গত হাজার বছর ধরে ভারত উপমহাদেশে বিধবারা ভয়ঙ্কর অত্যাচার এবং অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। হিন্দু আঞ্চলিক প্রথা অনুসারে বিধবাদের একসময় স্বামীর চিতায় জীবন্ত জ্বলে মরতে বাধ্য করা হতো। না হলে ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে তাদের অর্ধমৃতের মতো বেঁচে থাকতে হতো। বিধবারা সারাজীবন সাদা কাপড় পড়ে থাকতো, কখনো সাজতে পারত না, প্রথা অনুসারে মাথা কামিয়ে ফেলতে হতো। স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। বিধবা হয়ে যাওয়ার পর তাদের দেখাশুনা, ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর পক্ষ থেকে কেউ নিত না। তাদের জন্য পেঁয়াজ, রসুন, আমিষ ইত্যাদি খাওয়া সারা জীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যেত। সমাজ তাদেরকে দেখত এক অশুভ, অস্পৃশ্য, ঘৃণিত সত্তা হিসেবে। স্বামীর মৃত্যুর জন্য বিধবার পোড়া কপালকে দোষ দেওয়া হতো।[৩৭৮][৩৭৯][৩৮০] এই হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থা। আর ইসলাম আসার আগে প্রাচীন আরবে বিধবাদের নিয়ে কী করা হতো তা বর্ণনা করার ভাষা নেই।[১৪][১২]
আজকে লক্ষ লক্ষ নারী বাল্য বিয়ে করে স্বামী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অল্প বয়সে মা হয়ে স্বামী হারিয়ে, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে, বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত ভীষণ কষ্টের জীবন পার করে। পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে ৪ কোটি বিধবা রয়েছে, যার একটি বড় অংশ আশ্রমে থাকে, না হয় রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, না হলে পতিতালয়ে থেকে জীবন যাপন করছে। —এদের কেউ দেখে না। তাদের সন্তানরা তাদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোথাও তারা মানুষ হিসেবে সম্মান পায় না।[৩৭৮][৩৭৯][৩৮০]
বহু যুগ ধরে উপমহাদেশের বেশিরভাগ মুসলিমরা ইসলাম এবং হিন্দু সংস্কৃতি মিলিয়ে একটা খিচুড়ি ধর্ম পালন করছে। যার ফলে মুসলিমরা না শান্তি পাচ্ছে, না অন্যায় বন্ধ হচ্ছে, না সমাজের সংস্কার হচ্ছে। হিন্দুদের মতো অনেক মুসলিম পরিবারে স্বামী মারা গেলে বিধবা স্ত্রীর ‘পোড়া কপালকে’ দোষ দেওয়া হয়, যেখানে ইসলামে পরিষ্কারভাবে বলা আছে: মৃত্যুর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আল্লাহর تعالى হাতে এবং ‘পোড়া কপাল’, ‘কুফা’ এই ধারণাগুলো হচ্ছে শিরক।[৩৮৩] এখনো গ্রামে-গঞ্জে মুসলিম সমাজে বিধবাদের অশুভ, কুলক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। অনেক মুসলিম পরিবারে বিধবাদের আর কখনো বিয়ে করতে দেওয়া হয় না। বেশিরভাগ মুসলিম পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় বিধবাদের কথা চিন্তাও করবে না, যেখানে কিনা রাসুল عليه السلام-এর মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন কুমারী, আর বিভিন্ন সময়ে ৮ জন স্ত্রী হয়েছিলেন বয়স্ক বিধবা।
মুসলিমরা যদি কুরআন পড়ত, তাহলে দেখত বিধবাদের সম্পর্কে আল্লাহ تعالى কত সুন্দর শিক্ষা দিয়েছেন, যা ১৪০০ বছর আগে মুসলিমরা অনুসরণ করে বিধবাদের জীবনকে সুন্দর, সম্মানের করে দিয়েছিল। লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার হলো: ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি —এই তিন ধর্মেই বিধবাদের সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবন নিরাপদে, সুন্দরভাবে পার করার জন্য আবারো বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। বিধবাদের ঠিকমতো দেখাশুনা করার দায়িত্ব সমাজের উপর দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিধবাদের যত্ন নেওয়ার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।[৩৮৩] শুধুই হিন্দু ধর্ম বাদে। এথেকেই বোঝা যায় যে, ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি ধর্মের উৎস একজন অত্যন্ত দয়ালু, নারী-পুরুষের প্রতি সদয় দৃষ্টিভঙ্গির একজন সত্তা, যার পুরুষদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব নেই। আর হিন্দু ধর্মের উৎস পুরুষতান্ত্রিক, নারী-বিদ্বেষী, অমানবিক এক বা একাধিক সত্তা।
সূরা আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে শিখিয়েছেন বিধবাদের সম্পর্কে ইসলামের নিয়ম কী হবে। আমরা লক্ষ করলে দেখবো, নিয়মগুলো বেশিরভাগই নারীদের পক্ষে। আয়াতগুলো নিয়ে ঠিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, এই নিয়মগুলোর পেছনে কী বিরাট প্রজ্ঞা রয়েছে— (আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)