আজকাল অনেক মসজিদে জুম্মার খুতবায় বা হালাক্বাগুলোতে আলোচনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকে: আমরা কত খারাপ, কত ভুল করছি, কীভাবে আমাদের চামড়া বার বার পুড়িয়ে কাবাব বানানো হবে, অমানুষিক ভাবে পিটানো হবে, গলার মধ্যে গরম পানি ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হবে, আমাদের সব কষ্টের কারণ হচ্ছে ধর্ম না মানা ইত্যাদি নানা ধরনের হতাশাকর, নির্মম কথাবার্তা। প্রতি শুক্রবার কোনোমতে বাবা-মা, স্ত্রীর ধাক্কায়, না হলে ‘লোকে কী বলবে’ এই ভয়ে মসজিদে মানুষ যাও বা যায়, কিন্তু গিয়ে এমন সব হতাশাকর, বিরক্তিকর কথাবার্তা শুনতে থাকে যে, তখন মানুষের মনে শুধু একটাই চিন্তা আসে: কখন এই লোকটা চুপ করবে, কখন নামাজ শুরু হবে, আর কত তাড়াতাড়ি আমি বাড়ি ফিরে যাবো।
এমনিতেই মানুষের জীবন যথেষ্ট সংগ্রামের, কষ্টের, হতাশার। সপ্তাহে ছয় দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় শুক্রবার মসজিদে গিয়ে আরো হতাশাকর কিছু কথাবার্তা শুনে বিমর্ষ মনে আমরা ঘরে ফিরি। আজকাল কিশোর-তরুণরা যে বাংলা খুতবা শুরু হলেই মোবাইল ফোন নিয়ে বসে পড়ে, তার জন্য তাদেরকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। দোষ হচ্ছে সেই খাতিবের, যার কথাবার্তার মধ্যে এমন কিছুই নেই, যা তাদেরকে আকর্ষণ করতে পারে।
নামাজ শুরুর ১০ মিনিট আগে সিংহভাগ মানুষ যে মসজিদে ঢোকে, সেটা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়: আমরা কী নির্মমভাবে বিফল হয়েছি সঠিকভাবে মানুষকে দাওয়াহ দিতে। গানের কনসার্টে মানুষ ঘণ্টাখানেক আগে যায়, যেন সামনের সারিতে জায়গা পাওয়া যায়, শিল্পীদেরকে নিজের চোখে কাছ থেকে দেখা যায়। আর মসজিদে মানুষ যায় একদম শেষ মুহূর্তে, তারপর জুতা রাখার জায়গায়, না হয় বের হওয়ার গেটের কাছে বসার জন্য ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়, যেন নামাজ শেষে সবার আগে বের হয়ে যাওয়া যায়।
কুরআনে বার বার বলা হয়েছে: নবি, রাসুল হচ্ছেন মানুষের জন্য সুখবরের বাহক এবং সাবধানকারী। بَشِير বাশিরুন (সুখবরের বাহক) এবং نَذِير নাযিরুন (সাবধানকারী) একসাথে কমপক্ষে ২০ বার কুরআনে এসেছে, যার মধ্যে ১৫ বারই প্রথমে বাশিরুন (সুখবরের বাহক) বলা হয়েছে। নবি-রাসুলরা আগে একজন সুখবরের বাহক, পরে একজন সাবধানকারী। কিন্তু আজকাল আমাদের দাওয়াহ দেওয়ার পদ্ধতি হয়ে গেছে: প্রথমে ১ ঘন্টা সমাজের, দেশের গুষ্টি উদ্ধার, পরে ১০ মিনিট কিছু আশার কথা।
আমি অবশ্যই তোমাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছি, সুখবরের বাহক এবং সাবধানকারী হিসেবে। তোমাকে আগুনের সাথীদের ব্যাপারে জবাব দিতে হবে না। [আল-বাক্বারাহ ১১৯]
আয়াতের শুরুতে আল্লাহ تعالى বলছেন, “আমি অবশ্যই তোমাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছি।” কু’রআন কোনো মেটাফিজিক্স বা ফিলসফির উপর বই নয় যে, এখানে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মানুষের অনুমান এবং যুক্তির উপর নির্ভর করে থিওরির পর থিওরি লেখা আছে এবং যার ভূমিকাতে লেখক আগেভাগেই বলে দেন, “আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।” কু’রআন অকাট্য সত্য —এই ঘোষণা করতে আল্লাহ تعالى দ্বিধাবোধ করেন না।
(আর্টিকেলের বাকিটুকু পড়ুন)