আমি একে নাজিল করেছি এক মহান রাতে — আল-ক্বদর

আমি একে নাজিল করেছি এক মহান রাতে। কে তোমাকে বলতে পারবে এই মহান রাত কী? এই মহান রাত হাজার মাসের থেকেও উত্তম। এই রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ আল্লাহর নির্দেশে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নেমে আসে। ফজর আসা পর্যন্ত শান্তি-নিরাপত্তা বিরাজ করে। [আল-ক্বদর]

অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে যে—

  • কুরআন তো এক রাতে নাযিল হয়নি? এটা না ২৩ বছর ধরে একটু একটু করে নাযিল হয়েছে? তাহলে কেন বলা হলো যে, কুরআন নাযিল হয়েছে এই রাতে?
  • কেন আল্লাহ নির্দিষ্ট করে বলে দিলেন না এই রাত কোনটা? এত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত এভাবে ধোঁয়াশা রাখা হলো কেন? মানুষকে এভাবে খামোখা কষ্ট দিয়ে কী লাভ?
  • আর এই রাতে ‘সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নাযিল হয়’ মানে কি যে, অন্য রাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না? তাহলে বাকি রাতে আল্লাহর কাছে কিছু চেয়ে লাভ নেই? আল্লাহর ﷻ সব সিদ্ধান্ত আগামী ক্বদর রাত না আসা পর্যন্ত আর বদলাবে না? কিন্তু কুরআনেই না অন্য জায়গায় বলা আছে যে, আল্লাহর ﷻ কাছে যখনি দুআ করা হয়, তখনি তিনি শোনেন?
  • অনেক সময় দেখা যায় মানুষের দুআর ফল অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়া যায়? তাহলে সব সিদ্ধান্ত এই রাতে নেওয়া হলো কীভাবে?
  • আর এই রাতে যদি শান্তি, নিরাপত্তা থাকে, তাহলে খারাপ লোকেরা এই রাতে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ করতে পারে কেন? গাজা, ফিলিস্তিন, কাশ্মীরে মুসলিমদের হত্যা করা হয় কীভাবে?

—সুরা ক্বদর নিয়ে মানুষের বিভ্রান্তির শেষ নেই। এই সব বিভ্রান্তির কারণ হলো মূলত তিনটি— ১) কুরআনের আয়াতের অর্থ ঠিকভাবে না বোঝা, ২) ক্বদর সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকা এবং ৩) একজন মুসলিমের কীভাবে চিন্তা করার কথা, তা বুঝতে ব্যর্থ হওয়া।

আমি একে নাজিল করেছি এক মহান রাতে

আমরা যেমন বলি, “মনে আছে? আমি তোমাকে সেদিন টাকা দিয়েছিলাম? সেইদিনের কথা মনে আছে?”—এর মানে এই না যে, সেদিনই তাকে আমি সব টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু এর পরে মাসে মাসে আর টাকা দেইনি। বরং বলা হচ্ছে যে, সেদিন তাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেদিনের গুরুত্ব বেশি বোঝাতে এভাবে বলা হয়েছে।

এই মহান রাতে রাসূলকে ﷺ কুরআন প্রথম দেওয়া হয়েছিল। একারণে এই রাত বিশেষ মর্যাদার রাত। এছাড়াও আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি যে, লাওহে মাহফুজ থেকে নিচের আকাশে বাইতুল ইযযতে এই বিশেষ রাতে সম্পূর্ণ কুরআন দেওয়া হয়েছিল। তারপর জিব্রাইল আলাইহিস সালাম ২৩ বছর ধরে রাসূলুল্লাহর ﷺ কাছে আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে যখন যা আল্লাহ ﷻ মঞ্জুর করেছেন একটু একটু করে অবতীর্ণ করেন। ক্বদরের রাত সম্পর্কে এই দুটো ধারনা বহুল প্রচলিত।[৪][৭][১৭][১৮]

কিন্তু তখন মানুষ প্রশ্ন করে, “রাসূল ﷺ এর জীবনে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে তো অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। এখন এই আয়াতগুলো যদি আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে এবং তা বাইতুল ইযযাতে আগে থেকেই দিয়ে দেওয়া থাকে, তার মানে রাসূল ﷺ এর জীবনের প্রতিটি ঘটনা আগে থেকেই সাজানো? তাহলে যারা অন্যায় করেছিল, তাদের অন্যায়কে আগে থেকেই সাজানো হয়েছিল, যেন সেই প্রেক্ষিতে বিশেষ কিছু আয়াত নাযিল করা যায়? যদি তাই হয়, তাহলে তারা তাদের অন্যায়ের জন্য শাস্তি পাবে কেন?”

এই বিভ্রান্তির মূল কারণ হচ্ছে ক্বদর সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকা।

ক্বদর কী?

ক্বদর বলতে চারটি বিশ্বাস কে বোঝায়—

  • আল্লাহ ﷻ সবকিছুর ব্যাপারে সবকিছু জানেন। আদি থেকে অনন্ত সবকিছুই তাঁর জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে।
  • সৃষ্টিজগত সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই আল্লাহ ﷻ যা কিছু হবে, তার সবকিছুই নির্ধারণ করে দিয়েছেন লাওহে মাহফুজ-এ।
  • ভালো-মন্দ যা কিছুই ঘটে, সবকিছুই তার ইচ্ছার কারণে ঘটে। তাঁর ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছুই ঘটা সম্ভব নয়।
  • যা কিছু আছে সব কিছুই আল্লাহ ﷻ সৃষ্টি করেছেন। সকল সৃষ্টির সমস্ত বৈশিষ্ট্য এবং কর্ম আল্লাহই ﷻ সৃষ্টি করেন।

ক্বদরে বিশ্বাস করা মানে হচ্ছে যে, কারো ইচ্ছা বা কর্ম কোনোটাই আল্লাহর ﷻ ইচ্ছার বাইরে হয় না। আল্লাহ ﷻ মানুষকে ইচ্ছা এবং কাজ করার সামর্থ্য দিয়েছেন। মানুষকে ভালো এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা দিয়েছেন। একইসাথে, মানুষ কোনো কিছুই ইচ্ছা করতে পারে না, যদি না আল্লাহ ﷻ তা ইচ্ছা না করেন।

তোমরা ইচ্ছা করো না, যদি না বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আত-তাকউইর ৮১:২৯

একইসাথে ক্বদরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস হলো যে, দুআ ক্বদর পরিবর্তন করে দিতে পারে। সহীহ হাদীসে আমরা এই প্রমাণ পাই যে, ক্বদর পরিবর্তন করার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর ﷻ কাছে দুআ।

সুতরাং, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবন এবং আমাদের সবার জীবনে যা কিছুই ঘটবে, তার সবকিছুই আল্লাহ ﷻ আগে থেকেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। রাসুলের ﷺ জীবনে তখনকার সময়ের আরবরা বিভিন্ন ধরনের অন্যায় করবে এবং সেই প্রেক্ষিতে আয়াত নাজিল হবে —এটাও আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে। কে, কবে, কী অন্যায় করবে —তাও আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে। সৃষ্টির অনেক আগেই লাওহে মাহফুজে সৃষ্টিজগতের যাবতীয় ঘটনা আগে থেকে নির্ধারণ করা আছে।

তখন অনেকেই প্রশ্ন করেন, “যদি আমার ক্বদরে লেখা থাকেই যে, আমার কবে অসুখ হবে, কবে আমি সুস্থ থাকবো, কবে কোথায় চাকরি করবো, কত বছর বাঁচবো, কত টাকা কামাবো —এই সবই যদি আগেই থেকেই নির্ধারণ করা থাকে, তাহলে আমার আর নিজে থেকে কোনো কিছু করার চেষ্টা করে লাভ কী? অসুখ হলে চিকিৎসা করে কী লাভ? চাকরির জন্য ছোটা ছুটি করে কী লাভ? এত কষ্ট করে পড়ালেখা করে কী লাভ? যদি ক্বদরে লেখাই থাকে যে, আমি খারাপ কাজ করবো, তাহলে আর ভালো হওয়ার চেষ্টা করে কী লাভ?” ইত্যাদি ইত্যাদি।

ক্বদর নিয়ে যাবতীয় দ্বন্দ্বের পেছনে মূল প্রশ্নটি হল— মানুষ যে ইচ্ছা করে, সেই ইচ্ছা কীভাবে সৃষ্টি হয়? মানুষ কি সেই ইচ্ছা সৃষ্টি করে? নাকি আল্লাহ ﷻ সেই ইচ্ছা সৃষ্টি করেন? — মানুষের পক্ষে তো কোনো কিছুই সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। একমাত্র আল্লাহ ﷻ সব কিছু সৃষ্টি করেন এবং তিনিই মানুষের সমস্ত চিন্তা-ইচ্ছা-কাজ সৃষ্টি করেন। যদি আল্লাহই ﷻ এগুলো সৃষ্টি করেন, তাহলে সেই চিন্তা-ইচ্ছা-কাজের দায় মানুষ নেবে কেন?

ক্বদর নিয়ে যাবতীয় বিভ্রান্তি আসলে এই একটি মূল প্রশ্ন থেকেই আসে। এই প্রশ্নের যুক্তিযুক্ত উত্তর পাওয়া না গেলে, ক্বদর নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান কখনোই হবে না। কিন্তু শুধু যুক্তি দিয়ে এটি বোঝা সম্ভব নয়। আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আমার ইচ্ছা আল্লাহই ﷻ সৃষ্টি করেন, কিন্তু আমার ইচ্ছার জন্য আমি দায়ী, আল্লাহ ﷻ দায়ী নন। আমি কী করবো সেটা পূর্বনির্ধারিত এবং আগে থেকেই লাওহে মাহফুজে লেখা আছে, কিন্তু তারপরেও আমি যখন যা করি সেটার দায় আমার। —এগুলো অযৌক্তিক বা স্ববিরোধী শোনাতে পারে। একারণেই ক্বদর বিশ্বাসের ব্যাপার। আমাদেরকে এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ ﷻ ন্যায়বিচারক। তিনি কাউকে বিনা অপরাধে শাস্তি দেন না। তাই আমাদের যাবতীয় চিন্তা এবং কাজের দায় আমাদের, আল্লাহর ﷻ নয়। আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছেন। এই স্বাধীনতার প্রয়োগের ফলাফল আমাদেরকে পেতে হবে।

অনেকে এর সমাধান এভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন— আল্লাহ تعالى মানুষকে প্রতিটি মুহূর্তে একাধিক সম্ভাবনা দেন। মানুষ সেই সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে একটি বেছে নেয়। যেমন, এই মুহূর্তে আপনি পড়া চালিয়ে যেতে পারেন, অথবা পড়া বন্ধ করে ঘুমাতে যেতে পারেন। আল্লাহর تعالى ইচ্ছা হলো যে, তিনি আপনাকে কয়েকটি সম্ভাবনা দেবেন। আর আপনার ইচ্ছা হলো যে, আপনি একটি সম্ভাবনা বেছে নেবেন। একারণেই আপনার সিদ্ধান্তের জন্য আপনি দায়ী।— কিন্তু এভাবেও সমস্যার সমাধান হয় না। আল্লাহ تعالى কি অপেক্ষা করে আছেন দেখার জন্য যে, আপনি কি সিদ্ধান্ত নেবেন? অবশ্যই না। তিনি تعالى সময়ের বাইরে। পুরো সময় এবং যত ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটবে, তার সব তিনি দেখতে পান। যেহেতু তিনি সব দেখতে পান, তার মানে সমস্ত ঘটনাই তিনি সৃষ্টি করেছেন। তাহলে আপনার ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকল কীভাবে?

সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে, ক্বদরের কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে না। কিন্তু কেন আমাদেরকে অযৌক্তিক ব্যাপার বিশ্বাস করতে হবে? বিজ্ঞানে কোনো অযৌক্তিক ব্যাপার নেই। তাহলে ধর্মের মধ্যে কেন এধরণের অযৌক্তিক ব্যাপার থাকবে? একজন যুক্তিবাদী, বুদ্ধিমান মানুষ কীভাবে ধর্ম মেনে নেবে?

সত্যিই কি বিজ্ঞানে কোনো অযৌক্তিক, অবাস্তব ব্যাপার নেই?

কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে একটি পরমাণু একই সময় দুই জায়গায় থাকতে পারে। এটা শুধু কোনো তত্ত্ব নয়, গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে, একটি পরমাণু একই সময় প্রায় দুই ফুট দূরত্বে দুটো জায়গায় ছিল।[৪০১][৪০২] অনেকটা এমন যে, আপনার হাতে যেই বলটা আছে, সেটা একই সময় আমার হাতেও আছে। আপনি বলটাতে লাথি মারলে আমার বলটাতেও লাথি লাগে। —যতই অযৌক্তিক, অবাস্তব শোনাক না কেন, পরমাণুর জগতে এই ধরণের ঘটনা ঘটে।

কোয়ান্টাম ফিজিক্স নামে ফিজিক্সের পুরো একটি শাখা রয়েছে, যার কাজ হচ্ছে এই সব অযৌক্তিক, অবাস্তব ঘটনা নিয়ে কাজ করা। আমাদের চারপাশের জগত আপাতত দৃষ্টিতে দেখে যতই যৌক্তিক এবং বাস্তব মনে হোক না কেন, যখনি আমরা পরমাণুর অতিক্ষুদ্র জগতে চলে যাই, আমরা দেখতে পাই যে, মহাবিশ্বে বহু অযৌক্তিক, অবাস্তব ঘটনা ঘটে, যেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।

সুতরাং, আমাদের কাছে কিছু একটা অবাস্তব মনে হওয়া মানেই সেটা মিথ্যা নয়, বরং সেটা মানুষের চিন্তার সীমা। এই সীমার বাইরে কোনো কিছু মানুষ হাজার চেষ্টা করলেও বুঝতে পারে না। যেমন, ‘সময়’ কী, সেটা আমরা জানি না। বিজ্ঞানীরা এবং দার্শনিকরা হাজার চেষ্টা করেও সময়ের সংজ্ঞায় একমত হতে পারেননি। মহাবিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ‘সময়’ সম্পর্কেই মানুষের কোনো পরিষ্কার ধারনা নেই। সময়ের বাইরে কোনো কিছু মানুষ ধারনাই করতে পারে না। আমাদের ভাষায় অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে শব্দ আছে। কিন্তু সময়ের বাইরে কোনো কিছু বোঝানোর জন্য কোনো শব্দ নেই, কারণ আমরা সেটা ধারনাই করতে পারি না।

শুধু তাই না, মহাবিশ্বের অন্যতম মৌলিক ধারণাগুলো, যেমন অভিকর্ষ এবং শক্তি —এগুলো আসলে কী, তা কেউ বলতে পারে না। আমরা এগুলোর প্রভাব দেখতে পাই, এদেরকে যন্ত্রে পরিমাপ করতে পারি। কিন্তু আসলে অভিকর্ষ কী, কীসের কারণে অভিকর্ষ বল হয়, তা কেউ জানে না। কিছু তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোর প্রমাণ এখনো নেই। আমাদের সৃষ্টিজগতের মূল তিনটি বিষয়— সময়, অভিকর্ষ এবং শক্তি—এগুলো আসলে কী, তার কোনো সর্বজনগৃহীত ব্যাখ্যা মানুষের কাছে নেই!

পুরো বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে মৌলিক কিছু বিশ্বাসের উপরে। তাহলে ধর্ম কেন বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না? আধুনিক বিজ্ঞান আমাদেরকে পরিষ্কার প্রমাণ দেখিয়েছে যে, মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রতম জগতে এমন সব ঘটনা ঘটে, যা বিজ্ঞান কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারে না এবং সেগুলো যুক্তি দিয়েও বোঝা যায় না। তাহলে কেন আমরা আশা করি ধর্মে সবকিছুর যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা থাকতে হবে?

একজন বিজ্ঞানী বেশ কিছু ব্যাপার যুক্তি, প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করে নিয়ে বিজ্ঞান মানেন। সেই বিশ্বাসগুলো না করলে, কখনোই আগে বাড়া সম্ভব নয়। তাহলে সেই একই বিজ্ঞানী কেন কিছু ব্যাপার বিশ্বাস করে নিয়ে ধর্ম মানতে পারবেন না?

কে তোমাকে বলতে পারবে এই মহান রাত কী?

মানুষ প্রশ্ন করে, কেন আল্লাহ নির্দিষ্ট করে বলে দিলেন না এই রাত কোনটা? এত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত এভাবে ধোঁয়াশা রাখা হলো কেন? মানুষকে খামোখা কষ্ট দিয়ে কী লাভ?

ক্বদরের রাত রমজানের শেষ দশ রাতের যে কোনো একটি, বা শেষ দশ বেজোড় রাতের যে কোনো একটি। এটি নির্দিষ্ট না করে দেওয়াতে লাভ কী হয়েছে দেখি। যারা মনে করে ক্বদর হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট রমজানের রাত, তারা সেই রাতে অনেক বেশি ‘হুজুগে’ ইবাদত করে। কিন্তু অন্য দিনগুলোতে ঢিলে থাকে। অন্য রাতগুলোতে তাদেরকে আপত্তিকর অনুষ্ঠান, বিনোদন, অপেক্ষাকৃত কম ইবাদত করতে দেখা যায়। এক রাত লম্বা ইবাদত করেই সে নিশ্চিত হয়ে যায় যে, হাজার রাতের সওয়াব জয় করে ফেলেছে। পরদিন থেকে সে এক ধরণের আত্মতৃপ্তিতে ভোগে যে, ক্বদর-এর রাত সে হাসিল করে ফেলেছে, তাই এবার ইবাদতে একটু ঢিল দিলে কিছু হবে না।

আর যারা জানে যে, ক্বদরের রাত শেষ দশ রাতের যে কোনো একটি, বা বেজোড় রাতগুলোর একটি, তখন সে এক রাতের জায়গায় দশ রাত বা পাঁচ রাতের জন্য ভালো হয়ে যায়। এভাবে সে অনেকগুলো রাত কম অন্যায় করে থাকতে পারে। এতে তারই বিরাট লাভ হয়। এক রাতের হুজুগে ইবাদত করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে, সে নিয়মিত বেশি-বেশি ইবাদত করার মানসিকতা এবং অভ্যাস তৈরি করে।

ফজর আসা পর্যন্ত শান্তি-নিরাপত্তা বিরাজ করে

ফেরেশতারা এবং রূহ এই রাতে নেমে আসেন এবং তাদেরকে দেওয়া দায়িত্ব পালন করেন। এই রাতে বিশেষ নিরাপত্তা এবং শান্তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যেন তাদের কাজে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। সূরাহ আল-বাকারাহ’তে আমরা দেখেছি যে, জিব্রাইল عليه السلام যখন কুরআন নিয়ে পৃথিবীতে আসেন, তখন মহাবিশ্বে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যেন কেউ কুরআনের বাণী পৌঁছে দেওয়াতে কোনো সমস্যা করতে না পারে। তিনি আসার সময় তাঁর সামনে এবং পেছনে বিশ্বজগত জুড়ে বিশাল নিরাপত্তা বাহিনী দাঁড় করানো হয়। এই বাহিনী শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ওঁত পেতে থাকা জিনদের আক্রমণ করে তাড়িয়ে দেয়। কোনো মানুষ বা জিন কোনোদিন পারেনি কুরআনের বাণী নাযিল হওয়াতে কোনো ধরণের বাধা দিতে।

একইভাবে ক্বদরের রাতেও বিশেষ নিরাপত্তা এবং শান্তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফজর পর্যন্ত তা চলতে থাকে।

উপসংহার

সূরাহ ক্বদর থেকে আমাদের যে শিক্ষা নিতে হবে তা হলো, এই রাত হাজার রাত থেকে উত্তম। সুতরাং এই রাতে যত বেশি সম্ভব আল্লাহর ﷻ ইবাদত করতে হবে, যেন আমরা হাজার রাত ইবাদত করার সওয়াব পেতে পারি। এটাই এই সূরাহ’তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার বিষয়। একজন বুদ্ধিমান মুসলিম চেষ্টা করবে কীভাবে এই রাতে সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জন করা যায়, সেটার সঠিক পদ্ধতি খুঁজে বের করতে।

সূত্র

[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্‌শাফ। [৪০১] Phys.org. (2017). Atoms can be in two places at the same time. [online] Available at: https://phys.org/news/2015-01-atoms.html [Accessed 19 Oct. 2017]. http://www.webcitation.org/6uLAAW5Xf [৪০২] Bennett, J. (2017). Atoms Exist in Two Places Nearly 2 Feet Apart Simultaneously. [online] Popular Mechanics. Available at: http://www.popularmechanics.com/science/a18756/atoms-exist-two-places-simultaneously/ [Accessed 19 Oct. 2017]. http://www.webcitation.org/6uLAAnorB

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

11 thoughts on “আমি একে নাজিল করেছি এক মহান রাতে — আল-ক্বদর”

    1. Unfortunately this lecture does not address the issue the two extremes Qadarites and Jabarites have. It says that Dua changes qadr. But what creates that dua? I or Allah?

      If Allah creates that dua, then I did not do anything. Allah created that event where I uttered some dua and then He gave me the result of the dua. Both cause and effect are His creation.

      But if I have the power to create the reality where I make the dua to get my qadr changed, then that means I, a mere mortal, have some share in creative power. I can create a choice, out of the available choices presented by Allah at any moment. Allah created the effect, but I created the cause.

      In Omar Suleiman’s lecture, none of these explanations of Lawhe Mahfuz having all possible realities written in it, or Lailatul Qadr having all the decrees for next one year , or Allah changing Qadr everyday, address this fundental point – who creates the choice I make? Me or Allah. If I create the choice I make, then it means Allah did not create that chooce. But if Allah creates everything and thus He creates the choices I make, then I have no freedom of will/choice.

      I had a long argument on this topic with Shaykh Akram Hossain, who has studied Qadr in detail from all three school of theology and hadith text. He clearly mentioned that no human logic or Quran or Hadith explain how Qadr works. No matter what the texts say, they do not address the fundamental question – who creates the choice? If you really think hard, you either reach the Qadarite conclusion or you reach the Jabarite conclusion. These two groups were not stupid people. They were very intelligent, deep thinkers.

      Thats why the middle path is to belief that Qadr is there as it is explained in the texts and there’s no logical answer to it and it is a matter of believing in Allah. We believe in the unseen, the unknown. Allah has asked us to make Dua. That’s good enough for us. We make Dua. We do not need to find the reason why we should make Dua when Allah has already decreed whether I will make Dua or not.

      1. আসসালামু আলাইকুম।
        কুরআনের কথা অ্যাপসে ত্রিশ পারার সূরাহ গুলির আপডেট পাচ্ছি না।

  1. I have not had thought of the event about why am I making that dua, interesting viewpoint. But as I said, the explanation was sufficient for me as much as possible. I also find the middle ground to be the best position. It is impossible for humans to fully comprehend the concept of Qadr. Most possibly will get stuck in an endless loop.

    “Allah has asked us to make Dua. That’s good enough for us. We make Dua. We do not need to find the reason why we should make Dua when Allah has already decreed whether I will make Dua or not.” – Agreed.

  2. salam my dear brother, you write
    আর যারা বিভ্রান্ত, তারা চিন্তা করবে ক্বদর মানে কী? ফেরেশতারা কোথায় নামে? রূহ কে? শান্তি বলতে কী বোঝায়? এই রাতে সব কিছু নির্ধারণ করা হয় মানে কী? —এসব নিয়ে গবেষণা করবে।

    i am a new in islamic practicing , trying to learn things day by day.

    if u have time can u plz tell me one thnigs about this matter i mention.
    Allah says to people to think about His creation and think deeply about it, so when we see something Allah says boldly should we think about and it and what is the wisdom behind it,
    all is for get the best reward from it.

    1. Salam brother, when Allah asks us to look at the stars, sky, earth, camel etc He is asking us to look at the seen part of His creation so that we can learn about the existence of one god and His power. He does not ask us to think about the unseen part of his creation. Rather He asks us to just believe in the unseen. Qadr is unseen, we have been asked to believe in it and not to think about it. Another example is Ruh. Quran specifically says He has given us very little information about it. So, we must not think and try to understand what it really is because we can’t. So we just believe in it.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *