ইসলাম আসার আগে এবং প্রাচীন ধর্মগুলোতে নারীরা ছিল স্বামীদের সম্পত্তি। নারীদের তারা অনেকটা পোষা প্রাণীর মতো পালত। বিয়ে এবং তালাকের ব্যাপারে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। তাদের বাবা-মা যেখানে তাদের বিয়ে দিত, সেখানেই তারা সংসার করতে বাধ্য ছিল। বিয়ের পরে তারা হয়ে যেত স্বামীর সম্পত্তি। স্বামী যখন ইচ্ছা তাদের তালাক দিত, যখন ইচ্ছা তাদের ফিরিয়ে নিত। স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীদের কোনো অধিকার ছিল না। স্ত্রীর সম্পত্তি স্বামী যেভাবে ইচ্ছা খরচ করত। স্বামীর সিদ্ধান্তের উপর প্রশ্ন করার অধিকারও তাদের ছিল না। দাসির মতো মানবেতর জীবনযাপন করে স্ত্রীরা সারাজীবন স্বামীকে খুশি রাখার সবরকম চেষ্টায় যাবতীয় অপমান, অন্যায় মেনে নিয়ে জীবন পার করে দিত। আর প্রার্থনা করত যেন তার কখনো মেয়ে সন্তান জন্ম না হয়।[৪]
সনাতন হিন্দু ধর্মে তালাকের কোনো ধারণাই নেই। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে সাত জনমের সম্পর্ক। সেটা কোনোদিন ছিন্ন হওয়ার নয়। স্বামী যতই অত্যাচার করুক, যতই অন্যায় করুক, স্ত্রী মুখ বুঝে তা সহ্য করে সংসার করে যাবে। স্বামী যে কোনো সন্দেহে স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে পারবে, যেভাবে কিনা সীতাকে রাম সন্দেহের বশেই প্রমাণ ছাড়াই পরিত্যাগ করেছিল। আর স্বামীর সাথে একই চিতায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার জঘন্য প্রথা তো ছিলই। ১৯৫৫ সালে ভারতে আইন করে কিছু বিশেষ প্রেক্ষিতে তালাকের নিয়ম করা হয়।[৩৬৮] এর আগে পর্যন্ত হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দু স্ত্রীদের অবস্থা ছিল গৃহপালিত পশুর মতো।
ইহুদী ধর্মে স্বামীরা তালাক দিয়ে সাথে সাথে স্ত্রীকে বের করে দিতে পারে। তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে লেখা আছে, “স্বামী যদি তার স্ত্রীর মধ্যে কোনো অপবিত্রতা খুঁজে পায়, তাহলে স্বামী যেন স্ত্রীকে তালাকনামা লিখে স্ত্রীর হাতে দেয় এবং স্ত্রীকে বাসা থেকে বের করে দেয়। তারপর স্ত্রী যখন বাসা থেকে বের হয়ে গেছে, সে তখন অন্য কোনো পুরুষের স্ত্রী হতে পারবে।” — ডিউটেরনমি ২৪ঃ১-২।[১০] খ্রিস্টান ধর্ম সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছে: “ঈশ্বর যাদেরকে এক করেছেন, স্বামী যেন সে সম্পর্ক কোনোদিন ছিন্ন না করে।… যে তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করবে, অন্য কাউকে বিয়ে করবে, সে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যাভিচার করেছে।”—মার্ক ১০ঃ৯,১১।[১০] সেইন্ট পলের বাণী, “স্ত্রী যেন কখনো স্বামীকে ছেড়ে না যায়।”[১০] ক্যাথলিকদের নিয়ম: “যখন একজন পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বিবাহ বন্ধন হয়েছে, এবং স্বামী এবং স্ত্রী একসাথে বাস করেছে, মৃত্যু ছাড়া সেই সম্পর্ক আর কিছু ছিন্ন করতে পারবে না।”[১০] খ্রিস্টান ধর্মে তালাকের গ্রহণযোগ্য কারণ হচ্ছে যদি স্বামী বা স্ত্রী ব্যাভিচার করে। এছাড়া তালাক ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। এতে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হয়েছে। তালাকের জন্যই খ্রিস্টানরা ব্যাভিচারে জড়িয়ে গেছে।
যেই সমাজই তালাককে নিষিদ্ধ বা ঘৃণার কিছুতে পরিণত করেছে, সেই সমাজের স্ত্রীদের উপর স্বামীদের নির্যাতন, অন্যায়ের কোনো সীমা ছিল না। তালাকের অধিকার না পেয়ে স্ত্রীরা পশুর মতো জীবন যাপন করেছে। আবার তালাকের পরে সমাজে অপমানের ভয়েও তারা মুখ বুজে অনেক অন্যায় সহ্য করেছে। আর যেই সমাজ তালাককে একেবারেই সহজ, স্বাভাবিক করে দিয়েছে, সেই সমাজে পরিবার ভাঙ্গনের পরিমাণ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। স্বামী, স্ত্রী দুইজনেই সামান্য মনোমালিন্য থেকে তালাকে চলে গেছে। বিশেষ করে পুরুষরা একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক করার জন্য তালাককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।
আল্লাহ تعالى এই দুই চরম অবস্থানকে নিষিদ্ধ করে নারী পুরুষ উভয়ের প্রতি ন্যায় হয়, এমন সুন্দর, যুক্তিযুক্ত আইন দিয়েছেন। ইসলামের আইনের ছায়ায় এসে মধ্যযুগীয় আরবের নারীরা পশুর মতো জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষের মতো অধিকার পেয়ে জীবন পার করে গেছেন। তাদের উপর ইতিহাসের জঘন্যতম অন্যায়গুলো করা বন্ধ হয়েছে। মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার আতংক দূর হয়েছে।
তারপর বহুযুগ পার হওয়ার পর মুসলিমরা ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেল। মুসলিম সমাজের মানুষরা আবার অমুসলিমদের মতো চিন্তাভাবনা করা শুরু করলো। তালাক আবার একটি সামাজিকভাবে অস্পৃশ্য, নিষিদ্ধ ব্যাপার হয়ে গেল। কোনো দোষ না থাকার পরেও তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর জীবন শেষ করে দেওয়ার জন্য সমাজের মুসলিম নামধারি মানুষরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওদিকে স্বামীরা অন্যায় করে তালাক দিয়ে, তারপর তারাই আবার দুঃখ-দুঃখ চেহারা বানিয়ে সবার মমতা কুড়ায়। মায়েরা আবার কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার আতঙ্কে ফিরে গেছে। মুসলিম পরিবারে থেকেও স্ত্রীরা আজকে সনাতন হিন্দু পরিবারের স্ত্রীদের মতো স্বামীর যাবতীয় অন্যায়, অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে জীবন পার করে চলেছে।
আসুন দেখি তালাকের ব্যাপারে আল্লাহর تعالى বাণী কত সুন্দর—
যারা শপথ করেছে যে তারা তাদের স্ত্রীদের কাছে যাবে না, তারা চার মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে। তবে তারা যদি ফিরে যায়, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই অনেক ক্ষমা করেন, তিনি সবসময়ই দয়ালু। [আল-বাক্বারাহ ২২৬]
কেউ যদি রাগের বশে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে আর তার স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবে না, তাহলে তাকে চার মাস পর্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখার সময় দেওয়া হলো। এই চার মাসেও যদি তিক্ততার অবসান না হয়, তাহলে সে পরের আয়াতগুলো অনুসারে তালাকের সূচনা করবে। কিন্তু আল্লাহ تعالى মানুষকে প্রথমেই আমন্ত্রন জানাচ্ছেন যেন তারা ফিরে যায়, নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করে ফেলে। স্বামী বা স্ত্রী যে পক্ষ থেকেই ব্যাপক অন্যায় হয়ে থাকুক না কেন, আল্লাহ تعالى অনেক বড় বড় গুনাহ ক্ষমা করেন, তিনি সবসময়ই দয়ালু। মানুষ ভুল করেই। অন্যের ভুল নিয়ে সারাজীবন রাগ করে থাকার আগে সে নিজের ভুলের কথাগুলো আগে চিন্তা করুক। সে কি আশা করে না যে, তার ভুলগুলো আল্লাহ تعالى মাফ করে দিক? তাই আল্লাহর تعالى ক্ষমার উপর ভরসা রেখে স্বামী বা স্ত্রী যেন অন্যকে ক্ষমা করে আরেকবার সম্পর্ক জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে। আল্লাহর تعالى রহমত তাদের সাথে সবসময় থাকবে। আল্লাহ تعالى নিজে কথা দিয়েছেন।
কিন্তু সবসময় সেটা সম্ভব হয় না। অনেক সময় দেখা যায় স্বামী চরম খারাপ স্বভাবের, হয়ত মাতাল, হয়ত দুশ্চরিত্রবান, হয়ত কথায় কথায় স্ত্রীকে মার দেয়। অনেকসময় দেখা যায় স্ত্রী বদ মেজাজি, অথবা হিন্দি সিরিয়াল দেখে কুটনামী করে স্বামী এবং আত্মীয়দের জীবন শেষ করে দিচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় স্ত্রী একেবারেই অকৃতজ্ঞ, স্বামীর প্রতি তার কোনো কৃতজ্ঞতা বোধ নেই, কোনো সম্মান নেই। সবসময় শুধু ‘আমি কী পেলাম? আমাকে কেন দিল না? আমার কেন নাই?’ —এর মধ্যে ডুবে থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, স্বামীর পরিবারের প্রতি কোনো খেয়াল নেই। সে তার বাবা-মার জন্য সবকিছু দিয়ে দিতে রাজি, কিন্তু স্ত্রীর জন্য বা স্ত্রীর পরিবারের জন্য সে কিছুই করবে না।
এরকম অনেক বড় বড় কারণ না থাকলেও, অনেক সময় দেখা যায় যে, স্বামী এবং স্ত্রী হচ্ছে সম্পূর্ণ দুই বিপরীত মেরুর মানুষ। স্বামী হয়ত ইসলাম মেনে জীবন পার করতে চাচ্ছে, কিন্তু স্ত্রী তা সমর্থন করবে না। “কেন আমাকে ইসলামী পোশাক পড়তে হবে? কেন তোমাকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে হবে? কেন তুমি বাচ্চাদেরকে সময় না দিয়ে আরবি ক্লাশ করবে? কেন তোমার বাবা-মার জন্য তোমার এত বেশি দরদ?” — আবার উল্টোটাও হয়। স্ত্রীর ইসলামী পোশাক পড়াটা স্বামীর স্ট্যাটাসের সাথে কোনোভাবেই মানায় না। পার্টিতে অতিথিদের সামনে সে তাকে স্ত্রী পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। স্বামী কোনোভাবেই নামাজ পড়বে না, তাকে যতই বোঝানো হোক। স্ত্রীও কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না একজন কাফির স্বামীর সাথে সে কীভাবে সংসার করবে। সপ্তাহে ছয়দিন দিনরাত সংসারের জন্য খাটার পরও সপ্তাহে একটা দিন স্ত্রীকে ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ দেবে না।
সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হবেই। বছরের পর বছর চেষ্টা করেও যদি নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করা না যায়, তিক্ততা সহ্যের বাইরে চলে যায়, সন্তানদের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে থাকে, তাহলে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে তালাকের পথ দিয়েছেন। তবে তালাকে যাওয়ার আগে পারিবারিক সম্পর্ক ঠিক করার ব্যাপারে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ এমন কারো সাথে আলোচনা করতে হবে। সে একজন পেশাদার কাউন্সিলর হলে অনেক সময় লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে, কারণ পাশ্চাত্যের কারিকুলামে শিক্ষিত কাউন্সিলর কোনোদিন শেখাবে না সবর কী, তাওবাহ কী, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রাখায় আল্লাহর تعالى সাহায্যের প্রতিশ্রুতি কী। সে শুধুই শেখাবে কীভাবে নিজের চাওয়া, কামনা হাসিল করতে হয়।
এজন্য এমন কাউকে নিয়োগ করতে হবে যিনি এধরনের কাউন্সেলিং-এ দক্ষ, একইসাথে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি চেষ্টা করবেন দুই পক্ষের কথা শুনে সম্পর্ক ঠিক করতে সাহায্য করার। যদি তাতেও না হয়, তাহলে তালাকের পথে যাওয়ার জন্য আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ব্যবস্থা দিয়েছেন। তবে সাবধান—
তবে যদি তারা তালাকে অটল থাকে, তাহলে মনে রেখো, আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২২৭]
প্রতিদিন বাসায় ফিরে মায়ের কাছ থেকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে একতরফা অভিযোগ শুনে, আরেক সুন্দরী, ধনী মেয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাবের কথায় মজে গিয়ে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার আগে সাবধান! আল্লাহ تعالى সব শোনেন, সব জানেন। অফিসের কলিগের বাড়ি-গাড়ি, ঘন ঘন বিদেশ যাওয়া, দামি পারফিউমের গন্ধে মজে গিয়ে সহজ-সরল, মধ্যবিত্ত স্বামীকে তালাক দেওয়ার আগে সাবধান! আল্লাহ تعالى সব শোনেন, সব জানেন। আত্মীয়ের কাছে স্বামী/স্ত্রী সম্পর্কে বাজে কথা শুনে, কোনো এক অজুহাত দাঁড় করিয়ে তালাক দেওয়ার আগে যেন বহুবার চিন্তা করি, আল্লাহ تعالى সব শোনেন, সব জানেন। কিয়ামতের দিন আল্লাহ تعالى এত বড় অন্যায় ছেড়ে দেবেন না। তালাক দেওয়ার আগে হাজার বার চিন্তা করি: কিয়ামতের দিন আল্লাহ تعالى যখন আমাদেরকে তালাকের কারণের বৈধতা প্রমাণ করতে বলবেন, তখন যেন আমাদের কাছে নিরপেক্ষ ভিত্তি এবং প্রমাণ থাকে। তখন আমার মা, আত্মীয়, বন্ধু কেউ এগিয়ে আসবে না আমাকে বাঁচাতে।
তালাকপ্রাপ্তা নারী আবার বিয়ে করার আগে তিন মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আল্লাহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন, সেটা গোপন রাখা তাদের জন্য মোটেও বৈধ নয়, যদি তারা সত্যিই আল্লাহ এবং আখিরাতকে বিশ্বাস করে। তাদের স্বামীরা তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়ার বেশি অধিকার রাখে, যদি কিনা তাদের উদ্দেশ্য হয় সম্পর্ক ঠিক করা। নারীদেরও অনুরূপ সমান অধিকার আছে, যতক্ষণ তা ন্যায়সঙ্গত। তবে তাদের উপর পুরুষদের অধিকারের মাত্রা বেশি। আল্লাহ সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাবান। [আল-বাক্বারাহ ২২৮]
পুরুষদের অধিকার বেশি — এটা নারীবাদীদের হজম হয় না। তারা এই আয়াতগুলো দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, ইসলাম কোনোভাবেই নারীদের সমান অধিকার দেয় না, নারীদেরকে পুরুষদের অধীন করে রাখে, ব্যাক্তি স্বাধীনতা দেয় না ইত্যাদি।
প্রথমত ইসলামে পুরুষ এবং নারীর অধিকার এক নয়। আল্লাহ পুরুষ এবং নারীর প্রতি ন্যায় করেছেন, কিন্তু ন্যায় করা মানেই সমান অধিকার দেওয়া নয়। যদি সব ব্যাপারে পুরুষ এবং নারীদের সমান অধিকার দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত হতো, তাহলে পুরুষ এবং নারীদের সবদিক থেকে দায়িত্ব, জীবন যাপনের পদ্ধতি, কাজ সবকিছু একই হতে হবে। নারীরা বাচ্চা হওয়ার সময় যত লম্বা ছুটি পায়, পুরুষদেরও একই লম্বা সময় বেতন সহ ছুটি দিতে হবে। পুরুষরা যেসব কঠিন শ্রমের, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে, যেমন ব্রিজ তৈরি, উঁচু ভবন তৈরি, ট্রান্সফরমার মেরামত, বৈদ্যুতিক টাওয়ার তৈরি, সুয়ারেজের লাইন পরিস্কার, সমুদ্রে মাসের পর মাস থেকে মাছ ধরা — এগুলো সব নারীদেরও একই হারে করতে হবে। যুদ্ধে পুরুষদের সাথে নারীদেরকেও একই ঝুঁকি নিতে হবে, একই দায়িত্ব পালন করতে হবে। নারীদের জন্য কোনো আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা করা যাবে না। যানবাহনে আলাদা বসার সিট করা যাবে না। কোনো কাজে নারীরা কোনো ধরনের ছাড় বা খাতির পাবে না। এগুলো সব হলেই নারীদের সমান অধিকার দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখানো যাবে। তারপর নারীবাদী সংগঠনের মতো পুরুষবাদী সংগঠন করতে দিতে হবে।
এই আয়াতে আল্লাহ تعالى পুরুষদেরকে সব ব্যাপারে নারীদের থেকে বেশি অধিকার দেননি। শুধু তালাক বাতিল করে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বেশি অধিকার দিয়েছেন। ধরুন তালাক দেওয়ার পর মাসখানেক পার হয়ে গেছে। স্বামী ভুল বুঝতে পেরেছে। একদিন সে স্ত্রীকে গিয়ে অনুরোধ করছে, ‘চলো না, আজকে রেস্টুরেন্টে খেতে যাই?’ তখন স্ত্রী যদি চিৎকার দিয়ে বলে, “আমার জীবন থাকতে না! ভুলে গেছ তুমি আমাকে কী বলেছিলে? আমি কোনোদিন তোমার মুখ দেখতে চাই না! চলে যাও এখান থেকে!” —না, এখানে আল্লাহ تعالى স্বামীদেরকে অধিকার দিয়েছেন তালাক বাতিল করে আবার স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক ফিরিয়ে নেওয়ার।
তালাক দুই বার পর্যন্ত হবে। তারপর স্ত্রীকে হয় স্বাচ্ছন্দে রাখবে, অথবা ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্ত করে দেবে। স্ত্রীদেরকে দেওয়া কোনো কিছু ফিরিয়ে নেওয়া তোমাদের জন্য বৈধ না, যদি না তারা দুজনেই আশংকা করে যে, তারা দুজনেই আল্লাহর দেওয়া সীমা মেনে চলতে পারবে না। সুতরাং তোমরা যদি ভয় করো যে, তারা দুজনে আল্লাহর দেওয়া সীমা মেনে চলতে পারবে না, তাহলে তাদের দুজনের কারো দোষ হবে না, যদি স্ত্রী কিছু ফিরিয়ে দেয় আলাদা হয়ে যাওয়া জন্য। এই হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া সীমা। এর লঙ্ঘন করবে না। যারা আল্লাহর দেওয়া সীমা লঙ্ঘন করে, তারাই হচ্ছে যালিম। [আল-বাক্বারাহ ২২৯]
ধরুন বিয়ের পর স্বামী ভালোবাসায় গলে গিয়ে স্ত্রীকে বাড়ি, গাড়ি, জমি সব লিখে দিয়েছে। তারপর যখন তালাক হয়ে গেছে, তখন স্বামীর মাথায় হাত! এখন তো সে পথে বসবে! সে খাবে কী! আরেকটা বিয়ে করে সংসার চালাবে কীভাবে?
প্রথমত, স্ত্রীকে দেওয়া কোনো কিছুই ফিরিয়ে নেওয়া স্বামীর জন্য বৈধ নয়। কিছু ব্যতিক্রম বাদে। যেমন, এই অবস্থায় স্বামীর জন্য আল্লাহ দেওয়া সীমা মেনে জীবন পার করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে যাবে। এই অবস্থায় তাদের মধ্যে সম্পত্তির কিছু ভাগ বণ্টন হতে পারে। স্ত্রী তার অধিকার থেকে কিছু সম্পত্তি ছেড়ে দিতে পারে। এতে তার ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে, স্বামীরও হবে। না হলে হতে পারে যে, স্বামী অন্যায়ের পথ বেছে নেবে। হতে পারে স্ত্রী হয়ত এত সম্পত্তি দিয়ে আরও বিপদে পড়বে। তার উপর আক্রমণ হবে। তার পক্ষের লোকদের মধ্যে কামড়াকামড়ি লেগে যাবে, ইত্যাদি। সম্পত্তি হজম করা খুব কঠিন কাজ। মানুষ সারাজীবন আপ্রাণ চেষ্টা করে যত পারে সম্পত্তি কামানোর, তারপর সেই সম্পত্তিগুলোই তার নিজের এবং তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেওয়ার সবচেয়ে বড় উপলক্ষ হয়ে যায়। এরপর সেই সম্পত্তি থেকে সে নিজেকে কীভাবে মুক্ত করবে, তা নিয়ে তার জীবন অশান্তিতে ডুবে যায়।
তবে স্ত্রী যদি তালাকের সূচনা করে, যাকে خُلع খুল‘আ বলে, তাহলে স্ত্রী বিয়ের চুক্তি ভাংছে। তাই তখন তাকে মোহর বা অন্য কোনো সম্পদ ফিরিয়ে দিয়ে স্বামীর কাছ থেকে মুক্ত হয়ে যেতে হবে।[২][১২] ইসলাম স্ত্রীকে অনুমতি দিয়েছে স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার। যদি স্বামীর সাথে ঘর করা সম্ভব না হয়, তাহলে এই খুল‘আ এর মাধ্যমে যথাযথ সম্পদ ফিরিয়ে দিয়ে স্ত্রী তালাক নিয়ে নিতে পারে।
তালাক দুই বার পর্যন্ত হবে
আমরা বাংলা সিনেমায় দেখি স্বামী রেগে গিয়ে বলছে, “আমি তোমাকে তালাক দিলাম – এক তালাক! দুই তালাক! তিন তালাক! বেড়িয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে!”। স্ত্রী তখন, “নাআআআআ!” বলে চিৎকার দিয়ে স্বামীর পায়ে ধরে ঝুলে পড়ে —এগুলো সব বাংলা সিনেমা, এর সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই। এক সাথে দেওয়া এই তিন তালাককে ‘বিদআতী তালাক’ বলা হয় ফিকহের পরিভাষায়।
আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বলেনি ‘দুই তালাক’, তিনি বলেছেন, ‘তালাক দুই বারে’। مَرَّتَانِ ব্যবহার করে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, দুইটি আলাদা প্রেক্ষাপটে তালাক। একবারে দুই তালাক দিলে হবে না।[৪]
সুতরাং তিন তালাক হতে হবে তিনটি আলাদা প্রেক্ষাপটে। তাহলেই তালাক সম্পূর্ণ হবে, স্থায়ী হবে। এই তিন তালাকের আগে স্বামী যে কোনো সময় স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে। কোনো এক তালাকের পরেই স্ত্রীকে বের করে দেওয়ার কোনো অধিকার স্বামীর নেই। বরং স্ত্রীকে তিন মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়টা স্বামী তাকে স্বাচ্ছন্দে রাখবে। তাকে কষ্ট দিয়ে রাখতে পারবে না, তার সাথে অমানবিক আচরণ করতে পারবে না। কারণ এই সময়টাতে তার স্ত্রী হবে একজন মুসলিমা নারী। আর সব মুসলিমা নারীর সাথে স্বামী যে সুন্দর আচরণ করবে, সেরকম বা তার থেকে ভালো আচরণ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে তিক্ততা যেন তাদের কাউকেই আল্লাহর تعالى দেওয়া সীমা পার না করায়।[৪]
আল্লাহ تعالى বলেছেন, প্রতিটি তালাকের পর স্ত্রীকে مَعُرُف মা’রুফ ভাবে রাখতে হবে। মা’রুফ হচ্ছে— ১) সবার কাছে ভালো বলে পরিচিত এমন কিছু, ২) কোনো কাজ বা কিছু যার ফলাফল যে ভালো হবে তা যুক্তি দিয়ে বোঝা যায়, ৩) এমন কোনো কাজ যা শারিয়াহ এর ভিত্তিতে ভালো, ৪) সুন্দর আচরণ, সমতা, মমতা, কল্যাণকর, ৫) আন্তরিকতা, সৎ উপদেশ।[লেন অভিধান] আল্লাহ تعالى বলেছেন তালাক দেওয়ার পর স্ত্রীকে এই মা’রুফ-ভাবে রাখতে। স্ত্রীকে কোনো ধরনের কষ্ট দিয়ে রাখা যাবে না। অন্য কেউ যেন স্ত্রীর অবস্থা দেখে বলতে না পারে যে, তাকে কষ্ট দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সমাজ, সংস্কৃতি সব দিক থেকে ভালো বলে স্বীকৃত এমন অবস্থায় স্ত্রীকে রাখতে হবে।[৪]
তৃতীয় তালাকের পর স্ত্রীকে মুক্ত করে দেওয়ার পর্বটিও হতে হবে ইহসান-এর সাথে। ইহসান শুধুই ভালো কাজ নয়। ভালো কাজ খুব সুন্দরভাবে করাটা হচ্ছে ইহসান। আমরা একটা ফকিরকে মানিব্যাগ থেকে একটা ছেঁড়া নোট বের করে হাতে দিয়ে, তার সালামের উত্তর না দিয়ে হাঁটা দিতে পারি। সেটা একটা ভালো কাজ হবে, কিন্তু ইহসান হবে না। ইহসান হবে যখন মানিব্যাগের সুন্দর চকচকে একটা নোট ফকিরের হাতে দিয়ে, তার সালামের উত্তর হাসিমুখে দিয়ে, তার জন্য দু’আ করে হাঁটা দেওয়া। আল্লাহ تعالى কুর’আনে বাবা-মা’র সাথে ইহসান করতে বলেছেন। সুতরাং এথেকেই বোঝা যায় স্ত্রীর সাথে বিদায়ের পর্বটি কত উঁচু পর্যায়ের মার্জিত আচরণ হতে হবে।
ইসলামে ‘তালাক আল-আহসান’ বা সবচেয়ে ভালো তালাক হচ্ছে: একবার তালাক দিয়ে তিন মাসিক সময় ইদ্দত পূরণ করা। তারপর স্ত্রীকে মুক্ত করে দেওয়া। এটা সবচেয়ে পছন্দনীয় তালাক। দুই বার, তিন বার তালাক দেওয়া একটি বাজে কাজ। এতে তিক্ততার পর তিক্ততা হয়, স্বামী এবং স্ত্রীর পরিবার, সবার জন্যই কষ্টের কারণ হয়।
এরপর সে যদি তৃতীয় বার তালাক দেয়, তাহলে সেই নারী আর তার জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না সেই নারী অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করছে। যদি সেই নতুন স্বামী তাকে তালাক দেয়, তাহলে পুরনো স্বামী-স্ত্রীর কোনো পাপ হবে না, যদি তারা নিজেদের কাছে ফিরে যায়, যদি কিনা তারা উভয়ে মনে করে যে, আল্লাহর দেওয়া সীমা তারা মেনে চলতে পারবে। এই হলো আল্লাহর দেওয়া সীমা। আল্লাহ তা জ্ঞানী মানুষের কাছে পরিস্কার করে দেন। [আল-বাক্বারাহ ২৩০]
শেষ উপায় হিসেবে আল্লাহ تعالى তৃতীয় তালাকের কথা বলেছেন। আয়াতের ভাষা থেকেই বোঝা যায় যে, আল্লাহ تعالى এই তৃতীয় তালাককে মোটেও পছন্দ করেন না। তিনি আগের আয়াতের বলে দিতে পারতেন যে, তালাক তিন বারে। কিন্তু তিনি দুই বারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ফিরে যাওয়ার। এই আয়াতেও তিনি বলেছেন, ‘যদি তৃতীয় বার’। ‘যদি’ ব্যবহারের মধ্যে দিয়েই দেখা যায় যে, এটা হচ্ছে শেষ ব্যবস্থা।[৪]
এই আয়াত নিয়ে ব্যাপক কেলেঙ্কারি হয়েছে। ইসলাম বিদ্বেষীরা এই আয়াত ব্যবহার করে দেখায়, “দেখো দেখো! ইসলাম বলে তালাকের পর অন্য এক পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়ে, তারপর আগের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে। কী নোংরা ব্যাপার! স্বামী দিল তালাক, আর বিয়ে করতে হবে স্ত্রীকে? কত বড় অন্যায়!” তাদের এই অপপ্রচারের কারণ হলো, ভারত উপমহাদেশে ‘হিল্লা বিয়ে’ নামে এক নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে। পুরনো স্বামী যখন বুঝতে পারে যে, স্ত্রীকে তালাক দেওয়াটা ঠিক হয়নি, তখন সে আরেকজন পুরুষকে ভাড়া করে, যে তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে বিয়ে করে সেদিনই আবার তালাক দিয়ে পুরনো স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে আল্লাহর تعالى আইনও মেনে চলা হলো, আবার নিজের উদ্দেশ্যও হাসিল হলো —দুই দিকেই জিতে গেল। আজকে যদি নবি মুসা عليه السلام এর সময়কার বনু ইসরাইলরা থাকতো, যারা আল্লাহর تعالى আইন বিকৃত করতে দক্ষ ছিল, তারাও আজকে উপমহাদেশের মানুষদের আবিষ্কার করা এই অভাবনীয় পদ্ধতি দেখে আমাদের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য লাইন ধরে দাড়িয়ে যাবে। বনু ইসরাইলরা আল্লাহর تعالى আইন নিয়ে অনেক খেলা করেছে, কিন্তু এই পর্যায়ের খেলা করেনি। এত বড় উদ্ভাবনী ক্ষমতা একমাত্র আমাদের উপমহাদেশের মানুষদেরই থাকা সম্ভব।
হিল্লা বিবাহ এবং মূতা বিবাহ কোনটারই ইসলামে স্বীকৃতি নেই। অথচ আমাদের বাংলাদেশের সমাজে হিল্লা বিবাহ চালু রয়েছে। আর ইরানে বৈধ বেশ্যাবৃত্বির নামে মূতা বিবাহ চালু রয়েছে। ইসলাম বিদ্বেষীরা যে ইসলামকে এত ঘৃণা করে, তার কারণ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরানের মতো ‘মুসলিম’ দেশগুলোতে ইসলামের নামে এক ভয়ঙ্কর বিকৃত ধর্মের ঢালাও অনুসরণ। ইসলাম বিদ্বেষীরা এই সব দেশের তথাকথিত মুসলিমদের অবস্থা দেখে, আর ভাবে, “এই হচ্ছে শান্তির ধর্ম? এই নোংরা ধর্ম মানতে এরা আমাদেরকে বলে?”
তৃতীয় বার তালাকের পর স্ত্রীকে অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করতে বলার পেছনে কারণ কারণ কী থাকতে পারে? প্রথমে প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। স্বামী স্ত্রীকে তিন বার, তিনটি আলাদা প্রেক্ষাপটে তালাক দিয়েছে। স্ত্রী তিন মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। এরপরও স্বামীর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি। তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তিন মাস সময় পার করার পরেও স্বামীর মাথা ঠাণ্ডা হয়নি। তিন মাসের মধ্যে যদি স্বামীর বোধোদয় না হয়, তাহলে স্ত্রীকে সে হারাবে। স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে হারানো, বিশেষ করে পরপুরুষের সাথে তার স্ত্রী থাকবে, এই ভয়ঙ্কর চিন্তা করেও স্বামী যদি তিন মাসের মধ্যে স্ত্রীকে ফেরত না নেয়, তাহলে সেই স্বামীর আর সেই স্ত্রীকে পাওয়ার অধিকার নেই। স্ত্রীর মূল্য বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। এই ক্ষমতা যেই স্বামীর নেই, সেই স্বামী কোনোদিনও তার স্ত্রীর যথাযথ মূল্য দেবে না। সেই স্বামীর সাথে বাস করা স্ত্রীর জন্য মোটেও সুখের হবে না।
এই ব্যবস্থা যদি না থাকতো, তাহলে ইসলাম আসার আগে আরবরা যা করতো, আজকেও সেটাই হতো। স্বামী যতবার ইচ্ছা তালাক দিত। যতদিন ইচ্ছা স্ত্রীকে ঝুলিয়ে রাখত। যতবার ইচ্ছা স্ত্রীকে বের করে দিয়ে নিজের মতো জীবন পার করতো। তারপর যখন ইচ্ছা আবার বিয়ের প্রস্তাব দিত। তিন তালাক দেওয়াটা একটা নিছক খেলা হয়ে যেত। তিন তালাকের পরে এই আইন আছে দেখেই স্বামীরা আজকে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে তৃতীয় তালাক দেয়।
আর যখন তোমরা স্ত্রীকে তালাক দাও এবং তারা তাদের জন্য নির্ধারিত সময় ‘ইদ্দত’ পূরণ করেছে, তখন তোমরা তাদেরকে ভালোভাবে রেখে দাও অথবা ভালোভাবে মুক্ত করে দাও। তাদেরকে নির্যাতন করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখে অন্যায় করবে না। যে এমন করবে, সে নিজের উপরই অন্যায় করবে। আল্লাহর আয়াত নিয়ে মশকরা করবে না। মনে করে দেখো, আল্লাহ তোমাদেরকে কত অনুগ্রহ করেছেন, তোমাদেরকে কিতাব এবং প্রজ্ঞা দিয়েছেন শিক্ষা দেওয়ার জন্য। আল্লাহর প্রতি সাবধান। জেনে রেখো আল্লাহর সব ব্যাপারে সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৩১]
তালাক দেওয়ার পরে আল্লাহ تعالى স্বামীদেরকে দুটো পথ দিয়েছেন, তারা স্ত্রীদেরকে মা’রুফ-এর সাথে রেখে দিতে পারে, অথবা মা’রুফ-এর সাথে মুক্ত করে দিতে পারে। কোনোভাবেই যেন স্ত্রীদের উপর কোনো নির্যাতন না হয়। যে এই কাজ করবে, সে নিজের উপরই প্রচণ্ড নির্যাতনের ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ এই নির্যাতনের প্রতিশোধ নেবেন। আল্লাহর تعالى আয়াত নিয়ে মশকরা যে করবে, তার কপালে ভীষণ কষ্টের শাস্তি অপেক্ষা করছে।
যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও, এবং তারা ইদ্দত সম্পূর্ণ করেছে, তখন তাদেরকে বাঁধা দেবে না, যদি স্বামী স্ত্রী দুজনেই নিজেদের সম্মতিতে আবার বিয়ে করতে চায়। তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাস করে, তারা যেন এই উপদেশ মনে রাখে। এর মধ্যে তোমাদেরকে জন্য পরিশুদ্ধতা এবং পবিত্রতা রয়েছে। আল্লাহ যা জানেন, তোমরা তা জানো না। [আল-বাক্বারাহ ২৩২]
তালাক দেওয়ার পরে অনেক সময় স্বামী স্ত্রী আবার একসাথে হতে চায়। কিন্তু তখন আত্মীয়রা অনেক সময় বাগড়া বাধায়। তাদের কাছে তখন সেটা বংশ মর্যাদার প্রতি অপমান হিসেবে দাঁড়ায়। “কী! আমার মেয়েকে তালাক দিয়েছে, আবার তাকে ফেরত চায়? কত বড় সাহস! আমরা চৌধুরী বংশ। আমি বেঁচে থাকতে কোনোদিন এটা হতে দেব না!” —এগুলো না করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, যদি কেউ সত্যিই দাবি করে যে, সে আল্লাহকে তার প্রভু মানে এবং আখিরাতে যে তাকে জবাব দিতে হবে, সে ব্যাপারে সে বিশ্বাস রাখে। অর্থাৎ কেউ যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে, তাহলে এই সব বংশ মর্যাদা, নাক উচা মনোভাব বন্ধ করো। আল্লাহ تعالى যা জানেন, তা তোমরা জানো না।
বি:দ্র: তালাক সম্পর্কে উপরের এই আলোচনা মোটেও সম্পূর্ণ নয় এবং এর উপর ভিত্তি করে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন না। তালাকের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন মুফতির সাথে কথা বলুন। বইয়ের কথা সবসময় সবার বেলায় প্রযোজ্য নয়। একজন মুফতিই পারে আপনার বিশেষ পরিস্থিতি ঠিকভাবে যাচাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে।
সূত্র:
- [১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
- [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
- [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
- [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
- [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
- [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
- [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
- [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
- [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
- [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
- [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
- [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
- [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
- [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
- [১৫] তাফসির আল জালালাইন।
- [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ।
- [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব
- [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স
- [৩৬৮] Hinduism and Divorce. (2016). Hinduwebsite.com. Retrieved 22 May 2016, from http://www.hinduwebsite.com/hinduism/h_divorce.asp
- [৩৬৯] U.S. divorce rates: for various faith groups, age groups and geographical areas. (2016). Religioustolerance.org. Retrieved 23 May 2016, from http://www.religioustolerance.org/chr_dira.htm
আমার একটা প্রশ্ন ছিল,যদি কোনো ব্যাক্তিকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ে ঘুমের ঘরে তালাকের কাগজে সাক্ষর করিয়ে নে তো তাদের মধে কি ইসলামের মতে তালাক হয়ে যাবে?
ঘুমের মধ্যে কেউ স্বাক্ষর করতে পারে না।
আমার স্বামী এই পর্যন্ত বহুবার বাসা থেকে চলে যেয়ে বলেছে।তালাক দিতে চেয়েছে।মুখে বলা এই কথার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?বার বার ভরনপোষণ এর কথা বলা কতটা যুক্তিযুক্ত?সঠিক তথ্য জান্তে পারলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হত।
সামি যদি স্ত্রী কে বার বার ডিবোস এর কথা বলে তাইলে কি স্ত্রী ডিবোস হয়ে যায়