কে তোমাকে ধারনা দেবে সেই ভীষণ আঘাত সম্পর্কে?—আল-ক্বারিআহ

এক ভীষণ আঘাত! কী সেই ভীষণ আঘাত? কে তোমাকে ধারনা দেবে সেই ভীষণ আঘাত সম্পর্কে?
একদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো ছোটাছুটি করবে। আর পর্বতগুলো হয়ে যাবে ধুনা পশমের মতো।
তারপর যার ভালো কাজের পাল্লাগুলো ভারি হবে, সে থাকবে আরাম-আয়েসে, সুখে-শান্তিতে। আর যার পাল্লাগুলো হালকা হবে, তাকে গ্রাস করবে এক গভীর গর্ত।
কে তোমাকে ধারনা দেবে সেটা কী? সেটা এক লেলিহান শিখার আগুন।
—আল-ক্বারিআহ

এক ভীষণ আঘাত! কী সেই ভীষণ আঘাত?

الْقَارِعَة (আল-ক্বারিআ) এসেছে قرع (ক্বারাআ) থেকে, যার অর্থ এমনভাবে আঘাত দেওয়া, যার আওয়াজ শুনে মনে আতংকের সৃষ্টি হয়। যেমন, কেউ রাতের বেলা এসে ধুম ধুম করে দরজায় আঘাত করছে। আপনি আতংকিত হয়ে গেলেন, পুলিশ এলো নাকি? এই ধরণের আঘাত হচ্ছে ‘ক্বারাআ’, যা মানুষের মনে আতংক তৈরি করে। সেখান থেকে এসেছে ‘ক্বারিআহ’, যার অর্থ হলো— এক ভীষণ আঘাত, যা শুনে মনে ত্রাসের সৃষ্টি হয়। এমন এক বজ্রনাদ, যা ভেঙ্গে সব তছনছ করে দেয়।[১]

কিয়ামতের আগমন হবে এক ভীষণ নাদের মাধ্যমে। রাতের বেলা কেউ এসে দরজায় জোরে আঘাত করলে ঘরের ভেতরে সবাই যেমন আতংকিত হয়ে যায়, কিয়ামতের সময় তেমনি এই ভয়ংকর নাদের শব্দে সবাই চরম আতংকিত হয়ে যাবে। এই ভীষণ আওয়াজ পুরো মহাবিশ্বে মহাপ্রলয় ঘটানো শুরু করে দেবে এবং সবকিছুকে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলবে।[৭]

কে তোমাকে ধারনা দেবে সেই ভীষণ আঘাত সম্পর্কে?

আমরা যখন রাতে বিছানায় শুয়ে দেখি সবকিছু কেমন দুলতে শুরু করেছে, বুঝতে পারি যে ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে, তখন আমরা আতংকে ছোটাছুটি শুরু করে দেই। এক মামুলি ভূমিকম্পই আমাদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেয়। কয়েকদিন আতংকে কাটে কখন ভূমিকম্পের বাকিটুকু হবে। অথচ এ হলো এক মামুলি ভূমিকম্প, যা হয়ত কিছু বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু সেদিন এমন এক ভয়ংকর আঘাত আসবে যে, পুরো মহাবিশ্বে ধ্বংস প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। সেটা হবে মানুষের কল্পনাতীত ঘটনা। মানুষ আজকে ধারনাই করতে পারবে না সেটা কী হতে যাচ্ছে।

একদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো ছোটাছুটি করবে

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জিব। মানুষ তার জ্ঞানবুদ্ধি, প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিশাল সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারে। ফার্মের মধ্যে হাজার হাজার প্রাণীকে বশ করে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে পারে। ইন্টারনেট-এর মতো বিশ্বব্যাপী এক সুশৃঙ্খল তথ্যের মহাসড়ক তৈরি করতে পারে। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মহাকাশযান পরিচালিত করে মহাকাশে পাড়ি দিতে পারে। এই বুদ্ধিমান, সুশৃঙ্খল সৃষ্টিই একদিন মামুলি পতঙ্গের মতো দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি শুরু করবে। আল্লাহ تعالى মানুষকে তার অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষ নিজেকে যতই বড়, যতই সভ্য মনে করুক না কেন, একদিন আসবে যেদিন মানুষ আলোর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো পতঙ্গের মতো ছোটাছুটি করতে থাকবে। মানুষের সব বড়ত্ব সেদিন শেষ হয়ে যাবে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জিব হয়ে যাবে নিম্নতর জিবের মতো অসহায়, বিভ্রান্ত।[৩৯৬]

আজকাল যখন ভূমিকম্পে বাড়ি দুলতে থাকে, বাড়ি ভেঙ্গে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়, তখনও আমরা চিন্তাভাবনা করে মোবাইল, মানিব্যাগ হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় গিয়ে সুশৃঙ্খল হয়ে দাঁড়াই। এমনটা হয় না যে, কেউ আতংকে দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে দৌড়িয়ে, জানালা দিয়ে নীচে লাফ দিয়ে পরে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলেছে। এরকম কাজ মানুষ তখনই করবে, যখন ঘটনা এমন ভয়ংকর হবে যে, তার বোধশক্তি লোপ পেয়ে যাবে। কিয়ামতের দিন তাই ঘটবে। চারিদিকে ঘটনার ভয়াবহতায় মানুষের বোধশক্তি লোপ পেয়ে যাবে। মানুষ হয়ে যাবে পতঙ্গের মতো বিক্ষিপ্ত, বিভ্রান্ত।

আলোর দিকে ছুটে চলা পতঙ্গের সাথে এই তুলনার মধ্য দিয়ে মানুষের দুর্বলতা, অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। কীটপতঙ্গ আলো দেখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার দিকে এগিয়ে যায়। তারা যেন এক মায়ার জালে আটকে যায়। নিজেদেরকে তখন আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আলো যেন তাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে কাছে আসার জন্য এবং তারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেদিকে এগিয়ে যায়। ঠিক একইভাবে, মানুষ চাক বা না চাক, তাকে যখন ডাকা হবে, তখন সবদিক থেকে মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে এগিয়ে যাবে যে ডাকছে তার দিকে।[২০]

আর পর্বতগুলো হয়ে যাবে ধুনা পশমের মতো

মানুষ কয়েকযুগ আগেই আকাশ ভেদ করে মহাকাশে পাড়ি দিতে পেরেছে। কয়েক মাইল গভীর সমুদ্রের তলদেশে পৌছুতে পেরেছে। কিন্তু পর্বত ভেদ করার প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে। ২০১৬ সালে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সুইজারল্যান্ড-এর আল্পস পর্বতমালার ভেতর দিয়ে খুঁড়ে রেললাইন বসানো হয়েছে। পর্বতকে আল্লাহ تعالى পৃথিবীর খুঁটি বলেছেন। পৃথিবী যেন হেলে দুলে না যায়, তার জন্য পর্বতের মতো বিশাল ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। পর্বত হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে উঁচু, ভারি, বিশালাকৃতির সৃষ্টি। আর এই পর্বতগুলোই কিয়ামতের দিন ধুনা পশমের মতো উড়ে বেড়াতে থাকবে। ধুনা পশমে যেমন পশমগুলো আলাদা হয়ে যায়, সেরকম পর্বতগুলো গুড়ো হয়ে ভেসে বেড়াতে থাকবে। এরকম একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য কি বিশাল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তা মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। মানুষের হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী বোম্ব: থার্মো-নিউক্লিয়ার বোম্ব দিয়েও একটা পর্বতকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া সম্ভব না। বড় জোর পর্বতের গায়ে একটা বড় গর্ত করা সম্ভব। যেই বোম্ব একটি শহরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে, সেটা পর্বতের গায়ে শুধু একটি বড় গর্ত তৈরি করতে পারে।

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে দেখাচ্ছেন যে, যেই বিশাল পর্বত দেখে আমরা মুগ্ধ হই, যাকে অতিক্রম করা মানুষের জন্য এত কঠিন, সেই পর্বতকেই তিনি পশমের মতো উড়িয়ে নেবেন।

তারপর যার ভালো কাজের পাল্লাগুলো ভারি হবে, সে থাকবে আরাম-আয়েসে, সুখে-শান্তিতে

সেদিন এক বিশেষ পাল্লায় আমাদের ভালো-খারাপ কাজগুলোর পরিমাপ করা হবে। অনেকে প্রশ্ন করেন, পাল্লা দিয়ে কীভাবে কাজের পরিমাপ করা যায়? কাজ তো ধরা-ছোঁয়া যায় এমন কিছু নয়? তাহলে সেগুলোকে কীভাবে পাল্লায় রেখে ওজন করা যাবে? —এই নিয়ে আগেকার যুগে বহু তর্ক বিতর্ক হয়েছে। বইয়ের পর বই লেখা হয়েছে। এমন অবস্থা হয়েছিল যে, আলিমরা এই ভালো-মন্দ কাজের পাল্লায় বিশ্বাস করা আক্বিদার অংশ করে দিয়েছিলেন। কেউ যদি এতে বিশ্বাস না করে, যুক্তিতর্ক দেখিয়ে একে রূপক ধারনা মনে করে, তাহলে তার ঈমান নেই এমন দাবিও করা হয়েছে।[৩৯৬]

আজকে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের ধারনার সীমাবদ্ধতা অনেকাংশে দূর হয়েছে। এখন আমরা একটু চিন্তা করলেই ধারনা করতে পারি ভালো-মন্দ কাজের ওজন কীভাবে হতে পারে। আজকে আমাদের কাছে এমন এক পাল্লা আছে, যা দিয়ে আলোর ভর পরিমাপ করা যায়। আলো, যা কিনা ধরা-ছোঁয়া যায় না, তার ভরও আমরা পরিমাপ করতে পারি। নিউট্রন, ইলেক্ট্রন-এর মতো অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার ভর পরিমাপ করা যায়। একটি অণুর ভরও নিখুঁতভাবে বের করা যায় এই চৌম্বকক্ষেত্র দিয়ে তৈরি করা পাল্লা ব্যবহার করে।

বিংশ শতাব্দীতে তথ্যের পরিমাণ পরিমাপ করার জন্য রয়েছে কিলোবাইট, মেগাবাইট মানদণ্ড। তথ্যের মতো ধরাছোঁয়ার বাইরে কিছুরও এখন পরিমাপ করা যায়। আজকাল আমরা পকেটে করে কয়েক গিগাবাইট ভালো-খারাপ কাজ নিয়ে ঘুরে বেড়াই। মানুষের কাছেই যদি আজকে এমন প্রযুক্তি থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে কিছুর ওজন করার জন্য, তাহলে আল্লাহর تعالى কাছে তো প্রযুক্তি থাকবেই ভালো-খারাপ কাজের পরিমাপ করার জন্য। তথ্যের যেমন কিলোবাইট, মেগাবাইট একক রয়েছে, তেমনি হয়ত কাজেরও কিলোভালো, মেগাভালো, গিগাখারাপ ধরণের একক আছে।

বিচারের দিন আমি ন্যায়বিচারের পাল্লাগুলো স্থাপন করবো। তাই কারও প্রতি সামান্য অন্যায় করা হবে না। যদি সরিষা দানার সমপরিমাণ কাজও থাকে, আমি তাকে উপস্থাপন করবো। হিসাব নেওয়ার জন্য আমিই যথেষ্ট।
—আল-আম্বিয়া ২১:৪৭

লক্ষ্য করুন, আল্লাহ تعالى বলেননি ‘পাল্লা’, বরং তিনি বলেছেন ‘পাল্লাগুলো’। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাল্লা থাকবে। এই বহুবচনের ব্যবহার থেকেই বোঝা যায়, বিভিন্ন কাজের পরিমাপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।[১৮]

মানুষের ভালো কাজের ওজন বেশি না কম হবে, তা নির্ভর করে সে কতটা আন্তরিকতা নিয়ে, কতটুকু ইসলামের নিয়ম অনুসারে পালন করেছে। কে কতবেশি ভালো কাজ করেছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।[১৮] কেউ গরগর করে কিছু না বুঝে ৯৯ বার আলহামদুলিল্লাহ বলল, আর কেউ গভীর কৃতজ্ঞতা নিয়ে বুকের ভেতর থেকে একবার আলহামদুলিল্লাহ বলল। সেই এক আলহামদুলিল্লাহ’ই গরগর করে বলা ৯৯ আলহামদুলিল্লাহ থেকে বেশি ওজনের হয়ে যেতে পারে।

আবার কেউ অনেক নামাজ, রোজা, যাকাত, সাদাকা, কয়েকবার হাজ্জ নিয়ে আসলো। কিন্তু দেখা গেলো সেগুলোর মধ্যে আন্তরিকতা কম। শুধুই আল্লাহকে تعالى খুশি করার চেষ্টা নেই। অন্যকে দেখানোর চেষ্টা মিশে আছে। মানুষের কাছ থেকে প্রতিদান পাওয়ার ইচ্ছে লুকিয়ে আছে। তখন সেগুলোর ওজন হবে হালকা।[১৮]

যার ভালো কাজের পাল্লাগুলো ভারি হবে, তার জন্য থাকবে অনন্ত শান্তি, আরাম, আয়েস। লক্ষ্য করুন, এখানে আল্লাহ تعالى বলেননি যে, যার ভালো কাজের পাল্লাগুলো ভারি হবে, সে জান্নাতে যাবে। বরং জান্নাতে যাওয়ার পরে কী অবস্থা হবে, তার ছবি তিনি তুলে ধরেছেন। যেমন, “ভাই, বেশি বেশি করে ভালো কাজ করেন, তাহলে আপনি জান্নাতে যাবেন”—এই কথা শুনলে অনেকে হাই তুলবেন। ভালো কাজ করার খুব একটা আগ্রহ পাবেন না। কিন্তু কাউকে যদি বলেন, “ভাই, বেশি বেশি করে ভালো কাজ করেন। তাহলে আপনি প্রচুর বুফে খেতে পারবেন। ইচ্ছেমত ড্রিঙ্ক করতে পারবেন। যতবার ইচ্ছা বিদেশ ঘুরতে পারবেন”—তাহলে সে আগ্রহ নিয়ে নড়েচড়ে বসবে।

আল্লাহ تعالى এই আয়াতে বলছেন: তারা আয়েসের মধ্যে থাকবে এবং সন্তুষ্টির মধ্যেও থাকবে। কত মানুষ আছে, যারা আয়েশের মধ্যে আছে, দু হাতে টাকা উড়াচ্ছে, কিন্তু তাদের মধ্যে তৃপ্তি নেই, সন্তুষ্টি নেই। বহু মানুষ আছে, যারা অঢেল সম্পত্তির মালিক। সারাদিন নিজেদেরকে বিনোদনে বুঁদ করে রাখে। কিন্তু তাদের মনে শান্তি নেই। পৃথিবীতে আয়েস করেও তৃপ্তি হয় না, ধনী হয়েও শান্তি মেলে না। কিন্তু আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলছেন যে, জান্নাতে আমরা আয়েশে থাকবো, একই সাথে শান্তি এবং তৃপ্তির মধ্যেও থাকবো। এমন নয় যে জান্নাতের এত সব আয়েশের মধ্যে থেকেও আমাদের ভেতরে কোনো শূন্যতা কাজ করবে বা ‘যত পাই তত চাই’ অবস্থা হবে। বরং আমরা আরাম, আয়েশ করে অনাবিল শান্তি পাবো, তৃপ্তি পাবো। এই দুটো জিনিস পৃথিবীতে কেউ একসাথে পায় না। এটা কেবল জান্নাতেই পাওয়া সম্ভব।

আর যার ভালো কাজের পাল্লাগুলো হালকা হবে, তাকে গ্রাস করবে এক অতল গর্ত

শাস্তির বেলায় আল্লাহ تعالى উল্টোভাবে বলেছেন। তিনি বলেননি যে, যার ভালো কাজের পাল্লাগুলো হালকা হবে, সে ভীষণ কষ্ট, যন্ত্রণার মধ্যে থাকবে। বরং পাপীরা কোথায় গিয়ে থাকবে, সেই জায়গাটা কেমন হবে তা তিনি تعالى বলেছেন। বাকিটা কারও কল্পনা করে নিতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। আজকাল কাউকে বর্ণনা দেওয়ার দরকার হয় না জেলে নিয়ে কী করা হয়। শুধু বললেই হয়, “তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।” —তাহলেই মানুষ বুঝে যায় কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে।

না জানার মধ্যে এক ধরণের অনিশ্চয়তা কাজ করে। সেই অনিশ্চয়তা থেকে একসময় ভয়ের তৈরি হয়। ভয় থেকে আতংক। ঠিক কী ধরণের শাস্তি দেওয়া হবে, তা না বলে ভয় আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের সাবধান হওয়ার তারা ঠিকই সাবধান হয়ে যাবে।

যাদের ভালো কাজের পাল্লাগুলো হালকা হয়ে যাবে, তাদেরকে জড়িয়ে ধরবে এক অতল গর্ত। আয়াতের আক্ষরিক অনুবাদ হচ্ছে, “তাদের মা হবে এক অতল গর্ত।” উম্মু বা মা যেমন বাচ্চাদেরকে জড়িয়ে ধরেন, ঠিক সেভাবে এক অতল গর্ত তাদেরকে চারিদিক থেকে জাপটে ধরবে। তারা আর সেখান থেকে বের হতে পারবে না।

কে তোমাকে ধারনা দেবে সেটা কী? সেটা এক লেলিহান শিখার আগুন

আল্লাহ تعالى বলছেন যে, আমরা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারবো না সেটা কী ভয়ংকর একটা ব্যাপার। হামিয়াহ অর্থাৎ ভীষণভাবে প্রজ্বলিত এক অতি উত্তপ্ত আগুন তাদেরকে গ্রাস করবে। চারিদিক থেকে জাপটে ধরবে। সেই হামিয়াহ থাকবে এক গভীর গর্তে।

উপসংহার

এই সূরাহ’র মূল শিক্ষা রয়েছে ভালো-মন্দ কাজের ওজনের মধ্যে। এখানে আমরা জানতে পারি যে, আমাদের প্রতিটি কাজের ওজন করা হবে, সেটা যতই নগণ্য হোক না কেন। সেটা কতখানি ভালো, কতখানি খারাপ তা পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পাল্লা থাকবে। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে যেভাবেই হোক আমাদের ভালো কাজের পাল্লা যেন মন্দ কাজের পাল্লা থেকে ভারি হয়। সাবধান থাকতে হবে যে, প্রতিদিন করা ছোট ছোট খারাপ কাজও একসাথে জমে ভারি হয়ে যেতে পারে। আবার, খুব ছোট ছোট ভালো কাজও একসাথে জমে ভারি হয়ে যেতে পারে। তাই কোনো কাজের বেলাতেই অবহেলা করা যাবে না। হতে পারে আমরা গিয়ে দেখলাম যে, আমাদের ভালো কাজের পাল্লা একটুর জন্য হালকা হয়ে গেলো। দরকার ছিল আর একটি মাত্র ছোট দান। আর দুটো রাকাত নফল নামাজ। আর একটু কুর‘আন পড়া। কিন্তু না। অল্পের জন্য সব হারিয়ে ফেললাম।


[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্‌শাফ।
[৩৯৬] The Striking Blow: A Tafsir of Surat al-Qariah [Surah 101] – Shaykh Riyadh ul Haq. [online] Al Kawthar Academy | ‘The Abundance of Good’. Available at: http://akacademy.org/tafsir-al-qariah/ [Accessed 3 Sep. 2017].

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

3 thoughts on “কে তোমাকে ধারনা দেবে সেই ভীষণ আঘাত সম্পর্কে?—আল-ক্বারিআহ”

  1. আপনার ব্যাখ্যাগুলি যতক্ষন পড়ি মন্ত্র মুগ্ধের মত থাকি।
    ভালো হয় কোরানের শেষের সূরাগুলির তাফসীর আগে শেষ করলে।

    ভাই, আপনি মনে হয় এখানে ছোট্ট একটি তথ্যগত ভুল করেছেন।
    সুইডেন এর আল্পস পর্বতমালার কথা বলছেন। এটা হবে সুইজারল্যান্ড, সুইডেন নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *