আজকে যদি আপনাকে ডাক্তার বলে: আপনার রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং আপনি আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মারা যাবেন, সিঙ্গাপুরে গিয়েও লাভ হবে না—আপনি তখন কী করবেন? আপনি কি তখন কাঁথা জড়িয়ে টিভির সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফালতু তারকা শো, টক শো, হিন্দি সিরিয়াল দেখবেন? আপনি কি পরদিন অফিসে গিয়ে কলিগদের সাথে শেষ বারের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারবেন? আপনি কি আপনার ছেলেমেয়েকে শেষ বারের মতো একটু খুশি করার জন্য ভিডিও গেম কিনে দিবেন, যেখানে তারা রামদা-ছুরি নিয়ে একপাল অর্ধ মৃত, রক্তাক্ত জম্বিকে মেরে কোনো এক বিকৃত কারণে বড়ই আনন্দ পায়? আপনি কি এই অবস্থায় আপনার মেয়েকে নৃত্য শিল্পী বানাবেন, ছেলেকে ব্যান্ডের দলে যোগ দেওয়াবেন, যেন তারা সেগুলো করে আপনার মৃত্যুর পরে আপনার জন্য ‘অশেষ সওয়াব’ অর্জন করে?
না, আপনি তখন এগুলোর কিছুই করবেন না। অথচ আজকে আপনি ঠিকই সেগুলো করে যাচ্ছেন, এটা ভালো করে জেনে যে: আপনি আজকে হোক, কালকে হোক, একদিন না একদিন মারা যাবেনই। তারপর একসময় আপনাকে আবার জাগিয়ে তোলা হবে এবং তারপর আপনাকে ধরে নিয়ে বিশ্বজগতের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবানের সামনে দাঁড় করানো হবে: আপনার জীবনের প্রতি মুহূর্তের হিসাব দেওয়ার জন্য। সেদিন তাঁর সামনে মাথা নিচু করে আপনি তাঁকে কী বলবেন—সেটা কি ঠিক করে রেখেছেন?
কোনো কারণে আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে চাই না। এরকম চিন্তা মাথায় এলেই আমাদের কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। আমরা দ্রুত চিন্তার টপিক পাল্টে ফেলি। যদি আমাদের কোনো বন্ধু বা আত্মীয় আমাদেরকে এই ব্যাপারটি নিয়ে কিছু বলা শুরু করে, আমরা জলদি তাকে বলি, “কী বলছেন এইসব! এই সব মরা-টরার কথা শুনতে ভালো লাগছে না। বাদ দেন। আসেন অন্য কিছু নিয়ে কথা বলি।”
আমরা কোনো এক অদ্ভুত কারণে নিজেদেরকে একধরনের সেলফ ডিলিউশনে (মতিবিভ্রমে) ডুবিয়ে রাখি যে, আগামি কয়েক সেকেন্ড পরে আমি যে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাব না, বা কালকে আমি যে বাসায় ফেরার পথে অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যাব না—এ ব্যাপারে আমি একশ ভাগ নিশ্চিত। আল্লাহর সাথে আমার একধরনের চুক্তি আছে: তিনি আমাকে সত্তর-আশি বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখবেনই। তাই জীবনে অনেক সময় আছে ধর্ম-টর্ম করার। এখন আগে যত পারি চাকরি, ব্যবসা, পার্টি করে; মুভি, হিন্দি সিরিয়াল দেখে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মার্কেটে ঘুরে, লক্ষ টাকা খরচ করে বেড়িয়ে এসে, যত পারি জীবনটা উপভোগ করে নেই। বলা তো যায় না, যদি মরে যাই? তাহলে তো এসব আর করা হবে না।
ইব্রাহিম এবং ইয়াকুব যখন তাদের সন্তানদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, “বাবারা, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দীনকে বেছে নিয়েছেন। তাই খবরদার, আল্লাহর تعالى প্রতি পুরোপুরি অনুগত (মুসলিম) না থাকা অবস্থায় যেন মারা যেও না।” [আল-বাক্বারাহ ১৩২]
এই আয়াতে আমরা দেখতে পাই: দু’জন নবী তাদের সন্তানদেরকে ঠিক একই ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিলেন: তারা যেন সবসময় আল্লাহর تعالى প্রতি অনুগত অবস্থায় থাকে, যেন যে কোনো সময় মৃত্যু এসে হাজির হলে, তাদের মৃত্যুটা হয় ‘মুসলিম’ অর্থাৎ আল্লাহর تعالى প্রতি পুরোপুরি অনুগত অবস্থায়। তারা যেন কখনো এমন অবস্থায়, এমন একটা কাজ করতে গিয়ে মারা না যায়, যখন তারা আল্লাহর تعالى প্রতি পুরোপুরি অনুগত (মুসলিম) ছিল না।
এই আয়াতটি আমাদের জন্য একটা ভয়ঙ্কর সাবধান বাণী। আমরা যতই নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, যাকাত দেই, ইসলামের দাওয়াহ দেই, আমাদের মৃত্যু যেন কখনো এমন অবস্থায় না হয়, যখন আমি আল্লাহর تعالى প্রতি অনুগত ছিলাম না। এমন একটা কাজ করছিলাম, বা এমন এক অবস্থায় চলে গিয়েছিলাম, যা আল্লাহ تعالى ঘৃণা করেন।
আমি যেন কখনো রাত তিনটার সময় ইন্টারনেটে একটা বাজে ভিডিও দেখা অবস্থায় মারা না যাই। আমি যেন কখনো ব্যাংকে হারাম লোণের কাগজে সই করার সময় হার্ট অ্যাটাক করে মারা না যাই। বন্ধু-বান্ধবের সাথে পার্টি করতে গিয়ে মারা না যাই। বিয়ের দাওয়াতে অর্ধ-নগ্ন ভাবে সেজে বাড়ি ফেরার সময় গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মারা না যাই। ঘুষের টাকায় কেনা হারাম বাড়িতে, হারাম বিছানায় শুয়ে মারা না যাই। —এরকম একটা মৃত্যু হবে আল্লাহর تعالى কঠিন নির্দেশের বিরুদ্ধে অন্যায় করা অবস্থায় — আল্লাহর প্রতি চরম অবাধ্য অবস্থায়। এরকম ভয়ঙ্কর লজ্জাজনক, দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু আমার যেন না হয়।
তাই রাত দুইটার সময় ফেইসবুকে একজনের শেয়ার করা একটা ভিডিওতে ক্লিক করার আগে দশবার ভাবি: “যদি এই বাজে ভিডিওটা দেখার সময় আমি মারা যাই?” বন্ধুদের সাথে পার্টিতে যাওয়ার আগে একবার চিন্তা করি: “যদি পার্টিতে যাওয়ার সময় গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মারা যাই?” আত্মীয়ের বিয়ের দাওয়াতে সেজেগুজে যাওয়ার আগে একবার আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করি: “এই সাজে, এই কাপড়ে আল্লাহর تعالى সামনে দাঁড়াতে পারবো?” (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)