বিংশ শতাব্দীতে একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ইতিহাসবিদদের ব্যাপক অপপ্রচারনায় বিবর্তনবাদের মতোই বিতর্কিত একটি ধারণাকে সত্য বলে প্রচার করা হয়েছে। ধারণাটি হলো: মানবজাতি শুরু থেকেই নানা প্রাকৃতিক শক্তিকে পূজা করতো, মূর্তি পূজা করতো। একাধিক ঈশ্বরে বিশ্বাস ছিল মানুষের স্বাভাবিক বিশ্বাস। এক ঈশ্বরে বিশ্বাস ধর্মের বিবর্তনের মাধ্যমে পরে উদ্ভব হয়। অথচ Sir Charles Marston, যিত্নি একজন বিশ্বখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ, তার বইয়ে প্রমাণ দেখিয়েছেন যে, মানবজাতির প্রথম ধর্ম ছিল এক ঈশ্বরে বিশ্বাস বা এর খুব কাছাকাছি একটি বিশ্বাস।[১০] Dr. Stephen Langdon, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, সুমেরীয় এলাকা Kish খোঁড়াখুঁড়ির পর প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করে এই উপসংহারে পৌঁছেন যে, মানবজাতির ইতিহাস হচ্ছে এক ঈশ্বরবাদ থেকে বিকৃত হতে হতে চরম পর্যায়ের বহু ঈশ্বরবাদ এবং নানা ধরনের অশুভ শক্তিতে বিশ্বাস। একইসাথে তারা সবাই মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবনে বিশ্বাস করতো। তার বই Semitic Religion-এ তিনি দেখান যে, প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা সম্পর্কে ব্যাপক অপপ্রচারনা চালানো হলেও, তিনি সকল প্রমাণ দেখে নিশ্চিত যে, সুমেরীয় এবং সেমিটিক সভ্যতাগুলো একসময় এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করতো, তারপরে তারা বহু ঈশ্বরবাদে ডুবে যায়।[১০]
পুরো মানবজাতি একসময় এক ধর্ম অনুসরণ করতো। তারপর আল্লাহ تعالى নবীদের পাঠালেন যারা সুসংবাদ দেন এবং সাবধান করেন। তাদের মাধ্যমে কিতাব পাঠালেন, অকাট্য সত্য দিয়ে, যেন তারা মানুষের মাঝে মতভেদের মীমাংসা করতে পারেন। অথচ যাদেরকে পরিষ্কার প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল, শুধু তারাই অন্যকে দমিয়ে রাখার মনোভাবের কারণে তা নিয়ে মতভেদে জড়িয়ে পড়ে। তারপরে আল্লাহ تعالى বিশ্বাসীদেরকে সঠিক পথ দেখান, সে সব ব্যাপারে, যা নিয়ে তারা মতভেদ তৈরি করেছিল। আল্লাহ تعالى যাকে চান, তাকেই পথ দেখান। [আল-বাক্বারাহ ২১৩]
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, নাস্তিক — এরা হচ্ছে একই আদমের تعالى বংশধর, আমাদের দূর সম্পর্কের ভাই-বোন। একদল প্রতারকের পাল্লায় পড়ে এদের অনেকে ভুল পথে চলে গেছে, যা তারা বুঝতে পারছে না। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে সঠিক পথের দিকে ডাকা। এদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা কখনোই আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না, উল্টো আমাদেরকে আক্রমণ করবে, প্রতিনিয়ত আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। এরা কখনোই চায় না ইসলামের প্রসার হোক। এরা কাফির, এদেরকে আমরা ঘৃণা করি এবং এদের থেকে আমরা নিজেদেরকে সাবধান রাখবো, প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবো।
কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই আছে, যাদেরকে ইসলাম সুন্দর করে বুঝিয়ে একটু সময় দিলেই হবে, তারা মুসলিম হয়ে যাবে। তারা কাফির নয়, তারা শুধুই অমুসলিম বা আহ্লুল ফাতরাহ, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য মুসলিম।[৩৪৫] এদেরই কেউ হয়ে যাবে অনেক বড় আলেম, যাদের কাছে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা—জন্মগত মুসলিমরাই—ইসলামের শিক্ষা নেবো। এরকম বহু উদাহরণ আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। বহু ইসলামিক স্কলার আগে অমুসলিম, এমনকি ইসলাম বিরোধীও ছিলেন। তারপরে তারা ইসলাম খুঁজে পেয়ে মুসলিম হয়ে, তাদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন ইসলামের কাজে। তাই আমাদের কাজ হচ্ছে এই সব অহিংস অমুসলিমদেরকে একই আদমের সন্তান মনে করে, আন্তরিকতার সাথে সত্যের প্রতি আহ্বান জানানো। (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)