শুধুমাত্র এগুলোই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন — আল-বাক্বারাহ ১৭৩

আমরা যারা মুসলিম প্রধান দেশে থাকি, তারা সাধারণত এই ধরনের আয়াত পড়লে চোখ বুলিয়ে পার হয়ে যাই, কারণ মুসলিম প্রধান দেশে কি আর এসব সমস্যা থাকে নাকি? এগুলো হচ্ছে ‘কুফফার’দের দেশে থাকার সমস্যা। দেখা যাক আসলেই তাই কিনা—2_173_title

2_173মরা প্রাণী, রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা — শুধুমাত্র এগুলোই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু কেউ যদি বাধ্য হয় এগুলো খেতে এবং তার ভেতরে খাওয়ার কোনো আকাঙ্খা না থাকে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খায়, তাহলে তার কোনো পাপ হবে না। আল্লাহ অবশ্যই অনেক ক্ষমা করেন, তিনি নিরন্তর দয়ালু। [আল-বাক্বারাহ ১৭৩]

মরা প্রাণী

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে প্রথমেই ٱلْمَيْتَةَ আল-মাইতাহ হারাম করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে নিজে থেকে মরে যাওয়া, বা কোনো প্রাণীর আক্রমণে মরে পড়ে থাকা প্রাণীর মৃত দেহাবশেষ। লক্ষ্য করুন তিনি تعالى কিন্তু বলেননি যে, মৃত প্রাণীর ‘মাংস খাওয়া’ হারাম, বরং তিনি تعالى বলেছেন ‘মরা জিনিস হারাম’। মৃত জীব খাওয়া, কেনা, বেচা সবকিছুই হারাম। এগুলো থেকে কোনো ধরনের লাভ করাও হারাম। এমনকি নিজেদের পালিত পশুকে মোটা তাজা করার জন্য মৃত কিছু খাওয়ানোও নিষিদ্ধ। তবে ব্যবহারের জিনিস তৈরিতে মৃত প্রাণীর হাড় এবং চুল ব্যবহার করা বৈধ। একইসাথে ট্যানারিতে প্রক্রিয়া করা মৃত প্রাণীর চামড়া ব্যবহার করা বৈধ। তবে মৃত প্রাণীর চর্বি নিষিদ্ধ।[৪] বিভিন্ন তাফসিরে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

খবরের কাগজে আমরা কয়েক বছর থেকেই দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে নানা জেলায়, যেমন: ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, ইত্যাদি জায়গায় দেদারসে মরা গরু, মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে। সরাসরি বিক্রি ছাড়াও শহরের হোটেলগুলোতে নিয়মিত সরবরাহ হচ্ছে মরা গরু, মুরগি। প্রশাসন নিরব। পূর্বাঞ্চলের অ্যানথ্রাক্স সংক্রমিত এলাকাগুলোতে অ্যানথ্রাক্সে মরা গরুর মাংস পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে! এছাড়াও কসাইখানাগুলো অত্যন্ত নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, নোংরা মাটিতে মাংস রেখে বিক্রি হচ্ছে, যা আর হালালের শর্তগুলো পূরণ করে না। এমনকি রাজধানীর হোটেলগুলোতে বাথরুমে, ড্রেনের পাশে মাংস কাটাকাটি, রান্না হচ্ছে। আরও ভয়ঙ্কর খবর হলো ২০১৫ রমযানে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গরু, ছাগলের মাংসের পাশাপাশি শুকরের মাংস রাখা অবস্থায় ধরা পড়েছে। [সুত্রঃ প্রথম আলো, ইনকিলাব, আমার দেশ, জনকণ্ঠ, কালের কণ্ঠ][৩১৩]  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)

হে মানুষ, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং ভালো, পবিত্র আছে, তা খাও — আল-বাক্বারাহ ১৬৮

2_168_title

2_168হে মানুষ, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং ভালো, পবিত্র আছে, তা খাও। আর শয়তানের পথ অনুসরণ করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [আল-বাক্বারাহ ১৬৮]

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলছেন, “হে মানুষ”—এটি শুধু মুসলিমদের জন্যই নয়, বরং সকল যুগের, সকল মানুষের, সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম—সবার জন্য নির্দেশ। এখানে আল্লাহ تعالى শুধুই বলেননি হালাল খাবার খেতে, একইসাথে সেটা তাইয়িবও হতে হবে। তাইয়িব طيب হচ্ছে যা ভালো এবং পবিত্র— দুটোই একসাথে।[১] যা কিছুই খেতে ভালো, দেখতে সুন্দর, শ্রুতিমধুর, সুন্দর ঘ্রাণ —সেগুলোই তাইয়িব।[১৬]

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে যা দেন, সেটা আমাদের জন্য ভালো এবং পবিত্র। কিন্তু মানুষ অনেক সময় অনেক কিছু তৈরি করে যেটা খেতে ভালো হলেও, পবিত্র নয়। যেমন, আল্লাহ تعالى কলা দিয়েছেন, যা তাইয়িব— ভালো এবং পবিত্র। কিন্তু মানুষ যখন এই কলাকে পোকা মারার বিষ ডিডিটি এবং বিদেশ থেকে আনা কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করে[৩১১], তখন সেটা খাওয়ার যোগ্য হলেও, সেটা আর পবিত্র থাকে না, তাইয়িব-এর দুটি শর্ত পূরণ করে না। সুতরাং, এই ধরনের কলা, ফরমালিন দিয়ে রাখা ফল, মাছ খাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না, কুর’আনের এই আয়াতের নিষেধের জন্য এবং নিজের স্বাস্থ্যের জন্য।

একইভাবে আল্লাহ تعالى প্রকৃতিতে পানি, চিনি দিয়েছেন। সেগুলো হালাল এবং তাইয়িব। কিন্তু এগুলোর সাথে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, এসিড, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণের চিনি, রঙ ব্যবহার করে যখন নানাধরণের পানীয় তৈরি করে, তখন সেটা আর তাইয়িব থাকে না।  (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)