, bold presentation but simply presented. Brother no doubt Allah has given you the ability to write something in a great way but curious to know why some of the previous chapters were decorated with similar kind of examples? I think it took some brightness away. You might have some good reasons which I may not aware of. Would to love to share? Finally may Allah remove our misconceptions through your writing, may Allah bless you brother. May Allah help you to write continuously.