মানুষ ভুলে যায়। অনেক সময় পরিস্থিতির শিকার হয়ে সে মনে রাখতে পারে না: আল্লাহ تعالى তার কাছ থেকে কী আশা করেন, কী করতে নিষেধ করেছেন, কী করতে বার বার বলেছেন। একারণেই মানুষকে দৈনন্দিন জীবনের নির্দেশ, উপদেশগুলো —যেগুলো তার জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে— সেগুলো একবার, দুইবার দিলে হয় না, বার বার মনে করিয়ে দিতে হয়। তখন তা তার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। কঠিন পরিস্থিতিতেও সে নিজেকে মনে করিয়ে দিতে পারে। এরকম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, দৃষ্টিভঙ্গি পালটিয়ে দেওয়ার মত উপদেশ এসেছে আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতে—
পূর্ব পশ্চিম সব আল্লাহর। তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে تعالى পাবে। আল্লাহ تعالى সবকিছুকেই ঘিরে আছেন, সবকিছুই জানেন। [আল-বাক্বারাহ ১১৫]
একটি ঘটনা দেখি—
রাত দুটা। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। আপনি কম্পিউটার ছেড়ে ফেইসবুকের দিকে তাকিয়ে আছেন। একজনের শেয়ার করা একটা ভিডিও দেখে আপনার হার্টবিট বেড়ে গেছে। ভিডিওটা দেখার জন্য আপনার প্রাণ আকুপাকু করছে। ক্লিক করতে গিয়েও করছেন না। নিজের সাথে সংগ্রাম করছেন: এরকম একটা বাজে ভিডিও দেখে নিজের ভেতরটা নোংরা করে ফেলবেন? ঠিক তখনি আপনার মনে পড়ল—
তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে تعالى পাবে। আল্লাহ تعالى সবকিছুকেই ঘিরে আছেন, সবকিছুই জানেন।
আপনি সাথে সাথে উপলব্ধি করলেন: আপনি যে এই ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে আছেন এবং ভিডিওটা পুরোটা দেখার চিন্তা করছেন, এগুলো সব আল্লাহ تعالى দেখছেন। আপনি লজ্জা পেয়ে গেলেন। ছি! আল্লাহর تعالى সামনে এরকম একটা বাজে কাজ আপনি কীভাবে করতে পারেন! আপনি তাড়াতাড়ি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলেন। ফেইসবুক বন্ধ করে ঘুমাতে গেলেন।
আরেকটি ঘটনা দেখি—
গত আট বছর থেকে হাসান বেকার। রাস্তায় রাস্তায় চাকরির জন্য ঘুরে জুতা ছিঁড়ে গেছে, কিন্তু একটা সুযোগও পাওয়া যায়নি। বাড়ি ফিরে প্রতিদিন গরিব বাবা-মাকে জোর করে হাসি দিয়ে সান্ত্বনা দিতে হয়। স্ত্রীর কাছ থেকে, “তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না”, “আমার বান্ধবীর স্বামী চাকরি করতে পারলে, তুমি পারো না কেন” —এই সব বিষ সহ্য করতে হয়। প্রতিদিনের এই অসহ্য অপমান, বন্ধুদের নতুন গাড়ি-বাড়ি, ফেইসবুকে তাদের পরিবারদের নিয়ে দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার ছবি; জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠানে তাদের খুশির ফোয়ারা —এই সব দেখতে দেখতে হাসানের ভেতরটা একেবারে ভেঙ্গে গেছে। তার এই অসহ্য জীবনটা আর বয়ে বেড়াতে ইচ্ছা করে না।
একদিন দুপুরে জানালার পাশে বসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসান চিন্তা করছে: “এই জীবনটা রেখে কী লাভ? বছরের পর বছর অকর্মা হয়ে, বাবা-মা, স্ত্রীর ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকার জন্য কি আমি বিশ বছর পড়াশুনা করেছি? আমার মত একটা আবর্জনা এই পৃথিবী থেকে চলে গেলে কার কী যায় আসে? কালকে যদি আমি বিষ খেয়ে মারা যাই, কেউ জানবে না। কেউ আসবে না আমার বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে। ফেইসবুকে আমার মৃত্যুর খবর বন্ধুরা প্রচার করবে। দুই চারজন লাইক দিবে, ব্যাস শেষ। দাঁড়াও, আজকে রাতেই আমি…”
ঠিক তখনি তার মনে পড়লো—
তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে تعالى পাবে। আল্লাহ تعالى সবকিছুকেই ঘিরে আছেন, সবকিছুই জানেন।
সাথে সাথে হাসান লজ্জা পেয়ে গেল। তার মনে পড়লো, এতক্ষণ সে যা ভাবছিল, আল্লাহ تعالى তা সব শুনছিলেন। ছি! এভাবে আল্লাহকে تعالى শুনিয়ে কী সব বাজে চিন্তা করছিল সে!
হাসান নিজেকে বোঝালো: এই পৃথিবীতে সে একা নয়। তার বন্ধুরা তার খোঁজ না নিক, বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা প্রতি মুহূর্তে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার দুঃখ কেউ না বুঝুক, আল্লাহ تعالى তো বুঝছেন। আল্লাহ تعالى তো মনোযোগ দিয়ে তার সব কষ্টের কথা শুনছেন। সে প্রতিদিন চাকরির জন্য কত কষ্ট করে, সেটা তার বাবা-মা না বুঝুক, আল্লাহ تعالى তো তার রাস্তায় প্রতিটি পা ফেলা, ছিঁড়া জুতায় ব্যাথা পাওয়া, ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করে টাকা বাঁচানোর জন্য দুপুরে এক কাপ চা খেয়ে থাকা —এগুলো সব বুঝতে পারছেন। আল্লাহ تعالى থাকতে অন্যের সমবেদনা দিয়ে কী যায় আসে? মানুষের সস্তা কিছু সান্ত্বনার জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে থাকার তো কোনো মানে হয় না। আল্লাহ تعالى সবকিছুকেই ঘিরে আছেন, সবকিছুই জানেন।
কু’রআনে কিছু আয়াত বার বার দেওয়ার কারণ
আল্লাহ تعالى কু’রআনে যেই আয়াতগুলোকেই একবারের বেশি বলেন, সেই আয়াতগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো এমন সব আয়াত, যেগুলো আমরা সহজে বুঝতে পারি না। সহজে উপলব্ধি করি না। একবার দুইবার সেই আয়াতগুলো পড়লে আমাদের ভেতরে কোনো বড় পরিবর্তন আসে না। যার কারণে আমাদের জীবনে অশান্তি, হতাশা, বেদনা থেকেই যায় এবং আমরা অমুসলিমদের মত নানা ধরনের মানসিক সমস্যা নিয়ে জীবন পার করি। মুসলিমদের কোনো মানসিক সমস্যা নিয়ে এই দুনিয়ার জীবন পার করার কথা নয়, কারণ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন, যেন আমাদের জীবনটা সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যের হয়ে যায়। যদি আমাদের জীবনটা সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যের, তৃপ্তির, কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ না হয়, তার মানে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কু’রআনে কী শিখিয়েছেন — তা এখনো আমরা বুঝিনি।
একারণেই এই আয়াতগুলো বার বার পড়ে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করা দরকার: আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কী শিখতে বলেছিলেন, যা আমি আগে শিখিনি দেখেই আজকে আমার জীবনটা এত কষ্টের।
কিছু ব্যাপার রয়েছে যেগুলো মানুষকে একবার, দুইবার বললে তার মাথায় ঢোকে না। তাকে বহুবার বলতে হয়। যেমন, পুরো কু’রআনে রোজা রাখার নির্দেশ এসেছে মাত্র একবার, কিন্তু নামাজ পড়ার নির্দেশ এসেছে ৮১ বার। অথচ রমজানে মাসে ঠিকই দেখা যায়: যেই বান্দা কোনোদিন নামাজ পড়ে না, সারাদিন মিউজিকে বুঁদ হয়ে থাকে, প্রতিদিন একটা মুভি বা হিন্দি সিরিয়াল না দেখলে ডিপ্রেশনে চলে যায় —সেই একই বান্দা রমজান মাস আসলে এগুলো সব বাদ দিয়ে ৩০টা রোজাই রাখে। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোঁদে সারাদিন না খেয়ে, এক ফোঁটা পানিও পান না করে, তার বদভ্যাসগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে, রোজা রাখার মত এত কঠিন কাজটা সে ঠিকই করতে পারে। এর জন্য তাকে কু’রআনে ৮১ বার রোজা রাখার নির্দেশ দিতে হয় না।
অথচ এই ধরনের বান্দাদেরকে কোনোদিন নামাজ পড়তে দেখা যায় না। তারা তো দূরের কথা, একজন মোটামুটি সিরিয়াস ধরনের মুসলিম, যে সিগারেট টানে না, প্রতিদিন মিউজিকে বুঁদ হয়ে থাকে না, কখনো হিন্দি সিরিয়াল দেখে না, ফেইসবুকে নিয়মিত ইসলামের আর্টিকেল লাইক/শেয়ার করে, ইসলাম নিয়ে কেউ খারাপ কিছু বললে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসলামের মানসন্মান রক্ষা করতে—এই ধরনের মুসলিমদেরকেও প্রতিদিন তিন ওয়াক্ত নামাজও পড়তে দেখা যায় না। এদেরকে একবার, দুইবার, দশ বার, বিশ বার নামাজ পড়তে বলেও লাভ হয় না। এদেরকে বার বার, দিনের পর দিন মনে করিয়ে দিতে হয়। এরকম একটি আয়াত আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি, কারণ আমরা প্রায়ই ভুলে যাই: আল্লাহর تعالى সাথে আমাদের সম্পর্ক কত গভীর, তিনি আমাদের কত কাছের। মানুষের কাছ থেকে একটু মনোযোগ, একটু বাহবা পাওয়ার জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে না থেকে, আমাদের সাথে সবসময় যে আল্লাহ تعالى আছেন, সেটা আমাদের ভালভাবে উপলব্ধি করা দরকার। এটা ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারলে আমাদের জীবন পালটে যাবে।
কু’রআনে শুধু এই একটি আয়াত নয়, এরকম আরও অনেক আয়াত রয়েছে, যা আমাদেরকে হতাশা, অবসাদ, না পাওয়ার কষ্ট, প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে—
জীবনটা অতিরিক্ত কষ্টের মনে হচ্ছে? আর পারছেন না সহ্য করতে?
আল্লাহ تعالى কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা কখনো দেন না। প্রত্যেকেই যা ভালো করেছে তার পুরস্কার পায়, যা খারাপ করেছে তার পরিণাম ভোগ করে। [আল-বাক্বারাহ ২:২৮৬]
তোমরা কি ভেবেছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে, যখন কিনা তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর যা এসেছিল, তা তোমাদের উপর এখনো আসেনি? তাদেরকে কষ্ট-দুর্যোগ, দুর্ভোগ আঘাত করেছিল এবং তাদেরকে এমনভাবে কাঁপানো হয়েছিল যে, তাদের মধ্যে যে রাসুল ছিল, সে এবং তার সাথের বিশ্বাসীরা পর্যন্ত বলে উঠেছিল, “কবে আল্লাহর تعالى সাহায্য আসবে?” চিন্তা করো না, আল্লাহর تعالى সাহায্য কাছেই। [আল-বাক্বারাহ ২:২১৪]
জীবনটা শুধুই কষ্ট, আর কষ্ট? কোনো ভালো কিছু নেই?
প্রতিটি কষ্টের সাথে অবশ্যই অন্য কোনো না কোনো দিক থেকে স্বস্তি রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্যই প্রতিটি কষ্টের সাথে অন্য দিকে স্বস্তি আছেই। [আল-ইনশিরাহ ৯৪:৫-৬]
আপনার বাবা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে হঠাৎ বিছানায় পড়ে গেলেন? দেখবেন আপনার ভাই নিজেই মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে ভালো ফল করছে। একইসাথে আপনার মা হিন্দি সিরিয়াল দেখা বাদ দিয়ে স্বামীর সেবা করছে।
আপনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে চাকরি হারিয়ে ফেললেন? দেখবেন আপনার তরুণ ছেলেটা আরও বেশি সময় ঘরে থেকে বখাটে ছেলেদের সাথে মেশা কমিয়ে দিয়েছে, নিজেই চাকরির খোঁজ করছে। একইসাথে আপনার স্ত্রী হঠাৎ করে নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করেছে।
এই আয়াতে আল্লাহ تعالى গ্যারান্টি দিয়েছেন যে, প্রতিটি কষ্টের সাথে জীবনের অন্য কোনো না কোনো দিকে কমপক্ষে দুটো স্বস্তি আসবেই।
চারিদিকে এত কষ্ট, এত কান্না — ভাবছেন আপনার কী দোষ?
তিনিই সেই সত্তা, যিনি মানুষকে হাসান এবং কাঁদান। তিনিই তো মৃত্যু দেন, জীবন দেন। [আন-নাজম ৫৩:৪৩]
তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে, প্রতিবছর তাদের উপর দুই-একবার বিপদ আসছে? এরপরও ওরা তওবাহ করে না, উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। [আত-তাওবাহ ৯:১২৬]
দেশে অরাজকতা, অশান্তি, অপরাধ দেখে অকালে মৃত্যুর ভয়ে আছেন? ভাবছেন বিদেশে চলে যাবেন?
তুমি যেখানেই যাও না কেন, মৃত্যু তোমাকে ধরবেই। তুমি যদি অনেক উঁচু দালান বানিয়েও থাকো। [আন-নিসা ৪:৭৮]
বলো, “তোমরা যদি নিজেদের ঘরের ভিতরেও থাকতে, যারা খুন হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল, তারা নিজেরাই বের হয়ে নিজেদের মৃত্যুর সাথে দেখা করতে যেত।” [আলে-ইমরান ৩:১৫৪]
আপনার কোনো নিকটজন অকালে প্রাণ হারালেন আর আপনি ভাবছেন— হায়, যদি সে অমুক করত, অমুক না করত, তাহলে সে বেঁচে যেত?
তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ বলে দাবি করো, ওই সব কাফিরদের মতো হয়ো না, যারা তাদের ভাইদের সম্পর্কে বলে (যখন তারা ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েছিল, ভ্রমণে গিয়েছিল) “হায়রে, যদি তারা আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে তারা মারা যেত না, খুনও হতো না।” আল্লাহ تعالى এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে তাদের অন্তরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণার উৎস করে দেন। শুধুমাত্র আল্লাহই تعالى প্রাণ দেন, মৃত্যু ঘটান। তোমরা কী করো, তার সব তিনি দেখছেন। [আলে-ইমরান ৩:১৫৬]
অমুকের এত বাড়ি-গাড়ি-টাকা দেখে ভাবছেন: কেন তার মতো এমন নামে-মুসলিম-কাজে-কাফিরের জীবন এত আরামের?
ওদের এত ধনসম্পত্তি, সন্তানসন্ততি তোমাকে অবাক করতে দিয়ো না। এগুলো দিয়ে আল্লাহ تعالى শুধুমাত্র ওদেরকে এই দুনিয়াতে পরীক্ষা নিতে চান, যেন তাদের আত্মা অবিশ্বাসী (কাফির) অবস্থায় এখান থেকে চিরবিদায় নেয়। [আত-তাওবাহ ৯:৮৫]
চাকরি হারিয়ে আপনার মাথায় হাত: কেন আপনার সাথে এমনটা হলো? কেন আপনার সন্তান এত গুরুতর অসুস্থ হলো? কেন আপনার বাবা এই দুঃসময়ে মারা গেলেন?
আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পত্তি, জীবন এবং ফসল হারানো দিয়ে পরীক্ষা করবই। জীবনে কোনো বিপদ আসলে যারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে এবং বিপদে পড়লে সাথে সাথে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই সম্পত্তি। আল্লাহরই কাছে আমরা শেষ পর্যন্ত ফিরে যাবো” — তাদেরকে সুসংবাদ দাও! ওদের উপর তাদের প্রভুর কাছ থেকে আছে বিশেষ অনুগ্রহ এবং শান্তি। এধরনের মানুষরাই সঠিক পথে আছে। [আল-বাক্বারাহ ২:১৫৫-১৫৭]
মনে রেখ, তোমার যা ধনসম্পদ আছে এবং তোমার সন্তানরা, এগুলো শুধুই তোমার জন্য পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু নয়। আর মনে রেখ, আল্লাহর تعالى কাছে রয়েছে অপরিসীম পুরস্কার। [আল-আনফাল ৮:২৮]
তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে, প্রতিবছর তাদের উপর দুই-একবার বিপদ আসছে? এরপরও ওরা তওবাহ করে না, উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। [আত-তাওবাহ ৯:১২৬]
বার বার কেন আপনার জীবনেই এত কষ্ট আসছে? কেন আল্লাহ تعالى এমন করছেন আপনার সাথে?
মানুষ কি ভেবেছে যে, তাদেরকে কোনো পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দেওয়া হবে, কারণ তারা মুখে বলছে, “আমরা তো মুমিন!” [আল-আনকাবুত ২৯:২]
তোমরা কি ভেবেছিলে যে, তোমাদের মধ্যে থেকে কারা আল্লাহর تعالى পথে আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং কারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে — সেটা আল্লাহ تعالى প্রকাশ না করে দেওয়ার আগেই তোমরা জান্নাত পেয়ে যাবে? [আলে-ইমরান ৩:১৪২]
যে-ই আমার পথনির্দেশ থেকে দূরে চলে যাবে, তার জীবন হয়ে যাবে ভীষণ কষ্টের। [ত্বাহা ২০:১২৪]
অশান্তিতে ছটফট করছেন? রাতে ঘুমাতে পারছেন না? ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন? ওষুধ খেয়েও মনে শান্তি আসছে না?
যাদের ঈমান আছে, তারা যখন আল্লাহর تعالى কথা ভাবে, যিকির করে, তখন তাদের মন শান্তি খুঁজে পায়। মনে রেখ, আল্লাহর تعالى কথা ভাবলে, যিকির করলে, অবশ্যই মন শান্তি খুঁজে পাবেই। [আর-রাদ ১৩:২৮-২৯]
তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, ধৈর্যের সাথে চেষ্টা কর, এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর تعالى কাছে সাহায্য চাও, কারণ আল্লাহ تعالى তাদের সাথে আছেন, যারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে। [আল-বাক্বারাহ ২:১৫৩]
আসুন আমরা কু’রআনের আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কু’রআন দিয়েছেন এক আত্মিক নিরাময় হিসেবে। আমাদের অনেক মানসিক সমস্যার সমাধান রয়েছে কু’রআনে। নিয়মিত বুঝে কু’রআন পড়লে আমরা খুব সহজেই ওষুধের উপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারব। স্ট্রেস-ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হয়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারব — ইন শাআ আল্লাহ।
সূত্র:
- [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
- [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
- [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
- [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
- [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
- [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
- [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
- [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
- [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
- [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
- [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
- [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
- [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
- [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
- [১৫] তাফসির আল জালালাইন।